ভালয় ভালয় নিতাইবাবুর বাড়ির গৃহপ্রবেশের কাজ মিটে গেল। বিভূতিবাবু সস্ত্রীক এসেছিলেন। উৎপল আর সমীরণও এসেছিল। নিবারণ সাহা এবং শশীভূষণবাবু সারাক্ষণ ছিলেন। বিভূতিজায়া রমাদেবী বললেন, 'জায়গাটা পিকনিক করার পক্ষে খুব ভাল। কুলগাছগুলোয় কেমন কুল ধরেছে দেখ ....এখানে ওখানে কেমন গাঁদা ফুল ... ...
রাত বারোটার সময় বিশাখার ঘর থেকে আলুথালু অবস্থায় আন্ডারওয়্যার পরে খালি পায়ে বেরিয়ে এলেন সুরেশ্বর মল্লিক। এসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিশাখা শায়া আর বোতাম খোলা ব্রাউজ পরে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এল। আর সব ঘরের দরজা বন্ধ। সেখানে বোধহয় সারারাতের অতিথি রয়েছে। পাশের ঘর থেকে টুকরো টুকরো কথা আর খিলখিল হাসির আওয়াজ আসছে মাঝেমাঝে। বারান্দায় ... ...
পরভরিশ দেখার পরিকল্পনা শ্রাবণীর আন্তরিক সহায়তায় নিখুঁতভাবে রূপায়িত হল। গন্ডগোল কিছু হয়নি, যদিও জোড়ের পাখিদের বুকে দর্পণার ভিতরে বা দর্পণার বাইরে সারাক্ষণ ধুকপুকুনি বজায় ছিল। এই ধুকপুকুনিটাই বোধহয় আসল রোমাঞ্চ। এটা উবে গেলে ব্যাপারটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। শ্রাবণীই সুমনাকে বাড়ি পৌঁছে দিল। সুমনার স্বার্থে ... ...
ঘটনাক্রমে কাবেরীর সঙ্গে পার্থপ্রতিমের আবার দেখা হয়ে গেল। এবার কলেজ স্ট্রিটে ইউনিভার্সিটির সামনে। বেলা প্রায় চারটে বাজে। পার্থ আশুতোষ বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে বেরোতেই একদম কাবেরীর সামনাসামনি পড়ে গেল। সামনাসামনি না বলে আড়াআড়ি বলাই ভাল। গেট দিয়ে বেরোবার মুখে দেখে কাবেরী যাচ্ছে গেটের সামনে দিয়ে। বোধহয় কোন বই কিনতে এসেছে। পার্থ বলে ... ...
বটতলা থানার ওসি কালীকিঙ্কর ভটচাজ্জি থানার বাইরে দাঁড়িয়ে রোদ পোয়াচ্ছিলেন। থানার ভেতরে রোদ ঢোকে না, বড্ড স্যাঁতসেঁতে। শীত করে। ক'দিন ধরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। ঘরের ভিতরও গা সিরসির করে। একজন কমলালেবুওয়ালা যাচ্ছিল , ' এ..ই কমলালেবু ... এ..ই কমলালেবু ... '। কালীবাবু তাকে থামালেন। সে এসে থানার সামনে মাথা থেকে ঝুড়ি ... ...
মাড়োয়ারি বর চলেছে রাজার পোশাক আর মুকুট পরে রথের আদলে সাজানো ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে। ঘোড়া দুটোকেও সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিডন স্ট্রিট দিয়ে জোড়াসাঁকোর দিকে যাচ্ছে। হাফ ডজন হ্যাজাকের ফটফটে আলোয় রাস্তা ভাসছে। সামনে রঙবেরঙের ধড়াচূড়ো পরা হ্যারিসন রোডের ব্যান্ডপার্টির লোকেরা। প্রচলিত রীতি মেনে উদ্বোধনী ঐকতান ধরেছে ---- ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের ....এটা শেষ হলেই এসে যাবে -- আওয়ারা হুঁ ... , মেরা জুতা হ্যায় জাপানি ... বা বাহারো ফুল বরষাও ... , বেকারার করকে হামে ... , মন দোলে তন দোলে, রাজকি আয়েগি বরাত... রঙ্গিলী হোগি রাত ... ... ...
পদ্মা ঘুমিয়ে পড়েছিল। সাগরের ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে বেরিয়ে এল ঘুম জড়ানো চোখে। এসে দেখল, সাগর আর তার সঙ্গে পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাগরের কাছেও একটা সাইকেল। ছেলেটার সাইকেলের কেরিয়ারে একটা বোঁচকা। সাগর জিভ কেটে বলল, ' এঃ হে ... ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম .... এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম ... ...
সত্যসাধন চক্রবর্তী স্কটিশ চার্চে ফিলসফি পড়ান। থাকেন নারকেলডাঙায়। সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরে কলেজে আসেন। মাথায় নারকেল তেল মাখা কুচকুচে কালো চুল। কোন সাতে পাঁচে থাকেন না। ক্লাসের ফাঁকে টিচার্স রুমে থাকার সময়ে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাক্যালাপ করেন না। তিনি যে খুব আত্মনিমগ্ন প্রকৃতির তা না। আসলে, কি বলবেন, কি নিয়ে আলোচনা করবেন ভেবে পান না তিনি। সব লোকে এ পৃথিবীর বিচিত্র ... ...
অঞ্জলির এক মামাতো ভাইয়ের ছেলে কাটোয়া থেকে এসেছে। কলকাতায় কোন সরকারি অফিসে নাকি চাকরির ইন্টারভিউ পেয়েছে। আজ রাতটা এখানে থাকবে। কাল ডালহৌসিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। অঞ্জলি বলল, ' দীনু কেন রে .... কালই যাবি কেন ? দু চারদিন থাক ... হাতিবাগানে সিনেমা, থিয়েটার ... ...
গোবিন্দর দোকান থেকে চাল নেওয়া হয়ে গেলে সাগর বিডন রো-এর মুখ পর্যন্ত পদ্মাকে পৌঁছে দিল।------ ' এবার যেতে পারবে তো ? '------ ' হ্যাঁ বাবা .... কি আর বলব ... বড় কষ্টে থাকি ... '------ ' ঠিক আছে ... আমি আবার খোঁজ নেব'খন ... ওই লাল বাড়িটার পাশের বাড়িটা তো ? ঠিক আছে .... 'বিভূতিবাবু ওদের অনুসরণ করে পিছন পিছন আসছিলেন। এবার পঞ্চমীর মা-র পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার মনে হল তারও বোধহয় কিছু কর্ত্তব্য আছে, যা হয়ত পাড়ার পুরণো বাসিন্দা হিসেবে আগেই করা উচিত ছিল। এখন বলিষ্ঠ একজনকে হাতের কাছে পেয়ে তিনি তার বার্তাটা তার কাছে পৌঁছে দিতে চাইলেন, যেটা ... ...