তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এ-দেশেও সম্ভব নয়। বিকেলবেলা সেই খবরই এলো। সরকারী অনুদান প্রথমে সরাসরি ব্যাঙ্কে জমা পড়বে বলে ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু বহুসংখ্যক লোক একইসাথে সরকারী ওয়েবসাইটটি খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটটিতে গোলমাল শুরু হয়েছিল। এর ফলে সরাসরি অফিস থেকে টাকা তুলতে সবাই চলে এলো। দীর্ঘ লাইন। টিভিতে দেখা গেল সব গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় গেল রাস্তায় দু’জন লোকের মাঝে সরকারী নির্দিষ্ট ১.৫ মিটার দূরত্ব? দেখে শিউরে উঠলাম। ... ...
আমাদের তথ্যানুসন্ধানের কাজ শুরু হয় ২০১৮-র এমন এক সময়, যখন ভাটপাড়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবন আগুন আর ছাইয়ের উপর দাঁড়িয়েছিল। ভাটপাড়া নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন সময়ে কিছু ফিল্ড সার্ভে-ও করেছিলাম। বছরখানেক পেরিয়ে এসে আমরা যখন পুরোনো বিবৃতিগুলির পর্যালোচনায় বসেছি, ঠিক তখনই কিছু নতুন শব্দকে কেন্দ্র করে নতুন করে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রূপ নিতে শুরু করেছে—‘নিজামউদ্দিন-মুসলিম-করোনা’। ইতিমধ্যে তেলিনিপাড়াতেও দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়, এবং ফলস্বরূপ হুগলি নদীর দু-পারেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ... ...
তখন আমি সবে মাধ্যমিক, কিন্তু বাংলা আকাডেমিতে দিব্য যাতায়াত, লাইব্রেরির থেকে Esperanto-র ওপর একটা বই নিয়ে বাবার ঘরে বসে বসে পড়ছি। বাবার সঙ্গে তখন একজন ঝকঝকে মানুষ তরতর করে অনেক গল্প করছেন, আমি কিছু শুনছি, কিছু বইতে মন। যাই হোক, একটা ছটফটে বাচ্চা মেয়েকে এস্পেরান্তো পড়তে দেখে তাঁর আমাকে খুব মজাদার লেগেছিল, সেদিনই প্রথম তাঁর মুখে শুনেছিলাম স্প্যানিশরা J কে খ বলে, আর উনি তার মানে খাদবপুরের অধ্যাপক! ... ...
পড়াশুনা যারা টুকটাক করেছেন, তারা অনুভব করেছেন যে ইহা মূলতঃ দুই প্রকার - ডিরেক্ট রিডিং এবং ইনডিরেক্ট রিডিং। ডিরেক্ট রিডিং অর্থাৎ যে বই আমি নিজে পড়েছি এবং তা থেকে জ্ঞান আহরণ করেছি। যেমন শার্লক হোমস অমনিবাস, দা ভিঞ্চি কোড ইত্যাদি। ইনডিরেক্ট রিডিং অর্থাৎ যা আমি নিজে পড়িনি কিন্তু আমার বন্ধুরা পড়েছে বা পড়েছেন, তা থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন এবং সেই লব্ধ জ্ঞান ইতিউতি বিতরণ করেছেন এবং আমি সেই বিতরিত জ্ঞান আহরণ করে বইটির মূল বিষয়বস্তু এবং বিভিন্ন খুঁটিনাটি সম্বন্ধে জেনেছি। যেমন বোদলেয়ারের দর্শন, দান্তের কাব্য ইত্যাদি। জ্ঞান আহরণের এই দুটি সর্বজনমান্য পদ্ধতিকে আদি যুগে স্মৃতি ও শ্রুতি নামে অভিহিত করা হত। ... ...
একটি চালু প্রবাদ হল ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। যখন মেয়েদের একটু টাইট দেওয়ার, একটু কড়কে দেওয়ার দরকার পড়ে তখনই এই প্রবাদের আবিল ব্যবহার নজরে আসে। অথচ ইতিহাস দেখিয়েছে যে বা যারা ভালো ভাবে ‘রেঁধেছে’ তাঁরা কেউই ভালো ভাবে ‘চুল’ বেঁধে উঠতে পারেননি। এবং এটি ছেলেদের ক্ষেত্রেও আংশিক সত্য। ভাস্কর মীরা মুখোপাধ্যার-এর একটি সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যে কেন তিনি বিয়ে ভাঙেন, কেন তিনি সংসার ভাঙেন। উত্তরে তিনি ঠিক কী বলেছিলেন আমার মনে নেই, কিন্তু যেটা বলেছিলেন তার সারমর্ম হল সংসার তিনি ছাড়তে চাননি, তাঁর ভাস্কর্য-প্রীতির জন্য সংসার তাঁকে ছেড়ে গিয়েছে। ... ...
পেদ্রো পারামোর দেশ থেকে আলো আসে, যদি তারে নাই চিনি, আমার সদর পুরো খুলবে না আর! অচিন ডানায় মেলা প্রেমের আহার, নেশা, রণের আহার তুমি কাছে টেনে নাও, শিস দাও মধ্যরাতে মেধার মাতাল, অপরিচয়ের ক্ষতে আলিঙ্গন রাখো, ... ...
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গোড়াপত্তনের প্রারম্ভ্রে বাঙালি জাতি সাময়িকভাবে এক বিভাজনের রাজনীতির শিকার হয় যা অবিভক্ত বাংলার ভৌগোলিক মানচিত্রকে আপামার জনসাধারণের মানসচিত্তে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ রূপে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিল। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ প্রশাসনিকভাবে ১৯১১ তে রদ হলেও তা বাঙালি জাতিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সামাজিক সীমারেখা দিয়ে ধর্মীয় (হিন্দু বাঙালি এবং মুসলমান বাঙালি) ও প্রাদেশিক (পূর্ববঙ্গনিবাসী 'বাঙাল' এবং পশ্চিমবঙ্গবাসী 'ঘটি') পরিচিতিতে ভাগ করে দেয়। অতএব বাঙালি জাতি ১৯১০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে একদিকে ছিল বঙ্গভঙ্গের ক্ষতের সামাজিক অস্থিরতায় দোদুল্যমান এবং অন্যদিকে হয়ে উঠেছিল ফুটবলকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী আবেগে বিচ্ছুরিত। এই পটভূমিকায় পয়লা অগাস্ট ১৯২০তে ইস্টবেঙ্গলের আত্মপ্রকাশ সমগ্র বাঙালির কাছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। সেই ইতিহাসে শুধু ফুটবল ছিল না, ছিল ফুটবলের প্রতিযোগিতাকে হাতিয়ার করে নব্য শুরু হওয়া সংকীর্ণমনা আন্তর্দেশীয় প্রাদেশিকতা ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ঘৃণ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে পরাস্ত করার শপথ। তাই বলাবাহুল্য যে ইস্টবেঙ্গলে যাত্রা শুরুই হয়েছিল লড়াইয়ের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে। ... ...
অনেক রোগী খুপরিতে ঢুকে প্রথমেই স্যানিটাইজারের বোতল থেকে দু-চার ফোঁটা তরল বসার চেয়ার, আমার টেবিলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আজ এক ভদ্রমহিলা গঙ্গাজল এর মত আমার গায়ে কয়েক ফোঁটা স্যানিটাইজার ছিটিয়ে দিলেন। মানে চেয়ার-টেবিলের সাথে তিনি ডাক্তারকেও স্যানিটাইজ করে নিলেন। ওদিকে রোগীর সংখ্যা রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অধিকাংশই জ্বরের রোগী। জ্বর আসলেই এখন অনেকে গন্ধ শুঁকছেন। একজন বললেন, 'ডাক্তারবাবু, খাবার-দাবারের গন্ধ পাচ্ছি না। কিন্তু ডেটলের গন্ধ, ডেনড্রাইটের গন্ধ এগুলো দিব্যি পাচ্ছি।' একজন রোগী দুদিন আগেই দেখিয়ে গেছেন। জ্বর কমছে না। আবার এসেছেন। তার পুরোনো প্রেসক্রিপশন পুরো সাদা। আমি অবাক হয়ে বললাম, 'এ কি? আমি কোন ওষুধপত্র লিখিনি নাকি?' উনি বিব্রত মুখে জানালেন, 'হ্যাঁ লিখেছিলেন। কিন্তু বাড়ি গিয়ে প্রেসক্রিপশন স্যানিটাইজ করতেই সব লেখা উবে গেছে।' ... ...
তো কেদারনাথ মজুমদার পুরা রামায়ণখান দুর্ধর্ষভাবে বিশ্লেষণ কইরা সাইরা একটু মিন মিন কইরা যুক্তি দেখান যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামের গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরু খাওয়ার কথা তো পাই নাই। মনে হয় এইটা বঙ্কিমের সেই বিশ্লেষণের ধাচেই পড়ে। আমরা বুঝতে পারি কেদারনাথ কেন সেইটা পাশ কাইটা যান বা কমজোর গলায় কন- না তো। নাই তো। গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরুর মাংস দিয়া মাখাইয়া ভাত খাইবার কথা তো নাই। যাউকগা। রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়ার প্রচলন তো আছিলই উল্টা গরুর মাংসটাই আছিল শ্রেষ্ঠ মাংস বইলা গণ্য। গরু খাওয়া বন্ধ হয় মূলত বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে… রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়া হইত না; গোসব যজ্ঞ কইরা মূলত মধু দিয়া রান্না করা গরুর মাংস গাঙে ফালায় দেয়া হইত দেবতাগো খাইবার লাইগা; এইসব কথা কেউ কইলে অন্যদিকে ধইরা নিতে হইব যে তিনি বা তিনারা রামের বয়স বুদ্ধদেবের থাইকা কমাইয়া নিয়া আসছেন। আর রামায়ণরেও কইরা দিতে চাইছেন বৌদ্ধ উত্তর সাহিত্য... ... ...
জনপ্রিয় ধারণায় রাম-রামায়ণ-বাল্মিকীরে কৃষ্ণ-মহাভারত-দ্বৈপায়ন থাইকা প্রাচীন ভাবা হইলেও ঘটনা কিন্তু ঠিক উল্টা। এর পক্ষে পয়লা জোরালো যুক্তিটা হইল দক্ষিণ দিকে আর্যগো ভারত-বিস্তারের কালক্রমের লগে দখলি-মানচিত্রের হিসাব। মহাভারতের ঘটনাস্থল থাইকা রামায়ণ ঘটনাস্থল আরো বহুত পূর্ব দিকে। আর্যগো দক্ষিণ দিকে পা বাড়াইবার ঐতিহাসিক সময়কাল মাথায় রাইখা রমিলা থাপারও মন্তব্য করেন যে রামায়ণ তৈরি হইছে ৮০০ খিপূর অন্তত পঞ্চাশ থাইকা একশো বছর পরে। মানে সাড়ে সাত থাইকা সাতশো খিপূর দিকে... ... ...
অনেক বই একসাথে পড়ার মূল সুবিধা হল - অনেক বই একসাথে পড়া যায়। আর প্রধান অসুবিধা খুব মন দিয়ে পড়তে হয় - তা না হলে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা। উপরের বইয়ের নামগুলি দেবার একটা কারণ আছে যেটা পরে বলব, কিন্তু আদতে যেটা চাইছি সেটা হল একটা বিভ্রান্তিমূলক বা সূচক পরিবেশের সৃষ্টি করতে। এটা সহজ কাজ নয়, আমি শত চেষ্টাতেও আপাতত পারছিনা কারণ যেদিন পারব সেদিন আমি বিখ্যাত লেখক হবার প্রথম সোপানে পা দিয়ে ফেলব। বিখ্যাত লেখক বা কবি হবার প্রাথমিক শর্তই হল বিভ্রান্তি তৈরী করার ক্ষমতা অর্জন করা। এখন প্রশ্ন হল বিখ্যাত কি জিনিস এবং কারাই বা লেখক আর কারাই বা কবি। হুমায়ুন আহমেদকে নাকি একবার একুশে বই মেলায় একজন ধরেছিল এবং নাছোড়বান্দা হয়ে স্বীকার করিয়েছিল, তিনি কবিতা লাইনে দাগ না কাটতে পেরে গদ্য লাইনে শিফট করে গ্যাছেন! বেশীর ভাগ কবিই নাকি এই লাইন শিফটের ফসল। খুবই সত্যি কথা, শুধু তাই নয় – বড় বড় (বিখ্যাত) গদ্য সাহিত্যিকও এই শিফটের ফসল বলেই আমার মনে হয়। তবে অনেকে আছেন শিফট না করেও কোনদিকেই দাগ কাটতে পারেননা এবং vice versa। ... ...
একবার সাত আটদিন এ ঠেক ও ঠেকে কাটিয়ে সোজা ইউনিভার্সিটি গেছি। চুল-দাড়ি জট পাকিয়ে বীভৎস দেখাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার মুখে আমাকে দেখেই খপাত করে পাকড়াও করলেন। “খালাশিটোলাতেই গড়াগড়ি খাওয়া হচ্ছিল বুঝি!” সঙ্গের বান্ধবীটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওর বাপ কী করে? এত পয়সা পায় কোত্থেকে মাল খাওয়ার?” তারপর ট্যাঁক খালি শুনে পয়সা দিয়ে পাঠালেন চুল-দাড়ি কাটতে। নিজের ঘরে বসে বই পড়ছিলেন—আমি শ্মশ্রুগুম্ফহীন হয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে খুব খুশি হয়ে বাড়ি গেলেন। আমাকে কোনোদিন একবারের তরেও বলেননি খালাশিটোলায় যেও না। বরং হিজলিতে চাকরি করার সময় কবি শক্তি চাটুজ্জে একবার কেমন ওঁর বুকে চেপে বসে গলা টিপে মাল খাওয়ার পয়সা আদায় করেছিলেন সে গল্প শোনাতেন রসিয়ে। ... ...
উনি শেষ পর্যন্ত যখন ‘দ্য মেটামরফোসিস' পাঠটিতে এলেন আমি তখন এটুকু জেনে গেছি যে কিছুই আগে জানা হয়নি আমার। যত দূর মনে হয়, এই ছোটোগল্প পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকেই বোধহয় কাফকার উপন্যাস ‘দ্য ট্রায়াল’-ও পড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওটা পাঠ্য ছিল না বলে পড়বার দরকার নেই এমন তো না। এ যুগের স্যারেদের মতো বেশি তথ্য দিলাম ফলে সব জমিয়ে রাখা জ্ঞানটুকু খরচ হয়ে গেল সেই ভয় ওনার ছিল না। জীবনদর্শনই ছিল জানা ও জানানোর। সিলেবাসে যা আছে, যতটা পড়ানোর কথা, তার থেকে সবসময় বেশি পড়িয়ে দিতেন। অনেক পরে দেখেছিলাম মেপে কাজ করা, মিতব্যয়িতা ও যৌক্তিকতা এইসব সামান্য খোপের মধ্যে আটকে পড়ে থাকার মতো মানুষ উনি নন। ... ...
এবার আমরা নজর দেব মানবেন্দ্রের নিজের লেখার দিকে—বিশেষ করে তাঁর কবিতার দিকে। আমি বলছি না যে অনুবাদগুলো তার নিজের লেখার বাইরে। তবু এটা ঠিক যে অনুবাদক হিসেবে তার খ্যাতির জন্য তার কবিতা যতটা চোখে পড়ার ছিল ততটা পড়েনি। তা ছাড়া অন্য কারণও আছে যা হচ্ছে আমাদের মানসিক অভ্যাস সবকিছুকেই খোপে খোপে গুছিয়ে রাখার। ভাসকো পোপার ভাষায় আমরা কেবলই ছোটো ছোটো বাক্স তৈরি করি ও জগৎটাকে ভাগ ভাগ করে তাতে পুরে রাখি। এই অভ্যাস যদি ছাড়ি তাহলে দেখব যে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় চুপিসারেই অনেক কবিতা, গল্প ও ছোটো উপন্যাস লিখেছেন। যদিও তাদের প্রভাব কিছুটা পড়েছে তবু মানবেন্দ্রর অনূদিত সাহিত্য তার কবিতার নিজস্ব চরিত্র কেড়ে নেয়নি বরং তাকে সমৃদ্ধ করেছে। ... ...
এটা কি শুধুই সমাপতন যে একবছর আগে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেবার দিনটি অর্থাৎ ৫ আগস্টকেই বাছা হয়েছে রামমন্দিরের শিলান্যাসের জন্য? নাকি মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সম্পূর্ণ বঞ্চিত ও হতোদ্যম কাশ্মীরের ক্ষতে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে দেশজোড়া সংখ্যালঘুকে বোঝানো হল তার দৌড় কতটা? তৈরি করা হল দুষ্টের দলন শিষ্টের পালন জাতীয় একটি মিথ? বলার চেষ্টা হল কি যে তুমি যদি মুসলমান-বিদ্বেষী হও তবে রামলালা স্বয়ং তোমার রক্ষাকর্তা? সরাসরি সেলিব্রেশন বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে, সুতরাং আইস, আমরা অপ্রত্যক্ষভাবে দুষ্ট-দলন দিবসটিকে যথোচিত মর্যাদায় পালন করিয়া ছাড়ি। ... ...
অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে যখন আফ্রিকায় ইউরোপিয়ানরা কলোনি গড়ে তুলছে, তখন তাদের মধ্যে সিফিলিস মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। পেনিসিলিন আবিষ্কার হবে আরও দেড়শো বছর পরে। ইউরোপিয়ান সৈনিকরা খেয়াল করেছিল যাদের ম্যালেরিয়া হচ্ছে এবং বরাত জোরে ম্যালেরিয়ার থেকে বেঁচে ফিরছে তাদের সিফিলিস সেরে যাচ্ছে। একাধিক সৈনিকের ক্ষেত্রে এই পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর প্রকৃত কারণ বলা মুশকিল। তবে একটা কারণ হতে পারে সিফিলিসের জীবাণু ট্রিপোনেমা প্যালিডাম বেশি উষ্ণতায় বাঁচে না। ম্যালেরিয়া জ্বরের সময় দেহের উষ্ণতা মাঝে মাঝেই ৪০ – ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। সেই যুগে ম্যালেরিয়ারও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা ছিল না। ফলে জ্বর চলতো দীর্ঘদিন ধরে। শরীরের মধ্যে থাকা সিফিলিসের জীবাণু এই উচ্চ তাপমাত্রায় মারা পড়ত। ... ...
এক সুফি পীর বলেছিল ছেলেকে "রাত কি রানি” ফুলের কাছে নিয়ে যেও না যেন। তাহলে তাকে আর বেঁধে রাখতে পারবে না। রাত কি রানি, শিউলি ফুল। নিশিরাত জুড়ে সে কান্নার মত ঝরে পড়ে। অজস্র কান্নার ফোঁটা। সেই উদাসী - গন্ধ ওকে ঘর ছাড়া করবে। সেই থেকে মা, রাত কি রানি ফুল থেকে ছেলেকে দূরে রাখে ! আজমেঢ় শরিফে মাথা কুটে এই ছেলের জন্ম। বাবার অকাল মৃত্যুর পরে চিরাগ এ দিল্লির আঙিনায় খেলে বেড়ানো এক খ্যাপা ছেলেকে দেখে মায়ের চিন্তা হয়। পীর বলে, রাজার দুয়ারে মাথা কুটলে রাজার জন্ম হয়, নিদেন পক্ষে মন্ত্রীর । ফকিরের দরগায় মাথা কুটলে ফকির হবে না তো কি শাহেনশা হবে? ... ...
কিন্তু এত কিছুর পরও তিনি সবসময়ই ভারতীয় সাহিত্যের কথা মনে রেখেছেন এবং বাঙালির কাছে বিভিন্ন ভাষার ভারতীয় সাহিত্যকে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সচেতন। পাঁচ খণ্ডে ভারতীয় গল্পের অনুবাদ সম্ভবত তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। এ ছাড়া দুই খণ্ডে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ভারতীয় গল্পের সংকলন তাঁর আর একটি স্মরণীয় কাজ। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে সারাজীবন ভেবেছেন ও কাজ করেছেন মানবেন্দ্র। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বাঙালিরা ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রতি যত আকর্ষণ বোধ করে, ভারতীয় সাহিত্যের প্রতি ততটাই উদাসীন। তাঁদের চোখে ভারতীয় সাহিত্যও একটি প্রান্তিক সাহিত্য। তাই ভৈকম মহম্মদ বশিরের মতো দিক্পাল ভারতীয় লেখকের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। ... ...
আমরা বরং, এই দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রার শেষে, পপুলিজম কেন বিপজ্জনক সেটা বোঝার চেষ্টা করি। স্বাভাবিক বুদ্ধিতে পপুলিজম ব্যাপারটা মোটেই খুব একটা খারাপ বলে মনে হয়না। হাজার হোক, গণতন্ত্রের তো উদ্দেশ্যই মানুষের কথা আরো বেশি করে তুলে আনা, তাঁদের অভাব অভিযোগ গুরুত্বসহকারে ভাবা। একরকমভাবে এলিট শাসকদলের এইসব অভাব অভিযোগ সম্পর্কে ঔদাসীন্যই তো পপুলিস্ট বা তোষণের রাজনীতির কারণ। কিন্তু বিভিন্ন দেশে পপুলিস্ট দল বা নেতৃত্বের উত্থান এবং ঘটনাপরম্পরা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় বিপদটা কোথায়। আরো স্পষ্ট হয় ক্যারিশম্যাটিক জনপ্রিয় নেতাদের কার্যকলাপ দেখলে। সেখানে একটা স্পষ্ট প্যাটার্ন আছে। ... ...
সারা দেশ জুড়ে ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরির অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই রাজনৈতিক দলটি এবং এদের শাখা প্রশাখা নানা সংগঠন একই সঙ্গে অসহিষ্ণুতার জয়গান করে এবং নিজেদের রাম ভক্ত বলে দাবি করে। অনেকেই মেনে নিয়েছেন, রামায়ণের ইজারা এখন এদেরই হাতে। কিন্তু সত্যিই কি রামায়ণ এমনই অসহিষ্ণুতার কথা বলে! ... ...