এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nina | 68.84.239.41 | ২০ জুন ২০১১ ০৬:৫২480486
  • খুব মন দিয়ে পড়ছি চিন্টুবাবু , এইটা পরে বই আকারে বেরোলে আমার এক কপি চাই, প্লিজ।
  • ranjan roy | 122.175.130.151 | ২১ জুন ২০১১ ০১:৩৬480487
  • অর্ণব,
    ""দাস্যা'' নিয়ে আমার কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্যে ধন্যবাদ!
    মাইরি! আমিও না মিশনে রোজ সন্ধ্যে আরতির সময় করতাল বাজাতাম। দাদুর-দাদুর কিছু গুণ পেয়েছি দেখতে পাচ্ছি।
  • abastab | 61.95.189.252 | ২১ জুন ২০১১ ০৯:০৮480488
  • দাস্য অর্থাৎ দাসের ভাব। স্ত্রীলিঙ্গে দাস্যা অর্থাৎ দাস ভাবে ভাবান্বিত নারী। যেমন মীরাবাঈ শ্রীকৃষ্‌ণ কে লিখতে পারেন। বা যেই ভাবে হীরাবাঈ বরোদেকর গান চাকর রাখো জী।
  • abastab | 61.95.189.252 | ২১ জুন ২০১১ ০৯:১৯480489
  • দাস্য অর্থাৎ দাসের ভাব আর দাস্যা মানে দাসভাবে ভাবান্বিত নারী। যেমন মীরাবাঈ শ্রীকৃষে্‌ণর প্রতি বা হীরাবাঈ বরোদেকর যেঈ ভাবে গান চাকর রাখো জী।
  • abastab | 61.95.189.252 | ২১ জুন ২০১১ ০৯:৫৮480490
  • দাস্য অর্থাৎ দাসের ভাব। স্ত্রীলিঙ্গে দাস্যা অর্থাৎ দাস ভাবে ভাবান্বিত নারী। যেমন মীরাবাঈ শ্রীকৃষ্‌ণ কে লিখতে পারেন। বা যেই ভাবে হীরাবাঈ বরোদেকর গান চাকর রাখো জী।
  • abastab | 61.95.189.252 | ২১ জুন ২০১১ ১২:০৪480491
  • দু:খিত
  • ranjan roy | 122.175.130.151 | ২২ জুন ২০১১ ০১:৩৫480492
  • অবাস্তব,
    আপনি জা বলছেন তা হল ""দাস্যা'' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ।,
    আমি জানতে চাইছিলাম কেন বিভিন্ন রেভিনিউ দলিলে সাবিত্রী দাস্যা'র নামপদবী ঐভাবে লেখার কারণ। অর্থাৎ যোগরুঢ় অর্থে।
    মনে হয় অর্ণব ঠিক বলেছে।
  • achintyarup | 59.93.245.254 | ২২ জুন ২০১১ ০৫:৪৮480493
  • আত্মকথা।

    ৩য় পরিচ্ছেদ।

    .......................................................

    প্রথম কথা -- সত্যের অতিরঞ্জন, ইহা অতি সহজেই ঘটে। খাটী সত্যের উপর দুই চারি কথা রং ফলাইতে বেশী কষ্ট হয় না। ইহাতে লাভ -- লোকে বেশী প্রসংশা করিবে।

    দ্বিতীয় -- মিথ্যা কথায় নিজের বাহাদূরী প্রকাশ। ইহা লাভেরই কথা। অনৃতবাদের বাহাদূরীতে যদি লোকসমাজে পরিচিত হইতে পারি তবে আর কথা কি?

    তৃতীয় -- অতি সতর্ক হইলেও অহঙ্কারকে চাপা দেওয়া সুকঠিন। তাহা যেন লোকাচুরী করিয়া ফুট২ হইয়া উঠে।

    যাহা হউক এই ৬৫ বৎসর বয়সে মৃত্যুর দ্বারদেশে দণ্ডায়মাণ হইয়াও যখন মনে হইয়াছে, নিজের কয়টা কথা নিজেই লিখিব, তখন ""মৃত্যুভয়'' পাপ নিবারিণী এই বাক্যের সার্থকতা রক্ষা হইবে আশা করি। লেখনী মিথ্যা কথা মিথ্যা চিত্র অঙ্কনে থত মত না খাইয়া পারিবে না। পাপ কার্য্য কায়, মন, বাক্যে যতদূর হইতে পারে সারা জীবন ভরিয়া বৃদ্ধির দিকেই গড়াইয়াছে, কিন্তু কোন কাগজে তাহা লিপিবদ্ধ করি নাই। তবে ভগবানের যদি খাতা থাকিয়া থাকে তবে তিনি ত খুটী নাটী পর্য্যন্ত ......... মুদ্রাযন্ত্রের সাহায্যে সে খাতায় ছপিয়া যাইতেছেন। মহাভারতে দেখিতে পাই, ভগবান দ্রৌপদী মহারাণীকে বলিতেছেন ""আমি কর্ম্মফল দাতা, দুষ্ট দু:শাসন যে তোমাকে বিবস্ত্রা করার চেষ্টা করিতেছে, তাহা হইতে আমি তোমাকে কিরূপে রক্ষা করিব? যদি তোমার বস্ত্রদানের পূণ্য থাকিয়া থাকে তবে সেই পূণ্যের ফলে তোমাকে রক্ষা করার এই সময়''। দ্রৌপদী ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, কোন সময়ে এক দু:খিনীকে এক খানা বস্ত্র দান করিয়াছিলাম মনে পরে। ভগবান বলিলেন তবেই হইয়াছে, আর ভয় নাই। দু:শাসন পরাজিত হইল, ভগবানের অপার মহিমা! ছোট বড় সকল কার্য্যেরই ফল তিনি দিবেন; কর্ম্মসূত্রে তাহা তাঁহার খাতায় সকলই লিখা হইতেছে। যাহা হউক এতটা যদি মনে থাকে তবে লেখনী বিপথগামিনী হইতে পারিবে না।

    আর একটা কথা মনে পড়িল। এ নগণ্য জীবনের অসার কথা কেন লিখি। তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া লাভ কি? লাভ আছে। জীবন নগণ্যই হউক আর বিশেষ কৃতিত্ব বিশিষ্টই হউক, সকলের জীবনেই সুখ দু:খের বিচিত্রতা ...... কালী-কলম সংযোগে সত্য ফুটাইয়া তুলিতে পারিলে, নগণ্য ব্যক্তির জীবনেও শিক্ষণীয় বিষয় পাওয়া যায়। জগতে কিছুই হেয় নহে। এই জগত শিক্ষার লীলা ক্ষেত্র। প্রত্যেক পরমাণু হইতে বিশাল সৌর জগত পর্য্যন্ত সকলের নিকট হইতেই যে অল্পবিস্তর শিখিবার উপকরণ আছে এবং পরোক্ষে বা অপরোক্ষে সেই শিক্ষা কার্য্য অহ:রহ: চলিয়াছে তাহা যিনি চক্ষুষ্মান তিনি দেখিয়া বিস্মিত ও তৃপ্ত হইতেছেন। জড় পরমাণু এবং পশুপক্ষী ইত্যাদি ইতর জীবও যখন সিক্ষার স্থল, তখন ভগবানের সৃষ্টির চরোমোৎকর্ষ মানব যতই হীন ও নগণ্য হউক না কেন, তাহাতে কিছু না কিছু শিখিবার বিষয় আছেই।

    আমার এ ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র জীবনের ঘটনাবলী দ্বারা অপর সাধারণের কোন উপকারের প্রত্যাশা আছে, আমি এরূপ মনে করিতে দু:সাহসী নহী। আমার ভবিষ্যত পরবর্ত্তী বংশধর যদি কেহ কিছু শিক্ষা ও উপকারের প্রত্যাশা করে তবে কথঞ্চিৎ তাহার আশা পূরণ হইতে পারে।

    আর একটী কথা আছে। পূণ্যতোয়া জাহ্নবী যেমন অচ্যূত চরণ হইতে চ্যূত হইয়া কত গিরি কন্দর, পর্ব্বত, প্রস্তর উল্লংঘন করত: কত কঙ্করময় ও বালুকাময় ভূমি অতিক্রম ও কত উর্ব্বর-উষর ক্ষেত্রে পরিভ্রমণ পূর্ব্বক অবশেষে সাগরসঙ্গমে মিলিত হইয়াছেন এবং পথে কত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়াছেন, আমার জীবন স্রোতও সেইরূপ সেই অচ্যূত চরণ হইতেই স্খলীত হইয়া সংসার সাগরে প্রবেশ লাভ করিয়াছে। সেই স্রোতগভীর পথে স্থানে২ যে সকল সংকটাপন্ন বিপদরূপ বিঘ্ন উপস্থিত হইয়াছে এবং সেইসকল বাধাবিঘ্ন দূর করিতে যাঁহারা স্বত: পরত: উদার ও মহান ভাবের অনুসরণ করত: এ নগণ্য জীবনস্রোত অবাধে প্রবাহিত ও নিরাপদে গন্তব্যস্থানে পঁহুছিবার সাহায্য করিয়াছেন এই জীবনী লিখ ব্যপদেশে তাঁহাদের গুণকীর্ত্তন করা ও তাঁহাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যটা বোধহয় অসঙ্গত নহে। যাহ হউক অনেক অবান্তর কথার পূর্ব্বেই অবতারণা করিয়া ফেলীলাম। না করিলেও নিষ্কৃতি নাই। যে প্রশ্ন স্বত:ই কেহর মনে উঠিবে তাহার উত্তর কে দিবে? আমার মনের কথা না বলিলেঅন্যে জানিবে কিরূপে? তাই প্রশ্নের যাহা উত্তর হইবে তাহা পূর্ব্বেই দিয়া রাখিলাম।
  • achintyarup | 59.93.244.148 | ২৪ জুন ২০১১ ০৪:৫৭480494
  • *শিক্ষার স্থল
  • achintyarup | 59.93.244.148 | ২৪ জুন ২০১১ ০৫:২১480496
  • জন্ম।

