আজ আকাশ মেঘলা । প্রায় সারাক্ষণ টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে । দূরে কোথাও জোরালো বর্ষা হচ্ছে । জোলো হাওয়া ভেসে আসছে থেকে থেকে । কলতান ডেবোনেয়ারে ঢুকল বেলা ঠিক একটার সময় । সাড়ে বারোটায় সুগত সেনকে ফোন করে নিয়েছিল । নীচের কাউন্টারে স্লিপ জমা দিয়ে বসে রইল। একজন মাঝবয়সী অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহিলা বসে আছেন রিসেপশান কাউন্টারে । ডোবোনেয়ার একসময়ে পুরোদস্তুর ব্রিটিশ কোম্পানি ছিল ।কলতানের ডাক এল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে । রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা ইন্টারকম কানে দিয়ে কিছু শুনে নিয়ে 'ওকে স্যার' বলে নামিয়ে রাখলেন। ভদ্রমহিলা উল্টোদিকে বসা কলতানের দিকে তাকিয়ে বললেন , ' ইউ প্লিজ গো আপস্টেয়ার .... সেকেন্ড রুম অন দা লেফট ... ...
শনিবার সকালেই সন্দীপের ফোন এল ।---- ' হ্যাঁ সন্দীপ, বল কি খবর । তোমার ফোনের জন্যই ওয়েট করছিলাম । বল ... '----- ' জীবনকৃষ্ণ সরকারের নামে যে সিমটা ছিল সেটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে এই মুহূর্তে। হতে পারে সিমটা খুলে ফেলা হয়েছে সেট থেকে । তবে সিমটা নেওয়া হয়েছিল সাউথ ক্যালকাটার কোন আউটলেট থেকে । ট্র্যাকিং লোকেটরে ধরা পড়েছে। '------ ' সাউথ ক্যালকাটার কোন জায়গা থেকে সেটা ট্র্যাক করা গেল না ? '----- ' না ... তবে সার্ভিস প্রোভাইডারের নাম জানা গেছে ... ' সন্দীপ কোম্পানির নামটা বলল ।----- ' হুমম্ ... । লাস্ট কলটা কোথা থেকে এবং কবে হয়েছিল ডিটেক্ট ... ...
টেবিলের ওদিকে সুগত সেন আর প্রিয়নাথ রায় ছাড়া টেকনিক্যাল এক্জিকিউটিভ অদ্রিজা বাসুও বসেছেন ।সি ভি-র ফাইল উল্টে পাল্টে দেখে সুগত সেন বললেন , ' হুমম্ ... ভেরি গুড । ইংলিশে মাস্টার্স করেছেন ... ' তিনি ফাইলটা পি এন আর -এর দিকে এগিয়ে দিলেন । তিনি একটু দেখে নিয়ে কোন কথা না বলে ফাইলটা অদ্রিজা বাসুর হাতে দিলেন ।সুগতবাবু বললেন , ' আপনার পক্ষে তো টিচিং প্রফেশান মোস্ট সুটেবল ছিল । আপনি ওটা ছেড়ে আমাদের লাইনে আসতে চাইছেন কেন ? জানেন তো ... অ্যাড রিলেটেড জব খুব কমপ্লিকেটেড এবং হাইলি ডিমানডিং । তাছাড়া বায়োডাটায় যা দেখছি অ্যাড জবে আপনার কোন পাস্ট ... ...
ডেবোনেয়ারের অফিস জায়গা বদলে ব্রড স্ট্রিটেউঠে গেল । আজ বুধবার । বেলা বারোটা বাজে ।কলতান সন্দীপের কাছ থেকে কিছু খবর আসার অপেক্ষা করে আছে । ভাবছে , সে নিজেই একটা ফোন করবে কিনা । মোবাইলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল । ঠিক এই সময়ে সন্দীপ ঘোষের ফোন এল । ------ ' হ্যাঁ ... বল সন্দীপ , কোন খবর হল ? '----- ' না ... সরি , কলতানদা আরও দু তিন দিন লাগবে । শনিবারের মধ্যে হয়ে যাবে আশা করি । একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম হচ্ছে । সে জন্য ... । একটু টাইম দিন .... কাজ হয়ে যাবে । প্লিজ ... '----- ' না ... ...
প্রিয়নাথ আর চিরশ্রী বেরিয়ে যাবার পরই কলতান প্রাইভেট সাইবার এবং ডিজিটাল এক্সপার্ট সন্দীপ ঘোষকে ফোনে ধরল । খুব দক্ষতাসম্পন্ন ছেলে । বত্রিশ তেত্রিশ বছর বয়স । নিজের প্রাইভেট সাইবার সেল খুলেছে। হাতে প্রচুর কাজ ।----- ' হ্যাঁ কলতানদা বলুন । প্রায় ছ মাস পর ... '----- ' হ্যাঁ ভাই ... মিথ্যে কথা বলব না , দরকার না থাকলে টনক নড়ে না । কি করব বল ... আমাদের প্রফেশানটাই এরকম । তারপর , কি খবর বল ... কাজকর্ম ঠিকঠাক চলছে তো ? '----- ' এ..ই আপনাদের আশীর্বাদে থেমে নেই এটুকু বলতে পারি ... '------ ' না ... তোমার যা কোয়ালিটি, তুমি ... ...
----- ' ঠিক আছে স্যার .... আমি বিল্ডিং-এর বাইরে গিয়ে ওনার সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করছি । এখান থেকে এসব কথা বলাটা ঠিক হবে না । অনেকে এসে গেছে অফিসে । আপনি রেস্টলেস হবেন না । নর্মাল থাকুন । আমি আসছি একটু পরে ... 'কোন দায়িত্বশীল নার্সের মতো রোগীকে তার করণীয় ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে চিরশ্রী সেখান থেকে বেরিয়ে গেল ।ঠিক তিনবার রিং হবার পর চিরশ্রীর মোবাইলে পুরুষ কন্ঠে উত্তর এল , ' হ্যাঁ ... '----- ' মিস্টার কলতান গুপ্ত বলছেন ? '----- ' হ্যাঁ বলছি ... খুব আর্জেন্ট নাকি ? রাস্তায় নেমে আসতে হল ... '----- ' হ্যাঁ স্যার একটু আর্জেন্ট আছে ... ...
সাত পাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত বিকেলেই চিরশ্রীর লেকটাউনের ফ্ল্যাটে গেল তিতিররা । সাড়ে চারটে নাগাদ পৌঁছল । তিন তলায় থাকে চিরশ্রী ।চিরশ্রী দরজা খুলে বলল, ' আয় আয় ... ইশশ্ সকালে এলে কত ভাল হত ... আসুন প্রেরকদা ...'দু কামরার ফ্ল্যাট। আসবাবপত্র বাড়তি কিছু নেই । যেটুকু দরকার সেটুকুই । ঘরদোর কিছুটা অগোছাল । ভিতরের ঘর থেকে নীল পাজামা আর সাদা ফুলশার্ট পরা বেশ লম্বা, ফর্সা একজন তিরিশ বত্রিশ বছরের যুবতী বেরিয়ে এল । প্রেরক আর তিতিরের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে অমায়িকভাবে হেসে বলল, ' নমস্কার... বসুন ... 'তিতিররা প্রতি নমস্কার করে কি বলবে ভেবে না পেয়ে একটা ছোট সোফায় ... ...
বেলা আড়াই থেকে তিনটে পর্যন্ত নিজের সিটে হেলান দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেন পি এন আর । মানে প্রিয়নাথ রায় । অন্তত দশটা অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করা হয়ে গেছে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে । বিজ্ঞাপনি দুনিয়ায় টেক্সট রাইটার হিসেবে তাকে কিম্বদন্তি বলা যায় । কি বাংলায় , কি ইংরেজিতে ।বিরল প্রতিভার মানুষ। ষাট বছর বয়স হয়ে গেল। মোটেই গাম্ভারী কেতার মানুষ নন । হাউসের মেয়ের বয়সী মেয়েদের সঙ্গে অনর্গল নির্বাধ রসিকতা করেন । মেয়ে হোক , ছেলে হোক খোলা মনে পি এন আর -এর মাত্রাহীন রসিকতা উপভোগ করে । সকলেই জানে পি এন আর - এর সাদা মনে কাদা নেই । ... ...
পাঁচ ছবার রিং হবার পর চিরশ্রী ফোন তুলেই বলল, ' বল তিতির ... আমি তোকে আজকেই ফোন করতাম ... 'বোঝা গেল চিরশ্রী নাম্বারটা সেভ করে রেখেছে ।----- ' না সেদিন তেমন কথাবার্তা হল না তাই ভাবলাম ... ' তিতির ভাসিয়ে দিল ।----' ওঃ ... আর বলিসনা যা কেওসের মধ্যে পড়েছিলাম সেদিন .... ওই সিচুয়েশানে আর কথাবলার মুড থাকে ... তারপর বল কি করছিলি এখন ?'----- ' ভ্যারেন্ডা ভাজছিলাম .... হাঃ হাঃ হাঃ ... '----- ' হাঃ হাঃ হাঃ . আমিও তাই ... আর কি করার আছে? '------ ' চিরু তুই এখন থাকিস কোথায় ? '----- ' লেকটাউনে । একটা অ্যাপার্টমেন্টে। ... ...
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। হাল্কা শীত মাখা নরম রোদে চোবানো বাতাস বইছে সকাল থেকে। হাওয়ায় কেমন যেন ছুটির মেজাজ। প্রেরকের আজ কিছুতেই অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না। তিতিরকে বলল, ‘চল কোথাও বেরিয়ে পড়ি ... কি সুন্দর ওয়েদার.... আজ আর অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না ... ...