বেথুন কলেজের সামনে সেদিন বেলা দশটা নাগাদ দীনবন্ধুর সঙ্গে জন্মেজয়বাবুর দেখা হয়ে গেল। সেদিন রবিবার ছিল। দীনবন্ধু আজ কাটোয়ায় ফেরেনি। জন্মেজয়বাবু বললেন, ' তুমি নিতাইবাবুর শালার ছেলে না ? ' ----- ' আজ্ঞে হ্যাঁ ... ভাল আছেন তো ? ' ----- ' আমারে চিনেন তো ... ওই বাড়ির দোতলায় থাকি ... ' ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... ভালমতো চিনি। আমাকে ... ...
পরমানন্দবাবুর ঘরের বাইরে একটুখানি উঠোন আছে। তার একধারে একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ দাঁড়িয়ে। রাত্রে মধুর সুরভি ছড়ায় গন্ধরাজ ফুল। শুভ্র নির্মল কুসুমদল পাতার ফাঁকে ফাঁকে জেগে থাকে রাতের অন্ধকারে। অলোকেন্দু মিত্র অতি সহজে মামলা ঘুরিয়ে দিলেন। নিপুণ দক্ষতায় অকাট্য কাগজপত্র তৈরি করে পরমানন্দবাবুর প্রতিপক্ষকে ধুলিসাৎ করে দিলেন। মামলার রায় বেরোবার পরের দিন অলোকেন্দুবাবু প্রতিবিম্বদের বাড়ি গেলেন তার মামার সঙ্গে দেখা করতে। পরমানন্দবাবু খবরটা ... ...
নিখিলবাবুর বাড়িতে সকাল এগারোটা নাগাদ বাঁকুড়া থেকে এক ভদ্রলোক এলেন। নিখিলবাবুর আজ দেড়টার আগে ক্লাস নেই। নীচে কোচিং ক্লাসের ঘরে এসে বসলেন। ----- ' বল শঙ্করী ... কি খবর ... চাষ আবাদ ভাল চলছে তো ? ' শঙ্করীপ্রসাদ গুঁই ধুতি আর ফুলশার্ট পরে গায়ে একটা ... ...
আলোকবরণ চৌধুরী বিল্ডিং-এর পনের তলার ছাদে উঠে চারিদিক দেখতে লাগলেন। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। যেন সবুজ রঙের আলোয়ানে জড়ানো তলাটা। সবুজের ফাঁকে ফাঁকে নানারঙা নুড়ি পাথরের মতো উঁকি মারছে ঘরবাড়ি। আলোকবরণের বয়স এখন ছেচল্লিশ। রবসন কেমিক্যালস-এর সি ই ও। তিনদিন আগে জার্মানি থেকে ফিরেছে। এখানে ঝাড়খণ্ডের এই প্রোজেক্টটা সুপারভাইজ করতে আসতে ... ...
জোরালো অ্যান্টিবায়োটিকের জোরে সুখির ঘা অনেকটা শুকিয়ে এসেছে। এখন হেঁটে হেঁটে এখানে ওখানে যেতে পারে। সেদিন সুভাষ গিরির বাড়ির দাওয়ায় গিয়ে বসল সকালবেলায়। সুভাষবাবু তখন খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলেন একটা পুরনো কাঠের চেয়ারে বসে। তিনি খবরের কাগজ কোলের ওপর রেখে সুখিকে বললেন, ‘ কিরে সুখি কেমন আছিস ? ‘ সুখি শালকাঠের খুঁটিতে হেলান দিয়ে ... ...
সুভাষবাবু বিকেল বেলায় মুড়ি আর নারকেল খাচ্ছিলেন। সারাদিন রোদ্দুরে অনেক ঘুরেছেন। সেই সকালে বেরিয়েছিলেন পান্তাভাত খেয়ে।গ্রামের ছেলে। গ্রামেই কেটেছে সারাজীবন। পান্তাভাতেই এই শরীর এবং মাথা ঠান্ডা থাকে তার। হৈ হৈ করে ভোটের মেলা এসে পড়েছে। পার্টি এবারেও তাকে টিকিট দিয়েছে। সকলেই জানে সুভাষ গিরির প্রায় অর্ধশতাব্দীর রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণ কলঙ্কহীন। রাস্তায় ... ...
চারিদিকে শুধু জল আর জল। দোতলা বাড়ি জলের তলায়। বাড়ি তেতলা হলে শুধু গলাটুকু বাইরে। দোতলা তেতলা এখানে আর কোথায়। যা দেখা যাচ্ছে তা অনেক দূরে দূরে। ও..ই দূর গঞ্জে। এ তো নিকষ্য গেরাম। কুঁড়েঘরে খড়ের ছাউনি। দু চারটে ইঁটের গাঁথনির কোঠা আছে। মাথায় টিনের বা টালির ছাউনি। সব ডুবে আছে। চারদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের বাঁধ ভেঙেছে। দুরন্ত বেগে উল্টে পাল্টে ... ...
কালীকিঙ্করবাবু বেশ খোশমেজাজে আছেন আছেন আজ সকাল থেকেই। তার ছেলের চিঠি এসেছে বহরমপুর থেকে। তার কর্মক্ষেত্রে একটা পদোন্নতি হয়েছে। কালেক্টরেট অফিসে অফিসার সে। বহরমপুরেই স্ত্রী পুত্র নিয়ে থাকে। আজ অবশ্য ওদের ছুটির দিন। নববর্ষ। কালীবাবুর কোন ছুটি নেই। আর প্রমোশন টমোশনের তো কোন প্রশ্নই নেই। কালীবাবু ওসব নিয়ে আর চিন্তা করেন না। ভাবেন, আর ... ...
এরপর তিন মাস কোথা দিয়ে কেটে গেল। দিনগুলো যে কত দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে কোন সীমানার ওপারে, জীবনের স্রোত যে কত দ্রুত কলকল করে বয়ে যাচ্ছে কোন উদ্দেশে তা আর ক'জন খেয়াল করে। দেখতে দেখতে পুজোর মরসুম এল আর গেল। উত্তুরে হাওয়া নিয়ম মেনে ছুটোছুটি শুরু করেছে গাছের ডালে ডালে, পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসার আগে। বর্ষশেষের দিনও একসময়ে এসে পড়ল। কাল পয়লা জানুয়ারি। পৃথিবী পা রাখবে নতুন সাল, নতুন ... ...
এর মধ্যে শ্রীলেখা কায়দা কৌশল করে চিঠিটা অসিতের হাতে গুঁজে দিতে পারল। ভাগ্যক্রমে আজকে ফাঁকায় পেয়ে গেল অসিতকে রিহার্সালের জন্য ওপরে ওঠার সময়। অসিত বলল, ' কি এটা ? ' ---- ' পরে পড়ে নিও ' বলে ধড়ফড় করতে করতে সরে গেল ঘরের ভিতর। অসিত ভাঁজ করা কাগজের টুকরোটা প্যান্টের পকেটে রেখে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে ভাবতে লাগল, এ আবার কিরে বাবা ... এতদিন বাদে আবার নতুন ক'রে চোতা ধরানো কি জন্য ! কি কেস কে ... ...