আচ্ছা জেঠিমা, আমরা তিনজন যে মোহনবাগানের মেয়ে হলাম, সেটা কি ধোপে টিকবে? কেন? টিকবে না কেন? আমরা যে খুব ইলিশ খাই। তাতে কী? মোহনবাগানীরাও ইলিশ খায়, ইস্টবেঙ্গলীরাও চিংড়ি খায়। তাতে ভালবাসা কমে না। লাবণ্যর হাতের একটা রেসিপি করতে পারি, খাবি? কৃষ্ণার কাছে শিখেছি, কাঁচা ইলিশের ঝাল। মা, রান্নাটা কিন্তু দেখব, কীভাবে কর। কুমুদিনী-লাবণ্য-কৃষ্ণা-শারদা – আর একটা নাম জুড়ে যাবে রঞ্জাবতী। মানুষ থাকবে না, রান্নার ঘরানা চলতে থাকবে। কাল কাঁচা ইলিশের ঝাল করলে পরশু ডাব চিংড়ি করবে জেঠিমা। ঠিক হ্যায়, করতেই হবে। আজ ইস্টবেঙ্গলী ইলিশ রান্না হলে কাল তো মোহনবাগানী চিংড়ি রান্না হতেই হবে। তাহলে আমি ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিচ্ছি, কাল, পরশু বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের নামে ফুটবল – খাদ্য উৎসব হবে, অরগানাইজড বাই আওয়ার টু প্রিন্সেসেস। ... ...
টকে তরিবত বলতে শেষে একটু ভাজা মশলার গুঁড়ো দেওয়া যায়। আর কাঁচা তেল ছড়িয়ে নামানো হয়। আসলে মাছ কাটার সময়ে বলে দিতে হয়, ক’পিস হবে। তোর বাবা বাজার এনেই খালাস। কিছু দেখে না। তুই শিখে নে। আস্তে আস্তে চেষ্টা করতে করতে দেখবি হেঁশেলের কন্ট্রোল হাতে চলে এসেছে। আর এখানেও অনেক লোক তো। বড় পিস করে ভাপা করা মুশকিল। তাই এখানেও ছোট পিস কাটা হয়। তবে আমি তোর সঙ্গে একমত। ইলিশ না খেলে না খাব। একদিন খাব তো বড় টুকরো খাব। ... ...
আজ ঠাকুমার একাদশী। এসব দিন ঠাকুমা আগবেলা নির্জলা থাকে। বারবেলায় সব কাজ সেরে স্নান করে ঠাকুরঘরে গোবিন্দকে সাবুর ফলার সাজিয়ে তারপর নিজে খায়। তবে আজ ঠাকুরঘরে সব নেবার আগে আলাদা পাথর বাটিতে দুধে ভেজানো সাবু, কোরা নারকেল, ক্ষীরের সন্দেশ, একটা বারোমাসি আম আর আমাদের গাছের চন্দন কবরী কলা আলাদা করে সরিয়ে রাখে ঠাকুমা, “কোহিনূরদের বাড়িতে দিয়ে আসিস।” ... ...
কখনও মনে পড়ে – সরস্বতী পুজো হচ্ছে, সদর দরজার কাছে বাঁদিকে প্রথম ঘরে ঠাকুর। ঘর জুড়ে অনেক কিছু সাজানো। দূরে ঠাকুরের পাশে কয়েকটা বই রাখা, ওপরেরটা আমার। নীল মলাটের ওপর লাল আর সাদা দিয়ে লেখা। আমার বইটা নিয়ে নিয়েছে সবাই। এত জিনিস টপকে আমি যেতেও পারছি না যে তুলে আনব। মা সমানে বোঝাচ্ছে, যে, ঠাকুরের কাছ থেকে বই তুলে নিতে নেই। কিন্তু আমার ভবি ভোলার নয়। বারবার দরজা দিয়ে বইটা দেখছি, সদর দরজা অবধি দৌড়োচ্ছি আর প্রচণ্ড চেঁচিয়ে কাঁদছি। আচ্ছা, কী বই ছিল ওটা? দেওয়ালে ক্যালেন্ডার, মা কোলে করে ক্যালেন্ডারের সামনে আমায় নিয়ে গিয়ে বলছে, ‘এটা কে? আমি বলছি বিবেকান্দ-নন্দ।’ মা হাসছে, আমি হাততালি দিচ্ছি। ... ...
এমনি গোঁজ করে থাকা প্যাঁচা মুখ এই প্রথম নয়, আগেও দেখেছি আমি। অল্পবয়সে একবার পিজি হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি ছিলাম কয়েকদিন। একদিন গভীর রাতে দেখি ওয়ার্ডের সব আলো জ্বলে উঠল। ডাক্তার, নার্স – সব খুব ছোটাছুটি করে বেড রেডি করছেন। তারপর বেনারসী পরা এক সালঙ্কারা মেয়েকে সেখানে শুইয়ে দেওয়া হল। আনতে আনতে মেঝেতে রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছিল। বিশাল ওয়ার্ডের সেই অনন্ত সংখ্যক বেডে পড়ে আছি পেটকাটা মেয়ের দল। কিছুটা নির্বিকার উদাসীনতা, কিছুটা ক্রোধ, কিছুটা উদ্বেগ – সব খেলা করে মেয়েদের মনে। গরীব কিংবা বড়লোক, হিন্দু নাকি মুসলমান, বিয়েওলা বা অনূঢ়া, অল্পবয়সী না পাকাচুলো - সব ধরণের মেয়ে সাক্ষী রইল ঘটনার। চোখের পাতা এক হল না। এরপর সকাল হলে ... ... ...
বাড়ি সাজানো ছাড়াও চাইনিজ নিউ ইয়ারের আরো দুই আবশ্যিক অঙ্গ ছিল ফায়ার-ক্র্যাকার এবং লাল রঙের এনভেলপ। এই নিউ ইয়ার সাধারণত জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসেই আসত বলে, আমাদের অনেক চাইনিজ বন্ধু ইংরাজি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের সময় যে আতসবাজি বিক্রি হত, সেগুলি কিনে স্টক করে রেখে দিত। তবে চাইনিজ নিউ ইয়ারে চাইনিজ দোকানগুলিতে ফায়ার-ক্র্যাকার পাওয়া যেত কিনতে – সেখান থেকেও আমরা কিনে নিয়ে আসতাম। আর সেই লাল রঙের খামে থাকত ‘টাকা’ – এটা একটা ট্র্যাডিশন ওদের, যেখানে বাড়ির বড়রা ছোটদের এই টাকা গিফট করে, তবে ছোটদের ছাড়াও প্রিয়দের এই খাম দেওয়ারও ট্র্যাডিশন আছে। সেইমত আমরা আমাদের চাইনিজ বন্ধুদের থেকে পেতাম খুব সুন্দর হাতে নাম লেখা, চাইনিজ লিপিতে। ... ...
সেদিন আমরা সকাল থেকে আরবিক/মিডল-ইস্টার্ন খেয়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাদের হোস্ট বাছল ইতালিয়ান রেস্টুরান্ট। আমাকে আর মুখ খোলার অবকাশই দিল না – কারণ ইতালিয়ান ক্যুজিন আমার সবসময়ই ফেভারিট, অবশ্য যদি ভালো করে বানাতে পারে তবেই! রেস্টুরান্টে গিয়ে দেখা গেল, দুটো অপশন আছে – ভিতরে বসে খাওয়া এবং আউটডোর ডাইনিং। অবশ্যই আউটডোর ডাইনিং বেশি আকর্ষণীয়, বাইরে ১২ ডিগ্রি ঠান্ডা এবং হালকা বাতাস বইছে। এই অবস্থায় আউটডোর ডাইনিং করার কী মানে কে জানে! আমি মৃদুভাবে ভাবপ্রকাশ করলাম, দাদা, বাইরে কি খেতেই হবে? এদিকে আমার হোস্টের সেই রেস্টুরান্ট খুব ভালো লেগেছে আগের বার খেয়ে, তাই এইবারেও অতিথিসৎকার করতে বাইরেই বসা ঠিক হল। আমাকে আশ্বস্ত করা হল এই বলে, যে দেশে প্রচুর গ্যাস – তাই নাকি খেতে বসে ঠান্ডা লাগলে আমার পিছনে গ্যাসবাতি জ্বেলে দেবে! তাহলে আর ঠান্ডা লাগার চান্স নেই। ... ...
কার্যত এখন দুয়ারে বাজার। বাড়ি থেকে বেরোলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি, ফল সবই সারি সারি। দু’পা এদিক ওদিক হাঁটলেই পথের পাশেও ছোটখাটো বাজার – মাছ, মাংস সবই মিলছে। মলে ঢুকলে অজস্র পণ্যের মধ্যেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেলোফেনে মোড়া থার্মোকলের পাত্রে টুকরো করে কাটা সবজি। ছোট পরিবারের উপযোগী শুক্তো রাঁধতে গেলে যে যে আনাজ প্রয়োজন সবই সাজানো রয়েছে তাতে। তবে সে সবজির সতেজতা, কোটার নিপুণতা – এসব যাচাই করার সূক্ষ্ম বিচারবোধসম্পন্ন দক্ষ বাজারু আজ আর কোথায়? গুছিয়ে বাজার বা রসিয়ে রান্না করার সেই মানসিকতা বা অবসর কোথায় আজকের অণু-পরিবারের ব্যস্ত জীবনে? ছেলেমেয়ের পড়াশুনো সামলে কর্তা-গিন্নি নাজেহাল কর্পোরেট যুগের চাকরি বাঁচাতে। আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কবেই বিদায় নিয়েছে শিল-নোড়া। মডিউলার কিচেনে স্থান করে নিয়েছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার বা ফুড প্রসেসর। আদা-বাটা, রসুন-বাটা তো পাউচেও হাজির। সর্ষের পাউডার প্যাকেট থেকে বের করে উষ্ণ জলে গুলে নিলে সর্ষেবাটাও রেডি। সাবেকি সিনেমা হলের নস্টালজিক সাদা-কালো ছবির জায়গায় এখনকার মাল্টিপ্লেক্স বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যে যেমন বিশেষ ধরণের মুভির চল, ঠিক তেমনই খেয়াল করলে দেখা যাবে নোনা-ধরা, হলুদ দেওয়ালের রান্নাঘর থেকে বেরনো সেই সব অতুলনীয় পদগুলির জায়গা নিয়েছে আজকালকার ফিল-গুড ফ্যামিলির টিপটপ মডিউলার কিচেনের উপযোগী হালফিল ক্যুইজিন। ... ...
আমিও সেদিন তাই করলাম। পাশ দিয়ে ওয়েটার যাচ্ছিল, তাকে বললাম, “আচ্ছা ওমলেট পাব কোথায়”? সে বলল ওমলেট স্টেশনে চলে যান! ওমলেটের যে আবার স্টেশন হয়, তা কে জানত! তো যাই হোক, যেন বেমানান না লাগে – এমনভাবে দুলকি চালে ওমলেট স্টেশন খুঁজতে বেরুলাম। সেই প্রকাণ্ড জায়গা পাক দিয়ে, প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় দেখতে পেলাম, এক শেফ এক গাদা ডাঁই করে রাখা ডিমের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম এই সেই মোক্ষ স্থান! গিয়ে চাইলাম ওমলেট – ব্যস, প্রশ্নবাণে গেলাম ফেঁসে! প্রায় ৫ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়ে, ১০ মিনিট বাদে ওমলেট নিয়ে টেবিলে ফিরলাম। ... ...
