কর্পোরেট অফিস আর কলকাতায় পার্থক্য অনেক। কলকাতায় সোমেশ্বরই ছিল বস, অতএব সাধারণভাবে অফিসের চালচলন, ম্যানেজার আর অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক, ওঠাবসা ইত্যাদি, ঠিক নিয়ন্ত্রণ না করলেও সোমেশ্বরের রুচি আর পছন্দের ছাপও পড়ত তাতে। কর্পোরেট অফিস অন্য রকমের। সেখানে অনেক ডিপার্টমেন্ট, অনেক কমিটি, বিদেশী ভিজিটর্স, নানা রকমের প্রেজেন্টেশন আর পার্টি। বেশির ভাগ কাজের দিনগুলোতেই যেহেতু ট্যুরে থাকে সোমেশ্বর, অতএব নিজের কাজের বাইরের এসব ব্যাপারে ও থাকেই না প্রায়। মুম্বইতে থেকেও এক-আধটা সান্ধ্য পার্টিতে না গেলে চলে না, কাজেই সেটুকুই ওর জনসংযোগ। কিন্তু ওকে যে বিশেষ কেউ লক্ষ্য করে, তা-ও মনে হয়না। ... ...
প্রভাবশালী মুসলমান রাজনৈতিক নেতা এ বাংলা কম দেখেনি। শেরে বাঙ্গাল ফজলুল হক, সুরাওয়র্দী, ঢাকার নবাব খ্বাজা সলিমুল্লা বাহাদুর, আবদুল গনি খান থেকে আজকের সিদীকুল্লা চৌধুরী, অনেকে এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম একজন ধর্মগুরু সরাসরি রাজনীতিতে এলেন, তাও ফুরুফুরা শরীফের মতো সারা উপমহাদেশের কাছে মান্যতাপ্রাপ্ত এক মাজারের পীরজাদা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তার রাজনৈতিক দিশা। না, তিনি শুধু মুসলমানেদের হয়ে কথা বলছেন না। তার দাবী অনুযায়ী তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু, আদিবাসী এমনকি অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধি। এখানেই হিসাব পাল্টালেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ... ...
পিপলস বুক সোসাইটি আমাকে বলেছিল, অতিবৃষ্টিতে বাঁধাইখানায় জল ঢুকে ফর্মা নষ্ট হয়ে গেছে। যারা নতুন লিখতে এসেছিলেন, তাঁরা বইটি পড়তে চান, পি বি এস-এ গিয়ে খুঁজে পান না। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর সরকার বদলেছে। ২০১৩ সালে বইমেলায় আমাকে পি বি এস-এর একজন ডাকলেন, আসুন আসুন। আমি পি বি এস-এ যেতাম না বই নিয়ে ঐ ব্যাপার হয়ে যাওয়ার পর। বিরক্ত হয়েই ওঁদের প্যাভিলিয়নে ঢুকে দেখি নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান স্বমহিমায় বিরাজমান। সেই চল্লিশ টাকা দাম। দশ বছর আগের দাম। ঝকঝকে ফর্মা। সেই পুরোন ছাপা। কী হয়েছিল এতদিন? তাঁরা বললেন ফর্মা হারিয়ে গিয়েছিল, খুঁজে পেয়েছেন আবার। ভুল জায়গায় রক্ষিত হয়েছিল। মিসপ্লেসড। এমন হয় আমি শুনিনি আগে। না কি বইটি তাঁরাই বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন অদৃশ্য চাপে। কিন্তু পি বি এস-এর মানুষগুলি আমার প্রিয়জন। প্রত্যেকে আদর্শবাদী। ত্যাগী। আমি অনীক পত্রিকায় তিরিশ বছর এক নাগাড়ে লিখেছি। দীপঙ্কর চক্রবর্তী এবং রতন খাসনবিশ পরম শ্রদ্ধার মানুষ। অনীকের সঙ্গে পি বি এস সরাসরি যুক্ত না হলেও অনীক পত্রিকা পি বি এস থেকেই বিক্রি হয়। ওঁদের ভিতরে বন্ধুতার সম্পর্ক। অনীক এবং পি বি এস-কে আমি আলাদা করে দেখতাম না। এই ঘটনায় সব গোল পাকিয়ে গিয়েছিল। মনে পড়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কথা, যাঁরা পার্টি করেন, তাঁদের কাছে সাহিত্য শিল্পের চেয়ে দলের মূল্য বেশি। নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান উপন্যাস কিন্তু এক দলের নিন্দা করে অন্য দলের সমর্থনে লেখা তথাকথিত পার্টির লেখা নয়। এই উপন্যাস বামপন্থী দলের প্রতি বিষোদ্গারের নয়। কিন্তু ভিখারী পাশোয়ানের নিরুদ্দেশের ঘটনা সেই সময় হিমালয়ের চেয়ে ভারি হয়ে উঠেছিল সরকারের কাছে। পার্টির কাছে। একটি মানুষ যে কত তুচ্ছ, কত অবহেলার-- প্রশাসন, পুলিশ এবং বিত্তবানের কাছে, সেই লেখাই এই লেখা। উপন্যাসটি মুখে মুখে রটেছিল। এক সংবাদপত্রে এর আলোচনা করেছিলেন বিখ্যাত এক লেখক। মুখে আমাকে বলেছিলেন অনেক কথা, মা লিখ। ২৫০/৩০০ শব্দ কোনোরকমে লিখেছিলেন। এই রিভিউ নিয়ে সেই ভবিষৎবাণীই করেছিলেন পি বি এস কর্ণধার প্রশান্তবাবু। মৃণালবাবুর ছবি করা নিয়েও তিনি বলেছিলেন, হবে না। ... ...
