মহালয়ার দিন ভোরে নিতাইবাবু আর অঞ্জলি বাগবাজার ঘাটে এসেছে চান করতে। বটতলা ঘাটের পাশের ঘাটের সিঁড়িতে দুজনে খানিকক্ষণ বসল। বেলা দশটা বাজে। রোদের বেশ তাপ। বটের ছায়ায় বসেছে দুজনে। জলের ওপর দিয়ে ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে সারাক্ষণ। অঞ্জলি বলল, ... ...
আজ বুধবার। সন্ধে ছটা। রেডিওয় মজদুরমন্ডলীর সভার পর কৃষিকথার আসর শুরু হয়েছে। কোথায় যেন জগন্ময় মিত্রের 'তুমি আজ কতদূরে.... ' বেজে উঠল। শ্যামবাজারের ভূপেন বোস এভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিভূতিবাবু। যাচ্ছেন রামকান্ত বোস স্ট্রিটে শ্বশুরবাড়ির দিকে। ওখানে সকালের দিকে প্রায় প্রতিদিন যাওয়া চাই তার। ইদানীং নাটকের রিহার্সালের চক্করে কিছুদিন তার শ্বশুরবাড়িতে ... ...
দিবাকর বলল, ' আসুন আসুন ... 'শঙ্খ দিবাকরের পিছন পিছন দোতলায় উঠে এল ।অলোকেন্দুবাবুর চেম্বারের পাশে সেই ছোট ঘরটার দরজা খুলে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে বলল , ' বসুন ... খবর দিচ্ছি ' ।বাসন্তীদেবীর ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দিবাকর বলল, ' বৌদি ... একজন দেখা করতে এসেছে । ওয়েটিং রুমে বসিয়েছি ... 'রেডিওয় গীতা দত্তের 'মেরা নাম চিন চিন চু ... হ্যালো মিস্টার হাউ ডু ইউ ডু ... ' হচ্ছিল আর বাসন্তীদেবী তালে তালে পা নাচাচ্ছিলেন শুয়ে ... ...
নলিন সরকার স্ট্রীটের সুশোভন সেদিন প্রতিবিম্বকে বলল, ' রবিবারে বাড়িতে আয়। পুজোর গান কিনেছি কিছু ... শোনাব। মানবেন্দ্র খুব নাম করেছে জানিস তো ... ও একটা দারুণ গান করেছে .... কি যেন ... বনে নয় মনে মোর পাখি আজ গান গায়। দারুণ লাগল। আসিস কিন্তু ...। পুজো এসে পড়ল প্রায়। রবিবার দুপুরের দিকে সুশোভনের বাড়ি গেল প্রতিবিম্ব। শুধু বনে নয় ... না, আরও অনেক গান টান শোনা ... ...
প্রতিবিম্ব দাঁড়িয়ে উঠল । সুমনা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল । ----- ' আরে আপনি এখানে ? সেদিন অবশ্য মিস্টার মিত্র বললেন , আপনি বেথুন কলেজে ম্যাথসে অনার্স পড়েন ... 'সুমনা একটু এগিয়ে এল । বলল, ' অফ পিরিয়ডে মাঝে মাঝে আমরা ঘুরি এখানে । আজ অবশ্য আমি একাই আছি ... ' ----- ' ও আচ্ছা ... আপনার বস কিন্তু খুব সিনসিয়ারলি ... ...
নিতাইবাবুর বাড়িতে রাত দশটার সময় রাশি রাশি তালের বড়া ভাজা হচ্ছে। বাজারে আজ বেশ সস্তায় তাল পাওয়া গেল। গন্ধে ম ম করছে বাড়ি। নিতাইবাবু অঞ্জলির সঙ্গে দীর্ঘ পরামর্শের পর ঠিক করে ফেলেছেন যে তিনি বি টি রোড থেকে খানিকটা ভিতরের দিকে ওই সিঁথির জমিটাই কিনবেন। দমদমে হনুমান মন্দিরের কাছে অনেক জমি ... ...
নাটকের রিহার্সালের দৌলতে বিভূতিবাবুর মন বেশ ফুরফুরে আছে। যদিও তিনি নাটকে কোন চরিত্রে নেই, তার উৎসাহ এবং উদ্যমের শেষ নেই। যেদিন রিহার্সাল থাকে তার মনে হয় উৎসবের দিন। অসিতের ক্যাপ্টেন্সিতে মহড়া ভালই এগোচ্ছে। ছোকরার এলেম আছে বলতে হবে। জিনিসটা দাঁড়িয়ে যাবে মনে হয়। অভিনেতারা সবাই একনিষ্ঠ হয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে। একটু বয়স্ক অনেকের অভিনয় দেখে মনে হচ্ছে জীবনের অনেকটা বেলা ... ...
বিভূতিবাবুর ঘরে জোরদার রিহার্সাল শুরু হয়ে গেল। দুটো নারী চরিত্র আছে বটে। তবে তাদের মুখে ডায়লগ রাখা হল না। সেটা স্টেজ রিহার্সালের সময় পাড়ার মধ্যে থেকেই দুজনকে ঠিক করে নিতে হবে। অসিতই সকলের প্রচ্ছন্ন অনুমোদনে এ নাটকের পরিচালক হয়ে গেল। যতই ছোটখাট ব্যাপার হোক একজন পরিচালক তো চাই। অসিত অবশ্য একটা ফিমেল রোলে, সংলাপহীন ... ...
প্রতিবিম্বর মামা পরমানন্দ বোস বললেন, ' একটু কথা বলতাম ওনার সঙ্গে ... একটা সমস্যা ছিল ... উনি কি আছেন ? ' সুমনা পলকে নিজের মধ্যে ফিরে এল। লজ্জিত স্বরে বলল, ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... আসুন আসুন .... কিছু মনে করবেন না মেসোমশাই ... ' সুমনাকে অনুসরণ করে প্রতিবিম্ব আর তার মামা দোতলায় ... ...
মক্কেল বিদায় হবার পর বিনোদবিহারি বিভূতিবাবুর দিকে ঘুরে বসলেন ।----- ' তারপর ... বলুন বিভূদ্দা । নতুন কি সিনেমা দেখলেন ? '----- ' আরে ... আর বোল না ... সেই এনার্জি আর নেই। তবে আগ্রহটা আছে ... বুঝলে ... এই তো রাধা থেকে ঢুলি দেখে এলাম । আর কোন কাজকম্ম তো নেই ... বেকার মানুষ... তাই এই ... ...