    ১২৬৪ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের ২৬শে তারিখ বুধবার দিবস মাতুলালয়ে আমার জন্ম হয়। জন্মের অব্যবহিত পরক্ষণেই মাতুল মহাশয় গ্রামস্থ জ্যোতির্ব্বিত পণ্ডিত মহাশয়কে আহ্বান করত:, জন্মপত্রিকা বা কুষ্ঠির সংক্ষেপ ""ঠিকুজী'' প্রস্তুত করাইলেন। তাহা পরবর্ত্তী সময়ে আমার আয়ঙ্কÄ¡ধীনে কুষ্ঠীর আকারে পরিণত হইয়াছিল।

    ঐ কুষ্ঠীর ফলাফল আমার জীবনে প্রায় সকল স্থলেই মিলিয়াছে। কদাচিত দুই এক স্থলে যে অনৈক্য দেখা যায় তাহা হয়ত আমাদের বুঝিবার অক্ষমতা অথবা গণনারই ভ্রম। অঙ্ক শাস্ত্র নির্ভূল হইতেই পারেনা, বিশেষ জ্যোতিশ অতি দূরুহ কঠিন বিষয়।

    আজকাল সাহেবী ধরাণের অনেক বিদ্যার্ণবই ফলিত জ্যোতিশ বিশ্বাস করিতে চাহেন না। কেন এই কুমতী? বহু মহাত্মার জীবনেই ত কুষ্ঠীর ফলানুযায়ী উন্নতী অবনতী ও নানা সদগুণের বিকাশ প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার ও অক্ষয়কুমার দত্ত প্রভৃতি বঙ্গের কৃতী সন্তানগণের কুষ্ঠীত দেখিয়াছি। কেহই তাহা অবিশ্বাস করেন নাই। এই সকল মহাত্মাগণের সকলেই কুষ্ঠীর ফলানুযায়ী জীবনের গতী নির্ণয়ে সফলকাম হইয়াছিলেন। যদি লগ্নাদি নির্ভূল হয় তবে সকলেরই কুষ্ঠীর ফল ঠিক হইবে ইহা সুনিশ্চিত। আমার তাহাই হইয়াছিল।

    এই কুষ্ঠীর ফলাফলটা অগ্রে এখানেই কথা প্রসঙ্গে আলোচনা করিয়া যাই, তাহা হইলে আমার নগণ্য জীবনের গতীও নির্ণিত হইবে এবং আমি যে ভাবে সংসার ক্ষেত্রে বিচরণ করত: জীবন নাটকের ১ম, ২য় ও ৩য়াঙ্কের যবনীকা পতন করিয়াছি তাহা যে কেবল আমার পরুষাকারের ফল নহে অদৃষ্ট কর্ম্মসূত্রেরও অধীন তাহা বুঝা যাইবে।

  • achintyarup | 59.93.244.148 | ২৪ জুন ২০১১ ০৬:১৪480497
  • কুষ্ঠীর ফল।

    কুষ্ঠীর রাশীচক্রই মূল; তাহাতে দেখা যায় ধর্ম্মস্থানে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র এই ৩টী শুভ গ্রহ রহিয়াছেন। ব্যয়স্থানে শনি, স্ত্রী স্থানে রাহু, লগ্নে কেতু ও স্বক্ষেত্রে মঙ্গল অবস্থিতি করিতেছেন। কুষ্ঠীতে তাহার যে ভাল মন্দ ফলাফল লিখা হইয়াছে তাহাতে জানা যায় যে -- ধর্ম্মস্থানে শুভগ্রহ থাকিলে ধর্ম্মে আস্থাবান ও সৎভাবে জীবন যাপন হয়। ব্যয়স্থানে অশুভগ্রহ শনি থাকিলে ধন সঞ্চয় হইতে পারে না। স্ত্রী স্থানে রাহু অশুভ গ্রহপাতে দুই স্ত্রী লাভ অথবা স্ত্রী সহ মনান্তর বাক্যান্তর ঘটে। মঙ্গল যে স্থানে আছেন তাহাতে সর্ব্বদাই কীট পুকাদির উপদ্রব ঘটীবে, আর তিনি স্বক্ষেত্রে থাকায় কুলানুযায়ী কৃতিত্ব লাভ হইবে। লগ্নস্থানে কেতু থাকায় শারীরিক অসুস্থতা লাগিয়াই থাকিবে। বন্ধুস্থান ও শত্রুস্থানও ভাল নহে, বিশেষ তাহাতে শুভগ্রহের দৃষ্টি না থাকায় অশুভই সুচনা করিতেছে। লগ্নে রাহু অশুভ গ্রহের এবং গুরু শুভগ্রহের তুল্য দৃষ্টি থাকায় ভাল মন্দ দুইরূপ ফলই দৃষ্ট হইবে। এইত অদৃষ্ট ফলাফলের কথা মোটামোটী বলিলাম। সুক্ষ্ম বিচারে আরও অনেক আছে, তাহা কার্য্য ক্ষেত্রে বিশেষ পরীক্ষিত হইয়াছে।

    ধর্ম্মকর্ম্ম কি করিয়াছি তাহা বুঝিবার ও বলিবার নহে। তবে বাহিরে যাহা দেখা যায় তাহাতে ধর্ম্মের দিকে আস্থা ও একটা দৃঢ় আকর্ষণ ছোটবেলা হইতেই যেন আছে দেখিতে পাই। যথাস্থানে তাহার ফল বিবৃত করিব। ব্যয় সম্বন্ধে শণির কার্য্যকারিতা বিশেষরূপেই জীবনব্যাপী উপলব্ধি করিয়াছি এবং এখনও করিতেছি। টাকা সময়২ অনেকই হস্তগত হইয়াছে কিন্তু কয়েকদিন না যাইতে২ ই সব ফুরাইয়া গিয়াছে। তাহা যে অপব্যয়ে গিয়াছে তাহা নহে। তবে যেমনি উপার্জ্জন খরচও তৎ সঙ্গে২ ই দেখা দিয়াছে। এ ফলটা হাতে২ যে পাইতেছি তাহা আর অস্বীকার করা যায় না।

    রাহু স্ত্রী স্থানে থাকার ফল এই বুঝিয়াছি যে চিরকালই বিদেশে রহিলাম। স্ত্রীকে সঙ্গে রাখার সুযোগ বড় হয় নাই, স্ত্রী সম্বন্ধে যে দ্বিত্ব সম্পাদনের কথা, তাহা এইরূপেই রাহু গ্রহ সংঘটন করিলেন। মনান্তর বাক্যান্তর যে সময়২ না হইয়াছে তাহা অস্বীকার করা যায় না।

    কেতু অশুভ গ্রহ লগ্নে থাকায় আজীবন ত স্বাস্থ্য খারাপ দেখিতেইছি, কোন সময়েও জীবনে নীরোগ অবস্থা ভোগ করি নাই। ইহার ফল আরও একটা প্রত্যক্ষই দেখা যায়, স্বভাব খিট খিটে অর্থাৎ আমার স্বভাব ছোটবেলা হইতেই ক্রোধব্যঞ্জক, যাহাকে কুপন স্বভাব বলে। এইজন্য লোক রঞ্জনে আমি সুখ্যাতী অর্জ্জন করিতে পারি নাই। লগ্ন স্থানের গ্রহ সংস্থান ফলে স্বভাবও নির্ণিত হয়। ""সত্যং বদ: প্রিয়ং বদ: সত্যমপ্রিয় ন বদ:'' এই শাস্ত্রবাক্যের সম্যক মর্য্যাদা আমি রক্ষা করিতে অসমর্থ। এই বৃন্দাবনে এখন সংসার সম্পর্কমাত্রও নাই তথাপী সকল লোক আমার প্রতি সন্তুষ্ট নহে। তাহার কারণ কাহারও কোন ত্রুটী দেখিলে তৎক্ষণাৎ তাহা প্রকাশ করিয়া সংশোধনের চেষ্টা করি। এইজন্য কতক লোক আমার প্রতি বিরক্ত থাকে। আবার যাহারা আমার ন্যায় সত্যভাষী অর্থাৎ উচিৎ বক্তা তাহারা আমাকে ভালবাসে, বিরক্ত হয় না। ""সত্য কথা অপ্রিয় হইলে বলিবে না'' এ শাস্ত্র সাশন আমি পদে২ ই লঙ্ঘন করিয়া থাকি। আর মিষ্টভাষী লোক লোকরঞ্জনেও সমর্থ হয়। আমার ভাষার মিষ্টতাত নাই, তদ্বীপরিতে ন্যায় বাক্য প্রায়ই কর্কশভাবে লোকের শ্রবণগোচর করি হেতু লোকে আমাকে অনেক সময় বিষদৃষ্টিতে দর্শন করে।