উনুনের আগুনে টগবগ করে ফুটছে কড়াইয়ের জল। সেই জলে ঠাকুমা হাত বাঁচিয়ে কোরার মণ্ড দিয়ে দিলো। একটু পরেই রঙ বদলে সাদাটে হয়ে ভেসে উঠলো কোরার মণ্ড। ঠাকুমা মণ্ডটাকে আরোও কিছুসময় ফুটতে দিলো। এরপর ঠাকুমা উনুন থেকে কড়াই নামিয়ে জল ঝরিয়ে নেয় কোরার মন্ডের। ধোঁয়া ওঠা মণ্ডকে লোহার খুন্তা দিয়ে ঠাকুমা অনেকগুলো টুকরো করে নিলো। ... ...
এক একটা কাউন্টিং টেবিলে কতজন কাউন্টিং এজেন্ট থাকবেন তা নির্ভর করবে সেই নির্বাচনী ক্ষেত্রে কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনটি মুখ্য দল নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কথাবার্তা হচ্ছে বলে সর্বত্র কেবল তিনজনই থাকবে এমন নয়। তিন, তের সতেরো, যে কোনো সংখ্যাই হতে পারে। এবং চুপটি করে চেয়ারে বসে ইভিএমের ওপর নজর রাখা সম্ভব হয় না। সামনের সারিতে আসার জন্য ঈষৎ ফ্রেণ্ডলি বা কখনো আনফ্রেণ্ডলি গুঁতোগুঁতি চলতেই থাকে। এখানে সামাজিক দূরত্ব অসম্ভব, তাই কি করে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সার্টিফিকেট দেবেন যে কোভিড বিধি মেনে ব্যবস্থা হয়েছে সেটাও ভাবার বিষয়। ... ...
দেড় বছর ধরে যে অতিমারী চলছে, তার মোকাবিলায় রাজ্যের তৃণমূল সরকার আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মধ্যে কোন তফাত দেখলেন কি ভোটাররা? তারও উত্তর রবিবার নির্বাচনের ফলে থাকবে হয়ত। নাকি থাকবে না? সিপিএমের কমিউনিটি ক্যান্টিন কি ভোটারদের প্রভাবিত করেছে? নাকি বিপদের সময়ে ত্রাণমূলক কাজ করার সঙ্গে সরকার চালানোর যোগ্যতার কোন সম্পর্ক নেই --- এমনটাই ভোটারদের রায়। সে প্রশ্নের জবাবও খুঁজছিলাম। টিভিতে জনমত সমীক্ষা দেখানোর সময় যেভাবে ইস্যুভিত্তিক মত দেখানো হত, বুথফেরত সমীক্ষায় তেমন দেখলাম না। ফলে এ প্রশ্নের উত্তরও পেলাম না। ... ...
নিজের সঙ্গে কথা বলেন কবিরা অনেকসময়ই। ম্যানিফেস্টো লেখেন। কবিরা যে ম্যানিফেস্টো লিখে নিয়ে তারপর কবিতা লিখতে বসেন তা আদৌ নয়, কবিতা লিখতে লিখতে হয়তো কোনো ম্যানিফেস্টোর প্রয়োজন বোধ করেন। এমন মুহূর্ত আসে যখন নিজের সঙ্গে একটা কড়ার করে নিতে হয়। তার আগে পরে যা আছে তা যে সাধনধন নয়, তা নয়। তবু নিজের সঙ্গে নিজের সাধনা নিয়ে কথা বলতে হতে পারে। আপন মনে কথা, সত্তো ভোচে। কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণদিনে তাঁর তেমনই একটি কবিতা স্মরণে অমিয় দেব ... ...
সপ্তদশ শতক। শাহ জাহান বাদশার হেঁশেল। মুঘলাই খিচুড়ির রোশনাই। আর তারই মধ্যে একটির নাম খিচড়ি দাউদখানি! সে নাম যেমন রহস্যময়, তেমনই বিচিত্র সে খানা—বলছে খিচড়ি, কিন্তু চাল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের চুন্যো জনপদের উদ্দেশে বেরিয়ে ভয়ংকর মাকাটা জলা-অঞ্চল পার হওয়ার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
কৃষককে একটা শ্রেণি হিসেবে দেখার সমস্যা আছে। কারণ কৃষক এক রকম নয়, কৃষকের অনেক স্তর রয়েছে। এবং ভারতবর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদেশে, বিভিন্ন রাজ্যে এই স্তরবিন্যাসটাও ভীষণ আলাদা। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস— দুটো একেবারেই মেলে না, ঐতিহাসিক ভাবেই মেলে না, খুবই আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে কেন কৃষি আন্দোলন খুব একটা জোরদার হচ্ছে না, নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠছে না, তারও একটা কারণ সম্ভবত এই তফাতটার মধ্যেই আছে। ... ...
প্রকৃতপ্রস্তাবে বর্তমানের বিজেপি হল ভারতীয় জনমনের প্রকৃত প্রতিফলন। এই সরকার দেশের উদার-গণতন্ত্রের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে জনগণকে একেবারে তার উলঙ্গ প্রতিলিপির সামনে সটান দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজেপি দেশকে একটি বাইনারির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ... ...
এই ফুটপাথেই থাকেন সেরিনা বিবি পুরকাইত (৩৩)। লক্ষ্ণীকান্তপুর লাইনে গ্রাম। বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাচাকাচির কাজ করেন আশেপাশের তিনটে বাড়িতে। তিন সন্তানের জননী। বাচ্চারা কর্পোরেশনের স্কুলে পড়ে। স্বামী ভ্যান চালান। কথা শুরু হয় তাঁর সঙ্গে। লকডাউনে কী করেছেন? “লকডাউনের সময় বাড়ি চলে গেছিলাম। বসেই ছিলাম বাড়িতে। কিন্তু খাবার জোটাতে পারছিলাম না। খুব কষ্ট হচ্ছিল। গ্রামের কিছু লোকের দানে চলছিল। এভাবে কী চলে? তাই শহরে চলে এলাম।” এসেই কাজ পেলেন? ... ...
এই ২০২১ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে 'টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া' কাগজে একটা খবরে চোখ আটকে গেল। খবরটির মোদ্দা কথা হল, নোটা চালু করার অনুমতি দেওয়ার আট বছর পরেও আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, সেন্টার এবং ইলেকশন কমিশনের কাছে জানতে চাইছেন, নোটার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কোনোভাবে কোনো কেন্দ্রে সর্বাধিক হয়ে দাঁড়ালে, আইনত, সেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়ে জয়ী প্রার্থীকে কি পরাজিত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে! ... ...
বাঙালির দৃষ্টিকোণ থেকে বাঙালির ইতিহাস, এ বস্তু অপ্রতুল। যাঁরা লিখতে পারতেন, তাঁরা সযত্নে এই কোণটি এড়িয়ে গেছেন। আশ্চর্যের কিছু নেই, এও এক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে বহুস্বর থেকে এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত করার রাজনীতি। সে রাজনীতি মূলত স্বতঃসিদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। এই স্বতঃসিদ্ধকে প্রশ্ন করার জন্যই এই বই। পূর্ণাঙ্গ হলে ভালো হত। কিন্তু আপাতত সদর দপ্তরে পিংপং বল ছুঁড়েই শুরু করা যাক না। ... ...
