চাঁদে কি আপনি কখনও জমি কিনবেন? না। সোনা-রুপো-তামা-প্লাটিনাম তুলে এনে আপনার ব্যাঙ্কের লকারে জমা করা হবে? না। চন্দ্রাভিযানে বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে? না। অন্যের মহাকাশযান আকাশে পাঠিয়ে কিছু রোজগার নিশ্চয়ই হয়, কিন্তু সে তো চন্দ্রযান না পাঠিয়েও হয়। এতে নতুন যা হবে, তা হল গুচ্ছের টাকা খরচা হবে, কে জানে ঠিকাদারিতে কার কপাল খুলবে। যারই খুলুক, আপনার না। কিন্তু তাতে কি, আপনার কাজ হাততালি দেওয়া, দেবেন, ব্যস।আপনি কি পাকিস্তানে গিয়ে, নিদেনপক্ষে কাশ্মীরে, কখনও জমি কিনবেন? না। ঘোড়াড্ডিমের একটা সীমান্তে দুই দেশের প্রচুর সৈন্য জড়ো করে, এদিক সেদিক সার্জিকাল-স্ট্রাইক করলে বাজার-দোকান-দেশ-বিদেশ কোথাও কি আপনাকে কেউ একটাও সেলাম ঠুকবে? না। গুচ্ছের ... ...
মুজতবা আলির পঞ্চতন্ত্রে বাংলার শাক্ত আর বৈষ্ণবদের 'বিবাদ' নিয়ে একটা চমৎকার চুটকি আছে। গপ্পোটা ছোট্টো। জনৈক শাক্তকে এক বৈষ্ণব বললেন, এই যে আপনারা বলি দেন, এতে পশুর ভিতরের 'শক্তি'টাকেই বলি দেওয়া হয় না কি? শুনে শাক্ত একটু হেসে বললেন, পশুটাকে যখন ধরে হাড়িকাঠে বাঁধা হয়, তখন আর তার 'শক্তি' কোথায়? পড়ে থাকে তো শুধু 'চৈতন্য'টুকু। ওটাকেই বলি দিই।গপ্পোটা ছোট্টো হলেও অসাধারণ, কারণ, এতে বাস্তবতাটা খুব সহজে ধরা পড়ে, যে, বাংলায় শাক্ত আর বৈষ্ণবদের তথাকথিত যে বিরোধ, তা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকদের ছদ্ম বিবাদের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। এমনই বিবাদ, যে, তা নিয়ে চুটকি তৈরি হয়, এবং এক সৈয়দের ব্যাটা সেটা ঝপ ... ...
উৎসব হয়েছে যখন, এবার পুরস্কার বিতরণ তো করতেই হবে। ফল-বেরোক না-বেরোক, দেখে নিন, কোন বিভাগে কে কী পেলেন। সেরা নায়ক। এই বিভাগে প্রবল প্রতিযোগিতা। কোনো নায়ক প্রশ্ন করলে চড় মারার মতো আলফা-মেল, কেউ দৌড়ে উসেইন ব্যালট। কিন্তু তার মধ্যেই পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন মহদেব মাটি। কাঁচা ব্যালট চিবিয়ে খেলেন, কোনো রকম নুন-লঙ্কা-তেল ছাড়াই। কীকরে খেলেন? খেতে কেমন? অত জানার আগ্রহ হলে বাংলা সিনেমার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন।সেরা নায়িকা।মিমি চক্রবর্তী। নিজে তৃণমূল সাংসদ হলে কী হবে, তাঁর তিন মামী তিনটি দল থেকে দাঁড়িয়েছিলেন পঞ্চায়েত ভোটে। একজন জিতেছেন, বাকি দুজন হেরে গেছেন, কিন্তু জয় থেকে গেছে পরিবারেই। গোটা রাজ্য যখন মেরে-ফেলব-কেটে-ফেলব করে চলেছে, তার ... ...
গণতন্ত্র কীসের উপর টিকে থাকে? মেরুকরণের উপরে? না। ধরুন, ক্লাসে দুটো ছেলে আছে, যাদের দুটো দল আছে, যারা মাঝেমধ্যে কোন্দলও করে থাকে। এবার, এই মারপিট কতদূর এগোবে, তর্কাতর্কি, ঝগড়া, হাতাহাতি, না খুনোখুনি, তার উপর নির্ভর করছে, ওটা গণতন্ত্র, না জঙ্গলের রাজত্ব। আমরা গণাতান্ত্রিক সমাজে মোটামুটি যা দেখে অভ্যস্ত, সেটা হল, ঝগড়াঝাঁটি হলে মোটামুটি সবাই একটা করে দল নিয়ে ফেলে। কিন্তু ধরুন, একটা ছেলে যদি আরেকজনের ঘাড়ে উঠে গলা টিপে ধরে, তখন দলমত-নির্বিশেষে দুই-পক্ষের ছেলেরাই 'এই কী হচ্ছে' বলে একযোগে ছাড়িয়ে দেয়। দলমত-নির্বিশেষে, এই যে পরিসর, এটাই গণতন্ত্রের সঙ্গে জঙ্গলের রাজত্বের তফাত। এইটাকেই বলে গণপরিসর বা জনসমাজ, মেরুকরণ সত্ত্বেও যারা ক্ষেত্রবিশেষে ... ...
সমাজমাধ্যম থেকে, এক। বেসরকারিভাবে যাকে শহর কলকাতার অন্তর্গত ভাবা হয়, সেরকম একটা জায়গাতেই এবার পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে। তার নাম নিউটাউন। কলকাতা গেলে আমি ওই অঞ্চলেই থাকি। খবর পেলাম, সেখানে পঞ্চায়েত ভোট এক অদ্ভুত কায়দায় হয়েছে। একাধিক লোক নিউটাউনের ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন। কে বা কারা, নিউটাউনে ভোট-বয়কটের ডাক দিয়েছিল এবার। ভোটাররা ভোট দিতে গেলে ভোট-বয়কটপন্থীরা রাস্তা আটকে জানিয়েছেন, ভোট দেওয়া যাবেনা। ভোট বয়কট চলছে। গণতন্ত্রের মহোৎসব। ভিডিওও পোস্ট করেছেন অন্তত একজন। আঙুল শাসক দলের দিকে। খোলা ভিডিও, কিন্তু দেখতে গেলে ফেসবুকে ঢুকতে হবে, তাই এখানে দেওয়া গেল, আলাদা করে আপলোড করে। শহর কলকাতারই যদি এই অবস্থা হয়, তো গহীন গ্রামবাংলার কী অবস্থা, আন্দাজ করা ... ...
এনএবিসি। গোটা উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলন। এনএবিসি ২০২৩র সাইটে যদি যান, দেখবেন, সবার উপরে নয় জন বঙ্গমনীষীর ছবি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, থেকে সত্যজিৎ রায়, যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয়, এবং সবাই মারা গেছেন। আর তার নিচে জ্যান্ত তিন মনীষীর ভিডিও। সেই তিন জীবিত মনীষী হলেন, সোনু নিগম, জাভেদ আলি এবং বৈশালী মাড়ে। হাস্যমুখে হিন্দি ও ইংরিজিতে বঙ্গসম্মেলনের বার্তা দিচ্ছেন। এঁরা কোথাকার বঙ্গসংস্কৃতির প্রতিভূ, আমাকে জিগাবেননা। উদ্যোক্তাদের জিগান। তাঁদের অগ্রাধিকার খুব স্পষ্ট। এবং শোনা যাচ্ছে এই বলিউডি ধামাকার ঠ্যালা এবং খরচা পোষাতে বাঙালি শিল্পীদের দুরছাই করা হয়েছে। সেটাও সত্য কিনা উদ্যোক্তাদের জিগান। অবশ্য অজয় চক্রবর্তীকে করা হয়েছে সেটা তো শিল্পী নিজেই লিখেছেন। বলিউডি সোনু-মোনুদের ওরকম ... ...
