ইন্দ্রাণীদি ফেসবুকে নেই। অর্থাৎ, এই নশ্বর পৃথিবীতেই নেই। যেখানে মানুষে-মানুষে যোগাযোগের পোশাকি নাম নেট-ওয়ার্কিং। যেখানে আলোয় ভেসে থাকার জন্য সর্বদা আকুলি-বিকুলির নাম আলোকপ্রাপ্তি। ইন্দ্রাণীদি এসবের বাইরে। তাঁর সাধনা নৈঃশব্দের। বাক্য নিক্তি মেপে। আখ্যান ছেনি হাতুড়ি দিয়ে কোঁদা। সেও এক ম্যাজিক, তবে অন্ধকারের। যেখানে পৃথিবীর কিমাকার ডায়নামোর পরে মহীনের ঘোড়ারা ঘাস খেতে আসে, এ সেসব এলাকার কাহিনী। হুড়োহুড়ি, গুঁতোগুঁতিতে ইন্দ্রাণীদি নেই। তার বাইরের যে অন্ধকার ইন্দ্রাণীদির ম্যাজিক সেই অঞ্চলের। ইন্দ্রাণীদির প্রথম গল্পের বইয়ের নাম ছিল 'পাড়াতুতো চাঁদ'। যা দেখিয়ে দিয়েছে, নিঃস্তব্ধতারও কিছু অনুসারী আছেন। হয়তো সংখ্যায় বেশিই আছেন, দেখা যায়না, কারণ তাঁরাও নিঃস্তব্ধ। "আমি নিজেকে পড়ুয়া বলে মনে করি, কিন্তু ইন্দ্রাণীর খোঁজ ... ...
বেনেগাল লিখেছেন, "বোম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবসময়েই ভেবেছে, সত্যজিৎ রায় ভারতের জন্য ঠিক কাজ করছেননা। রাজকাপুরের সঙ্গে তাঁর একবার বিরাট ঝামেলা হয়েছিল। রাজ কাপুরের সিনেমা 'জাগতে রহো' পরিচালনা করেছিলেন বাংলার বিখ্যাত নাট্যপরিচালক শম্ভূ মিত্র। সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের যা উচ্চতা, নাটকে তিনি তার সমানই ছিলেন। শম্ভূ সিনেমাটা বানিয়েছিলেন, এবং ১৯৬৪তে কারলভি ভেরি উৎসবে সেটা রাজকাপুরকে সেটা একটা পুরষ্কারও জিতিয়ে দেয়। ওই একই বছর ভেনিসে অপরাজিত জেতে স্বর্ণ সিংহ। তারপর রাজকাপুর এবং সত্যজিৎ রায়ের কোনো একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়। সত্যজিৎ বলেন, বাংলা সিনেমার জন্য এটা একটা বিরাট সম্মান। রাজ কাপুর বলেন, 'বাংলা কেন, আপনি ভারতীয় না? আপনি কেন বলেন, আপনি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালক?' সত্যজিৎ বলেন, ... ...
আজকে সোশাল মিডিয়ায় একটা কান্ড দেখে চমকে গেলাম। একটি ছেলে, বৃত্তে মোটামুটিভাবে পরিচিত, একটি রাজনৈতিক প্রচারাভিযানেও যার সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখেছি, তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এসেছে। এক নয়, একাধিক। এবং রীতিমতো হিংসাত্মক নিগ্রহ। ছেলেটির নাম করছিনা, কারণ, এসব ব্যাপারে আমার অবস্থান খুব স্পষ্ট। একদিকে যেমন অভিযোগ আসা মাত্রই কেউই অপরাধী হয়ে যায়না, ফলত সে নিয়ে খাপ বসানো আমি অনুচিত বোধ করি। কিন্তু একই সঙ্গে, আমার ব্যক্তিগত কিছু বিচারবুদ্ধিও কাজ করে। অভিযোগের ধরণ, এবং গুরুত্ব অনুযায়ী, আমি সিদ্ধান্ত নিই, অভিযুক্তের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাজ করব কিনা। একাধিক নিগ্রহের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্তটি জালি জানা থাকায়, বা মনে হবার যথেষ্ট কারণ থাকায়, তাদের সঙ্গে ... ...