    আর আমি কিছু প্রভূত্বপ্রিয় গতিকেও অধীনস্থ লোক সুদৃষ্টিতে আমাকে দেখিতে যেন পারে না। আমার আজ্ঞা লঙ্ঘনে আমার যে ক্রোধ জন্মে তাহা সহজে আমার মন হইতে দূর হয় না। যে প্রকারের উপদেশ আমি প্রদান করি সেই উপদেশানুযায়ী কার্য্যটী সুসম্পন্ন না হওয়া পর্য্যন্ত আমার চিত্ত উপদেশ প্রাপ্ত লোকের প্রতি কখনি প্রসন্ন হয় না। তবে এই বৃন্দাবন ধামে আসায় এইটুকু সহিষ্ণুতা জন্মিয়াছে যে আমার ব্যক্তিগত কোন ইষ্টানিষ্টের কথা হইলে তাহার সম্বন্ধে উপদেশ পালনে আমি কাহাকেও পীড়াপীড়ি করি না। ক্রোধ হইলেও মহাপ্রভূর বাক্য ""তরুরিব সহিষ্ণুনাং'' স্মরণ করিয়া নীরব থাকি অথবা নিজেই কার্য্যসম্পাদন করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করি। কিন্তুঁ ঠাকুরসেবার কার্য্যে পুজারী, টহল্‌নী ও দ্বারসেবক প্রভৃতি আমার উপদেশানুযায়ী কার্য্য যে পর্য্যন্ত না করে ততক্ষণ পর্য্যন্ত ক্ষমা নাই।

    এজন্য এই পূণ্যক্ষেত্রেও আমার একটা আধিপত্য বিস্তৃতি লাভ করিয়াছে। তাহাতে রাগরঙ্গের অভিনয় পূর্ণমাত্রায়ই আছে। তবে যাহারা সজ্জন, ন্যায়বান ও সাধু প্রকৃতির লোক তাঁহারা আমাকে ভক্তি শ্রদ্ধা ও প্রীতি করিতে কখনও কুণ্ঠিত দেখি না। আর একটা ভাব সর্ব্বসময়েই লক্ষ্য করি যাহারা আমার কথায় ১মত: বিরক্তিভাব পোষণ করে তাহারা কয়েকদিন আমার সহবাসে থাকিলেই আমার প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন হয়। তাহার হেতু এই মনে হয় যে, আমি কখন পারিতপক্ষে কাহাকে কষ্ট দেই না কি কিছু উপকার করিতে পারিলে তাহাতে কখনও বিমুখ হই না। কাহার প্রাপ্য অর্থ দিতে গৌণ করি না কি উচিত প্রাপ্যের ন্যূনাধিকতা করি না। এই হেতুই ১ম যাহারা আমার বিপক্ষতাচারণ করে পশ্চাৎ তাহারাই মিত্র হইয়া দাঁড়ায়। এই অমরধামেও এ দৃষ্টান্ত কি এরূপ ব্যবহার অহ:রহ:ই দৃষ্টি করিতেছি। লগ্ন সম্বন্ধে আমার স্বভাবের যে বৈচিত্রতা ঘটীয়াছে তাহা এখানে কিছু না বলিয়া পারিলাম না, বক্রী আমার জীবনব্যাপী কার্য্যতায় দৃষ্ট হইবে।
  • achintyarup | 59.93.247.209 | ২৫ জুন ২০১১ ০৫:৩৬480498
  • মঙ্গল স্ব ক্ষেত্রে থাকার ফল এই বুঝি -- কুলের যে সকল মহাত্মার চরিত্র এই গ্রন্থের ১ম, ২য় পরিচ্ছেদে কীর্ত্তন করিয়াছি তাহারা গৃহে বসিয়া যে রূপ পূণ্য সঞ্চয়ই করিয়া থাকুন কেহই এই পূণ্য ক্ষেত্র স্বর্গধাম শ্রীবৃন্দাবনে আসিয়া বাস কি দেহ রক্ষা করেন নাই, আমার ভাগ্যে তাহা যে ঘটীল তাহাই কুলে উপযুক্ততা বুঝিতে হইবে। মঙ্গলগ্রহের আর একটা কার্য্য আছে, যে কয়দিন তিনি আমার রাশীর অশুভ স্থানে স্থিতি করেন সেই কয়দিন মশক, মাছি, কীট, ইন্দুর, বান্দর ও বেঙ্গ প্রভৃতি দ্বারা উপদ্রুত করিতে ছাড়েন না, ইহা আমার জীবনব্যাপী প্রত্যক্ষ উপলব্ধি।

    শত্রুস্থান ও বন্ধুস্থান সম্বন্ধে এই উপলব্ধি করি, বিনা কারণ ঈর্শাবশত: অনেক লোকে আমার সহিত যেন শত্রুতা সাধন করে। কিন্তু শত্রু সর্ব্বদাই পরাজিত হইয়া থাকে। বন্ধু বলিয়া জ্যোতিশে যাহাদিগকে নির্দ্দেশ করে তন্মধ্যে মাতা প্রভৃতি বুঝায়, শুভগ্রহের দৃষ্টি বন্ধুস্থানে না থাকার গতিকে বন্ধুস্থানীয় লোকের সহিত আমার অধিক ঐক্য বাক্য কোন দিনই নাই। আমার চরিত্রের পরিচয় এই স্থানেই শেষ করিলাম। আর আমার কার্য্যক্ষেত্রের ব্যবহার দ্বারা প্রকাশ পাইবে। দৈবের অর্থাৎ গ্রহকর্ত্তৃক অদৃষ্ট নির্ণয়ে চরিত্রের যে বিচিত্রতা ঘটে তাহাই দেখান গেল। পুরুষকারের বিষয় পশ্চাৎ লোক ব্যবহারে পরিস্ফুট হইবে।
  • achintyarup | 59.93.247.209 | ২৫ জুন ২০১১ ০৬:০৪480499
  • মাতুলালয়ের অবস্থা।

    শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত: প্রসিদ্ধ বেজুরা পরগণার অধীন ""আদাঐর'' নামক গ্রামে পিতা মহাশয় বিবাহ করেন, তাঁহারা অর্থাৎ মাতুল মহাশয়গণ কর বংশাশ্রিত। অষ্টগ্রামের নন্দি ও দত্ত রায় মজুমদার বংশের সহিত মাতুল মহাশয়দিগের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও সংশ্রব হেতু শ্যাম রায় মহাশয়ের শ্বশুরালয়ের সংশ্রবে ও পরিচয়ে সুদূর আদাঐর গ্রামে পিতা মহাশয়ের বিবাহ সংঘটীত হয়। মাতুল বংশ সম্ভ্রান্ত ও সামাজিক সম্মানে তদঞ্চলে সম্মনিত। অবস্থা মধ্যবিত্ত ও সচ্ছল ছিল।

    আমার জন্মে মাতুলালয়ে আনন্দের সীমা রহিল না। দীননাথ রায় (মাতুল মহাশয়ের নাম) মহাশয়ের একমাত্র ভগ্নির পুত্র সন্তান জন্মিয়াছে, ইহাতে পাড়া প্রতিবেশী সকলই আনন্দ প্রকাশ করিতে লাগিল। আমার জন্মকালে বৃদ্ধা মাতামহী, মাতুল মহাশয়ের বৃদ্ধ খুল্লতাত ও তৎপত্নী, তাঁহাদের বিধবা এক কন্যা (সম্পর্কে আমার মাসী) কে এক পরিবারে বাস করিতে আমি দেখিয়াছি। দাস দাসী প্রভৃতিতে বাটী জনতা পূর্ণ ছিল।

    বাল্যকাল।

    ছয়মাস বয়সের সময় মাতুলালয় হইতে মাতাঠাকুরাণীর সঙ্গে পিত্রালয়ে আসিলাম। পিত্রালয়ের অবস্থা যে ধনজন পূর্ণ তাহা পূর্ব্বেই উল্লেখ করা গিয়াছে। উভয়কুলের সুখ সৌভাগ্যের দিনেই আমার জন্মলাভ হইল। বাল্যকালে আমার কয়েকটী দৈব দুর্ঘটনায় আমাকে অশেষ যাতনা ভোগ করিতে হইয়াছিল। দুইবার জলে ডুবিয়াছিলাম। ১ম বার বোধ হয় ৫/৬ বৎসর বয়সের সময়; একদা পিতৃদেব এক বড় নৌকাযোগে শ্বশুরবাড়ী গিয়াছিলেন। আমি মাতা মহাশয়ার সহ মাতুলালয়েই ছিলাম; বর্ষাকাল, নৌকা বাড়ীর সম্মুখের অনতিপরিসর খালের ঘাটে বাঁধা আছে, স্নানের সময় হইয়াছে, পিতা মহাশয় নৌকার অদূরে কাহারও আলাপ প্রসঙ্গে অন্যমনস্ক ছিলেন। আমি নৌকার পশ্চাৎ দিক দিয়া বাবা! আমি সাঁতার দিতে পারি বলিয়া জলে ঝম্প প্রদান করিলাম। সেখানে জল বেশী নয় বলিয়া মাঝি প্রভৃতি কেহই সে কথায় কর্ণপাত করে নাই। কিন্তু সেখানে যে একটী গভীর গর্ত্ত ছিল তাহা আমিও জানিতাম না এবং অপর কেহও জানে না, সেই ঝম্পে আমি নিম্নগামী হইতে লাগিলাম। সাঁতার ত শিখি নাই কেবল কথা মাত্রই সার। পিতা মহাশয় যে স্থানে ছিলেন সেখানে যদুনাথ নামে একটী গোপ বালক অকস্মাৎ উপস্থিত হইয়া চিৎকার করিয়া উঠিল -- ""ভাগিনা যে জলে ডুবিয়া গিয়াছে''। সে দিগ্‌বিদিগ্‌ বিবেচনা না করিয়াই জলে লাফাইয়া পড়িল, তখন মাঝিদিগেরও চৈতন্য লাভ হইল, পিতা মহাশয়ও ব্যতীব্যস্থ হইয়া জলে নামিলেন, যদুনাথা আমাকে স্কন্ধে লইয়া জল হইতে উঠিল, জল বেশী উদরস্থ হইয়াছিল না, কে জানি চরক গাছের সন্যাসীর ন্যায় হস্তে পদে ধরিয়া উপরে তুলীয়া আমাকে ঘুড়াইল, জল যাহা পেটে ছিল বমি হইয়া বাহির হইয়া গেল। এ যাত্রা বাঁচিয়া গেলাম। যদুনাথ যেন ভগবানের ইঙ্গিতেই তথায় উপস্থিত হইয়াছিল, সে না দেখিলে এখানেই জীবনের যবনীকা পতন হইত। যদুনাথ আমাকে বিশেষ ভালবাসিত, সে আমাপেক্ষা ৪/৫ বৎসরের বড়। তাহার কথা পরে হইবে।
  • achintyarup | 59.94.2.149 | ২৬ জুন ২০১১ ০৪:৪০480500
  • তাহাই *কুলের উপযুক্ততা বুঝিতে হইবে
  • achintyarup | 59.94.2.149 | ২৬ জুন ২০১১ ০৪:৫৫480501
  • *যদুনাথ আমাকে স্কন্ধে লইয়া
  • achintyarup | 59.94.2.149 | ২৬ জুন ২০১১ ০৬:০৬480502
  • আর একবার নিজবাড়ীর পাকা ঘাটলায় পিচ্‌কারীতে জল ভরিতে গিয়া ডুবিয়া ছিলাম, অদূরে জগমোহন মালী নামক এক ব্যক্তি কি করিতেছিল, অকস্মাৎ দেখিতে পাইয়া দৌড়িয়া আসিয়া জল হইতে উঠাইল। জল উদরস্থ না হওয়ায় কোন চিকিৎসার দরকার হয় নাই, বাঁচিয়া গেলাম।

