২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। প্রাক ভোটের পরিবর্তনপন্থী হাওয়ায় সরগরম নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া। সেইখানে দু’টি মেয়ে একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে আত্মহত্যা করল বিষ খেয়ে। বিষ খেয়ে মৃত্যুর যন্ত্রণার কোনো চিহ্ন অবশ্য দু’টি মেয়ের মুখে ছিল না। মেয়েদু’টির নাম সুচেতা (১৮) আর স্বপ্না (২২)। সুচেতা স্বপ্নার ছাত্রী ছিল। পরস্পরকে দারুণ ভালোবাসত। এই অস্বাভাবিক ভালোবাসার অবসান ঘটাতেই বোধহয় স্বপ্নাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে বিয়ে সুখের হয়নি। অবশেষে দু’জন আত্মহত্যা করে আর রেখে যায় একটি দীর্ঘ অন্তিম চিঠি। সে চিঠিতে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শুধু অন্তিম ইচ্ছা ব্যক্ত করে যায় তারা – যেন তাদের একসঙ্গে সৎকার করা হয়। না, তাদের এই ইচ্ছাটুকুও পূর্ণ করেনি তাদের পরিবার তথা সমাজ। তাদের দেহ নিতেও তারা অস্বীকার করে। মর্গে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকে তারা। অথচ শেষ চিঠিতেও পরিবারের প্রতি, বাবা-মার প্রতি তাদের ভালোবাসা আর উৎকন্ঠা ঝরে পড়ে। কেন এমন হয়? ... ...
১৮৫৭-র যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে ম্যাক্সমুলারের রান্না করা ‘ভারতভূমিতে ককেসাসিয় আর্য আগ্রাসন তত্ত্ব’ (এখন থেকে আর্যতত্ত্ব) ঔপনিবেশিক বাজারে সভ্যতা-বিস্তার আর সাম্রাজ্যরক্ষার ককটেল বানিয়ে খাইয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে প্রাচীন আর্যতত্ত্বের নবতম রূপকার ম্যাক্সমুলার প্রথমে আর্যকে জাতিবাচক অভিধায় অভিহিত করে যতদূর-সম্ভব ভুল করেছিলেন। কিছু পরে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃত ভাষায় বডিন অধ্যাপনার প্রতিযোগিতায় ছিটকে গিয়ে তিনি পূর্বের নিজ-অবস্থান সংশোধন করে, আর্য শব্দের জাতিবাদিতা কেড়ে, তার নখ-দাঁত বিচ্ছিন্ন করে নিরীহ ভাষাগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিলেন। কিন্তু ততদিনে আর্যতত্ত্ব মোটামুটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি এবং তাকে জোরদার করার কাজে সহায়ক হয়েছে। কেশবচন্দ্র শুধু যে ‘বৈজ্ঞানিক’ আর্যতত্ত্ব অবলম্বনে ব্রিটিশদের ভারতবর্ষের ‘বিছড়ে হুয়ে ভাই’ বলবেন না, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ‘গডসেন্ড, ভগবৎ-ইচ্ছা’ আখ্যায় ভূষিত করে ব্রাহ্ম ভাইবেরাদারদের উপনিবেশ লুঠে ছোটতরফ ভদ্রবিত্তের চাকুরি, দালালি, উমদোরির অংশিদারিত্বও নিশ্চিত করবেন.... ... ...
মেজ নন্দাই যখন শ্বশুর বাড়িতে আসতেন, আমাকে বক্সীবাজারে নিয়ে যেতেন। কতরকম যে নোনামাছ বাজারে, তাদের চেহারা, আকৃতি সব কিছু অদ্ভুত। আমি অবাক হয়ে যেতাম। মাছগুলো বেশ স্বাদু, কিন্তু দামে কম। কম তো হবেই, স্থানীয় সমুদ্রের মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। শহরের মানুষ তো খেতে জানে না, তাই দামও ওঠে না। কিন্তু এই মাছগুলো এখানকার মানুষের শরীরে সস্তা প্রোটিনের যোগানদার। আর দীঘা-মোহনায় ইলিশ উঠলে, বাড়িতে ফোন চলে আসে। তখন বর, দেওর, আরো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে কাকভোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। কারখানা থেকে থার্মোকলের বাক্স কিনে রেখেছে বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে টাটকা ইলিশ ঠেসে বরফ দিয়ে চওড়া সেলোটেপ দিয়ে সিল করে নিয়ে আসে। শহরেও এভাবে ইলিশ নিয়ে আসি আমরা। প্রতিবেশী, নিকটজন ইলিশ উপহার পেলে খুবই খুশি হয়। হাওড়া স্টেশনের পাশে ইলিশের নিলাম হয়। সেখানেও যাওয়া হয় কখনো-সখনো। ... ...
