১৯৯২ এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর তাঁর লেখা নিয়েছি। আর ২০০২ এ গুজরাট গণহত্যার সময় তিনি পথে নেমেছেন। অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় ওরফে মধুদা ও আমি স্যারের বাড়ি যাই। বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সভা করি তাঁর বাড়িতে দেবেশ রায়, সৌরীন ভট্টাচার্য, জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন। গড়ে ওঠে গুজরাট সংহতি সমিতি। অন্তত ৪০ বার আমরা পথে পথে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৩৩ টিতে স্যার সরাসরি উপস্থিত থেকেছেন। ধর্মতলা, রাজাবাজার, রিপন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট,শ্যামবাজার কোথায় নয়? ... ...
কাজে লাগে না বলে সাধারণ চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত যখন নিজের সংস্কৃতিকে বাতিলই করে দিয়েছেন তখন আর ভয় কী? ছেলেমেয়েকে বাংলা বই পড়ানো দূরে থাক, বাংলা টিভি চ্যানেল পর্যন্ত দেখতে বারণ করেছেন। তা কেন্দ্রীয় সরকার আর আপনার হিন্দিভাষী প্রতিবেশীরা যদি বাংলা বলাটুকুও বন্ধ করে দেন, সে তো ভালই, তাই না? আসলে এত দিনে মাথায় ঢুকেছে যে শক্তিশালী জাতিবিদ্বেষী যখন মারতে আসে তখন স্রেফ নামটা দেখেই মারে। ... ...
খাপ পঞ্চায়েত প্রেম, বিয়ে, জাতপাত, নারী বিষয়ক অবস্থান থেকে সরে খানিক অন্য ধারণায় উপনীত হবে কিনা আড্ডা আর সেদিকে গড়ায় না। নওদীপ ঘুম থেকে উঠে আমাদের মাঝে এসে বসে। ওকে নিয়ে ‘সাথী’রা রসিকতা করতে থাকে, ‘হামারে নওদীপ সেলিব্রিটি বন গ্যায়ি।’ সবাই মিলে হো হো হেসে ওঠে। নওদীপ–এর হাসিতে মিশে থাকে লাজুক আভা। ... ...
সব ভালো জিনিসই এক সময় শেষ হয়। ভোটদান শেষ হলো। আবারো নানাবিধ হিসাবনিকাশ ও কাগজপত্রের পর, এবার ফেরার পালা। সব পাখী ঘরে ফেরে, কবি এরকম অযৌক্তিক দাবি করে থাকলেও, সব ভোটকর্মী ঘরে ফিরবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ফেরার সময় হলে দেখা যায়, সোনার তরীর মত ট্রেকারের স্থান অকুলান। আসার সময় একটা ট্রিপে পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে ট্রেকার, ফেরার সময় পাঁচজন এবং খেলার ফল সমেত ইভিএম ---সবার জায়গা নেই। ... ...
এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান "নিরপেক্ষ" সংবাদ পত্রটি এ হেন সংবাদ পরিবেশনের আগে সলতে পাকিয়ে গিয়েছেন অনেক দিন আগে থেকেই। সাম্প্রদায়িক, চুড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক অসভ্য নেতা নেতৃবৃন্দের পুঙ্ক্ষানুপুঙখ দৈনিক কার্যকলাপ তারা সংবাদপত্র দ্বারা প্রচারিত করে গিয়েছেন। তা ছাড়াও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছেন ঋণে জর্জরিত একঝাঁক সিরিয়াল ও সিনেমার মধ্যমানের তারকারা। যখনই তারা এই দুটি দলের ছাতার তলায় এসেছেন বা দল বদল করেছেন। তাদের পছন্দ অপছন্দ প্রেম বা প্রেমহীনতার সবটুকু গিলিয়ে খাইয়েছেন সংবাদপত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। এর চেয়ে জনকল্যানকারী অন্য কোনও পথ এরা পান নি - বলে বিশ্বাস হয় নি। ... ...
পবিত্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন ষাটের দশকের শেষে আমদের পক্ষে এক হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা, যাঁর সঙ্গে মিশতে শুরু করলে কবিতার অতলে না তলিয়ে গিয়ে আর উপায় নেই। তিনি যে কবিতা লেখার পাশাপাশি অবিরত প্রবন্ধ লিখেছেন তা খানিকটা তিরিশের দশকের বুদ্ধদেব ও সুধীন দত্তদের ভ্রমণসূচির কথা মনে রেখেই। তিনি চেয়েছিলেন ‘কবিতা’ পত্রিকার মতো, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার মতো তাঁর সম্পাদিত ‘কবিপত্র’ হয়ে উঠবে সফল ও অসফল, খ্যাত ও অখ্যাত নানা কবির আবাসস্থল। স্মৃতিচারণে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ... ...
ইব্লিসের আত্মদর্শন। ছয় দশক আগে প্রথম প্রকাশে বাংলা কবিতামহলকে চমকিত করেছিল। সার্থক দীর্ঘ কবিতার অনেক উদাহরণ বাংলা কবিতায় থাকলেও সে কবিতাটি তার প্রকরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ আমরা ইব্লিসের পাঠকরা এই কবিতায় মহাকাব্যিক সেই প্রবণতার সন্ধান পাই যা আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ লিখছেন রাজীব সিংহ ... ...
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে। ... ...
তখন আমার কাছে লেখা ব্যতীত আর কোনো লক্ষ্য ছিল না। যে কাজ করলে লেখায় ক্ষতি হবে। সময় কম দিতে পারব, সেই কাজ করব না, হোক না ক্ষমতা এবং বেতন বেশি। নিজের ডিপার্টমেন্ট আমাকে সম্মান করত। অন্তত বেশিরভাগ উপরওয়ালারা। সে কথা যাক। একটা কথাও বলতে হয় বড় চাকরি করা আমার সাধ্য ছিল না। মেধাবী তো ছিলাম না। রেজাল্ট খারাপ। কেমিস্ট্রির ময়লার, ফিনার-এর বই না পড়ে বিভূতিভূষণ পড়েছি। সুতরাং হবে কী ? চেষ্টা চরিত্র করলে কীই বা হত। কম বেতনের চাকরি, আমার পরিবারের সকলে কৃচ্ছ সাধন করেছে সমস্তজীবন। স্ত্রী মিতালি হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছে। বুঝেছে যদি সম্মান আসে এতেই আসবে। যার যেটা পথ, সেই পথেই তিনি যান। ... ...
সিএএ বা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন হিন্দু-মুসলমান কাউকেই সুরক্ষা দেওয়ার আনা হয়নি। এই আইন বিজেপির জুমলাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। আসামে বিজেপি অসমীয়াদের বলছে তাদের সুরক্ষা দেবে, আসাম চুক্তির ছয় নং ধারা বাস্তাবায়িত করবে এবং তা করছেও। ওদিকে বাঙালি হিন্দুদের বলছে মুসলমানদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে, হিন্দুদের কোনো ভয় নেই সিএএ দিয়ে তোমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে হিন্দু বাঙালির কপালে সেই বিদেশী নোটিশ, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এবং ডিটেনশন ক্যাম্প। এনআরসি আর ডি-ভোটারের কবলে পড়ে মুসলমানরা যত না ভুগছে তার থেকে তিনগুণ বেশি ভোগান্তি হচ্ছে হিন্দুদের। ... ...
চলন জলে ধোয়া সে সর্ষে সারারাত কলার মাইজে গা জুড়াবে। আর সকালের প্রথম রোদ মেখে ঝরঝরে হয়ে উঠতেই ঢেঁকির গড়ে গড়িয়ে পড়বে। বাড়ির সবাই ভাতঘুমে।থেমে থেমে শুধু ঠাকুমার ধামা কূলার শব্দ। ফটিক জল পাখির ডাক থেমে গেছে। পড়ন্ত দুপুরের বুকজুড়ে হলকা হাওয়ায় তাঁতমাকুরের খটাস খটাস। তবে আজকাল মাকুর আওয়াজ সেই আগের মতো সারা পাড়া জাগিয়ে রাখে না। গোলেনূর দাদীর দশখানা তাঁতের চারটা বিক্রী হয়ে গেছে। নদীর ওপাড়ে নতুন পাওয়ার লুম বসেছে। মানিক কাকুর মুখে দু’দিন আগে কথাটি শুনে দাদু অনেকসময় মাথা নীচু করে বসেছিলো। ঠাকুমার সর্ষে ঝাড়া শেষ। ধামা কাঁখে ঠাকুমা লাল বারান্দা থেকে উঠোনে নামতেই আমি বড়ঘরের ভেতর দৌড়ে যাই। মেঝেয় পাটি পেতে ঘুমিয়ে থাকা মনিপিসির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি, ... ...
বোঝো, কাদের নিয়ে সংসার করছি। আমাকে উত্তর দিতে হলো না। তার আগেই শীর্ণ ভদ্রমহিলা ধমকে উঠলেন, 'এই অবস্থায় উপোষ করবি কিরে? উপোষ করলে তোর যা পূণ্য হবে, পেটের বাচ্চাটাকে না খাইয়ে রাখলে তার চেয়ে ঢের বেশি পাপ হবে।' এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন আমি হামেশাই হই। সুগারের রোগীরা, প্রেশারের রোগীরা বারবার নিষেধ সত্ত্বেও রোজা রাখেন এবং অসুস্থ হয়ে আমার দারস্থ হন। আমি গালাগালি দিয়ে রাগ মেটাই। ওনারা বিনা প্রতিবাদে সব শোনেন। মাথা নেড়ে মেনেও নেন। এবং একটু সুস্থ হলে আবার রোজা রাখেন। তবে এ ব্যাপারে হিন্দু ধর্মের বয়স্ক মহিলারাও কম যান না। তাঁরাও একাদশী বা যেকোনো ছুতোয় উপোষ করেন। নিজের শরীরের বারোটা বাজান। ... ...
যে বৃদ্ধাবাসের প্রস্তাবটা অরুণ দিচ্ছেন, ধরুন সেই একই বৃদ্ধাবাসে একটা ব্লক তৈরি করা হলো যেটা নিঃশুল্ক। আর, সেই ব্লকটায় থাকবেন শুধুমাত্র একা-হয়ে-যাওয়া ট্রাইবাল মানুষজন। এই ধরণের বৃদ্ধাবাসে সাধারণত নিয়মিত চিকিৎসার জন্যে একটা ব্যবস্থা থাকে। এ ক্ষেত্রেও সেটা থাকবে, কিন্তু অন্য বৃদ্ধাবাসের তুলনায় এটা একটু অন্যরকমের হতে পারে। এমন হতে পারে যে বৃদ্ধাবাসের আবাসিক যারা নয়, স্থানীয় সেই সব মানুষদের জন্যেও আউটডোর চিকিৎসার ব্যবস্থা হলো এখান থেকে। সত্যি সত্যিই যদি এইরকমের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আপনাদের সমাজসেবার কাজটা এই বৃদ্ধাবাস দিয়েই শুরু হতে পারে। ... ...
সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে? ... ...
এই অভিযোগের স্তূপের মধ্যেই নতুন করে কাল ভাইরাল হয়েছে একটি বিস্ফোরক ভিডিও। আলাদা করে তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নানা সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই সেটি প্রকাশ করে চলেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে উত্তেজিত জনতার জমায়েত, গুলির আওয়াজ, আর্তচিৎকার এবং রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েকজনকে পড়ে থাকতে। এখনও পর্যন্ত এর সত্যতা কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। ভিডিওটি যদি সত্যি হয়, তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার কোনো চিহ্ন সেখানে দেখা যাচ্ছেনা। শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ। তা একতরফা। কাঁদানে গ্যাস বা লাঠি চালনার কোনো চিহ্ন নেই। সামান্য বা একেবারেই বিনা প্ররোচনায় গুলি করে মারা হয়েছে সাধারণ ভোটারদের। ... ...
একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোর শ্রীমান মৃণাল হক বলেছে যে, স্থানীয় বাজারের মধ্যে তাকে টুঁটি চেপে ধরে সিআইএসএফ কর্মীরা লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। মারের চোটে সে মাটিতে পড়ে গেলে কিছু গ্রামবাসী প্রতিবাদ করায় সে সিআইএসএফ কর্মীদের হাত থেকে ছাড়া পায়। আমাদের জেলা মানবাধিকার আধিকারিক নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। জানা গেছে, শ্রী নূর ইসলাম তাঁর ৫ সদস্যের পরিবারের এমকমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রবাসী শ্রমিক। ৮ এপ্রিল ২০২১ তিনি দেশে ফেরেন ভোট দেওয়ার জন্য। বুকে গুলি লাগা অবস্থায় মাথাভাঙ্গা সাবডিভিশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয়। শ্রী মণিরুল জামাল তাঁর ৭ সদস্যের পরিবারের মুখ্য রোজগেরে ছিলেন। তিনিও একজন প্রবাসী শ্রমিক ছিলেন। ৯ এপ্রিল ২০২১ গ্যাংটক থেকে নিজের গ্রামে ফেরেন ভোট দেবার জন্য। শ্রী চাইমূলও তাঁর ৫ সদস্যের পরিবারের প্রধান রোজগেরে ছিলেন। শ্রী হামিদুল মিয়াঁ তারঁ ৪ সদস্যের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাঁ স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ... ...
মুশকিল হচ্ছে দু'জায়গায়। এমনটা নয় যে আমাদের রাজ্যে খুব শান্তিপূর্ণ ভোট হয় এবং স্থানীয়রা বুথে গিয়ে ঝামেলা করেনা। কিন্তু, শীতলকুচির ঘটনায় যতগুলো ন্যারেটিভ বাজারে ঘুরছে তাতে আমরা মেনেই নিচ্ছি যে স্থানীয়রা ওখানে ঝামেলা করেছিল। এখন অব্দি কোনো প্রমাণ নেই। স্থানীয়রা এরকম কোনো ঘটনার কথা স্বীকার করছেন না। কিন্তু আমরা, ব্যানানা রিপাবলিকের ম্যাঙ্গো পাবলিকেরা প্রকারান্তে মেনে নিচ্ছি যে তারা ঝামেলা করেছিলেন। এবং এরাজ্যে যেহেতু, সংখ্যালঘুদের একটা অংশ বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাতে এ ভাবনা আরও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহার করার তালিকায় মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার চালানো বিজেপিও পিছিয়ে নেই। চব্বিশ পরগণার ত্রাস ফিরোজ কামাল গাজী ওরফে বাবু মাস্টার এইমুহুর্তে বিজেপির সম্পদ। প্রসঙ্গত, আমাদের রাজ্যের সংখ্যালঘুরা প্রায়ই গলা ফাটান যে তাদের রাজনৈতিক দলগুলি ব্যবহার করে থাকে এবং অভিযোগটি অসত্য নয়। সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরা কোন যুক্তিতে নিজেদের এতদিন ধরে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছেন তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। ... ...
এটাও বুঝতে হবে যে আমার ১৩৫ কোটির দেশ। প্রতিদিন তার প্রত্যেকটা মানুষকে যদি দিনের শেষে দু-বেলা খাওয়াতে হয় তাহলে আমাকে কোথাও না কোথাও একটা ব্যালেন্স করতে হবে। যদি আপনি বলেন যে ব্যালেন্সটা কী হওয়া উচিত অভিষেক, সত্যি আমার কাছে তার কোনো উত্তর নেই। হয়তো অর্গানিক ফার্মিং একটা বিকল্প কিন্তু শুধু এই অর্গানিক ফার্মিং দিয়ে আমি ১৩৫ কোটি মানুষের মুখে অন্ন কালকেই জোগাতে পারব কি না আমার কাছে উত্তর নেই। তাই অবশ্যই আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে যারা হয়তো একটা ভালো ভবিষ্যৎ আমাদের উপহার দেবেন। ... ...
রোমহর্ষক আর নয়নাভিরাম-এর মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। বাংলার ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম সংঘাতের ঘটনাগুলি রোমহর্ষক, কিন্তু নয়নাভিরাম হয়ে থেকেছে সম্প্রীতির ছবিগুলি। পুকুরপাড়ে বসে নারকেল গাছের পাতার জলে বিলি দেখা নয়নাভিরাম, কিন্তু তা নিয়ে জনশ্রুতি রটে না, পুকুরে বিষ ঢেলে যখন মরা মাছ ভেসে ওঠে তা প্রজন্মান্তরের গল্প হয়ে ওঠে। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির টুকরো টুকরো ছবি এই সমাজে বহমান থেকেছে, সমাজচিত্রে সহজাত সৌন্দর্য এনেছে। আর কয়েক দশকে একবার দাঙ্গা-ফ্যাসাদের গল্প ইতিহাস বইয়ে এসেছে। কিন্তু, মানুষ পুকুরে বিষ দিতে ফিরে যায় না বরং ডাঙায় বসে পানকৌড়ি দেখে। তাই, দাঙ্গা হাঙ্গামার ইতিকথা সরিয়ে তার চিরন্তন জীবনে সে সম্প্রীতির কথাই বলেছে। দাঙ্গা-দেশভাগের পরেও তাই এই দেশের মানুষের যৌথচিন্তায় বিভেদ মাথা তুলতে পারে নি। ... ...