এই ইন্টারনেট হয়েছে এক আপদ বিশেষ। শ্রদ্ধা ওয়ালকরের হত্যারহস্যের তথাকথিত সমাধান এক দিনও হয়েছে কিনা সন্দেহ, এর মধ্যেই নেট খুলে চাররকম ব্যাখ্যা দেখে ফেললাম।১। লাভ জিহাদ। অ্যাদ্দিন শুনেছিলাম, হিন্দুর মেয়েকে 'তুলে নিয়ে' মুসলমান বানিয়ে ফেললে লাভ-জিহাদ হয়। এখন শুনলাম খুনও আছে প্যাকেজে। ২। নিচু জাতের মেয়েকে উচ্চ জাতের খুন। মুসলমান হোক আর যাইহোক, ছেলেটার পদবী তো পুনাওয়ালা। অতএব তারা উচ্চঘর, কংসরাজের বংশধর। ৩। ডেটিং অ্যাপের ফল বা পুঁজিবাদী অবক্ষয়। এখন নাকি পুরুষ এবং মহিলারা ডেট করে একে অপরকে খুন করছেন। যখন ডেটিং অ্যাপ ছিলনা, তখন কি তাহলে খুন হতনা, না এখন অনার কিলিং হয়না? কে জানে। ৪। নারীবিদ্বেষ এবং 'টক্সিক মাসকুলিনিটি'। এইটা তো ... ...
এবার বিশ্বকাপে আমি মেসির সমর্থক। জিতিয়েই ছাড়ব। ফাঁকা আওয়াজ ভাববেন না। এর আগে শচীনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস করে ফল পেয়েছি। শচীনকে আমি ছোটো থেকে চিনি। মানে টিভিতে দেখে আর কি। আমি, সৌরভ আর শচীন মোটামুটি একই ব্যাচ। ওরা ক্রিকেট খেলে আর আমি খেলিনা। তা, আমি যখন কলেজে পড়ি, তখন সৌরভও পড়ে। আমি চাকরি খুঁজছি, সৌরভও রঞ্জি খেলছে। সবই একসঙ্গে। কেবল শচীন ব্যতিক্রম। আমার জ্ঞান হবার আগে থেকেই সে ক্রিকেট খেলে চলেছে। কপিলদেবের সঙ্গে খেলেছে, আজহার-জাদেজার সঙ্গে খেলেছে, সৌরভ দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলেছে। সৌরভও অবসর নিয়ে নিল, তখনও খেলে চলেছে। বাংলা মিডিয়াম গাঁয়ের স্কুলে এরকম কিছু ছেলে থাকত, যারা বাবার সঙ্গেও পড়েছে, ছেলের সঙ্গেও। ... ...
১৯৯৬ সালে ভারত যখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ইডেনে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছিল, আমি তখন সিটিসির বাসে চড়ে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে শিবপুরে ফিরছিলাম। দিনরাতের খেলা, শুরুটা দেখে বেরিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কা শুরুতে ব্যাট করেছিল। জয়সূর্য সেবার বিশ্বকাপ কাঁপাচ্ছেন। কিন্তু সেদিন দুই ওপেনারই ঝপ করে আউট। তাতে শ্রীলঙ্কাকে আটকানো যায়নি। অরবিন্দ ডিসিলভা দুর্ধর্ষ খেলেছিলেন। শ-আড়াই রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। ভালোই রান।আমি যখন ফিরছিলাম, ভারত ব্যাট করতে নেমেছে। ইডেনে খেলা হলে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে কেউ দেখেছেন কিনা জানিনা। বেশি কেউ দেখেননি, নিশ্চিত, কারণ খেলা থাকলে লোকে হয় মাঠে, কিংবা টিভির সামনে থাকে। সেদিনও তাইই ছিল। বাসে বোধহয় শুধু ড্রাইভার, কন্ডাক্টার, আর আমি। ইডেনের সব ফ্লাডলাইট জ্বলছে, অপূর্ব লাগছে ... ...
