প্রতিবিম্ব রাজবল্লভ পাড়ার কাছে বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরীর মেম্বার হয়েছে মাস ছয়েক হল। ওদিকে তেমন ভাল লাইব্রেরী নেই। লাইব্রেরীটা তাকে চিনিয়েছে অবশ্য সুশোভন, নলিন সরকার স্ট্রীটে যার বাড়িতে মাঝে মাঝে গ্রামাফোনে নতুন গান শুনতে যায় প্রতিবিম্ব। লাইব্রেরী রুমের বাইরে একটা বিরাট টেবিল। টেবিল ঘিরে অনেক চেয়ার পাতা। সেখানে বসে অনেক লোক টেবিলে কনুই রেখে পাতা ভাগাভাগি করে মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়ে যতক্ষণ না রাত ... ...
বাসন্তীদেবী খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন। তারপর দৃঢ়স্বরে তার রায় ঘোষণা করলেন ---- ' অসম্ভব ... কক্ষনো না .... এ আমি কখনও হতে দেব না ... কানাই , ওদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করার দরকার নেই ... '----- ' আচ্ছা ঠিক আছে মেজদি .... কিন্তু আমারটা ... মানে ... ' ----- ' ও ... ঠিক আছে । তোমার দক্ষিণা নিয়ে চিন্তা কোর না ... ওটা আমি মিটিয়ে দেব'খন ... 'কানাই লাজুক মুখে চুপ ... ...
বিয়ের ঘটক কানাই সিকদার ক'দিন পরে এসে হাজির দুপুর বারোটা নাগাদ। বাড়িতে কাজের লোক জগন্নাথ ছাড়া বাসন্তীদেবী এখন একা। বেশ গরম পড়েছে আজ। মাথার ওপর বড় বড় তিন পাখনার ডি সি ফ্যান ঘুরছে গিটগিট করে। কানাই রুমাল বার করে মুখের, গলার ঘাম মুছতে লাগল। বাসন্তীদেবী এসে ঘরে ... ...
সকাল ছটা বাজল। একতলার তিনদিকে বারান্দা। আর একদিকে দেয়াল। মাঝখানে ছোট্ট শান বাঁধানো উঠোন। তোলা উনুনে কয়লার আঁচ ধরিয়ে উঠোনের মাঝখানে বসিয়ে দিয়েছে অঞ্জলি। গলগল করে ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে ওপর দিকে। রোজই যায়। মিনিট দশেকের জন্য চোখ জ্বালা জ্বালা করলেও কিছু করার নেই। সব বাড়িতেই চুলোয় আঁচ ধরানো হয়েছে। উনুন ধোঁয়া উগরে দিচ্ছে গলগল করে। সবাই এতে ... ...
পাড়ার মধ্যে শুধু দুটো বাড়িতে টেলিফোন আছে। এক মানিকলাল চ্যাটার্জি, যার বাড়িতে ঘড়িবাবু নরেন পাল ঘড়িতে দম লাগাতে আসে। আর দুই নম্বর হল পরিমল শীল। বউবাজারের শীলদের জ্ঞাতি। বেশিদিন না, চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর আগেও বাইজি নাচত ওদের বউবাজারের বাড়িতে। তেমন জরুরী প্রয়োজন পড়লে ওদেরই শরণাপন্ন হতে হয় পাড়ার লোকের। পাড়ার অনেক লোকের কিছু জরুরী ট্রাঙ্ককলও ... ...
বিভূতিবাবু অনিমেষদের তিনজনকে নিয়ে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরলেন। সংসারনাথবাবুর বাতের ব্যথা ইদানীং খুব বেড়েছে। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। তিনি রোজ সন্ধেবেলায় হেদুয়ায় গিয়ে টুকটুক করে একটু হাঁটাহাঁটি করেন। ডাক্তার বলেছে একেবারে বসে গেলে শরীরও বসে যাবে। বিকেলের দিকে একটু হাঁটবেন। নকুড়ের দোকানের সামনে বিভূতিবাবুদের সঙ্গে দেখা হয়ে ... ...
নিবারণ সাহা আগের রবিবার কি একটা ঝঞ্ঝাটে পড়ে কথা রাখতে পারেনি। এ রবিবারে কিন্তু তার কথার নড়চড় হল না। সকাল সাড়ে নটার মধ্যে সে নিতাইবাবুর বাড়ি এসে হাজির হল। ----- ' হ্যাঁ ... চলেন নিতাইবাবু ... আজ আর এদিক ওদিক করব না একদম ইয়ে ছিলাম। সিঁথির দিকে দুটো জমি দেখাব ... ' ----- ' ঠিক আছে একটু বসুন ... এক কাপ চা খান আমি চান করে আসছি ... ' ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে। বেশি দেরি করবেন না কিন্তু ... ...
কানাই সিকদার করিতকর্মা লোক। সে বিয়ের ঘটকালি থেকে শুরু করে মিউনিসিপ্যালিটির পারমিট বা ছোটখাট মামলার জন্য উকিলের জোগান দেওয়া সব কাজেই সে বেশ দড়। সুমনাদের বাড়িতে কানাইবাবুর যাতায়াত অনেকদিনের। আসলে কানাই হল সুমনা, চন্দনা, বন্দনার মামারবাড়ির দিককার চেনাশোনা লোক। মানে, সুমনাদের মা বাসন্তীদেবীর চেনা লোক বিয়ের আগে থেকেই। তার বাবার সঙ্গে বেশ খাতির ... ...
লাইটহাউসে অনিমেষদের সিনেমা দেখতে যাওয়া এ সপ্তাহে হল না কারণ উৎপলের বাবা একটু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যে কারণেই হোক মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। এক মিনিটের মতো অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। ডাক্তার হরিপদ মিত্র এসে তাকে সবরকম পরীক্ষা করে বললেন, ' ব্লাড প্রেসারটা একটু হাই আছে ... একটা ই সি জি করিয়ে নেওয়া ভাল ... পাঁচমাথার মোড়ে সাধনা ঔষধালয়ের ওপরে একটা ক্লিনিক আছে ... ভালই করে। এখন থেকে প্রেসারের ... ...
শ্রী সিনেমার উল্টোদিকে নলিন সরকার স্ট্রিট। প্রতিবিম্বের সহপাঠি সুশোভন সেন এই গলিতে থাকে। গান তাকে খুব টানে। সুশোভন কিছুদিন তবলা শিখেছিল। নানা কারণে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তার গান শোনার তীব্র আকর্ষণ। ক্ল্যাসিক্যাল বা লঘু যে কোন ধরণের সঙ্গীত। লোকগীতি বা রবীন্দ্রনাথের গান। ভজন, কীর্তন বা ফিল্মের গান, তা সে বাংলা বা হিন্দী যাই হোক। যে কোন ধরণের ভাল মানের গানে ... ...