এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এলোপাথাড়ি, আবোলতাবোল

    Lama
    অন্যান্য | ১১ জুন ২০১১ | ৭৭৬৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 122.167.24.129 | ১১ জুন ২০১১ ০০:১৪480146
  • আবোলতাবোল সুকুমার রায়ের লেখা। এলোপাথাড়ি নিয়েও লিখতেন, কিন্তু এলোপ্যাথ ডাক্তারদের আপত্তিতে তিনি সেটা লেখেন্নি।

  • Tim | 198.82.21.136 | ১১ জুন ২০১১ ০০:১৭480257
  • :-))))
  • dd | 122.167.24.129 | ১১ জুন ২০১১ ০০:১৮480268
  • "হেথায় তুদের মানায় না, তুরা এলোপাথারী দ্যাশে যা' নামক গানটি এক্কালে খুব সমাদৃত হয়েছিলো। সেটাও স্মরণযোগ্য।
  • dd | 122.167.24.129 | ১১ জুন ২০১১ ০০:২৩480279
  • আর ঐ ,পাহাড়ী স্যান্নাল (ছোটোরা নাম শোনে নি)খুব দেরী করে পার্টীতে পৌছালে কে বা কারা চেঁচিয়ে কয়েছিলো "ঐ যে, ঐ যে। এতোক্ষনে এলোপাহাড়ী" সেটা বানান সঙ্গত কারনে এই টইতে উল্লেখিত হওয়া উচিৎ নয়।

    আমি ও বিরত থাকলেম।
  • nk | 151.141.84.194 | ১১ জুন ২০১১ ০০:২৬480301
  • পাহাড়ী স্যান্নাল কি সেই লোক, "কমললতা"য় যে বুড়ো বৈষ্ণব বাবাজী সেজেছিলো?????
  • byaang | 122.167.64.212 | ১১ জুন ২০১১ ০০:২৬480290
  • :-))))
  • Lama | 117.194.231.64 | ১১ জুন ২০১১ ০০:২৮480312
  • অনেকদিন হল। আবার বলা যেতে পারে এই সেদিনের কথা।

    একটা সমুদ্র। সমুদ্রের ধারে একটা বড় পাথর। তার চারদিকে জল। আকারে ছোট, তাই দ্বীপ নয়, পাথর। পাথরের ওপর নাইট শিফটের ছোকরা সার্ভেয়র।

    গভীর রাত। দূরে, প্রায় মাঝসমুদ্রে একটা বার্জ। এই মাঝরাতেও গ্যাϾট্রর ফ্রেমগুলো আলো ঝলমল। জেটি তৈরি হচ্ছে। আর দু মাসের মধ্যে বর্ষা নামবে। সমুদ্র ফুলে ফেঁপে উঠবে। তার আগে কাজ শেষ করতে হবে। একদল মানুষ তাই রাত জাগছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে এ এক অঘোষিত যুদ্ধ।

    সমুদ্রের ধার, কিন্তু এক ফোঁটা হাওয়া নেই। গভীর অন্ধকারে শুধু সমুদ্রের সাদা ফেনাগুলো দেখা যায়- যেন একঝাঁক সাদা ঘোড়া।

    আশপাশে শব্দ বলতে সমুদ্রের একঘেয়ে গর্জন। আর ওয়াকিটকিতে অচেনা গলায় ক্রেন অপারেটরের প্রতি নির্দেশ "আরিয়া...আরিয়া...আরিয়া...'

    আকাশ পরিষ্কার। বইপড়া বিদ্যে কাজে লাগিয়ে তারা চেনার ব্যর্থ চেষ্টা করি। কাজের কাজ কিছুই হয় না, কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে তিনটে উল্কাপাত দেখা হয়ে যায়।

    মনটা কেমন হুহু করে ওঠে- দুটো পয়সার জন্য এ কোথায় পড়ে থাকা। বাড়িতে ফোন করা হয়নি আজ কতদিন।

    ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা হাওয়া দিল। দুলে উঠল মাঝসমুদ্রে আলোঝলমল বার্জ। আর-

    একি অকারণ পুলক! সহসা গায়ে কাঁটা।

    কে তুমি, আমাকে তৈরি করলে? আমাকে ছেড়ে দিলে সমুদ্রের একটা ছোট পাথরের মাঝে ওয়াকিটকি হাতে? এই অন্ধকার দেখাবে বলে, এই জল দেখাবে বলে, হাজার তারা দেখাবে বলে?

    তখনই ঠিক করেছিলাম লিখে রাখব। তালেগোলে বছর পনেরো দেরী হয়ে গেল।
  • byaang | 122.167.64.212 | ১১ জুন ২০১১ ০০:৩৬480323
  • লামা, এই লেখা পড়ার পরে জাস্ট আর কিছু বলার থাকে না। শুধু চুপ করে থাকতে হয়।
    এত কম লিখিস কেন রে?
  • r2h | 198.175.62.19 | ১১ জুন ২০১১ ০০:৩৮480334
  • ...
  • achintyarup | 121.241.214.38 | ১১ জুন ২০১১ ০০:৫১480147
  • ব্যাঙকে মূর্ধণ্য ষ
  • Lama | 117.194.231.64 | ১১ জুন ২০১১ ০৫:২১480158
  • এতদ্বারা এই টই যাবতীয় বাজে ভাটের নিমিত্ত ধার্য্য হইল
  • M | 59.93.198.85 | ১৭ জুন ২০১১ ০৮:২২480169
  • :)
  • Lama | 203.132.214.11 | ১৭ জুন ২০১১ ১৫:১৫480180
  • আমি যে স্কুলে পড়েছি সেই স্কুলে আমার মাসতুতো মামা মাসীরা পড়েছে, আমার স্বশুরমশাই পড়েছেন, খুড়স্বশুর পড়েছেন। এমনকি আমার বাবাও অল্প কিছুদিন পড়েছেন।

    বলরাম আমার সঙ্গে পড়ত। আবার আমার খুড়স্বশুরের সঙ্গেও পড়ত। আমাদের সময় ফুটবল খেলায় পারদর্শী কিছু ছেলে বছর বছর একই ক্লাসে থেকে স্কুল টিমকে বিভিন্ন খেলায় জেতাতো। কিন্তু বলরাম আদৌ ফুটবল খেলতে জানত না।

    আবার বছর বছর একই ক্লাসে থাকা ছেলেদের বেশিরভাগ বিচ্ছু ধরণের, ফলত: শিক্ষকদের কাছে অপ্রিয় হয়ে থাকে। অথবা এত বেশি চুপচাপ থাকে যে তাদের অস্তিত্বই বোঝা যায় না। বলরাম এর কোনটাই ছিল না। বলরাম নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আবার সদালাপী মিশুকে- আমি থেকে শুরি করে চার বছরের পুরনো প্রাক্তন সহপাঠী, সবার সঙ্গে হেসে কথা বলে।

    তাছাড়া বলরাম স্যরদের মধ্যে, বিশেষ করে অঙ্কের স্যরদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল। কারণ- আর সব কিছুতে পাশ করুক আর নাই করুক, অঙ্কে বলরামের একশোতে একশো পাওয়া বাঁধ। ওকে জিগ্গেস করলে বলত, "কি করে যেন অঙ্কগুলো মিলে যায়, এমনিতে আমি পড়শোনা খুব একটা বুঝতে টুঝতে পারি না।'

    এহেন বলরাম ক্লাস টেনের মাঝামাঝি একদিন স্কুলে এল না। তার পরদিন এল না। তার পরদিনও না। বলরাম সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চললেও ঘনিষ্ঠতা কারো সঙ্গে ছিল না। সুতরাং আমরা আস্তে আস্তে ভুলে গেলাম ওকে।

    তারপর অনেক বছর কেটেছে। স্কুলের পর কলেজ শেষ হয়েছে। পেটের ধান্ধায় অর্ধেক ভারতবর্ষ ঘোরা হয়ে গেছে। সেবার ভাবলাম পুরনো শহরে একবার যাওয়া যাক।

    গেলাম। রাস্তাঘাট চওড়া হয়েছে, লোডশেডিং কমেছে। শপিং মল পর্যন্ত গজিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা রেললাইন এসে গেছে। তৈরি হয়েছে নতুন রেলস্টেশন।

    এই পর্যন্ত গল্পটা একই রকম। সবার সঙ্গে এরকমই হয়। পুরনো স্কুলে যাওয়া। পুরনো স্যরদের মধ্যে যারা জীবিত তাঁদের প্রণাম করে পরিচয় দেওয়া। কারো কারো চিনতে পারা বা চক্ষুলজ্জায় চিনতে পারার ভান করা। সম্প্রতি বুড়ো হয়ে যাওয়া পুরনো দারওয়ানকে বকশিস দেওয়া ইত্যাদি।

    স্কুল থেকে বেরিয়ে এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। শহরের মোটামুটি মাঝখানে একটা ব্যস্ত চৌরাস্তা আছে। আমাদের ছোটবেলাতেও ছিল। ফলের দোকান, ফুটপাথে ছিটকাপড়ের দোকান সব মিলিয়ে আগের মতৈ জমজমাট।

    কেউ নাম ধরে ডাকল। দেখি ফুটপাথে গামচা আর রুমাল নিয়ে বসে থাকা হকার। দেখি একমুখ দাড়িগোঁফের মাঝখানে সেদিনের মতই একজোড়া পিটপিটে চোখ নিয়ে আমাদের সেই বলরাম।

    দুজনেই দুজনকে দেখে খুশি। অনেক গল্প হল- আমার গল্পই বেশি। অজকাল আমার বাড়ি গাড়ি হয়েছে, বিলেত ঘুরে এসেছি শুনে বলরাম আন্তরিঅভাবে খুশি। ওর খোঁজখবর, এতদিন কোথায় ছিল, বিয়ে করেছে কিনা এসব জানার আগেই সময় ফুরিয়ে গেল। ফোনে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলাম।

    কলকাতায় এসে খেয়াল হল ওর কোনো ফোন নাম্বার আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয় নি, আমার নম্বরও ওকে দেওয়া হয় নি।

    আর তারপর আরো অনেক বছর হয়ে গেছে, আমারও আর পুরনো শহরে যাওয়া হয়ে ওঠে নি।

    উত্তর্পূর্ব ভারতের কোন বাঙালীপ্রধান ছোট শহরে বলরাম নামে কোন দাড়িগোঁফওয়ালা গামছা বিক্রেতার সঙ্গে কারো যদি দেখা হয়, আমাকে একটু জানালে উপকৃত হব।
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৮ জুন ২০১১ ০০:০৫480191
  • কেম যে লামা এত কম লেখে !!

  • til | 124.168.3.190 | ১৮ জুন ২০১১ ১০:০৮480202
  • বিড়াল বিড়াল বিড়াল
    -------------------------

    আমাদের ভূতোবাবু গত হয়েছেন আজ এগারো দিন হল। শেষে যে Vet কে দেখানো হয়েছিল তাদের রিসেপশনের মহিলাটি অত্যন্ত দয়ালু,ভুতোর মাকে কত hug, যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে ওদের কাছেই নিয়ে গিয়েছিলাম।
    কথায় কথায় ওরা ভূতোর জন্যে স্পেশ্যাল খাবার (এটা শেষে প্রেসক্রাইব করেছিল, কিডনী ফেলিয়োরের জন্যে) নিতে রাজী হয়েছিল, দামও দিতে, যদিও খোলা প্যাক। বেচারী খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল শেষে।
    আজ খাবারগুলো দিয়ে এলাম। ওরা বললো কোন গরীব catloverকে দেবে। আমরা দাম চাইনি।
    তখুনি মনে পড়লো, বহু বছর আগে এই শর্মার যখন তিন বছর বয়েস, আর জি করে ভর্তি করেছিলাম, ডিপথেরিয়ার জন্যে। সে সত্যযুগের কথা! (এই সব দিকে আমার স্মৃতি বেশ প্রখর কেবল ফুরিয়ার ট্র্যান্‌স্‌ফর্ম করতে দিলে কেতরিয়ে পড়ি)।
    সেরে উঠে ফিরছি, ঠাকুরমা আমার সঙ্গেই বেডে থাকতেন।
    আসবার সময় প্রায় ফুল একটা হরলিকসের শিশি পাশের বেডের গরীব ছেলেটিকে দিয়ে আসা হয়।
  • til | 124.168.3.190 | ১৮ জুন ২০১১ ১০:১০480213
  • *ভর্তি হয়েছিলাম
  • Bratin | 117.194.103.43 | ১৮ জুন ২০১১ ২১:২১480224
  • লামা, খুব ভালো লাগলো। তুমি আরো লেখো।
  • Manish | 59.90.135.107 | ২৩ জুন ২০১১ ১৯:১০480235
  • লামা লেখাটা বেশ হয়েছে। আরো আরো লেখো। আর যদি কখনও আগরতলায় যাই অবশ্যই বলরামের খোজ নেবো।
  • Lama | 117.194.228.76 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০০:৪৯480246
  • বেশির ভাগ মানুষের বাড়ি নদীর ধারে। এখন না হলেও এককালে ছিল। নিদেনপক্ষে বাপঠাকুর্দার বাড়ি নদীর ধারে ছিল।

    আমারও তাই। এককালে ছিল।

    হয়েছে কি, বহু বছর ভাড়া বাড়িতে থাকতে থাকতে আমার বাবা একদিন ঠিক করলেন এবার একটা নিজের বাড়ি চাই। কিন্তু যথেষ্ট টাকাপয়সা হাতে ছিল না। খবর পেয়ে শহরের একমাত্র ডাক্তার তথা সম্পন্ন চাষী হেমবাবু তাঁর কিছুটা জমি শস্তায় বিক্রি করার প্রস্তাব দিলেন। আর কয়েকদিনের ব্যবধানে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কাঠচেরাই কলের মালিক ঝন্টু সেন শস্তায় কিছু কাঠ বিক্রি করার প্রস্তাব দিলেন।

    ব্যস, মাত্র দুমাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল শহরের একমাত্র কাঠের বাড়ি। নদীর ধারে।

    আমাদের ফুর্তি দেখে কে! কাঠের বাড়ি বলে কথা। তল্লাটে কারো নেই। আনন্দে আমরা দু ভাই খুরপি দিয়ে মাটি খুঁড়ে একটা চোরকুঠুরি বানাতে লেগে গেলাম। গর্ত একটু একটু করে গভীর হয়, আর আমরা নেমে দেখি আমাদের দুজনের জায়গা হয় কিনা। তিন মাসের অক্লান্ত চেষ্টায় হাঁটু অবধি গভীর সুড়ঙ্গ তৈরি হল।

    আমাদের নতুন বাড়ি যেন ইচ্ছেমত ছবি আঁকার খাতা- আজ মায়ের ইচ্ছে হল একটা কুয়োতলা হলে বেশ হয়, তো অমনি কোথা থেকে একদল লোক এসে কুয়ো খুঁড়তে লেগে গেল। কাল আমার ইচ্ছে হল একটা কুকুর পোষার, তো তৈরি হয়ে গেল সোভিয়েত দেশের ছবির মতো দেখতে কুকুরের ঘর।

    কিন্তু কাঠের বাড়ির হ্যাপাও কম নয় দেখা গেল। উইপোকার উৎপাতে মাঝে মাঝেই কাঠ রং করাতে হত। মাঝে মাঝে দেয়ালের একটা দুটো কাঠ পালটাতেও হত। সেই জন্য আমাদের ধারণা ছিল বাড়ি তৈরি এখনো শেষ হয়নি।

    ভারি মজার শহর। নদীর ব্রিজ পেরিয়ে বাঁধের মতূ উঁচু একটা পাকা রাস্তা। সেই রাস্তা থেকে শাখাপ্রশাখার মত ঢালু কাঁচা রাস্তা নেমে গিয়ে এক একটা বাড়ির সদর দরজায় ঠেকেছে। দুটো এইরকম কাঁচা রাস্তার মাঝখানে বৃষ্টির জল জমে পুকুরমত হয়েছে। একবার কারা যেন দুটো বাচ্চা হাতিকে ঐ পুকুরে নিয়ে এল স্নান করাতে। মাঝেমাঝে ওই উঁচু বাঁধানো রাস্তা দিয়ে একজন মানুষ একপাল শুওর নিয়ে কোথায় যেন যায়। বিয়েবাড়ির শোভাযাত্রা গেলে আমরা দু ভাই দৌড়ে দেখতে যাই। রোডরোলার গেলেও যাই।

    বাড়ির পেছনে ধানখেত আর পাটখেত। মাঝেমাঝে ট্রাক্টর আসে চাষ করতে- সেও আমাদের একটা কৌতূহলের জিনিস। বর্ষাকালে সেই ক্ষেতে জল জমে পুকুর বা সমুদ্র হয়ে যায়। আলগুলো আর দেখা যায় না- নিরবিচ্ছিন্ন জল। অবিশ্রান্ত ব্যাঙের ডাক আর কদাচিৎ সাপে ব্যাং ধরার আওয়াজ। খেতগুলোর কাছেই রয়েছে একটা পুকুর- আসলামের পুকুর না মকবুলের পুকুর কি যেন বলত লোকে। সেই পুকুরের উঁচু পাড়ে একবার ওঝার ঝাড়ফুঁক দেখেছিলাম একবার। আর দাঙ্গার সময় আমাদের শেখানো হয়েছিল হামলা হলে সেই পুকুরে লুকিয়ে থাকতে।

    শুকনো ঋতুতে আবার মাঝে মাঝেই খড়ের চালে আগুন লাগে। আমাদের বারান্দা থেকে দেখা যায়। ঢং ঢং ঘন্টা বাজিয়ে আসে দমকল- আমরা বলি "আগুনের গাড়ি'।

    আমাদের বাড়ির একটা মজার ব্যাপার ছিল। বাড়ির দুটো অংশ দুটো আলাদা মিউনিসিপালিটির (নাকি ব্লক? না পঞ্চায়েৎ) এর অংশ ছিল। দাঙ্গার সময় যখন কার্ফু হত তখন বাড়ির সামনের গেট দিয়ে বেরনো বেআইনি, কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে বেরনোতে দোষ নেই। এইরকম সব জটিল ব্যাপার।

    ছোট্ট শহর। সন্ধ্যে আটটা না বাজতেই স্থানীয় দমকলের স্টেশনে সাইরেন বাজে, রেডিওতে স্থানীয় সংবাদ শুনে লোকজন খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

    নিত্য এর ওর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া লেগেই আছে। তারজন্য কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করার দরকার হয় না সে সন্ধ্যেয় বাড়ি থাকবে কিনা। বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়া গেলে অন্য কারো বাড়ি যাওয়া যাবে। আর অতিথি আপ্যায়ণ? সেটা তো যখন তখন করতে হতে পারে। খাবার বানিয়ে দেওয়া হবে। আর নাড়ুটাড়ু তো স্টকে থাকেই।

    বেড়াতে যাবার জায়গা আরো আছে- প্রাচীন কচ্ছপ আর বিরাট মাছভর্তি পুকুরওয়ালা মন্দির, শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর। যেদিকে দুচোখ যায় ধানখেত আর দুপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছে সাজানো সটান সোজা রাস্তা দিয়ে সেখানে যাওয়া। নয়তো জঙ্গলের মধ্যে সেই প্রাচীন মন্দির যেখানে নরবলি হত। নয়তো টিলার ওপর সেই আশ্রম যেটা সারা বছর শুনশান কিন্তু শীতকালে পনেরো দিন উৎসব হয় আর লোকেরা হলুদ হলুদ জামা পরে একঘেয়ে সুরে গান গায় আর বাঁশি বাজায়। অনেকে খিচুড়িও খায়, কিন্তু আমাদের বাইরে খাওয়া বারণ।

    কিন্তু, সব বেড়ানোর সেরা বেড়ানো হচ্ছে বিকেলে সন্ধ্যাদিদির সঙ্গে নদীর ধারে হাঁটতে যাওয়া।

    নদী মাঝারিরকমের চওড়া। বৈশাখে হাঁটুজল না হলেও কোমরজল থাকে। বর্ষায় রীতিমতো বিপজ্জনক। একবার এইরকম এক বর্ষায় কি করে যেন একটা কুমির ভেসে এসেছিল বলে শোনা যায়। আর একবার ঐ নদীরই ধারে এক দানবীয় গোসাপ ধরা পড়েছিল- দেখতে গিয়েছিলাম।

    শীতকালে নদীর মাঝখানে আশুকাকুর টাকমাথার মত দুটো চর জেগে ওঠে। ধবধবে সাদা বালি। তার মধ্যে একটা চরে কাঠকুটো দিয়ে তৈরি একটা বাড়ি দেখতে পাই, অনেকটা বুড়ির বাড়ির মত। কিন্তু সেই ঘর থেকে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে দেখা যায় না। বর্ষায় ঘরসহ চর আবার বেপাত্তা হয়ে যায়।

    নদীর ওপর ব্রিজ, ব্রিজ পেরোলে সমতলের শেষ- টিলা আর পাহাড় নিয়ে কেমন রহস্যময়! একবার মা বাবার সঙ্গে ব্রিজ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে কার যেন বাড়ি গিয়েছিলাম টিলার ওপরে। এত বছর পর দেখছি কি উপলক্ষ্যে গিয়েছিলাম তাই নিয়ে দু ভাইতে একটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে- বিবাহবার্ষিকী, না মৃত্যুবার্ষিকী?

    নদীতে কারা যেন বড় বড় বাঁশের আঁটি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কোথা থেকে আসে আর কোথায় যায় আমরা জানি না। আর জানার কোনো ইচ্ছেও কারো নেই এটা আমাদের বেশ অবাক করে।

    একদিন বর্ষার সময় গিয়ে দেখি ভালো জল জমেছে- চড়াটড়া সব ডুবে গেছে। জল কেমন ঘোলাটে। আর জলের ঢেউয়ে হুড়মুড় করে ভেসে আসছে কত কচুরিপানা।

    বাড়ি ফিরে মা-কে বলাতে মা বিশ্বাসই করল না। কচুরিপানা নাকি নদীতে থাকে না। কচুরিপানা পুকুর ছেড়ে কোথাও যায় না।

    আমরাও ভেবেছিলাম পুরনো শহর ছেড়ে কোথাও যাব না। কিন্তু ঘটনাচক্রে, তিরিশ বছর পর দেখছি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছি। কেউ কলকাতায়, কেউ সিধে আমেরিকায়।

    মানুষই সময়ের স্রোতে কোথায় কোথায় ভেসে যায়, কচুরিপানা তো সামান্য জিনিস!
  • byaang | 122.178.249.57 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০০:৫৪480258
  • লামা, কেমন করে যে পারিস এইভাবে মনকেমন করিয়ে দিতে!!
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০১:১৩480259
  • লামা---কাঠের বাড়ীতে বসে ছোটটা কি ভাবছে এখন , তাই ভাবছি---
    বলে বটে ছোটটা ---হাতে কলম উঠলেই অক্লেশে মণি মুক্তো ঝরে লামার--ছোটকে ক্ক
  • achintyarup | 59.93.255.142 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০৪:০৮480260
  • লামার লেখা পড়ে মনটা ভিজে গেল। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ল। সে ছবি একেবারে অন্যরকম, কিন্তু কোথায় যেন অনেকটা মিল। আরও লেখ।
  • kk | 69.245.8.145 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০৪:৫১480261
  • লামার লেখার স্টাইলটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। খুব সহজ কথায় কত কিছু বলে দেওয়া ! আর সব লেখারই শেষ লাইনে মনটা যেন কেমন এক রকম হয়ে যায়। এত ভালো শেষ লাইন লিখতে আমি আর কাউকে দেখিনি।
  • aranya | 144.160.226.53 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০৭:০৮480262
  • বড় সুন্দর লিখেছ, লামা।
  • byaang | 122.178.192.206 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ০৯:৫৪480263
  • কেকের ঠিক এই কথাটা আমারও মনে হয়। লামার শেষ লাইনগুলো এক লহমায় পুরো ম্যাজিক কার্পেটের মত মনটাকে যে কোথায় উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়!!
  • pi | 72.83.100.43 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ১০:০২480264
  • একদম !
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ১১:০১480265
  • লামা এত কম লেখে কেনো?????????????????????
  • Shibanshu | 117.195.181.27 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ১২:৫৮480266
  • লামা, খুব ভালো লাগলো।
  • ranjan roy | 122.168.174.197 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ১৩:০৯480267
  • কেকে'র সঙ্গে আছি; লামা,এমনি এক এক পাতা ছবি রোজ আঁকো না কেন?
  • I | 14.99.43.15 | ১৩ আগস্ট ২০১১ ১৯:৩১480269
  • খাসা লেখেন তো মহায় !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন