বর্তমানের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কলকাতা ঘেঁষা একটি জায়গা হরিনাভি। সড়কপথে আসতে গেলে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু রোড ধরে গড়িয়া থেকে সোজা নরেন্দ্রপুর, রাজপুর হয়ে হরিনাভি যাওয়া যায় আর রেলপথে আসতে গেলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় নিকটবর্তী সুভাসগ্রাম স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। বর্তমানে জায়গাটির খুব এমন যে পরিচিতি আছে তা বলা যায় না। কিন্তু এককালে হরিনাভি বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের একটি সমৃদ্ধ জায়গা বলে পরিচিত ছিল। ১৮৬৭ সালে হরিনাভির দক্ষিণপ্রান্তে কেদারনাথ দে-র উদ্যোগে তাঁর জমিতেই তৈরি হয়েছিল হরিনাভি ব্রাহ্ম সমাজ। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই মন্দিরের জন্য টাকা দিয়েছিলেন। হরিনাভি ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত স্কুলটি এখনও জনপ্রিয় এবং অনেকেরই ছাত্রজীবন শুরু হয় এই স্কুলটিতে। হরিনাভি ... ...
গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র সম্বলিত মহাবিশ্বের রূপরেখা আবিষ্কৃত হাওয়ার পর থেকেই মানুষের মনে প্রথম কৌতূহল তৈরী হয় যে, এই মহাবিশ্বের অন্য কোথাও কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে? মহাবিশ্বের কোথাও কি আমাদের মত বা আমাদের চেয়ে আরও উন্নত জীবের অস্তিত্ব আছে? কৌতূহল হলেই তো তা একদিনে নিরসন করা যায় না, বিশেষ করে সেটা যখন মহাবিশ্বের ব্যাপার। কত কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে যে এই মহাবিশ্ব তার হদিশই আমরা এখনও পাইনি। প্রাণ থাকতে গেলে বা প্রাণের বিস্তার ঘটতে গেলে যা যা প্রাথমিক শর্তাবলীর প্রয়োজন সেইসব শর্ত পূরণের হদিশ বিজ্ঞানীরা অনেক গ্রহে পেয়েছেন আজ অব্দি, কিন্তু সেইসব গ্রহে প্রাণ আছে কিনা তার প্রমাণ এখনও মেলেনি। যদিও এই ... ...
স্নেহের, অনুশাসনের, ভালোবাসার, প্রিয়জনদের জগৎটা ছোট হতে হতে প্রায় শূন্য হয়ে আসছে। সুজলাং, সুফলাং এই ধরিত্রীতে জন্ম নেওয়ার পর প্রিয়জনদের এক বিশাল জগৎ পরমানন্দ মাধবের কৃপায় স্নেহের, অনুশাসনের, ভালোবাসার, আশ্রয় - প্রশ্রয়ের বন্ধনে বেঁধেছিলো। মায়া - মমতায় আবদ্ধ হতে হতে মোহময় হয়ে উঠেছিল জগৎটা। স্কুল, কলেজের জীবনে সেই জগৎটা আরও ব্যাপ্ত হয়েছিল। শিশুকালের বা যৌবনের শিশুসুলভ মনটা তখনও পঙ্কিলতার গন্ধ পায়নি, ফলে জগৎটা পারিজাতময় ছিল একটা বিশাল সময় জুড়ে। কলেজ শিক্ষার শেষে চাকুরী জীবনে প্রবেশের পরে সেই পারিজাতের সুগন্ধ ক্রমে উবে যেতে থাকে, পৃথিবী ক্রমেই গদ্যময় হতে থাকে। শিশুমন পঙ্কিলতার গহ্বরে হাঁফিয়ে উঠতে থাকে। আবার বিবাহের পরে সংসারের পাকেচক্রে জীবনের ... ...
একজন শিল্পী, অর্থাৎ সংস্কৃতি জগতের মানুষ, তা তিনি কবি হতে পারেন, লেখক হতে পারেন, সংস্কৃতি জগতের যে কোনো শাখার প্রতিনিধি হতে পারেন, তিনি তাঁর শিল্পের মাধ্যমে সমাজের সামনে সবসময় তাত্বিক দিক থেকে সঠিক বিষয়টিই তুলে ধরবেন। পাশাপাশি তিনি তাঁর শিল্পের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবেন সমকালীন সমাজে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে। আবার ঘটনাক্রম বা দুর্ঘটনাক্রমকে সমাজের কাছে তুলে ধরেই তিনি ক্ষান্ত হবেন না, যদি তাঁর শিল্পের মাধ্যমে সম্ভব হয় তিনি সেই ঘটনা বা দুর্ঘটনাকে তাঁর নিজস্ব ধারা বা ঘরানা অনুযায়ী প্রতিবাদও করবেন। এটাই শিল্পকলা বা সংস্কৃতির মূলমন্ত্র বা গোড়ার কথা। একজন চিত্রশিল্পীর বা ভাস্করের হয়তো এই স্বাধীনতার পরিধিটা বেশী ... ...
আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটি সূর্য নামক যে নক্ষত্রটির চারিপাশে ঘুরে চলেছে নিত্য, সেই ঘুরে চলার একটি বৃত্ত (উপবৃত্ত বলা ভালো) সম্পূর্ণ হতে যে সময় লাগে, তাকেই আমরা এক বছর বলে ধরে থাকি। ঘূর্ণনের সেই সময়টাকেই আমরা নিজেদের সুবিধার জন্য মাস, দিন, ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ডে ভাগ করে নিয়েছি নিজেদের মতো করে (এই ভাগটা অন্য ভাবেও হতে পারতো) এবং সেই হিসেবমতো বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে আমরা ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেছি। আবার দিন বলতে পৃথিবীর নিজের অক্ষ বরাবর একবার ঘূর্ণনের সময়টাকে ধরা হয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, পৃথিবী যেমন নক্ষত্রের চারিদিকে ঘুরছে, তেমনি নক্ষত্রও নিজের অক্ষ বরাবর ঘুরছে এবং ছায়াপথের কেন্দ্রের চতুর্দিকে উপবৃত্তাকারে ঘুরছে। আবার ... ...
যৌবনে একটি একাঙ্ক নাটক দেখেছিলাম, "ক্ষেতু বাগদি ও গোপাল কাহার"। নাটকের বিষয়বস্তু বা বিভিন্ন চরিত্রগুলো মানসপটে আবছা হয়ে গেলেও আজও ক্ষেতু বাগদির একটি সংলাপ "স্বাধীনতা মানে ওই পেতাকা ফরফর করে উর্তিছে, না ওই লাঠিটা, না ওই দড়িটা, কোনটা?" মনের মধ্যে গেঁথে আছে। স্বাধীনতার মানে আমরা কি আজও বুঝি? আমরা গোমূর্খ, অশিক্ষিত দেশবাসীরা স্বাধীনতা মানে বুঝি, ১৫ই আগস্টে একটি তেরঙা পতাকা তুলতে হয়, রবি ঠাকুরের "জনগণ মন অধিনায়ক" গাইতে হয় আর স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বিস্কুট-লজেন্স দেয়। আগে ইংরেজরা আমাদের শাসন করতো, এখন আমরাই দেশের নেতা, মন্ত্রী তৈরী করি ভোট দিয়ে। এর চেয়ে একবর্ণ বেশী কি কিছু বুঝি? স্বাধীনতা মানে যদি অন্যের গোলামী ... ...
হায়দ্রাবাদের ইতিহাস বলতে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের, হায়দ্রাবাদ শহরের কথা বলতে চাইছি। কুতুবশাহী রাজবংশের পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ ১৫৯১ সালে হায়দ্রাবাদ নগরীর পত্তন করেন। কথিত আছে যে, কুলি কুতুব শাহ স্থানীয় একজন নাচনেওয়ালি ভাগমতির প্রেমে পড়েছিলেন। প্রেমের পরিণতি দিতে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং "হায়দার মহল" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর সন্মানেই নগরের নামকরণ হয় হায়দ্রাবাদ। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী শহরের খলিফা আলী ইবনে আবী তালিবকে সন্মান জানিয়ে শহরের নামকরণ হয়েছে হায়দ্রাবাদ। আলী ইবনে যুদ্ধে সিংহের বিক্রম প্রদর্শন করেছিলেন বলে হায়দার নামেও পরিচিত ছিলেন। হায়দার অর্থ সিংহ আর আবাদ অর্থ শহর এবং এইভাবেই নামকরণ হয় হায়দ্রাবাদ।মোঘল সলতনতের ... ...
বেলা বসু ১৯২০ সালে বর্তমান দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামের বিখ্যাত বসু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বেলা বসু। বাবা সুরেশ চন্দ্র বসু অর্থাৎ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সেজদা এবং মাতা সুধা বসু। নেতাজী ছিলেন বেলা বসুর আদরের রাঙ্গাকাকা। ১৯৪০ সালে রামগড়ে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বয়কট করেন সুভাষ চন্দ্র বসু এবং আপোস বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন। রামগড়েই নেতাজী আপোস বিরোধী সম্মেলন করেন এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাহিনী তৈরী করে দেন। এইখানেই যে নারী বাহিনী তৈরী ... ...
পারুলবালা মুখোপাধ্যায় আসল নাম পারুলবালা মুখোপাধ্যায় হলেও ১৯১৫ সালে কলকাতায় জন্ম নেওয়া এবং কুমিল্লায় বেড়ে ওঠা শ্রী গুরুপ্রসন্ন মুখার্জী ও শ্রীমতী মনোরমা দেবীর সন্তান, বিপ্লবী অমূল্য মুখার্জীর বোন এবং ঊষা মুখার্জীর দিদিকে বিপ্লবীদলের সদস্যরা ওই নামে চিনতো না। বিপ্লবী পূর্ণনন্দ দাশগুপ্তের হাত ধরে তাঁর বিপ্লবী দলে যোগ দেওয়া। শান্তি, নীহার, আরতি, খুকি শোভারানী, রানী, সুরমাদেবী ইত্যাদি অসংখ্য ছদ্মনামে তিনি বিপ্লবী কাজে সক্রিয় ছিলেন। পূর্নানন্দ দাশগুপ্ত আর শ্যামবিনোদ রায়চৌধুরী ছাড়া তার আসল নাম কেউই জানতেন না। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ পুলিশ আন্তঃ প্রাদেশিক ষড়যন্ত্র মামলা বিষয়ে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি ফেরার হয়ে যান। এই প্রথম তিনি শিরোনামে আসেন, কারণ তিনি ... ...
প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম ১৯১৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কুমিল্লা জেলায় (ত্রিপুরাভূক্ত) জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম। পিতা শ্রী রজনীকান্ত ব্রহ্ম এবং মাতা শ্রীমতী রঙ্গবাসী ব্রহ্ম। তাঁর পিতা ছিলেন মোক্তার। কিন্তু তিনি কোর্টের পেশা ত্যাগ করে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং এইরকম স্বদেশী ভাবাপন্ন পরিবেশেই প্রফুল্লর বেড়ে ওঠা। পিতার কাছ থেকেই প্রফুল্ল স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছিলেন। তৎকালীন কুমিল্লা জেলায় সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের জোয়ার এসেছিল সেই জোয়ারে অনেক পুরুষ বিপ্লবীর পাশাপাশি যে কতিপয় নির্ভীক কিশোর-কিশোরী পা রেখেছিলেন প্রফুল্ল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন 'যুগান্তর' দলের প্রথম নেত্রী। তিনিও শান্তি ঘোষ এবং সুনীতি চৌধুরীর মতো কুমিল্লার ফৈজুন্নেসা চৌধুরী বালিকা বিদ্যালয়ের ... ...