এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Achintyarup Indra Ray | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৩:৫৩480350
  • বাপের বাপেরে কয় দাদা। তার বাপ পরদাদা। প্রপিতামহ। আমার প্রপিতামহ ছিলেন গগন চন্দ্র রায়। সাং : আঠার বাড়ীয়া, ময়মনসিংহ জিলা।

    প্রায় নব্বই বছর আগে গগন রায় একটি "আত্মকথা' লেখেন। সে আত্মকথা প্রকাশ করার বাসনা ছিল নিশ্চয়ই, কারণ তা দস্তুরমত প্রেসকপি। দাম পর্যন্ত লেখা। ভূমিকাও। কি কারণে জানিনা প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। দুশো পৃষ্ঠারও বেশি সেই পাণ্ডুলিপি স্বাধীনতা-দেশভাগ-দাঙ্গার উথালপাথাল পেরিয়ে পরিবারের সঙ্গে যে রয়ে গিয়েছিল তা-ই যথেষ্ট সুখের কারণ বলে মনে করি। এতগুলি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর পাতাগুলি জীর্ণ হয়েছে, ভঙ্গুরও। হাতের লেখা কোথাও কোথাও ঝাপসা হয়ে দুর্বোধ্য হয়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা পড়েছেন অনেকে, কিন্তু পরিবারের বাইরে এ পর্যন্ত খুব বেশি কেউ পড়েছেন বলে জানি না।

    এত বছর পরে সেই লেখা গুরুদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা গেল।
  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৪:০২480440
  • আত্মকথা অর্থাৎ নিজ বংশ
    বিবরণী।

    শ্রী গগন চন্দ্র রায় প্রণীত।

    আঠার বাড়ীয়া।

    সা ডি: কিশোরগঞ্জ।

    জেলা ময়মনসিংহ।

    ঁশ্রীবৃন্দাবনধামে এই গ্রন্থ
    প্রণীত করা হইল
  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৪:০৬480451
  • আত্মকথা।

    উৎসর্গপত্র।

    ভক্তবীর স্বর্গীয় খুল্লপিতামহ

    ঁজয়গোবিন্দ রায় মহাশয়ের

    শ্রীচরণে

    ভক্তি ও প্রীতির

    নিদর্শনস্বরূপ

    এই গ্রন্থ

    উৎসর্গীকৃত হইল।

    সেবকাধম

    শ্রী গগন চন্দ্র রায়

    ১৩৩১ সাল
  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৪:১৯480462
  • আত্মকথা।

    ভূমিকা।

    এই গ্রন্থের কোন ভূমিকা লিখার প্রয়োজন না থাকিলেও বাধ্য হইয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিবার উপলক্ষে নিম্নলিখিত কথাগুলী অতি সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করিলাম।

    পাঠ্যাবস্থা হইতেই মনে এই বাসনা জাগে যে পূর্ব্বপুরুষগণের বিবরণ লিখিয়া না রাখিলে পরবর্ত্তী বংশধরগণ তৎসম্বন্ধে কিছুই জ্ঞাত হইতে পারিবে না। সে সময় হইতেই কিছু কিছু লিখিতে আরম্ভ করি। কিন্তু কর্মজীবনে তাহা শেষ হয় নাই। জীবনের সায়াহ্নকালে অবসরপ্রাপ্ত হইয়া যাহা লিখিলাম তাহা পূর্ব্বকার লিখিত ভিত্তিমূলক হইলেও আমূল পরিবর্ত্তনই করা হইল।

    এই গ্রন্থের খসরা সুলেখক ময়মনসিংহের গৌরব বহুগ্রন্থ প্রণেতা একনিষ্ঠ সাহিত্যসেবী শ্রীযুক্ত বাবু কেদারনাথ মজুমদার বিদ্যাভূষণ মহাশয় অনুগ্রহ প্রকাশে পরিশ্রম সহকারে সংশোধনাদি করিয়া দেওয়ায় তাঁহাকে কৃতজ্ঞতার সহিত অশেষ ধন্যবাদ প্রদান করিতেছি।

    এই গ্রন্থ বিক্রয়ের জন্য লিখা নহে। তবে যদি কেহ খরিদ করিতে ইচ্ছুক হন, তবে কেবল ছাপা খরচটা আদায়ের জন্য

    মূল্য ।।০ আট আনা মাত্র।

    শ্রি গগন চন্দ্র রায়, গ্রন্থকার

    বা: ১৩৩১ সাল জৈষ্ঠ।

    ঁবৃন্দাবনধাম।
  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৫:০৫480473
  • উপক্রমণিকা।

    ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত: কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীন আঠার বাড়ীয়া গ্রামে বর্ত্তমানে যে ইন্দ্ররায় বংশ বাস করিতেছেন তাঁহাদের আদি পুরুষ গন্দর্ব্বনারায়ণ ইন্দ্র মহাশয় গুরু, পুরহিত, পরিজন ও পুষ্যবর্গসহ বাঙ্গলা ১১০০ শত শতাব্দির ১ম ভাগে ঢ়াড় দেশ হইতে আগত হইয়া পূর্ব্বময়মনসিংহে বসতি স্থাপন করেন।

    তাঁহারা প্রথমত: প্রসিদ্ধ মেঘনা নদের সন্নিকটবর্ত্তী কোনও স্থানে বাসস্থান মনোনীত করত: কালাতিপাত করিতে লাগিলেন; কালক্রমে দৈবউৎপাতে বাসস্থান পরিবর্ত্তনের প্রয়োজন ঘটীলে, গুরু, পুরহিত ও অন্যান্য প্রতিবেশীগণ সকলেই উদবিগ্ন হইয়া যাহার তাহার সুবিধাজনক স্থানে গমন করিতে লাগিলেন।

    সিমলাই কাশ্যপ গোত্রীয় কুলপুরহিত বংশ প্রসিদ্ধ অষ্টগ্রামে বাসস্থান নির্ণয় করিয়া লইলেন। গুরু বংশীয় গোস্বামী প্রভূগণ বংশবিস্তারহেতু কেহ কেহ ময়মনসিংহ জেলার অধীন প্রসিদ্ধ যশোদল, চান্দুরা ও অরণ্যপুরে এবং কেহ কেহ ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত: পত্তনগ্রামে ও শ্রীহট্ট জেলার অধীন মুড়াকইরগ্রামে আবাসবাটী স্থাপনে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন।

    তাঁহারা যে স্থানে প্রথমত: বাস করিয়াছিলেন তাহা গোসাইপুর ও যে স্থানে হোম অর্থাৎ যজ্ঞ করিয়াছিলেন তাহা হোমাইপুর নামে খ্যাত হইয়া কাস্তুন গ্রামের অনতিদূরে আজও বর্ত্তমান থাকিয়া, সেই যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণগণের মহিমা ও তেজস্বীতা ঘোষণা করিতেছে।

    ইন্দ্রবংশের আদিপুরুষ মহাশয় ময়মনসিংহ জেলার হাজরাদী পরগণার অন্তর্গত: সাজনপুর নামক গ্রামে, বাসস্থান নির্ণয় করিলেন। ঐ স্থান তখন জঙ্গনবাড়ীর খ্যাতনামা জমীদারগণের ছোটো পাচ আনী হিস্যার জমীদারী ভূক্ত ছিল। গন্দর্ব্বনারায়ণ ইন্দ্র মহাশয় নিজ প্রতিভাবলে উল্লিখিত জমীদার সরকার হইতে নিজ বাসস্থান সংক্রান্ত বহুভূমি সম্বলিত একখণ্ড তালুক গঠন করিয়া লইয়া তাহা গন্দর্ব্বসাজনপুর গ্রাম নামে অভিহিত করিলেন ও তন্মধ্যে নানাশ্রেণীর প্রজাগণসহ নিজ আবাসবাটী নির্ম্মাণে আধিপত্য বিস্তার পূর্ব্বক কালাতিপাত করিতে প্রয়াসী হইলেন।

  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৫:৫৩480484
  • ইন্দ্রবংশের আদি বাসস্থান বীরভূম জেলার অধীন সদর মহকুমার অন্তর্গত:, তাহা উত্তর ঢ়াড় দেশের একাংশ, ঐ স্থানে অদ্য পর্য্যন্ত ঐ বংশীয় বহুলোক বাস করিতেছেন। লেখকের আত্মীয় ভেটারনেরী ডিপার্টমেণ্টের সুপরিচিত ইনস্‌পেকটার শ্রীমান মোক্ষদা প্রসাদ ঘোষ মফস্বল পরিভ্রমণে সিউরী ইত্যাদি স্থানে যাতায়াত করিয়া ঐ বংশীয় লোকের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়ায় লেখককে অবগত করিয়াছেন। এই বংশীয় অনেক লোক বর্দ্ধমান জেলায়ও রহিয়াছেন।

    ইন্দ্রবংশের একশাখা অধুনাও শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত: প্রসিদ্ধ উচানী পরগণায় বাস করার বিষয় লেখক অবগত আছেন।

    কালক্রমে গন্দর্ব্বনারায়ণ ইন্দ্র মহাশয় এ নশ্বর পৃথিবীর মায়া পরিত্যাগ করিলে তৎপুত্র ও পৌত্রগণ বংশবিস্তার হেতু কি অন্যবিধ কারণে পার্শ্ববর্ত্তী আয়জন নামক গ্রামে বাসস্থান পরিবর্ত্তন করিলেন। তখন ঐ গ্রামে মাত্র ১৮ টী হিন্দু তালুকদারগণের বসতী স্থাপন হইয়াছে। সকলে মিলিয় ঐ যাবনিক শব্দ উঠাইয়া দিয়া গ্রামের নূতন নামকরণ করিলেন ""আঠারবাড়ীয়া''। লেখকের বাড়ীতে ১১০০ শতাব্দীর শেষভাগের লিখিত মনুষ্য ও মহিষ খরিদের যে সকল কবালাদি দলীল দৃষ্ট হয় তাহাতে "আয়জন' নাম থাকা দৃষ্ট হয়।

    ঐ নূতন আবাসবাড়ী ও তৎসংলগ্ন স্থান নিয়া এক তালুক ফকীরচন্দ্র ইন্দ্র নামাকরণে পূর্ব্বোলিখিত জমীদার সরকার হইতে বন্দবস্ত করা হইল। লেখক প্রভৃতির পাকা ইমারতাদি বিশিষ্ট বর্ত্তমান খানাবাড়ীও এই তালুকেরই ভূক্ত।

    ফকীরচন্দ্র ইন্দ্র মহাশয় গন্দর্ব্বনারায়ণ ইন্দ্র মহাশয়ের পুত্র। তাঁহার ঔরষে তিন পুত্র জন্মে। জয়দেব, রামজগন্নাথ ও গোপীনাথ। রামজগন্নাথের বংশধর কেহ নাই।

    গোপীনাথের বংশধর কৃষ্ণকিঙ্কর ইন্দ্ররায় পারস্য ভাষায় পারদর্শী হইয়া কিঙ্কর মুনশী নামে সুপরিচিত হন। ধারীশ্বর গ্রামের অনুপনারায়ণ চৌধুরী মহাশয়ের একমাত্র কন্যা সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়াকে তিনি উদ্‌বাহ বন্ধনে আবদ্ধা করিয়া শ্বশুরালয়ে বাস করিতে থাকেন। অনুপনারায়ণের সম্পত্তির ভাবী উত্তরাধিকারী ঐ কন্যামাত্রই থাকা হেতু মুনশী মহাশয় ভবিষ্যতের আশায় আশাবদ্ধ হইয়া শ্বশুরের সম্পত্তির সাশন সমরক্ষণে নিযুক্ত হইলেন। যথাসময়ে তৎপত্নীর গর্ভে তাঁহার ঔরষে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তৎপর মুনসি মহাশয় পরলোকগামী হইলে তৎপুত্র মোহনকিশোরও ১০/১২ বৎসর বয়ক্রম কালে তাঁহার অনুগমন করে।

    তৎপর আর তাঁহাদের কোন সন্তানসন্ততি জন্মে নাই। বিধবা সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া দীর্ঘকাল জীবিতা থাকিয়া অনুমান ৮০ বৎসর বয়সে বিগত ১৩০০ সনের বৈশাখ মাসে পরলোকগামিনী হইয়াছেন। তাঁহার পৈতৃক সম্পত্তির তিনিই একমাত্র উত্তরাধিকারিণী ছিলেন, কিন্তু তাহা তৎপিতৃকৃত ঋণদায়ে আদালত কর্ত্তৃক নীলামে বিক্রীত হইলে, তৎসাক্ষাৎ মাস্‌তুত ভ্রাতা আঠারবাড়ীর প্রসিদ্ধ প্রবলপ্রতাপান্নিত জমীদার শম্ভূচন্দ্র রায় মহাশয় খরিদ করেন; তাহাতে সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়ার শোচনীয় অবস্থা উপস্থিত হইলে, উল্লিখিত স্বজনবৎসল জমীদার মহাশয় দয়াপরবশ হইয়া তাঁহার নীলাম খরিদা সাজনপুর মহাল মধ্যে কতক ভূমি সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়াকে অল্প জমায় জোতস্বরূপ প্রদান করেন। তাঁহার দেহাবসান পর্য্যন্ত ইহাই তাঁহার একমাত্র জীবিকা নির্ব্বাহের উপায়স্বরূপ ছিল। সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া অল্পবয়সে বিধবা হওয়ায় ও পিত্রালয়েই নিয়ত বাস করায় তাঁহার পুরুষপ্রকৃতি প্রকাশ পাইয়াছিল এবং উত্তরকালে তিনি স্বনাম প্রসিদ্ধা হইয়া জনসমাজে বিশেষ পরিচিতা হইয়াছিলেন। তাঁহার বুদ্ধির প্রখরতায় তিনি পুরুষ মহলেও অধিনায়কত্ব করিয়া গিয়াছেন। তৎমৃত্যুর পর তৎত্যজ্য সম্পত্তি উত্তরাধিকার স্বরূপে গ্রন্থলেখক ও তদ্‌ভ্রাতাতে পর্য্যাপ্ত হইয়াছে। এইরূপে গোপীনাথ ইন্দ্র মহাশয়ের বংশের ধ্বংশ সাধন হইল।

    ---------

  • achintyarup | 59.93.240.54 | ০৬ জুন ২০১১ ০৫:৫৬480495
  • * শ্রী গগন চন্দ্র রায়
  • kumu | 122.160.159.184 | ০৬ জুন ২০১১ ১৪:১৭480506
  • খুব ভাল লাগল পড়ে।সাবিত্রী দাস্যার বিষয়ে আরো আছে নিশ্চয়ই।এত,এত ডিটেল কী ভাবে লেখকের মনে ছিল?
  • Ishan | 122.248.183.1 | ০৬ জুন ২০১১ ১৫:০০480517
  • লেখাটা কি পুরোটা টাইপ করা আছে?

    তাইলে দুইখান কথা ছিল।
  • saikat | 202.54.74.119 | ০৬ জুন ২০১১ ১৫:২৪480351
  • হুঁ, সম্পাদক ফীল্ডে নামলেন। :-)
  • M | 59.93.214.145 | ০৬ জুন ২০১১ ১৭:৫৬480362
  • চিন্টুবাবু, ঈশেন যাই বলুকনা কেন, টই যেন মাঝপথে থেমে না যায়। এটা থ্রেট কিন্তুক।:P
  • achintyarup | 59.93.255.78 | ০৭ জুন ২০১১ ০৪:০৭480373
  • ন্না:। এইখানেই টাইপ করিব মনস্থ করিয়াছি।
  • Sibu | 66.102.14.1 | ০৭ জুন ২০১১ ০৪:৪২480384
  • 'মনুষ্য ও মহিষ খরিদের কোবালাদি'!! ইন্টারেস্টিং।
  • achintyarup | 59.93.254.159 | ০৭ জুন ২০১১ ০৫:২৩480395
  • আত্মকথা -- নিজবংশবিবরণী।
    ১ম পরিচ্ছেদ।

    জয়গোবিন্দ রায়।

    জয়দেব ইন্দ্র মহাশয়ের দুই পুত্র -- জ্যেষ্ঠ -- জয়গোবিন্দ কনিষ্ঠ --রাজকৃষ্ণ। জয়গোবিন্দ পারস্য ভাষায় সুপণ্ডিত হইয়া ময়মনসিংহ সহরে গমন করেন। তখন .... কর্ত্তৃপক্ষই ওকালতী ও মোক্তারী আইন ব্যবসায়ের সনদ দিবার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন। জয়গোবিন্দ রায় স্বীয় বুদ্ধি ও প্রতিভাবলে অচিরেই ওকালতী পরীক্ষা পাশ করিয়া সনদ গ্রহণে কার্য্য আরম্ভ করিলেন ও কিশোরগঞ্জের স্বনামখ্যাত অতি বড় ধনী পরামাণিকদিগের যে বাসাবাটী সহরে এখনও বর্ত্তমান আছে সেই বাসাবাটীতে পরামাণিক মহাশয়দিগের নিয়ত উকীল স্বরূপে বাস করিতে লাগিলেন।

    তখন জজকোর্টের উকীলদিগকে বাগদ্বন্দের উকীল বলিত। সহরে মাত্র ৭।৮ জন উকীল ছিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই জয়গোবিন্দ রায় মহাশয় ওকালতী ব্যবসায়ে দক্ষতা লাভ করিয়া প্রভূত অর্থ উপার্জন করিতে লাগিলেন। ... জয়গোবিন্দ রায় তাহাতে বিশেষ ... হইয়া উঠিলেন। ওকালতীর প্রথম অবস্থায়ই, বাটীতে পাকাগৃহ নির্ম্মাণে তথায় বিগ্রহস্থাপন ও সেবাপূজা করার বাসনা মনে জাগরুক হইল। বর্ত্তমান বাটীতে তাহা সঙ্কুলান না হওয়া হেতু নূতন বাড়ী করার প্রয়োজন হইল।

    তখন নিজগ্রামের পশ্চীমপাড়ায় বর্ত্তমানে যেঁ রামচন্দ্র চক্রবর্ত্তী মহাশয়ের বাটী আছে, তাহার দক্ষীণ দিকে যে নাপিত ও ধুবীর বাটী, সেই স্থানে ইন্দ্রবংশের বাস ছিল। ঐ বাটী সল্পায়তন বিধায় ও অট্টালীকা নির্ম্মাণের অনুপযোগী হেতু, পূর্ব্বপাড়ায় মাঝিবংশের বাগানবাটীর স্থান যাহা বর্ত্তমান ইন্দ্রবংশের খানাবাড়ী বটে, তাহাই মনোনীত করা হইল। তখন ঐ বংশের শোচনীয় অবস্থাহেতু তাহাদের শেষ বংশধর হইতে ঐ বাগানবাটী সংক্রান্ত তালুকটীই খরিদ করিয়া লইলেন ও পশ্চিমপাড়ার বাটীতে জনৈক আত্মীয়কে রাখিয়া, পুর্ব্বপাড়ায় নূতন বাটীনির্ম্মাণে তাহাতে বাস করিতে লাগিলেন এবং সর্ব্বপ্রথমেই দ্বিতল অট্টালীকা নির্ম্মাণ করিয়া তাহার উপরিতলস্থ মধ্যবর্ত্তী বড় প্রকোষ্ঠেঁ গোবিন্দজিও বিগ্রহ স্থাপন করিলেন। উক্ত বিগ্রহ রাধারাণীর মূর্ত্তীসহঁ শ্রীবৃন্দাবনধাম হইতে আনয়ন করত: বহু আড়ম্বরে যোগলমূর্ত্তির পরিণয় উৎসবক্রীয়া সমাপনান্তে তাঁহার সেবাপুজার বিধি ব্যবস্থাদি করিয়া দিলেন। প্রত্যহ অর্দ্ধমোন দুগে্‌ধর পায়েশ ও তদোপযোগী অন্যান্য উপকরণে, মহাধুমধামে ও ভক্তিপ্রেমের নবানুরাগে ঠাকুর সেবা ও কীর্ত্তন মহোৎসবাদি হইতে লাগিল।
  • achintyarup | 59.93.195.124 | ০৭ জুন ২০১১ ০৫:৪৭480406
  • *দুগে্‌ধর
  • achintyarup | 59.93.195.124 | ০৭ জুন ২০১১ ০৫:৪৮480417
  • ১১৭৬ সালের মন্বন্তর সময়ে যে সকল লোক নিরন্ন ও গৃহশূণ্য হইয়া জয়গোবিন্দ রায় মহাশয়ের আশ্রয় পাইয়াছিল তাহাদের অনেকেই নূতন খানাবাড়ীর পরিখার ভিতরে স্থান পাইল। ইহাদের মধ্যে গোপ, কর্ম্মকার, ক্ষৌরকার, শূদ্রভাণ্ডারী ও ভূঁইমালি প্রভৃতি জাতীয় লোক ছিল। জয়গোবিন্দ রায়ের প্রেমভক্তির আকর্ষণে এই সকল লোক আকৃষ্ট হইয়া, দ্বিতল অট্টালীকার উপরে ঠাকুর আঙ্গীনায় প্রত্যহ সংকীর্তন করিয়া কীর্ত্তনানন্দের বিরোধী লোকদিগের নিদ্রাসুখের ব্যাঘাত জন্মাইল। মঙ্গলানন্দ সিং নামক এক বৃদ্ধ ভাণ্ডারী শ্রেণীর লোক নাকি বাড়ী হইতে বলিত ""গুপ্তনাম ব্যক্ত করিয়া হতভাগারা দালানটা পাড়াইয়া ভাঙ্গে কেন?'' তখনও বোধহয় বৈষ্ণবের সংখ্যা এই প্রদেশে কম ছিল। শাক্তপ্রধান স্থানে এরূপ কথা বলা কিছুই বিস্ময়ের বিষয় নহে।
  • kumudini | 122.160.159.184 | ০৭ জুন ২০১১ ১১:১৭480428
  • বানান অপরিবর্ত্তিত?অর্থাৎ তখন পশ্চীম,দক্ষীণ,অট্টালীকা এই ভাবে লেখা হত।
  • ranjan roy | 122.168.172.78 | ০৭ জুন ২০১১ ২১:৫০480438
  • কুমুদিনী,
    হ্যাঁ, বানান অপরিবর্তিত।
    অচিন্ত্য,
    সাবিত্রী দাস্যার ""পুরুষ'' প্রকৃতি বিষয়ে দু'পয়সা।
    বাবার কাছে শোনা।
    উনি নাকি জমি/সম্পত্তির ঝগড়ায় হাজির হতে পাল্কি চড়ে আসছিলেন। সামনে দুজন তলোয়ারধারী পদব্রজে। তাদের নির্দেশ দেয়া ছিল -- কুন ব্যাডা যদি পাল্কি আটকায় তার মাথাডা আলগা কইর‌্যা দিবি।
    লেখক গগনচন্দ্রের পিতামহ জয়দেব ইন্দ্র সম্বন্ধে একখান কথা, আমার পিতামহ সতীশচন্দ্রের মুখে শোনা।
    -- তাইন নীলকুঠির নীলের নৌকা ডুবাইয়া দিছিলেন।
    আমাদের একমাত্র বৃটিশবিরোধী ঐতিহ্য:))))।
  • ranjan roy | 122.168.172.78 | ০৭ জুন ২০১১ ২২:০৪480439
  • শিবু,
    ""মনুষ্য ও মহিষ খরিদের কোবালাদি""-----।
    পূববাঙ্গলায় মানুষ খরিদ-বিক্রির প্রথা খুব ব্যতিক্রমী নয়।
    সমরেশ বসুর ""ভানুমতীর নবরঙ্গ'' উপন্যাসে এর উল্লেখ আছে।
    বাবার কাছে শুনেছি ব্রাহ্মণদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় অনেক সময় বয়স্ক কুলীন গরীব ব্রাহ্মণের মেয়ে কম পড়তো। সেই সুযোগে কিছু লোক নৌকো করে গরীব মেয়েদের এপার বাংলা থেকে ওপারে নিয়ে পিতৃমাতৃহীন সদ্বংশজাত সুলক্ষণা বামুনের মেয়েটিকে উদ্ধার করুন বলে বিক্রি করে দিত। তারপর ভাদ্রমাসে কোন দিন বিষ্টি বন্ধ হয়ে কড়া রোদ উঠলে সেই বৌয়ের মুখ দিয়ে বেরোত--- এমন দিনে কাঁচা চামড়া ভাল শুকোয়।

    আমাদের পরিবারেই ছিলেন ভেলিপিসি, চা-বাগানের আড়কাঠি থেকে কেমন করে যেন কেনা মহিলা, আর তার ছেলে যদু, অচিন্ত্য'র বাবার সমবয়েসী।
    উনি আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গেই দেশভাগের সময় একসাথে এসে পার্কসার্কাসের একান্তবর্তী পরিবারে রইলেন যদ্দিন না ওনার ছেলে খিদিরপুরের ডকে কাজ পেয়ে মাকে না নিয়ে যায়। আজ কোন যোগাযোগ নেই।
  • kumudini | 14.98.137.124 | ০৮ জুন ২০১১ ১৪:৩৭480441
  • রঞ্জনদা এইটে দেখবেন,"আর টাইপাতে পাচ্চি না"-এই বলে চিন্টুবাবু যেন মাঝপথে ছেড়ে না দেয়,সেই নটবররের মতন।
  • ranjan roy | 122.168.253.10 | ০৮ জুন ২০১১ ১৫:৪৪480442
  • এই রে, সেরেছে! তবে অচিন্ত্য তার কুমুদিদিকে এবারে নিরাশ করবে না বলেই ওর কথায় মনে হয়েছে।
  • achintyarup | 121.241.214.38 | ০৮ জুন ২০১১ ১৭:৩৪480443
  • কুমুদিদি, তখন দক্ষীণ, পশ্চীম ইত্যাদি ঐ রকম বানানে লেখা হত না। কিন্তু গগন রায় মহাশয়ের লেখা মোটামুটি ঝরঝরে হওয়া সঙ্কেÄও বানান বিষয়ে সচেতনতার কিঞ্চিৎ অভাব ছিল দেখা যাচ্ছে। একই পাতায় "পশ্চিম' শব্দের দুই রকম বানান লেখা হয়েছে দেখছি।
  • h | 203.99.212.53 | ০৮ জুন ২০১১ ১৭:৫০480444
  • এইটা একটা বই করার কথা নিশচয়-ই ভাবা হয়েছে।
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৮ জুন ২০১১ ১৯:৩৬480445
  • চিন্টুবাবু
    আমিও আছি ভয়ে ভয়ে, সেই নটবরের কথা ভেবে :-)
    কুমুকে ক্ক !
    সত্যি বই হওয়া উচিত, হলে আমি এক কপি বুক করে রাখলুম।

  • achintyarup | 59.93.241.252 | ০৯ জুন ২০১১ ০৪:৩৪480446
  • যোগলমূর্ত্তির পরিণয় উৎসবের কথাটা মনে হয় আমাদের অতীবৃদ্ধা "ঝি' সুদক্ষীণা দাসীর প্রমুখাত শ্রবণ করিয়াছিলাম। সে ছোটবেলার কথা, তখন উহার কথাটা গল্প বলিয়াই মনে হইয়াছিল, এখন দেখিতেছি তাহা নহে। এইঁ বৃন্দাবনেও দেখিতে পাই এরূপ বিবাহ প্রচলীত আছে,ধনী লোকেরা এই রূপ বিবাহের অনুষ্ঠানাদি করিয়া বহু অর্থ ব্যয় করিয়া থাকেন, উৎসব, ধুমধাম; ভূরিভোজন অর্থাৎ বহুলোককে এই উপলক্ষে প্রসাদ বিতরণ এক বিরাট ব্যাপার। রাজা জমীদারের বিবাহউৎসব বলিলেও বলা যায়। না হবে কেন? ভক্তিমানের চক্ষে ইহা মানুষের বিবাহোৎসব হইতেও অনেকগুণে আনন্দদায়ক ও অর্থের সদ্‌ব্যবহার বটে।

    জয়গোবিন্দ রায় মহাশয়ও ঐ উৎসবে প্রচূর অর্থব্যয় করিয়াছিলেন। বোধ হয় বৃন্দাবন হইতেই ইহার আদর্শ গ্রহণ করিয়াছিলেন; দু:খের বিষয় তিনি সেসময়ে এই স্বর্গধামে আসিয়াছিলেন কিনা তাহার কোন তঙ্কÄ এ পর্য্যন্ত কোনও লোকের নিকট জানিতে পারি নাই।

    ১২০২ সালে এই উৎসব সম্পন্ন হয়। কথিত আছে দ্বিতল পাকা গৃহ নির্ম্মাণে ১০ বৎসর সময় লাগিয়াছিল। তা নাহলে ১৩৩১ সালে অর্থাৎ প্রায় ১৩০ বৎসর কালেও এই দ্বিতল অট্টালীকা ভীষণ ভূমিকম্পদ্বয়ের (১৩০৪ ও ১৩২৪ সালের ভূকম্পন) প্রচণ্ড তাড়নায়ও অক্ষত দেহে দণ্ডায়মান থাকিয়া জয়গোবিন্দ রায়ের অক্ষয়কীর্ত্তি ঘোষণা করিবে কেন? এখন কড়িবর্গা সমন্নিত প্রকাণ্ড ইষ্টকালয় ১৫/২০ দিনের মধ্যেই মস্তকোত্তলন করিয়া স্থপতিদিগের জয় ঘোষণা করে, আবার সামান্য ভূকম্পনেই ধরাশায়ী হইয়া ইঞ্জিনিয়ারগণের নির্বোদ্ধিতার পরিচয় প্রদানে কুণ্ঠিত হয় না। সে কালে কড়িবর্গার ধার কেহ ধারিত না, ইট-সুর্‌কীর গাথ্‌নীতেই আহাম্মক রাজমিস্ত্রিগুলা যে কি প্রকারে ১২x৮, ২০x১০ হাত প্রকোষ্ঠগুলীর ছাদ তৈয়ার ও রক্ষা করিত, অনেক সুবিজ্ঞ ব্যক্তিও জয়গোবিন্দ রায় মহাশয়ের নির্ম্মিত এই অট্টালীকা দৃষ্টে নির্ণয় করিতে পারেন নাই। স্তম্ভিত হইয়া নাসিকা কুঞ্চনমাত্রই তাঁর সার হইয়াছে। আর যে ইঞ্জিনিয়ার পরামাণিকের বাটীর ২১ রত্ন নামক মন্দির দেখিয়াছেন, তিনি অবাক্‌ ও হতবুদ্ধি হইয়া তাহার জ্ঞানকে ধিক্কার দিয়াছেন।

    এই ১২০২ সালেই কোম্পানির আমলের বাঙ্গলাদেশের চিরস্থায়ীরূপে ভূমির কর ধার্য্যের সূত্রপাত হয়। তৎকালে হাজরাদী পরগণার জমীদার জঙ্গলবাড়ীর প্রসিদ্ধ জমীদারগণের অবস্থা অতি শোচনীয়, জমীদারীর সদর খাজানা অর্থাৎ গবর্ণমেণ্টের প্রাপ্য কর আদায়ে তাঁহারা অক্ষম হইয়া পড়িলেন। মুশলমান বাদসাহের আমলে কর দিয়া না দিয়া কোন রকমে জমীদারী রক্ষা করিয়াছিলেন; এখন কোম্পানির আমলে তাহা কর না দিয়া রক্ষা করা সুকঠিন ভাবিয়া বার্ষিক ৩৬০০্‌শত টাকা মালীকানা অর্থাৎ বৃত্তি পাওয়ার নিয়মে হাজরাদী পরগণার জমীদারীস্বত্ব কোম্পানির অনুকূলে ছাড়িয়া দিলেন।

    ময়মনসিংহের কালেক্‌টর সাহেব তাহা নিজ করায়ঙ্কÄ করিয়া উক্ত জমীদারীর অধীন সর্ব্বপ্রকার স্বঙ্কÄ¡ধিকারীকে এই মর্ম্মে নোটীশ দিলেন যে, যাহার যে প্রকারের ভূমির স্বত্ব থাকে তৎনিদর্শনস্বরূপ কাগজ ও দলীলাদিসহ নির্দ্দিষ্ট দিনে তৎসমীপে উপস্থিত হইয়া স্বীয়২ দাবীর প্রমাণ করে। তদনুসারে যে যে কাগজপত্র সেসময়ে অধীন তালুকদারগণ উপস্থিত করিলেন, তাহাই ""পঞ্চসনা'' (quinkunial Register) কাগজস্বরূপ কালেকটরীর মহফেজখানায় (Recordroom) অদ্য পর্য্যন্ত স্থিত আছে। অত:পর ঐসকল কাগজপত্র দৃষ্টে পেটাও তালুকদারগণসহ অস্থিরতর জমায় পাঁচসনা বন্দবস্থ হইল। ঐ মিয়াদ অন্তে পুন: দশসনা বন্দবস্থ হইল। অত:পর তাহাই চিরস্থায়ী বন্দবস্থে পরিণত হইল।
  • achintyarup | 59.93.241.252 | ০৯ জুন ২০১১ ০৪:৫৪480447
  • এই সময়ে জয়গোবিন্দ রায় মহাশয় গবর্ণমেণ্টের পক্ষেও ওকালতী কার্য্য করিতেন। তাঁহার যে সকল অধীন ও পত্তনী তালুকাদি ছিল নজরানা দাখিল করিয়া সহজেই খরিদা তালুকে পরিণত করিলেন। তদ্‌ব্যতীত নি:স্ব অক্ষম তালুকদার শ্রেণীর অনেকের তালুক তিনি নিজ জিম্মায় রাখিয়া সময়ান্তরে বন্দবস্থ করাইয়া দিয়া তাহাদের অসীম উপকার করত: গরীবের প্রভূত আশীর্ব্বাদ লাভ করিলেন। তাহার ভূরি২ নিদর্শন অদ্যাপী কালেকটরীর মহাফেজখানায় আছে।
  • achintyarup | 59.93.243.86 | ১০ জুন ২০১১ ০৩:২০480448
  • মোকন্দ সাজনপুরের বড় তালুক ধারীশ্বর গ্রামের চৌধুরী মহাশয়দের পূর্ব্বপুরুষের ছিল। পূর্ব্বেই বলিয়াছি সাবিত্রী দাস্যার পিতা অনুপনারায়ণ চৌধুরী তাহার কতকাংশের মালীক ছিলেন। তাঁহারা সে সময়ে নজরানা দিয়া বন্দবস্থ গ্রহণে অক্ষম হইলে জয়গোবিন্দ রায় নিজ হইতে নজরানা দিয়া বন্দবস্থ গ্রহণ করিলেন, পরে যথাসময়ে চৌধুরীমহাশয়গণ তাঁহাকে তালুক ছাড়িয়া দেওয়ার প্রার্থনা করিলে, তিনি অম্লানবদনে কেবল নজরানার টাকা লইয়াইঅ বিনা লভ্যে চৌধুরী মহাশয়দিগকে তালুক ছাড়িয়া দিলেন। তাঁহার এইরূপ ধার্ম্মিকতা ও মহত্বের পরিচয় এখনও অনেক পাওয়া যায়। আজকালের দিনে ১০/১৫্‌ টাকা লাভের জন্য আমরা না কত টানাটানি করিয়া লোকের বিরাগভাজন হই। আর তখনকার দিনে সেই অমিততেজা পুরুষ কত সহস্র সহস্র টাকার লোভ সংবরণ করত: কত উদারতা ও সৌজন্যতাই না প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।

    ""কীর্ত্তিযস্য স জীবতি'' জয়গোবিন্দ রায়ের কীর্তি অক্ষয় হইয়া তাঁহাকে জীবিত রাখিয়াছে। যে ব্যক্তি নিজ ভোগবিলাসের স্পৃহা দূরে নিক্ষেপ করত: উন্নতীর ১ম সোপানেই সুরম্য দ্বিতল অট্টালীকা নির্ম্মাণেঁ ঠাকুর সেবার বন্দবস্থের জন্য আগ্রহাতিশয্য প্রদর্শনপূর্ব্বক অকাতরে সহস্র২ মূদ্রা ব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হন নাই, তাঁহার নিস্বার্থতার পরিচয় আর কি হইতে পারে?

    জয়গোবিন্দ রায়ের ওকালতী কার্য্যকালে ময়মনসিংহ নগরে কোন মুদ্রাযন্ত্র ছিল না। কলিকাতার ন্যায় রাজধানীতেও ২/৪ টী ছিল কিনা সন্দেহ। লিখা পড়ার সকল কার্য্যই হস্তলিপির সাহায্যে সম্পন্ন হইত। শাস্ত্রীয় গ্রন্থসকল দুÖপ্রাপ্য ছিল। হস্তলিখিত পুঁথি কদাচিত ২/১ খানা সংগ্রহ হইত। শাস্ত্রের আলোচনার পক্ষে বিষম অন্তরায় ও বিঘ্নবিপত্তি ছিল। জয়গোবিন্দ রায় পরম বৈষ্ণব, বিগ্রহ ঠাকুরের সেবা পুজায় নিবিষ্টচিত্ত ও অক্লান্তকর্ম্মা। ভক্তিতঙ্কেÄর আলোচনাই তাঁহার জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল। কিন্তু শাস্ত্রীয় গ্রন্থের অভাবে ভক্তিতঙ্কেÄর আলোচনা সম্যক স্ফূর্তিলাভ করিতে পারে না। তিনি সেই অভাব দূরীকরণ ও আত্মজ্ঞান লাভের মানসে শাস্ত্রীয় গ্রন্থ প্রচারের সংকল্প করিলেন। তদানিন্তন বড়২ পণ্ডিত মণ্ডলীকে আহ্বান করত: মন্ত্রণাসভা করিলেন। স্থির হইল হস্তলিপির সাহয্যেই ধর্ম্মগ্রন্থ প্রচার কার্য্য হইবে। কয়েকজন খ্যাতনামা পণ্ডিত বেতনভোগী হইয়া কার্য্য আরম্ভ করিলেন। এই কার্য্যে তিনি বহু ব্যয়বিধান করিতে এবং যত্ন ও উৎসাহ প্রদান করিতে ত্রুটী করেন নাইঅ। বহুদিনে এই কার্য্য শেষ হইল। শাস্ত্রীয় শতাবধিগ্রন্থের অধিক লিখিত হইয়াছিল। কতক তোলট্‌ কাগজ আল্‌তার কালীর সুন্দর লাল অক্ষরে কতক বা কাল কালীর অক্ষরেই লিখা হইল। কাগজ বহু যত্ন ও শিল্পচাতুর্য্যে তৈয়ার হইয়াছিল, তাহা কখনও কীটাদিতে নষ্ট করিবার আশঙ্কা নাইঅ। কালীও দীর্ঘস্থায়ী, কখনও বিবর্ণ হইবার নহে। এ হেন উদ্যোগ, যত্ন ও অধ্যাবসায়ে এই প্রকাণ্ড বিরাট ব্যাপার সুসম্পন্ন হইল। জয়গোবিন্দ রায়ের যশ সৌরভ দিগ্‌দিগন্তব্যাপী হইল। তাঁহার অক্ষতকীর্ত্তি ঘোষিত হইল।
  • achintyarup | 59.93.243.86 | ১০ জুন ২০১১ ০৩:২১480449
  • *অক্ষয়কীর্ত্তি
  • achintyarup | 59.93.243.86 | ১০ জুন ২০১১ ০৩:৫৫480450
  • কিন্তু একটী মর্ম্মন্তিক দু:খের কথা আমাকে এস্থানেই বলিয়া রাখিতে হইল -- জয়গোবিন্দ রায়ের জীবনলীলা অবসানের পর আর ঐ সকল বহুযত্ন রক্ষিত অমূল্যগ্রন্থের অধিকাংশই খুজিয়া পাওয়া গেল না। তাহা তাঁহার ময়মনসিংহ নগরস্থ বাসাবাটীতে শাস্ত্রালোচনার জন্য রক্ষিত ছিল। তাঁহার স্বর্গপ্রাপ্তি ব্যপদেশে ধূর্ত্তগণ সুযোগ পাইয়া তাহা অপহরণ করিল। মাত্র ৪/৫ খানা পুঁথি এখনও তাঁহার কীর্ত্তির নিদর্শনস্বরূপ খানাবাড়ীস্থিত ঠাকুরদালানেঁ গোবিন্দজীও বিগ্রহের সিংহাসনে স্থিত আছে। তাঁহার পরবর্ত্তী বংশধরগণের দুর্ভাগ্যবশত:ঁ ঠাকুরের শূণ্য সিংহাসনে গুরুদেবের আদেশে তাহাই অদ্যাবধি বিশ্বম্ভর নামে পূজিত হইয়া পূর্ব্বস্মৃতি জাগাইয়া দিতেছে; উক্ত পুঁথিসকল খুলীয়া দেখা গিয়াছে -- ভক্তি ও ধর্ম্মপ্রবণতার চূড়ান্ত নিদর্শন ""গীতগোবিন্দ'' প্রভৃতি অমূল্য গ্রন্থ। এমন সুন্দর বড় পরিস্কার আলতার কালীর লিখা লেখকের জীবনে কখনও নয়নগোচর হয় নাই।ঁ ঠাকুর কেন সিংহাসনচ্যূত হইয়া স্থানান্তরিত হইয়াছেন সে অসহনীয় দু:খের কথা পরে যথাসময়ে বলিব।
  • achintyarup | 59.93.243.86 | ১০ জুন ২০১১ ০৪:৩৮480452
  • জয়গোবিন্দ রায়ের অমায়িকতা ও বদান্যতার কথা চারিদিকে প্রচারিত ছিল। তিনি বিপন্নের বন্ধু, গরীব দু:খীর মা বাপ একথা সে অঞ্চলের লোকে সকলেই জানিত। সেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তর যখন করাল বদন বিস্তার করত: পূর্ব্বময়মনসিংহ আক্রমণ করিল তখন জলপ্লাবনে বহুলোকের গৃহাদি ও গরু বাছুর জলে ভাসিয়া গেল। কেহবা সন্তরণ দিয়া কেহবা নৌকার আশ্রয়ে গৃহশূণ্য, বস্ত্রশূণ্য খাদ্যাভাবে বিশীর্ণ কলেবর হইয়া ভিকারী বেশে আসিয়া জয়গোবিন্দ রায়ের দ্বারস্থ হইল। তাঁহার ন্যায় অবস্থা ও সঙ্গতিপন্ন লোক তখন সে অঞ্চলে বড় কেহ ছিল না; যাহাদের কিছু অবস্থা ও সঙ্গতি ছিল তাহারও সে মন্বন্তরের করাল গ্রাসে পড়িয়া অবস্থাহীন সর্ব্বস্বান্ত হইয়াছিল। সুতরাং কাহার সাহায্য কে করে? বিশেষত: সকলেরই বাড়ী ঘর জলমগ্ন। জয়গোবিন্দ রায়ের আবাসবাটীতেও অন্দরখণ্ড এবং চতুষ্পার্শবর্ত্তী স্থান জলে ধৌত হইতেছিল। কেবল উচ্চভিত্তিবিশিষ্ট গৃহাদি রক্ষা পাইয়াছিল। তাহাতেই তিনি বহু দু:স্তলোককে আশ্রয় দেওয়ার সুযোগ পাইয়াছিলেন। আহার বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়া অনেক লোকের আশীর্ব্বাদভাজন হইয়াছিলেন।

    কতকদিন পর জল কমিয়া গেলে ও সুদিন উপস্থিত হইলে যাহাদের কিছু সংস্থান ছিল তাহারা আশীর্ব্বাদ ও ধন্যবাদ করিতে২ বিদায় হইল। আর যাহাদের দৈন্যদশা দুরীভূত হইবার নহে, তাহারা অধিকাংশই দাসদাসীরূপে রহিয়া গেল। কেহবা আনুগত্য স্বীকার করত: প্রজা হইল। এই সুযোগে নূতন খানাবাড়ীর পরিখার ভিতর বহু লোকের আবাসস্থান হইল তাহা পূর্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি।

    জয়গোবিন্দ রায় হেমন্তাদি ঋতুচতুষ্টয়ে কখনও বাড়ী থাকার কালে গ্রামস্থ ব্রাহ্মণ কায়স্থ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ তাঁহার সহিত সময়ে অসময়ে প্রত্যহই দেখা সাক্ষাৎ করিতেন এবং পরস্পর সুখদু:খের কথা প্রসঙ্গে সময়াতিবাহিত করিতেন। কখন এমন ঘটীত যে তাঁহার বাটীর পার্শ্ববর্ত্তী গ্রাম্য রাস্থা দিয়া দলবদ্ধ ব্রাহ্মণগণকে মধ্যাহ্নকালে গমন করিতে দেখিলে তখনই তিনি অগ্রবর্ত্তী হইয়া বলিতেন ভূদেবতাগণ এই দুপ্রহর রৌদ্রে কোথায় কি উদ্দেশ্যে চলিয়াছেন? জয়গোবিন্দ রায়ের এমনই ভক্তি ও বিনয় ছিল যে তাঁহাকে দেখিলে কেহই তাঁহার সহিত বাক্যালাপ না করিয়া চলিয়া যাইতে পারিতেন না। তাঁহার অমিত তেজসম্পন্ন স্মিত মুখমণ্ডলের প্রভায় সকলেই মুগ্‌ধ হইতেন। ব্রাহ্মণগণ দুরস্থ হিলচিয়া, গুড়ই কি দাসপাড়া প্রভৃতি কোনও গ্রামে নিমন্ত্রণের কথা উল্লেখ করিলে তৎক্ষণাৎ তিনি বলিতেন -- এ দুর্গম পথ দিয়া যাওয়া আসাও বিপদসঙ্কুল বিশেষ (প্রখর রৌদ্র তাপেও কি কখনও বৃষ্টি বাত্যার সময়েও) পথশ্রমেও ক্লান্ত হইবেন। না গেলে কি হয় না? ব্রাহ্মণগণের মধ্যে যাঁহারা বিশেষ দরিদ্র কি অর্থলোভী তাঁহাদের মধ্যে কেহ বলিয়া উঠিলেন -- তথায় গেলে দক্ষিণার বরাদ্দটা কিছু বেশী পাওয়া যায়। জয়গোবিন্দ রায় হাঁসিতে২ বলিতেন, আচ্ছা যাহা দক্ষিণা তথায় পাইবেন তাহা যদি আমি দেই তবে কি এই অধীনের বাড়ীতে এখন ভোজন করিতে পারেন না? ব্রাহ্মণগণ স্মিত মুখে বলিয়া উঠিলেন ""তাহা হইবে না কেন? আপনর ন্যায় মহৎ ব্যক্তির দ্বারা সকলই সম্ভবে। আপনার অনুরোধ কে এড়াইতে পারে?'' রায় মহাশয় বলিলেন ""তবে আসুন, এখনই উদ্যোগ করাইয়া দিতেছি,'' সন্তুষ্ট চিত্তে সকলই আসিয়া রায় মহাশয়ের বৈঠকখানাগৃহে আসন গ্রহণ করিলেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন