অন্ত্যেষ্টিশিল্পের আলোচনা এখানেই শেষ। অনেক দেশ এবং অনেক সময়কালের কাহিনী বাকী রইল। আশা করি সেগুলি তুলে ধরার জন্য কখনও এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ফিরে আসব। যাবার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই- কেন এই ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সমাজের সামাজিক গঠন, তাদের ভিতরকার উঁচু-নিচুর শ্রেণীভেদ, লিঙ্গবৈষম্য, সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস এগুলো তাদের সমাধি ও অন্যান্য বিদায়-উপহার দেখে বোঝা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বনাম গোষ্ঠীবোধ- কোন সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটারও আভাস পাওয়া যায়। পরলোক বিষয়টিকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে কল্পনা করে এসেছে তার ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় সমাজগুলির শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন। পাওয়া যায় সামরিক অভিযানের কাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে অনেক তথ্য। পাওয়া যায় কিছু প্রেমকাহিনী, কিছু সমাধিলেখ, কিছু কবিতা। সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অভাবকে অনেকটাই পুষিয়ে দেয়- অন্ত্যেষ্টিশিল্প। ... ...
বাংলার মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের সাহিত্য, লোকাচার, প্রবাদ-প্রবচনে নানা ভাবে আমরা পান্তাভাতের উল্লেখ পাই। সাহিত্য ছাড়াও সপ্তদশ শতকের নথিপত্রেও এর হদিস রয়েছে। আর তা থেকে সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক চিত্রটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রচলিত প্রবাদে আমরা এটাকে গরিবের খাবার বলেই জানি। কিন্তু পান্তাভাত যে কেবল সর্বহারা শ্রেণীর বেঁচে থাকার রসদ তা নয়। মুঘল আমলে সম্রাটের প্রাসাদের মুক্তাঙ্গনে যে গান বাজনার আসর বসত, তাতে হাজির থাকতেন অভিজাত শ্রেণীর নাগরিকেরা। তাঁদের আপ্যায়নের জন্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিশেষ করে থাকত পান্তাভাত। ... ...
পিয়ারডোবা— বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সংলগ্ন একরত্তি গঞ্জ। পরিমলদা-র দোকান— একরত্তি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। অর্ধশতক পার। সিগনেচার মিষ্টি— ল্যাংচা। বিশেষণ — পরমান্ন। নির্মাণ-রহস্য — অভিজ্ঞ শিল্পীর হাতের জাদু এবং দুধ, ঘি ও ছানা সম্পূর্ণ নিজস্ব। লুকো-ছাপার বদমাইশি নেই। যে-কোনও দিন গিয়ে দেখা যায় সেই শিল্পনির্মাণ। গন্ধ-বর্ণ-স্বাদের তীব্র উৎসব। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
আপনি যদি বুদ্ধিমান হতেন, এই বক্তব্য রাখার আগে একটু কৌশলী হতে পারতেন। আপনাদের নেতারাই বিগ মিডিয়াতে এবং আইটি সেলে ক্রমাগত জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার কথা বলে আসছেন। হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচার করছেন দিবারাত্র। হ্যাঁ, সাহিত্য আপনারা বোঝেন না, এটাই একমাত্র সত্যি কথা আপনি বলেছেন এখানে। বাংলা সাহিত্য বুঝলে বিজেপি করতেন না। ... ...
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে দুটো ব্যানার হোর্ডিং-এর লেখা শ্লোগান পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম—“শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলুন”, “শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখুন”। তখনই মনে কয়েকটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। শুদ্ধ ইংরেজি বলা বা লেখার জন্য আমরা যতটা আগ্রহ বোধ করি এবং যত্ন নিই, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তার অভাব কেন? আমরা সকলেই কি বেশিরভাগ সময় শুদ্ধ বাংলা বলি বা লিখি? অথবা ব্যাপারটা কি এরকম যে বাংলা ভাষায় সব রকম বানানই চলে, এবং, শুদ্ধতার কথা বলা এক রকম স্পর্শকাতরতা বা ছুতমার্গ? নাকি, আমরা যে অনেক সময়ই ভুল বলি বা লিখি তা নিজেরাও জানি না বলেই এই সব ভাবি? ... ...
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।” ... ...
