কেন চেয়ে আছ গো মা / চিৎ হয়ে শুয়ে টেবিলের উপরে / মাথায় রক্তমাখা, ব্যান্ডেজ না পতাকা / কিছু কি দেখছ তুমি? ক্ষুব্ধ জন্মভূমি! / শুনতে পাচ্ছ? বলতে চাইছ কোনো কথা? / না কি শব্দহীন মর্গে দৃশ্যমান ঠান্ডা নীরবতা। / না শোনাই ভাল ঐ ঘাতকের নির্লজ্জ দামামা / কেন চেয়ে আছ গো মা ... ...
ঘুম ঘুম ঘুম ... তিরতিরে বয়ে চলা জলে ছায়া ভাসে ... জল থেকে কুড়িয়ে নেওয়া যায় ... এমন ছায়ার আড়ালে। এখন শান্ত সব। বনের সবুজ থেকে নেমে আসা সন্ধ্যের মত। ... ...
কখনো বিকেল হলে চোখ ভরে জল এসে যায়, / টুকরো মেঘের দল পুরোনো সে রূপকথা জানে, / আয়নায় তোমাকে দেখি, তুমিও বুড়িয়ে গেছ কত, / এখনও কি মনে পড়ে কখনো-সখনো? ... ...
এইতো অনাবাদী বহুদিন ঢেউগুলো পোষাক বদলে ফেলে / আরো এক রাত্রিহীন পথ তার হিসেবের খাতা খুলে খুলে / দেখিয়েছে সন্ধে থেকে চুঁয়ে আসা আলো। ... ...
শারীরবৃত্তের ফাঁদে আটকে থাকো তুমি, এপ্রিলের অক্ষরমালা / রমণ চেনাতে গিয়ে করেছ এ যাবৎ যেরূপ গভীর ভণিতার ছল / অথচ গেয়েছি যে গীতিমালা, সুস্পষ্ট, নিবিড় ওই মেঘঘুমে ... ...
ভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো তোমার মুখোশ ও দস্তানা এসব এমন, এমনই একটা সময় যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুব খানিক তফাত রেখে তোমায় নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওই তার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি, ... ...
সে আমাদের ভুল বানানের চিঠি, সে আমাদের মুগ্ধ চেয়ে থাকা। পাখির ডানায় শেষ বিকেলের আলোয় রাখাল সাজার পাতার বাঁশি রাখা। সে আমাদের গোপন বনলতা, সে আমাদের লুকিয়ে রাখা আলো। ... ...
ছোটখালার মনে নেই, ওকে আমি পালিয়ে যেতে বলেছিলাম / বলেছিলাম, এসো, লুকিয়ে থাকি শূন্য ফুলদানির / অন্তহীন রহস্যের ভেতর ... ...
জীবিকা হাতড়ে এখনো যারা ঘুরে মরে / প্রতিদিন কবরে যেতে চায়, অন্তিম শুয়ে পড়বে বলে; / আবার উঠে আসে, পেতে দেয় বুক / উদগ্রীব অস্ত্রগুলির সামনে ... ...
তবে কি আমিই হারি? বারবার? শত্রুহীন এই পৃথিবীতে / ধর্মাধর্ম ভুলে গিয়ে মেতেছে উল্লাসে আজ আমাদের সেনা / আমি কেন পরাজিত তবে / মধ্য হেমন্তঋতু স্যমন্তপঞ্চকে? ... ...
লস্করে হিংসে পাকাক / কী বা যায় আসে তাতে- / ওরে মন বক-রূপকে / মৌজ রাখো গঞ্জীকাতে। ... ...
তোমাকে প্রেরণ করি আমার নষ্টতা , কেরো¢সন / ঝালস্বাদ, তিতকুটে, ধুলেও-হাত-থেকে / না-যাওয়া-বিচ্ছিরি-গন্ধগুলো ... ...
বৃষ্টিস্নাত কলকাতা সন্ধের মুখোমুখি থমকে দাঁড়িয়ে। অদূরে টালিগঞ্জ রেলব্রিজ - আলো আঁধারি আর ঝিরঝিরে জলপতনের মধ্যে কিছুটা অশরীরী। ছায়ার মতন দাঁড়িয়ে। ক্রমাগত ছুটে আসতে থাকা গাড়ির হেডলাইটের ধাঁধানো হলদেটে আলোর এক বিস্তীর্ণ মাকড়সাজাল সারাটা শহরের আনাচে কানাচে। কোথাও এককোণে ধুঁকতে থাকা নেড়িকুকুর, গত কয়েকদিনের একনাগাড় বৃষ্টিতে ভিজে, ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বড় বাড়ির সিঁড়ির তলায় আশ্রয় নিতে গিয়ে ব্যর্থ, মনোরোগী দারোয়ানের লাঠির গুঁতো খেয়ে শেষমেষ চায়ের দোকানের আবর্জনার ঝুড়ির পাশে ... ...
তোমার ভিতরে এক ছলনার ভাষা শুনতে পাই / কোথায় যে কতো দূরে আছো ... / আমার জীবন থেকে বহুদূরে ভেসে যায় দুএকটি পালক / যেখানে কোথাও কিছু নেই আমি চলে যাবো সেখানে একদিন ... ...
অবিরাম বৃষ্টি আজ অনসূয়া পকেটের কাছে নীল ভেজা ভেজা দাগ / রেখে গেছে লোকমুখে সারি সারি কথা যারা বাড়ি ফিরে একেবারে চুপ / হট করে নিয়ে ফেলা ধুপ ভিজে একশা হয়ে শুনে নেবে অলিগলি জল্পনা ... ...