শঙ্খ ঘোষ নেই, বিশ্বাস হয়না। ঠিক যেমন বিশ্বাস হয়না, রবীন্দ্রনাথ নেই, বা ভারতচন্দ্র নেই। কারণ না থাকাটা অসম্ভব। এপিজেনেটিক্সই বলুন, আর মিউটেশন, মোদ্দা কথা হল, এঁরা বাঙালির হাড়-মজ্জা ছাড়িয়ে ডিএনএ তে ঢুকে গেছেন। আর বার করা সম্ভব না। এখনও কারো অপ্রাপ্তির আফশোষ দেখলে, আমরা তাকে রবীন্দ্রপংক্তি দিয়ে সান্ত্বনা দিই - নদীর এপার কহে... ইত্যাদি, কারও ঢক্কানিনাদ দেখলে বলি, মনে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির। আমাদের সন্তানের জন্য "যেন থাকে দুধে-ভাতে", আর "আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক" বলে প্রার্থনা মিলে-মিশে যায়। আমাদের শহরের মুখ আজও ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। আমরা আজও তোমাকে ভীষণ বকি আড়ালে, আর মাঝে মাঝে আফশোষ করি, তুমি আর নেই ... ...
১৯৭৪। দাদা তখন নবম শ্রেণি। হেঁটেই স্কুলে যায়, কারণ সাইকেল পুলিশ কেড়ে নিয়েছে। এস এফ আই করতো। তিনদিনের ছাত্র ধর্মঘট করতে গেছিল। সস্তায় খাতা আর কেরোসিনের দাবিতে। স্কুলে ধর্মঘট করার অপরাধে সাইকেল কেড়ে নিয়েছে। সেই সাইকেল পরে উদ্ধার হয়। ১৯৭৬-এ। বাবা বলতেন, থানায় যত সিগারেট খাওয়াতে হয়েছে, সাইকেলের দাম তার অর্ধেক।পুলিশকে নিয়ে নানা গল্প আছে। ওই সময় এক বড় দারোগা চাকরি করতে আসেন আমাদের থানায়। তিনি নাকি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। তোতলামি থাকায় ছেলে মেয়েরা হাসাহাসি করত। চাকরি ছেড়ে দেন। দিয়ে পুলিশে ঢোকেন। দারোগা হন। তাঁকে নিয়ে প্রচুর মজার গল্প ছিল। একবার সিরাজ বলে এক লড়াকু সিপিএম নেতাকে জমির মাঝ ... ...
পূর্ব ইউরোপ। কদিন ধরেই আমার ফেসবুকে পোল্যান্ডের একটা শহরের ছবি দেখছি, ক্র্যাকভ, যা উস্কে দিচ্ছে নানারকম স্মৃতি। না, পোল্যান্ড কখনও যাইনি, এমনকি শহরটার নামের উচ্চারণও ঠিক করে জানিনা। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায়না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে রুশ উপন্যাস "বসন্তের সতেরোটি মুহূর্ত" পড়েছিলাম, সেই সুদূর কৈশোরে, যা শুরু হচ্ছে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে ক্র্যাকভ শহরের পতনের দিন থেকে। ওটাই প্রথম লাইন, কারণ শহরটা নাৎসি অধিকৃত পোল্যান্ডের রাজধানী ছিল। সেই সপ্তাহেই সোভিয়েত বাহিনী মুক্ত করে আউশভিৎস, ম্যাপ না দেখেও জানি, সেটা কাছেপিঠেই। সোভিয়েতরা অবশ্য তখনও জানতনা, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প কী জিনিস, অন্তত ইতিহাস বইয়ে তাইই আছে। ওদিক থেকে আরও একটু পশ্চিমে গেলে প্রাহা। চেক ... ...
কাবলিদাকে নিয়ে লেখা খুব শক্ত। স্মৃতি-টিতি সব জড়িয়ে যায়। ভবানীপুরের বাড়িটার কথা মনে পড়ে। একতলায় দরজা। যেটায় বেল দিলে কাবলিদা নাকি উপর থেকে দড়ি টেনে দরজা খুলে দিত। নাকি বললাম, কারণ আমাকে কখনও দেয়নি। আমি যেতাম মূলত হুল্লোড়ের দিনে। যাবার আগে সবসময়েই সেখানে অন্য কেউ হাজির হত। দরজা খোলাই থাকত। গুরুর ভাট হত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায়। সেখানে নানা ধাপে নানা ঘর। কাবলিদার বাড়ি বললেই, মাঝখানে বসার জায়গাটা মনে পড়ে, যেখানে সবাই দল পাকিয়ে বসত। আর মনে পড়ে গান। এমন একটাও ভাট হয়নি ওই বাড়িতে, যেখানে একটাও গান গাইনি। একটা তো অতি অল্প বললাম, অন্তত দশটার কমে থেমেছি বলে মনে ... ...
টুকরো ১। কাজের বাড়ির বাইরে পা দিয়ে শ্যামা এক সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে যায় । বন্দির দশা কাটলে যেমন হয়। ও জানে বৌদিরা ঠিক কী চায়। তাই কাজের বাড়িতে প্রবেশের আগে শ্যামা গায়ে আঁচল দিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে খুলে রাখে পায়জোড়। ছমছম শব্দ করে বাড়ির মধ্যে চলাফেরা করা কোনো বৌদিই পছন্দ করে না। এবং পায়জোড়ের সঙ্গে সঙ্গে ও খুলে রাখে ওর যাবতীয় ছমকছল্লোপন, ছয়ল ছবিলি চলন, ভ্রূভঙ্গিমা, নখরাবাজি। বাসন মাজতে মাজতে ছেলের স্কুলের কথা বলে । ছেলের মাস্টারের কথা বলে। সবজি ধুতে ধুতে শাশুড়ির পিন্ডি চটকায়। ঘর মুছতে মুছতে পাশের বাড়ির বৌদি বা কাকিমার কিপটেমি বা বেহুদা হরকত আলোচিত হয়। ও ... ...
ইন্দ্রাণীর গল্পে পোষা কুকুরের নাম কালীচরণ। ঠিক পোষা না, পোষ্যপ্রতিম। পড়ে আমার অলম্বুশের কথা মনে পড়ল। অলম্বুশ আমার খরগোশ ছিল। কদিন আগে মারা গেছে। কবে ঠিক জানিনা। শীত পড়ে গেছে, পিছনের বাগানে কে আর যায়। বাড়িতে কেউ ছিলওনা, একদিন দরজা খুলে দেখি, অলম্বুশ পাশ করে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে না। মৃত্যুর একটা ভঙ্গী আছে, যা দেখলেই বোঝা যায়, ঘুম নয়, নিয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা, সেইভাবে। কবে থেকে কে জানে। সেদিনও হতে পারে, আগেরদিনও, বা এক সপ্তাহ। ঠান্ডায় শরীর পচেনা এখানে।অলম্বুশ অবশ্য পোষা না। এমনকি প্রিয় কেউও না। বরং জ্বালিয়েছে প্রচুর। পিছনের বাগানে গরমকালে সব্জি-টব্জি ফলানো হত। টমেটো, কুমড়ো, আর কী-কীসব। আমি ঠিক ... ...
স্ট্যান স্বামী ঠিক কে, আমাদের আর মনে নেই। বিশেষ কেউ না, এই মোদী জমানায় বহু লোকই তো বন্দী ছিলেন আছেন ও থাকবেন, তাঁদের মধ্যে একজন। ভীমা-কোরেগাঁও নামক এক ভীষণ দেশবিরোধী-সন্ত্রাসবাদী-মাওবাদী, আরও কীকী যেন ষড়যন্ত্রে আরও অনেকের সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও অনেকের মতো স্ট্যান স্বামীর কম্পিউটারেও পাওয়া যায় মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত স্ট্যান স্বামী হাত কেপে যেত বলে জল খেতে পারতেন না। তাই জেলখানায় তিনি স্ট্র চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁকে স্ট্র দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবং আদালতে বিচারপতি আইন মেনে স্ট্র দেওয়া যায় কিনা তা বোঝার জন্য দিনের পর দিন মামলা পিছিয়ে দিতে ... ...
শ্রী অরিজিৎ সিং এর গাওয়া রামপ্রসাদী শুনলাম। এমনিতে কিছু বলার নেই, সুরেলা গলা, নড়েচড়েও খুবই ভাল, কিন্তু গান শুনে এবং দেখে মনে হল, রামপ্রসাদী নয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্থেম হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেল, প্রথমেই সবুজ ধান্যক্ষেত্র, যেখানে চাষবাস হয়েছে। তারপর আলপথ দিয়ে হেঁটে এলেন নায়ক ও নায়িকা, যেমন সূর্যমুখী ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে একদা আসতেন শারুক্ষান। তবে পিছনে লারেলাপ্পা নয়, বাজছে সংস্কৃতিমনস্ক কৃষিকাজ-সম্পর্কিত গান, "মন রে কৃষিকাজ জানোনা"। অর্থাৎ, ক্ষেত সবুজ হলে কী হবে, অশিক্ষার ফলে চাষবাস কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছেনা। এই না-জানায় নায়ক-নায়িকা খুশিও একেবারেই না। বরং ব্যর্থ মাস্টারের মতোই খুবই তিতিবিরক্ত। চাষবাসের নামে হচ্ছে টা কী? সঙ্গে আছে আফশোষ, একটু ... ...
লাতিন আমেরিকান রূপকথার জন্ম এক বাঙালির হাতে। সে অনেক কাল আগের কথা। তখন বাঙালিরা তারকা হত, আর আর্জেন্তিনিয়ানরা হত ভক্ত। এরকম একজন বাঙালি তারকার নাম ছিল রবীন্দ্রনাথ, আর তাঁর এক বিখ্যাত আর্জেন্তিনিয় মরশুমী ভক্তের নাম ছিল ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো। তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত জয়ধ্বনি দিয়েও কিছুতেই রবীন্দ্রনাথের মন পাননা। একদিন রেগেমেগে কথাটা বলেই ফেললেন। তখন বুয়েনস আইরেস থেকে জাহাজে করে তাঁরা রিও এসেছেন। রিওর এক পার্কে সেদিন রবীন্দ্রনাথ আর এক বাঙালির সঙ্গে বসে, সামনে একটি শিশু খেলা করছে। শিশুটি একটি বল ছুঁড়ল, সোজা ওকাম্পোর গায়ে। যেন বলের উপরেই রাগ, ওকাম্পো দুম করে তাতে এক লাথি কষিয়ে, রবীন্দ্রনাথকে সোজাসুজি বললেন, "নাথ, এক ... ...
কলকাতা চলচ্চিত্রোৎসবের উদ্বোধন দেখলাম। উৎসবের চেয়ারাধিকারী রাজ চক্কোত্তি এক নিঃশ্বাসে বললেন রেট্রোস্পেকটিভে এবার মহান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের 'দিওয়ার' এবং 'কালা পাথর' সহ চারটি ছবি, এবং মহান পরিচালক জাঁ লুক গোদারের চারটি ছবি দেখানো হবে। প্রথমে ভাবছিলাম, মুড়ি-মুড়কি-কোহিনুরের একই দর, এইরকম উত্তরাধুনিকতার চর্চা হচ্ছে, কিন্তু পরে বোঝা গেল, তা নয়, আসলে এটি একটি বলিউডি বিচিত্রানুষ্ঠান, যার দুটি কাজ, এক শাহরুক খান এবং অমিতাভ বচ্চনকে উচ্চে তুলে ধরা, এবং দুই, শাহরুকের নতুন সিনেমার প্রচারে সাহায্য করা। প্রথম থেকে শেষ অবধি এই দুই বলিউডি নায়কের জয়ধ্বনি শোনা গেল। সঞ্চালিকা ও সঞ্চালক, সারাক্ষণ এই দুজনের কথা বলে গেলেন। একবার বাদশা, একবার পাঠান। একবার বাংলার ... ...