যদি ধরেও নিই যে আগামী তিনটি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার ০ তে আটকে রইল (অর্থাৎ সংকোচন বা বৃদ্ধি কোনোটাই হল না)—যদিও সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অবাস্তব ভাবনা, তাহলেও বার্ষিক সংকোচনের হার অন্তত ৬% তে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ সালে ভারতীয় অর্থনীতির সংকোচনের পরিমাণ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বাধিক হতে চলেছে। ... ...
তার গ্রাম মৌচুরিয়ার সেই বন্ধুর নাম বুধন টুডু। বুধন নকশাল ছিল। কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বেলপাহাড়ির দিকে বিপ্লব করতে গিয়েছিল। বাবুরা কেউ ধরা পড়েছে, কেউ ফিরে গেছে বাড়ি। বুধনকে পুলিস খুঁজছিল অনেকদিন। কিন্তু পাত্তা করতে পারছিল না। সে খুব বুদ্ধিমান। বার বার পুলিশকে ধোঁকা দিয়েছে। ধরতে পারলে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। মেরেও ফেলতে পারে। সে কোথায় থাকে, কোথা থেকে গ্রামে ফেরে, তা পুলিশের খোঁচড় বুঝে উঠতেই পারে না। তার দেড় বিঘে জমিন আছে চাষের। সেই জমিই তাকে টেনে এনেছিল গ্রামে। ধান কাটার সময় গত অঘ্রানে এসেছিল। তখন পুলিস টের পায়নি। যখন খবর গিয়েছিল, সে কাজ সেরে পালিয়েছিল। এই বর্ষার দিনে চাষের টানে আবার ফিরে এসেছিল। গ্রামের চাষিবাড়ির ছেলে, প্রায় ভূমিহীন বুধন। জমি পাবে ভাত পাবে, তাই শহরের বাবুবাড়ির ছেলেদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। বিপ্লবের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাবুবাড়ির ছেলেরা ফিরে গেছে শহরে। ... ...
শুক্কুরবার রাতের কবিতার পাতায় আজ প্রকাশিত হলো কবি ও গদ্যকার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ। ... ...
আজ ষষ্ঠী, রাত ফিকে হলেই সপ্তমী। ভোট, ভাইরাস আর ভিড়ের ভয়েবচ সামলাতে না সামলাতেই এসে পড়েছে আরও একটা উৎসবের উপলক্ষ্য। আর এই বিস্তীর্ণ মানচিত্রের কোথাও কোথাও আলো ক্রমে আসিতেছে, আর তার পাশে মঞ্চের বাইরে মাটিতে, আলোর বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ কেউ। নতুন নতুন গল্প শুরু হবে এখন-ই, সুতোর টানে আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠবে এক-এক করে চরিত্র। আসুন তাহলে এই ক'টা দিন, প্যান্ডেলের বাইরে দু'টো চেয়ার টেনে একটু বসা যাক নিরিবিলি আড্ডার মেজাজে, এই তো আমরা-ই ক'জন ... আসুন তার এক ফাঁকে পর্দা তুলে উঁকি মারি মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে, ভিড় ছেড়ে চলুন এসে বসি ইন্টারনেটের এই ঠেকে। একটু একটু করে জমে উঠুক কথা ও বার্তা। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, উৎসবের পুরো মরশুম জুড়েই যতটুকু পুজোর গন্ধ গায়ে মেখে নেওয়া যায়। চোখ রাখুন গুরুর শরৎ ২০২১-এর পাতায়, প্রতিদিন নতুন লেখা জুড়ছে, জুড়বে। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ভাল লাগলে ভাগ করে নিন, না লাগলেও। ... ...
অনেকে আছেন যাঁরা হয়তো হ্যান্ডলুম ভালোবাসে, কিন্তু প্রথাগত টেক্সটাইলের শিক্ষা নেই। ফলে তারা নিজের অজান্তেই নকল কাপড় বিক্রি করে ফেলে। ২০১৫ সালের একটা ঘটনা বলি, দিল্লির একটি হস্তশিল্প এনজিও-র সাথে প্রদর্শনী করছিলাম। আমার পাশেই এক ব্র্যান্ড তাদের ‘পিচওয়াই’ আঁকা কাপড় ও হস্তশিল্প বিক্রি করছিল। সুন্দর দেখতে বলে বিক্রিও ভালো হচ্ছিল। দুদিন পরে দেখা গেল তারা যা বিক্রি করছে অধিকাংশই ডিজিটাল প্রিন্ট করা। তারা নাথদ্বার থেকে পিচওয়াই শিল্পীদের দিয়ে কিছু ছবি আঁকিয়ে নিয়ে সেগুলোর ডিজিটাল অনুকরণ করে কাপড়ে প্রিন্ট করেছে। জানতে পারার পর এনজিও-র কর্মীরা তাদের স্টলের সামনে ‘ডিজিটাল প্রিন্ট প্রোডাক্ট’ লিখে দিলেও তাতে ক্রেতাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না। ডিজিটাল প্রিন্ট করে তারা কীভাবে পিচওয়াই-এর মতো লুপ্তপ্রায় শিল্পের ক্ষতি করছে, তা তাদের শেষপর্যন্ত বলে বোঝানো যায়নি। ... ...
পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে । পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে। এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে । কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত । বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি। ... ...
ওদিকে রাত্রি নটার চেম্বার খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও কাকুকে বলে রেখেছি জ্বর আর এমারজেন্সি ছাড়া কোনো ক্রনিক রোগী না রাখতে। কাকু ফোনে তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি আয়। না হলে ভিড় জমে যাবে। পেটের মধ্যে ততক্ষণে মোচড় শুরু হয়েছে। চার চামচ ল্যাক্সিট প্লাসের আফটার এফেক্ট। যা থাক কপালে, জয় মা কালী বলে বেরিয়ে পড়লাম। কপালে ভালো কিছু ছিল না। খুপরিতে প্রথম রোগী দেখার সময়ই বুঝতে পারলাম জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি। যে করেই হোক এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে। নইলে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে প্রথম আসা নিম্নচাপ সামলে নিলাম। রোগীর বাড়ির লোক জ্বরের ধারা বিবরণী দিচ্ছিলো। আমার মুখের অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে গেল। ওষুধ পত্র লিখে তার হাতে প্রেস্ক্রিপশান ধরিয়ে বললাম, আগে ওষুধ খাও। না কমলে বাকি গল্প শুনব। ততক্ষণে আবার নিম্নচাপ আসছে। ... ...
ফারচা, আকুরি, সাল্লি, পপেতা পর ইডু, লগান্যু কাস্টার্ড… শুধু ধানশাক নামটা মাথায় নিয়ে এখানে হাজির হলে আর সব খানার আগে মোক্ষম ভ্যাবাচাকা খেতে হবে। কারণ কলকাতায় পারসি খানার এক বিরল ঠিকানা কিড স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলের ঠিক উলটোদিকে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট! নাম তার ‘মনচারজি’জ’। দীপঙ্কর দাশগুপ্ত ... ...
১৫ ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছিল সতর্কতামূলক গ্ণসংক্রম পরীক্ষা। প্রথম দিন হয়ত একটু এলমেলো অবস্থা ছিল কিন্তু পরে যথেষ্ট সুষ্টু ভাবে অঞ্চল অনুযায়ী মিশর, লেবানন, সিরিয়া থেকে আসা যাত্রী পরীক্ষা করা হয়। অনুপস্থিতিতে জেল ও নির্বাসন এর ভয়ে সকলেই এই পরীক্ষা নিতে বাধ্য। WHO নিয়মাবলী মেনে উপস্থিত সকলের মধ্যে ১ মিটার দুরত্ব বজায় রেখেই তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, ছিল খাবার এর ব্যাবস্থা ও। পরীক্ষার জন্যে কুয়েত ফেয়ার গ্রাউন্ড এর হলঘর টিতে ৮ ফিট দূরে দূরে চেয়ার পেতে দলে দলে শয়ে শয়ে মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, নেওয়া হয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত। সপ্তাহব্যাপী এই পরীক্ষা চলা কালীন বাকী কুয়েতবাসী কিন্তু ঘরবন্দী। যেহেতু শপিং মল, পার্ক, সিনেমা হল সমস্ত বন্ধ ছিল, ছিল ‘ঘর থেকে কাজ করবার’ কঠিন নির্দেশ রাস্তা য় একদম দরকার না হলে তেমন লোকজন দেখা যায়নি। ... ...
"আমাদের দেশভাগ এক জটিল, বহুস্তরীয় ইতিহাস। বিভিন্ন ছোটগল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথায় তার বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে। কোনও একটি লেখা তো তার সব কোণ ধরতে পারে না। তার উপর উদ্বাস্তু শব্দটা তো আর কোন সমসত্ত্ব গোষ্ঠীকে বোঝায় না। বিভিন্ন জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-দেশ-কালের স্থিতির ভিত্তিতে একেক জনের দেশভাগের স্মৃতি একেক রকমের। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লেখা জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় এক রক্তমাখা ইতিহাস। সেখানে হতাশা, দুঃখ, যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগ্রাম, সাফল্য আর ব্যর্থতার কাহিনি। যে দেশভাগ মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণ বাঙালি পুরুষের কাছে ধন-মান-প্রাণ নিয়ে পলায়ন, এবং পরবর্তীকালে এক ধরণের স্মৃতিমেদুরতার জন্মদাতা, সেই একই দেশভাগ অন্য অনেক মেয়েদের ব্যক্তিগত যাতনার উৎসমুখ।" জ্যোতির্ময়ী দেবীর "এপার গঙ্গা, ওপার গঙ্গা" আর গোপালচন্দ্র মৌলিকের "দেশভাগ ও ননীপিসিমার কথা" - পড়লেন স্বাতী রায়। ... ...
বরং বলি সেই অমাবস্যার আগের এক গোধুলির কথা যার সঙ্গে এ জীবন সংপৃক্ত হয়ে আছে। সেদিন ছিল চতুর্দশী কিংবা অমাবস্যা। কখন যে এক তিথি শেষ হয়ে অন্য তিথির আবির্ভাব হয়, তা পঞ্জিকাকাররা বলতে পারেন। বলতে পারেন মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র চেনা মানুষজন। জ্যোতির্বিদরা। সেদিন ছিল পিতৃপক্ষের শেষের আগের দিন। পরের দিন অমাবস্যা, কৃষ্ণপক্ষ শেষ হবে। তার পরের দিন থেকে আশ্বিনের শুক্লপক্ষ, দেবীপক্ষ আরম্ভ। আমার বাবা ভাদ্রমাসের পূর্ণিমার পর কৃষ্ণপক্ষ শুরু হলে পিতৃতর্পণ আরম্ভ করতেন। অমাবস্যার দিনে, মহালয়ার দিনে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে সেই তর্পণ শেষ হতো। মহালয়ার সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি সম্পর্ক রয়েছে। দেশভাগের পর এপারে এসে আমাদের পরিবার যে প্রথম মৃত্যুকে দ্যাখে, তা এই অমাবস্যা কিংবা চতুর্দশী ও অমাবস্যার সন্ধিক্ষণে। ... ...
কিন্তু আমার যাদবপুরে এম.এ. পড়তে আসাই হত না যদি না সেই গ্রীষ্মশেষের বিকেলে, কফিহাউসে গিয়ে টেবিল দখলের আগে, প্রেসিডেন্সির সিড়ির তলায় অপেক্ষারত প্রদ্যুম্ন ও আমার কাছে রীতিমত উদয় হয়ে, মানব বার্তা দিত, শহরে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বসেছে এবং তাতে তুলনামূলক সাহিত্য নামে এক নূতন বিদ্যা চালু হচ্ছে। আমাদের অনার্সের ফল বেরিয়ে গেছে, আমরা স্নাতকোত্তরের দরজায়। মানব জানাল, সে কলকাতায় বাংলা না পড়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য পড়বে। সেই বিভাগের প্রধান, বুদ্ধদেব বসুকে সে চেনে; তিনি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ... ...
মধ্যমানের ও তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ কর্মী নেওয়ার একটা বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। তা কম খরচসাপেক্ষ। একটু কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করা এবং নির্ভুল হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা না-রাখা, অনেকটা খরচ বাঁচায়। এর ফলে অত্যুচ্চপদস্থ উপরওয়ালা, কম লগ্নির মাধ্যমে আরও একটি আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দিয়ে তস্য উপরওয়ালার সুনজরে থাকতে পারেন এবং নিজস্ব উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার রক্ষাকবচ বজায় রাখতে পারেন। আরও একটি দৈনন্দিন সুবিধাও এর ফলে ঘটে। কম দক্ষতাসম্পন্নরা অনেক বেশি ইয়েস ম্যান গোত্রের হয়ে থাকেন। তাঁদের তর্ক করার প্রবণতা কম থাকে, যে তর্ক একদা নিউজরুমকে জাগরূক রাখত। ... ...
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ! ... ...