    এই জলেডুবী ব্যাপারটাও কুষ্ঠীরই ফল; আমার রাশী মকর, মকর ও মীন এই রাশীদ্বয় জলচর। জ্যোতীশের মতে সকল রাশীতে যাহাদের জন্ম হয়, তাহারা প্রায়ই জলে পড়ার এমন কি মৃত্যু পর্য্যন্ত জলে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাহা হউক এ ভয় আছে বলিয়াই বৃহৎ নদী ও সাগরাদিতে নৌকা কি বাষ্পিয় জলযানে চলিতে সাহসী হই নাই। কদাচিত যে চলিয়াছি তাহাও খুব সতর্কতা ও ভয়ে ভয়ে।

    একদা নিজ বাড়ীর অট্টালীকার সিঁড়ি বাহিয়া উপরে উঠিতে কি নামিতে বহু উপর হইতে গড়াইয়া পড়িয়া গেলাম। দক্ষীণ হস্তের কব্‌জাটা ভাঙ্গিয়াই প্রায় গিয়াছিল, চিকিৎসাদিতে জোড়া লাগিয়াছে বটে, কিন্তু এখনও তাহা যে ভগ্নপ্রায় তাহা টের পাই।

    ১ম বার জলে পড়ার পর পিতৃদেব বাড়ী নিয়া আসিলেন, পরে জ্বর রোগে ৬ মাস কাল ভোগীতে হইয়াছিল, প্লীহাদি হইয়া শরীর ভগ্নপ্রায় হইয়াছিল, অতি কষ্টে বহু সুচিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করি।

    বাল্যকালে অধিকাংশ সময়ই মাতুলালয়ে থাকিতে হইয়াছে, কারণ মাতুল মহাশয়ের একমাত্র সহোদরা ভগ্নি -- মাতৃঠাকুরাণীকে তাঁহারা অর্থাৎ মাতুলবাড়ীর সম্পর্কিত লোকে অত্যন্ত স্নেহ ও আদর করিতেন। তদপেক্ষা আমি আরও অধিক আদরের পাত্র হইয়া উঠিলাম। তাই বৎসরের মধ্যে একবার আসিয়া মাতুল মহাশয় আমাদিগকে তদালয়ে না নিয়া থাকিতে পারিতেন না। বর্ষা সময়েই দূরস্থানে যাতায়াত সুবিধাজনক, তাই বর্ষার প্রথমেই নিয়া যাইতেন; বর্ষা শেষ হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব্বে আমাদিগকে বাটীতে পুনরাগমন করিতে হইত। এরূপভাবে বৎসরের মধ্যে ৫/৬ মাস কাল মাতুলবাড়ীতেই আমার বাল্যকাল কাটীয়াছে।

    মাতুলালয়ের আশেপাশে ব্রাহ্মণ কায়স্থাদি ভদ্রলোক যে কয়েক ঘর ছিলেন, তাহা ছাড়া অধিকাংশ বৈশ্য-গোপ, সেই ভগবান নন্দনন্দনের বংশ পরম্পরাগত শ্রেণীর লোকের বাস; তাঁহারা সেই দ্বাপর যোগের সুখ সৌভাগ্যেরই যেন অভিনয় করিতেন। অনেকের বাড়ীতেই অট্টালীকা ও প্রাচীরাদি শোভমানা, মহিষ ও গো বৎস প্রত্যেক বাটীতেই প্রচুর। দধি, দুগ্‌ধ, সর, ননী, মাখন ও ঘৃতের কারবারে এক২ জন প্রভূত সম্পদে পরিপূর্ণ। যাঁহারা অধিক সংখ্যায় মহিষ পালন করিতেন, তাঁহারাই বড়লোক, তাহাদিগকে ""মহিষাল'' শব্‌দে অভিহিত করিয়া সকলই সম্মন করিতে দেখিয়াছি।

    দ্বাপর যোগের তুলনা দিয়াছি বলিয়া কেহ অসঙ্গতি দোষ হইয়াছে বলিয়া মনে করিতে পারেন। কিন্তু বৃন্দাবনধামে বসিয়া এ গ্রন্থ না লিখিলে কখনই ঐ উপমাটী মনে উদয়ই হইত না। এখানে শ্রীবৃন্দাবনে কি দেখিতেছি -- সেই দ্বাপরের যেন জের। গোচারণের মাঠ ও পতিত তৃণ পরিবৃত বনভূমির অভাব নাই। ঘরে২ গো মহিষাদি। প্রাতে ও বিকালে গো মহিষাদির যথেচ্ছ বিচরণ দেখিলে মনে কত আনন্দ হয়। আর যমুনা পুলীনের স্থলে এখন যে চড়াভূমি হইয়াছে তাহাতে সেই হৃষ্টপুষ্ট শ্যামলী, ধবলী ও কবলী আকারের বৃহদাকার গাভীগণকে শ্যামল তৃণ পরিবৃত বহুপরিসর মাঠে চরিতে দেখিলে কাহার না আনন্দ উদ্বেলীত হইয়া সেই দ্বাপর যোগের লীলায় তন্ময়তা না ঘটে। যাহার সে বেণুগীত, সে সিঙ্গাধ্বনী কর্ণে প্রবেশ না করে সে বৃন্দাবনে বৃথা আসিয়াছে। তাহার প্রকৃত বৃন্দাবনবাস হইতেছে না। সাধক কি কবি না হইলে এই পূণ্যক্ষেত্রে বাসের অযোগ্য। যখন স্নানার্থে যমুনার চরভূমি অতিক্রম করিয়া গমন করি তখন শ্যামল শোভাবিশিষ্ট মাঠের শোভার সঙ্গে সেই যমুনার সুশীতল নীল জলের শোভা দৃষ্টে মন কেন উদাস২ করে? তখন কি সেই ব্রজেন্দ্রনন্দন, গোপীমনমোহন শ্যামসুন্দরকে এই শ্যামল শোভার ভিতরে দৃষ্ট হয় না? তাঁহার সেই পাপীতাপীকে আকর্ষণকারী সেই বংশীধ্বনী কি শুনা যায় না? যাহার চক্ষু আছে সে ভবানী ঠাকুরের ন্যায় সে নটবর মূর্ত্তি দর্শন করে, যাহার কর্ণ আছে সে গোপীদিগের ন্যায় বংশীধ্বনী শ্রবণে বিহ্বল হয়। যে সংসারপথ ভূলে নাই সে এই লীলা দেখিবে না ও শুনিবে না।

    যাহা হউক, আপন বিষয় হইতে অনেক দূরে সরিয়া পড়িয়াছি। বৃন্দাবনে বসিয়া যখন গ্রন্থ লিখা তখন এ স্থানের উপমা ভিন্ন অন্য কোন স্থানের উপমা আসিবে কেন? যখন সেই আনন্দ... স্রবণ ও হৃদয়রাজ্যের রাজার প্রকট লীলাবিহারের ক্ষেত্র এ স্থান, যদিও আসল নাই নকল বটে, তথাপী চক্ষুষ্মানের চক্ষে ইহাই আসল বলিয়া প্রতীয়মান হয়। কেননা সেই দ্বাপরের অবতারই ত তাঁহার লীলা ক্ষেত্রকে কালের কুক্ষিগত অদৃশ্যমানরূপে পরিণত দৃষ্টে কলিযুগের ১ম সন্ধ্যায় বঙ্গদেশকে ধন্য ও গৌরবান্বিত করিয়া নবদ্বীপ ধামে রাধাকৃষ্ণের অভিন্ন কলেবরে গৌরাঙ্গরূপে জন্মগ্রহণ করত: অর্থাৎ অবতীর্ণ হইয়া ভক্তলীলা প্রচার ও বৃন্দাবনের প্রকাশ করিলেন। তিনি না করিলে কে এখন তাঁহার সেই ব্রজলীলার আস্বাদ পাইত?
  • achintyarup | 59.94.2.149 | ২৬ জুন ২০১১ ০৬:০৭480503
  • সকলই *সম্মান করিতে দেখিয়াছি
  • kumu | 14.99.220.22 | ২৬ জুন ২০১১ ০৯:১৬480504
  • সার্থক বৃন্দাবনবাস।

    সেই সত্য,যা রচিবে তুমি/যা ঘটে,তা সব সত্য নহে!