কোথায় একটা পড়লাম, 'কবি তার কাঙ্খিত নারীকে কখনই পায়না। পেলে বাজারের ফর্দ লিখত'। এইরকম একটা মিম-জাতীয় কিছু চলছে খুব। ফলে আমাকে একটা প্রতিবাদপত্র লিখতে হচ্ছে। কারণ, এরকম অপপ্রচার বাজারে ঘুরতে দেওয়া ঠিক না। আমি বাজি রেখে বলতে পারি, কবি তার 'কাঙ্খিত' নারীকে আদৌ চায়-টায় না। হিট কবিদের হিট কবিতাগুলোই নিন। ধরুন জীবনানন্দ দাশ। তিনি বনলতা সেনকে নিয়ে কী লিখেছেন? লিখেছেন, পাখির নীড়ের মতো চোখ। আপনি যদি কখনও কোনো পাখির বাসা দেখে থাকেন, তো জানবেন, সে অতি বিশ্রী ব্যাপার। যদি নাও দেখে থাকেন, তো 'মাথা পাখির বাসা হয়ে আছে' মানে কী তো অবশ্যই জানবেন। সেরকম চোখ কারো কামনার বিষয় হতেই পারেনা। তার ... ...
সেদিনই একটা মন্তব্যে 'এজ শেমিং' শব্দটা বাংলায় লিখতে গিয়ে জুতসই প্রতিশব্দ বানাতে পারলাম না। 'বয়সজনিত বদনাম', খুবই নরম একটা ব্যাপার। শেমিং মানে কী? মুখে চুনকালি মাখিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে উল্টো গাধায় চড়িয়ে গ্রাম থেকে দূর করে দেওয়া। এতটা তো লেখা যায়না, দুই-শব্দে সেই অনুভূতিটাই এলনা। তারপরই হিন্দি সিনেমায় কেমন বলবে ভাবতে গিয়ে একটা বলিউডি কাটিং শব্দ মাথায় এসে খট করে উপস্থিত হল। 'উমরি বদনামী'। উফ কী জোশ। শুনলেই মনে হয় ইউপি থেকে রোমিও স্কোয়াড এসে বলছে, 'বুড়ো বয়সে এত শখ কীসের অ্যাঁ?' তারপরই পরখ করে দেখার জন্য আরেকটা জিনিস ভাবলাম। 'নেমিং অ্যান্ড শেমিং' কী হবে? দিব্যজ্ঞানের মতো মাথায় এলো 'নাম করো ... ...
ব্যবসা করা অত্যন্ত সোজা জিনিস। ১। সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিন।২। সেই টাকায় শিল্প বানান।৩। ব্যাংককে টাকা শোধ দেবেননা। মকুব করে দিতে বলুন।৪। এইভাবে বিনা বিনিয়োগেই অপর্যাপ্ত মুনাফা করুন। সঙ্গে উদ্যোগী সমাজসেবী হিসেবে নাম কিনুন।ইয়ার্কি ভাবছেন? ব্যাংককে দিয়ে ঋণ মকুব করানো অসম্ভব মনে করছেন? হোমলোন শোধ দিতে দিতে কি আপনার জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে গেছে? একটা কিস্তি বাদ পড়লেই বাড়িতে গুন্ডা আসবে বলে ভয়ে কাঁপছেন? ওই জন্যই আপনার দ্বারা কিছু হলনা। ওই জন্যই দুনিয়া জুড়ে বাঙালিকে অলস বলে। এত হাবিজাবি না ভেবে যদি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন, তাহলেই দেখতে পেতেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই। এর আধখানা করতে পারলেও লন্ডনে গাড়ি-বাড়ি হত, নীরব ... ...
হাওড়া থেকে ৫৫ নম্বর বাস যেত বিই কলেজে। সেই বাসের গতি নিয়ে বিই কলেজে নব্বইয়ের দশকে অনেক মিথ চালু ছিল। তার মধ্যে একটা এই, যে, একদিন এক ৫৫-নম্বর, হাওড়া স্টেশনে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। যেমন থাকে। ড্রাইভার নেমে পাশের দোকানে চা-বিড়ি খেতে গেছে, কন্ডাক্টার হেল্পাররা তারস্বরে ময়দান-ট্রামডিপো-অলকা-বিক্কলেজ-বিগার্ডেন বলে হাঁকছে। এমন সময় কন্ডাক্টারের নজরে পড়ল, এক থুত্থুড়ে বুড়ি বাসের পিছন থেকে হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। কন্ডাক্টারের অঢেল সময় এবং দয়ালু মন। জিজ্ঞাসা করল, বুড়িমা, যাবেন কোথায়? বুড়িঃ একটু বিগার্ডেন যাব বাবা। কন্ডাক্টারঃ বাসে উঠে পড়ুন। বুড়িঃ ছেড়ে দাও বাবা। কন্ডাক্টরঃ ভাড়া লাগবেনা।বুড়িঃ আজ নয় বাবা। আরেকদিন। আজ একটু তাড়া আছে।আশি-নব্বইয়ের বোম্বে সিনেমার কথা এলেই, ... ...
ফুর্তি। এইমাত্র খবর পেলাম, ব্রাজিলে বলসোনারো হেরে গেছেন। বামদিকের লুলা আসছেন, যদিনা অবশ্য এর মধ্যে কু-টু হয়ে যায়। সাও পাওলোর রাস্তায় উৎসব চলছে। মানে, টিভি আর ইন্টারনেটে যা দেখলাম।বলসোনারোর নাম জানেননা, এমন এই বাজারে কেউ নেই। দক্ষিণপন্থী ছাপ্পান্ন-ইঞ্চিদের মধ্যে মোদিবাবুর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবেন এই ভদ্রলোক। ভালোদিন এর খোয়াব দেখিয়ে জিতেছিলেন। তারপর ' কালাধন' আর 'দুর্নীতি'র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি বলে খপাখপ বিরোধীদের জেলে ভরছিলেন। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি লুলাকেও দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দী করেছিলেন। এ ছাড়াও, কোভিড মোকাবিলায় প্রচন্ড দক্ষতা দেখান, এবং দেশের নির্বাচনের পদ্ধতিই বদলে দেবেন বলে দাবী করেছিলেন।যা হোক, এসব সবাই জানেন। প্রবন্ধ লেখার মানে নেই। ফুর্তির ব্যাপার হল এই, যে, একে ... ...
আমি হাওয়া দেখিনি। হাওয়া নিয়ে প্রবল হাওয়া বাংলা ভাষাটার জন্য খুবই ভালো, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা করে আনন্দদায়ক কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। "বাংলা সিনেমার এখনও দর্শক আছে" এটা কোনো কথাই না, এটা প্রমাণ করে কলার তোলার কোনো মানেই নেই। যদ্দিন না বাংলা ভাষাটা বাংলার পশ্চিমদিক থেকে উঠে যাচ্ছে, ততদিন বাংলা সিনেমার দর্শক থাকবে। কথা হল, পশ্চিমবঙ্গবাসী মূলধারার সিনেমানির্মাতারা দর্শকের জন্য কিছু কি দিচ্ছেন? সিনেমায় আমি একটু ধীরে চলি, ওটিটিতে না এলে কিছুই দেখা হয়না, ফলে গত ছমাসের রিলিজগুলো দেখিনি। অপরাজিত সমেত। তা বাদে, ওটিটিতে যা দেখেছি, সে অতি ভয়াবহ। নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন বাংলা সিরিজ বা সিনেমার পিছনে পয়সা ঢালেনা, বাঙালিদের তুলে ... ...
আজ আমার হরিদাসীর কথা মনে পড়ল। হরিদাসী কোনো নারী নন, 'আমি তোর হরিদাসী' একটা গান। সেটার কথা মনে পড়ল একটা খবর দেখে। কর্ণাটকে কাজে গিয়ে বাংলাদেশী সন্দেহে গ্রেপ্তার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পলাশ অধিকারি, স্ত্রী শুক্লা অধিকারি, এবং তাঁদের শিশুপুত্র। এর সঙ্গে হরিদাসীর কি? খুব জটিল কিছু না। মনে পড়ার কারণ হল মিলে যাওয়া। গানের একটা লাইন ছিল, "দিল্লি কিংবা ব্যাঙ্গালোরে / বাংলা বললে হাজতে পোরে / থাকিস যদি ঝুপড়ি ঘরে / ধরবে পুলিশ ভেবে বাংলাদেশী।" সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবার কারণে। আর কিছু না। ওই একই সঙ্গে আরও একটা জিনিস মনে পড়ে গেল। গত বেশ ক'বছর ধরে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদবিরোধী একগুচ্ছ গান-টান ... ...