জানতে চাইছ গতকাল থালি বাজিয়েছি কিনা। হ্যাঁ অবশ্যই বাজিয়ছি। তবে কিনা একবার দুবার নয়, গুণে গুণে ২১বার ! সুকুমার রায়ের " একুশে আইনে"র কথা মনে পড়ে গেল তো? আসলে একুশ দফার বক্তব্য আছে আমার। সেগুলো কানে তোলার জন্য একবার নয়,দরকার হলে বার বার থালা বাজাতেই থাকব। ... ...
কমিউনিস্ট বলতে জনমানসে এক বিচিত্র স্টিরিওটাইপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত সৎ হবে, তারা বহুজনহিতায় জীবন উৎসর্গ করবে, তারা সর্ববিষয়ে আদর্শ হবে, তারা প্রতিস্রোত হবে, নীরব সেবাব্রতী হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। সমস্যা হল সর্বগুণে গুণান্বিত সিপিএমের এই নব্যপ্রজন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে নি। ফলে এই বিচিত্র স্টিরিওটাইপ তাদের অধিগতও নয়, আকাঙ্ক্ষিতও নয়। তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। ... ...
হাজারে হাজারে লোক যাচ্ছে নিমোর উপর দিয়ে দল বেঁধে হেঁটে – ঘরে ফিরছে চাইছে তারা, জি টি রোড বরাবর, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছে তারা কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খন্ড, বিহারের দিকে। পিঠে, কোলে বাচ্ছা – বড় বড় বাক্স-ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। নিমোর রাস্তার ধারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন লোক খাচ্ছে – চাল, আলু ইত্যাদি জোগাড় হয়েছে। কিন্তু শেল্টার? ইচ্ছা করলেই আপনি ২৫-৫০ জনকে নিয়ে ভাবলেন গ্রামের কোথাও রেখে দেবেন, খাওয়াবেন – সেসব অত সোজা নয়। প্রশাসনের অনুমতিই মোষ্ট লাইকলি আপনি পাবেন না। যে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তাকে যেতে দাও – শ্রমিক-মজুর এদের কষ্ট-মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবার মতন সময় নেই বড়কর্তাদের। ... ...
এমিল সিওরান আয়রন গার্ডকে সমর্থন করেছিলেন বলে তোমার পলিটিক্যালি কারেক্ট পাছা ফেটে যাচ্ছে? ব্লাডি ইউনিভার্সিটি কালচার! এরপরে ঘূর্ণির মতো একটা প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়; উগো টোনিকে ফ্যাসিস্ট শুয়োর বলে। উত্তরে টোনি উগোকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে লিবারাল পুসি এবং উগোর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করে। উগো টোনির চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং ওদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বাকিসকলে ওদের থামানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে বিদায় নেয়; এরপরে পার্টি ভেঙে যায়। সেইরাতে মনজা থেকে মিলানে ফেরার সময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টোনিকে লক্ষ্য করছিলেন। গাড়ির ব্যাকসীটে জানলার ধারে চুপচাপ বসেছিল সে। মিলানে ঢোকার কিছুটা আগে হাইওয়ের ধারে গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল এবং সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করছিল। দূরে অন্ধকার রাতের প্রেক্ষাপটে মিলান শহরের আলোকোজ্জ্বল সিটিস্কেপ। টোনি সান্তোরো সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত একটা সিগারেট টানছিল। হঠাৎ সে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের দিকে ফিরে বলল, ওরা আমাকে ইউরোসেন্ট্রিক বলে। ... ...
সমস্যার বিপদসংকেত শোনা যাচ্ছে পাহাড়েও। পুরো হিমালয় অঞ্চল আজ বিপদের মুখে। ধ্বস, ভূমিকম্প হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। অথচ তার মধ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে আরো পর্যটনকেন্দ্র যার অর্থ আরো বিলাস ব্যসন আর দেদার ফুর্তির মোচ্ছব। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের সাততালে এমনই এক পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। সাততাল একটি অতি নিরিবিলি জায়গা, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ। প্রতিবাদ হচ্ছে, যদিও জানা নেই শেষ পর্যন্ত এই পাখিরালয়টিকে পর্যটকের ভিড় থেকে বাঁচানো যাবে কিনা। সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবটি অন্যান্য রাজনৈতিক কারণগুলির সংগে যুক্ত হয়ে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। ... ...
কখনও ভেবেছেন কি সিংহ এদেশে গুজরাত ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না, আর বাঘ প্রায় সব রাজ্যে! অথচ প্রাচীন হিন্দু বা বৌদ্ধ ভাস্কর্যশিল্পে সিংহ সর্বব্যাপী আর বাঘ প্রায় অনুপস্থিত। ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভের শীর্ষভাগ- সেখানেও সিংহ। রাজারা বসতেন সিংহাসনে। বুদ্ধও শাক্যসিংহ। সিংহ থেকে সিংহল, সিংহ থেকে সিঙ্গাপুর। ... ...
সমস্যা সম্ভবত সিপিএমের দৃষ্টিভঙ্গিতেই লুকিয়ে আছে। কদিন আগে একটা মিম, সিপিএমের লোকজন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ছড়িয়েছে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কোনও এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, কেরালার কোনও এক জায়গায় বিজেপি মিউনিসিপালিটির এক আধটা আসন জিতেছে, কী ভাবছেন বিজয়ন? তিনি নাকি বলেছেন, ঐ এলাকার মানুষের শিক্ষাগত মান বাড়ানোর ব্যাপারটা আমরা চিন্তা করছি। বিজেপির মত এক ফ্যাসিস্ত দল, কেরালায় সামান্য হলেও সংগঠন বাড়াচ্ছে কারণ মানুষ অশিক্ষিত, মানুষের বোধ বুদ্ধি নেই, মানুষ ভুল করছেন। এই ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে? ... ...
প্রেমিকাকে বিরল দুধরাজনাগ সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে সাপ-পাগল এক যুবার সর্পদংশনে মৃত্যু স্থানীয় হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম সিরাম না থাকায়। কল্পধন্বন্তরির আশায় মৃতদেহ মঞ্জুষে শুইয়ে মনসার ভাসান গাইতে গাইতে গ্রামবাসীর নদীপথে যাত্রা। আশাভঙ্গে অবশেষে মৃতকে গঙ্গায় অর্পণ। তিন দশক আগের মালদা-সন্নিহিত নদীবহুল উত্তরবঙ্গের পটভূমিতে রচিত আখ্যান। অভিজিৎ সেনের নতুন উপন্যাস নাগমঙ্গল। পাঠ করলেন শিক্ষাবিদ ও লেখক অমিয় দেব ... ...
শুনেছিলাম, এই বসুশ্রীতেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিৎ রায়ের আলাপচারিতার গল্প। যদিও সত্যজিৎবাবুর ছবিতে শেষ পর্যন্ত ভানুর অভিনয়ের সুযোগ হয়নি, তবে দু’জনের পরিচয় অবশ্য ‘পথের পাঁচালী’র সময় থেকে। বসুশ্রীতে সেই ছবি দেখে মন্টু বসুর অফিস ঘরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন ভানু। সত্যজিৎও তখন সেখানে বসে। ভানু তাঁকে চেনেন না। পরিচয় হতেই ভানুর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘মশাই, করেছেন কী! আপনি তো কালে-কালে কানন দেবীর মতো বিখ্যাত হবেন!’’ অনেকদিন পরে, এই বসুশ্রীতেই, সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র প্রথম ‘শো’-য়ের শেষে বেমক্কা প্রশ্ন করেছিলেন কোনও সাংবাদিক। শুনে আমাগো ভানুর ঝটিতি জবাব, “লেখাপড়া না-জানলে উনি (সত্যজিৎ রায়) তাঁর ছবিতে পার্ট দেন না।” শুনে অপ্রস্তুত সত্যজিৎ রায় তখনই ‘না-না’ বলে ওঠেন। সবিনয় বলেন, আমি ওঁর খুবই গুণগ্রাহী। উপযুক্ত রোল থাকলে অবশ্যই ভানু বাবুকে নেব।” ... ...
মহামারীর প্রাদুর্ভাব নতুন কিছু নয়। বেদ-বাইবেল-পুরাণের যুগ থেকে শুরু করে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে নানান কালান্তক রোগের সংক্রমণ পীড়িত করেছে মানব সভ্যতাকে। দেশ-বিদেশের সমাজ রোগের অভিঘাত মোকাবিলা করেছে বিচিত্র ভঙ্গিতে। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি ঘটেছে, তবে তারই পাশাপাশি এলিজাবেথান ইংল্যান্ড বা ঔপনিবেশিক বঙ্গে রোগকে ঘিরে উৎপত্তি হয়েছে কৌতুককর ঘটনার, পাখা মেলেছে মানুষের অন্ধবিশ্বাস, আধিপত্য বিস্তার করতে, চলেছে কৌশলী রাজনীতির খেলা। আর নিরুপায় সাধারণ মানুষ আশ্রয় খুঁজেছে দৈব নির্ভরতায়। পাঁচ পর্বের এই লেখাটিতে মহামারীকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে পাঁচটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে। কোথাও যেমন সমকালীন সাহিত্যে তার প্রতিফলন খোঁজা হয়েছে, তেমনি কোথাও আবার উঠে এসেছে রোগের বিচিত্র চিকিৎসা-পদ্ধতি এবং মারী -কেন্দ্রিক রঙ্গ-রসিকতা। ঔপনিবেশিক বঙ্গে জাতীয়তাবোধের উন্মেষের সন্ধান করতে গেলে তারও একটি সূত্র মিলবে দেশজ চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার আগ্রাসী ছায়া বিস্তারে। আবার কলেরার হানায় ব্রিটিশদের আতঙ্ক প্রকাশ পেয়েছে তিনশ বছর আগে হাওড়া ও কলকাতায় খোদ ব্রিটিশ সওদাগরের অর্থে ওলাবিবির মন্দির গড়ে ওঠার ঘটনায়। আর করোনা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে এই একুশ শতকে লৌকিক দেবদেবীর তালিকায় নবতম সংযোজন করোনা মাতা। ... ...
“আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি তাকে ভোট দিন”—এই স্লোগানের কার্যকারিতা নিয়েও আমাদের সন্দেহ আছে, সাধারণ মানুষ সেফোলজিস্ট নন জ্যোতিষও নন। তাহলে তাঁরা কীভাবে জানবেন কে জিতবে? গত লোক সভা নির্বাচনে ভাবা গিয়েছিল কংগ্রেস ফিরছে, কিন্তু বিজেপি আরও শক্তি নিয়েই ফিরেছে। ... ...
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। ... ...
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গোড়াপত্তনের প্রারম্ভ্রে বাঙালি জাতি সাময়িকভাবে এক বিভাজনের রাজনীতির শিকার হয় যা অবিভক্ত বাংলার ভৌগোলিক মানচিত্রকে আপামার জনসাধারণের মানসচিত্তে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ রূপে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিল। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ প্রশাসনিকভাবে ১৯১১ তে রদ হলেও তা বাঙালি জাতিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সামাজিক সীমারেখা দিয়ে ধর্মীয় (হিন্দু বাঙালি এবং মুসলমান বাঙালি) ও প্রাদেশিক (পূর্ববঙ্গনিবাসী 'বাঙাল' এবং পশ্চিমবঙ্গবাসী 'ঘটি') পরিচিতিতে ভাগ করে দেয়। অতএব বাঙালি জাতি ১৯১০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে একদিকে ছিল বঙ্গভঙ্গের ক্ষতের সামাজিক অস্থিরতায় দোদুল্যমান এবং অন্যদিকে হয়ে উঠেছিল ফুটবলকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী আবেগে বিচ্ছুরিত। এই পটভূমিকায় পয়লা অগাস্ট ১৯২০তে ইস্টবেঙ্গলের আত্মপ্রকাশ সমগ্র বাঙালির কাছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। সেই ইতিহাসে শুধু ফুটবল ছিল না, ছিল ফুটবলের প্রতিযোগিতাকে হাতিয়ার করে নব্য শুরু হওয়া সংকীর্ণমনা আন্তর্দেশীয় প্রাদেশিকতা ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ঘৃণ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে পরাস্ত করার শপথ। তাই বলাবাহুল্য যে ইস্টবেঙ্গলে যাত্রা শুরুই হয়েছিল লড়াইয়ের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে। ... ...
“Repeat a lie often enough and it becomes the truth” - নাৎসি জার্মানির যোসেফ গোয়েবেলস এর এই নীতিকে ভিত্তি করেই আজকের ভারতে যে ছায়াচ্ছন্ন সত্যের ব্যাবসা চলছে, তা আরেকবার বোঝা গেলো গত ৮ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতা বইমেলার ঘটনায়। ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতির যে পরিবেশ তাকে বারংবার উত্তপ্ত করতে এই মিথ্যেগুলোকে বারে বারে প্রচার করা হয়। ধীরে ধীরে এরই কিছু ঘটনা সত্যি বলে মেনে নেয় কিছু মানুষ। ... ...
লীলাবতী সম্বন্ধে যা তথ্য পাওয়া যায়,তার ওপর ভিত্তি করে এটি একটি কাল্পনিক কাহিনী, প্রামাণ্য প্রবন্ধ নয়। লীলাবতী সম্বন্ধে নানা মত আছে - কেউ বলেন বাল্যবিধবা কন্যাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য ভাস্করাচার্য পাটীগণিত অধ্যায়ের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। অন্য আর-এক মতে মেয়েকে পাটীগণিত শেখানোর জন্যই নাকি ভাস্করাচার্য পাটীগণিত অধ্যায়টি রচনা করেছিলেন এবং মেয়ের নামে নাম রেখেছিলেন ‘লীলাবতী’। অনেকে বলেন ভাস্করাচার্যের স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী, এঁদের কোনো সন্তান ছিল না। সেই শোক ভোলার জন্য এবং স্ত্রীর নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি পাটীগণিত গ্রন্থের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। ... ...
পুরো রাজনীতি আজকে দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেশে বলুন বা আন্তর্জাতিক স্তরে, দক্ষিণপন্থী প্রবণতা হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সাহেব থেকে বৃটেনের ব্রেক্সিটওয়ালারা থেকে আমাদের খাঁটি স্বদেশি মোদি সরকার – হক্কলে ভূমিপুত্র রাজনীতির ডালে দক্ষিণমুখী বাসা বেঁধেছেন। আসাম ব্যতিক্রম নয়। আসাম আন্দোলনের সময়ে কিন্তু ছবিটা এরকম ছিল না। বামপন্থীরা হিংস্র জাতীয়তাবাদীর স্রোতের প্রতিকূলে গিয়েছিলেন, নিজের রাজনীতি রাখার ধক দেখিয়েছিলেন। বিনিময়ে পার্টি (সি পি আই, সি পি এম – দুই পার্টিই) বহু কমরেডের শাহাদত স্বীকার করেছিল। আজ বছর চল্লিশ পরে দলগুলোর সেই তাত্বিক বা ব্যবহারিক ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না যে একটা ঠিকঠাক রাজনৈতিক লাইন নিতে পারে। ... ...
অনেকের মনে হচ্ছে একটা বার্তা দেওয়া দরকার যে সব বাঙালি একেবারে সাচ্চা হিন্দু রামভক্ত বিজেপির বানরসেনা হয়ে যায়নি। অতএব শুভ কাজে বিলম্ব না করে কয়েকজন মিলে শুরু করে দেওয়া হোল একটা ছোট্ট উদ্যোগ – বিজেপি বিরোধী বাঙালিদের গ্রুপ – বর্গী এল দেশে। ... ...
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না! ... ...
সিন্ধুলিপি যেমন প্রায় দেড়শো বছর ধরে নানান পণ্ডিত গবেষকের কাছে একটি খুব শক্ত চ্যালেঞ্জিং সমস্যা হিসেবে আদৃত হয়েছে, তেমনই অনেক অত্যুৎসাহী পাঠোদ্ধারকের নানান অদ্ভুত পাঠোদ্ধারের দাবিতে লাঞ্ছিতও হয়েছে খুব বেশী। এই ভুলভাল পাঠোদ্ধার সম্পর্কে খুব মজার একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন বিশ্ববিশ্রুত ভারততাত্বিক আসকো পারপোলা (Asko Parpola), তাঁর ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত "Deciphering the Indus script" নামের বিখ্যাত বইতে। পারপোলা দেখিয়েছেন যে, স্প্যানিশ মিশনারি পণ্ডিত ফাদার হেরাস (Enric Heras de Sicars ওরফে Henry Heras) তাঁর ১৯৫৩ সালে লেখা একটি বইতে সিন্ধুলিপির অদ্ভুত সব প্রোটো-দ্রাবিড়ীয় পাঠোদ্ধার ক'রে খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন। এমনকি হেরাসের গবেষণার সম্মানার্থে ভারতীয় সিকিউরিটি প্রেস উনিশশো একাশি সালে হেরাসের ছবি আর মহেঞ্জোদারোয় পাওয়া একটি সিন্ধুলিপিযুক্ত সীলের ছবি পাশাপাশি রেখে প্রায় কুড়িলক্ষ ৩৫ পয়সার ডাকটিকিটও ছাপায়। এখন দেখা যাক ফাদার হেরাসের পাঠোদ্ধারের ধরণ ঠিক কিরকম ছিল! ... ...
তো কেদারনাথ মজুমদার পুরা রামায়ণখান দুর্ধর্ষভাবে বিশ্লেষণ কইরা সাইরা একটু মিন মিন কইরা যুক্তি দেখান যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামের গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরু খাওয়ার কথা তো পাই নাই। মনে হয় এইটা বঙ্কিমের সেই বিশ্লেষণের ধাচেই পড়ে। আমরা বুঝতে পারি কেদারনাথ কেন সেইটা পাশ কাইটা যান বা কমজোর গলায় কন- না তো। নাই তো। গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরুর মাংস দিয়া মাখাইয়া ভাত খাইবার কথা তো নাই। যাউকগা। রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়ার প্রচলন তো আছিলই উল্টা গরুর মাংসটাই আছিল শ্রেষ্ঠ মাংস বইলা গণ্য। গরু খাওয়া বন্ধ হয় মূলত বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে… রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়া হইত না; গোসব যজ্ঞ কইরা মূলত মধু দিয়া রান্না করা গরুর মাংস গাঙে ফালায় দেয়া হইত দেবতাগো খাইবার লাইগা; এইসব কথা কেউ কইলে অন্যদিকে ধইরা নিতে হইব যে তিনি বা তিনারা রামের বয়স বুদ্ধদেবের থাইকা কমাইয়া নিয়া আসছেন। আর রামায়ণরেও কইরা দিতে চাইছেন বৌদ্ধ উত্তর সাহিত্য... ... ...