দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। মনোরমা আকাশ আজ খেলছে বেশ উদাসি তুলো মেঘ আর রোদ্দুরের সঙ্গে। বসন্ত কেবিনের একপাশে ফুটপাথের ওপর ডুগডুগি বাজিয়ে একটা লোক বাঁদর খেলা দেখাচ্ছে। কেউ ডেকেছে হয়ত। গোল হয়ে কিছু লোক দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু লোক উঁকি মেরে চলে যাচ্ছে। সাগরও দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিল একবার। আঠারো দিন পর সে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। অনেকদিন পর পটলের ... ...
জন্মেজয়বাবুর মনটা আজ বেশ ফুরফুরে আছে। অখিল তাদের সবাইকে বোটানিকাল গার্ডেনে নিয়ে যাবে শিবপুরে। সে নাকি এক প্রকান্ড বাগান। হেঁটে হেঁটে শেষ করা যায় না। ওখানে গিয়ে তারা দেখল ওমা সত্যিই তাই। তাদের কুমিল্লার গ্রামে এরকম গাছগাছালি অনেক আছে। কিন্তু এরকম সাজানো গোছানো নয়। খোলামেলা মাঠ ঘাট, নদী, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, জল মাটি গাছপালা সব অযত্নে ছড়িয়ে ... ...
সৌরেন্দ্রবাবু সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক। তিনি বিভিন্ন ধর্ম প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করেন, বিশেষ করে রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দ সংযুক্ত নানান সমিতির প্রতি তার প্রবল অনুরক্তি আছে। সৌরেনবাবু প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একবার দক্ষিণেশ্বরে যান। আর বিশেষ বিশেষ তিথি পার্বণে তো আছেই। পরমহংসদেবের ঘরে বসে অনেকের মতো তিনিও ধ্যানে বসেন। তিনি আয়কর বিভাগে করণিকের ... ...
কাবেরী আগে থেকে এসে বসে আছে কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। আজ নিখিল স্যারের কাছে পড়া আছে সন্ধেবেলায়। এভাবে অনার্সের ক্লাস বাঙ্ক করা নিয়ে তার মনটা খচখচ করছে। সে ঠিক করেছে এই সময়ে পার্থপ্রতিমকে আর সময় দেবে না। তাতে যা হয় হোক। অবশ্য সে নিজেই জানে না পার্থর ওপর তার এই ঝোঁক কতদিন বজায় থাকবে। মাঝে মাঝে অমিতাভর মুখটা ঝিলিক দেয় তার মনে। সে বড় অস্থির বোধ করছে ক'দিন ধরে। এই টানাপোড়েন থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। প্রতিবিম্বর ব্যাপারটা মুছে যাওয়ার পর তার ভালই কাটছিল। সেদিন ট্রামে হঠাৎ পার্থপ্রতিমের সঙ্গে দেখা হয়ে আবার নতুন করে একটা জট তৈরি হল। কি দরকার ... ...
দুপুর দুটো বাজে। কালীকিঙ্করবাবুর ঘন ঘন হাই উঠছে। কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি। রাত্রে থানাতেই ছিলেন। পরপর দুটো চা আনিয়ে খেলেন। এক পেট ভাত খেয়েছেন বেলা একটা নাগাদ। আবার কেমন খিদে খিদে পাচ্ছে কালীবাবুর। চা খাওয়ার পর একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন কালীবাবু। থানার একপাশে এক ছোকরা জামরুল নিয়ে বসেছে। বেশ বড় বড় রসালো জামরুল। দু তিনজন সেখানে দাঁড়িয়ে জামরুল কিনছে বেছে বেছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে দেখে। কালীবাবুও তাদের দলে যোগ দিলেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ... ...
সন্তোষের অভিষ্ট লক্ষ্য কিন্তু অসৎ নয়। সে বেইমান নয়। সাগরের উপকার করতেই সে এখানে এসেছে। সে দোকানদার বিশ্বামিত্র দাসকে বলল, ' সাগরদাকে আমি তোমার কথা অবশ্যই জানাব। চিন্তা কর না। শুধু একটা খবর আমায় একটু দাও .... ছাব্বিশের বি -র রাত্রি রায় কি আবার সাগর মন্ডলের কাছে যাবে ? জান তো সেই হাসপাতালে যাওয়া থেকে একটা সম্পক্ক তৈরি হয়েছে ... সাগরদার একটু অসুবিধে হচ্ছে ... বুঝতেই তো পারছ ... ' দোকানদার বলল, ' হ্যাঁ তা ঠিক ... ...
অলোকেন্দুবাবুর বড় মেয়ে চন্দনার বিয়ে মোটামুটি ঠিক হয়েছে এক জায়গায়। কানাই সিকদারেরই আনা সম্পর্ক। বালীগঞ্জের ছেলে। অবস্থাপন্ন পরিবার। ছেলে ল্যান্ড রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টে উঁচু পদের সরকারি অফিসার। সমস্যা একটাই। ওরা পূর্ববঙ্গের লোক, মানে বাঙাল। সেটা নিয়েই কাটা ছেঁড়া চলছে। চন্দনার বক্তব্য ঠিক পরিষ্কার নয়। এক এক সময়ে এক এক রকম বলছে। অলোকেন্দুবাবুর এ সব নিয়ে কোন ... ...
আজ ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে উঠে বিছানায় বসে রইল সাগর। জানলা দিয়ে বাইরের নীরব কোমল আলোমাখা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। আলো এখনও ফোটেনি তেমন করে। রাতের হিম ধোয়া ভোর পাঁচটার আকাশ। সাগর কখনও আকাশ দেখেনি এইভাবে। নীরব নিথর ব্যোমতলে পৌষালি খেজুর রসের মতো অনাবিল নরম আলোর ঘুম ভাঙছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কি জানি কেন সাগরের বুকের পাথর ভেঙে উঠে এসে ক'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল তার দুচোখ বেয়ে। তার কেমন মন খারাপ হতে লাগল। তার মনে হল এ ক'টা দিন তার কাছে স্বপ্ন ছিল। বংশীলালের লোকগুলো তার ... ...
বিভূতিবাবু খবরটা পেলেন সকাল দশটা নাগাদ । তিনি শশধরবাবুর বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলেন । পঞ্চমীর মা হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসছিল । বোধহয় গজেন বোসের বাড়ি কাজে যাচ্ছে । বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেছে । পা চালিয়ে আসছিল কি চিন্তা করতে করতে । রাস্তায় বিভূতিবাবুর মুখোমুখি হয়ে গেল ।বলল, ' খবর শুনেছেন তো দাদাবাবু ? '---- ' কি ? '---- ' আওনবাড়িতে ওই বুড়ো মানুষটা মারা গেছে আজ ভোরবেলায় ... এখনও নিয়ে যায়নি ... অনেক লোকজন ওখানে ... 'কথাটা ভিতরে ঢুকতে সময় লাগল বিভূতিবাবুর । তিনি হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন পদ্মার মুখের দিকে । প্রায় পঞ্চাশ বছরের নানা স্মৃতি আচমকা তালগোল ... ...
শশধরবাবু বললেন, ' তা তোমার পরিবার ভাল আছে তো ? 'বিভূতিবাবু বললেন, ' আপনাদের আশীর্বাদে টেনে নিয়ে যাচ্ছি আর কি জ্যাঠামশাই... '----- ' আর কি ... টেনে নিয়ে যেতে পারলেই হল ... দেশের অবস্থা কিরকম বুঝছ ? চালাতে পারছে এরা ? '------ ' কি আর বলব জ্যাঠামশাই ... আমরা তখনও ভাল ছিলাম না , আপনারা তো কত ফাইট করেছেন , অনেকে প্রাণ দিয়েছেন , আর এখনও ভাল নেই ... এখন আর কার সঙ্গে আমরা ফাইট করব বলুন ... এখন নিজেরাই নিজেদের মারছি ...'----- ' তাই তো ... এখন তো আর ব্রিটিশরা নেই... কমিউনাল রায়টও নেই, ... ...