বাড়ি সাজানো ছাড়াও চাইনিজ নিউ ইয়ারের আরো দুই আবশ্যিক অঙ্গ ছিল ফায়ার-ক্র্যাকার এবং লাল রঙের এনভেলপ। এই নিউ ইয়ার সাধারণত জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসেই আসত বলে, আমাদের অনেক চাইনিজ বন্ধু ইংরাজি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের সময় যে আতসবাজি বিক্রি হত, সেগুলি কিনে স্টক করে রেখে দিত। তবে চাইনিজ নিউ ইয়ারে চাইনিজ দোকানগুলিতে ফায়ার-ক্র্যাকার পাওয়া যেত কিনতে – সেখান থেকেও আমরা কিনে নিয়ে আসতাম। আর সেই লাল রঙের খামে থাকত ‘টাকা’ – এটা একটা ট্র্যাডিশন ওদের, যেখানে বাড়ির বড়রা ছোটদের এই টাকা গিফট করে, তবে ছোটদের ছাড়াও প্রিয়দের এই খাম দেওয়ারও ট্র্যাডিশন আছে। সেইমত আমরা আমাদের চাইনিজ বন্ধুদের থেকে পেতাম খুব সুন্দর হাতে নাম লেখা, চাইনিজ লিপিতে। ... ...
পয়লা অক্টোবর, দক্ষিণ-নৈর্ঋত কোণ বরাবর চার ঘণ্টা হাঁটার পর জিওয়ানি নামের একটা বড় জলাশয়ের কাছে পৌঁছলাম। একটা বিশালাকার ডুমুর গাছ (স্থানীয় ভাষায় এমকুয়ু), উন্যামওয়েজির বনের দৈত্যাকার গাছগুলোর মধ্যে একটা, তার ছায়ায় একটা পুরানো আধ-পোড়া বেড়া-ঘেরা থাকার জায়গা দেখলাম - এক ঘণ্টার মধ্যে সেটা একটা দুর্দান্ত শিবিরাবাসে রূপান্তরিত হল। ... ...
একদিন হঠাৎ করেই কেল্লার ভেতরের ঘাটগুলির কথা মাথায় আসে। প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল কেল্লার ভেতরে এতগুলো ঘাট কেন? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সেগুলি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারি। চলুন এবার অতীতের ঘাটগুলিতে ডুব মেরে আসি। ... ...
মনে পড়ে যায়, রবি একদিন বলেছিল গল্পটা। বড় নিকাশি নালা গায়েব, যেটুকু বেঁচে, পরিষ্কার হয় না। একবার জনপদের, এমনকি স্কুলের মাঠের জল কিছুতেই নামে না। পাবলিকের হল্লায় নালা পরিষ্কার করতে লোক লাগাল পঞ্চায়েত। একদিনের কাজ শেষ হয় তিনদিনে। নালা সিল হয়ে ছিল কোটি কোটি প্লাস্টিকের চিকচিকি, ব্যাগ, মোড়ক, গ্লাস আর থার্মোকলের ট্যুরিস্ট বাটি-থালায়। আটাত্তর, দু’ হাজার, আয়লা, আম্পান, ইয়াস। একের পর এক বন্যা। সন্দেশখালির নালার হাজার মেগাটন প্লাস্টিক তুলে নিয়ে যেতে লরি লেগেছিল গোটা কুড়ি। ... ...
একসময় চলচ্চিত্র দেখার সু্যোগ বাড়ল ইনটারনেটের কল্যাণে, কিন্তু চলচ্চিত্র সংক্রান্ত আলোচনার পরিসর ও প্রভাব গেল কমে। ফলে সাম্প্রতিক ফরাসি চলচ্চিত্র সম্পর্কে আমরা খুব একটা কিছু জানি না। কিন্তু শুধু ইনটারনেট নয় , এখন বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও সেসব সুযোগ কিছুটা তৈরি হয়েছে। বিশেষত Mubi নামক প্ল্যাটফর্মটিতে এরকম ছবির আধিক্য আছে। সেখান থেকেই কয়েকটি ফরাসি ছবি বেছে নিয়ে আমার এই ঝাঁকিদর্শন প্রচেষ্টা। ... ...
মনিকা ভিত্তিকে আন্তনিওনির মানসকন্যা বলার কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে ওঁর একক নির্দেশিত চোদ্দ পনেরটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই মনিকা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রধানতম ছবি গুলির তালিকায় নিশ্চয়ই সব ছবি পড়বে না। পড়বে ‘অপুত্রয়ী’, পড়বে ‘চারুলতা’, পড়বে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ইত্যাদি। কারণ, এগুলিতেই সত্যজিৎ-বীক্ষার সর্বোত্তম প্রকাশ ও বিকাশ দেখা গেছে। একই ভাবে আন্তনিওনির ক্ষেত্রে নাম করতে হবে তাঁর প্রখ্যাত ট্রিলজি – ‘লাভেন্তুরা’(১৯৬০) , ‘লা-নত্তে’(১৯৬১), ‘লা-এক্লিপ্স’(১৯৬২)-এর, নাম করতে হবে ‘দি রেড ডেসার্ট’(১৯৬৪)-এর। মনিকা ভিত্তিকে ছাড়া এই ছবিগুলোর কথা স্রেফ ভাবা যায় না! ... ...
দেকো, সিবিল ওয়ার হইচিল এখেনে, তারপর যতেক নিগ্রো ছিল সবাইকে বেবাক আজাদ করে দিল। দিল তো? কিন্তু সাদাদের সেটা কদ্দিন সইবে বল দিকিন? সব তো ফিরিঙ্গিদেরই জাতভাই। যা দেছেল, সব কুটুকুটু করে ফেরত নিতে চায়। সেটা কীরকম? ফের জুতে দেবে ওদের? না, তা নয়, কিন্তু নতুন আইন করেছে সরকার, অনেক নিগ্রোদের ভোট থাকবে নাকো। ভোট? সেইটা কি এস্রাক ভাই? প্রশ্নটা জয়নাল করল, কিন্তু শব্দটা অজানা তাদের সবার। এই দেশের লোক তা আমাদের মতুন নয়কো, এরা নিজেদের পছন্দমত সরকার বানায়, তাকেই বলে ভোট। মাথা চুলকিয়ে এটুকুই বলতে পারে এস্রাক। যা বলেছিল তার বউ-বেরাদর। নিগ্রোদের আর পছন্দ করতে দেবে না, যা করবে সাদারা। ... ...
কিঞ্চিৎ অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে কাঁটাকলে অর্থনীতি পড়ার সময় বাড়িতে দু জনকে পণ্ডিতি টোলের ধরনে পঠন পাঠন করিয়েছি। এখন পঁচিশ জন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র ছাত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে কোন কায়দায় বিদ্যা বিতরণ করব? টেবিলে গাদা খানেক প্লাস্টিক অ্যাসিটেট। প্রজেক্টরে এক নম্বর স্লাইড গুঁজে বেয়াতে আলোক সম্পাতের জন্য প্রস্তুত। কেবল আমার ইঙ্গিতের অপেক্ষা। গুরু বাক্যি স্মরণ করে জেনে নিলাম কে কোন ব্যাঙ্কের কোন বিভাগে কতদিন কাজ করেছেন। প্রশ্নোত্তরের সুযোগে তাদের কথিত ইংরেজি বিদ্যার পরিচয় পাওয়া গেল। সিঁথি বরানগরে লালিত আমার ইংরেজি উচ্চারণ তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে কিনা সে হদিশ নেওয়াটাও জরুরি ছিল। নিজের ব্যবসার তরিকা অন্যকে বোঝাতে হয় নি।কাঁটাকলের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্টেট ব্যাঙ্কে যোগ দিয়ে কাজ শিখেছি কাজ করে, ক্লাস রুমে বক্তৃতা শুনে নয়। পাতাটি ছিল সাদা। টাবুলা রোজা। কাগজে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে! ... ...
সুলভের সামনে কেউ নেই তখন। ভেতরে, মেঝে জুড়ে ভাঙা কাচ। দেওয়াল কাঁপছিল, দরজা, স্কাইলাইট – সব; ঘুলঘুলির সামনে পাখির বাসা মাটিতে ঠিকরে পড়তে তিনটে ডিমই ভাঙল। বাথরুমে ঢুকে কল খুলল প্রফুল্ল – লালচে জল চড়বড় করে পড়ছিল বালতির ভিতর। তারপর প্রফুল্লর চোখের সামনে কলের মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে জল বেরল, চিড় ধরল দেওয়ালে। পাশের স্নান করার খোপ থেকে জল বেরিয়ে আসছিল গব গব করে, মাথার ওপরে ছাদের আস্তর খসে পড়ল এইবার; জাহাজ তাহলে গলিতে ঢুকেছে – সাবান-মাখা, আদুল-গা প্রফুল্ল দৌড় মারল মন্দিরের দিকে। ... ...
আমাদের সব অনুভূতিই একেকটা মেসেঞ্জারের মত। একেক জন একেক খবর নিয়ে আসে। খবরটা দেবার জন্য ওরা আমাদের ডাকে। বলে "ওগো,তাকিয়ে দেখো। এমন ঘটনা ঘটলে তুমি নিরাপদে থাকবে। এমন ঘটলে তোমার সমূহ বিপদ। এই কাজ ভুলেও করতে যেওনা। এই কাজটা বারবার কোরো।" এইসব। এইবার আমাদের ওরা ডাকবে কী করে? ওরা মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারেনা, গলার স্বর নেই ওদের। আঙুলও নেই যে ইমেল করবে, হোয়াট্স-অ্যাপ করবে। ... ...
মানুষের ভয়ের প্রতি এক আশ্চর্য আকর্ষণ আছে। সেই আকর্ষণ থেকেই শিশুরা ভূত বা জুজুবুড়ির গল্প শুনে ভয় পায় এবং বারবার সেই ভূত ও জুজুবুড়ির গল্প শুনতে চায়। বাঙালি তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশের এক বড় বাধা এই ভূত পেত্নী ও জুজুর গল্প। ... ...
হজরত মুহম্মদ অবশ্য নিজের জীবনে ‘চার-স্ত্রী নীতি’ মানেননি, কোরানের ৩৩ : ৫০ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল তাঁর চারের অধিক বিয়েকে অনুমোদন দিয়ে। ইসলামীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী তাঁর ‘তেরোজন’ (এ ক্ষেত্রে মতৈক্য নেই, তেরো থেকে পনেরো নানা সংখ্যা বলা হয়েছে) স্ত্রীর কথা জানা যায়। ... ...
– আর ‘পুতুলখেলা’র প্রয়োজন? ২০০৪ সালে? – ‘পুতুলখেলা’ প্রথম হয়েছিল ২০০২ সালে। পুংশাসিত সমাজে নারী এবং পুরুষের কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে তো! যেমন, পুরুষকে রোজগার করতেই হবে, তাকে নিজেকে নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত করতেই হবে আর মেয়েকে ইনফিরিওর হতেই হবে, মিষ্টি মিষ্টি হতেই হবে। এগুলি কিন্তু সমাজ-আরোপিত ভূমিকা। যে যা নয়, সেরকম তাকে করতে হচ্ছে, ভান করতে হচ্ছে। এখন এরকম ব্যাপার তো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঘটছে। স্বামী-স্ত্রীর ইউনিট-এর মধ্যে, অর্থাৎ যেটা সমাজের মূল অংশ, সেখানে যদি ভান থেকে যায়, মিথ্যাচার থাকে, আর তার মধ্যে বাচ্চারা বড় হয় – সেই মিথ্যাচার তারাও গ্রহণ করবে, আর সেই মিথ্যাচারের বিষ সমাজে ছড়াবে। সমাজকে সুস্থ করতে হলে অসুখটা সারানো দরকার, সিম্পটম দূর করে তো অসুখ সারানো যাবে না। দরকার হল, নিজেদের নিজেরা ঠিক করা। আবার ‘ডলস্ হাউস’-এ নোরার বান্ধবী ক্রিস্টিন, এখানে যে কৃষ্ণা – এই চরিত্রটাকে কিন্তু ভর দিয়ে দাঁড় করানো হয়নি। ব্যক্তি হিসেবে রিয়ালাইজেশনের খুব দরকার আছে। একটি নারী তো আগে একজন ব্যক্তি। এই ব্যক্তি মানুষ হিসেবে নারীর বা তার স্বামীর রিয়ালাইজেশনটা খুব দরকার। ... ...
মাঝেমধ্যে দেখতাম, ঐ মেয়ে-বৌরা মশলাপাতি, আটা-ময়দা, চিনি কিছু কিছু নিয়ে যাচ্ছে আড়াল করে। শাশুড়ি মায়ের কানে তুললাম কথাটা। তিনি হাসলেন। বললেন কিছু বাসনও গেছে এভাবে। পুকুরে মাজা হয় তো। মাজার সময়ে ভাসিয়ে বা ডুবিয়ে দেয়। অন্ধকারে তুলে নিয়ে যায়। বললাম, সে কী, তুমি কিছু বল না? তিনি বললেন, সে অনেক কথা। বড় কিছু না হলে সব জিনিস দেখতে নেই। কথাটা শুনলাম, কিন্তু মানতে পারলাম না। কর্তার কানে তুললাম। কর্তা বললেন, খবরদার এসব ব্যাপারে নাক গলিও না। মা যেমন বলছে, তেমনিভাবে চল। আমরা এখানে থাকি না। দু’দিনের অতিথি। আমরা ওদের রাগিয়ে দিয়ে ঝামেলা করে চলে যাব, তারপর সারাবছর কী হবে? যার হাতে রান্নাঘর, তার হাতে জীবন। ওসব মায়ের হাতে ছেড়ে দাও। পরে অবশ্য অনেক দাম দিয়ে বুঝেছি, কেন শাশুড়ি মা বলেছিলেন, সব জিনিস দেখতে নেই। ... ...
ফরিশতা ও মেয়েরা! কোথা থেকে যে শুরু করি বুঝে উঠতে পারছিনা। বইটি ঘরে ফেরত আসার পর আবার একবার গোটা বইয়ের তেরোটি গল্প তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়লাম। দ্বিতীয় বারের পড়ায়ও ততটাই নতুন লাগলো যা কিনা প্রথমবার লেগেছিল। বরং বেশ কিছু বিষয় আরো আরো স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো। চারপাশের নতুন নতুন অধরা বিষয়গুলো তাঁর গল্পে স্থান পেয়েছে। ... ...
অফিসের কাছাকাছি একটা ট্রাফিক সিগনালে রোজ দাঁড়াতে হয়। অভ্যাসের বশে দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানে, অথচ আজ সিগনালের রঙ সবুজ। একশ’ কিলোমিটার স্পিডের রাস্তায় সবুজ আলোয় দাঁড়িয়ে পড়েই বুঝল – ভুল করেছে, তবু, শোধরানোর চেষ্টা করল না, দাঁড়িয়েই রইল, দাঁড়িয়ে রইল ঠায় – যেন সে চলচ্ছক্তিহীন; চোখ যতদূর যায়, ঢালা পিচরাস্তায় খণ্ড খণ্ড জলতল, বাষ্প উঠছে সেখান থেকে। পঙ্কজ তার ভাগ্যের কাছে নিজের হৃৎপিণ্ড বন্ধক দিয়ে বসে রইল – যা কিছু ঘটে যেতে পারে এই মুহূর্তে – হয়তো একটা কলিশন, হয়তো চুরচুর হয়ে যাবে গাড়ি, তালগোল পাকিয়ে যাবে পঙ্কজ নিজে – শেষ হয়ে যাবে সব। ... ...
নিজেদের জমি, নিজেদের শহর – যেখানে মাথার উপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য কোনো সাদা লোক মজুত নেই, আসতে চাও না এমন একটা জায়গায়? যেখানে বাঁচার জন্য সারাক্ষণ বুকে পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না, সাদা মেয়েদের দিকে চোখ তুলে চাইলে বেঘোরে মারা যাওয়ার কোন ভয় নেই। চাও না এমন একটা পিঠসোজা করা শান্তির জীবন? এভাবেই বলত ইশাইয়া। তার কথায় আগুনের ফুলকি থাকত, মুখে মুখে ছড়িয়ে যেত রঙমশাল। ... ...