আজ পৌষ বা মকর সংক্রান্তির ভোরবেলায়, ১ মাস ব্যাপী টুসু উৎসবের শেষ দিন রাঢ়বাংলার বিশেষত পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের গ্রামীণ মেয়েরা দলবদ্ধভাবে যখন টুসুগান গাইতে গাইতে টুসুদেবীর ভাসানের জন্য চলেছেন জলাশয়ে বা নদীতে। যখন টুসুর জাগরণের শেষ দুই রাত জেগে গান গেয়ে গেয়ে ঘরে ঘরে তাঁরা তৈরি করেছেন গড়গড়্যা বা বাঁকা বা উধি পিঠা, পুর পিঠা আর নানারকম মিষ্টি । ঠিক এরকমই এক সময়ে আজ থেকে ঠিক ৭দশক আগে মানভূমের আপামর বাঙালি আর বাংলাভাষী ভূমিজনেরা তাঁদের টুসুপরবকে উদযাপন করেছিলেন মাতৃভাষার মর্যাদা আর স্বীকৃতির দাবিতে লেখা অসংখ্য রাজনৈতিক টুসুগানের কথায় সুরে। খেটে খাওয়া গরিব গ্রামীণ মানুষের এই সর্বতোভাবে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনটির একমাত্র হাতিয়ার ছিল টুসুগান। আর ঠিক এ কারণেই এই আন্দোলন আজও অনন্য হয়ে রয়েছে 'টুসু সত্যাগ্রহ' নামে। ... ...
আমরা ভারতীয়রা সত্যিই লজ্জাজনকভাবে আত্মবিস্মৃত। কোন দিবস-টিবসের ছলেও আজ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান শিক্ষিকা ফাতিমা শেখের ১৯২ তম জন্মদিনটিতে একবারও তাঁকে মনে করিনি আমরা। তার ওপর এদেশের গুগলে ফাতিমা শেখকে খুঁজলে গত ক'বছর ধরে সত্যিই অভিনেত্রী ফাতিমা সানা শেখের ঠিকুজিকুষ্ঠী বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু ব্যবসার তাগিদে হলেও উপভোক্তা দেশগুলোর ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে ভুললে চলেনা মাল্টিন্যাশনাল জায়ান্টদের। তাই গতবছর ফাতিমা শেখের ১৯১তম জন্মদিনে তাঁর এক ডুডল ছবি তৈরি করে এই প্রাতঃস্মরণীয়াকে সম্মান জানিয়েছিল মার্কিনি গুগল। তেমন আজও মার্কিন ফেসবুকই আমায় তাঁর জন্মদিনটি মনে করিয়ে দিল। আর এক ব্যস্ত-শীতল ৯জানুয়ারিতে নতুন করে প্রণম্যা ফাতিমা শেখ ফিরে এলেন আমার কাছে ... ...
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। তেমন যুৎসই শৈল্পিক ভাব আর ভাষার ভাঁড়ার আমার নেই। তবু এই ধুলোমাটির আসল মানুষ সোমনাথ মাইতিদের অমৃত্সমান কথা বলতে ইচ্ছে হলে, আত্মমগ্ন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তকে জানানোর ইচ্ছে হলে, কিই বা উপায় করব আর? এঁদের সক্রিয়তাগুলি এতই হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। তেমন যুৎসই শৈল্পিক ভাব আর ভাষার ভাঁড়ার আমার নেই। তবু এই ধুলোমাটির আসল মানুষ, ''উদ্যোক্তা কৃষক'' সোমনাথ মাইতিদের কথা বলতে ইচ্ছে হলে, আত্মমগ্ন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তকে জানানোর ইচ্ছে হলে, কিই বা উপায় করব আর? এঁদের সক্রিয়তাগুলো এতই বহুধাবিস্তৃত যে, প্রায় সবকথা না বলতেই লেখাখান বেশ লম্বা হয়ে গেল। অবিশ্যি আমি কে এমন হরিদাস পাল যে পাঠক এমন দীর্ঘ লেখা ধৈর্য ধরে পড়বেন! সত্যিই জানিনা। তবু এঁদের কথা লেখাটা, এঁদের যাবতীয় উদ্যোগকে সমাজের সমুখে আনাটা খুব জরুরি, সেই তাগিদ থেকেই এমন লেখা জারি থাকবে আজ আর আগামীতেও!! ... ...
সাল ১৯৯৯ এর ২ জুলাই। সবার পরনে উজ্জ্বল হলুদ রঙের টি-শার্ট। টি শার্টের চৌকো নকশার বুকে গোলাপি রঙের একটি ত্রিভুজ যার পাশে লেখা ''ওয়াক অন রেইনবো''। চৌকোনার ওপরে লেখা "দ্য ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক 99" আর নীচে "এলজিবিটি-ইন্ডিয়া" । পার্কসার্কাস ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড অভিমুখে হাঁটতে শুরু করলেন ওঁরা ১৫জন। ১৪ জন পুরুষ এবং একজন মহিলা সাংবাদিক। মাঝপথে শুরু হোলো প্রবল বৃষ্টি, কিন্তু সেই দুপুরে, সেই নির্ঝরের মধ্যেই ওই ৬ কিলোমিটার পথে গড়ে উঠলো শুধু ভারতেরই নয়, তামাম দক্ষিণ এশিয়ার এক অভূতপূর্ব ইতিহাস। শুরু হলো সেই দৃপ্ত পথ হাঁটা, যা আজ 'কলকাতা রেইনবো প্রাইড ওয়াক' নামে বিখ্যাত। কয়েকঘন্টা পর আজ কলকাতার রংধনু মিছিলে সমতা, বৈচিত্র, একতা, সম্মান এবং সমনাগরিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বুক চিতিয়ে হাঁটবেন হাজারো মানুষ। তার আগে ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো প্রাইড মিছিলটিকে বরং একটু ফিরে দেখি আমরা ... ...
বড়রা সব বড্ড পন্ডিত বলে চিরকালই ছোটমানুষদের কাছ থেকে শিখি আমি। জ্ঞানবুদ্ধি হওয়া ইস্তক রুক্ষতম জীবনযুদ্ধের ঠিক মাঝখানে দাঁড়ানো শাহানারার সঙ্গে যখনই দেখা বা কথা হয়, ওর কাছ থেকে আমি আবারো নীরব ধৈর্য, প্রগাঢ় আত্মসম্মান, অপরিসীম ভদ্রতাবোধ আর এক অদ্ভুত প্রশান্তির পাঠ নিই। ... ...
আমার সাধনপুর স্কুলের তুহিনা পারভীন, গাঁ আর ধম্মের অনেক কুচ্ছিত গঞ্জনা সয়েও "হাঁটুর বের করা প্যান্ট" পরেই বহুদিন রেফারিগিরি করছে। কাল স্টেফানি ফ্র্যাপার্টকে দেখে তুহিনা বা ওর মতো অজস্র ভারতীয় মেয়ে রেফারির চোখভরা স্বপ্ন আরো অনেক চওড়া হয়েছে নিশ্চিত ... ...
তিস্তা, দীপন বা অদিতিরা এমনই। ওরা সর্বার্থেই ভালো, মানে যাদের আজকালকার টার্মে 'পাগল' বলা হয়। ওরা সেইসব পাগল, যারা নিজেদের ভালোবাসা, সাহস, স্বপ্ন, সদিচ্ছা আর শ্রমের হাতিয়ারে রোজ একটু একটু করে পূতিগন্ধময় পাব্লিকে ভরা এই দুনিয়াটাকে একটা সুন্দরতর জায়গায় বদলে দিচ্ছে। ... ...
দেখছি, সাকিব - সামিউল আর ওদের আরো দুজন বন্ধু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রোজগারের পথে প্রান্তরে। কেউ মাঠে, কেউ স্টিয়ারিংয়ে, কেউ কারখানায়, কেউ বা অনলাইন গেমের ঠেকেও। আজো সামিউল পরীক্ষা দিতে এসেছিল। আমি জানি মাধ্যমিক পাশ করুক বা না করুক, পরীক্ষাটা ও দেবেই। ... ...
১৯১৯ এর ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের গুজরানওয়ালাতে (হ্যাঁ, এই জায়গাটি ইদানিং বিলেতের অধুনা বিখ্যাত 'ভারতীয়' প্রধানের পূর্বপুরুষের ভিটের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে) জন্মেছিলেন অমৃতা। চলে গিয়েছিলেন আরেক ৩১ এ, ২০০৫ এ। ঠিক গত পরশু দিনই। ৯৬ বছরের ইমরোজ আজও জীবিত। দিল্লিতে সেই ছোট্ট ফ্ল্যাটের পরিসরে, একান্ত নিজস্ব এক অমৃতাকে ঘিরে বাঁচেন তিনি। কবি -লেখিকা - নারীবাদী আইকন অমৃতা হিসেবে পাঠক-ভক্তের মধ্যে অনির্বাণ রইলেও ইমরোজের সমগ্রতায়, ইমরোজের ফ্ল্যাটের অসংখ্য ছবিতে রয়ে যাওয়া অমৃতা আসলে ছিলেন এক প্রাণবতী ঝর্ণা। যে নির্ঝরের সকল অভিমুখে উপলসম বুক পেতে অনিঃশেষ প্রেম নিয়ে ৭টি দশক ধরে অবিচল হয়ে আছেন ইমরোজ, আজও রোজ…। ... ...
বেশ ক'বছর আগের কথা। স্কুল যাচ্ছি, এমন সময় পথে এক পুরনো ছাত্রের ফোন। সে বেশ ভালো ছাত্র হিসেবেই স্কুলে পরিচিত ছিল। "ম্যাম, প্রাইমারিতে আমার চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু ফোন করে ...এত লক্ষ টাকা চাইছে। ... বাবা বলছে জমি-জিরেত বিক্রি করে হলেও সরকারি চাকরি নিয়ে নিতে। কিন্তু আমার বাবার যে ওইটুকুই আছে..। ম্যাম, একটু বলবেন আমি কি করবো???..." ... ...