প্রদীপ হল (হ্যাঁ হল) আদি গঙ্গার পাড়ে। ফলতঃ প্রদীপের ছাদ ও ব্রিজের রাস্তা একই লেভেলে। রাস্তার ওপর টিকিট ঘর। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হতো। প্রদীপে টিকিট ছিলো ৫০ ও ৬৫ পঃ। ব্যালকনি নাই। কারণ থাকা সম্ভব নয়। থাকলে টিকিটের দাম হতো ১টাকা। ও কেউ কিনতো না। ১টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার বিলাসিতা ঐ অঞ্চলে কারুর ছিলোনা। সামাজিক অবস্থান। কে পি রায় লেন, ইউ কে মন্ডল লেন সংলগ্ন অঞ্চল। কলকাতার বেশ পুরোনো লালবাতি এলাকা ও বাংলার ঠেক। একটি সরকারী গাঁজা-চরস-আফিমের আবগারী দোকানও ছিলো। সে সত্যযুগে সরকার এসবও বেচতেন। হাজার হলেও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র। ফলে প্রদীপে সিনেমা দেখতে যাওয়ার নিষিদ্ধ যাত্রা কদাপি বড়দের কানে গেলে কান কামস্কাটকায় চালান অবধারিত। ... ...
মিউজিয়াম বলতে আমরা সাধারণ ভাবে যা বুঝি, নানা দেশে এমন কিছু মিউজিয়াম রয়েছে যেগুলি তার থেকে একদম স্বতন্ত্র। এই সিরিজের প্রত্যেক কিস্তিতে বর্ণিত হবে তেমনই কিছু অদ্ভুত মিউজিয়ামে ভ্রমণের কথা। এবারে ব্রিটেনের বিমিশ: দ্য লিভিং মিউজিয়াম অফ দ্য নর্থ। এ মিউজিয়ামে সব থেকে বেশি যা নজর কাড়ে তা হল, ঊনবিংশ শতকের শ্রমিকদের কঠোর শ্রম নিংড়ে কীভাবে চলছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চাকা তার ছবি, কোনো লুকোছাপা নেই। লিখছেন বৈশাখী মিত্র। ... ...
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে। ... ...
আমি রুকু বিনায়ক। সবাই বলে আমি বুদ্ধু। ভোঁদাই। মা আমাকে গাধা বলে না মুনা বলে। পাপা বলে পুচাই। আমার দুটো হাত,দশটা হাতের আঙ্গুল,দুটো চোখ আছে,যা দিয়ে আমি ছবি আঁকা। পাপা মা বলে আমার অটিজম আছে। অটিজম কী আমি জানিনা। তবে আমি একটু কেমন যেন। আমার গাড়ীর চাকা,টেবিল ফ্যান,ছোট ছোট রবারের পুতুল ,রং,তুলি পেন্সিল ভালো লাগে। আমি লাফাতে ভালোবাসি। এ দেয়াল থেকে ও দেয়াল। সব দেয়ালে হাতের চাপ,সব দেয়ালে সর্দি,নাকের পোঁটা লাগে। মা বলে যাতা। আর মোছে। এই শিশুদিবসে বিনায়করুকু গুরুচণ্ডা৯কে ছাপতে দিয়েছে তার ডায়েরির কিছু পাতা, বেড়ানোর গল্প, আর ছবি। বিনায়করুকুর সঙ্গে একটু বেড়িয়ে আসি এদিক ওদিক। ... ...
যতজন ভারতীয় বলিউডি ছবি দেখেন, ততজন নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শোনেন না। ফিল্মের মাধ্যমে কোন বার্তা দিলে সে বার্তা যে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং বার্তার জোর অনেক বেশি হয় সেকথা বামপন্থী, মধ্যপন্থী, দক্ষিণপন্থী --- সকলেই বোঝেন। উপরন্তু বলিউড ভারতের মানুষের কাছে পুরাণকথিত স্বর্গলোক, যেখানে দেবদেবীদের বসবাস। সুতরাং বলিউডি ছবির বার্তা বিরাট অংশের মানুষের কাছে বেদবাক্য --- কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনে --- এ কথা বুঝতে আধুনিক চাণক্য হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ... ...
একটা পিঁড়িতে উবু হয়ে বসে মা রান্না করত। রান্না হয়ে গেলে ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে উনুন নিকোনো হত আর উনুন থেকে একটা সুন্দর সোঁদা গন্ধ উঠত, ঠিক বৃষ্টি পড়লে যেমন হয়, তেমন। আমার বোন ঐ গন্ধের লোভে উনুন চাটত। অনেক বারণ, বকাঝকা করলেও তাকে থামানো যেত না। উনুনে সোঁদা গন্ধ উঠলেই, পিলপিল করে দৌড়ে ছোট্ট জিভ বার করে উনুন চেটে দিত। ভাঁড়ে রসগোল্লা বা দই এলেও সেই সব ভাঁড় কামড়াত। এত দুরন্ত, সামলানো যেত না – বাবা ওর নাম দিয়েছিল বিলবিলে বাহাদুর। সকলে যখন জিজ্ঞেস করত, বাবা কি নাম দিয়েছে? – গরবিনী উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করত – বিব্বিলে ভা-দুর। আমি বইপত্র নিয়ে থাকতাম, রান্নাঘরের দিকে অত নজর ছিল না, কিন্তু বোনের ছিল। দুপুরবেলা যখন কেউ দেখত না, ও-ই গিয়ে শিক দিয়ে, বড়দের মত উনুন খোঁচাত। ... ...
মিউকর সংক্রমণ চিরকালই ডায়াবেটিস কিংবা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের কম তাদের মধ্যেই দেখা যেত। এই বছরও যেসব কোভিড রোগীদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগ আছে অথবা মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যেই এই রোগটির সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু এটা বললেই চলবে না, তার কারণ কিছু কোভিড রোগী যাদের বয়স কম, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ নেই, যারা স্টেরয়েড পাননি তাদের মধ্যেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে , যা খুবই বিরল। এ থেকে আমরা এই ধারণা করতে পারি যে, করোনা রোগটি মানুষের শরীরে নিশ্চয়ই এমন বিশেষ কিছু করছে যাতে এই ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে এটাও বলে দেওয়া ভাল যে, সাধারণ মানুষের নাকে এমনিতেই যে মিউকর থাকে তা কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে তাদের এর থেকে কোনো ক্ষতিই হয় না। শুধু তাদেরই হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে সেটা কোভিড হোক বা ডায়াবেটিস হোক বা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজ রোগ হোক বা তাদের এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে যথা স্টেরয়েড বা অন্যান্য ওষুধ যেগুলো কিনা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর তাদের মধ্যেই এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ... ...
এ কোন সরকারী সংকলন নয়, নিতান্তই উড়ু উড়ু বসন্তপবনে জীবনের কিছু ধন জমিয়ে রাখা। অনেক লেখাই চোখ এড়িয়ে গেল, নতুন সাইটে সার্চের গোলযোগের ওপর একটুখানি দায় চাপানো যায়। যা হাতের কাছে পাওয়া গেল। পাঠকের সন্ধানে কোন চোখ এড়িয়ে যাওয়া লেখা থাকলে এখানে দিয়ে দিন, বা নিজের মত আরেকটা পিডিএফ বানিয়ে ফেলুন। ... ...
গত রাত থেকে শুরু হয়ে গেছে ২১ দিনের সর্বভারতীয় লকডাউন। সরকারী নির্দেশের একটি প্রতিলিপি আমাদের হাতে এসেছে। যেভাবে এসেছে, সেভাবেই তুলে দেওয়া হল। ... ...
আস্তে আস্তে পিতৃতান্ত্রিকতা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হল। বুঝলাম, রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিকরা যতই মিলনের রোম্যান্টিকতার ছবি আঁকুন না কেন, বিয়ে নামক মিলনের সমাজ-স্বীকৃত পথটি আদতে পিতৃতন্ত্রের মেয়েদের তাঁবে নিয়ে আসার অন্যতম রাস্তা। আর সেই বিয়েতে পাওয়া সম্পত্তিটিকে চিহ্নিত করে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই আদতে শাঁখা-সিঁদুরের জন্ম। এই বোঝার ঢেউ এসেছিল আমাদের আগের প্রজন্মেই, আমাদের প্রজন্মে বোঝাটা একটু বেশি জোরদার হল। অনেকেই বর্জন করলেন বিবাহের চিহ্ন। অনেকে নিলেন মধ্য পন্থা – কিছু বর্জন, কিছু রেখে দেওয়া, নিজের ইচ্ছা মত। একের দেখাদেখি আরও অনেকে। ... ...
ব্রিটিশ মেডিক্যাল অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়াররা জ্বরের সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ হিসেবে মূলত ধান খেতে জমে থাকা জল এবংপাড়া-গাঁয়ের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকেই দায়ী করলেন। নিজেদের প্রশাসনিক দায়িত্ব এড়াতে মহামারীর জন্যে পরাধীন দেশকেই “land of dirt, disease, and sudden death” বলে দাগিয়ে দেওয়াটা ছিল সাধারণ রেওয়াজ। কিন্তু এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে “হিন্দু প্যাট্রিয়ট” কাগজে ১৮৭২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১৮৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অবধি মোট ১৪ টি নিবন্ধ লিখলেন ১৮৬৪ সালের এপিডেমিক কমিশনের ভারতীয় সদস্য রাজা দিগম্বর মিত্র। ১৮৫১ সালের ২৯ অক্টোবর কলকাতার কাসাইটোলায় (বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট) গঠিত ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এসোসিয়েশনেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। নীল চাষের সমস্যায় রায়তদের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশদের কাছে সওয়াল করা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, সতীদাহ, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, খাজনার হারের ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রভৃতি সামাজিক বিষয় নিয়ে আইনগত ভাবে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করা ছিল সংগঠনের অন্যতম কর্তব্য। ... ...
এরকম এক সময়ে ফ্যাতাড়ুরা আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেনা। এরা নিজেরাই রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া অন্তর্ঘাতের অংশীদার হয়ে যায়। এর হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করেনা। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা। ঘটনাচক্রে এখানে আক্রান্ত হন বেচারা বিদ্যাসাগর। তিনি এই চলমান ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে যান। ... ...
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে প্রচারিত 'প্রোনিং' বিষয়ক পরামর্শ - বাংলা অনুবাদ। ... ...
এবার পুজোয় চলুন তেপান্তর। দেখুন তেপান্তরের দুর্গাপুজো। বাংলার গ্রামীণ দুর্গোৎসবের সাবেক চেহারাটি ফুটে উঠবে আপনার চোখের সামনে। মনে পড়বে বাড়ির বড়দের কাছ থেকে শোনা, পালকি নিয়ে কলাবৌ স্নান, আরতি, ভোগ, অঞ্জলি, সিঁদুর খেলা এবং বিসর্জন মিলিয়ে পুজোর চেনা ছবিটি। মন্ডপ সংলগ্ন মাঠে বাউল-ফকিরি গান, ছৌ নাচের সঙ্গে থাকবে পুরনো দিনের পুজোর সান্ধ্য অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অঙ্গ থিয়েটার। ভোগ ছাড়াও অতিথিদের জন্য রয়েছে খাওয়াদাওয়ার এক আন্তরিক আয়োজন। ছড়ানো সবুজ আর নানারকম পাখির ডাক আপনার মন ভালো করে দেবে। অজয় নদের তীরে সাদা বালির প্রান্তর এখন কাশফুলে ঢাকা। কাছেই রয়েছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষিত ইছাই ঘোষের দেউল। ইতিহাস পাগল মানুষেরা চলে যেতে পারেন সেখানেও। ৪একর জোড়া এলাকায় ছড়ানো ছোট ছোট কটেজে অতিথিদের থাকার চমৎকার ব্যবস্থা। এমনিতে এখানে প্রায় ১০০ জন অতিথি থাকতে পারেন। তবে পুজোর সময় ভিড় এড়াতে এখানে ৬০জন পর্যটকদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দশমীর দিন স্থানীয় আদিবাসীদের দাঁসাই পরব। দেখুন তাদের দাঁসাই নাচ, শহুরে সংস্কৃতি পেরিয়ে এক অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। ঘরে ফিরলেও তেপান্তর জেগে থাকবে আপনার অন্তরে। ... ...
আমাদের তথ্যানুসন্ধানের কাজ শুরু হয় ২০১৮-র এমন এক সময়, যখন ভাটপাড়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবন আগুন আর ছাইয়ের উপর দাঁড়িয়েছিল। ভাটপাড়া নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন সময়ে কিছু ফিল্ড সার্ভে-ও করেছিলাম। বছরখানেক পেরিয়ে এসে আমরা যখন পুরোনো বিবৃতিগুলির পর্যালোচনায় বসেছি, ঠিক তখনই কিছু নতুন শব্দকে কেন্দ্র করে নতুন করে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রূপ নিতে শুরু করেছে—‘নিজামউদ্দিন-মুসলিম-করোনা’। ইতিমধ্যে তেলিনিপাড়াতেও দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়, এবং ফলস্বরূপ হুগলি নদীর দু-পারেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ... ...
সাম্প্রতিকতম ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে যে সদ্যোজাত এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার গুজরাটের তুলনায় পশ্চিম বাংলায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। প্রতি ১০০০-এ গুজরাটে গড়ে ৩১.২ জন শিশুর (পাঁচ বছরের কম) মৃত্যু হয়। বাংলায় সেই সংখ্যা ২২। সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে দুই রাজ্যের সংখ্যা যথাক্রমে ২১.৮ আর ১৫.৫। গুজরাটে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যাও অনেক বেশি বাংলার থেকে। ... ...
ছবি দেখার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? (অথবা, রাগসঙ্গীত শোনার? সাহিত্যপাঠের? কিম্বা, ভালো সিনেমা দেখার? এককথায়, শিল্পবিষয়ে সচেতন চর্চার কি আদপেই কোনো যুক্তি আছে?) ভেবেছিলাম, এই প্রশ্নের অতি স্বাভাবিক উত্তরটি অস্তিবাচক। কিন্তু, কিছু আলাপ-আলোচনার শেষে বুঝলাম, এই প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর পাওয়া মুশকিল। যেমন, আমার মনে হয়, এই অভ্যেস জরুরী। এই প্রসঙ্গেই, আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, নান্দনিকতার বোধ গড়ে তুলতে এই অভ্যেস অবশ্যপ্রয়োজনীয়। পশ্চিমী দেশে, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত আর্ট গ্যালারী বা চিত্রপ্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়ার চল রয়েছে। এবং, শুধু দেখাই নয়, ছবি দেখে কেমন লাগলো, সেই অনুভব নিয়ে তাদের দস্তুরমতো লিখতেও হয়। এইভাবেই নান্দনিকতার বোধ তৈরী হয়, আর সাথে সাথে নিজের ভালো লাগাটিকে বিচার বা বিশ্লেষণ করার বোধটিও তৈরী হয়। সুকুমার হৃদয়বৃত্তির গঠনে এমন চর্চা বা পাঠ জরুরী, এমনই আমার ধারণা। ... ...
এই ধরণের নানান বঞ্চনা আর অত্যাচার এই মানুষগুলোর মোহভঙ্গ ঘটাচ্ছিল, সেই সঙ্গে জন্ম নিচ্ছিল ক্রোধ এবং হতাশা। অথচ এর থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা তাদের সামনে খোলা ছিল না। ফলস্বরূপ সমাজের একটা বড় অংশ ড্রাগ এবং অন্যান্য নেশার ঝোঁকে পড়ে যাচ্ছিল। এক সময় প্নজাব আর নেশা প্রায় সমার্থক হয়ে গেছিল – অশিক্ষা আর দারিদ্র পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছিল ক্রমশঃ। মানুষগুলো উদভ্রান্ত, দিশাহারা হয়ে পড়ছিলেন। স্বভাবতঃই এই প্রেক্ষিতে যখন ডেরা সাচা সৌদার মত আশ্রম এগিয়ে এল তাদের ত্রাতা হিসাবে, এরাও সাড়া দিলেন। না দেবার কোন কারণ ছিল না, কারণ ডেরা তাদের সম্মানজনক জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডেরায় এই মানুষগুলির শিক্ষালাভের ব্যবস্থা আছে, তাদের ড্রাগ ও অন্য নেশা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি, খাদ্যসংস্থান আছে। ডেরা তাদের কর্মসংস্থান দেয়, জীবনের উদ্দেশ্য দেয়। দিশাহারা অসহায় মানুষের কাছে খড়কুটোর মতন যে বাবাজী দিশা দেখাচ্ছে, সে রেপিস্ট কি না জানতে বা মানতে তাদের বয়ে গেছে। ভুললে চলবে না – পেটে সর্বগ্রাসী খিদে থাকলে কে আমাকে খাবার দিচ্ছে, সে খুনী না ধর্ষক, তাতে আমার কিছুই এসে যায় ... ...
বেগম কোম্পানি সাহেবের রাতের খানায় রাখবেন রোগনি রোটি, শামি কাবাব, বড় ডেগচিতে সারা রাত জারানো মাংস আর শালগম দিয়ে বানানো শাবডেগ। সঙ্গে মাহি পোলাও। ভাগীরথীর টাটকা মাছের পোলাও, কাঁটা ছাড়া, সুগন্ধি মশল্লায় জাফরানে আর গোলাপজলে আদুরে মখমলি মাছ ফিরিঙ্গি জিভে জমবে ভালো। বেগমের ইচ্ছে ছিল বারো ঘন্টা ধরে তরিবৎ করে বানানো সাত খানা পরত দেওয়া মিঠি পরোটাও রাখা হোক। হ্যাঁ, তাও হচ্ছে বৈকি শেষ পর্যন্ত! ... ...
আজ খুব বেশী রান্না হবে না। দুপুরের খাওয়া সেড়ে আজ মুড়ির ধান বানা হবে যে। আজ বাজারের ব্যাগ নিয়ে কোনো রিক্সাওয়ালাও তাই আসবে না। রান্নাঘরের মাচার নীচে রাখা সবজির ধামার তলানিতে যা আছে তা দিয়েই দুপুরের পর্ব সারা হবে। ঠাকুমা কালো পাথরের বাটি হাতে বড়ঘরের দিকে যেতেই আমি পিছু পিছু হাঁটা ধরি, ও ঠাকুমা নেলপলিশের রঙটা কত সুন্দর দেখছো? ঠাকুমা পেছনে ফেরে না, ওসব রঙ ভাল না; আমার দিদি তো রঙ ছাড়াই সুন্দর। আমি থেমে যাই। লাল বারান্দায় বসে ভাবি, কাল ফেরিওয়ালা এলে সব ফিরিয়ে দেবো। ... ...