ওসি সাহেব যাকে প্রমার রেজিস্টার আনতে হাত নেড়ে ইঙ্গিত করলেন তার ফিরে আসার কথা ছিল না , ফিরে আসেওনি । রেজিস্টার আনবে কোথা থেকে ? প্রমার খাতা প্রমাতেই আছে । কলতান ওখানে রেজিস্টার আনতে গেলই বা কখন ? এটা কলতানের একটা কুশলী চাল । অপরাধীকে মনস্তাত্বিক ধোঁকা দিয়ে স্বীকারোক্তি বার করে আনার এরকম অনেক পদ্ধতি আছে । কলতান বলল, ' ডিসিশান নেওয়ার আগে আর এক রাউন্ড ইনটারোগেশানের দরকার আছে স্যার ..... 'গৌতমবাবু বললেন , ' করুন না .... তবে তার আগে এক রাউন্ড করে চা হবে নাকি ? '----- ' তা হতে পারে .... আপনি চা বলুন .... আমি ততক্ষণ ... ...
বাইরে এনকোয়্যারি কাউন্টারে একজন মাঝবয়সী ইন্সপেক্টর বসে আছেন । অশেষ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ইন্সপেক্টর ভদ্রলোক অশেষকে আগের দিন দেখেছেন । আজ তার আসার ব্যাপারটা পুরোটাই জানেন ।তিনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন । তিনি' ঠিক আছে , ওই কথাই রইল ... ' বলে ফোন বন্ধ করে অশেষের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন ,' ও ... এসে গেছেন .... দাঁড়ান ... ' বলে ইন্টারকমে ডায়াল করলেন ।ওদিক থেকে উত্তর পেয়ে অশেষকে বললেন ,' যান .... ভেতরে যান ... ' ।অশেষ ভিতরে ওসি-র ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। দরজার উল্টোদিকে বসা গৌতম রক্ষিতের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল অশেষের ।রক্ষিতবাবু বললেন , ' ... ...
কলতানের কুন্তলকে ডাক দেওয়াটা সিদ্ধার্থ সিনহাবুঝতে পারলেন না ।মিস্টার সিনহার শোরগোল থামলে কলতান আবার নিষ্পাপ মুখে বলল, ' জীবনকৃষ্ণ বেঁচে নেই!সেকি ! কিন্তু এই পরশুদিনই তো আমার সঙ্গে কথা হল .... ও-ই তো আমাকে বলল .... 'এবার কলতান যেটা ঘটাতে চাইছিল সেটাই ঘটল ।সিদ্ধার্থ সিনহার ধুরন্ধর মস্তিস্কে পুরো সিস্টেম তালগোল পাকিয়ে গেল ।ক্রোধ, বিরক্তি , অবচেতনের পাপবোধ সব কিছুর মিলিত প্রতিক্রিয়ায় মিস্টার সিনহা আবার একবার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে উন্মত্তের মতো চেঁচিয়ে উঠলেন , ' আরে দূ..র ... সে তো বেঁচেই নেই .... '----- ' কিন্তু স্যার,সেটা আপনি জানলেন কি করে ?'সিদ্ধার্থ সিনহার এখনও ঘোর কাটেনি । অবসেসিভ সাবজেক্টিভ ... ...
কলতান সেদিন রাত্রেই বালীগঞ্জ থানার ওসি গৌতম রক্ষিতকে ফোন করল ।----- ' রক্ষিতবাবু আপনি এখন কোথায় ? '----- ' বাড়িতে আছি । আজ নাইট ডিউটি নেই । কি খবর বলুন .... '----- ' ওই ব্যাপারটায় আপনার একটু ফেভার চাইছি ... '----- ' বলুন না .... '----- ' সেদিন যাকে তুলে আনা হয়েছিল সেই অশেষ পালিতকে কাল সকাল এগারোটার মধ্যে থানায় আসতে বলুন । একটু কথা বলব । যদি না আসতে চায় মোবাইল টাওয়ার থেকে ওর লোকেশান ট্র্যাক করে ওকে তুলে নিয়ে আসবেন । রতন সমররা ওর যে বাড়ির ছবিটা তুলেছিল সেটা আমাকে পাঠাতে বলবেন । ঠিক আছে ... কাল সকালে ... ...
হরিপ্রসাদ দুধ চিনি মেশানো চা-ই খেলেন বেশ আয়েস করে । লাল চা তার অখাদ্য মনে হয় । তাকে এখন কিছুটা ধাতস্থ দেখাচ্ছে ।ব্যবসা তার রক্তে । বন্ডে সই করে দু এক কোটির পুঁজি সংগ্রহ করা তার কাছে নতুন কিছু না । কিন্তু এবারেরটা একদম অন্যরকম ব্যাপার । যে তাকে এতে জড়াল সে-ই কোথায় হাওয়া হয়ে গেল । আশ্চর্যের ব্যাপার।কলতানও চায়ে দু তিনটে চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলের ওপর রাখল । কাপের চায়ের দিকে তাকিয়ে একমনে কি ভাবতে লাগল ।----- ' আচ্ছা মিস্টার আগরওয়াল আপনি পুলিশের কাছে গেলেন না কেন ? '------ ' কিছু মনে করবেন না .... ওদের ওপর আমার ... ...
কলতান সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল এক্সপার্ট সন্দীপ ঘোষকে কলটা ফরওয়ার্ড করল । সন্দীপকে ফোন করে বলল, ' একটা কল ফরওয়ার্ড করেছি । লোকেশানটা ট্র্যাক করে আমাকে জানাও অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল ... '----- ' দেখছি কলতানদা ... ' ----- ' বিল্ডিং-এর কোন ফ্লোরের কোন ফ্ল্যাট .... সেটা অবশ্যই জানতে হবে ... '----- ' ঠিক আছে ... দেখছি ... ' প্রায় আধঘন্টা বাদে সমর ফোন করল , ' অশেষ বেরিয়েছে । নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছে । আমরা ফলো করব তো ? 'গৌতমবাবু কলতানের নীরব ইঙ্গিত পেয়ে বললেন ,' হ্যাঁ হ্যাঁ ... ফলো কর ... ফলো কর ... ' অশেষের মারুতি টালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছে । ... ...
একটা পুরোণ অ্যাম্বাসাডার গাড়িতে রতন আর সমর সওয়ার হল অশেষের পিছু করার জন্য । সমর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরল । এ কাজটা তারা আগেও অনেকবার করেছে ।মারুতি সুজুকি নিউ আলিপুর দিয়ে বেরিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে চলতে লাগল । বেহালা তারাতলা পেরিয়ে এক জায়গায় এসে একটা বহুতল বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল । গাড়িটা খানিকটা আগে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল । অশেষ তারপর পিছনে একটু হেঁটে এসে বিল্ডিংয়ের ভিতর ঢুকে সিকিউরিটি গার্ডদের ছোট টেবিলটার সামনে দাঁড়াল। দুজন সিকিউরিটি গার্ড বসে আছে সেখানে । এখানে বোধহয় অশেষের নিয়মিত যাতায়াত আছে । সিকিউরিটিদের সঙ্গে তাকে একটু হাসিঠাট্টা করতে দেখা গেল । নিয়মিত যাতায়াতের সূত্রে ... ...
আশ্চর্যের ব্যাপার অশেষও দিব্যি আয়েস করে ঠান্ডা পানীয় পান করল । তার বিশেষ কোন তাপ উত্তাপ দেখা গেল না । দু ধরণের অপরাধীর এরকম হতে পারে । এক, সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন ,মানে ভয় পাবার অনুভূতিটাই নেই । আর দুই, সে নিশ্চিন্ত থাকে যে তার গডফাদার তাকে ঠিক বাঁচিয়ে নেবে । এর মধ্যে বোধহয় দ্বিতীয়টাই তার ক্ষেত্রে সত্যি । অবশ্য অশেষ যে অপরাধী এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।অশেষ ঠান্ডা পানীয়ের বোতল শেষ করে একটা ঢেকুর তুলল । বোতলটা নামিয়ে রাখল চেয়ারের পাশে । ওসি গৌতম রক্ষিত চেয়ারে বসে বসে একটা হাই তুললেন । তারপর উঠে বাইরের দিকে গেলেন । বোধহয় ... ...
অশেষ তেরচা চোখে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল এতটুকু টাল না খেয়ে ।ভদ্রলোকের সঙ্গী বছর চল্লিশের পেটানো চেহারার আর একজন বললেন , ' কি হল ? বার করুন ... বার করুন .... 'অশেষ পালিত চোখ না সরিয়েই অগ্রাহ্যের সুরে বলল, ' কেন বলুন তো ? কোথা থেকে আসছেন ? '----- ' বালীগঞ্জ থানা ... ' প্রথমজন পকেট থেকে আই কার্ড বার করে অশেষের চোখের সামনে ধরল । অশেষ তাতেও টসকাল না । বলল, ' লাইসেন্স কাছে নেই। দাঁড়ান ফোন করছি.....'----- ' কাকে ফোন করবেন ? '----- ' গাড়ির মালিককে .... '----- ' গাড়ির মালিক পরে হচ্ছে ..... আগে বলুন ড্রাইভিং ... ...
অশেষ পালিতের ডেবোনেয়ারে অনেকদিনের যাতায়াত । অশেষ একজন দক্ষ এ সি মেকানিক । ডেবোনেয়ারের সেন্ট্রাল এ সি সিস্টেম বেশ কিছুদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে । অশেষ এসেছে যন্ত্র মেরামত করতে । শীতাতপ যন্ত্র চালু হলে সুগত সেনের ঘরের জানলাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে । পিছনের জানলা দিয়ে আর চিউয়িং গামের প্যাকেট ফেলা যাবে না ।অশেষ সুগত সেনের চেম্বারের পর্দা সরিয়ে , কাঁচের দরজা একটু ফাঁক করে তার মুখটা দেখাল। মিস্টার সেন মুখ তুলতে অশেষ একগাল হেসে বলল, ' ভাল আছেন স্যার ? '------ ' আরে অশেষ যে .... ভেতরে এস , ভিতরে এস .... 'অশেষ ভিতরে ঢুকল ।------ ' বস ... ...