সঙ্ঘের চেয়ে সত্য বড়। আর সেই সত্যের খাতিরে রেয়াত করা চলে না কারোকেই। দ্বিতীয় তথ্যটিও এই সত্যভাবনা সম্পর্কিত। একেবারে শুরু থেকেই সে নিষ্ঠা প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়েছে। শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলায় উচ্ছ্বসিত সুভাষ মুখোপাধ্যায় পড়ে ফেললেন তরুণ শঙ্খের একটি কবিতা। কবি তখন পদ্মাপারের শৈশব স্মৃতি ও ছন্নছাড়া বড় হয়ে ওঠা পেরিয়ে প্রেসিডেন্সির ছাত্র। বুদ্ধদেব বসু উপস্থিত ছিলেন সে সভায়। মুখচোরা লাজুক শঙখ যাবেন না ভেবেও কী করতে যেন সেখানে উপস্থিত। সুভাষের বক্তব্যের পর বুদ্ধদেব মহা উত্তেজিত হয়ে অনাহুত ভাবেই মাইক তুলে নিলেন৷ কবিতা লেখা এতো সোজা নয়। স্লোগান বা প্রচার তার উপজীব্য হতে পারে না কখনো। কবিতা এক গাঢ়তর বোধের জগত,ভাত ভাত বলে সরল চিৎকার করলেই সেটা কবিতা হয় না। এইরকমই কিছু নাকি সেদিন বলেছিলেন তিনি। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মার্কিন সাংবাদিক মিল্টন মায়ার গিয়েছিলেন জার্মান মহানগর ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে একটা গ্রামে। উদ্দেশ্য: গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে বোঝা যে, নাজ়ি পার্টির শাসনে থাকাটা সাধারণ গ্রাম্য জার্মান নাগরিকের চোখে কেমন ছিল। মায়ার সেখানে দশ জন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন, এবং তাঁদের সাথে কথা বলে তাঁদের চিন্তাভাবনা বুঝে দেখার চেষ্টা করেছিলেন। মায়ার আবিষ্কার করেন যে, সেই দশজনের মধ্যে কেবলমাত্র একজন (হ্যাঁ, ঠিক-ই ভাবছেন, মানে মাত্র ১০ শতাংশ) মনে করতেন যে, হিটলারের নাজ়ি পার্টির শাসন ছিল স্বৈরাচারী শাসন। ... ...
‘আমার সমসময়ই মনে হত, আমাদের তাৎক্ষণিক চাহিদায় বা নিতান্তই সঙ্গসুখলোভে আমরা ওঁর যে সময়টা গ্রাস করে নিই, সেই নষ্ট সময়েই তো তৈরি হতে পারত অনন্ত সম্পদ—কিছু লেখায় রূপ নিত, কিছু ওঁর অপারসক্রিয় ভাবনায় মথিত হত— যা থেকে যেত কত কালের আস্বাদনের জন্য। তাঁর বাড়ির সপ্তাহান্তিক বিখ্যাত আড্ডায় আমি কখনও যাইনি, ওই ভাবনা থেকেই।’ শরণাপন্ন হয়েছেন অবশ্য সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে। তেমনই দুই অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
মন দিয়ে শুনছেন যে শ্রোতা তিনি হয়তো এই কবিতায় দুটি বিসংবাদী সুর শুনে চমকে উঠছেন! আজ্ঞার সুর যে এখানে বড়ো বেশি প্রকট এবং সুতীব্র, আবার কাতর কণ্ঠের কোমল সুরও। পরস্পরবিরোধী সুর সব, কবি শঙ্খ ঘোষের এমনই কাব্যরীতি যে এই দুই অতি ভিন্ন সুরের মেলবন্ধনেই তিনি রচনা করে চলেছেন এক অনবদ্য রাগিণী— যেন পাঠকের কাছে পেশ করছেন কোনো সিম্ফনি। ... ...
কবি সেই ভারতের দিকে আমাদের দৃষ্টি টানেন যা ‘মানচিত্রে ভেসে উঠে পেয়ে গেছে তবু কিছু মান’, আর সেই দেশেই যদি এখনও মানুষ ‘গাঁয়ে বসে খুঁটে খায় খুদকুঁড়ো’ তার কারণ হতেই হবে ‘রক্তে তো ইংরেজি নেই’! এই স্যাটায়ারের স্বর মৃদু, কিন্তু যথেষ্ট ধারালো— উঠে আসে কীভাবে আমাদের ভোগ করা যাবতীয় সুযোগসুবিধার মূলে রয়েছে কোনো ঔপনিবেশিক মনোভাব। ... ...
শঙ্খ ঘোষ বিশ্বসাহিত্যের তন্নিষ্ঠ পাঠক। তাঁর একটা কাজ, সৃষ্টিশীল কাজ, শিশুদের জন্য লেখালিখিও। ১৯৯৪ সালে বাংলার বিশিষ্ট ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকা তাঁর উপর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে ছিল তাঁর লেখালিখি নিয়ে বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লেখা। অনুষ্টুপের এই সংখ্যায় ওঁর নিকটতম বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেছিলেন শঙ্খবাবুর নানা গুণের কথা। তার মধ্যে একটা ছিল কর্তব্যবোধ। ... ...