রঘুনাথ বললো কাছাকাছি ভাবকান্দি নামে একটা আদিবাসী গ্রাম আছে, সেখান থেকেই আসে বেশির ভাগ লোক। সেই গ্রামটা, আর যে গ্রামের থেকে আমাদের অষ্টমী আসে গোরুর দেখাশোনা করার জন্যে – ডাংলাজোড়া – এই দুটো গ্রামে তুমি আমাকে নিয়ে যাবে? বাড়ি বাড়ি? আমি তো ওদের সবায়ের ভাষা বুঝবো না, তাই তোমার সাথে যাবো প্রথম প্রথম। ওদের গ্রামে গিয়ে আমি ছবি আঁকবো, আর ওদের বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাবো। ... ...
পালস অক্সিমিটার জোগাড় করে নিয়মিত অক্সিজেন মাপা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। বয়স্ক মহিলার ছেলে পরপর দুদিন এলেন। বক্তব্য একই, ‘ডাক্তারবাবু, মা একেবারে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বিছানাতেই প্রস্রাব পায়খানা করে ফেলছেন।’ রোগীকে আস্তে আস্তে খারাপ দিকে এগিয়ে যেতে দেখলে ডাক্তারদের বড় অসহায় লাগে। অসহায়তা থেকে রাগের জন্ম হয়। আমি অকারণেই ওনার ছেলেকে ঝাড় দিলাম। বললাম, ‘এতোদিনে সামান্য একটা কোভিড টেস্টের রিপোর্ট করে উঠতে পারলেন না, কী করে আশা করেন মা সুস্থ হয়ে উঠবেন? এখনও বাঁচাতে চাইলে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ ... ...
পায়ের তলে পদ্মরেণু, মুঠোয় গহন দীঘি চোখের ভিতর উড়ছে আকাশপ্রদীপ আফ্রোদাইতি,ম্যাজিক ছিলো,তোমার গ্রীবাস্থলে ... ...
মনিপিসি কলেজের জন্য আজ বের হলো না। আর ঠাকুমার কাঁথাগুলোও কাঠের বাক্সে থেকে গেলো। একে তো হাটবার তার উপর মনিপিসির ব্রতের দিন। উনুনের আঁচ নিভলো না আজ। তবে উনুনে আমিষ ওঠার আগেই ঠাকুমা নিরামিষ পদ করে নিতে চায়। ব্রতশেষে লাল আটার রুটি দিয়ে মনিপিসি ঝিঙে বাসন্তী খাবে। ... ...
তুমি উৎসব, তুমিই সেই চাঁদ দেখে ছুটি দিয়েছো কত চাঁদকে আঁকার ঘরে তোমাকে ঘিরে ছিল যারা সবাই এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছে ওদের চুলে হাত বুলিয়ে শুতে গেছে অন্য কেউ এঁকেছে চোখের পাতায় চুম্বন ... ...
চাঁদপানা মেয়েটি আজ হাওয়াইয়ান ব্রিজ ও ল্যাভেন্ডারের মিশ্র সুবাস পরে এসেছে। এই সুবাস তৈরি হয়েছে বহুদূরের এক সমুদ্রশহরে ... ...
গানটি নবনী ওরফে আয়েশা খুব ভাল গাইতো। আজ বারবার নবনী নামটি এসে টোকা দিচ্ছে হামিদুল সাহেবের মনে। সেই কবে থেকেই তো নামটিকে বনবাস দিয়েছে সে। প্রথম প্রথম 'আয়েশা' নামে অবাক হতো আয়েশা। বলতো, এই নামে কেন ডাকছো, কী হয়েছে তোমার? আর এর সাথেই অসন্তোষের ভাঁজগুলো মুখে ছড়িয়ে জানান দিতো, ভালবাসার সেই 'নবনী' নামটি ছাড়তে নারাজ সে। কিন্তু সে অসন্তোষ খুব বেশীদিন প্রতিরোধ করতে পারেনি। আয়েশা নামের প্রকৃত অর্থের কারিগরি হাজির করে হামিদুল সাহেব বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এ নামটিকেই ভালবাসতে চান। আর 'নবনী' নামের সাথে সাথেই আয়েশার কাছ থেকে গানও বিদায় নিয়েছে। ... ...
ছেলের কথা পল্লবিত হয়েই হয়ত এল তার কাছে কিন্তু কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে থাকল প্রদীপ... তার কণ্ঠার হাড় দপদপ করে ওঠানামা করল... রোগা, আদ্ধেক শিরা বেরিয়ে ওঠা মুঠি দুবার জোরে মুঠো করল সে... এই ছেলেকে ত পিটিয়েও সিধে করা যাচ্ছে না। প্রদীপের স্ত্রী পুত্রের আরেক প্রস্থ শাসনের ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল... কিন্তু কুকীর্তিটা পুত্র ঘটিয়েছে তাদের শ্রদ্ধেয় কাকার বাড়িতে, বাড়িশুদ্ধ আত্মীয়কুটুমের সামনে তার স্বামীর মাথা হেঁট হয়ে গেল... প্রদীপের এই অপমানটাও তাকে বিদ্ধ করল চকিতে... ... ...
অলংকার দিয়ে লেখে কবিতা বিস্মৃতির অতলে যাওয়া গপ্পো ফাঁদে তবু তোমার নাম উল্লেখ করে না। প্যালেস্তাইন আমার এই পাহাড়ের গায়ের খুপরি থেকে কত দূরে আমার বুকে বসে খণ্ড খণ্ড করে টুকরো করার কতখানি কাছে। । ... ...
রাস্তার ধারেই বাড়ি ছিল আমাদের। তখন গ্রামের কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় জঘন্য কাদা। গরমে এই ধুলো। আর হেমন্তে সে মাখামাখি থাকত শিশিরে। একদিন একটা লোক, সঙ্গে চটপটে লোকের দশজনের একটা টিম, যারা ফিতে দিয়ে রাস্তা মাপছিল। যারা সরকারি রাস্তার জায়গা দখল করে বাড়ি করেছে, তাদের বাড়ি ভেঙে রাস্তা বের করে নেবে সরকার। আমাদের মাটির ঘরের অর্ধেকটা ভাঙা পড়বে। কানে পেনসিল গোঁজা লোকটা জানিয়ে দিল। দাদু বলল, একশ বছর আগের এই আমাদের মাটির ঘর। এখন এই তুমি দুদিনের ছোকরা এসে বলছ ভেঙে দেবে? ব্রিটিশ আমলের ঘর কি এখন ভাঙা যায়? সরকারি লোক গম্ভীর মুখে বলে, মাপে যা বেরিয়েছে, সেটা আমি কেবল জানিয়ে গেলুম। এবার প্রশাসন বুঝবে। ... ...
গফুর চাচা বহুদিন হল জামা মসজিদের সিঁড়িতে বসে কাবাব বিক্রি করে। রমজান মাসে কাবাব একটু তরিবৎ করে বানায়। ইফতারের পরেই সে যোগাড় করতে বসে যায়। মাংস কুচি করে কিমা বানায়, পুদিনা কুচি গোলমরিচ বাটা জয়িত্রী জায়ফলের গুঁড়ো মাখিয়ে তাকে মিহিন করে পিষে মাটির হাঁড়িতে ঘি মাখিয়ে রেখে দেয়। দিন আনি দিন খাই মুটে মজুর , দোকানদার, পথ চলতি গেরস্ত এমনকি চাওরি বাজারের তবায়েফরা পর্যন্ত গফুরের কাবাবের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ... ...
আমডাল রাঁধি। একটা কোকিল চেঁচিয়ে যাচ্ছে তারস্বরে। তত ত্রাস নেই? মৃত্যুভাবনা? দিনগত কোনো পাপক্ষয়ের রাজনীতি নেই? সুগন্ধ ওঠে গ্রীষ্মকালের! দুর্গন্ধেও ভরে যায় আজ অসুখের ঘর! ... ...
ফোনটা পেয়েই এই সাত-সকালে বের হতে হলো। জিরো পয়েন্টে একটা ডেড-বডি পাওয়া গেছে। আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছি। সাব-ইন্সপেক্টর কল করে জানালেন বিষয়টি। এ আর নতুন কী! প্রথম প্রথম এ-ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ঘাবড়ে যেতাম, মনটা বিষিয়ে উঠত, আবার এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও জেগে উঠতো ভেতরে ভেতরে। এখন হই বিরক্ত— সময়মতো না ঘুমাতে পারার বিরক্ত; খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য বিরক্ত, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণে বিরক্ত। গিয়ে দেখি একঝাঁক মানুষ জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও চোখ থেকে ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি। কেউ কেউ বেরিয়েছিল হাঁটাহাঁটি করতে, লাশটা দেখে সংগত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি খানিকটা ওপরে। জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি পরিত্যক্ত পোলের সাথে গলাই দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে মাঝবয়স্ক এক লোক। লোকটির কাঁধে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একটি কাক। এতগুলো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্যই কিনা কা-কা-কা করেই যাচ্ছে; কিংবা ঘটনার সাক্ষী দিচ্ছে কি সে? আমাদের পরিভাষায় লোকটার নাম এখন ডেড-বডি। বোঝা গেল কেউ মেরে এখানে টাঙিয়ে রেখেছে। খুনিরা মাঝে মধ্যে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এ-ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়— কখনো আবার শরীর থেকে হাত-পা-মাথা আলাদা করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। একবার আমাকে সেরকম একটা কেস সামলাতে হয়েছিল— শরীর মেলাতে মেলাতে হয়রান। মাথাটাই পাওয়া যায় না। শরীর দেখে সরকারি পক্ষের একটা পরিচয় দাঁড় করানো হলো, কিন্তু মাথা পেয়ে দেখা গেল ... ...
মুখ থেকে খুলে ফেলল মুখোশ, এখানে বাতাস সুগন্ধিত, দুজন পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজোড়া হাত উন্মুক্ত, কাছেই দরিয়া, জালিম রাত আকাশে চাঁদ পুরাতন, শরাবি জ্যোৎস্নার বিষাদে ভেসে যাচ্ছে নহবত ... ...
বাংলায় আদম পীরের প্রভাব সেই একাদশ শতকের পূর্ববর্তী সময়কালে থেকে আজও সমানভাবে বিদ্যমান। হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ী সংস্কৃতির এক অসামান্য ভাবধারা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে আদম পীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন। আদম পীর সম্পর্কে খুব সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যথেষ্ট মুশকিলের ব্যাপার। আদম পীরকে অনেকেই হযরত পীর আদম বলে অভিহিত করে থাকেন। কেউ কেউ বলেন বাবা আদম শহীদ। কিন্তু তাঁর জন্ম কোথায় ,তাঁর তিরোধানই বা কোথায়, কিভাবে হয়, মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ --এই সব কোনো কিছুই সঠিকভাবে জানতে পারা যায় না। তাঁর পারিবারিক পরিচয় ও কিন্তু খুব সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। খানিকটা অনুমান এবং অনুরাগীদের রেখে যাওয়া পরম্পরাগত বিফরণ এবং তাঁদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন গল্পগাছা কে নির্ভর করেই আদম পীর সম্বন্ধে কিছু কিছু ধারনা আমাদের উঠে আসে। ... ...
প্রৌঢ় বয়স পর্যন্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুলেখাকে মেনে নিতে হতো তন্ময়ের অন্যায় আবদার। হ্যাঁ প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে তৃতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন সুলেখা। লজ্জায় তিনি কলেজে যেতে পারতেন না, তার মেয়েরা তখন কত বড়, শুধু তাই নয় শরীরও যেন নিতে চাইত না সন্তান বহন করবার ধকল। তবু তিনি সবটুকুই মেনে নিয়েছিলেন মুখ বুঁজে। কখনো তিনি গুনগুন করে গান গাইলে যখন তন্ময় ধমকে উঠতেন, আহ! বন্ধ করো তো নাকি কান্না। ... ...
জেরার্ড ইউরিগেরা। শিল্প-ইতিহাসকার ও সমালোচক। মুখে সর্বদাই দেড় হাজার টাকা দামের চুরুট। সামান্য মিইয়ে গেলেই বাতিল। মহার্ঘ্য কেস। হরেক কিসিমের লাইটার। মাথায় প্রত্যহ নয়া টুপি। রেস্তোরাঁতেই যেন দিন গুজরান। প্যারিস। এক ঝলক সুগন্ধী স্মৃতি। হিরণ মিত্র ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের চুন্যো জনপদের উদ্দেশে বেরিয়ে ভয়ংকর মাকাটা জলা-অঞ্চল পার হয়ে এবারে এক বিপুল জনহীন প্রান্তর পার করার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
যে জনসমাজের জন্য দুর্বার তা যাতে তাঁরাই দেখভাল করতে পারেন, অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর দ্বারাই পরিচালিত হয় তাঁদের সংগঠন সে বিষয়ে প্রথম থেকেই ছিলেন তৎপর। এখন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দ্বারা যৌনকর্মীরা তাঁদের মধ্য থেকে সচিব, সভাপতি ইত্যাদি নির্বাচিত করেন। ভোট হয় সেখানে, যৌনকর্মীদের নিজস্ব ভোট। পৃথিবীর ইতিহাসে যা যথেষ্ট ব্যতিক্রমি বলা যায়। যৌনকর্মীদের অর্জিত অর্থ যাতে সঞ্চিত থাকে, সুরক্ষিত থাকে তার জন্য সমবায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আর এক ইতিহাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্নাতক এবং গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মানুষ হয়েও ডাঃ জানা এবিষয়ে তৎপর হন। যৌনকর্মীদের সমবায় ব্যাঙ্ক আদৌ হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তুমুল বিতর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০-এর মাঝামাঝি আইনের কিছু অংশের পরিবর্তন করতে হয়। দুর্বার অনুমতি পায়। ... ...
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে হারানো সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে গদি থেকে নামানোর জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে - ঘোষণা হয়ে গেলো যে বিজেপি-নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এখন একাই দিল্লির 'সরকার', জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা আম আদমি পার্টিকে কাজ করতে হবে তাঁর হুকুম মাফিক। আর তাছাড়া যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেই প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজ্যপাল আর তাঁদের ওপরে থাকা দেশের রাষ্ট্রপতির ধমনীতেও তো বয়ে চলেছে গোলওয়ালকারেরই রক্ত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একএকজন আরএসএস প্রাক্তন। তাই কানহাইয়া বা উমার খালিদের মতন অপ্রিয় প্রশ্ন করা ছাত্র-ছাত্রী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দেখা যাবে না আজ থেকে দশ বছর পর। ... ...