শারুকের নতুন রিলিজ হওয়া গান নিয়ে হেবি হইচই দেখে, হুজুগে বাঙালি, আমিও শুনতে গেলাম। গিয়ে দেখি প্রথমেই চমক। সূর্যকরোজ্জ্বল এক সমুদ্র সৈকতে সবাই ধাঁইধপাধাপ হেবি নাচছে। সঙ্গে স্প্যানিশ গান। "এন এস্তা নোচে লা ভেদা এস কমপ্লেতা"। অর্থাৎ কিনা, "এই রাতে জীবন হল সম্পূর্ণ"। সেটা ওঁরা গাইছেন ফটফটে দিনের আলোয়। ভাবুন একবার, মালা সিনহা ভরদুপুরে ছাদে উঠে সূর্যের দিকে তাকিয়ে গাইছেন, "নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে"। কিংবা তাপস পাল, রোদে পুড়ে ঘামতে ঘামতে গান ধরেছেন, "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে"। লোকে ধুইয়ে দিত একদম। কিন্তু এ হল বলিউডের সর্বশ্রী শারুক। তায় স্প্যানিশ। পুকুর চুরি, দিনকে রাত, সব চলবে।আর এই স্প্যানিশের ... ...
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বড় ম্যাচের প্রাক্কালে অনভিপ্রেত এক বিতর্কে আক্রান্ত আর্জেন্তিনা শিবির। সমস্যা গুরুতর, আর্জেন্তিনা দেশটার নাম যে ঠিক কী, সেটাই জানা যাচ্ছেনা। আমরা সবাই জানি, যে, স্প্যানিশ-ভাষীরা হাসি পেলেও হাহা করে হাসেনা, "JA JA" করে হাসে, কারণ, J এর উচ্চারণ হ। একই ভাবে আমরা এও জানি তারা কাশি পেলে খক-খক করে কাশেনা, গাঁক-গাঁক করে কাশে। কারণ, ওদের G এর উচ্চারণ ওই 'খ' ধরণের। তো সেই হিসেবে দেশটার নাম হওয়া উচিত আর্খেন্তিনা। কিন্তু এই নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। প্রচুর বাঙালি আর্জেন্তিনিয়ান থাকলেও তাঁরা কেউই কখনও বুয়েনাস আইরেস যাননি, স্প্যানিশ ভাষার মূর্ধন্যও দেখেননি, তাঁদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না। একমাত্র ... ...
বিজেপি বদলায়নি। কৈলাশ বিজয়বর্গী চিঁড়ে খেতে দেখে বাংলাদেশী চিনে ফেলেছিলেন। পরেশ রাওয়াল মাছ খেতে দেখে রোহিঙ্গা চেনেন। ওদের কাছে, মছলি-খোর, বাংলা-বলা বাঙালি মাত্রেই সম্ভাব্য বাংলাদেশী। সেই জন্যই তো এত এন-আর-সির আয়োজন। সব ব্যাটা বাঙালিকে সন্দেহ করো। ল্যাজ তুলে দেখো ভারতীয় না বাংলাদেশী। টুরু হিন্দুস্তানি হলে তো হিন্দিই বলত, বাংলা কেন? বাঙালিও তাই তেড়ে হিন্দি অভ্যাস করছে। বিজেপির কারিয়াকর্তারা তো বটেই। আমজনতাও। তারা হিন্দি-ইংরিজি বলতে পারলেই কৃতার্থ হয়, স্মার্ট হয়, দিল্লির টিভিতে মুখ দেখালে তবে জাতে ওঠে।এই দুর্গতি কেন? কারণ, বিজেপি বদলায়নি। বিরোধীরা বদলেছে। পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির দলিল পড়বেন, খুব স্পষ্ট করে "গুজরাতি-মারোয়াড়ি পুঁজি"র বিরোধিতা করা আছে। নাম ধরে, ভারতীয় ... ...
একটি ঘোষণা। বিশ্বকাপের বাজারে দয়া করে একটু নজর দেবেন। ঘোষণাটি গুরুর এবারের প্রথম বইয়ের। বইটি ইন্দ্রাণীদির। ইন্দ্রাণীদি, ইন্দ্রাণী দত্তর গল্প যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানেন, সে কী ভয়ানক এক ব্যাপার। যেমন মোলায়েম, তেমনই তীক্ষ্ণ, যেমন তির্যক তেমনই অনুভূতিপ্রবণ। এর আগে এই অনুভূতিপ্রবণতা নিয়েই আমি লিখেছিলাম, যে, ইন্দ্রাণীদি হলেন অনুভূতির টিকিট-পরীক্ষক। অপরীক্ষিত অনুভূতিরা তাঁর গল্পের দরজা পেরোতে পারেনা। অপরীক্ষিত শব্দরা মাড়াতে পারেনা চৌকাঠ। তিনি নিক্তি নিয়ে বসে থাকেন দোরগোড়ায়। প্রতিটি অভিব্যক্তি, প্রতিটি বাক্যকে পরীক্ষা দিতে হয় তাঁর সামনে। পাশ করলে তবে ঢুকতে পারে গল্পের আঙিনায়। এসব লিখেছিলাম তাঁর প্রথম গল্পের বই প্রসঙ্গে। সে বই বেরিয়েছে। যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানেন, এক বর্ণও বাড়িয়ে বলিনি। বরং, ... ...
ফুটবল খেলায় দেখবেন, মাঠের দর্শকরা বাধ্যতামূলকভাবে খিস্তি দেয়। সে দুনিয়ার সবাই কোনো-না-কোনো সময়ে দেয়, কিন্তু মাঠের খিস্তি ট্রাম-বাস-টেম্পো-কলেজ-ইশকুল-পিকনিক সবার থেকে মোটামুটি একশগুণ চড়া। "অমুকের মায়ের অমুক জায়গায় বলটা ঢুকিয়ে দে" -- রাগারাগি ছাড়াই, এসব মাঠের স্বাভাবিক লব্জ। জিজ্ঞাসা করলে বলবে, "মাঠে খিস্তি দেব না তো কোথায় দেব।" আরেকটা জিনিস দেখবেন, সমর্থকরা পারলেই মারপিট করে। মাঠে এবং বাইরে। খেলার সময় তারা জার্সি পরে দলবদ্ধ ভাবে ঘোরে। মদ-টদ খায়। সুযোগ পেলেই অন্য জার্সিধারীদের পিটিয়ে দেয়। এটা অবশ্য ইউরোপেই বেশি হয়। এখন পুলিশি নজরদারিতে বোধহয় কমে গেছে। খবর পাইনা। খেলার খবর রাখিনা বলেও হতে পারে। তা, এইগুলো কিন্তু আজকের গপ্পো না। এসব ইউরোপের পুরোনো প্রথা। ... ...
পৃথিবীতে দুরকম মৌলবাদ আছে। কাতারি মৌলবাদ ভালো। কাতার নিয়ে সমালোচনার জবাবে ফিফা সভাপতি বলেছেন, ইউরোপিয়ানরা গত ৩০০০ বছর পৃথিবীতে যা করেছে, তাতে নীতিশিক্ষা দেবার আগে, আগামী ৩০০০ বছর তাদের ক্ষমা চেয়ে যাওয়া উচিত। খুবই খাঁটি কথা, কিন্তু কেবল কাতারকে সমর্থন করার সময়ই এসব মনে পড়ে। ইরাক গুঁড়িয়ে দেবার সময় না।কাতার ছাড়ুন, সৌদি আরবও ভালো। আমেরিকার বাসিন্দা প্রভাবশালী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে মনে আছে? যিনি গণতন্ত্রের সমর্থক, এবং সৌদি রাজতন্ত্রের কট্টর বিরোধী ছিলেন, এবং ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে, হ্যাঁ দূতাবাসের ভিতরেই, ঢুকে খুন হয়ে যান? মৃতদেহও পাওয়া যায়নি। খোদ সিআইএ জানিয়েছিল (নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টের খবর), সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের নির্দেশেই এই ... ...
এই ইন্টারনেট হয়েছে এক আপদ বিশেষ। শ্রদ্ধা ওয়ালকরের হত্যারহস্যের তথাকথিত সমাধান এক দিনও হয়েছে কিনা সন্দেহ, এর মধ্যেই নেট খুলে চাররকম ব্যাখ্যা দেখে ফেললাম।১। লাভ জিহাদ। অ্যাদ্দিন শুনেছিলাম, হিন্দুর মেয়েকে 'তুলে নিয়ে' মুসলমান বানিয়ে ফেললে লাভ-জিহাদ হয়। এখন শুনলাম খুনও আছে প্যাকেজে। ২। নিচু জাতের মেয়েকে উচ্চ জাতের খুন। মুসলমান হোক আর যাইহোক, ছেলেটার পদবী তো পুনাওয়ালা। অতএব তারা উচ্চঘর, কংসরাজের বংশধর। ৩। ডেটিং অ্যাপের ফল বা পুঁজিবাদী অবক্ষয়। এখন নাকি পুরুষ এবং মহিলারা ডেট করে একে অপরকে খুন করছেন। যখন ডেটিং অ্যাপ ছিলনা, তখন কি তাহলে খুন হতনা, না এখন অনার কিলিং হয়না? কে জানে। ৪। নারীবিদ্বেষ এবং 'টক্সিক মাসকুলিনিটি'। এইটা তো ... ...
এবার বিশ্বকাপে আমি মেসির সমর্থক। জিতিয়েই ছাড়ব। ফাঁকা আওয়াজ ভাববেন না। এর আগে শচীনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস করে ফল পেয়েছি। শচীনকে আমি ছোটো থেকে চিনি। মানে টিভিতে দেখে আর কি। আমি, সৌরভ আর শচীন মোটামুটি একই ব্যাচ। ওরা ক্রিকেট খেলে আর আমি খেলিনা। তা, আমি যখন কলেজে পড়ি, তখন সৌরভও পড়ে। আমি চাকরি খুঁজছি, সৌরভও রঞ্জি খেলছে। সবই একসঙ্গে। কেবল শচীন ব্যতিক্রম। আমার জ্ঞান হবার আগে থেকেই সে ক্রিকেট খেলে চলেছে। কপিলদেবের সঙ্গে খেলেছে, আজহার-জাদেজার সঙ্গে খেলেছে, সৌরভ দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলেছে। সৌরভও অবসর নিয়ে নিল, তখনও খেলে চলেছে। বাংলা মিডিয়াম গাঁয়ের স্কুলে এরকম কিছু ছেলে থাকত, যারা বাবার সঙ্গেও পড়েছে, ছেলের সঙ্গেও। ... ...
১৯৯৬ সালে ভারত যখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ইডেনে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছিল, আমি তখন সিটিসির বাসে চড়ে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে শিবপুরে ফিরছিলাম। দিনরাতের খেলা, শুরুটা দেখে বেরিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কা শুরুতে ব্যাট করেছিল। জয়সূর্য সেবার বিশ্বকাপ কাঁপাচ্ছেন। কিন্তু সেদিন দুই ওপেনারই ঝপ করে আউট। তাতে শ্রীলঙ্কাকে আটকানো যায়নি। অরবিন্দ ডিসিলভা দুর্ধর্ষ খেলেছিলেন। শ-আড়াই রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। ভালোই রান।আমি যখন ফিরছিলাম, ভারত ব্যাট করতে নেমেছে। ইডেনে খেলা হলে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে কেউ দেখেছেন কিনা জানিনা। বেশি কেউ দেখেননি, নিশ্চিত, কারণ খেলা থাকলে লোকে হয় মাঠে, কিংবা টিভির সামনে থাকে। সেদিনও তাইই ছিল। বাসে বোধহয় শুধু ড্রাইভার, কন্ডাক্টার, আর আমি। ইডেনের সব ফ্লাডলাইট জ্বলছে, অপূর্ব লাগছে ... ...
কোথায় একটা পড়লাম, 'কবি তার কাঙ্খিত নারীকে কখনই পায়না। পেলে বাজারের ফর্দ লিখত'। এইরকম একটা মিম-জাতীয় কিছু চলছে খুব। ফলে আমাকে একটা প্রতিবাদপত্র লিখতে হচ্ছে। কারণ, এরকম অপপ্রচার বাজারে ঘুরতে দেওয়া ঠিক না। আমি বাজি রেখে বলতে পারি, কবি তার 'কাঙ্খিত' নারীকে আদৌ চায়-টায় না। হিট কবিদের হিট কবিতাগুলোই নিন। ধরুন জীবনানন্দ দাশ। তিনি বনলতা সেনকে নিয়ে কী লিখেছেন? লিখেছেন, পাখির নীড়ের মতো চোখ। আপনি যদি কখনও কোনো পাখির বাসা দেখে থাকেন, তো জানবেন, সে অতি বিশ্রী ব্যাপার। যদি নাও দেখে থাকেন, তো 'মাথা পাখির বাসা হয়ে আছে' মানে কী তো অবশ্যই জানবেন। সেরকম চোখ কারো কামনার বিষয় হতেই পারেনা। তার ... ...