সেদিনই একটা মন্তব্যে 'এজ শেমিং' শব্দটা বাংলায় লিখতে গিয়ে জুতসই প্রতিশব্দ বানাতে পারলাম না। 'বয়সজনিত বদনাম', খুবই নরম একটা ব্যাপার। শেমিং মানে কী? মুখে চুনকালি মাখিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে উল্টো গাধায় চড়িয়ে গ্রাম থেকে দূর করে দেওয়া। এতটা তো লেখা যায়না, দুই-শব্দে সেই অনুভূতিটাই এলনা। তারপরই হিন্দি সিনেমায় কেমন বলবে ভাবতে গিয়ে একটা বলিউডি কাটিং শব্দ মাথায় এসে খট করে উপস্থিত হল। 'উমরি বদনামী'। উফ কী জোশ। শুনলেই মনে হয় ইউপি থেকে রোমিও স্কোয়াড এসে বলছে, 'বুড়ো বয়সে এত শখ কীসের অ্যাঁ?' তারপরই পরখ করে দেখার জন্য আরেকটা জিনিস ভাবলাম। 'নেমিং অ্যান্ড শেমিং' কী হবে? দিব্যজ্ঞানের মতো মাথায় এলো 'নাম করো ... ...
ব্যবসা করা অত্যন্ত সোজা জিনিস। ১। সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিন।২। সেই টাকায় শিল্প বানান।৩। ব্যাংককে টাকা শোধ দেবেননা। মকুব করে দিতে বলুন।৪। এইভাবে বিনা বিনিয়োগেই অপর্যাপ্ত মুনাফা করুন। সঙ্গে উদ্যোগী সমাজসেবী হিসেবে নাম কিনুন।ইয়ার্কি ভাবছেন? ব্যাংককে দিয়ে ঋণ মকুব করানো অসম্ভব মনে করছেন? হোমলোন শোধ দিতে দিতে কি আপনার জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে গেছে? একটা কিস্তি বাদ পড়লেই বাড়িতে গুন্ডা আসবে বলে ভয়ে কাঁপছেন? ওই জন্যই আপনার দ্বারা কিছু হলনা। ওই জন্যই দুনিয়া জুড়ে বাঙালিকে অলস বলে। এত হাবিজাবি না ভেবে যদি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন, তাহলেই দেখতে পেতেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই। এর আধখানা করতে পারলেও লন্ডনে গাড়ি-বাড়ি হত, নীরব ... ...
হাওড়া থেকে ৫৫ নম্বর বাস যেত বিই কলেজে। সেই বাসের গতি নিয়ে বিই কলেজে নব্বইয়ের দশকে অনেক মিথ চালু ছিল। তার মধ্যে একটা এই, যে, একদিন এক ৫৫-নম্বর, হাওড়া স্টেশনে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। যেমন থাকে। ড্রাইভার নেমে পাশের দোকানে চা-বিড়ি খেতে গেছে, কন্ডাক্টার হেল্পাররা তারস্বরে ময়দান-ট্রামডিপো-অলকা-বিক্কলেজ-বিগার্ডেন বলে হাঁকছে। এমন সময় কন্ডাক্টারের নজরে পড়ল, এক থুত্থুড়ে বুড়ি বাসের পিছন থেকে হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। কন্ডাক্টারের অঢেল সময় এবং দয়ালু মন। জিজ্ঞাসা করল, বুড়িমা, যাবেন কোথায়? বুড়িঃ একটু বিগার্ডেন যাব বাবা। কন্ডাক্টারঃ বাসে উঠে পড়ুন। বুড়িঃ ছেড়ে দাও বাবা। কন্ডাক্টরঃ ভাড়া লাগবেনা।বুড়িঃ আজ নয় বাবা। আরেকদিন। আজ একটু তাড়া আছে।আশি-নব্বইয়ের বোম্বে সিনেমার কথা এলেই, ... ...
ফুর্তি। এইমাত্র খবর পেলাম, ব্রাজিলে বলসোনারো হেরে গেছেন। বামদিকের লুলা আসছেন, যদিনা অবশ্য এর মধ্যে কু-টু হয়ে যায়। সাও পাওলোর রাস্তায় উৎসব চলছে। মানে, টিভি আর ইন্টারনেটে যা দেখলাম।বলসোনারোর নাম জানেননা, এমন এই বাজারে কেউ নেই। দক্ষিণপন্থী ছাপ্পান্ন-ইঞ্চিদের মধ্যে মোদিবাবুর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবেন এই ভদ্রলোক। ভালোদিন এর খোয়াব দেখিয়ে জিতেছিলেন। তারপর ' কালাধন' আর 'দুর্নীতি'র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি বলে খপাখপ বিরোধীদের জেলে ভরছিলেন। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি লুলাকেও দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দী করেছিলেন। এ ছাড়াও, কোভিড মোকাবিলায় প্রচন্ড দক্ষতা দেখান, এবং দেশের নির্বাচনের পদ্ধতিই বদলে দেবেন বলে দাবী করেছিলেন।যা হোক, এসব সবাই জানেন। প্রবন্ধ লেখার মানে নেই। ফুর্তির ব্যাপার হল এই, যে, একে ... ...
আমি হাওয়া দেখিনি। হাওয়া নিয়ে প্রবল হাওয়া বাংলা ভাষাটার জন্য খুবই ভালো, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা করে আনন্দদায়ক কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। "বাংলা সিনেমার এখনও দর্শক আছে" এটা কোনো কথাই না, এটা প্রমাণ করে কলার তোলার কোনো মানেই নেই। যদ্দিন না বাংলা ভাষাটা বাংলার পশ্চিমদিক থেকে উঠে যাচ্ছে, ততদিন বাংলা সিনেমার দর্শক থাকবে। কথা হল, পশ্চিমবঙ্গবাসী মূলধারার সিনেমানির্মাতারা দর্শকের জন্য কিছু কি দিচ্ছেন? সিনেমায় আমি একটু ধীরে চলি, ওটিটিতে না এলে কিছুই দেখা হয়না, ফলে গত ছমাসের রিলিজগুলো দেখিনি। অপরাজিত সমেত। তা বাদে, ওটিটিতে যা দেখেছি, সে অতি ভয়াবহ। নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন বাংলা সিরিজ বা সিনেমার পিছনে পয়সা ঢালেনা, বাঙালিদের তুলে ... ...
আজ আমার হরিদাসীর কথা মনে পড়ল। হরিদাসী কোনো নারী নন, 'আমি তোর হরিদাসী' একটা গান। সেটার কথা মনে পড়ল একটা খবর দেখে। কর্ণাটকে কাজে গিয়ে বাংলাদেশী সন্দেহে গ্রেপ্তার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পলাশ অধিকারি, স্ত্রী শুক্লা অধিকারি, এবং তাঁদের শিশুপুত্র। এর সঙ্গে হরিদাসীর কি? খুব জটিল কিছু না। মনে পড়ার কারণ হল মিলে যাওয়া। গানের একটা লাইন ছিল, "দিল্লি কিংবা ব্যাঙ্গালোরে / বাংলা বললে হাজতে পোরে / থাকিস যদি ঝুপড়ি ঘরে / ধরবে পুলিশ ভেবে বাংলাদেশী।" সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবার কারণে। আর কিছু না। ওই একই সঙ্গে আরও একটা জিনিস মনে পড়ে গেল। গত বেশ ক'বছর ধরে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদবিরোধী একগুচ্ছ গান-টান ... ...
বুশ বক্তৃতা দিলেই সবাই হাঁ করে দেখত। ওঁর সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ ছিল, তাই। একবার স্প্যানিশ ভাষাকে মেক্সিকান ভাষা বলেছিলেন, টেনাসিকে বলেছিলেন টেক্সাসে, আর আমেরিকাকে পিসমেকার বলতে গিয়ে পেসমেকার আখ্যা দিয়েছিলেন, এইসব টুকটাক। শেষেরটা অবশ্য ঠিকঠাকই ছিল, একেই বোধহয় ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ বলে। ট্রাম্প টুইট করলেই মিডিয়ায় হইচই পড়ে যেত। কারণ, তাঁর আইকিউ অত্যন্ত বেশি ছিল, নিজেই টুইটে সেটা দাবী করেছিলেন, বুদ্ধি খুব বেশি না থাকলে অমন টুইট করা অসম্ভব। তিনি একবার দাবী করেছিলেন, খুঁটিয়ে বারাক ওবামার বার্থ সার্টিফিকেট দেখে আবিষ্কার করেছেন, যে, ওবামা ভদ্রলোক আসলে কেনিয়ায় জন্মেছিলেন। আর একবার ঘোষণা করেছিলেন, উইন্ডমিলই হল আমেরিকান (ইগল)দের সব চেয়ে বড় শত্রু। দন কিহোতের মতো ... ...
দু বছরের পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে। খবরের কাগজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গর্গ বছর দুয়েক আগে অহোম সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সুকাফাকে বহিরাগত চৈনিক আখ্যা দিয়েছিল। তাতে কারো কারো ভাবাবেগে আঘাত লাগে। আসামে মামলা হয়। এই 'অপরাধ'এ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেপ্তরের নির্দেশ দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। যদিও, গর্গকে সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেজন্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের দিকে আঙুল ওঠে। এর পর আদালত নতুন পরোয়ানা জারি করে গর্গকে গ্রেপ্তার করার জন্য কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গর্গকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কলকাতার আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে গুয়াহাটির আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেয়। আসামে গেলে গর্গকে গ্রেপ্তার তো ... ...
কুড়ি কোটি নিঃসন্দেহে অনেক অনেক টাকা, কিন্তু বিষয়টা তার থেকেও অনেক বেশি সিরিয়াস। শিক্ষাক্ষেত্রে বছরের পর বছর বেনিয়ম, আদালত দুর্নীতির জন্য পরপর নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করছে, একজন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান মন্ত্রীও বটে) শিক্ষাসংক্রান্ত দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, এমনকি এর চেয়েও বড়। আমি পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ কিছুই জানিনা, তাতেও এদিক-সেদিক থেকে যা কানে আসে, তা ভয়াবহ। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। চাকরি এবং বদলির রেট আকাশছোঁয়া। সব মিলিয়ে আস্ত শিক্ষাব্যবস্থাই বেহাল। সরকারী এবং সরকার অনুমোদিত ইশকুলে ছাত্রছাত্রী কমছে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ইংরিজি মাধ্যমের কৌলিন্য এবং অর্থদন্ড যুগপৎ ক্রমবর্ধমান। এর মধ্যে কখনও গরম, কখনও কোভিড, অর্ধেক সময়ই বিদ্যালয় বন্ধ। এর ... ...
মূলত হিন্দি, (ইদানিং কিছু দক্ষিণীও) "বাণিজ্যিক" সিনেমা সম্পর্কে একটা কথা শুনি, "পয়সা উশুল"। ওগুলো দেখতে হলে নাকি নাক-কান-চোখ, স্বাভাবিক বুদ্ধি ইত্যাদি সব কিছুই বিসর্জন দিয়ে দেখতে হয়, তাতেই মোক্ষ, এনজয়মেন্টের চূড়ান্ত, অর্থাৎ কিনা পয়সা উশুল। তো, কথাটার এমনিই কোনো মানে নেই, কারণ, প্রথমত উপভোগের আবার বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক কী? দর্শকের পরিপ্রেক্ষিতে, সব সিনেমাই বাণিজ্যিক, পয়সা দিয়েই দেখতে হয়। উপভোগ না করতে পারলে খামোখা লোকে দেখবেই বা কেন? লোকে তো পাগল না। তবে এর চেয়েও প্রলয়ঙ্কর হল, দ্বিতীয় পয়েন্টটা, অর্থাৎ চোখ-কান-বোজা। এর চেয়ে বেশি হাস্যকর কথা খুঁজে বার করা অসম্ভব। আজ অবধি এমন কথা শুনেছেন, যে, আপনি মাঠে ক্রিকেট দেখতে গেছেন, কাকে চার-ছক্কা ... ...