কাশী থেকে কলকাতা। বৈষ্ণবের খঞ্জনি থেকে জিমি হেনড্রিক্স। কেকাবউদি থেকে স্বর্ণকেশী ম্যাডলিন। মলয় রায়চৌধুরির এই লেখা, এক অন্য পৃথিবীর উড়ান, যা চেনা হলেও দূরবর্তী। মানুষের হাতে ধরা থাকে লাটাই, কিন্তু ঘুড়ি ওড়ে অন্য কোনো আকাশে। যা কিছুটা চেনা, কিছুটা মেঘের কাছাকাছি। মলয় রায়চৌধুরির লেখালিখি তো এরকমই। গত পঞ্চাশ-টঞ্চাশ বছর ধরে। পদ্যের কথা আপাতত বাদই থাক। কিন্তু বাংলা গদ্য যখন পুজাবার্ষিকী থেকে পুজাবার্ষিকীতে সরল থেকে সরলতর হয়ে ক্রমে টিভি-সিরিয়ালে পরিণত হচ্ছে, প্যান্ডেল হপিং আর উপন্যাসপাঠের মধ্যে তফাত ক্রমশ মুছে আসছে, তখন চিরতরুণ মলয় রায়চৌধুরি হাঁটছেন উল্টোদিকে। উল্টে দিচ্ছেন চেনা ছক, বাঁকিয়ে দিচ্ছেন সরলরেখা। অমৃতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে অমলেট। সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার ... ...
বল বল বল সবেঘেউ ঘেউ ঘেউ রবেবনলতা সেনপ্লিজ জানাবেনআবার ফিরছ কবে? যত গালি দিক গুরু ও চাঁড়ালেফিরে এসে শুধু দুহাত বাড়ালেতোমাকে ভীষণ বকব আড়ালেযখন সন্ধ্যা হবে। আবার কখনও কবেতেমনই সন্ধ্যা হবেবনলতা সেনপ্লিজ জানাবেনফিরে আসছেন কবে? ** রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আমি প্যারডি করিনা। এটাও করবনা। কিন্তু মাথায় ঘুরঘুর করলে কী করব। লিখে ফেললাম। :-( ... ...
কাবুল থেকে ফিরেছেন এক বাঙালি ভদ্রলোক। ইশকুলে পড়াতেন। ফিরে আসার পর টিভিতে অনেক কিছু বলেছেন। এক কথায় যার মর্মার্থ হল তালিবান জমানা যতটা ভয়াবহ ভাবা হচ্ছে তা নয়। এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। হবারই কথা। কারণ আমরা কেউই কদাচ কাবুল যাইনি। আমাদের ভাই-বেরাদর-ছোটোমেসো-বড়পিসি কেউ আফগানিস্তানে থাকেনা। আমরা মূলত পরের মুখে ঝাল খাচ্ছি, আর দূর থেকে লিংক ছোঁড়াছুঁড়ি করে বিপ্লব কিংবা সলিডারিটি দেখাচ্ছি। আমি তো ব্যক্তিগতভাবে মুজতবা আলি বা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এই প্রথম একজন বঙ্গসন্তানের নাম শুনলাম যিনি আফগানিস্তান গেছেন। ফলে উত্তেজনা স্বাভাবিক। সমস্যা হচ্ছে, ভদ্রলোকের যে ভঙ্গীতে সমালোচনা হচ্ছে, সেটা নিয়ে। ওঁর বক্তব্যে কী আছে? উনি বলেছেন, উনি কাবুলে বিশেষ ... ...
এই সেই বাড়ি, যেখানে ডায়পার পরে রবীন্দ্রনাথ হামাগুড়ি দিয়ে বেড়িয়েছেন চত্বর থেকে চত্বরে। হাঁটু ছড়ে গেছে, ট্রাইসেপ টনটন করেছে, বেবি ফ্যাট ঝরে গেছে। কিন্তু কালো বলে কেউ তাঁকে কোলে তোলেনি। বড় হয়ে ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে রবীন্দ্রনাথ বাড়ি ছেড়েছিলেন। খালি পায়ে হেঁটে চলে গিয়েছিলেন শিয়ালদহে, কাটিয়েছেন উদ্বাস্তু জীবন। তখন জায়গাটাকে শিলাইদহ বলা হত। বাংলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথই প্রথম উদ্বাস্তু। এক নম্বর প্লাটফর্মে বসে মনের সমস্ত ক্ষোভ উজাড় করে রবীন্দ্রনাথ লেখেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস গোরা। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, যে, ফরসা হলেই ছহী হিন্দু হওয়া যায়না। যতই পুজো কর, আচারবিচারের ভড়ং কর, শেষমেশ জানতে পারবে তুমি বিধর্মী। এখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আরেক কালোপুরুষের ... ...
সব মরণ নয় সমান। আফগানিস্তান নিয়ে দুনিয়া চিড়বিড়িয়ে অস্থির, ওদিকে শিশিরের শব্দের মতো চুপচাপ এসব প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলতেই থাকে সৌদি টৌদিতে। ২০১৬ তেই সেখানে শুভ নববর্ষের সূচনা হয়েছিল একসঙ্গে জনা পঞ্চাশ লোকের গণজবাই দিয়ে। এদের মধ্যে জনা চারেককে মারা হয়েছিল গুলি করে, বাকিদের স্রেফ মুন্ডু কেটে খাল্লাস। খতমের লিস্টিতে এক দিকে যেমন রয়েছেন 'সন্ত্রাসবাদী'রা, অন্যদিকে আছেন জনপ্রিয় শিয়া নেতা আল-নিমর, যিনি আর কিছু না, স্রেফ সংখ্যালঘু শিয়াদের সমানাধিকার চেয়েছিলেন। না, তালিবানদের কাণ্ড না, রীতিমত সৌদি আদালতের নির্দেশেই এই মুন্ডু কাটার কারবার।আঁতকে ওঠার কিছু নেই, ও দেশে ক্ষতিকর লোকেদের ধরে প্রকাশ্যে মুন্ডু কেটে নেওয়াই দস্তুর। এই পবিত্র কাজের জন্য দেশের রাজধানীতে রয়েছে ... ...
দিল্লি এবং লাগোয়া অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন তুঙ্গে। হরিয়ানার সমস্ত খাপ পঞ্চায়েতগুলি দিল্লির কৃষক বিক্ষোভকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে। অনেকগুলি খাপ পঞ্চায়েত সরাসরি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করারও ডাক দিয়েছে। এর মধ্যে পাঞ্জাবের কৃষকদের আন্দোলনে খালিস্তানি স্লোগান দেবার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি খুব সম্ভবত বিজেপির আইটিসেলের প্রচার। কারণ যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল, বা বলা ভাল ভাইরাল করা হয়েছিল, সেটি অন্তত বছরখানেক আগের ব্রিটেনের ভিডিও। আইটি সেলের কারবার নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, কিন্তু এর মধ্যে পাঞ্জাবি অভিনেতা দীপ সিধু, যিনি আন্দোলনের মুখও বটে, একটি বিস্ফোরক কান্ড ঘটিয়েছেন। আন্দোলনে খালিস্তান যোগ থাকার অভিযোগ ওঠায় বরখা দত্ত, যিনি কারগিলের পর থেকেই প্রচন্ড 'জাতিয়তাবাদী' হয়ে উঠেছেন, দীপের একটি সাক্ষাৎকার ... ...
এইসব সময়ে রাজ কাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা যাবার পর বাংলায় টানা শোকজ্ঞাপন চলছে। পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলায়, এপার এবং ওপারে। সামাজিক মাধ্যমে, গণমাধ্যমে। কিন্তু তথাকথিত সর্বভারতীয় মাধ্যমে তার কণামাত্র নেই। কোনো খবর নেই, বলা যাবেনা হয়তো, এক-আধ লাইন কোথাও বলা হয়ে থাকতেই পারে, কে আর টানা টিভি দেখে, বা সমস্ত চ্যীনেল দেখে। কিন্তু মোটের উপর অভ্রংলিহ নীরবতা। যেন কোথাও কিচ্ছু হয়নি। কোনো মহীরূহ পতন? বালাই ষাট। এইসব সময়েই রাজকাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সর্বভারতীয় মাধ্যমের অশ্রুজল ইত্যাদি। সেই আশির দশক থেকে ২০১২। কিছু বদলায়নি। সর্বভারতীয় টিভি দেখে মনে হয়েছে, এঁরা ছিলেন 'ভারতীয়' সিনেমার রূপকার। ... ...