ঔরঙ্গজেব জীবনের অধিকাংশ সময় ঘোড়ার পিঠে কাটিয়েছিলেন। উদহারণ দিচ্ছি, ওনাকে কান্দাহার অভিযানে যেতে হয় দুবার। আগ্রায় ওনার বাড়ি থেকে কান্দাহারের দূরত্ব গুগল ম্যাপে পনেরোশো তিপান্ন কিমি। জোস্ গম্মনসের মতে শাহী ফৌজের এভারেজ গতি ছিল দিনে আট কিমি। তার মানে একবার কান্দাহার যেতে ওনার সময় লেগেছিল কমবেশি ছ মাসের বেশি। একবার যাতায়াতেই এক বছর। দুবারে দু বছর। এ ছাড়াও উনি বাপের বাবরের জন্মভূমি উদ্ধারের ... ...
এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের হোম টার্ফ। এখনো কলকেতা মানে হিন্দু কালেজের উচ্চবর্ণের উকিল ব্যারিস্টারি ডাক্তারি মোক্তারির অটুট প্রকল্পনা। সেই ব্যারিস্টার কোম্পানির একাংশ কমিউনিস্ট হয়ে জেলে গেল। খেত মজুর কোথায় যায়? ষাটে অরবে সরবে বাংলা খাওয়া, তেভাগার নেতা চারুবাবু ব্যারিস্টার জমিদারদের বাইরের পার্টি তৈরি করলেন। একটু আগ বাড়িয়ে খেলে হারলেনও। একটা অংশ চারুবাবুর রাজনীতিকে বিহারের প্রাচীন কিসান আন্দোলনের ... ...
ষোলোশো ছত্তিরিশের প্ৰথম দিক দ্বিতীয় বুন্দেলা বিদ্রোহ দমন অভিযানে সফল নেতৃত্ব দেওয়ার পর বাবার সঙ্গে ওরচা থেকে দাক্ষিণাত্যে আসছেন শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব। পথে কত কেল্লা, পাহাড়ে ঘেরা সব আঁকাবাঁকা দুর্গম রাস্তা, অপূর্ব লেক, শ্বাপদ সংকুল অরণ্য পড়েছিল। একবার আগে কখনো দেখা যায়নি এমন আশ্চর্য এক জায়গায় বিশাল লেকের ধারে শাহী তাঁবুর পাল পড়েছে। গান বাজনা শুরু হয়েছে দুপুরের পর থেকে। খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় ... ...
আমাদের ওখানে তখন ঘাস গরম ছিল হয়ত। সে ঘাস গরুতে খাবে কী করে, কী করেই বা গুলির আওয়াজ শুনে বোঝা যাবে ঘাসেরা গরম হলই বা কেন। আমাদের ওখানটা তখন সাত রাইফেল দিয়ে সুরক্ষিত রাখা হত আর ছিল সতেরোটা দানা, রাইফেল কয়েল রিকয়েল করে থেমে যাবে আর দানা ভরার জন্য হাত এলে আর দানা পাবে না এমনই রেশনিং। এমনই অবস্থা এ্যামুনিশনের। এ পরিস্থিতির এক পরের কথা হল- যখন দানা থাকে না আর না থাকলে রাইফেলও ... ...
এরপর বাদশাহ শাহাজাদা ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে বুন্দেলা রাজধানী ওরচা গেলেন , সেখানে তখন নতুন রাজা দেবী সিংহ। সঙ্গে সেপাইসালার খান -ই জাহান,আব্দুল্লাহ খান বাহাদুর ফিরোজ জং আর খান -ই দৌরান আর তাঁদের সিসোদিয়া , রাঠোর , কাছওয়া আর হাডা রাজপুত সেনানায়ক আর সেনার দল। বুন্দেলা রাজধানীতে ঝুঝরের বাবা জাহাঙ্গীরের সহযোগী বীর সিংহ বুন্দেলা তাঁদের কূলদেবতার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজ ক্ষমতার প্রতীক এই মন্দির ... ...
শেষ বারের মতো আর এক বার্তা পাঠান হচ্ছে বিদ্রোহী বুন্দেলা রাজা ঝুঝর সিংহের কাছে যে তিরিশ লাখ টাকা আর কিছু এলাকা শাহী সোপর্দ করলে মাফ করা হবে তাঁকে, কিন্তু এ বার্তাও বিফলে গেল। ষোলোশো পঁয়তিরিশের বর্ষা কাটা অবধি অপেক্ষা করল মোঘল ফৌজ। তারপর শুরু হল দ্বিতীয় বুন্দেলা বিদ্রোহ দমন অভিযান যার সামগ্রিক দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে ষোলো বছরের শাহাজাদা ঔরঙ্গজেবকে ... ...
পনেরোশো চৌষট্টিতে আকবর সেপাইসালার আসফ খানকে পাঠিয়েছিলেন স্বাধীন গোন্ড রাজ্য গারহা-মান্ডলা দখল করতে। কত বড় ছিল এই রাজ্য? এখনকার জব্বলপুর, দামোহ, সৌগের, নরসিংপুর ছাড়াও ভূপাল এস্টেট, হোসাঙ্গাবাদ আর বেতুলের একাংশ, চিন্দবাড়া, সোনি, মান্দালা, বালাঘাট জেলার পুরোটা, সম্ভবত ভান্ডারা আর চান্দা জেলাও এই বিশাল রাজ্যের মধ্যে পড়ত। আসফ খান রাজধানী চৌরাগড় থেকে শেষ স্বাধীন গোন্ড রাজা বীর নারায়ণকে হটিয়েদেন। পরে উনি নিজেই রাজা বনতে চান। তাঁকে কব্জা করতে সেপাইসালার মেহেদি কাশিমকে পাঠানো হল। আসফ খান কেল্লা ছেড়ে কেটে পড়লেন, পরে আবার বাদশাহ আকবরের কাছেই শির নোয়ালেন। মেহেদি কাশিম গোন্ডদের প্রাচীন রাজ্যকে মালওয়া সুবার অধীন এক সরকারে পরিণত করেছিলেন। মোঘলরা গোন্ড রাজাদের ... ...
ষোলো শো চৌতিরিশে কয়েক মাসের যাত্রা শেষে লাহোর থেকে শ্রীনগরে ঢুকে বা তার আগেই বাদশাহ শাজাহান কাশ্মীর -ই জান্নাত নজির - স্বর্গীয় কাশ্মীরের অপূর্ব কোন জলপ্রপাতের ধারে ঘোড়া থামান। উপভোগ করেন ফুটে থাকা ফুলের খুশবু তখন সেই যাত্রা বিরতিতে পায়ে চলা নোকর-নকরানি আর সেপাই লস্কর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তবে কাশ্মীরের ঠাণ্ডা হাওয়া আর ফুলের খুশবু সবার জন্যই। তাঁরাও বলে ওঠেন কাশ্মীর-ই বেনজির - অতুলনীয় কাশ্মীর।কাশ্মীর সম্পর্কিত স্বর্গীয় ন্যারেটিভ তৈরি করে চলে রাজা-প্রজা সবাই মিলে। পনেরোশো ছিয়াশিতে কাশ্মীর দখল করলেন আকবর। আর বাপ-ঠাকুরদার ঐতিহ্যে, আকবর-জাহাঙ্গীরের ঐতিহ্যেই অপূর্ব সব গোলাপের চমন-বাগান তৈরি করেন শাজাহানও। ডাল লেকের ধারে অপূর্ব সেই সব বাগান তৈরি করে প্রকৃতিকে পোষ মানিয়ে, অধিকার করা ... ...
এরপর শাজাহানের আদেশে শাহাজাদা দারা শুকোহ, নাদিরা বানু বেগম আর নবজাতককে নিয়ে শাহী বহর আবার বেরিয়ে পড়ে আগ্রা থেকে লাহোরের দিকে। পৌঁছতে সাড়ে ছশো কিলোমিটার রাস্তা মাস আড়াই লাগার কথা। পথেই নাদিরার মেয়েটা মারা গেল তখন তার মাত্র দু মাস বয়স।পবিত্র রমজানের শেষে ঈদ উল ফিতরের সময়েই ঘটনাটা ঘটে। এই ঈদ খুশির না হয়ে এক দুঃখের উদযাপন হয়ে গেল। ভেঙে পড়লেন দারা, হয়ে পড়েন ভালো রকম অসুস্থ। যথারীতি নাদিরার ... ...
ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো খণ্ডনের স্ট্র্যাটেজি ঠিক স্ট্র্যাটেজি নয়। সব সংঘী অভিযোগের পেছনে দৌড়ে লাভ কি? অনেক ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার উদেশ্যই হল বিভাজন সৃষ্টি তাই অযথা শক্তিক্ষয় করে লাভ কি? ঔরঙ্গজেব এক অর্থে হলেন মোঘল রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের ধারাবাহিকতা যার ভিত্তি ছিল নাসিরুদ্দিন তুসির এ্যারিস্টটলের নেকমেকিয়ান এথিক্স প্রভাবিত স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট রাজকীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা। রাজা ন্যায়বিধান করবেন আর ন্যায়ভঙ্গকারীদের ... ...