এতো গলি কথা থেকে এলো? সরু সরু, অন্ধকার, দম আটকে আসা গলি, সাপের মতো এঁকেবেঁকে একটার গায়ে আর একটা জড়িয়ে, দুদিকে ছায়া ছায়া গঠন যতো, বাড়ি, নাকি আর কিছু? প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো ভোলানাথ, গলি ধরে। দ্যাখে উল্টো দিক থেকে কে যেন এসে দাঁড়িয়েছে নিশ্চুপে। আরে এ কী! এ যে অলড্রিন লিংডো ! শিলং থেকে এসেছিলো, আগ্রার রেস্তোঁরায় কাজ করতো, লকডাউনে টাকা না পেয়ে ২রা এপ্রিল ঝুলে পড়েছিল মাঝরাতে, আগ্রার ভাড়া বাড়িতে। কি সর্বনাশ! সে এখানে কেন? পাগলের মতো ঘুরে অন্য দিকে দৌড়োতে শুরু করে ভোলানাথ। পালাতে পারবে না বোধহয়, বুঝেছিলো। তাও দৌড়োচ্ছিলো, প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো, গলি থেকে গলিতে, আরো গলিতে, গলির গলি তস্য গলিতে। যতক্ষণ না আবারো আরো একটা গলির মুখ থেকে ধীরপায়ে হেঁটে আসতে থাকে নতুন দিল্লির এক রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি বয় রণবীর সিং। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা গ্রামের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছিলো পায়ে হেঁটে, কাজ খুইয়ে। প্রায় সোয়া দুশো কিলোমিটার হাঁটার পরে, যখন তার বাড়ি আরো প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে, আঠাশে মার্চ রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে। হৃদযন্ত্র সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে আবার গলি পাল্টায় ভোলানাথ, দৌড়োতে থাকে পাগলের মতো, হাঁফায়, মুখ দিয়ে মোটা মোটা সুতোর মতো লালা ঝরতে থাকে, বুক যেন ফেটে আসবে। ... ...
প্রভাবশালী মুসলমান রাজনৈতিক নেতা এ বাংলা কম দেখেনি। শেরে বাঙ্গাল ফজলুল হক, সুরাওয়র্দী, ঢাকার নবাব খ্বাজা সলিমুল্লা বাহাদুর, আবদুল গনি খান থেকে আজকের সিদীকুল্লা চৌধুরী, অনেকে এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম একজন ধর্মগুরু সরাসরি রাজনীতিতে এলেন, তাও ফুরুফুরা শরীফের মতো সারা উপমহাদেশের কাছে মান্যতাপ্রাপ্ত এক মাজারের পীরজাদা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তার রাজনৈতিক দিশা। না, তিনি শুধু মুসলমানেদের হয়ে কথা বলছেন না। তার দাবী অনুযায়ী তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু, আদিবাসী এমনকি অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধি। এখানেই হিসাব পাল্টালেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ... ...
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক। ... ...
মেয়েমদ্দ বাচ্চারা পালাতে চাইছিল। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর মরদদের মাথায় বাড়ি। বলতে বলতে সুরজ কাঁপছিল, গোঙাচ্ছিল। ইসমাইল ওকে জল খাওয়ায়, জিগ্যেস করে লুটেরারা কোন ধ্বনি দেয় নি? সুরজ কেমন চুপ হয়ে যায়, খুব আস্তে বলে ‘আল্লা হু আকবর’ তারপর বাতাসের স্বরে ফিসফিস করে বলে ‘আমি দেখেছি ওদের অনেকের কপালে কমলা টিকা ছিল, লিডারের হাতে প্রধান নৌকরজির ফোটু ছিল’। ইসমাইল ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সুরজের মুখ চেপে ধরে ‘চুপ চুপ। খবরদার এইসব এখানে আর কাউকে বলবি না, আমার জানও চলে যাবে। ... ...
মির্জা অসদুল্লা খান গালিব। নিজের কালে পরিচিতই ছিলেন ‘মুশকিল-পসন্দ্’ বলে। তাঁর চারপাশে তৈরি হয়েছে এনিগমার কুহেলি। কারণ তিনি আধুনিক, তিনি যুগের থেকে এগিয়ে। উর্দুর মহানতম কবি। কিন্তু শুধু সেইটুকুই নয়, এ কেতাব জুড়ে উঠে এসেছেন এক রক্তমাংসের মানুষ, সব দুর্বলতা, ব্যর্থতা নিয়ে। ইংরেজিতে যাকে বলে—‘আপ, ক্লোজ অ্যান্ড পার্সোনাল’। তাই এ বইয়ের স্বাদই আলাদা। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
পপুলার ছবি, তার জন্মলগ্ন থেকেই, দায় নিয়েছে ভারতের অতি-জটিল রাজনীতির মুখ্য প্রবক্তা হবার, আবার সে রাজনীতির বিনোদনের যোগান দেবারও বটে।ভারতীয় রাজনীতি-- এবং তার বিনোদনের চাহিদা-- পালটায় প্রতি দশকে, পালটায় তার জননীতি, জনসমর্থন এবং অনুভাগগুলি। সংস্কৃতির এক বিচিত্র নিয়মে অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকেই হিন্দি ছবি তাল মিলিয়ে চলছে এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে। একে শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অনুগমন বললে ভুল হবে, বরং হিন্দি ছবির রূপান্তর অনেকসময়েই তার সহোদরা-- দেশীয় রাজনীতির সাথে সম্পূর্ণ সমান্তরাল, কখনও কখনও মাসেরও বিলম্ব হয় না, উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরী অবস্থার (জুন) বজ্রনির্ঘোষের ক’মাস আগে পরের মধ্যে রিলিজ করে যায় ‘দিওয়ার’ (জানুয়ারী) এবং ‘শোলে’ (অগস্ট)। দুটি ছবিই প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং ভিজিল্যান্টিজমের সমর্থক; একপাশে দস্যুরূপী অসুরদলনের রূপকথা, অন্যদিকে সমসাময়িক ধূমায়িত গণ-অসন্তোষের আগুনে হাত সেঁকা। গব্বর সিং আপাত-অরাজনৈতিক, কিন্তু সে কী সত্তরের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিভূ নয়? ... ...
খসড়া প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এদিনের সভায়। শুরুতেই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় একটি বিষয় সম্পর্কে তাঁর সংশয়ের কথা জানান। তিনি বলেন, বিজেপি-কে ভোট দিতে না-বলার ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, কাকে ভোট দিতে হবে, সে প্রসঙ্গের উল্লেখও জরুরি। ... ...
সম্পূর্ণ ঘটনাচক্রে, একটি অখ্যাত গ্রামে ব্যাঙ্কিং শিক্ষাদানের সুযোগে, আমার যে শুধু পোল্যান্ড-সহ লৌহ-যবনিকার আড়ালে ঢাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হল, তা-ই নয়, অ্যালান হার্স্টের মত এক অসাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সিটি ব্যাঙ্কে যোগ দেবার আগে তিনি আমেরিকার ডেমোক্রাট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং আই টি সেল নামক আধুনিক জনসংযোগের তুখোড় মাধ্যম ভোটারদের তখনও অজানা। পার্টির ইস্তাহার, ম্যানিফেস্টো এবং বক্তৃতার ড্রাফট লিখতেন লেখাপড়া জানা ভদ্র মানুষজন। গুজব শুনেছি, উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন নামক এক যুবকের নির্বাচনী ভাষণের খসড়া করেছেন অ্যালান। বত্রিশ বছর বয়েসে ক্লিনটন লিটল রক, আরকানসাসের (মতান্তরে আরকানস’) রাজ্যপালের অফিসে অধিষ্ঠিত হলে, আপন রাজনৈতিক কর্তব্য সমাপ্ত হয়েছে মনে করে অ্যালান ব্যাঙ্কিং-এ এলেন। সিটি ব্যাঙ্কে সিকি-শতাব্দী কর্ম করেন, মুখ্যত উন্নয়নশীল পূর্ব ইউরোপে। ... ...
পিটার পিওট জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা, স্নাতকোত্তর গবেষণা এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ডিরেক্টর।ফিনান্সিয়াল টাইমস তাঁর সম্বন্ধে বলেছে "বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত 'ভাইরাস শিকারী' "। প্রফেসর পিওট ১৯৭৬ সালে জাইরেতে ইবোলা ভাইরাসটির আবিষ্কর্তাদের মধ্যে একজন। তিনি ১৭টি বই আর ৬০০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বই এর মধ্যে আছে ২০১২ সালে WW Norton থেকে প্রকাশিত 'No Time to Lose' নামের ওঁর স্মৃতিকথা, যেটা ফরাসী, ডাচ, জাপানি এবং কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত, আর আছে 2015 সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত 'AIDS between science and politics'। ... ...
প্রায় উনিশ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরভাষে জয় গোস্বামীর এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চিরন্তন কুন্ডু । জয় তখন ছিলেন আইওয়া-তে একটি রাইটার্স ওয়ার্কশপে। চিরন্তন এবং জয়-এর অনুমতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হল। ... ...
গোদি মিডিয়া যখন এই সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে ফেলেছে, দেশদ্রোহী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিন্তু পুরো ব্যপারটাকে পাত্তাই দিল না। ভারতীয় বাদে প্রায় সারা পৃথিবীর মিডিয়া রিপোর্ট করল যে ভারত হামলা করেছে ঠিকই, কিন্তু তা একটা ফাঁকা, পরিত্যক্ত জায়গায়, এবং কেউ হতাহত হয়নি। কোন জঙ্গি ঘাঁটিও ধ্বংস হয়নি, তবে দু-তিনটি পাইন গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ... ...
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে। চোখের সামনে আকাশ ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে ওঠে। আলতা রঙের পোঁচ পড়ে তার উপর। শুধু জনারণ্যে কিছু ঘুড়ি, পাখিদের প্রতিনিধি। গঠন নয়, ঘুড়ি চেনা যায় তার উড্ডয়ন-কৌশলে। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে চাক চাক ধোঁয়া, যেন নোয়াঠাকুমার আর্তি, খুঁজে নেয় আলপথ—ফরিদপুর। তাদের গতিপথ বিভ্রান্ত সরল, অর্থাৎ বক্র। গুলের আঁচ ওঠা উনুন—খানিক উপরে বুড়ির দু'টো চোখ আর ফুলে ওঠা টিকোলো নাক এক প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে, যা আকারে ক্রমশ বড় হতে থাকে। মাথার ভিতর শৃঙ্খলিত ধ্বনি, রঙ আর হঠাতই কালো হয়ে ওঠে আকাশ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, সব সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্য এই রাত, তার বেদনা, যা কেবল অনুবাদে সাবলীল... কুকুরেরা জেনে গেছে সব। সন্ধ্যার আজান আর মিলিটারি রুট মার্চ পরপর শুনে নমনীয় করে তোলে নিজেদের। স্থির হয়। সঙ্গম স্থগিত রাখে আজ। ... ...
এটা কি শুধুই সমাপতন যে একবছর আগে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেবার দিনটি অর্থাৎ ৫ আগস্টকেই বাছা হয়েছে রামমন্দিরের শিলান্যাসের জন্য? নাকি মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সম্পূর্ণ বঞ্চিত ও হতোদ্যম কাশ্মীরের ক্ষতে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে দেশজোড়া সংখ্যালঘুকে বোঝানো হল তার দৌড় কতটা? তৈরি করা হল দুষ্টের দলন শিষ্টের পালন জাতীয় একটি মিথ? বলার চেষ্টা হল কি যে তুমি যদি মুসলমান-বিদ্বেষী হও তবে রামলালা স্বয়ং তোমার রক্ষাকর্তা? সরাসরি সেলিব্রেশন বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে, সুতরাং আইস, আমরা অপ্রত্যক্ষভাবে দুষ্ট-দলন দিবসটিকে যথোচিত মর্যাদায় পালন করিয়া ছাড়ি। ... ...
হেরিটেজ ওয়াকে দেখানো হয় না এই কলকাতা। কলকাতা-বিশেষজ্ঞ কলমচিদের অধিকাংশ কেতাবের গালভরা গল্পে এ কলকাতা অনুপস্থিত। শহরের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সৌন্দর্যের যুক্তিতে এ কলকাতার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন, যেমনটা দেখিয়েছিল ‘অপারেশন সানশাইন’। এ কলকাতা বাস করে ফুটপাথে। গৃহহীনদের কলকাতা। ভিখিরিদের হোটেলের কলকাতা। জঞ্জাল-কুড়ুনি শিশুদের কলকাতা। রাস্তায় দাঁড়ানো গণিকার কলকাতা… একটি বই। পড়লেন শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য। ... ...
জরুরি অবস্থা চলাকালীন ১৯৭৫ সালের অগাস্ট মাসে পদত্যাগ করেন সিপিআই(এম)-এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া। দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের কাছে লেখা ঐ মাসের ২২ তারিখের চিঠিতে তাঁর পদত্যাগের যে দশটি কারণ উল্লেখ করেছিলেন তার প্রথমটিই ছিল জনসংঘ ও আরএসএস নিয়ে পার্টির অবস্থান। তিনি এই দুই শক্তিকে সাথে নিয়ে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করার যে পার্টি লাইন তার বিরোধী ছিলেন। এমনকি তিনি আরএসএস কে ‘আধা সামরিক ফ্যাসিস্ট’ বলেও অভিহিত করেন। যদিও এর শিকড় আরো গভীরে, অবিভক্ত কমুনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক পিসি যোশিও স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই এই মৌলবাদীদের নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পার্টির মধ্যেই তীব্রভাবে সমালোচিত হন। এই দোদুল্যমানতা থেকেই কিছুকাল পূর্বেও জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখায় অটল ছিল সিপিআই(এম)। সুতরাং ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আব্বাসকে সাথী করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বাড়ানোর বাসনা কোনো ভাবেই বিস্ময়জনক তো নয়ই বরং তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যথেষ্ট সংগতিপূর্ণ। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হবে আফ্রিকার গভীরে অভিযান। চলছে জোর প্রস্তুতি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায়। ... ...
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। ... ...
অরুণাচলের অন্যান্য ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকায় যত বাঘ আছে তার চেয়ে ঢের বেশি আছে দিবাং ভ্যালিতে। অরণ্যের প্রতি ভালবাসা এতো গভীর যে ইদু মিশমি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের সমাধিতে রাখা থাকে বিভিন্ন শস্য ও বৃক্ষের বীজ সম্বলিত একটি বটুয়া। মৃত্যুর পরেও যেখানে সে যাবে, সেখানেই গড়ে উঠবে গহীন অরণ্য। গত ২০ শে এপ্রিল ২০২০ করোনা অতিমারিতে ব্যস্ত সাধারণকে অন্ধকারে রেখে একটি ভিডিও কনফারেন্সের পর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এই স্বর্গে বন কেটে গড়ে উঠবে বিশাল এক হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট, দেশের বিশালতমগুলির মধ্যে একটি। এই প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে সরকারি আস্তিনে লুকোনো তাসের মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল বাঁধ, দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, ভূগর্ভস্থ পাওয়ারহাউস, ৫০ কিমি ব্যাপ্ত রাস্তাঘাট। এসব করতে কিছু গাছ কাটা তো অবশ্যম্ভাবী। এই "কিছু"র সংখ্যা হলো ২.৮ লাখ গাছ, যাদের অনেকেরই গুঁড়ির ব্যাস ৮ মিটারেরও বেশি। ... ...
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ... কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও! ... ...
দেশের বাজেটের মত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বাজেটেও একটা হিসাব থাকে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ । আগে মাসকাবারির থলেতে থাকত বড়জোর একটা বোরোলীন বা একটা হিমানী স্নো , কিউটিকুরা পাউডার , সঙ্গে কিছু নিখরচার ঘরোয়া প্রসাধনীতেই কাজ চলে যেত । আজকাল সব মিডিয়া জুড়ে অবিরত পুঁজিবাদী কর্পোরেট দুনিয়ার ইস্কুল চলে । রোগা ভোগা গ্রামীণ গৃহবধূ ও অভাবী সাফাইকর্মী সবাই সেই ইস্কুলের ছাত্রী--এরকম সব রোগীরা দেখাতে এসে ঝোলা থেকে উপুড় করে নামিয়ে দেখায় -- নামী ব্রান্ডের হাজার হাজার টাকার অপ্রয়োজনীয় বিউটি প্রডাক্ট --"এইসব মাখি ,তবু গ্লো আসছে না "। যদি প্রশ্ন করি -"সকালে কি খাও মা? দুপুরে? রাতে?" তাদের বিরক্ত চোখমুখ বলে সুষম খাদ্যের কোনো বালাই নেই । যদি বা এতবছর ধরে এত লড়াই করে মেয়েদের হাতে সামান্য ক্রয়ক্ষমতা এল --সেই অর্থ এমন বিপথে ডাকাতি হয়ে যায় ! 2020 সালেও দেখি--বহু কষ্টে পড়াশোনা করে পাওয়া চাকরি , বরের আবদারে ছেড়ে দেয় মেয়ে আর বিবাহবার্ষিকীর উপহার, মিনে করা সোনার লকেট তুলে গদগদ ভাবে সবাইকে দেখায় । ... ...