গফুর চাচা বহুদিন হল জামা মসজিদের সিঁড়িতে বসে কাবাব বিক্রি করে। রমজান মাসে কাবাব একটু তরিবৎ করে বানায়। ইফতারের পরেই সে যোগাড় করতে বসে যায়। মাংস কুচি করে কিমা বানায়, পুদিনা কুচি গোলমরিচ বাটা জয়িত্রী জায়ফলের গুঁড়ো মাখিয়ে তাকে মিহিন করে পিষে মাটির হাঁড়িতে ঘি মাখিয়ে রেখে দেয়। দিন আনি দিন খাই মুটে মজুর , দোকানদার, পথ চলতি গেরস্ত এমনকি চাওরি বাজারের তবায়েফরা পর্যন্ত গফুরের কাবাবের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ... ...
শঙ্খ ঘোষ বিশ্বসাহিত্যের তন্নিষ্ঠ পাঠক। তাঁর একটা কাজ, সৃষ্টিশীল কাজ, শিশুদের জন্য লেখালিখিও। ১৯৯৪ সালে বাংলার বিশিষ্ট ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকা তাঁর উপর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে ছিল তাঁর লেখালিখি নিয়ে বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লেখা। অনুষ্টুপের এই সংখ্যায় ওঁর নিকটতম বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেছিলেন শঙ্খবাবুর নানা গুণের কথা। তার মধ্যে একটা ছিল কর্তব্যবোধ। ... ...
এই যে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নামক জুজুটি দেখিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকেই অভাবনীয় এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেই জুজুটি কতটা ঠিক? হিটলারের জার্মানির সঙ্গে এখানেও মোদীর ভারতের অদ্ভুত মিল। পুরো জুজুটাই তৈরি করা হয়েছে গুলগল্পের ভিত্তিতে। ২০১১ সালের জনগণনার বহুপ্রতীক্ষিত অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য অনেক টালবাহানার পর সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতবর্ষ মোটেই বাংলাদেশ থেকে আগত বে-আইনী অনুপ্রবেশকারীতে ছেয়ে যাচ্ছেনা। আইনী-বেআইনী মিলিয়ে ২০১১ সালে ভারতবর্ষে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৩ লক্ষ। মনে রাখতে হবে, এটা শুধু 'বে-আইনী' অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা নয়। বহুসংখ্যক মানুষ আইনী পদ্ধতিতেই ভারতবর্ষে বসবাস করছেন, যাঁদের একটা বড় অংশ আইনসঙ্গত উদ্বাস্তু (সেই সংখ্যাটা বিরাট, যদিও স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণেই সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে)। তার মধ্যে একটা বড় অংশেরই বাস পশ্চিমবঙ্গে। ফলে আসামেই ১৯ লক্ষ বে-আইনী বাংলাদেশী অভিবাসী এসে বসে আছেন, এ একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করে এই রাজ্যের কৃষকদের এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করছেন বলে বিজেপি প্রচার করেছে, অথচ বাজেট পাশের আগে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি মমতা বন্দপাধ্যায় এই প্রকল্পে রাজ্য অংশগ্রহণ করবে ঘোষণা করবেন, সে কথা জানিয়ে দেন। তাহলে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গের ৭২ লক্ষ কৃষক পরিবারের জন্য অতিরিক্ত খরচের সংস্থান বাজেটে কেন করা হল না? মনে রাখতে হবে এই প্রকল্প — যার ফলে কৃষক পরিবারগুলি (যাঁরা প্রকল্পের শর্তপূরণ করছেন) বছরে ৬০০০ টাকা সারাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাবেন - ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রক্কালে এটাই বিজেপির সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা ছিল। ... ...
ঠিক তখনই মেঘ ফেটে যায় দুভাগে। ঝলমলিয়ে চাঁদ ওঠে আর দৃশ্যমান হয় সারা জগত, কাঁসাইয়ের ধারের প্রাচীন মন্দির, সাদা ফেনার হুল্লোড়, ধানের ক্ষেত আর বাতাসে মাথা নাড়ানো গাছের দল। কালো পর্দা সরিয়ে হঠাতই আবির্ভূত হয় এইসব আর রহস্যময় শতাব্দী প্রাচীন রূপের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চরাচর। কানু বৌকে ডাকতে ভুলে যায়, হয়তো ভুলেই থাকতো যদি না তার চোখে পড়তো নদীর মাঝখানে সাদা চরের কালো পলিথিন কুঁড়ের সামনে কার যেন আবছা ছায়া। প্রথমেই সে ভাবলো মাছচোর। বাবা ভৈঁরোনাথের দিব্বি, আজ ওকে ধরবই, এ কথা ভাবতেই লাঠিটা ঘরে রেখে এসেছে বলে দারুণ দুঃখ হলো কানুর। তবু হেই হেই থাম থাম চিৎকারে সাজোয়ান পা-জোড়া ছুটে চললো এক পাথর থেকে আর এক পাথরে, পড়তে গিয়ে টাল সামলে নিলো কতোবার। ... ...
ছোট থেকেই বাড়িতে, বৃহত্তর পরিবারে বামপন্থার আবহাওয়া, জলবায়ু সবই ছিল। ছিল মুক্ত চিন্তাও। রুশ ও চিন দেশের সাহিত্য পড়া হত নিয়মিত। মামার বাড়িতে আসত সোভিয়েত দেশ, সোভিয়েত নারী। ঝকঝকে ছাপা। রঙিন ছবি। মনে আছে আমার এক পিসির কাছ থেকে একবার মাত্রওস্কা পুতুল উপহার পেয়েছিলাম। মা পুতুলের ভিতর আর একটা পুতুল। তার ভিতর আর একটা। তার ভিতর আরও একটা। সবশেষে একটা খুদে মেয়ে পুতুল। বাবা কিনে আনতেন সোভিয়েত দেশের রূপকথা। ইভানের গল্প। যে রাতেরবেলায় শস্য পাহারা দিত। আর ছিল ঠাকুরমার ঝুলি। রেডিওতে গল্পদাদুর আসরে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে বুদ্ধুভুতুম আর লালকমল নীলকমল শোনাত। আমরা ভাইবোনেরা শুনে শুনে সেগুলো মুখস্ত করে ফেলতাম। আর ছিল আবোলতাবোল। সহজপাঠ। এইসব মিলিয়েই বড় হয়ে ওঠা। মোটের ওপর পরিবারের জলবায়ু ছিল মুক্তচিন্তার বামপন্থী দর্শনের। ... ...
পলান সরকার একার উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন এক চলমান গ্রন্থাগার। ঝোলা ভর্তি বই নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে তিনি বই পৌঁছে দিতেন বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, পাঠকের দরজায়। নিজের বই পড়ার অভ্যাস তিনি চারিয়ে দিয়েছিলেন প্রত্যন্তে ও প্রান্তে। থেমে গেল পলান সরকারের চলা, কিন্তু তাঁর তৈরী পাঠকদের মননে তাঁর কীর্তি থেকে যাবে, থেকে যাবে তাঁর স্বপ্ন। তিনি যে আলোকবর্তিকাটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন আজীবনের সঞ্চয়ে ও শ্রমে, তা আলো দেবে ভবিষ্যতকে। পলান সরকারকে নিয়ে দু'টি লেখা, লিখেছেন হাসনাত কালাম সুহান ও দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম। ... ...
আমাদের মস্তিষ্ক বাইনারি চয়েসে বেশি অভ্যস্ত। সাদাকালোতে বেশি অভ্যস্ত। বলা যায় গ্রে-স্কেলে দেখতে শিখতে হয়। সরকার গঠনের জন্যে নির্বাচনে এই দুটি বর্গই তো সম্ভব। যে রাজনীতি সরকার গঠনে বিশ্বাস করে না, অথচ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাদের চয়েসের সমস্যার কথাই বলা হচ্ছে এখানে। কিন্তু সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। সমাজসেবী কেউ সরকার গঠনে বিশ্বাস করলে তার এই দুটি বর্গে সমস্যা থাকবে না। ... ...
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত। ... ...
এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান "নিরপেক্ষ" সংবাদ পত্রটি এ হেন সংবাদ পরিবেশনের আগে সলতে পাকিয়ে গিয়েছেন অনেক দিন আগে থেকেই। সাম্প্রদায়িক, চুড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক অসভ্য নেতা নেতৃবৃন্দের পুঙ্ক্ষানুপুঙখ দৈনিক কার্যকলাপ তারা সংবাদপত্র দ্বারা প্রচারিত করে গিয়েছেন। তা ছাড়াও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছেন ঋণে জর্জরিত একঝাঁক সিরিয়াল ও সিনেমার মধ্যমানের তারকারা। যখনই তারা এই দুটি দলের ছাতার তলায় এসেছেন বা দল বদল করেছেন। তাদের পছন্দ অপছন্দ প্রেম বা প্রেমহীনতার সবটুকু গিলিয়ে খাইয়েছেন সংবাদপত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। এর চেয়ে জনকল্যানকারী অন্য কোনও পথ এরা পান নি - বলে বিশ্বাস হয় নি। ... ...
সপ্তদশ শতক। শাহ জাহান বাদশার হেঁশেল। মুঘলাই খিচুড়ির রোশনাই। আর তারই মধ্যে একটির নাম খিচড়ি দাউদখানি! সে নাম যেমন রহস্যময়, তেমনই বিচিত্র সে খানা—বলছে খিচড়ি, কিন্তু চাল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
কাপুরুষের অমিতাভ রায় নষ্ট করেছিল করুণা গুপ্তর জীবন। করুণা অবশ্য অমিতাভর মত কাপুরুষ ছিলেন না। তাই অমিতাভর কাপুরুষতা করুণার জীবন সম্পূর্ণ নষ্ট করতে পারেনি, শুধু ঘুমটা নষ্ট করেছিল । হ্যারির কাপুরুষতার বলি মেগান হতে পারত। কিন্তু হয় নি। দুজনেই পেরেছিলেন দেশ পরিবার ছেড়ে রাজপ্রাসাদের মরচেধরা লৌহ কপাট ভেঙে বেরিয়ে পড়তে। ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তাঁর কোলাজ-নাট্য আলোড়ন তুলেছিল কলকাতায়। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তী চার দশক জুড়ে রয়েছে এক সৃষ্টিমোহিত সম্পর্ক। স্মৃতিচারণে তরজমাকার রাজা মুখোপাধ্যায় ... ...
প্রতিটি পদে পদে পরিষ্কার যে পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনা সম্পর্কে নিঃস্পৃহ ছিল। তাঁর বাবা সালেম খান থানায় ফোন করেন রাত তিনটেয়। পুলিশ এতোটাই অসংবেদনশীল যে তারা সদ্য পুত্রহারা পিতাকে বলে যে তিনি তো আনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি তাহলে কী ভাবে প্রমাণিত হল তিনি মৃত? ... ...
বষয়টিকে একটু বিশদ করার প্রয়োজন মনে করি। যে কোনও বাঙালিরই মানসভুবন কলকাতা আর দেশভাগে বাস্তুচ্যুত বাঙালির শিকড়ভুবন পূর্ববঙ্গ। বাস্তুচ্যুত যে কোনও বাঙালি কবিরই নান্দনিক জগৎ কলকাতায়, সেখান থেকে ইশারা আসে, খবর আসে। সেখানকার আলো হাওয়ায় কেলাসিত হয়ে বহির্বিশ্বও তার কাছে এসে ধরা দেয়। আবার তার প্রাণের শিকড় তো, অন্তত গত শতাব্দী পর্যন্ত, চারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কোনও চোখে না দেখা-নাম শোনা কিংবা চোখের দেখা-প্রাণের-কথায়-ভরা গ্রামে। সেখান থেকে কি আসত? আসত স্মৃতি আর রূপকথা। কিন্তু তার বাস্তবের পৃথিবী? দেশভাগের পর বাস্তুচ্যুত বাঙালির বাসভুমি তো ছড়িয়ে আছে আবিশ্ব - নিউ ইয়র্কের পানশালা থেকে আসাম কিংবা মিজোরামের অনাবাদী জমির পাশের ঘাসবৃক্ষ পর্যন্ত। এখন, এই বাস্তবের পৃথিবীর শিশিরবিন্দুগুলিকে ভালো না বেসে, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কবি যদি শুধু ঘুরে বেড়ান এক অতৃপ্ত মানসলোকে কিংবা স্মৃতিপৃথিবীতে - তাঁর এই পর্যটন তো, পুরাণের ভাষায় বললে, গণেশের সেই মাতৃপ্রদক্ষিণ, যা আসলে কার্তিকের প্রকৃত ভ্রমণটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বানানো এক নিপুণ কথার ফাঁদ। তো একজন কবির তো আসল সত্যটা জানা চাই। কথার ফাঁদ কতদিন আটকে রাখবে তাঁর কবিত্বকে? আর এই কথার ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে আসামের বাংলা কবিতা তার আশ্চর্য ভূগোল-সচেতনতায়। মূলত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে বিগত শতাব্দীটি ছিল কাঁটাতারের আর উদ্বাস্তু প্রব্রজনের। তার ভূগোল-চেতনার মাধ্যমে আসামের বাংলা কবিতা সব মানস-কাঁটাতারকে অগ্রাহ্য করার শক্তি পেয়েছে। ... ...
সর্বত্রই ত্রাণের কাজে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের কাছ থেকে একটাই কথা শুনতে হচ্ছে - 'ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কিছুদিন না হয় চলবে, কিন্তু সরকার যদি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না করে, তাহলে মরে যাব আমরা'। আমরা গুরুচণ্ডা৯-র পক্ষ থেকেও এই কথার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি। কেবল ত্রাণ নয়, এই সমস্যাগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চাই। আজকে যাঁরা ত্রাণের জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমাদের তাই আবেদন, দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক নজরদারি কীভাবে গড়ে তোলা যায়, কীভাবে আয়লা বা আমফানের ক্ষয়ক্ষতির পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়, ধীরে ধীরে সেটিকে চর্চার বিষয় করে তুলুন। ... ...
বাড়িটার প্রতি যেন আমরা একটি টান অনুভব করছি। অমলেরও একই অবস্থা। কী মনে হল আমরা আবার একদিন রাতে সেই বাড়িতে গেলাম। এবার মনে হল কিছু একটা ঘটছে। সেই বাড়িতে ওই দুটি ঘর ছাড়া অন্য একটি ঘরে ঢুকলাম এবং সেখানে প্রচুর ভৌতিক কান্ড ও আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমরা ভয় পাই নি, কারণ বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম ভয় পেয়ে গেলেই আমাদের মৃত্যু অবধারিত। আজ অমলকেও একটা মাদুলি পড়িয়ে এনেছিলাম – তাই ওর ভয়ও অনেকটা কমেছে। আমরা দেখি একটি উড়ন্ত চৌকি ও তাতে দেখলাম অস্পষ্ট একটি ধুঁয়া দিয়ে তৈরী একটি লোক – তার জামায় লেখা – কার্তিক পাল। ... ...
এই বক্তিয়াররা আরেকটি কাজ খুঁজে পেলেন। দেখা গেলো রাজা বা আমলাদের সামনে সকল নাগরিক নিজেদের কেস ঠিক ভাবে উপস্থিত করতে পারছেন না। বাদী বা বিবাদী তো আর্ট অফ পাবলিক স্পিকিং শেখেন নি। আন্তিফন নামক গরগিয়াসের এক চেলা পরামর্শ দিলেন দুই বিবদমান পক্ষের প্রয়োজন এমন একজন মানুষের যিনি মোটামুটি লেখাপড়া জানেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে কোন পক্ষের যথাযথ বয়ান দিতে পারেন।এই মানুষটি হবেন একজন নিঃস্বার্থ বন্ধু মাত্র যাঁদের কাজ অশিক্ষিত বাদী বিবাদীদের সহায়তা করা। অন্য অর্থে বলা যেতে পারে ইতস্তত ভ্রমণরত বাগ্মীরা একটা কাজের কাজ খুঁজে পেলেন! গ্রিকরা সেটি মেনে নিলেন কিন্তু সাব্যস্ত হলো মামলায় এই সহায়তার জন্য কোন পারিশ্রমিক দেওয়া বা নেওয়া চলবে না। বন্ধু রূপে যদি তাঁরা বিচারকের সামনে অবতীর্ণ হন, টাকা পয়সার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে। মামলা জিতে কোন পক্ষ যদি সেই বক্তাকে আগোরার কোন শুঁড়ি খানায় দু পাত্তর সুরা পান করায় সেটাকে অবশ্য উকিলের ফি বলে ধরা হবে না। ... ...
বিদেশে এসে যুদ্ধ করে টিকে গেলে NRI - আর যে অতি কষ্ট করছে টিকে যাওয়ার জন্য - তার দিকে নাক সিঁটকে সমালোচনা- বিদেশে থাকার এত লোভ!” - নিজে সহজে রাস্তা করতে পেরেছে বলে অন্যদের সংগ্রাম/ ইচ্ছে / স্বপ্ন ছোট করার অধিকার অর্জন করে নেয়। স্টিমুলাস চেক - কী সব কথা! বাড়ি বসে বসে গরিব লোককে খোলামকুচির মত টাকা দিয়ে ওদের কাজ করার মানসিকতা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে! আমার চেনা বেশ কিছু অতি স্বচ্ছল পরিবার সেই নিয়মের ফাঁকে দিয়ে স্টিমুলাস চেকগুলো পেল! এক গুজরাটি পরিবার যার বেশ কিছু বাড়ি আর ব্যবসা - দশ হাজারের ডলারের বেশি স্টিমুলাস চেক পেয়ে নানা জায়গা ঘুরে এল। আর আমার সাথে কথা হলেই শুধু বলবে যে কাজ করার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনিফিট আর স্টিমুলাস দিয়ে শ্রমিকদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বাঙালি তো লজ্জায় বলতেও পারে না যে স্টিমুলাস পেয়েছে। যে মুখে সমাজ সংস্কার আর দাতব্যের এত গল্প - সোসাইটিতে নাক উঁচু স্টেটাস - ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় দয়ার দান যারা নেয় তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ। কিন্তু নিজের ভাগ কেউ ছাড়েনা। হ্যাঁ - নিজের ভাগ ছাড়ার তো কথা ও না। কিন্তু অন্য কেউ ভাগ নিচ্ছে সেটা যদি হজম না হয় - তবে তো সমস্যা। ... ...
পখাল একটা বিরাট লেভেলার। রাজা প্রজা, ধনী নির্ধন, সাধু ভণ্ড, সৎ অসৎ, সাহসী দুর্বল, মন্ত্রী জনগণ সব্বাইকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটা কী? নিঃশর্ত পখালপ্রীতি। এই একটিমাত্র বিষয় যেখানে কোন মতপার্থক্য চলবে না। রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনটুনির ঘরেও সেই ধন আছে! নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, পখালরাজের চরণে। এমনকি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেবও স্নেহ করেন তাকে। ... ...