লেখার কিছু ছিলনা, লরেটো কলেজ , ইংলিস-মিডিয়াম ছাড়া ভর্তি নেবেনা বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সে তো সক্কলেই জানেন। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিটা পড়ে গা জ্বলে গেল 'ভার্নাকুলার' শব্দটার প্রয়োগে। শব্দটা ইংরিজি, বলাবাহুল্য ব্রিটিশরা চালু করেছিল। তারা আরেকটা শব্দও চালু করেছিল, নেটিভ। ইংরিজিতে নেটিভ মানে যাই হোক, ভারতে 'নেটিভ' মানে হল 'দেশীয় অসভ্য'। আর ভার্নাকুলার মানে হল নেটিভদের ভাষা, অর্থাৎ কিনা 'দেশীয় অসভ্যদের ভাষা'। আধুনিকতা-প্রগতির মোড়কে এই জাতপাত ... ...
হিন্দুবীর ও বীরাঙ্গনাদের জন্য চিন্তায় আমার ঘুম হয়না। কাল থেকে ভাবছি, এবার আস্ত একটা ইদ চলে গেল, কিন্তু ঢাকার রাস্তা গরুর রক্তে লাল, প্রতি বছরের ন্যায়, এবার এরকম কোনো ছবি দেখছিনা কেন। ঢাকার রাস্তা লাল না হলে পশ্চিমবাংলায় হিন্দুত্ব টিকবে কীকরে। ভেবে ঘুম হচ্ছিলনা, এমন সময় শান্তি। ফিডে চলে ছবি। কুরবানির রক্তে ঢাকার সেই লাল হয়ে যাওয়া রাস্তা, এত লাল, যে, একটা কাস্তে-হাতুড়ি মেরে দিলেই চিনের পতাকা হয়ে যেত। ধন্যবাদটা ঢাকার নিকাশী ব্যবস্থা, নাকি ফোটোশপ ... ...
খেলা আর যুদ্ধের মধ্যে ফারাক ক্রমশ কমে আসছে। খেলা আর যুদ্ধ, দুইই সরাসরি সম্প্রচার হয় অনেকদিনই হল। সমর্থকরা টিভিতে বসে খেলা দেখেন, অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়, টিভির ব্যবসা আর পপকর্নের বিক্রি বাড়ে। এরকম হাতে-গরম 'ডেভেলাপিং স্টোরি' আর রিয়েলিটি-শোর যুগলবন্দী খুঁজে পাওয়া কঠিন। এছাড়াও, 'খেলা এখন যুদ্ধ' স্লোগান তো দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। 'আগ্রাসী মনোভাব' এবং ভারি চমৎকার একটা শব্দবন্ধ, 'খুনে মানসিকতা' হরবখৎ খেলার উপর প্রয়োগ হচ্ছে। আগ্রাসী পৌরুষের পুজো সর্বত্র। ফেমিনিস্টদের মধ্যেও। এই নিয়ে ... ...
মীর একটা ব্যান্ড খুলেছেন, যার নাম ব্যান্ডেজ। তারা হিন্দি গান গাইবে। "হিন্দি গান কে শুনবে? বিহারিরা?" জিজ্ঞাসা করায় প্রবাল নামক একটি ছেলেকে তিনি বলেছেন, তুমি কোন (প্র)বাল, হিন্দি গান শোনোনা?এই খানে মীরের প্রচন্ড 'স্মার্টনেস' ছাড়াও, একটা জিনিস ভারি আকর্ষণীয়। প্রবল আত্মবিশ্বাস, যে, পৃথিবীতে একটা ধরণের জিনিসই হয়, ওটাই নিয়ম। যেমন মেয়েলি পুরুষদের নিয়ে খিল্লি করতে হয়। এক-আধটা খিল্লি কারো করার ইচ্ছে হতেই পারে, কোনো চাপ নেই, কিন্তু চাপ হল সেটাই নিয়ম ভাবায়। সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি আমতা-আমতা করছিলেন, ভাবখানা হল 'ও মা করবনা? ওটাই তো করার কথা'। পাড়ার মোড়ে সঙ্গমরত কুকুর-কুকুরীকে ইট মেরে, দেখবেন অনেকে খুবই আনন্দ পায়। তাদেরকে ... ...