    খুব ভালো লাগছে পড়তে।
  • achintyarup | 59.93.241.253 | ২৭ জুন ২০১১ ০৫:১৬480505
  • যদিও এখন সেই বৈশ্য জাতি গোপ গোপীর স্থান চৌবে, পাঁরে ও মিশ্র প্রভৃতি বিদেশাগত ব্রাহ্মণগণ অধিকার করিয়াছে তথাপী কালচক্রের পরিবর্ত্তনে ভগবানের লীলায় ইহারাই যে ব্রজবাসী তাহার কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। সেই ব্রজগোপী ও ব্রজবধুগণকে যে এখন না দেখা যায় এমন নহে, যাহার অন্তর্দ্দিষ্টি আছে সে অহ:রহই দেখিতেছে। যাহার বাহ্য দৃষ্টি সে অন্যভাবে দেখে। যদি কখনও ভগবান শক্তি দেন আর ""বৃন্দাবনতঙ্কÄ'' লিখিয়া শেষ করিতে পারি তবে মনের স্বাদ পূর্ণ হইবে, আজ এই পর্য্যন্ত।
  • achintyarup | 59.93.241.253 | ২৭ জুন ২০১১ ০৬:১৭480507
  • মাতুলালয়ের চতুষ্পার্শবর্ত্তী সেই বৈশ্যজাতী গোপগণ আমার নিকট সেই ব্রজধামেরই অনুরূপ বলিয়া মনে হয়, কারণ প্রাতে নিদ্রোত্থিত হওয়ার পূর্ব্বেই খির, সর ও দধি ... হস্তে কেহ ভাগিনা সম্বোধনে কেহ মামা সম্বোধনে আপ্যায়ীত করিয়া আমার তৃপ্তি বিধান ও সন্তোষার্থ মহা আহ্লাদে তাহা প্রদান করিয়া সেই গোপ গোপীগণ যেন কতই তৃপ্তিলাভ করিত। তখন আমার মত আলালের ঘরের দুলাল আর সে গ্রামে কে আছে?

    এই যে আমার প্রতি স্নেহ তাহার দুইটী কারণ আমি মনে করি। এক মাতুল মহাশয় সেখানে ভদ্রলোকের মধ্যে পদস্থ, তাঁহার অমায়ীক ব্যবহারে সকলই অনুগৃহীত। ২য় শ্রীহট্ট জেলাবাসী এই শ্রেণীর লোক বড় সরল ও অমায়ীক। স্বার্থান্ধ খল প্রকৃতি লোকের ন্যায় তাহারা কেবল নিজাভিষ্ট পূরণে অভ্যস্থ নহে।

    যাহা হউক ভগবানের কৃপায় মাতুলালয়ে বাল্যকাল খুব সুখ ও আদর যত্নে কাটিয়াছিল। খেলার সঙ্গীরও অভাব ছিল না, তন্মধ্যে যদুমামার মত আর কেহ ছিল না। তাহার আপন ভাগিনাকে বোধহয় এত মনে প্রাণে সে ভালবাসে নাই যতদূর আমাকে ভালবাসিয়াছে। বাল্যসহচর ও আমার তখনকার জীবনমরণের সঙ্গী সেই মহাপ্রাণ যদুনাথ নিকট আমি চিরঋণে আবদ্ধ, সে ইহধামে নাই। তাহার অমর আত্মা আমার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ গ্রহণ করুণ .... বাসনা।

    বাল্য-শিক্ষা। শ্রীহট্টে বাঘাসুরা স্কুলে।

    দেখিতে দেখিতে ৫ বৎসর কাটীয়া গেল। চূড়াকরণ...... অন্যান্য ভ্রাতাভগ্নিদিগের একসঙ্গে মহা ধুমধামে, বহু ব্যয়বিধানে ও নৃত্যগীতাদিতে যে সুসমাপ্তি হইল তাহার আভাস পূর্ব্বে দিয়াছি। শুভদিনে পঞ্চবর্ষের ভিতরেই ""খড়ি হাতে'' -- বিদ্যারম্ভ হইল। খাগড়া নামক বনের কলম দিয়া কদলী পত্রে ১ম খাড়া লিখাপড়া অভ্যাস করিতে হইত বলিয়াই গ্রাম্য ভাষায় বিদ্যারম্ভরূপ সুসংস্কৃত শব্দ ও ব্যাপারকে ""খড়ি হাতে'' অভিধান করা হইয়াছে। খাগড়া এক প্রকার জ্বালানী কাষ্ঠ যাহাকে অপভাষায় খড়ি বলে। মধুর ন্যায় সুন্দর কলম তদ্বারা হয়।

    গ্রামে সার্কেলাধিনে পাঠশালা ছিল, তাহাতে মাষ্টর ছিলেন। সার্কেল পণ্ডিত সময়২ আসিয়া পরিদর্শনাদি করিতেন। এক এক পণ্ডিতের অধিনে ২/৩টী পাঠশালা ও একটী মধ্য বাঙ্গলা স্কুল। আমাদের গ্রামের পাঠশালাটী জারৈতলা সার্কেলের অন্তর্গত:। পাঠশালার পাঠ শেষে মধ্য বাঙ্গলা স্কুলে ভর্ত্তি হইলাম। তখনকার দিনে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করিতে পারিলে, চাকুরী অথবা কাজের উপযুক্ত বিদ্যা হইত। ঐ সার্টিফিকেট বলে উকীল, মোক্তার, ডাক্তার ও শিক্ষক প্রভৃতি সকলেরই জীবিকা সংস্থানের উপায় হইত।

    আঠারবাড়ীয়া পাঠশালায় কত দিন পাঠ করিলাম তাহা মনে ..... যত দিনই হউক মাষ্টর মহাশয়ের বিশেষ অনুগ্রহ আমার প্রতি.... কেন ছিল ছিল বলিতে পারি না, তবে ইহা জানি যে প্রতিদিনের.... পাঠাভ্যাস না করিয়া আমি সঙ্গীদের সহ খেলায় যাইতাম না, সঙ্গীগণ বিরক্ত হইলেও আমি বিচলিত হইতাম না। শ্রেণীতে তখন প্রতিযোগীতার নিয়ম ছিল, যে পড়া পারিত, সে উপরে যাইত যে না পারিত , সে মলিন কি অধোবদনে নিম্নগামী হইত বা দাঁড়াইয়া থাকিত। এই প্রতিযোগী ভাবটা আমার মনে দৃঢ়ভাবে অঙ্কিত থাকায় কখনও যেন নীচে পড়িতে না হয় ইহাই আমার চিন্তার বিষয় ছিল। তাই সেই ছোটবেলা হইতেই পাঠশিক্ষায় অধ্যবসায়ী হইয়াছিলাম এবং এই হেতুই বোধহয় মাষ্টর মহাশয় বিশেষ স্নেহ দৃষ্টিতে দেখিতেন এবং ছাত্রগণও সম্মান করিত। আঠারবাড়ীয়া গ্রামের উত্তরপাড়ারঁ জগন্নাথ চক্রবর্ত্তীর ছেলে চন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী মহাশয় তখন মাষ্টর ছিলেন।

    জারৈতলা মধ্যবাঙ্গলা স্কুলে ৩য় শ্রেণীতে ভর্ত্তি হইয়াছিলাম, তথায় বৎসরেক পাঠাভ্যাস করিলাম। তখন পণ্ডিত বাবু গোপীমোহন বসাক। তিনি খুব কড়া সাশনকারী ছিলেন, হস্তে একটা সরু শক্ত রকমের যষ্টি সকল সময়ই থাকিত, ইহাই তাঁহার কড়া সাশন জাগরূক রাখিত। অঙ্কবিদ্যায় তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁহার সাশনে সেখানেও আমার লিখাপড়ায় কোন প্রকার শৈথিল্য ঘটে নাই। শ্রেণীতে সকলের উপরে থাকিয়া মর্য্যাদা রক্ষা করিতে পারিতাম।

    একদা ডিপুটী ইন্‌স্‌পেকটার নামজাদা তারক...... ও স্বনামধন্য ন্যায়বীর বাবু রামশঙ্কর সেন ডিপুটী ...... অকস্মাৎ স্কুল পরিদর্শনে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ক্লাসে ক্লাসে ২/৪ জনকে ২/৪ কথা জিজ্ঞাসা করিয়া কয়েকখানা বহী পুরস্কার বিতরণ করিয়া গেলেন। আমিও একটা পুরস্কার পাইলাম -- ""নীলমণি কৃত ভারতবর্ষের ইতিহাস''। ইহাতে যেমন পণ্ডিত মাষ্টর সন্তুষ্ট হইলেন, আমারও উৎসাহ দ্বিগুণতর হইল। ইহার পরই এই স্কুলের সহিত আর আমার সম্পর্ক রহিল না।
  • arnab | 14.98.151.187 | ২৭ জুন ২০১১ ১৮:৪০480508
  • শেষ দুটো লাইন পরপর পড়লে
  • achintyarup | 59.93.247.210 | ২৮ জুন ২০১১ ০৪:০৪480509
  • কিয়দ্দিনান্তর একদা মাতুল মহাশয় আমাদের বাটীতে আগত হইলে, পিতৃদেব মহাশয় সহ আলাপালোচনায় আমার পাঠ ও শিক্ষার কথা উঠিলে মাতুল মহাশয় বলিলেন ""এখন কেবল বঙ্গভাষা শিক্ষা প্রচুর নহে, ইংরেজী শিক্ষাও দরকার''। মাতুল মহাশয় আমার শিক্ষার ভার গ্রহণ করত: আমাকে সেই বারই তদীয় আলয়ে লইয়া গেলেন।

    কয়েক দিন মাতুলালয়ে ক্ষির, সর, দধি ও দুগ্‌ধাদি বিশেষ রূপ উদরস্থ ও আস্বাদন করিয়া ও যদুনাথ প্রভৃতি প্রিয় বয়স্যগণের সহিত খেলার আমোদ প্রমোদে দিন কাটাইয়া, একদা মাতুল মহাশয় সহ ত্রিপুরা জেলার অধীন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহকুমায় গমন করিলাম। তথায় সুপরিচালিত একটী মাইনার স্কুল ....... দিনে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। মাতুল মহাশয়ের ....... আমাকে সেই স্কুলে ভর্ত্তি করাইয়া দিয়া আসেন, কিন্তু .....দুর্ভাগ্যবশত: কোথায়ও আমার থাকার বাসার বন্দবস্থ হইল না। তখনকার দিনে হোস্টেল কি বোর্ডিংয়ের সৃষ্টি হয় নাই। খোরাকী লইয়া ভদ্রলোক কেহ ছাত্রকে বাসায় স্থান দেওয়া অপমানজনক মনে করিতেন। সংসৃষ্ট আত্মীয়স্বজনের ছেলেরাই ভদ্রলোক, শিক্ষক, আমলা, উকীল ও মোক্তারের বাসায় থাকিত। পাক করিয়া কি ছেলে পরাইয়া গৃহস্বামীর মনস্তুষ্টি বিধান করিত। সে রূপ কেহ ঘনিষ্ট আত্মীয় তথায় না থাকায়, মাতুল মহাশয় বিফল মনোরথ হইলেন।
  • achintyarup | 59.93.247.210 | ২৮ জুন ২০১১ ০৫:৫৫480510
  • আমি বিমর্ষ বদনে মাতুল মহাশয়ের পশ্চাৎ বাটীতে ফিরিয়া চলিলাম। মাতুল মহাশয় বিশেষ চিন্তাযুক্ত হইয়া কোথায় ইংরাজী স্কুল আছে তাহারই অনুসন্ধানে নিযুক্ত রহিলেন।

    কিয়দ্দিনান্তর জানা গেল শ্রীহট্ট জেলার অধীন নষ্করপুর থানার এলাকায় বাঘাসুরা গ্রামে একটী মধ্য ইংরাজি স্কুল খোলা হইয়াছে। অনতি বিলম্বে মাতুল মহাশয় আমাকে সহ তথায় উপস্থিত হইলেন, মাতুলবাটী হইতে ১০/১২ মাইল দূর যাইতে বেশী কষ্টবোধ হইল না। তথাকার বাজারে গবর্ণমেণ্টের রাস্থার পার্শ্বেই স্কুল বসিত। সেখানেও থাকার অসংস্থাই..... অনেক বলিয়া কহিয়া পরিচিত এক কায়স্থ দোকানদারের ...... থাকার বন্দবস্থ করিয়া আমাকে তথায় রাখিয়া মাতুল মহাশয় বাড়ী ফিরিলেন। প্রতি মাসে ২ ্‌ টাকা হারে খোরাকী বাবদ .....দোকানদারকে দেওয়ার কথা হইল। সকালবেলায় রান্না করিয়া ..... হইবে বিকালে দোকানদারই রান্না করিয়া দিবে। এইসব সর্ত্ত স্বীকার করিয়া বুক বান্ধিয়া পাঠাভ্যাসে মনোযোগ করিলাম। ভর্ত্তিকালে মাতুল মহাশয় ছিলেন বলিয়াই মনে পরে; মাষ্টর ও ছাত্রগণ ময়মনসিংহ জেলার ছাত্র বলিয়া হর্ষোৎফুল্ল ভাব প্রকাশ করিলেন। ময়মনসিংহ জেলার লোক উন্নত বলিয়া তাহাদের মনের ধারণা।

    যাহা হউক কয়েক দিন কেবল সিদ্ধ ভাতে ভাত করিয়া তাড়াতাড়ি খাইয়া স্কুলে যোগ দিতাম। স্কুল আমার বাসগৃহের অদূরেই ছিল। আমার বয়স তখন ১০ বৎসরে পড়িয়াছে। পাকে অনভ্যস্ততা হেতু প্রাতে ব্যঞ্জন তরকারী কিছুই করিতে পারিতাম না, বিশেষ পাকে অধিক সময় নষ্ট করিলে পাঠেরও ব্যাঘাত ঘটে এ চিন্তাও ছিল। কিন্তু ভগবানের কৃপায় পাক শিক্ষা দিবারও এক শিক্ষক জুটীয়া গেল। বাজারের জনৈক পতিতা নারী আমার পাকের সময়ে আসিয়া আগুণ নেওয়ার ছলে গৃহদ্বারে বসিয়া আমাকে নানা কথা প্রশ্ন করিত ও স্নেহ মমতা প্রকাশ করিত। কয়েকদিনের মধ্যেই তাহার শিক্ষায় ভাজা বেঞ্জনাদি পর্য্যন্ত পাক করিতে অভ্যস্থ হইলাম।
  • achintyarup | 59.93.242.60 | ২৯ জুন ২০১১ ০৫:১০480511
  • একদা স্কুলের সেক্রেটারী ধরমণ্ডল নামক ভদ্র......... অধিবাসী বাবু নবীনচন্দ্র রায় স্কুল পরিদর্শনে আসিলেন। .............. শনিবার ছিল। তিনি নূতন অপরিচিত ছাত্র আমাকে ................ নিকটে আহ্বান করত: পরিচয়াদি লইয়া বহুদূরবর্ত্তী ময়মনসিংহ জেলাবাসী বলিয়া ও পড়াশুনার সংবাদ পাইয়া বিশেষ আনন্দিত হইলেন।

    আমি ইংরাজী বর্ণমালা ২/১ দিনেই অভ্যাস করিয়া বানানে প্রবেশ করিয়াছি সঙ্গে২ বাঙ্গালা পুস্তকও পাঠ করিতে হইতেছে, বাঙ্গলা শিক্ষায় আমি অনেকের শির্ষস্থানীয় হইয়াছি, কারণ নূতন স্কুলে কেহই আমাপেক্ষা বাঙ্গলা ভাষা অধিক আয়ত্ম করিতে পারে নাই। সেক্রেটারী মহাশয় আমাকর্ত্তৃক স্কুলের উন্নতীর আশা করিয়াই যেন বিশেষ হর্ষ প্রকাশ করিলেন এবং যাইবার কালে আমাকে বলিলেন ""চল আজ আমাদের বাটীতে, কাল রবিবার সেখানে থাকিবে, পরস্ব দিবস ১০টায় খাওয়া দাওয়া করিয়া আমাদের ছেলেগণের সঙ্গে একবারে স্কুলে আসিবে। এই নিয়মে প্রতি শনিবারেই আমাদের বাটীতে গিয়া থাকিবে তাহা হইলে তোমার পাকের ক্লেশ অনেকটা দূর হইবে''। এই বলিয়া তাঁহাদের বাটীর ও পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আমার বিশেষ পরিচয় করাইয়া দিলেন ও পুস্তকাদি সহ আমাকে অনুসরণ করিতে আদেশ করিলেন।

    আমি ছেলেদের দলে মিশিয়া নবীনবাবুর অনুগামী .......... যথা সময়ে ধরমণ্ডল গ্রামে পঁহুছিয়া নবীনবাবুর .......... সুধারাম সরকার মহাশয়কে অভিবাদন করিলাম, .......... পরিচয় লইলেন। স্কুল হইতে ধরমণ্ডল ২/২।। মাইলের ....... স্থিত। যাওয়া আসায় অধিক কষ্ট বোধ হয় নাই। বাটীর সকলই আমাকে আদরযত্ন করিতে লাগিলেন। তাঁহাদের বাড়ীর ছেলের ন্যায়ই আমি সকলের সঙ্গে মিশিয়া পড়িলাম। এইভাবে প্রায় তিনমাস কাটীল। সেক্রেটরী হইতে সর্ব্বনিম্ন শ্রেণীর ছত্র পর্য্যন্ত সকলেই প্রীতি ও শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতে লাগিলেন। বাঘাসুরা গ্রামের ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক ছাত্রগণও আমার বিশেষ প্রিয় ও অনুরক্ত হইল। আমোদ আহ্লাদে সুখে সন্তুষে বিদেশবাসের কষ্টের ও দেশের কথা ভূলিয়া গেলাম। যেন আমি সেই দেশেরই ছেলে।

    কিন্তু সুখ অধিককাল স্থায়ী হয় না। চক্রবৎ সুখ দু:খের উলট পলট অভিনয় অনিবার্য। আমারও সুখের দিন চলিয়া গেল, দু:খের অভিনয় আরম্ভ হইল।
  • siki | 123.242.248.130 | ২৯ জুন ২০১১ ০৮:২৩480512
  • অর্ণবের ১৭ই জুনের পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে --

    "...দাস্যা: হইতে দাস্যা হইয়াছে ...'

    দাস্যা: কি হয়? অনেকদিন আগে সংস্কৃত পড়েছিলাম, কিন্তু যদ্দূর মনে পড়ছে, আকারান্ত শব্দের শেষে বিসর্গ বসে না। আকার এবং অন্যান্য দীর্ঘ স্বরবর্ণের শেষে বিসর্গ বসে না।

    অপ্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গে, অচিন্ত্যরূপ, তুলকালাম সুন্দর চলছে লেখাটা। চুপচাপ বসে বসে পড়ছি :)
  • achintyarup | 59.93.247.172 | ৩০ জুন ২০১১ ০৪:৪০480513
  • একদা দুপ্রহর বেলায় একজন লোক আদাঐর গ্রাম হইতে ত্রস্তব্যস্তে আসিয়া সংবাদ দিল -- মাতুল মহাশয় অকস্মাৎ কলেরায় মারা গিয়াছেন। বজ্রাঘাতের ন্যায় সে সংবাদ আমার কর্ণগত হইল। ছেলে মাষ্টর সকলই শুনিয়া হায়২ করিয়া উঠিল। কি ....... দুর্ঘটনা! নিদারুণ মর্ম্মঘাতী সংবাদ!!

    কাল বিলম্ব না করিয়া সকলের নিকট ...... করত: সেই লোকসহ আদাঐর অভিমূখে যাত্রা করিলাম। ............. ছাত্রগণ শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ও সেক্রেটারী মহাশয় ........... বাঘাসুরা ও ধরমণ্ডল গ্রাম সকলকে যেন অতি নির্ম্মমতা ও ব্যাকুলতার সহিত পরিত্যাগ করিতে হইল। অতি অনিচ্ছাসঙ্কেÄও তথা হইতে চিরবিদায় লইতে বাধ্য হইলাম। চক্ষের জলে বক্ষ ভাসিয়া যাইতে লাগিল, এক মাতুল মহাশয়ের মৃত্যু শোক তদোপরি এই চিরবিদায়ের মর্ম্মন্তিক কষ্ট, অসহ্য শোকাবেগে পরিণত হইল।

    যথা সময়ে সন্ধ্যার প্রাক্কালে আদাঐর পহুছিয়া শূণ্য মাতুলালয় দর্শনে হৃদয় বিদীর্ণ হইতে লাগিল। মাতুলানী কেবল আমার অপেক্ষায় তথায় রহিয়াছেন। আমার সহিত সাক্ষাতেই বলিয়া উঠিলেন বাবা! আমি কেবল দাস দাসী মাত্র আশ্রয়ে এই বীজন পুরীতে বাস করিতে পারি না। ইনি মাতুল মহাশয়ের দ্বিতীয় পক্ষের পরিণীতা পত্নী। তাহার বিবাহের অনেক পুর্ব্বেই ১ম বিবাহের মাতুলপত্নী ও মাতামহী এবং মাতুল মহাশয়ের খুল্লতাত ও তৎপত্নী প্রভৃতি স্বর্গগত হইয়াছিলেন। অধুনা ....... বর্গের মধ্যে ২/৪ জন দাস দাসী ভিন্ন কেহই ছিল না। বলা .......... মাতুল মহাশয়ের ঔরষে কোন সন্তান জন্মে নাই। সুতরাং ...... বংশের এখানেই বিলুপ সাধন হইল।
  • achintyarup | 59.93.247.172 | ৩০ জুন ২০১১ ০৫:২২480514
  • আত্মকথা।

    ৪র্থ পরিচ্ছেদ।

    ................................................................ পঁহুছিল। ....................... শোকাকুল হইয়া ................. একমাত্র অতি শ্রদ্ধা ভক্তির পাত্র জ্যেষ্ঠ.................. শুনিয়া আহার নিদ্রা পরিত্যাগ করিলেন। ........................ পরিত্যাগ করিলেন না।

    .................... সেই শোকাবেগের তীব্রতা হ্রাসপ্রাপ্ত .............. আমার শিক্ষার কথা উপস্থিত করিলেন। তাহাতে ......... হইল কিশোরগঞ্জ মাইনার স্কুলে পাঠ করাই উচিত। ................. ভাল বিশেষ ১২/১৩ মাইলের রাস্থা বিশেষ দূরও নহে।

    যথা সময়ে শুভদিনে পিতামহাশয় আমাকে কিশোরগঞ্জ লইয়া যাইবেন স্থির হইল। ইতিমধ্যে কিশোরগঞ্জ স্কুলের জনৈক ছাত্র আমার মাতুল সম্পর্কীত মধ্যম জ্যেষ্ঠতাত পত্নী মহাশয়ার ভগ্নিপুত্র ভাদিকারা গ্রাম নিবাসী (শ্রীহট্টের অধীন) অভয়চরণ বিশ্বাস মহাশয় আমাদের বাড়িতে আগত হইলেন। তাঁহার আগমনে পিতা মহাশয় আনন্দোৎফুল্ল বচনে বলিয়া উঠিলেন, ""বড় ভাল হইয়াছে গগনকে আমি কিশোরগঞ্জ লইয়া যাওয়ার মনন করিয়াছি। তথায় ইংরাজী স্কুলে তাহাকে ভর্ত্তি করাইতে হইবে''। অভয়মামা বলিলেন, ""আমি সঙ্গে নিয়া তাহাকে স্কুলে ভর্ত্তি করাই। সম্প্রতি আমার বাসায়ই গিয়া থাকিবে পরে আপনি অবসর মত গিয়া একটা বাসা ঠিক করিয়া দিয়া আসিবেন''। সকলেরই তাহাতে মত হইল। যথাসময়ে সেই মাতুল মহাশয় সহ কিশোরগঞ্জে উপস্থিত হইলাম। থানায় তদ্দেশীয় এক পোলীশ কর্ম্মচারীর বাসায় তিনি থাকিতেন; কয়েকদিন তাঁহার সঙ্গেই থাকিতে হইল। শুভদিনে মাইনার স্কুলে আমাকে ভর্ত্তি করিয়া দিলেন। আমার তখনকার বেশভূষার কথা কিছু বলিয়া যাই। আমার গলায় মালা ও হাতে রৌপ্যের নির্ম্মিত বালা ছিল; সেই নটবর শ্যামসুন্দর বেশেই স্কুলে হাজির হইলে ভর্ত্তির অব্যবহিত পরক্ষণেই স্বশ্রেণীর ছাত্রগণ কেহ মালাটা ছিড়িয়া ফেলিল, কেহ হাতের বালা কাড়িয়া নিল। বাস্তবিকই তখন আমার শ্যামসুন্দর বেশের একটা মুগ্‌ধতা ছিল। নতুবা ছাত্রগণ দর্শনমাত্রই এত ভাল বাসিত না এবং হেডমাষ্টরও কালাচান্দ বলিয়া আপ্যায়ীত করিতে ত্রুটী করিলেন না। ভর্ত্তি শেষে পাঠ্য বহী ও পড়া দেখিয়া লইলাম। ইংরাজী বাঙ্গলা বহী খরিদ করিতে হইল। ৫ম শ্রেণীতে পড়িতে লাগিলাম। ছাত্রদের সঙ্গে বেশ মিশামিশি হইয়া গেল। প্রসন্ন, মহেশ্বর, কৈলাস সহ যেন পূর্ব্ব পরিচয়ের একটা অদৃষ্ট সূত্র ছিল, নতুবা তাহারা আমাকে মূহুর্ত্ত মধ্যেই আপনার করিয়া ফেলীল কেন? তাহাদের পরিচয় পশ্চাৎ ক্রমে দিব।

    কিছুদিন পর পিতৃদেব কিশোরগঞ্জে উপস্থিত হইলেন এবং যশোদল গ্রামে বিশ্বনাথ রায় মহাশয়ের বাটীতে থাকার বন্দবস্থ করিয়া তথায়ই আমাকে রাখিয়া আসিলেন। ঐ বাটীতে আর কয়েকজন ছাত্র ছিল। উক্ত রায় মহাশয়ের কনিষ্ঠ দুই ভাই গিরিশ ও কৈলাস এবং তৎশ্যালক শিবচন্দ্র চৌধুরী, ইহারা আমার সমবয়সী, তাহাদের সহিত মিলমিশ হইয়া গেল। উহারা সকলেই আমার নীচের শ্রেণীসকলে পাঠ করিত। বিশ্বনাথ রায় মহাশয় পিস্‌তুতু ভাইয়ের খুড়তত ভাই হইতেন, সম্পর্ক দূরতর হইলেও তিনি অতি সদাশয় লোক ছিলেন, আমাকে কনিষ্ঠ সহোদরের ন্যায় দেখিতেন ও বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন। গিরিশ, কৈলাসকে আমি কনিষ্ঠ সহোদরের ন্যায় ও শিভচন্দ্রকে ভ্রাতার ন্যায় মনে করিতাম। খেলা ও পাঠের সঙ্গী ভালই জুটীল। পড়াশুনা বেশ চলিতে লাগিল।
  • achintyarup | 59.93.247.172 | ৩০ জুন ২০১১ ০৫:২৩480515
  • *শিবচন্দ্রকে
  • arnab | 121.245.110.33 | ০১ জুলাই ২০১১ ১৭:৪৭480516
  • আমি আবার কোনোদিনই সংস্কৃত পড়িনি।ওটা বঙ্গীয় শব্দকোষ থেকে লেখা। এ বিষয়ে যদি আলোকপাত করেন কেউ তো বেশ হয়।
  • achintyarup | 59.93.243.34 | ০২ জুলাই ২০১১ ০৫:৫৮480518
  • যশোদল হইতে স্কুল প্রায় আড়াই মাইল দূর হইলেও রাস্থা ভাল ছিল হেতু যাতায়াতে কষ্ট বোধ করিতাম না। শিতকালে স্কুল ছুটীর পর বেলা বড় থাকিত না, ছুটী হইলে পড়া বুঝিয়া আসা, শব্দের অর্থ লিখা প্রভৃতি কার্য্য জন্য আমাকে প্রসন্ন ও মহেশ্বরদিগের বাসায় কিছুকাল বিলম্ব করিতে হইত, কোন দিন গিরিশ প্রভৃতি সঙ্গীরা অপেক্ষা করিত কোন দিন তাহারা পূর্ব্বেই চলিয়া যাইত। সেদিন সন্ধ্যার পর একাই ২ ১/২ মাইল পথ সাহসের সহিত অতিক্রম করিতাম। প্রসন্নের বড় ভাই দাদা গোবিন্দ মজুমদার মহাশয় আমাকে প্রসন্ন হইতেও যেন অধিক স্নেহ করিতেন। তিনি গবর্ণমেণ্ট আফিসে কাজ করিতেন, কাছারী হইতে আসিয়া যদি কোন দিন আমাকে না দেখিতেন, তবেই জিজ্ঞাসা করিতেন ""গগন কোথায় কেন আসে নাই''। জলখাবার আনিয়া যেমন প্রসন্নকে দিতেন আমাকেও সেরূপ দিতেন। আমার পড়া বুঝাইয়া দেওয়ার লোক যশোদলে নিকটে কেহ ছিল না। আর তখনকার দিনে অর্থবহী বড় পাওয়া যাইত না। কাজেই প্রতিদিনই ঐ হেতু প্রসন্নদের বাসায়ই সন্ধ্যা গত হইত।

    যশোদলের রাস্থায় তারাপাশা গ্রামে একটা বৃহৎ বটগাছ আছে, সেটা রাস্থার পাশে, নদীর পাড়ে। সেখানে সপ্তাহে ২ দিন হাট বটে কোন স্থায়ী দোকান ঘর নাই, মুদী পসারি বেচাকিনা করিয়া সন্ধ্যার পর বাড়ী চলিয়া যায়। হাটের দিন আমি কিশোরগঞ্জ হইতে সেখানে পঁহুচিয়া লোকজন পাই, কোন ভয়ের কারণ থাকে না, অন্যদিনে সেই সিদ্ধেশ্বরী বট গাছ যাহার আশে পাশে শ্মশান ভূমি আছে ও যাহার শাখা সমূহ বহু বিস্তৃত ভূমিখণ্ড ব্যাপীয়া প্রায় ভূমি স্পর্শ করিয়া আছে, তাহার নির্জ্জন তলদেশ দিয়া অন্ধকারে যাতায়াত বিশেষ ভয়ের কারণ বলিয়া প্রসিদ্ধই ছিল হেতু আমারও সেই বীজন বৃক্ষ তলে উপস্থিত হইলেই যেন ভিতীব্যঞ্জকতার ছায়া আমার মনকে আন্দোলীত করিয়া ব্যাকুল করিত। গাছের অদূরে থাকিয়াই পুস্তকাদি চাদরে বান্ধিয়া, ধুতি মালকাছা করিয়া পরিয়া শ্লেটরুপী অস্ত্রকে খোলা হাতিয়ার রূপে হাতে রাখিয়া শ্বাসবদ্ধ করিয়া অতি দ্রুতপদ বিক্ষেপে বা দৌড়িয়া সেই বৃক্ষতলটা পাড় হইয়া যাইতাম। দিনের বেলায় কিন্তু কোন ভয় পাইতাম না, বরং এরূপ আরাম ও সুখ শীতল স্থান আর নাই মনে করিয়া বৃক্ষমূলে বসিয়া বিশ্রামসুখ ভোগ করিতাম, কোন দিন বা ভাগ্যক্রমে সপরী কলার কান্দীটাও মিলিয়া যাইত। লোকে মানসিক করিয়া গুড়, চিনী কলাদি ফল গাছের গোঁড়ায় রাখিয়া যাইত। ভূত প্রেত ছোটকালেই বিশ্বাস করিতাম না সুতরাং নির্ভিক চিত্তে কলাগুড় উদরস্থ করিয়া বৃক্ষমূল সংলগ্নবাহী সেই স্বল্পতোয়া স্রোতস্বতীর নির্ম্মল জল পানে প্রায়ই তৃপ্তি লাভ করিতাম। এইরূপে স্কুলে যাতায়াত ও শিক্ষা চলিল।

    মনে হয় বৎসরেক কাল এরূপে বিশ্বনাথ রায় মহাশয়ের ভবনে কাটীল, তাঁহার স্ত্রী আমার সম্পর্কিত বউদিদি বা বউঠাকুরাণী, আমাকে বড় ভালবাসিতেন। একদা স্কুলে যাওয়ার কালে বেতন নেওয়ার তারিখে বেতন নেওয়ার মনে ছিল না, বাড়ীর পিছনের দিকে ২/৩ টা বাড়ী অন্তর গমন করিলে পর সে কথা মনে হইলে, শিববাবুকে বেতনের টাকা আনার জন্য পাঠাইয়া আমি ও গিরিশ রাস্থায় বসিয়া আছি। গিরিশ বয়সে আমা অপেক্ষা কিছু ছোট হইলেও, বুদ্ধিমান এবং কিছু দুষ্টপ্রকৃতি। বসিয়া২ সে বলিল, দাদা চলুন আঁক্‌ খাই। এই যে সামনে আঁকের কল ও ক্ষেত্র দেখিতেছেন, এটা আমাদেরই প্রজা, এই বলিয়া আমাকে লইয়া সেই আঁকের রস বাহিরকারী কল অর্থাৎ কের্‌কীর নিকটে গেল এবং বাটীর মালিককে ডাকিয়া বলিল আমাদিগকে কিছু আঁক্‌ খাইতে দেও। পুরুষ লোক কেহ উপস্থিত না থাকায় স্ত্রীলোকগণ আঁক্‌ দিবে কিনা এই কথা হইতেছে এমন সময় গিরিশ বলিল, দাদা আপনি কলগাছের ভিতর এই আগাগুলী (আঁকের অগ্রভাগ যাহা ফেলীয়া দিয়াছে) দেন আমি গাছটা ঘুড়াইয়া দেখি। দেখ, বলিয়া গাছের তলে আমি বাম উরূতে শ্লেট সহ পুস্তকগুলী রাখিয়া ডাইন হাতে আগা দিলাম, রস বাহির হইল না, গাছ আটা ছিল ছিল না, সেই হেতু পুন: সেই আগাটা দিবার প্রয়াশী হইয়া দক্ষীণ হস্তে গাছের একদিকে ধরিয়া বাম হস্তে সেই আগা গাছের অপর দিক হইতে আনিবার চেষ্টা করার অবসরে আমার দক্ষীণ হস্তের অঙ্গুলী পর্য্যন্ত সেই ঘুর্ণয়মান গাছদ্বয় সংযোগস্থলে প্রবেশ করিল; গিরিশ যে গাছ ঘুড়াইতেছে সেটা আমার লক্ষ্য না থাকায়ই এরূপ হইল। এখানেই আমার বুকামী প্রকাশ পাইল। চিৎকার করিয়া গিরিশকে বলিলাম, রাখ হাত গাছের ভিতর ঢুকিয়াছে। গিরিশ থামিল, কিন্তু কি উপায়ে সেই হাত বাহিরে আসে তদ্বিষয়ে চিন্তা হইল, দুইজনেই বুঝিলাম উল্টভাবে গাছ ঘুড়াইলে হাত বাহিরে আসিবে। তাহাই করা হইল, হাত বাহিরে আসিল বটে কিন্তু আমি চিৎকার করিয়া অজ্ঞান অর্থাৎ সংজ্ঞাশূণ্য হইয়া পড়িলাম। যখন সংজ্ঞা লাভ হইল তখন দেখি আমার দক্ষীণ হস্তের অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলীদ্বয়ে নেকরাজলে ভিজান পট্টী বান্ধা এবং আমার মাথায়ও জল তৈল মর্দ্দন করিতেছে। সেই মোশলমান বাটীর স্ত্রীলোকরা তাহা করিতেছে ও হায়২ করিয়া কান্দিতেছে। সেদিন যেন কাহারই আর স্কুলে যাওয়া হইল না। একটা খাট সদৃশ কিছুর উপরে আমাকে শোয়াইয়া বাড়ীতে নেওয়া হইলে পর বউঠাকুরাণী আমার সেবা শুশ্রুষার ত্রুটী করিলেন না, এমনকি তাঁহার হাতে তুলীয়া আমাকে খাওয়াইলেন। কবিরাজ মলম বান্ধিয়া ঔষধ দিল। বেদনায় অস্থির, দুইটী অঙ্গুলীর চর্ম্মমাংস এবং অনামিকা অঙ্গুলীর অস্থি পর্য্যন্ত ছেঁচিয়া গিয়াছে। ২/৪ দিন তথায় রহিলাম, তৎপর বাটী হইতে লোক আসিয়া লইয়া গেল। ৩ মাস কাল এই দুর্ঘটনায় ভোগিলাম, ইহাও বাল্যকালের দুর্ঘটনার অন্তর্গত:ই বলা যায়। তখন আমার বয়স ১২ বৎসরে পড়িয়াছে।

    ঐ শয্যাশায়ী অবস্থায় বধুঠাকুরাণী যে কত যত্ন ও স্নেহ ভাবে আমার পরিচর্য্যা করিয়াছেন তাহা বলিবার নহে। তাঁহার হাস্যমুখ, মিষ্টভাষা ও বিনম্র ব্যবহারে আমি তৎসকাশে চিরঋণী। তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করিলেও সে ঋণ শোধিবে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন