এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এলোপাথাড়ি, আবোলতাবোল

    Lama
    অন্যান্য | ১১ জুন ২০১১ | ৭৭৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Lama | 127.194.246.21 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১০:৫৪480336
  • আমিও একবার ক্লোরোফর্ম আর আয়ডোফর্মের পার্থক্য বলেছিলাম একটার মিষ্টি গন্ধ, আরেকটার হলুদ ক্রিস্টাল।
  • Lama | 127.194.225.67 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০১:৫৮480337
  • একটা গল্প পড়েছিলাম ছোটবেলায়। গল্পের নামটা মনে নেই। লেখকের নামটাও মনে নেই। শুধু গল্পটা মনে অছে। আজ রাতে মেয়ে ঘুমোবার আগে একটা নতুন, মানে আগে না শোনা গল্প শুনতে চাইল। তখন এইটা মনে পড়ে গেল। যেমন যেমন মনে পড়ছে তেমনই লিখছি।

    নদীর ধারে একটা পাহাড় ছিল। পাহাড়ের ওপর একটা কুঁড়ে ঘর। সেই ঘরে চারজন থাকত। বাবা, মা, আর দুই ভাই। তারা রোজ গাছ থেকে ফল পেড়ে খেত, নদী থেকে জল এনে খেত, কুঁড়েঘরের সামনে বসে গল্প করত, পাহাড়ের তলার মাঠে ছেলে দুটো খেলা করত। ভালই ছিল। একদিন দুই ভাইয়ের মনে হল, রোজ রোজ একই ফল খাওয়া, একই মাঠে খেলা করা, একই নদীর জলে সাঁতার কাটা- যেন বড় একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। তখন দুই ভাই পুঁটুলিতে চিঁড়ে গুড় বেঁধে দুজন দুদিকে বেরিয়ে পড়ল।

    হাঁটতে হাঁটতে বড় ভাই পৌঁছে গেল একটা গ্রামে। সেখানে কুমোর পাড়া। কুমোররা মাটি দিয়ে হাঁড়ি কলসি তৈরি করছে। জায়গাটা ভাল লেগে গেল তার। সেই গ্রামেই থেকে গেল বড় ছেলে, মাটির কাজ শিখে নিল।

    ছোট ভাই এদিকে চলতে চলতে পৌঁছে গেছে তাঁতিপাড়ায়। কাপড় বোনার কাজ ভাল লেগে গেল তার। সেখানেই তাঁতের কাজ শিখে জমিয়ে বসল সে।

    ওদিকে তাদের বাবা মা সেই কুঁড়েঘরের সামনে বসে থাকে। গাছ থেকে ফল পেড়ে খায়। নদী থেকে জল এনে খায়। শুধু, এখন আর গল্প করে না। চুপচাপ বসে থাকে।

    এইরকম করে অনেক দিন কেটে গেল। এক রবিবার, কুমোরপাড়ায় কোনো কাজ নেই। অবসরে বড় ছেলের হঠাৎ করে মনে পড়ল তাদের সেই কুঁড়ে ঘরটির কথা, নদীর কথা, মা বাবার কথা। একই সঙ্গে, তাঁতিপাড়াতেও সেদিন ছুটি। আনমনে ভাবতে ভাবতে পুরনো কথা মনে পড়ে যায় ছোট ছেলের।

    তখন দুজনে দুদিক থেকে হাঁটা লাগাল নিজেদের বাড়ির দিকে। অনেক দিন পর, দু ভাইয়ের দেখা হল পাহাড়ের ওপর। কিন্তু সেই কুঁড়ে ঘরটাকে আর খুঁজে পেল না তারা।মা বাবাকেও না।

    খুব সাদাসিধে গল্প। সেই কবে ছোটবেলায় পড়ে একটা মনকেমন মত হয়েছিল। আজ তুষ্টুকে বলার সময় ইচ্ছে করেই শেষটা একটু পালটে বললাম। এরকম সহজ সরল গল্প আজ পর্যন্ত একটাও পড়ি নি।
  • গান্ধী | 213.110.246.230 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৯:৫৮480338
  • কিছু বলার নেই
  • Lama | 127.194.242.16 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:০৫480339
  • এখানে মেঘ গাভীর মত চরে না।

    সবুজ নালীঘাস তো দূরের কথা, সবুজ কোনকিছুই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মরুভূমি না হলেও মরুভূমির মাসতুতো ভাই। খরা আছে, কাঁটাগাছ আছে। আর আছে উট। এমনকি মরীচিকা পর্যন্ত। কিন্তু দোকানপাট বিরল, সিনেমা হল আদৌ নেই, এমনকি কোনো বইএর দোকানও নেই। আর থাকবেই বা কেন? এ কি কলকেতা শহর পেয়েচ যে বাথগেট কোম্পানী তোমার জন্য দোকান খুলে রাখবে? এ হল রাজস্থান। আর এ কাজ কোন দশটা পাঁচটার কেরালীগিরি নয়। লাইমস্টোনের খাদানে কাজ করতে হলে আঁতলামি কলকাতায় রেখে আসতে হবে।

    দুপুর দুটো। কৈলাসজির এনে দেওয়া ডাব্বার খাবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরে সবার অলক্ষ্যে হেঁটে ওভারবার্ডেন ডাম্পের ওপর উঠে যাই। পরিভাষায় ও বি ডাম্প। দূর থেকে দেখাতে পাহাড়ের মতো। কাছে গেলে বোঝা যায় পাহাড় নয়, খোলামকুচির মত পাথরের ছোটবড় টুকরো বছরের পর বছর এক জায়গায় ডাঁই করে রাখতে রাখতে রীতিমত উঁচু ঢিপি গজিয়ে গেছে। ওপর থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। নিজের সঙ্গে আমার একা একা কাটানোর অল্প কটা জায়গার মধ্যে এটা একটা। মণ মণ কাঠ আর আঁটি আঁটি খড় পুড়িয়ে পৃথিবীর ছাল ছাড়াচ্ছে মানুষ। বার করে আনছে মূল্যবান খনিজ। আর পৃথিবীর ছাড়িয়ে নেওয়া খোসা দিন ভর ডাম্পারের পিঠে চেপে জড়ো হচ্ছে মানুষের তৈরি এই পাহাড়ের মাথায়। সকাল থেকে রাত ডাম্পারের আনাগোনার বিরাম নেই। কিন্তু একবারে একটার বেশি ডাম্পার ওখানে ওঠে না বলে, আর ডাম্পারে একজন অপারেটরের বেশি লোক থাকে না বলে, ওভারবার্ডেন ডাম্পের ওপরটা অদ্ভুত নির্জন। একটু যেন ভুতুড়েও।

    একটা ডাম্পার তার মাটিপাথর খালাস করার পর র‍্যাম্প ধরে নেমে আসছে। মুখচেনা ড্রাইভার আমাকে একা ওই রাস্তায় দেখে অবাক। ওখানে কেউ সচরাচর হেঁটে ওঠে না। অপারেটর চোখ আর হাতের আগমার্কা রাহস্থানী মুদ্রায় জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাচ্ছি। উত্তর দেবার আগেই ডাম্পার আমাকে পেরিয়ে চলে যায়। আমিও অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচি।

    এতক্ষণে ওভারবার্ডেন ডাম্পের মাথায়। জায়গাটা উঁচু, চারপাশে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। অনেক উঁচুতে একটা চিল চক্রাকারে উড়ছে। ডাম্পের মাথায় প্রাণের চিহ্ন বলতে শুধু আমি, আর প্রায় আমার সমান উঁচু একটা ফণিমনসা গাছ। নিচে দুর্জনপুরা গ্রামের একমাত্র ভিডিও হলের সামনে জওয়ানী সিরিজ দেখার জন্য স্কুলপালানো ছেলেছোকরার জটলা। দুর্জনপুরা আর কতটুকুই বা। ওইটুকু জায়গা বাদ দিলে যে দিকে দু চোখ যায়, শুধু ফ্যাকাশে ধূসর পাথর। বিবর্ণ, বিরস। বাতাস তেতে উঠে মরীচিকার সুলভ সংস্করণ তৈরি করে। হঠাৎ এক একটা জাআয়গার দিকে তাকালে মনে হয় থইথই করছে জল। কিন্তু সেই জায়গাটায় পৌঁছে যেতে পারলে বোঝা যাবে জল না, কচুপোড়া। দুর্জনপুরার সীমানার বাইরে তিনটে উট চরছে। গাছপালা নেই, চরে কি মোক্ষলাভ করছে ওরাই জানে। একটা উটের গায়ের রং আবার কালো, ছাগলের মত কালো। কালো উট এই প্রথম দেখছি। কোথা থেকে যেন শস্তার টেপরেকর্ডারে গান ভেসে আসে “সন্দেসে আতে হ্যায়...”, আর অমনি আমি হয়ে যাই চিল। অথবা ফনীমনসা।

    চাকরির নামে এ কোথায় পড়ে আছি। কোথায় পড়ে রইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সেসব দিন। দলাদলির, গলাগলির, হঠাৎ অকারণে হেসে ওঠার সেইসব দিন। ধরাকে সরা জ্ঞান করার দিনগুলো। বন্ধুবান্ধব কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে পাশ করার কমাসের মধ্যেই। কোথায় ভেসে গেছে সেসব রাত জাগা আড্ডাগুলো, মান অভিমানগুলো, কলেজ ফেস্টের সেই হাততালিগুলো।

    আমার কাঁটাগুলো আমাকেই বিঁধতে চায়। আমার ডানাদুটো অসাড় হয়ে আসে। আমি আবার চিল থেকে আমি হয়ে গুটিগুটি নিচে নেমে আসি। যন্ত্রের মতো ড্রিলহোলগুলো মাপজোখ করি। বারুদের বিলিব্যবস্থা করি। তারের সঙ্গে তারের গিঁট পাকাই। লোকজনকে নিরাপদ দুরত্বে পাঠাই। সাইরেন বাজানোর তদারক করি। তারপর ভালোয় ভালোয় ব্লাস্টিং শেষ হয়। বারুদ দিয়ে পাথর ফাটান নাকি বিপজ্জনক কাজ। কিন্তু আমি যখনই এটা করি, কেন জানি না, ভয়ের চেয়ে বিরক্তির অনুভূতিটাই যেন বেশি করে হয়।

    কাজের শেষে বারোয়ারি ডাম্পারে চেপে বসা। আমার মতো বাবু শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ার জাতীয় লোকেরা ড্রাইভারের পাশে ঠেসেঠুসে, আর মজদুররা পেছনের ডালায়, যাতে করে অন্যসময় মাটিপাথর বহন করা হয়। ফোরম্যান গোপালজি পেছনে তাকিয়ে দেখে নেন সবাই উঠল কিনা। তারপর চোখের ইশারা করেন ড্রাইভার কানহাইয়াকে। ডাম্পার আমাদের টাউনে নিয়ে আসে। বি কলোনীর পাশের মাঠে নামিয়ে দেয়। যারা সকালে সাইকেল রেখে গিয়েছিল তারা সাইকেলে, বাকিরা হেঁটে বাড়ি চলে যায়। এখনো খটখটে রোদ রয়েছে। কারণ এই এলাকায় সূর্যাস্ত দেরিতে হয়। আমি যেখানে থাকি সেটা ঠিক বাড়ি নয়। তাই আমার ইচ্ছে করে না তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে। তার বদলে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই স্টেশন- নিজের সঙ্গে একা বসার দু নম্বর জায়গাটি আমার।

    সময় কাটানোর জন্যই স্টেশনের একমাত্র স্টলের দুর্মুখ ও খিটখিটে শেঠজির কাছ থেকে দুটো সা্মোসা কিনে খাই। তারপর প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্চে অলসভাবে বসে থাকি। পাশে বসা ফেজটুপি পরা সাদা দাড়ি প্রৌঢ়ের সঙ্গে ভাব জমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি। সন্দিগ্ধ মুখে বয়স্ক মানুষটি উঠে চলে যেতেই যেন মাটি ফুঁড়ে একটি অন্য লোক উদয় হয়। মাথায় টিকি, কপালে তিলক, পরনে ধুতি, কানে দুল। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঈষৎ অনুনাসিক ও অস্বাভাবিক মিহি স্বরে সে আমাকে জানায় তার নাম ভগবতী, স্থানীয় মন্দিরে পূজাপাঠ করে, সেখানেই থাকে, একা থাকে এবং আমাকে আজ রাতে তার ঘরে নিয়ে যেতে চায়। সে যে একাই থাকে এই তথ্যটি সে বিশেষভাবে জাহির করতে থাকলে আমি অস্বস্তিতে পড়ি এবং অন্য একদিন তার আতিথ্য গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্ল্যাটফর্মের অন্য প্রান্তে অন্য একটা বেঞ্চে গিয়ে বসি। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে।

    ঘরে ফেরাটাকে যথাসম্ভব বিলম্বিত করার জন্য শহরের পথে পথে চক্কর কাটি। পুরনো শহর। জাফরিকাটা জানালা আর ছোট ব্যালকনিওয়ালা পুরনো বাড়ি সব। ঝুলবারান্দাগুলো দেখলেই মনে হয় এক্ষুনি কোনো রাজকন্যা এসে দাঁড়াবে। রাস্তাগুলো খুব একটা চওড়া নয়, তবে গাড়িঘোড়াও বেশি নেই। রিকশা জাতীয় যানবাহনের কোনো চিহ্ন নেই। বেশ কিছু পুরনো এবং তত পুরনো নয় এমন মন্দির আছে। সেখানে প্রধাণতঃ স্থানীয় ধণাঢ্য প্ররিবারের স্থূলকায়া মহিলাদেরই আনাগোনা এবং টিমটিমে ইলেক্ট্রিক বাল্বে পরিবেশ একই রকম মলিন ও হিমশীতল। দর্শনার্থীদের মুখে কোনো আওয়াজ নেই বলেই হয়তো, কদাচিৎ মন্দিরের ঘন্টার এক আধটা আওয়াজ যেন এই শীতলতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। শহরের অধিকাংশ লোকের ব্যবহার বেশ রুক্ষ্, একএকসময় অভব্যতার পর্যায়ে চলে যায়। আর যারা সদালাপী তাদের সঙ্গে পরিচিতির পর সাধারণতঃ তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রশ্নটি সাধারাণতঃ সদ্যপরিচিত ব্যক্তির জাতিগোত্র এবং বেতন সম্বন্ধীয় হয়ে থাকে।

    (আপাততঃ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। পরে আবার)
  • sosen | 126.203.199.137 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:১২480340
  • সুন্দর ---
  • আম | 127.194.167.177 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:১৯480341
  • হজবরল টা অসাধারণ ছিল, শেষ হবে না ওটা ? :(
  • শ্রাবণী | 69.94.97.121 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:২২480342
  • বাহ!
  • | 24.96.6.153 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:৩০480343
  • আহা
    তারপর?
  • ব্যাং | 132.167.216.207 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:৩৩480344
  • দিলি তো মনটাকে ঘরছাড়া করে!!
  • গান্ধী | 213.110.246.230 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২০:৫৯480148
  • অদ্ভুত
  • debu | 82.130.151.116 | ০১ অক্টোবর ২০১২ ০১:৪৫480149
  • ঘরে পাতানো দৈ
    বাইরে পাতানো সৈ ( সই)
    সাস্থের পক্ষে উপাদেও
    (বানান ভুলের জন্য ক্ষমা)
  • aranya | 78.38.243.161 | ০১ অক্টোবর ২০১২ ০৩:০১480150
  • মন বিধুর করে দেওয়া লেখা।
  • nina | 78.34.167.250 | ০১ অক্টোবর ২০১২ ০৫:৫৬480151
  • লামার লেখা ---থমকে যায় সময় ! চুপ করে বসে থাকে মন --অনেকক্ষণ!
  • Lama | 127.194.232.223 | ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ ২০:৩০480152
  • এসব কথা আমার বাবা কাকার মুখে শোনা। দেশের বাড়ির গল্প। তবে কিনা, দেশের বাড়িটা এখন অন্য দেশে।

    উত্তর পূর্বের যে ছোট শহরে কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের বাড়ি ছিল, এবং মামাবাড়ি এখনো আছে (এর কোনোটাই কিন্তু আমাদের আদি বাড়ি বা মামাবাড়ি নয়, আমার ঠাকুর্দা এবং দাদামশায় পকেচক্রে এসে এই শহরে থেকে গিয়েছিলেন।), সেখান থেকে গাড়িতে করে টিলা-জঙ্গলের রাস্তা ধরে ঘন্টাখানেক গেলে এক প্রাচীন কালীমন্দির আছে। কালীমন্দিরের পেছনে আছে এক দীঘি। দীঘির অন্য পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া। তার পর কিছুটা নেই মানুষের জমি- নো ম্যানস ল্যান্ড। তারপর আবার একপ্রস্থ কাঁটাতার। তস্য পেছনে একটা রেলস্টেশন। রেললাইনের একপাশ থেকে একটা শাখা বেরিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ড ভেদ করে আমাদের দেশের সীমানায় ঢুকে পড়ে কয়েক গজ এগিয়ে থেমে গেছে। কাঠের স্লিপার উধাও, লোহার পটিগুলো জং ধরে ধরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

    তার পেছনে একটা সাদামাটা দালানে সে দেশের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী চৌকি।

    সেনাবাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসার আগে ওটা ছিল স্কুল। সেই স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন আমার বাবার ঠাকুর্দা, আমার প্রপিতামহ।

    এখনো কালেভদ্রে সেদিকে গেলে, আমাদের সীমানার ভেতরে সবচেয়ে উঁচু যে টিলাটা রয়েছে তার ওপর দাঁড়ালে স্কুলটা, মানে সৈন্য ঘাঁটিটা দেখা যায়। আমাদের শহরে কোনো রেললাইন না থাকলেও, গভীর রাতে কান পাতলে পরে আমাদের প্রপিতামহের ভূতপূর্ব স্কুলের পাশ দিয়ে ছুটে চলা রেলগাড়ির গম্ভীর ভোঁ শোনা যায়।

    দেশ ভাগের পর যারা সর্বস্ব ছেড়ে ওপার থেকে এসেছিল, আমাদের বাপঠাকুর্দা কিন্তু তাঁদের মধ্যে নেই। এঁরা এসেছিলেন আরো আগে। আমার ঠাকুর্দা ব্রিটিশ আমলে পুলিশে কাজ করতেন। আমাদের ছোট্ট দেশীয় রাজ্যটি যখন স্বাধীন ভারতে যোগ দিল, তখন তিনি এখানে চাকরি নিয়ে আসেন, এখানেই কর্মজীবন শেষ করেন।

    তখন আমাদের ছোট শহর যেন নতুন সভ্যতার আলো দেখা আফ্রিকার কোনো গহীন জনপদ। পাহাড় থেকে নেমে আসা দাঁতাল হাতি শহরের রাস্তায় নেমে হুটোপাটি করে, নাম তার গনেশ। আদিবাসী দেবতার পূজার রাত্রে শহরের রাস্তায় কেউ বেরোলে প্রাণদন্ড হয়। রাজার রাজত্ব গেলেও তাঁকে সবাই মহারাজ বলে, তাঁর স্ত্রীকে মহারাণী।

    সে যাই হোক, আসল গল্পটা এটা নয়। এরও অনেকটা আগের ঘটনা। আমার বাবা তখন বালক। বাবার ছোটবেলা কেটেছে চা বাগান এলাকায়। দিনদুপুরে বাঘ বেরোয়। সপ্তাহে একবার স্থানীয় ডাক হরকরা ছাতুয়া বুড়ো আসে চিঠি নিয়ে। মোড়ের মাথায় তার তালপাতার তৈরি ছাতাখানা দেখতে পেলে 'চিঠি চিঠি' করে দৌড়ে যাওয়া তখন বাবাদের একমাত্র বিনোদন।

    সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশপাশ হবে। আমার ঠাকুর্দা কলকাতায় চাকরি করতে গেলেন। সঙ্গে নিলেন আমার বাবাকে। কলকাতায় পিতাপুত্রের সংসার কিছুটা দাঁড়িয়ে যাবার পর ঠিক করলেন ঠাকুমা আর কাকা পিসিদের নিয়ে যাবেন।

    একজন গ্রাম সম্পর্কের দাদু, তাঁর নাম সোনাদাদু কি রাঙাদাদু কিছু একটা হবে, তাঁর ওপর ভার পড়ল বাড়ি দেখেশুনে রাখার।

    নির্দিষ্ট দিনে গরুর গাড়িতে রওনা দিলেন ঠাম্মা, বড়কাকু আর পিসিরা। গরুর গাড়ির পেছন পেছন আসছে বড়কাকুদের পোষা কুকুর ভুলু। সেই সকাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে, ভুলুর চলার বিরাম নেই।

    অবশেষে, যখন রেলগাড়িতে চাপা হল। বড়কাকু ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন, ট্রেনের সঙ্গে দৌড়ের অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভুলু। একটু পরে তাকে আর দেখা গেল না।

    বহুদিন পর সেই গ্রাম সম্পর্কের দাদুর কাছ থেকে একটা চিঠি এসেছিল। তাতে বিষয় সম্পত্তির আপডেট ছিল। কুশলপ্রশ্নাদি ছিল।

    আর কাঠখোট্টা বৈষয়িক কথাবার্তার শেষে লেখা ছিল "ভুলু আর ফিরা আসে নাই।"
  • Lama | 127.194.232.223 | ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ ২১:০৬480153
  • একটু ভাসিয়ে রাখলাম।
  • dd | 132.167.3.179 | ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৫৫480154
  • সিউড়ি ছেড়ে আসছি যখন তখন আমি বছর চারেক।
    জীপের পিছনে বসে দেখছিলাম আমাদের আদপোষা ভুলো ছুটে আসছে আমাদের জীপের পিছনে।খুব ধুলো উড়ছিলো। বিকেল বেলা ছিলো।

    হাল্কা বাদামী রঙের ভুলো খুব দৌড়াচ্ছে আর তার চোখ দুটো খুব কালো। কিন্তু জ্বল জ্বল করছিলো। ভুলো জানতো ওকে আমরা ছেড়ে আসছি।

    এটা সত্যি কি স্মৃতি না পরে আমি ভেবে ভেবেই তৈরী করেছি ? মনে করতে পারি না।
  • Lama | 127.194.227.213 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৫৫480155
  • খালি ডুবে ডুবে যায়।

    একটু ভাসিয়ে রাখলাম। কেহ কিছু মনে কইরেন্না
  • nina | 79.141.168.137 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:৪৯480156
  • নিস্তব্ধতার ওজন ভারি হলে ডুববে না??
  • Lama | 127.194.246.37 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৩৯480157
  • (পরবর্তী অংশ)

    আমি বললাম “তাহলে তোমরা কি করে দেখা কর?”

    বেড়াল বলল, “সে অনেক হাঙ্গাম। আগে হিসেব করে দেখতে হবে তিনি কোথায় কোথায় নেই। তারপর হিসেব করে দেখতে হবে উনি কোথায় কোথায় থাকতে পারেন। তারপর দেখতে হবে, উনি এখন কোথায় আছেন। তার পর দেখতে হবে সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে তখন উনি কোথায় থাকবেন। তারপর দেখতে হবে-”

    আমি বাধা দিয়ে বললাম “সে কি রকম হিসেব?”

    বেড়াল বলল, “সে ভারি শক্ত। দেখবে, কিরকম?” এই বলে সে একটা কাঠি দিয়ে ত্রিফলা ল্যাম্পপোস্টের গোড়ায় লম্বা আঁচড় কেটে বলল “এই মনে কর মন্ত্রী”। বলেই খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে চুপ করে বসে রইল।

    তারপর আবার ঠিক তেমনি একটা আঁচড় কেটে বলল, “এই মনে কর তুমি।” বলে আবার ঘাড় বাঁকিয়ে চুপ করে বসে রইল।

    তারপর আবার হঠাৎ একটা আঁচড় কেটে বলল “এই মনে কর পরিবর্তন।” এমনি করে খানিকক্ষণ কি ভাবে আর একটা করে লম্বা আঁচড় কাটে আর বলে, “এই মনে কর লন্ডন।”- “এই মনে কর উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন”- “এই মনে কর ছত্রধরের হাতে একটা ছাতা”-

    এইরকম শুনতে শুনতে শেষটায় আমার কেমন রাগ ধরে গেল। আমি বললাম “দূর ছাই! কি সব ডিকম্পোজড কথাবার্তা বকছে, একটুও ভাল লাগে না।”

    বেড়াল বল, “আচ্ছা, তাহলে আর একটু সহজ করে বলছি। চোখ বোঁজো, আমি যা বলব মনে মনে তার হিসেব কর।” আমি চোখ বুজলাম।

    চোখ বুজেই আছি, বুজেই আছি, বেড়ালের আর কন সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎ কেমন সন্দেহ হল, চোখ চেয়ে দেখি বেড়ালটা ল্যাজ খাড়া করে জেব্রা ক্রসিং টপকে পালাচ্ছে আর ক্রমাগত ফ্যাচফ্যাচ করে হাসছে।

    কি আর করি, ফুটপাথে বসে পড়লাম। বসতেই কে যেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা মোটা গলায় বলে উঠল, “এক ডলারে কত টাকা হয়?”

    আমি ভাবলাম এ আবার কে রে? এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, এমন সময় আবার সেই আওয়াজ হল, “কই, জবাব দিলে না যে? সাত দুগুনে কত হয়? তখন উপরদিকে তাকিয়ে দেখি, একটা দাঁড়কাক একটা আইপ্যাড নিয়ে কি যেন করছে, আর একএকবার ঘাড় বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

    আমি বললাম “পঞ্চান্ন টাকায় এক ডলার।”

    কাকটা অমনি দুলে দুলে মাথা নেড়ে বলল, “হয়নি, হয়নি, ফেল।”

    আমার ভয়ানক রাগ হল। বললাম। “নিশ্চয় হয়েছে। পঞ্চান্ন টাকায় এক ডলার, সাতাশি টাকায় এক পাউন্ড, সত্তর টাকায় এক ইউরো।”

    কাকটা কিছু জবাব দিল না। খালি পেনসিল মুখে দিয়ে খানিকক্সণ কি যেন ভাবল। তারপর বলল, “পঞ্চান্ন টাকায় এক ডলার, হাতে রইল সুইস ব্যাঙ্কের পাসবই।”

    আমি বললাম, “তবে যে বলছিলে পঞ্চান্ন টাকায় এক ডলার হয় না? এখন কেন?”

    কাক বল, “তুমি যখন বলেছিলে তখনো পুরো পঞ্চান্ন হয় নি। তখন ছিল চুয়ান্ন দশমিক নয় নয় নয় নয় নয় নয়। আমরা যদি ঠিক সময় বুঝে ধাঁ করে পোনোবদাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে না দিতাম তাহলে এতক্ষণে হয়ে যেত ছাপ্পান্ন।”

    আমি বললাম “এমন আনাড়ি কথা তো কখনো শুনি নি। পঞ্চান্ন সবসময়েই পঞ্চান্ন। পোনোবদা পেসিডেন হলে যা, বাপ্পি লাহিড়ী হলেও তাই।”

    কাকটা ভারি অবাক হয়ে বলল, “তোমাদের দেশে সময়ের দাম নেই বুঝি?”

    আমি বললাম “সময়ের দাম কিরকম?”

    কাক বলল, “এখানে কদিন থাকতে, তাহলে বুঝতে। আমাদের বাজারে সময় এখন ভয়ানক মাগগি, এতটুকু বাজে খরচ করবার জো নেই। এই তো কদিন খেটেখুটে চুরিচামারি করে খানিকটা সময় জমিয়েছিলাম, তাও তোমার সঙ্গে তর্ক করতে অর্ধেক খরচ হয়ে গেল।” বলে সে আবার হিসেব করতে লাগল। আমি অপ্রস্তুত হয়ে বসে রইলাম।

    এমন সময় হঠাৎ গাছের একটা ফোকর থেকে কি যেন একটা সুড়ুৎ করে পিছলিয়ে মাটিতে নামল। চেয়ে দেখি দেড় হাত লম্বা এক বুড়ো, তার পা পর্যন্ত সবুজ রঙের দাড়ি।, হাতে একটা হুঁকো, তাতে কলকে টলকে কিছু নেই, আর মাথাজোড়া টাক। টাকের ওপর খড়ি দিয়ে কে যেন কি সব লিখেছে।

    বুড়ো এসেই খুব ব্যস্ত হয়ে হুঁকোতে দুএক টান দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কই, হিসেবটা হল?”

    কাক খানিক এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল “এই হল বলে।”

    বুড়ো বলল, “কি আশ্চর্য! সার্ধশতবর্ষ পার হয়ে গেল এখনো হিসেবটা হয়ে উঠল না?”

    কাক দু চার মিনিট খুব গম্ভীর হয়ে পেনসিল চুষল, তারপর জিজ্ঞাসা করল, কত বছর বললে?”

    বুড়ো বলল “দেড়শো।”

    কাক অমনি গলা উঁচিয়ে হেঁকে বলল “লাগ লাগ লাগ দুশো।”

    বুড়ো বলল “আড়াইশো”। কাক বলল “তিনশো”। বুড়ো বলল “তিনশো দুই।” কাক বলল “চারশো কুড়ি।” ঠিক যেন নিলেম ডাকছে।

    ডাকতে ডাকতে কাকটা হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল “তুমি ডাকছ না যে?”

    আমি বললাম “খামকা ডাকতে যাব কেন?”

    বুড়ো এতক্ষণ আমায় দেখে নি, হঠাৎ আমার আওয়াজ শুনেই সে বনবন করে আট দশ পাক ঘুরে আমার দিকে ফিরে তাকাল।

    তার পরে হুঁকোটাকে দূরবীনের মতো করে চোখের সামনে ধরে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার পর পকেট থেকে কয়েকখানা রঙিন কাঁচ বের করে তাই দিয়ে আমায় বার বার দেখতে লাগল। তার পর কোত্থেকে একটা পুরনো দরজির ফিতে এনে সে আমার মাপ নিতে শুরু করল, আর হাঁকতে লাগল, "এস সি পঞ্চাশ, এস টি পঞ্চাশ, ও বি সি পঞ্চাশ, মতুয়া পঞ্চাশ।"

    আমি ভয়ানক আপত্তি করে বললাম, "এ হতেই পারে না। এস সি পঞ্চাশ, এস টিও পঞ্চাশ? আর জেনারেল পাবলিক কি নেপথ্যে কোলাহল?"

    বুড়ো বলল, "বিশ্বাস না হয়, দেখ।"

    দেখলাম ফিতের লেখা-টেখা সব উঠে গিয়েছে, খালি ৫০ লেখাটা একটু পড়া যাচ্ছে, তাই বুড়ো যা কিছু মাপে সবই পঞ্চাশ হয়ে যায়।
  • I | 24.99.22.203 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৫২480159
  • ঃ))
    কোথায় ছিলে ওস্তাদ, তুমি কোথায় ছিলে !
  • Lama | 127.194.232.119 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৭:০৭480160
  • ডাক্তার, বইমেলায় যাবা নাকি আজ?
  • I | 24.99.177.222 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৭:৫০480161
  • যাবো সার। দেখা হবে?
  • Lama | 127.194.229.136 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২২:১২480162
  • দেখা হল না। তাড়াতাড়ি চলে আসতে হল, শরীরটা ভালো লাগছিল না। পরপর প্রায় তিন রাত জাগা হয়ে গেছে।
  • Tim | 188.91.253.11 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:৩৭480163
  • লামাদা ফিট হয়ে যাও জলদি। টইটা চলুক।
  • dipak basu | 77.68.240.202 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ১০:৩০480164
  • মন কেমন করা লেখা? প্রথমে তো মন কেমন করবে এই লোভেই পড়তে আসা। তারপর এই লামার লেখাগুলো পড়ে শুধু মন কেমন করা নয়, পেটে বিচ্ছিরি রকমের মোচড় দেয় আর এমন একটা ইয়ে হয় সারাদিন আর কিসসু ভাল্লাগে না। নাঃ আর পড়ব না এই সব ছাই ভষ্ম কক্ষনো না।
  • Abhyu | 107.89.16.201 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ১০:৩৬480165
  • তা বটে। কিন্তু লামার স্মৃতিচারণ টাইপের লেখাগুলোর তুলনা হয় না। সেই লিখেছিল - বাড়ি ফিরে মা-কে বলাতে মা বিশ্বাসই করল না। কচুরিপানা নাকি নদীতে থাকে না। কচুরিপানা পুকুর ছেড়ে কোথাও যায় না। আমরাও ভেবেছিলাম পুরনো শহর ছেড়ে কোথাও যাব না। কিন্তু ঘটনাচক্রে, তিরিশ বছর পর দেখছি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছি। কেউ কলকাতায়, কেউ সিধে আমেরিকায়। মানুষই সময়ের স্রোতে কোথায় কোথায় ভেসে যায়, কচুরিপানা তো সামান্য জিনিস!
  • PantaBhaat | 77.68.240.202 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ১১:০০480166
  • কোনো কোনো গল্প পড়ে মনে হয় ওই জায়গাটায় বোধ হয় ছোটবেলায় গেছিলাম অন্তত একবার হয়তবা ছিলাম ও সারা ছোটবেলাটা । সবই কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে । না না এইভাবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে আছে?
  • Lama | 126.202.193.203 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:০৪480167
  • আচ্ছা, একটা ভাল গপ্পো বলছিঃ

    আমার একটা গোপন দুঃখ আছে। বৌকে কিছুতেই সারপ্রাইজ দিতে পারি না। সেদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে পা টিপে টিপে ঢুকছিলাম চমকে দেব বলে, কেয়ারটেকার ভূতনাথ হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে উঠল “অ বৌদি, দাদা আসতেচে”। শ্যালিকার সঙ্গে পরামর্শ করে গিন্নির জন্মদিনে দেব বলে লুকিয়ে লুকিয়ে এক ঘড়ি কিনলাম, তস্য কন্যা পরদিনই ফোন করে বলে দিলেন, “ও মাসী, মেসো না, তোমার জন্য।।।”
    তো, এইরকম সব হয়।

    সুখ দুঃখের এইসব কথা ব্যক্ত করছিলাম খুড়তুতো দাদার কাছে। তার কাছেই এই কাহিনী শোনা। দাদা আবার শুনেছিল আমাদের ঠাকুর্দার কাছে। বাবার বদলির চাকরি ছিল বলে ঠাকুর্দাকে আমি খুব একটা পাই নি। কিন্তু বংশের অনেক গুপ্তকথা ঠাকুর্দা বলে গেছেন আমার খুড়তুতো দাদাকে।

    হয়েছে কি, আমার প্রপিতামহ নিবারনচন্দ্রের গৃহে একবার এক সাধু আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বললেন “বৎস নিবারণ, এক ঘটি জল দাও।“ নিবারণচন্দ্র তাঁর পত্নী, মানে আমাদের প্রপিতামহীকে বললেন “অনেক পুণ্যফলে প্রভু আজ আমাদের আতিথ্য নিয়েছেন। আর সন্ন্যাসীকে তুষ্ট করা সকল গৃহীর কর্তব্য। তুমি এক কাজ করো, জলের বদলে এক ঘটি দুধ নিয়ে প্রভুকে দাও, উনি প্রসন্ন হবেন।”

    কীয়ৎক্ষণ পর, খিড়কির কাছ থেকে সন্ন্যাসীর ক্রুদ্ধ কন্ঠস্বর শোনা গেল, “পাপিষ্ঠ নিবারণ, তুই আজ আমাকে যা চমক দিলি তাতে আমি অত্যন্ত কুপিত হয়েছি। আস শাপ দিচ্ছি, তোর বংশে কেউ কখনো কাউকে চমক দিতে পারবে না।

    এই পর্যন্ত শুনে কেমন ব্যোমকে গিয়ে আমি বললাম “কিন্তু প্রভু এত খচে গেলেন কেন?”
    এক গাল ধোঁয়া ছেড়ে খুড়তুতো দাদা বললেন, “আরে প্রভু কি খাবার জল চেয়েছিলেন নাকি? জল ওনার দরকার হয়েছিল পশ্চাদ্দেশ প্রক্ষালনের নিমিত্ত। আর সেকালের গরুর দুধ ছিল ফেভিকলের মতো ঘন। এক টিন মিল্কমেড নিয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখগা অভিশাপ দিতে ইচ্ছে হয় কিনা।”
  • Abhyu | 107.89.23.207 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ২২:০১480168
  • :)))
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ২২:৪১480170
  • ওরে:!!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন