এই বালকই যে আমার আসল গন্তব্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাক্ষসকুলে জন্ম নিলেও সে যে প্রকৃত কৃষ্ণ ভক্ত সেটা বোঝাই যায়। যে বালক শ্রীকৃষ্ণের হাতে মৃত্যুবরণ করে মোক্ষলাভ করার আশায় তপস্যা করতে পারে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে পারে, তাকে দেবতারাই বা বর না দিয়ে কি করে থাকে আর আমিই বা কি করে তাকে ইষ্ট না মেনে থাকতে পারি? একদিকে যেমন তার ধমনীতে বইছে ক্ষত্রিয় কুলের রক্ত, আর একদিকে বইছে রাক্ষসকুলের রক্ত আর মনে বইছে মোক্ষলাভের অদম্য বাসনা। সেই বালক যে কুরুক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠ বীর হবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু সেই বালকের প্রতিজ্ঞা বা সংকল্পের কারণে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়া পাণ্ডব ... ...
বারবার কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গন ছেড়ে মন চলে যাচ্ছে মানালির সেই জঙ্গলে, যেখানে হিড়িম্বা বাস করেন পুত্র ঘটোৎকচকে নিয়ে। ঘটোৎকচের বিবাহের পরে সংসারে পুত্রবধূ কামকালীকা এসেছেন। কিছুকালের মধ্যে ঘটোৎকচ এবং কামকালীকার একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান হয়। আঙিনা জুড়ে খেলে বেড়ায় সেই নতুন অতিথি, তার আগমনে জঙ্গলের পশুপাখিদের মধ্যে চঞ্চলতা ফিরে এসেছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশমত পিতামহী হিড়িম্বা তাকে ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রদান করতে থাকেন। শিশুটি ছোটবেলা থেকেই শাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা, অস্ত্রচালনা, ন্যায়শাস্ত্র ইত্যাদিতে বিদ্বান হয়ে উঠতে লাগল। কালক্রমে পিতামহী হিড়িম্বার প্রচেষ্টায়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে এবং নিজের সাধনায় সেই শিশুটি এক মহাবীর হয়ে উঠলো। স্কন্ধপুরাণে এই শিশুটির উল্লেখ আছে, এছাড়াও দক্ষিণ ভারত থেকে ... ...
হস্তিনাপুরকে কেন্দ্র করে বিবদমান কৌরব এবং পাণ্ডব, দুপক্ষই উত্তীর্ণ কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গনে। বেদব্যাসের কৃপায় দিব্যদৃষ্টি প্রাপ্ত সঞ্জয় যুদ্ধের বর্ণনা করছেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে, মোহিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের বৈদান্তিক দর্শনের ব্যাখ্যা শুনছেন অর্জুন, কপিধ্বজের মাথায় বসে শুনছেন রামভক্ত হনুমান। কিন্তু সেইদিকেও মন যেতে চাইছে না কিছুতেই। রণাঙ্গনের নৈসর্গিকতাকে ভঙ্গ করতে ইচ্ছে করছে না। বরং যুদ্ধক্ষেত্রের ওই কোনায় যে উঁচু টিলা দেখা যাচ্ছে, যেখান থেকে সমস্ত রণাঙ্গন স্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে দেখা যায়, মন ছুটে চলেছে সেই টিলায়। শান্ত যুদ্ধক্ষেত্র, রণাঙ্গনের মাঝখানে অর্জুনের সারথি হিসেবে যুদ্ধে অবতীর্ণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝাচ্ছেন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত, এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের মায়া। পরবর্তীতে যা আমরা গীতার বাণী হিসেবে পাবো। ... ...
পুরাণ এবং ইতিহাসকে পরস্পরের বিরোধী বলতে পারেন অনেকেই, কিন্তু পুরাণের বা মহাকাব্যের অনেক চরিত্রের এই পৃথিবীতে বসবাস ছিল এটার সত্যতা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। আবার সময়ের হিসেবেও পুরাণ এবং ইতিহাস বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একই ফলাফল দেয়, যা বড়ই আশ্চর্য্যের। স্থানীয় লোকেদের কাছে সেইসব চরিত্রের যেসব কাহিনী জানা যায় বা স্থানীয় যেসব নিদর্শন পাওয়া যায় তা পুরাণের বর্ণনার সাথে বেশীরভাগই মিলে যায়। লোককাহিনী মিলে যাওয়ার কারণ হয়তো তারাও সেই পুরাণের কথাই বলছেন কিন্তু নিদর্শনগুলো মিথ্যা বলতে পারে না কোনোভাবেই। পৌরাণিক নাম হয়তো বা পাল্টে গেছে, অবক্ষয় হয়েও থাকতে পারে। আবার যুক্তি দিয়ে বিচার করলে সেইসমস্ত স্থান এই পৃথিবীর কোথায় হতে পারে তার হিসেবেও পাওয়া ... ...
'শাম্ব' উপন্যাসভাগবত পুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী ভল্লুকরাজের কন্যা এবং শ্রীকৃষ্ণের অষ্ঠভার্যার অন্যতম জাম্ববতীর জৈষ্ঠ্যপুত্র ছিলেন শাম্ব। পুরাণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের মোট ১৬১০৮ জন রমণী ছিলেন যাঁদের ওপর শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ অধিকার ছিল। রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, গান্ধারী (ধৃতরাষ্ট্র পত্নী নন), হৈমবতী, শৈবা, প্রস্বাসিনী এবং ব্রতিনী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের অষ্ঠভার্যা (মতান্তরে রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দি, মিত্রবৃন্দা, নগ্নাজিতি, ভদ্রা এবং লক্ষণা)। এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ প্রাগজ্যোতিষপুরে নরকাসুরকে বধ করে তার প্রাসাদ থেকে ১৬১০০ রমণীকে উদ্ধার করে গ্রহণ করেছিলেন। পুরাণ বা মহাভারতে অনেক বর্ণনা থাকলেও শ্রীকৃষ্ণের পরিবার সম্পর্কে জনমানসে খুব বেশী ধারণা নেই। বিগত শতকের আশির দশকে ধারাবাহিক ভাবে দেশ পত্রিকায় উপন্যাস বেড়িয়েছিল 'শাম্ব', অতি পরিচিত এবং ভালোবাসার ... ...
বর্তমান সময়ের অতি আলোচিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের উচিত কাজ হবে ভারতবর্ষের শ্রম আইন নিয়ে একটু জেনে নেওয়া। কারণ রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা যেমন একদিকে ডিয়ারনেস এল্যাউন্সকে তাদের ন্যায্য দাবী বা অধিকার বলে প্রচার করছে তেমনি রাজ্য সরকার ডিয়ারনেস এল্যাউন্সকে সরকারের অনুদান বলে প্রচার করছে। অর্থাৎ সরকারের এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে তার কর্মচারীদের নিয়মিতভাবে ডিয়ারনেস এল্যাউন্স দিতে হবে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মুখপাত্ররা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায়কে তাদের যুক্তির স্বপক্ষে ঢাল করছে। সরকারী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যদি ভাবনা শুরু করা যায় তাহলে বলতে হয়, সরকারী কর্মচারীরা যেমন সরকারের অধীনে কর্মরত এবং তাদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি প্রদান করা সরকারের দ্বায়িত্বের ... ...
ছোটবেলা থেকেই আমাদের মনে স্বর্গ - নরক, পাপ - পূণ্য ইত্যাদির সম্পর্কে ধারণা তৈরী করে দেওয়া হয়। বাড়ীই হোক বা সমাজ কিংবা স্কুল, সর্বত্রই সরাসরি অথবা ঘুরপথে শিশুমনে গেঁথে দেওয়া হয় এই ধারণাগুলো। শিক্ষিত - অশিক্ষিত, ধনী - দরিদ্র সকলের মনেই ছোটবেলা থেকে এই অলৌকিক এবং বিমূর্ত ধারণাগুলো তৈরী হয়ে যায় সমাজের কারণেই। পরবর্তীতে খুব কম মানুষ এই ধারণাগুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে। কিন্তু যে অসংখ্য মানুষ লৌকিক জগতে ফিরতে পারে না বা বিচরণ করতে পারে না, রক্তের তেজ কমতে শুরু করলে এই বিমূর্ত ধারণাগুলো আরও শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে শুরু করে তাদের মানসিক স্তরে। শিশুমনে যে বীজ পুঁতে দেওয়া ... ...
বিগত বেশকিছু বছর ধরে উন্নত প্রযুক্তিতে সেজে উঠছে ডাক বিভাগ। এই শতকের প্রথম দিক থেকে ডাক বিভাগে কম্পিউটার প্রবেশ করলেও বিভাগের সমস্ত ধরনের কাজকে যান্ত্রিক কাজে রূপান্তরিত করা ছিল ডাক বিভাগের কাছে এক প্রাচীরপ্রমাণ বাধা। বিভাগে উপলব্ধ মানব সম্পদ, কাজের ধরন এই অন্তরায়ের মূল কারণ। ভারতবর্ষের মধ্যে ডাক বিভাগই হলো একমাত্র বিভাগ যেখানে একদিকে রেজিস্ট্রি, পার্সেল, স্পিড পোস্ট, মনি অর্ডার ইত্যাদি বুক হয় এবং বিলি হয়, পাশাপাশি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও বীমা পরিষেবার কাজ হয়। চিঠিপত্রের বুক হওয়া থেকে বিলি অব্দি প্রতিটি স্তরে হিসেব রাখা আবার টাকা জমা নেওয়া, গ্রাহকের একাউন্ট থেকে টাকা তোলা, নতুন কোনো ফিক্সড ডিপোজিট চালু করা থেকে ... ...
আজকের দিনে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বার্তা পৌঁছে যায় অতি সহজেই। অতি উন্নত প্রেরণ ব্যবস্থার কারণে কোনো খবর থেকে যে কোনো ছবি বা ডকুমেন্ট যাইহোক না কেনো মুহূর্তের মধ্যে যে কোনো দূরত্বে পাঠানো আজ আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটা ক্লিক বা মোবাইল ফোনে একটা আলতো টোকা। এখন আমরা বার্তা বলতে অনেককিছু বুঝলেও শুরুর সময়ে বার্তা বলতে চিঠি বা খবর বোঝাত। কিন্তু এই বিবর্তন তো একদিনে আসেনি। আমাদের মাথায় বার্তা প্রেরণের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রথম আসে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে, ৩২১ থেকে ২৯৭ খ্রীষ্ট পূর্ব্বাদে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁর বিরাট সাম্রাজ্যকে শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। তিনিই প্রথম ... ...
বর্তমানে রাজ্যের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো দুটি, প্রথমটি চাকুরী সংক্রান্ত দুর্নীতি আর দ্বিতীয়টি চাকুরী সংক্রান্ত মাগ্গীভাতা। টিভির যে কোনো চ্যানেল খুললেই এই দুই বিষয়ে আলোচনা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা বেশ কয়েকমাস ধরে। অর্থাৎ যারা চাকুরী পায়নি আর যারা চাকুরী করছে এই দুদলই এইমুহুর্তে আলোচনার শিরোনামে। প্রত্যেকেই যতরকমভাবে রাজ্য সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা যায় করছে। তাদের বক্তব্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা বিভিন্ন মিডিয়াগুলো খুব ভালোভাবেই করে চলেছে এখনও অব্দি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারের বিরুদ্ধে জনমানসে হিন্দোল তোলার কোনো চেষ্টাই বাকী রাখছে না। বিভিন্ন রকমের মিম, ট্রোল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে শত শত। কেউ মেয়ের জন্য শিক্ষক পাত্র দেখতে গিয়ে ... ...