আজাদির ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব, খিদের সূচকে আমাদের দেশকে শেষ বেঞ্চের ছাত্র-র তকমা দিয়েছে। তবে আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যায় আমরা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছি। ‘বেটি বঁচাও বেটি পড়াও’-এর দৌলতে মুখ ঢেকেছে সরকারি বিজ্ঞাপনে, পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্সে। কিন্তু সেই একই দেশের মহিলাদের মধ্যে আত্মহননের হার বাকি পৃথিবীর মহিলাদের দ্বিগুণ। এনসিআরবি-র রিপোর্টের প্রতিটা পাতার প্রতিটা অক্ষর আমাদের কার্যত মুখ লুকোবার জন্য হাতছানি দেয়। এক পরিচিত মনোবিদকে বলতে শুনেছিলাম, ‘এক সুস্থ ব্যক্তিকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলার জন্য এই রিপোর্টের পাতাগুলোর সঙ্গে এক ঘণ্টার সান্নিধ্যই যথেষ্ট।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শূন্যের দিকে তাকিয়ে এর পরে বলেছিলেন, ‘অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।’ ... ...
ফড়িংচাঁদরা যেদেশে থাকতেন, বেস্পতি নামটা সেখানকার । এর সঙ্গে নির্দেশ করা হতো বিভিন্ন যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রচনায় খেলানো পৌরাণিক চরিত্রকে। সে দেশের সনাতন সাহিত্যমতে বেস্পতি তাদের বৈদিক যুগের একজন ঋষি, যিনি দেবতাদের পরামর্শ দিতেন। মধ্যযুগের বইতে এই বেস্পতি গ্রহকেও ইঙ্গিত করত। বৈদিক বইতে উনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা, আর কখনও কখনও তাঁকে অগ্নিদেবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতো প্রাণবায়ুরা।ঋগবেদে লিখেছিল, কে যে লিখেছিল কে জানে, পৃথিবীর প্রথম উজ্জ্বল আর পবিত্র মহাআলোক থেকে বেস্পতির জন্ম যিনি সব অন্ধকার দূর করে দ্যান । কোথাও কোথাও তার মূর্তি দেখেছে ফড়িংচাঁদ, হাতে দন্ড ও পদ্ম আর জপমালা, আরেকটা পুরাণে প্রাণবায়ুরা লিখেছিল বেস্পতি তারাকে বিয়ে করেছিলেন আর সেই তারাকে নাকি চাঁদ কিডন্যাপ করে একটা ছেলে পয়দা করে তার নাম বুধ। ব্রহ্মা চাঁদের উপর চাপ দিয়ে তারাকে তাঁর স্বামী বেস্পতির কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। ফড়িংচাঁদরা কুলকিনারা পান না যে এতো পাওয়ারফুল হয়েও বেস্পতি কেন বদলা নেয়নি । ... ...
মোচ্ছব কাকে বলে? যখন কলকাতা ডুবুডুবু, গ্রামে খরা। যখন মুখ্যমন্ত্রী গান গাইছেন, এক পুরোনো মেয়র ফোটোশুট করছেন, আরেকজন মামলা। যখন কাশফুল বাড়ন্ত, দিগ্বিদিকে দেদার ডিজে-বক্সের কলধ্বনি। যখন বিচারক টিভিতে টিআরপি বাড়াচ্ছেন, যখন আন্দোলনরতরা রাস্তায়, আর পাবলিক সেজেগুজে পথে নেমেছে।যখন শারদসম্মানে ঢুকে যাচ্ছে "সেরা সেলফি জোন"এর পুরষ্কার, মেয়েরা আক্ষেপ করছে, কেন এবারই "সেরা রিল এলাকা"টা হলনা। চিন্তার কিছু নেই, আসছে বছর নিশ্চয়ই হবে। তখন রিলে রিলে কিলবিল করবে নেট-দুনিয়া। টিকটককে পিছনে ফেলে মেটা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। একে কেউ কেউ ফালতু ক্যাকোফনি বলেন, আমরা বলি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। এইসবই আমাদের উৎসবের যুগলক্ষণ। উৎসব তো আকাশ থেকে পড়বেনা, জীবন যেরকম, তেমনই হবে। এরই মধ্যে কলকাতার পুজো আবার হেরিটেজ তকমা পেয়ে গেছে। রাস্তার শিল্পে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্ভার, নিঃসন্দেহে কলকাতারই। আমাদের দীনতা আর হীনতার মধ্যেও, আমাদের পারা আর না পারার মধ্যে, আমাদের যুদ্ধ আমাদের স্বার্থপরতার মধ্যে, থাকনা আমাদের ভালোটুকুও, থাক না, আমাদের হুল্লোড়, আমাদের ক্যাকোফনি। ... ...
বিস্ফোরণ ঘটছিল, আর তা নবারুণের মধ্যেই। বদলাচ্ছিলেন কবি। কবি নবারুণ ভটাচার্যের পরিচয় বদলে যাচ্ছিল কবি পুরন্দর ভাটের মধ্যে। যেমন সাহিত্যসম্রাট ঔপন্যাসিক বঙ্কিম মন খুলতেন আফিংখোর কমলাকান্তের মুখোশের আড়ালে – হয়তো তেমনিভাবেই পুরন্দর ভাট ছদ্মনামটাই আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়দীর্ণ নবারুণের। কবি নবারুণ সিরিয়াস – তার থেকে শতযোজন দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছ্যাবলামোভরা গদ্যকার নবারুণ। কিন্তু ধীরে ধীরে দুইধারা মিলেমিশে গেছে। তাই ২০১২ সালে ‘ভাষাবন্ধন প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত ‘পুরন্দর ভাটের কবিতা’-তে কোথাও নেই নবারুণ ভট্টাচার্য! সেখানে ফিক্ফিক্ হেসে কপিরাইটের দাবি করেন ফ্যাতাড়ু ও চোক্তারেরা! সেখানে উৎসর্গ পত্রে লেখা থাকে – ‘সব খচ্চর ও হারামিদের’! ... ...
ভোররাত থেকেই জলহাওয়া মেঘ থমথমে। সকাল থেকেই চারিদিক আঁধার।ভোর শেষ হয়নি তখনো।চারিদিক জনহীন, বাজারের দিকে শুধু ভিড়। সাইকেলে চেপে ঘুরে ঘুরে দেখছি দশদিক।ফলের ঝাঁকা নিয়ে পাতাইহাটের লোক, নতুন গামছা নিয়ে জগদানন্দপুর, মাটির জিনিস ও পদ্মফুল নিয়ে ঘোড়ানাশের মানুষজন বসে আছে। ঢাক নিয়ে আসে ঢাকিদের ভিড়ের পাশাপাশি সাহেবতলার কাছে দেখলাম একদল হিজড়ে।ঢাকে এখন বক মেরে পালক গাঁথা বন্ধ হয়েছে। হিজড়েদের হাতে ঢোলক একটা, রঙিন জামাকাপড়, দূরের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে। বোলান নাচের দল, গাজনের সঙ, রিক্সা চড়ে হাততালি দিয়ে পাড়া কাঁপানো হিজড়ে দেখে বড়ো হয়েছি।ঢোল কাঁধে কোমর বাঁকিয়ে নেচে-কুঁদে বলেছে - 'এই বাবু, টাকা না দিলে তোর উঠোনে দাঁড়িয়ে শাড়ি তুলে ঢোলে জল ঢেলে দিব'।সেই নাচের কী তীব্রতা,সমস্ত না-পাওয়া নাচে ফুটিয়ে তুলে কী প্রচণ্ড বেঁচে থাকা, চড়া গলার খটখটে গান আকাশের ঠোঁট অবধি ছুঁয়ে ফেলছে। ... ...
আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে। ... ...
বন্ধুরা অনেকেই ভালো নেই। কারও কাজের সমস্যা তো কারও পরিবারের সদস্যের প্রয়াণ, কারও জটিল অফিস বা বাড়ির রাজনীতি-তবু এসবের মধ্যেও পুজো আসে। এখনও। এও কি এক রকম বিস্ময় না? যখন জীবনটা এখানেই শেষ ভেবে নিয়েছে অনেকে, তখনই অজানা সুন্দরের ডাক এসে জানায়, এখনও প্রেম আছে। শড়িপরা মেয়েটিকে দেখে ভালোলাগছে আবার..সে যখন কাফেতে চোখে চোখে যা বলার বলে মিলিয়ে গেল, বুকের ধুকপুক জানালো, পুজো আসছে..যখন আবার পাহাড়ের কুলকুল ঝর্ণাডাক এসে জানাচ্ছে, অনেকদিন কাজের চাপে কোথাও যাওয়া হয়নি এবার কিন্তু দুম করে কোথাও বেরিয়ে পড়তেই হবে..কাউকে না পেলে একাই রাক্স্যাক নিয়ে পাহাড়ে ক দিন বেরিয়ে পড়ার সাহস জানালো, পুজো আসছে, পুজো আসছে, বয়স হলেও পুজো আসেই। ... ...
রাঢ়ের এই অঞ্চলের অতীতের ইতিহাস আমরা মঙ্গলকাব্যগুলোতে পাই। ... তারা কি দুর্যোধনের মত মারাত্মক? ব্যাপক সামাজিক ধ্বংস, হত্যালীলার নায়ক? মাহুদ্যা আর ভাঁড়ুদত্তের মধ্যে প্রথম জন কেমন যেন মাথা গরমের, আর দ্বিতীয় জন লোভী, কুচুটে। যারা ঝিল বোজাতে চায়, তারা ব্যাপকভাবে অন্ধকারের মানুষ এমনটা নয় কিন্তু! চরম ধ্বংসাত্মক মনোভাব এখানকার মানুষের তেমন নেই। উচ্চকিত মন্দ নেই, গড়পরতা ভাল, গড়পরতা মন্দ।” বলতে বলতে আচমকা হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, “তোমরা যদি কখনও উপন্যাস লেখ, এই এলাকার পটভূমিতে মহৎ উপন্যাসের সাদা মানুষ কালো মানুষ নিয়ে মুশকিলে পড়বে। আপাদমস্তক “কালো” মানুষ বোধহয় আঁকতে পারবে না, যদি বাস্তব থেকে চরিত্র খোঁজো। আবার সব ভাল মানুষের পো যদি সেই লেখার চরিত্র হয়, তবে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না নিশ্চিত। কৃত্রিমতার অভিযোগ উঠতে পারে কিন্তু! ... ...
একদিন নারায়ণ ফোন করে। "স্যার, ভাবতে পারবেন না এত মাছ হয়েছে! রান্নাপুজোর দিন থেকে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। পাড়া প্রতিবেশী জানতে চাইছে এত মাছ হচ্ছে কীকরে? আপনি সুস্থ হয়ে আসুন৷ আমরা অপেক্ষা করবো। আপনাকে এক লাখ টাকা দেবো৷ আমার ক্ষেত খামার পুকুর সব সাজিয়ে দেবেন।" শুনি আর ভাবি, সোমদা বিভিন্ন ব্লকে কিষাণ কিষাণীদের জন্য যে ব্যবস্থা করে দেয়(কৃষি প্রশিক্ষণ, ফার্ম ডিজাইন) তাতে তাদের যা রোজগার হয় সোমদার বেতন তার চেয়েও কম। ... ...
একবার মামারা রাজরাপ্পার মন্দির থেকে বলির মাংস নিয়ে এল। বড়দিদা রান্না করল পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া। ওভাবে যে পাঁঠার মাংস রান্না করা যায়, সেও আমার রাঁচীতেই দেখা। আর মাংস রাখতে হলে আমরা তো ফ্রিজে রাখি। রাঁচীতে শীতকালে কাঁচা মাংস একরাত রাখতে হলে বালতি করে ঢাকা দিয়ে বারান্দায় রাখা হত। বাইরে যা ঠান্ডা, ওটাই ফ্রিজের কাজ করবে বলে। আরও একটা জিনিস রাঁচীতে শিখেছিলাম। যদি দু’-তিন দিন ধরে ট্রেন বা বাস জার্নি করতে হয়, আর বাইরের খাবার খেতে অসুবিধে থাকে, তাহলে দুধ দিয়ে ময়দা মেখে লুচি করতে হয়। তিনদিন ঠিক থাকে, খারাপ হয় না। সঙ্গে আচার নিতে হবে। নইলে তরকারি অতদিন তো থাকবে না। ... ...
মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এর "প্রাগিতিহাস - ভারতবর্ষে পরিযান ও জাতিগোষ্ঠী গঠন" সম্বন্ধে বিশিষ্ট জিন-তাত্ত্বিক অধ্যাপক পার্থ পি মজুমদার বলেছেন, “এটি মানব-বিবর্তন, মানুষের পরিযান এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলা ভাষার প্রথম বই। বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে লেখা নির্ভরযোগ্য এবং অসাধারণ পাঠ যোগ্য এই বই।” সেই বইয়ের আলোচনা করলেন জয়ন্ত দাস। ... ...
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতে পারে না। দেশের সবথেকে নিচুতলার মানুষের সুখ-দুঃখকে না ছুঁতে পারলে ‘ভারত জোড়ো’ কেবলমাত্র একটা স্লোগান হয়েই থেকে যাবে। এটাও আমরা মাথায় রাখছি যে, ‘ভারত জোড়ো’-কে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে আমাদের একটি রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। সেটা হল দেশের মানুষের রোজগার সংক্রান্ত পরিসংখ্যান। গত ২ বছরে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু একই সময়ে মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ এবং আদানির সাম্রাজ্য ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দেশের বিত্তশালীদের মধ্যে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে শামিল হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে বিদেশে বসত গড়েছে। এইসব ধনী ভারতীয়রা আজকাল দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ‘হাম দো হামারে দো’, এটাই তো এই সরকারের অর্থনৈতিক নীতি। মোদি-শাহের এই আদানি-আম্বানিমুখী অর্থনীতিতে দেশ দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ না করে ভারত জোড়ার স্বপ্ন দেখাও বৃথা। নজিরবিহীন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার এই সময়ে ভারত ঐক্যবদ্ধ করার অর্থ হবে লুঠেরা-ডাকাতাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষকে অর্থনীতির কেন্দ্রেস্থলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। গর্বকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করা। ... ...
১৯৯৭/৯৮ সালে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া (আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) ডলার আর রুবলের বিনিময় মূল্যের একটি মান বেঁধে দিয়েছিল। এক ডলারের দাম ৫ আর ৭ রুবলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। যদি রুবলের দাম কমে, বাজার থেকে ডলার কিনে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া রুবলকে চাঙ্গা করবে। আর যদি রুবল শক্তিশালী হয়ে এক ডলারের বদলে ৫ নয়, ৪ রুবলের দিকে চলে যায়, বাজারে ডলার বিক্রি করে ব্যাঙ্ক রুবলের ভাও আবার পাঁচে নিয়ে আসবে। এর কেতাবি নাম ভাসমান গাঁটছড়া (ফ্লোটিং পেগ) বা ম্যানেজড পেগ। এই ভাবে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রুবলের মূল্যরক্ষার শপথ নিলো। কাগজ-কলমে এই পদ্ধতি আগ মার্কা শুদ্ধ। কিন্তু এটির শক্তি নির্ধারিত হয় যেকোনো দেশের ডলারের ভাঁড়ারে সঞ্চিত ধন (ডলার) এবং দেয় সুদের হার অনুযায়ী। মাত্র ছ’ বছর আগে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এইরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করে পাউন্ডের দাম ধরে রাখতে সম্যক ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিরক্ষা প্রয়াস একদিনেই বিধ্বস্ত হয় – কালো বুধবার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯২। এই জুয়োয় দান দিয়ে জর্জ সোরোস একদিনে এক বিলিয়ন ডলার লাভ করেন। ... ...
একটা জিনিস খুব স্পষ্ট – কলকাতার প্রথম অ্যাকুইফারের উপরে ১০ থেকে ৫০ মিটার পুরু একটি অ্যাকুইটার্ড বা কর্দমের স্তর আছে, যা অপ্রেবেশ্য বা আংশিক প্রবেশ্য। এটি থাকার জন্য এবং কলকাতার অধিকাংশই কংক্রিট বা অ্যাসফল্টে ঢাকা বলে কলকাতার বৃষ্টির জল সরাসরি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না বা পারলেও এত ধীরগতিতে, যে তা হিসাবের মধ্যে আসে না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, কলকাতায় এত যে বৃষ্টি হচ্ছে – তা কলকাতার কোনো কাজেই আসছে না। প্রায় সবটাই বয়ে চলে যাচ্ছে। উল্টে তা আবার জলমগ্নতার সমস্যা সৃষ্টি করছে। কলকাতায় তো বৃষ্টির জল ভূগর্ভে যেতে পারে না, তবে এই ভূগর্ভের অ্যাকুইফারগুলি পুষ্ট হয় কীভাবে? ... ...
নব্বই সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের আঘাত এত দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে বিশ্বের তাবড় বড় অনেক রাষ্ট্র ঝাপটে পড়েছে। অর্থনীতি মুচড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সীমানা আর জনগণের নাগরিকত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুঁজিবাদ নিপাত যাক বলে লাল ঝাণ্ডার পাণ্ডারা আর ফান্ডা দেখাতে পারছে না। বিপ্লব হিমঘরে। নেতাদের চরিত্র পালটে সম্পূর্ণ বিপরীতে এসে ঠেকেছে। সমাজতন্ত্র ভাগাড়ে আর ধর্মনিরপেক্ষতার মরণ হয়েছে। গণতন্ত্র সেজে উঠেছে ভোগবাদী আভিজাত্যে। এর সঙ্গে ধম্মো ধম্মো বোল উঠেছে আকাশ বাতাস মাটিতে, নদীতে। আজকাল দেখি অনেকেই স্ত্রী সহবাস, স্বামী সহবাসের দোআ মুখস্থ করার পাশাপাশি হাগতে যাওয়ার দোআও মুখস্থ করে ফেলছে। মন্দিরা শঙ্খ বাজিয়ে তিন বেলা সাড়ম্বরে পূজা করছে। পাঁচ বেলা পড়ে নামাজ পড়ে কপাল ঘষে ঈমানী ছাপ বসাচ্ছে। তবে ধর্ম যত জোরে শোরে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ঘরে ঘরে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দাঁত শূলাচ্ছে তারচে বেশী জোরে নৈতিকতা পালিয়ে গেছে। মানুষ বেশি বেশি মুসলমান হয়েছে। বেশি বেশি হিন্দু হয়ে গেছে। ... ...
– সুমিতাদিদা আর নিনাদিদা এখন কেমন আছেন, মা? – আছেন বলতে জরাগ্রস্ত, নব্বই ছুঁই ছুঁই। আর নিনাদিদা তো মানসিকভাবে সুস্থ নয়, অল্পবয়সে উত্তমকুমারকে বিয়ে করবে বলে পাগল হয়ে গিয়েছিল। তাই বিয়ে-থাও হয়নি। – মানে? উত্তমকুমারকে বিয়ে করতে চাইতো? – হ্যাঁ, হাসছিস? বহুমেয়েই তখন এমন পাগল ছিল। স্টার থিয়েটারে শ্যামলী দেখে নিনাদিদা পাগল হয়ে গেল। রোজ স্টারের দরজায় বসে থাকত। উত্তমকুমার কখন ঢুকবেন, কখন বেরোবেন। তারপর ধীরে ধীরে বিকার গ্রাস করলো। বলতো, উত্তমকুমার ওকে নিয়ে যাবে। মেহগনি কাঠের কারুকাজ করা পুরোনো ড্রেসিং টেবিলের বিরাট আয়নার সামনে সেজেগুজে বসে থাকতো, উত্তমের সঙ্গে বেরোবে বলে .... ... ...
পুজোর গামছার প্রধান দুই সমস্যা ছিল তাদের দৈর্ঘ্য এবং ঘনত্বের। সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের গামছা সাপ্লাই করা হত পুজোর সময় ব্রাহ্মণদের প্রণামীতে। সেই গামছা প্রায় মসলিনকেও হার মানিয়ে দেয়, অনেকে ভয়ে ভাঁজই খুলত না গামছার, এই যদি ফেঁসে যায়! তবে পুজোতে গামছা এক সিম্বলিক জিনিস ছিল প্রায় – ডাঁই করে রাখা গামছার উপরের কয়েকটায় কিছু সিঁদুর এবং ফুল-গঙ্গা জল পড়ত। তাদের তলার গুলো পুজো শেষ হয়ে গেলে ব্রাক্ষণ ঠাকুর নিজে গিয়ে বিক্রী করে দিয়ে আসত আমরা যেই দোকান থেকে কিনেছি। পরের বছর আবার সেই গামছা আমরা কিনতাম। ... ...