খাপ পঞ্চায়েত প্রেম, বিয়ে, জাতপাত, নারী বিষয়ক অবস্থান থেকে সরে খানিক অন্য ধারণায় উপনীত হবে কিনা আড্ডা আর সেদিকে গড়ায় না। নওদীপ ঘুম থেকে উঠে আমাদের মাঝে এসে বসে। ওকে নিয়ে ‘সাথী’রা রসিকতা করতে থাকে, ‘হামারে নওদীপ সেলিব্রিটি বন গ্যায়ি।’ সবাই মিলে হো হো হেসে ওঠে। নওদীপ–এর হাসিতে মিশে থাকে লাজুক আভা। ... ...
রইল পড়ে নড়বড়ে টুল, সাদা কাগজে লাল রঙের পোঁচ- আমরা ভাবতে বসলাম। কুমুদির গল্পে ভূষণদা বলত- "পচ্ছন্দ না হইলে চড়িবে না, অত বাক্য কীসের?" আমাদের সেই কথা মনে পড়ে গেল । একেই উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠান- সকালের কথা বিকেলে পছন্দ হয় না, দুপুরের কথা সাঁঝের ঝোঁকে বদলে দিই । ওরিজিনাল গোলাপী হ্যান্ডবিলেই কাটাকুটি হয়েছে- সময়সীমা বদলে গেছে , বয়স অনুযায়ী নতুন বিভাগ যোগ হয়েছে। "পচ্ছন্দ না হইলে..." এইটাই আসল কথা- আমাদের মনে হল। ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক টাকা বেতনের মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তা শুনেছিলাম অগ্রজদের মুখে। ‘আমার সাহিত্যজীবন’ বইটি সংগ্রহ করে তখন পড়ি। কী অসামান্য ছিল তাঁর সংগ্রাম। একাগ্রতা। জীবনে ছাড়তে হয় লোভ। সাহিত্য সাধনার জায়গা। দশ রকমে মাথা দিলে সাহিত্য সরস্বতী লেখককে ত্যাগ করে চলে যাবেন। বরং আমিই ত্যাগ করি অবাঞ্ছিত কাজ। সেই যে ত্যাগ করলাম টেলিভিশনের ডাক, আর ওপথে যাইনি। হ্যাঁ, নিজের গল্পের রেডিও নাটক লিখেছি। নিজের উপন্যাসের চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছিলাম পরিচালক রাজা সেনকে। সে ছবি এখনো হয়নি। ... ...
বন্ধুরা বলেন--একুশ শতকে ভারতের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সমাজে পিতৃতন্ত্রের ভিত এখন অনেক দুর্বল, থাম গুলোয় ফাটল দেখা দিচ্ছে। মেয়েরা এখন পুলিশ- মিলিটারি- প্রশাসন - সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সবেতেই উঁচু পদে বসছেন। তাই কি? একজন ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা একজন এ পি জে আবদুল কালামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদাহরণ দেখে কি ভারতে মেয়েদের এবং অল্পসংখ্যকদের বাস্তবিক অবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত টানা যায়? আইনের চোখে তো মেয়েরা পুরুষের সমান—সেই সংবিধান প্রণয়নের দিন থেকেই। রয়েছে নারীপুরুষের ভোট দেবার সমান অধিকার। কিন্তু গাঁয়ের দিকে ক’জন ঘরের বৌ নিজের ইচ্ছের ক্যান্ডিডেটকে ভোট দিতে পারে? বেশির ভাগের ভোট দেবার নির্ণয় কী আগে ভাগে পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি ঠিক করে দেন না? ... ...
আপনি যদি বিশালকায় হোল্ড -অল আর স্যুটকেস নিয়ে নেমেছেন তো লালজামা লালগামছা কুলিদের শরণাপন্ন হতেই হবে। আজকের নীল বা সবুজ জামা কোথায়? হারিয়ে যাবার ভয় নেই , সবার হাতে তাবিজের মত করে বাঁধা পেল্লায় এক একটি পেতলের চাকতি, তাতে নম্বর লেখা। ওটা মনে রাখলেই হবে। ট্যাক্সির প্রি-পেড বুথ বা স্ট্যান্ড কিস্যু নেই। মিটারে যায়, শেয়ারে যায় । কখনও সামান্য দরাদরি। দুই থেকে পাঁচটাকায় হাওড়া থেকে পার্কসার্কাস। ... ...
সবথেকে খারাপ লাগত যেটা, সেটা হচ্ছে এদের বেশির ভাগেরই বাংলা আর বাঙালিদের সম্বন্ধে একটা নিচু দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে চলা। এদের কাছে বাংলায় কথা বলা যে-কোনও লোকই বাংলাদেশি, যারা সঙ্ঘের জয়যাত্রাকে রুখে দেবার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অবিরাম। আমি একবার শুনেছিলাম আশুতোষ ঝা নামে এক নামী ল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রকে ভোপালের বাসিন্দা জনৈক ময়াঙ্ক জৈন টাস্ক দিচ্ছে, হয় অন্তত ৫০ জন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে এসো, নয় তো সঙ্ঘ ছেড়ে দাও। এঁদের অনেকেই খোলাখুলি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতে উৎসাহ দিতেন, যাতে কিনা দরকার পড়লে মুসলমানদের আর রাজ্যের পুলিশদের সাথে টক্কর দেওয়া যায়। আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমি কিছু সিনিয়র সঙ্ঘ সদস্যের সুনজরে পড়ে গেছিলাম। প্রশান্ত ভাট থেকে ডক্টর বিজয় পি ভাটকর, প্রায় যতজন সিনিয়র সঙ্ঘ ইন্টেলেকচুয়ালকে আমি জানতাম, প্রত্যেকেই হিন্দুত্বের ওপর আমার কাজকর্মের খুব প্রশংসা করেছিলেন। ... ...
আমার বিশ্বাস যে সম্ভবত আগামী কয়েক মাসে, আমরা খুব সম্ভবত এখানকার ওষুধগুলোরই এমন কোন off-label” ব্যবহার পাব যেটা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিত্সা করতে সাহায্য করবে। অন্য ভাবে বললে, এখনকার কোন ওষুধেরই, যেটা আদতে হয়ত HIV র মত অন্য কোন ভাইরাল সংক্রমণ সারাতে ব্যবহার হয়, তার নতুন কোন ব্যবহার পাব । তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় লাগবে আর অনেক অনেক সত্যিকারের পরীক্ষা করতে লাগবে। নতুন রোগাপহরক ওষুধগুলোর ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে চলছে অনেক জায়গাতেই, বিশেষত চীনে। এটা খুবই আশার কথা। ... ...
লকডাউনের প্রথমদিকে রোগীর চাপ কম ছিলো। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়া ছিলো। খারাপ লাগছিলো না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত অবসাদে ডুবে যাচ্ছি। করোনার বাড়বাড়ন্ত অবসাদকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ এক মহা জ্বালা। যুদ্ধে গো হারান হেরে গেছি। তবু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। রোজই একাধিক পরিচিত চিকিৎসকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। একাধিক চিকিৎসক মারাও যাচ্ছেন। যে কোনো কারণেই হোক মৃত্যুহার আমাদের মত খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে অত্যন্ত বেশি। চিকিৎসক মৃত্যু হাফসেঞ্চুরি পেরিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত চল্লিশ জন প্রাইভেট প্রাকটিশনার। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হার ২% এর কম, আর খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে ২০% এর বেশি। ... ...
তখন আমার কাছে লেখা ব্যতীত আর কোনো লক্ষ্য ছিল না। যে কাজ করলে লেখায় ক্ষতি হবে। সময় কম দিতে পারব, সেই কাজ করব না, হোক না ক্ষমতা এবং বেতন বেশি। নিজের ডিপার্টমেন্ট আমাকে সম্মান করত। অন্তত বেশিরভাগ উপরওয়ালারা। সে কথা যাক। একটা কথাও বলতে হয় বড় চাকরি করা আমার সাধ্য ছিল না। মেধাবী তো ছিলাম না। রেজাল্ট খারাপ। কেমিস্ট্রির ময়লার, ফিনার-এর বই না পড়ে বিভূতিভূষণ পড়েছি। সুতরাং হবে কী ? চেষ্টা চরিত্র করলে কীই বা হত। কম বেতনের চাকরি, আমার পরিবারের সকলে কৃচ্ছ সাধন করেছে সমস্তজীবন। স্ত্রী মিতালি হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছে। বুঝেছে যদি সম্মান আসে এতেই আসবে। যার যেটা পথ, সেই পথেই তিনি যান। ... ...
লাবণ্যপ্রভা আমার বউদির দিদিমা । তিনি ছিলেন সাগরদাড়ির কন্যা। মাইকেল মদুসূদন দত্ত ছিলেন তাঁর সম্পর্কিত দাদু। মানকুমারী বসু তাঁর পিসিমা। বউদির বাবা আমার বাবার বাল্যবন্ধু। সেই সূত্রে তাঁর শ্মশ্রুমাতার বেলগাছিয়ায় আসা ছিল নিয়মিত। জামাইয়ের বন্ধু তো। আর পূর্ববঙ্গের শিকড়ও ছিল। অদ্ভুত তিনি। ওপার থেকে তেমন কিছুই আনতে পারেননি। অল্প বয়সে বিধবা। থাকতেন বসিরহাটে। তাঁর পুত্রটি তহসিলদার। খাজনা আদায় করেন। তখন এই বৃত্তি ছিল খুবই কষ্টের। তহসিলদার অন্য রাজ্যে তহসিলের শাসনকর্তা, এই রাজ্যে ছিল খাজনা আদায়ের কমিশিন এজেন্ট। যত আদায় তত আয়। যেতেন আবাদ অঞ্চলে। আবাদ অঞ্চল মানে সুন্দরবন এলাকা। মাসিক বেতন ছিল না। তো তিনি আবার ছিলেন আলাভোলা মানুষ। মুখখানি মনে পড়লে এখন মায়া জন্মায়। ... ...
জেম্স র্যান্ডি। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। পেশায় দুরন্ত জাদুকর, ম্যাজিশিয়ান। হুডিনি-র একটি রেকর্ড ভেঙেছিলেন। কিন্তু নেশায় ও মননে ছিলেন জ্যোতিষী, সাইকিক ইত্যাকার অলৌকিক শক্তির দাবিদারদের বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। এরিক ফন দানিকেন থেকে উরি গেলার পর্যন্ত বহু বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়ে লিখেছেন একাধিক বই। সেগুলির মধ্যে একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম—ফ্লিম-ফ্ল্যাম! পড়লেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান পরিষদের সচিব, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীতে মাত্র দুটি অঞ্চল আছে, যার প্রায় পুরো বসতিটাই সমুদ্রতল থেকে অনেকখানি নীচে – একটি হল হল্যান্ড আর অন্যটি আমাদের সুন্দরবন। সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় জোয়ার-ভাটায় সুন্দরবনের নদীগুলিতে জল ওঠানামা করে কুড়ি থেকে পঁচিশ ফিট। তাই সুন্দরবনের সে সমস্ত দ্বীপে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, জোয়ারের সময় সেগুলো সবই চলে যায় জলের নীচে, জেগে থাকে শুধু গাছপালার মাথা। আর যে দ্বীপগুলোতে মানুষের বাস, জোয়ারের জল যাতে সেই দ্বীপগুলোকে ডুবিয়ে দিতে না পারে, সেই কারণেই প্রতিটি দ্বীপকে চারপাশে বেড় দিয়ে রাখে দেড় মানুষ বা দু-মানুষ সমান উঁচু বাঁধ। জোয়ারের জলের প্রবল চাপ ধারণ করে রাখে সেই বাঁধ। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, একবার কোনো জায়গায় সেই বাঁধ ভাঙলে নোনাজল ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম আর কয়েকশো একর জমিকে ডুবিয়ে দেয়। এই কারণেই নদীবাঁধগুলোকে বলা হয় সুন্দরবনের লাইফ-লাইন বা জীবন-রেখা। ... ...
... ...
এই অভিযোগের স্তূপের মধ্যেই নতুন করে কাল ভাইরাল হয়েছে একটি বিস্ফোরক ভিডিও। আলাদা করে তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নানা সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই সেটি প্রকাশ করে চলেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে উত্তেজিত জনতার জমায়েত, গুলির আওয়াজ, আর্তচিৎকার এবং রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েকজনকে পড়ে থাকতে। এখনও পর্যন্ত এর সত্যতা কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। ভিডিওটি যদি সত্যি হয়, তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার কোনো চিহ্ন সেখানে দেখা যাচ্ছেনা। শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ। তা একতরফা। কাঁদানে গ্যাস বা লাঠি চালনার কোনো চিহ্ন নেই। সামান্য বা একেবারেই বিনা প্ররোচনায় গুলি করে মারা হয়েছে সাধারণ ভোটারদের। ... ...
এর আগের পর্বে কয়লাখনি নীলাম ও তাতে বিশাল বনভূমি ধ্বংসের কথা লিখেছি। লিখেছি কী ভাবে কর্পোরেটের সামনে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে এদেশের সমস্ত খনিজ ও বনজ পদার্থ। যাতে তাদের কোনো অসুবিধে না হয়, সেজন্য আইন পালটে যাচ্ছে দেদার। অতিমারির অছিলায় শুধু ভিডিও কনফারেন্স করে পরিবেশ সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যদি আসামের বাঘজান তৈলকূপ ও বিশাখাপত্তনমের গ্যাস লিক আমাদেরকে কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে তাহলে তা হওয়া উচিত ছিল এইরকম- এদেশের মাটিতে পরিবেশের সর্বনাশ আটকাতে হলে আমাদের চাই ইন্ডাস্ট্রির তুমুল খিদেকে বশে রাখবার জন্য যথোপযুক্ত পলিসির আশ্রয় নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? ... ...
ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাস্ত করতে গণআন্দোলনই একমাত্র পথ—একথা ঠিক। কিন্তু ৯৫ বছর ধরে চাষ করে যে ফসল আজ তারা তুলছে এবং যখন দেশের সংসদীয় বামপন্থী দলগুলোর এরকম দুর্বল অবস্থা, তখন কিছু প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রতিবাদী মানুষ একজোট হয়ে মাত্র তিনমাসের প্রচার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আরএসএস–বিজেপির অগ্রগতির রথ আটকে দেবেন, এমন চিন্তা অবাস্তব বলেই মনে হয়। নির্বাচন যেখানে দরজায় কড়া নাড়ছে, সেখানে আশু কর্তব্য হওয়া উচিত সেই পথের খোঁজ করা কীভাবে আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করা যায়। ... ...
করোনায় ভারতবর্ষে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৃতের নাম ন্যূনতম মনুষ্যত্ব, মানবিক বোধ। তার হয়তো মৃত্যু বরাদ্দই ছিল, কারণ সে বহু আগে থেকেই ধুঁকছিল, আর এরকম শিকার তো করোনা ছাড়ে না বলেই জানা গেছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয় নি। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং হয়েছে, ওদিকে হাজারে হাজারে মানুষ পথে হাঁটছে, হাঁটতে হাঁটতে মরে পড়ে যাচ্ছে, আমরা নির্বিকার। মানুষকে কীটনাশক দিয়ে ধুইয়ে দিচ্ছেন আধিকারিক – আমরা নির্বিকল্প। আধিকারিক ভুল স্বীকার করছেন – আমরা খুশী। আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি যে ভুল যে স্বীকার করলেন – কিসের ভিত্তিতে? ঠিকটা কী? আদৌ আপনি জানেন যা করেছেন তা ঠিক না ভুল? কেউ জানে? ... ...
মিশেল উয়েলবেক। ইসলামোফোবিয়া থেকে পর্নোগ্রাফি, পুরুষতান্ত্রিকতা—বারংবার উঠেছে নানা অভিযোগ। তবু তিনি এ মুহূর্তের ফরাসি সাহিত্যের উজ্জ্বলতম তারকাদের একজন। ছত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য। মার্সেল প্রুস্ত বা অন্দ্রে জিদ-এর সাহিত্যশৈলীর পরম্পরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি। গতবছরই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজিয়ঁ দ’নর’ প্রাপ্ত এই লেখকের ‘প্লাতফর্ম’ উপন্যাসে উঠে আসে ইউরোপীয় সমাজের অন্তঃসারশূন্যতার হাড়-হিম-করা ছবিও। পড়লেন ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক পার্থপ্রতিম মণ্ডল। ... ...
‘বউদি অত টাকা পাবে কোথায়—।’ ‘বউদি আর পাবে কোথায়!’ মানিক হাসে, ‘বউদির অনেক কাজের বাড়ির বাবু ধরা আছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচ দশ করে কালেক্ট করবে। মাসে মাসে আমি দিলে তাদের শোধ করে দেবে। আর সুদটা বউদির পকেটে ঢুকবে। প্ল্যান আমার ছকা ছিল। ওই হারামির বাচ্চা বাবু সাহা সব লাগিয়ে দিল মল্লিক ঠিকেদারকে। নইলে আমার সব প্ল্যান পাক্কা।’ মানিক আবারও হাসল। ‘আমাকে চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি চলে এল—থানায় গেল না। চুরির মাল খুঁজল না। শুধু হল্লা, নে সাহস থাকে আমাকে পুলিসে দে। দু দুটো টুলু পাম্প, আচ্ছা আমিও ছাড়ব না। ওরা ভয় পেয়ে গেছে রূপা বুঝেছে—আমি যদি ঠিকেদারি লাইনে নামি ওরা আমার সঙ্গে পারবে না।’ রূপার মনে হল, মানিক ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি সত্যি চুরি হলে ওরা থানা পুলিশ করত না—ছেড়ে দিত? কেউ ছেড়ে দেয়? ... ...
ঠাকুমা আর মানিক কাকুর কথার মাঝেই আমি দেবদারু বাগানের নীচে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে গামছায় বাঁধা খাবার আর গায়ে চাদর জড়িয়ে সাদা কুয়াশার ভেতর ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে তাঁতিরা। সেই ছায়া থেকে আমি খুঁজে খুঁজে বের করি কলিম তাঁতি, মকবুল তাঁতি, পরেশ তাঁতি, নিবারণ তাঁতি, মান্নান ড্রাম মাস্টার সবাইকে। আজ অন্যদিনের মতো এগিয়ে গিয়ে আমি ওদের সাথে গল্প জুড়ি না। আমি পা বাড়াই গোলেনূর দাদির বাড়ির দিকে। সে বাড়ির উঠোনে এখনো নিঃস্তব্ধতা। শুধু গোলেনূর দাদির বড়ঘরের টিনের বেড়ায় ঝুলানো কবুতরের খোপ থেকে ভেসে আসছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ... ...