এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ২৯ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ২৮৮ বার পঠিত
  • মহালয়ার দিন ভোরে নিতাইবাবু আর অঞ্জলি বাগবাজার ঘাটে এসেছে চান করতে। বটতলা ঘাটের পাশের ঘাটের সিঁড়িতে দুজনে খানিকক্ষণ বসল। বেলা দশটা বাজে। রোদের বেশ তাপ। বটের ছায়ায় বসেছে দুজনে। জলের ওপর দিয়ে ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে সারাক্ষণ।
    অঞ্জলি বলল, ' পরের বছর মহালয়ায় আর এখানে আসব না আমরা .... ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায় ... না ? '
    ----- ' হমম্ ... তাই তো। কিন্তু কিছু তো করার নেই... ' নিতাইবাবু নরম গলায় জানান।
    ----- ' সে তো বটেই.... উপায় থাকলে কেউ হেদুয়ার মতো জায়গা ছেড়ে যায় ? ছেলে মেয়ে দুটোর খুব কষ্ট হবে ওখানে গিয়ে মানিয়ে নিতে ... '
    ----- ' দেখা যাক ... '
    অঞ্জলি প্রথমে জলে নামল। নিতাইবাবু জামাকাপড় পাহারা দিতে লাগলেন। অঞ্জলি ডুব দিয়ে উঠে আসার পর নিতাইবাবু জলে নামলেন। বেশ শান্তির পরশ লাগল শরীরে। অনেকবার ডুব দিলেন, কিছুটা সাঁতারও কাটলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বোধহয় সূর্যমন্ত্র বললেন।
    ফেরবার পথে নিতাইবাবু বললেন, ' ওদিকের দোকানে গিয়ে কচুড়ি খাবে নাকি ? '
    ----- ' তা খেলে হয় ... '
    দুজনে বাগবাজার স্ট্রিটের দিকে যেতে লাগল কচুড়ি খাবার জন্য।
    অঞ্জলি বলল, ' মহালয়া হয়ে গেল। জামাকাপড়গুলো এবার কিনে ফেললে হয়। ছেলে মেয়ে দুটো আশা করে বসে আছে কবে থেকে ... '
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ .... কালকেই শ্যামবাজারে গিয়ে কেনাকাটা সেরে ফেলব। একদিনেই সব সেরে ফেলব। তোমার শাড়িটা ... ওই রামদুলাল দাসে...'
    ----- ' দূর ... তোমার খালি ওই রামদুলাল দাস ...নতুন কোন ডিজাইন রাখে না ... আরও কত দোকান হয়েছে হাতিবাগানের দিকে ...'
    ----- ' ঠিক আছে তা'লে তাই যাব ... কাল অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে ... ' নিতাইবাবু জানালেন।
    অঞ্জলি বলল, ' আচ্ছা ... আজই গেলে হয় না ... '
    ----- ' না না, আজ গিয়ে কাজ নেই। আজ ছুটির দিন, খুব ভিড় হবে। তাছাড়া পুজোর অ্যালাওয়েন্সটা এখনও হাতে পাইনি ... কাল পাবার কথা ... '
    ------ ' ও, আচ্ছা ঠিক আছে .... কালকেই যাব তা'লে ... '
    নিতাইবাবু এর মধ্যে একদিন নিবারণ সাহাকে সঙ্গে নিয়ে অঞ্জলিকে বি টি রোডের কাছাকাছি জমিটা দেখিয়ে এনেছেন। জায়গাটা তেমন খারাপ লাগেনি অঞ্জলির। দু চারটে বাড়ি ঘর উঠে গেলে, মানে একটা পাড়া তৈরি হয়ে গেলে জায়গাটা খারাপ লাগবে বলে মনে হয় না। অঞ্জলির অবশ্য মনে হল, এখান থেকে ছেলে মেয়ের স্কুল বেশ দূর পড়ে যাবে। বি টি রোডে গিয়ে বাস ধরতে হবে। এছাড়া আর কিই বা করার আছে। তাদের মতো ছাপোষা লোকের পক্ষে তো আর খাস কলকাতার মধ্যে বাড়ি কেনা সম্ভব নয়।

    জমির বায়না আগেই হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার লেখাপড়া হবে। শশীভূষণবাবুর চেনাজানা উকিল আছে। তিনিই রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত সব কাজকর্ম সামলে নেবেন। এসব প্রক্রিয়া মিটে গেলেই নিতাইবাবু বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেবেন। পরের বছরের গোড়াতেই তিনি নতুন গৃহে প্রবেশ করতে চান। নিতাইবাবুর মনে হচ্ছে জীবনের আর এক নতুন মোড়ে এসে পড়েছেন তিনি। জীবন এখান থেকে কোন দিকে বাঁক নেবে তা কে জানে।

