কুলচাকে নিয়ে কলতান বাড়ি ফিরল রাত দশটা নাগাদ । থানা থেকে বেরোবার সময় গৌতমবাবুকে জিজ্ঞেস করল , ' নিউআলিপুর থানার এনকাউন্টারে কোন ইনজিওরি হয়েছে কিনা জানেন কি ? '----- ' না না ... কোন ইনজিওরি নেই। আমি রিপোর্ট নিয়েছি .... ওটা হলে তো আবার হসপিটালের চক্কর আছে ... ওঃ... '----- ' ঠিক আছে , আমি বেরোচ্ছি । আমার ডিউটিশেষ। এবার আপনারা প্রসিড করুন .... '----- ' কি যে বলেন ... আপনার ডিউটি কখনও শেষ হয় ? যাক কোর্ট কেসটা তো চালু হোক ... '----- ' সেটাই তো বলছি .... বেল আটকানোর জন্য যা করতে হয় করবেন ... অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার স্যারের ... ...
কলতান বলল, ' এনাফ ইজ এনাফ ... মিস্টার রক্ষিত... এবার ওর কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিন ... আশা করি আমাদের কাজ হয়ে গেছে । ওটা সাইবার সেলে পাঠানোর দরকার । আমার ধারণা ওতে এদের কিংপিনের ট্রেস পাবেন .... ' গৌতমবাবু তার পিস্তল লোড করতে করতে বললেন , ' সুনীতা, অপর্ণা ... ওর মোবাইল সিজ কর এক্ষুণি । আর...বডি ফ্রিস্ক করে দেখ কিছু পাও কিনা । কাউন্টার চার্জ করলে কাস্টডি হাজতে লক করে দাও .... হারি আপ .... আমি বাইরে যাচ্ছি ... 'সুনীতা আর অপর্ণা ছুটে গেল জ্যাকলিনের দিকে ।জ্যাকলিন কোন বাধা দিলেন না । মোবাইলটা দিয়ে দিল ওদের । সুনীতা ... ...
কলতান বলল, ' আসুন আসুন ... আমি আপনাদের জন্যই ওয়েট করছি ... 'গৌতম রক্ষিত অবাক হয়ে এর ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন । কুলচারও একই অবস্থা ।----- ' আপনি জানতেন আমরা আসব ? ' সুগত সেন বললেন ।----- ' হ্যাঁ .... সেটা তো না জানার কিছু নেই। আমি আপনাদের কোড ল্যাঙ্গুয়েজ না বুঝতে পারি কিন্তু মনের ভাষা তো কিছুটা পড়তে পারি । স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আপনাদের মতো ইন্টারেস্টিং লোকেদের ফোনের কথাবার্তা আড়ি পেতে শোনার আমার খুব শখ । সব কথা যে ঠিক ঠিক ধরতে পারি তা নয় , তবে ধরার চেষ্টা করি । সুগতবাবু কিছু মনে করবেন না ... ... ...
কলতান আর সিদ্ধার্থ সিনহাকে ঘরে ঢুকতে দেখেমিসেস সিনহা মোবাইল থেকে মুখ তুলে ওদের দিকে তাকালেন । মিষ্টি সংবেদনশীল হাসি হেসেসিদ্ধার্থবাবুর দিকে এগিয়ে এলেন ।----- ' ইশশ্ ... দুদিনেই কি চেহারা হয়েছে ... মাগো ... ' দুচোখে বিষণ্ণ ছায়া নেমে এল জ্যাকলিনের । কুলচা সব কিছু ভুলে গিয়ে ওনার অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হতে লাগল ।জ্যাকলিন একটা কমলা চিউয়িং গাম মুখে দিল । তারপর একটু সরে গিয়ে দাঁড়াল। কলতান গৌতমবাবুকে বলল , ' আমরা কি পাশের ঘরে বসব ? '----- ' হ্যাঁ , সেটাই বেটার হবে । ওখানেই ... 'কলতানকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে উনি নীচুগলায় বললেন , ' অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার স্যারকে ... ...
ওপরের ছোট ঘরটাতে একটা ছোট টেবিল আর তিনটে চেয়ার আছে । একপাশে একটা তিন তাকওয়ালা দেয়াল আলমারি আছে । তাতে পুরণো ফাইল আর কাগজপত্র ঠাসা । কোন সিলিং ফ্যান নেই । একটা পেডেস্টাল ফ্যান আছে।বনবন করে ঘুরছে । কলতান বসে আছে মিস্টার সিনহার অপেক্ষায় মিনিট পাঁচেক ধরে ।সিদ্ধার্থবাবুকে একজন কনস্টেবল ওপরে পৌঁছে দিয়ে গেল । বিকেল চারটে বাজতে চলল ।------ ' আসুন আসুন মিস্টার সিনহা ... বসুন 'মিস্টার সিনহা কলতানের সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লেন। ----- ' আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো এখানে? ' কলতান খোঁজ নেয় ।----- ' মিনিংলেস কোশ্চেন ... এখানে সুবিধেটা কি হবে ... এটা কি মামার বাড়ি ... ...
কলতান এবং কুলচা সহ বালীগঞ্জ থানার দলবল মিসেস সিনহাকে নিয়ে থানায় এসে নামল ।কলতান বলেছিল, 'একটা ক্যাব বুক করে দিচ্ছি তুই বাড়ি ফিরে যা ...তোর তো এখন কোন কাজ নেই এখানে ... ' । কিন্তু কুলচা ফিরে যেতে রাজি হল না। সে আরও উত্তেজক নাটক দেখার লোভ সংবরণ করতে পারল না। কুলচাকে দেখে গৌতম রক্ষিত কলতানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ঠোঁট উল্টে মাথা ওপর নীচ করলেন । কলতান বলল, ' আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট... '----- ' ও আচ্ছা আচ্ছা .... গুড আফটারনুন ... ...
দীপ্তি সিনহা একটু থতমত খেয়ে বললেন, ' সতীশ মিশ্রকে আপনারা কোথায় পেলেন ? রাঁচি থেকে ধরে এনেছেন ? '----- ' না ... ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয় । আমরা ধরে আনিনি । ও-ই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে । অনেক কিছু বলেওছে । আমরা অবশ্য সেগুলো বিশ্বাস করিনি ... যাকে বলে কগনিজেন্সে নিইনি । তেমন সলিড কোন এভিডেন্স নেই ... কগনিজেবল এভিডেন্স ছাড়া কারো কথা বিশ্বাস করা যায় না ... তাই না ? 'মিসেস সিনহা বলে উঠলেন, ' কিরকম ...কিরকম ?কি ... কি বলেছে ও ? '----- ' বলছিল তো অনেক কিছু ... কিন্তু ওরকম একটা লোকের কথা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য ? ... ...
দীপ্তি সিনহার যেন হঠাৎ মনে পড়ে গেল ।------ ' ও আচ্ছা আচ্ছা ... ওই অ্যাড এজেন্সির এক্জিকিউটিভ... নাম শুনেছি ... না না এখানে আসবে কেন ? '----- ' ওনার সঙ্গে কি ফোনে কথা হত আপনার হাসব্যান্ডের ? '------ ' কি জানি .... সেটা ঠিক বলতে পারব না ... আমি তো ওর পার্সোনাল কন্ট্যাক্টে ইন্টারভেন করতাম না ... '----- ' হমম্ ... মিসেস সেন আপনি কতবার দুবাই গেছেন ? 'মিসেস সেনগুপ্ত আকাশ থেকে পড়লেন ---- ' দু..বাই ! না না ... আমি দুবাই কি করতে যাব ? মিস্টার সিনহা একবার কি একটা কাজে একবার গিয়েছিল ওখানে ... কি কাজে ঠিক জানি ... ...
একটু পরে হরিপ্রসাদ আগরওয়ালের ফোন এল একটু পরে ।কলতান বলল, ' হ্যাঁ বলুন ... মিস্টার আগরওয়াল... এনি প্রবলেম ? '----- ' না আর কিছু হয়নি এখনও। তবে সব সময়ে ডর লাগে । কখন আবার ফোন আসে ...----- ' ঠিক আছে । আমি নজর রাখছি ... আপনি চিন্তা করবেন না । কোন কল এলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন ... '----- ' হ্যাঁ নিশ্চয়ই.... আপনার ভরোসাতেই তো আছি স্যার । আপনার পেমেন্টের কিছুটা দিতে পারলে শান্তি পেতাম ... '----- ' ওটার জন্য চিন্তা করবেন না । আমি ঠিক সময়ে বলব ...'------ ' আর একটা কথা স্যার .... আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সাধনা আমাকে ইয়াদ ... ...
পি এন আর স্যার মন দিয়ে একটা নামী কোম্পানির সিলিং ফ্যানের বিজ্ঞাপনের দশ শব্দের ক্যাচলাইন লিখছিলেন । তিন চারটে ক্যাচি ভিসুয়ালের সাজেশানও দিতে হবে । তার মধ্যে একটা বাছা হবে । ঠিক হয়েছে একজন মেল , একজন ফিমেল মডেলের সঙ্গে সইসাবুদ হয়ে গেছে । তারপরে তো আবার ফ্যান কোম্পানিতেফাইনাল লে আউট প্রেজেন্টেশনের ঝক্কি আছে । পি আর ডিপার্টমেন্টের কর্তাদের মনে না ধরলে আবার নতুন একটা প্রেজেন্টেশনের ঝক্কি আছে ।তিতির ডেস্কটপে চোখ লাগিয়ে বসে আছে । ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন অ্যাসেম্বল করছে । চিরশ্রী স্টুডিওতে । একবার পিএনআর আর তিতিরের কাছে এসে একপাক ঘুরে গেল ।পিএনআর কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বললেন , ... ...