ঠাকুমা আর মানিক কাকুর কথার মাঝেই আমি দেবদারু বাগানের নীচে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে গামছায় বাঁধা খাবার আর গায়ে চাদর জড়িয়ে সাদা কুয়াশার ভেতর ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে তাঁতিরা। সেই ছায়া থেকে আমি খুঁজে খুঁজে বের করি কলিম তাঁতি, মকবুল তাঁতি, পরেশ তাঁতি, নিবারণ তাঁতি, মান্নান ড্রাম মাস্টার সবাইকে। আজ অন্যদিনের মতো এগিয়ে গিয়ে আমি ওদের সাথে গল্প জুড়ি না। আমি পা বাড়াই গোলেনূর দাদির বাড়ির দিকে। সে বাড়ির উঠোনে এখনো নিঃস্তব্ধতা। শুধু গোলেনূর দাদির বড়ঘরের টিনের বেড়ায় ঝুলানো কবুতরের খোপ থেকে ভেসে আসছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ... ...
আমার যেমন হয় – সন্ধেবেলা হলেই খিদে পেয়ে যায়! গেস্ট-হাউসে ঢুকেই খাবার টেবিলে বসে পড়ার ধান্ধা করছিলাম, যে কোনো একটা চেয়ারে। পিছন থেকে টান দিল এক কলিগ – সেই প্রথম জাপানে বসার এটিকেটের সাথে পরিচয়। এই নিয়ে আলাদা করে একটা লেখা হয়ে যাবে – পদমর্যাদা অনু্যায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। যারা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার লোকজন – তাদের বসার ব্যবস্থা প্রথমে এবং তারা যেখানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘কামিজা’। কম পদমর্যাদার লোকেরা যে স্থানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘সিমোজা’ .... আমাদের বসতে বলল সেই ঘরে ঢোকার দরজার থেকে দূরের চেয়ার গুলোতে। এটাও একটা রীতি – অতিথিদের বসতে দেওয়া হয় দরজার থেকে দূরে, আর দরজার কাছে থাকবে হোস্ট। এর কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং – এই রীতি চালু হয় বহু বহু আগে, জাপানের ফিউডাল পিরিওডে – যেখানে দুমদাম শত্রুর আক্রমণের বেশ চল ছিল। আমাদের মত জাপানীদেরও বিশ্বাস অতিথি নারায়ণ – তাই অতিথিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রবেশদ্বারের থেকে সবচেয়ে দূরে বসতে দেওয়া হত। ... ...
সপ্তদশ শতক। শাহ জাহান বাদশার হেঁশেল। মুঘলাই খিচুড়ির রোশনাই। আর তারই মধ্যে একটির নাম খিচড়ি দাউদখানি! সে নাম যেমন রহস্যময়, তেমনই বিচিত্র সে খানা—বলছে খিচড়ি, কিন্তু চাল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল: - এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার? - না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে। - হোটেলে ফিরতে হবে? কেন? - তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে? - হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ... ...
আপেল পাই জিনিসটার সাথে যদি আগে পরিচিত না থাকেন, এবং আমস্টারডামে গিয়ে প্রথমবার ট্রাই করেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে এটা হালকা ভাবে ভেসে উঠতে পারে, যে – এটা কি আর এমন ব্যাপার, যার জন্য এত নামডাক? খুব বেশি কারিকুরি তো দেখতে পাচ্ছি না এই আপেল পাই-এ! এই ভাবনাটা মনের মধ্যে এলেই নিজেকে একটু ক্যালিব্রেট করে নেবেন – ভেবে নিন আপনাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে প্যারামাউন্ট-এর সরবত, নকুড়ের সন্দেশ বা আমিনিয়ার বিরিয়ানি নিয়ে! এইসব খাদ্য এমন সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যে পার্থিব তর্ক করে কিছু হবে না – যার হয়, তার হয় টাইপের কেস। ... ...
প্রচুর প্রচুর রেস্টুরান্ট পাবেন লিসবনে, যারা এই ফাদু মিউজিকের সাথে ডিনার অফার করে। তবে কিনা, সব ট্যুরিস্টিক জায়গার মতই, লিসবনেও ফাদু মিউজিক নিয়ে ব্যবসা চালু হয়ে গেছে পুরোদস্তুর। খুব বেশি ট্যুরিস্টের ভিড় হলে যা হয় – অনেক স্ক্যাম টাইপের আছে। মানে ফাদু মিউজিকের নামে আলতু ফালতু গান গেয়ে এবং একদম ফালতু খাবার দিয়ে প্রচুর চার্জ করবে। .... আমার মতে, ভালো জায়গাতে টার্গেট করাই ভালো – খরচ হবে ঠিক আছে, কিন্তু অথেন্টিক জিনিস পাবেন, ঠকার চান্স কম। আর সস্তায় বাজিমাত করতে গেলে সেই তেমন অভিজ্ঞতা হবে, যা আমার একবার হয়েছিল অন্য পাবলিকের অ্যারেঞ্জ করা ডিনার উইথ বেলি ড্যান্সিং-এ গিয়ে। পাশের ছেলে সেই নাচ দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে, বেলি ড্যান্সিং-এ কি বেলি নড়বে?” আমি বললাম, “তেমনই তো কথা!”। সে ছেলে হতাশ হয়ে বলল, “অনেকক্ষণ তো নাচ হয়ে গেল, কিন্তু বেলি তো দূরের কথা, শরীরের কোন অঙ্গ নড়ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না!” ... ...
ইসকান্দর কাবাব-এর নামকরণ হয় – এটা যিনি আবিষ্কার করেন, সেই শেফ ইসকান্দর এফেন্দি এর নামে – যিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বুরশা বলে একটি জায়গায় বসবাস করতেন। এই ডিশটি বানানো হয় ডোনার কাবাপ এবং গ্রিলড ল্যাম্বের টুকরো দিয়ে, যা বেছানো থাকবে গরম ট্যামেটো সসের মধ্যে, সাথে পিটা ব্রেড – এবং এই সবের উপর ছড়ানো থাকবে দই এবং কোনো কোনো সময় ভেড়ার দুধের থেকে বানানো বাটার। ... ...
সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
হায় সেই কাছাখোলা বাঙালি- শেষ পাতে সাবানের সুপে কাত/ বিপ্লব ও আইসক্রিম হাতে হাত - ভুসুকু খাইলি ফিস ওরলি। কিচাইনে এক ঋতু অবসান - ফিরিঙ্গি নালে ঝোলে চণ্ডাল / ডিডি ভনে বেমালুম ইতিহাস/ বিরতিতে কাঁটা বেছে বেছে খান ... ...
যদি আপনি খাবার এবং বাজার ভালোবাসেন, তাহলে এখানে ঘুরতে ঘুরতে আপনি আচ্ছন্ন হয়ে যাবেন। অনেক দোকানের সামনে দেখবেন, চাখার জন্য স্যাম্পেল রাখা আছে – ইচ্ছেমত ট্রাই করে যেতে পারেন। খুব ছোট ছোট কিছু রেস্টুরান্ট আছে, যারা দুই-একটা টেবিল বা বসার টুল নিয়ে স্পেশালিটি কিছু খাবার বিক্রি করছে। এখানে খাবার পাওয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। ইচ্ছে হলে চট করে খেয়ে নিন – কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখবেন – জাপানে খেতে খেতে হাঁটা-কে ব্যাড ম্যানারস্ হিসাবে ধরা হয়। ... ...
ভাষাতত্ত্বের কম্পাস নিয়ে খিচুড়ির পূর্বজর খোঁজ করতে গিয়ে আমাদের পথ আটকে গিয়েছে কৃসর বা কৃসরা-য়। তার চাল আর তিলের পাক। আজকের খিচুড়ির ইভ কে, সে খোঁজ করতে হলে, খেলা ঘুরিয়ে হাতে নিতে হবে রসনাতত্ত্বের কম্পাস। আর তাতেই খুলে যাবে চাল-ডালের প্রথম পাকের আশ্চর্য এক দুনিয়া। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...