    সুমনা কিন্তু প্রতিবিম্বর মহাজাতি সদনে স্কটিশ চার্চ কলেজের অ্যানুয়াল সোশ্যালের অনুষ্ঠান দেখতে যাবার ডাকে সাড়া দিতে পারল না। মানে, সাহসে কুলোল না।
    সুমনা কোন অস্পষ্টতা রাখল না।
    বলল, ' দেখ... এখনই এতটা পারব না। বাবাকে বলেছি সব, কিন্তু মা এখনও কিছু জানে না। আমার চেয়ে দু এক বছরের বড় দিদিরা ... ওরে বাবা ... তারাও এক এক জন মস্ত গার্জেন আমার ...সুতরাং বুঝতেই পারছ। তাছাড়া কাবেরীকেও আমি কিচ্ছু বলিনি এখনও। এখন একটু চাপা থাক। ভয় করে আমার ... '
    ----- ' কাবেরী কে ? '
    ----- ' আমার ক্লাসমেট। ক্লাসে আমার একমাত্র বন্ধু। ও ভীষণ ভাল, শুধু একটাই দোষ ... ভীষণ ফিকল্ মাইন্ডেড। কোন কিছুই বেশি দিন ভাল লাগে না ... কি বলব, ও তো তোমার ... '
    বলতে গিয়ে থেমে গেল সুমনা। ভাবল বোকার মতো কি ভুল করতে যাচ্ছিল সে।
    ----- ' আমার কি ? ' প্রতিবিম্ব জিজ্ঞেস করে।
    ----- ' ও কিছু না ... বলছিলাম যে, তোমার ... মানে তোমার সঙ্গে একদিন পরিচয় করিয়ে দেব আমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি ফ্রেন্ডের সঙ্গে।
    ----- ' আচ্ছা আচ্ছা .... সে হবে'খন। ব্যাপার হচ্ছে সোশ্যাল-এ তুমি যদি না যাও আমিও যাব না ... ভাল লাগবে না আমার। তার চেয়ে ওই সময়টা দুজনে এক জায়গায় বসে গল্প করব .... '
    ----- ' মানে, দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি স্টাইলে .... তাই তো ? ' সুমনা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। যদিও সতর্ক দৃষ্টিতে মাঝেমাঝে এদিক ওদিক দেখছে। চেনা জানা কারো চোখে পড়তে চাইছে না এখনই।
    প্রতিবিম্ব অম্লানবদনে বলল, ' হ্যাঁ ... ওই আর কি ... '
    ----- ' অ্যাঁ ... ছেলে বলে কি ! দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। এ তো দেখছি স্কটিশের মজনু একেবারে ... '
    ------ ' আর তুমি কি ? নিশ্চই বেথুনের লায়লা ... '
    ------ ' ওঃহো ... সে আর বলতে ... হাঃ হাঃ হাঃ ... '
    হাসিতে উচ্ছল হয়ে ওঠা এ মেয়েটা এক সম্পূর্ণ অন্য সুমনা।

    দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। আশ্বিনের মাঝামাঝি বাজনা উঠিল বাজি ...
    অনিমেষ, উৎপল আর সমীরণ সপ্তমীর দিন বাগবাজার সার্বজনীনের ঠাকুর দেখতে গেল। এ ঠাকুরটা ওরা তিন চার বছর বয়েস থেকে দেখে আসছে। আগে বাবার হাত ধরে আসত আর এখন নিজেরা আসছে। কিন্তু এ পুজো অবিকল একইরকম আছে। সেই একই গাম্ভীর্যময় একচালা কাঠামোতে শ্বেতশুভ্র ডাকের সাজের প্রতিমা। সামনের মাঠে জমজমাট প্রাণবন্ত মেলা বসেছে। এমনকি মেলায় প্রতিবার যেখানে যার স্টল বসে, ঠিক সেখানেই বসেছে। অনিমেষরা একজায়গায় বসে পরোটা আর আলুরদম খেতে লাগল। অনিমেষ পরম তৃপ্তিতে পরটা আলুরদম চিবোচ্ছিল, এইসময়ে সমীরণ বলে উঠল, ' ওই দেখ ... মুখার্জী জেঠু ...
    অনিমেষ আর উৎপল মুখ তুলে দেখল, তাদের পাড়ার সংসারনাথবাবু একা একাই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন। প্রবল উৎসাহে তিনি মন্ডপের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। যেতে যেতে উনি থেমে গেলেন। একটা ভাজাভুজির স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। দুটো ভেজিটেবল চপ কিনে খেতে লাগলেন। তারপর একটা ফিস ফ্রাই কিনলেন। সেটাও তারিয়ে তারিয়ে খেলেন কাসুন্দি মাখিয়ে। তারপর স্টলের বাকি খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন লুব্ধ দৃষ্টিতে।
    বোধহয় আরও কিছু খাওয়া যায় কিনা চিন্তা করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত একটা ডিমের ডেভিল চপ নিয়ে তাতে কামড় বসালেন পরম তৃপ্তিতে।
    উৎপল বলল, ' এ কিরে ... এ তো শেষ খাওয়া খাচ্ছে মনে হচ্ছে ... '
    অনিমেষ বলল, ' যাঃ ... ওরকম বলিস না পুজোর দিনে। কোন কথা কখন লেগে যায়, কেউ বলতে পারে না ... '

    ( চলবে )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন