এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পর্বে পর্বে কবিতা - তৃতীয় পর্ব

    pi
    অন্যান্য | ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ | ৫৫৯২৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.84.176 | ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ২৩:৪৩507597
  • উঠেছে, উঠেছে, উঠেছে। ঃ-)
  • ফরিদা | ২৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:১৫507598
  • জাহাজ ফিরেছে নির্ঘাত

    জাহাজ ফিরেছে নির্ঘাত – এত বেলা হল,
    এতদিনে যখন ফিরছি – জানি চলে গেছে, থাকার কথাও নয় তার
    জাহাজের নিজস্ব আকার, নাব্যতা চলাচল সূচী
    মানুষের জন্য মুলতুবি কখনো থাকে না জানি
    ফেরার পথে যেই নেমে আসে রাত –
    মনে হয় জাহাজ ফিরেছে নির্ঘাত।

    আমাকে নামিয়েছে সেই – আমি জানি, আমি সমস্ত জাহাজেই
    ডাঙার গল্প করি – আমগাছ ঘিরে সারাদিন ছায়া নাচানাচি করে
    রাত্তিরে জোনাকিরা চলে, ঝিঁঝিঁরা ডেকেছে, সাপে ব্যাঙ ধরে
    পখিরা বাসাতে যে যার – কিছু কিছু বয়োবৃদ্ধ যেন দমকে কেশেছে –

    এইসব আজেবাজে বলি বলে – জাহাজ নামিয়ে দিল আমাকেই।
    বাকিরাও সায় দিয়ে বলে – যাও আরো দেখে এসো, বলো
    তাই নেমে গেছি, দুরন্ত অজানা দ্বীপে সারাসারি গাছ
    ফল মূল, পোকা, মানুষ জন্তু মিলে মাখামাখি দেখে টেখে
    বড় দেরি হয়ে যায় – গল্প বুননের মাঝে একদম হঠাৎ আসে আভিঘাত

    এত বেলা হল। এতদিন। আমাকে একলা রেখে – জাহাজ ফিরেছে নির্ঘাত।
  • অনিকেত | 24.139.222.45 | ৩০ অক্টোবর ২০১৫ ১৬:৪১507599
  • লীলা মজুমদারও সেই রকমই বলেছেন, ভাবটি বুঝে নিয়ে প্রথমে মূলস্বরটিতে এসে দাঁড়াও
    সামান্য জিরে কিম্বা পাঁচফোড়ন বই তো নয় কিন্তু আলাপটি পরিপাটি হওয়া চাই যেন শুক্তো কালিয়া কিম্বা নিতান্তই সাদামাটা ডালে-ঝোলে-অম্বলে দিব্যি চেনা জানা যায়
    তারপর যেরকম হয় কুচি কুচি ডুমো ডুমো জিরি জিরি গোটা গোটা স্বরে স্বরে বিস্তারিত মেলামেশা মশলার সঠিক সঙ্গত
    আর আঁচের তিনটি সপ্তকেই ঠিকঠাক আনগোনা
    এভাবেই রস ঘন হয়ে ওঠে হাতের গুণে এক এক রকম

    তবে সে সবই রপ্ত করতে গেলে যত্ন করে নাড়া বেঁধে নেওয়া চাই
    রেওয়াজের সঙ্গে ভালোবাসাও দিতে হবে ঢেলে-উপড়ে
    আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবও সেইরকমই বলেছেন ।।
  • অনিকেত | 24.139.222.45 | ৩০ অক্টোবর ২০১৫ ১৬:৪২507600
  • জমানো মানুষগুলো ফুরিয়ে আসছে
    ওদের খরচ করে ফেলেছি দিন আনা খাওয়ায়
    শারদীয় লেখালেখি, ছেলের ইস্কুলে আর বছরে অন্তত একবার বেড়াতে যাওয়ায়
    নতুন মানুষ আর তেমন জমছে না
    কিন্তু অজস্র কাঁটা জমেই যাচ্ছে
    এখানে ওখানে ফুটে যাচ্ছে, রক্তারক্তি
    অথচ কাঁটা তো আর সেভাবে খরচ করা যাচ্ছে না
    এখন মানুষের স্টক কিভাবে বাড়াবো না কাঁটার গাদা খালি করব
    সেটাই চিন্তা ।।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:৩৮507601
  • কবিতা লিখতে পারলে আমার পাঁজরের মধ্যে থেকে
    দম বেরিয়ে আসে
    রুদ্ধ জলস্রোত কিংবা জন্মের রক্ত হয়ে
    আমি তো এইবার জানি, আস্তে আস্তে হারছি জুয়োর দান
    কান্না ছাড়া আর একটাও রাস্তা নেই
    টারবাইন ঘোরার আগে একবার দাঁড়িয়ে
    ঠিকানা জেনে নেয়
    আর ধূর্ত সবজান্তারা মুখ টিপে বলে
    এখানেই ফিরে আসতে হবে,নান্য পন্থা।
    সেই ছোটো ছোটো হাতগুলো
    সেই বিকেলের মৃত্যু আর ভোরের ডিডি ওয়ানে বেঁচে ওঠা
    সেই বইয়ের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে
    সঙ্গিন, বড়ো সঙ্গীহীন আঠাশ বছর

    আমরা সফল হইনি, ভাই। আমরা আরো হারিয়ে গেছি
    নীল ভাঙা এফএম টিউনারের মধ্যে
    তুলো ওঠা বালিশে কালচে ছোপের মধ্যে
    আমরা নষ্ট হয়ে গেছি বাবার সাদা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে
    মায়ের ছেঁড়া আচলে হাত মুছে।
    আমরা নামতে শিখিনি তাই উঠতেও পারিনি
    হাসপাতালের সিঁড়ি বেয়ে
    বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিয়ে

    অকথ্য সেই ভালোবাসা ও ঘৃণাকে
    উড়িয়ে দিয়েছি ময়লা আকাশে
    আর চোখে আঙুল ডলতে ডলতে
    চায়ের খুরিরা কিভাবে ছোট হয় আর প্রেসি-পলিটিকস নিয়ে
    বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছি বারবার।
    এমনকি রুমঝুমের কোলেও দুটো খরগোশ
    আর চিঠিগুলো কবিতার নিচে চাপা পড়ে গেছে

    আর তোকে বলতে পারিনি, ভাই
    আমি একটু একটু করে মরে যাচ্ছি, হেয়ার ড্রায়ারের তাপে
    এই শুকনো খরার দেশে।
    বেগুনি অর্কিড বেশিদিন বাঁচে না।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:৪৮507602
  • আসলে কিছুই নেই বিশেষ
    কিন্তু উঠতে উঠতে
    নামতে নামতে
    দশ বছর কেটে যাচ্ছে
    সেই ন্যাশনাল পার্কে গাড়ির মধ্যে আমার
    বমি পেয়েছিল খুব
    আর তুমি জলের বোতল নিয়ে ভয় ভয় চোখে
    তাকিয়ে ছিলে
    আর প্রাইড প্যারেড থেকে
    জুটিয়ে এনেছিলে গোলাপি আর সবুজ পুঁতির ছড়া
    রং চটে আয়না থেকে ঝুলছে
    আর আইস শভেল, ফুলকাটা কফির গেলাস
    ভিতরে শুকনো কফি আর ছাই
    আর গুটিয়ে এককোণায় পড়ে রয়েছে
    শুক্রবারের টার্নপাইক
    পার্কিং লটে একটা বই নিয়ে
    বোকার মতো একটা একলা চেয়ার
    রাত্তির নটায়

    আর হঠাৎ আবিষ্কার করা গেঁয়ো ফুলের দোকানে
    বৃষ্টির নোনতা ফোঁটা। জমে রয়েছে
    ঐ কোণায়

    আরো কয়েকটা ট্র্যাশব্যাগ লাগবে
    আরও কয়েকটা ট্রিপ
    আরেকটা থ্যাংকসগিভিং-এ দেশী রান্না
    আর আমার প্রাণপণ কল্পনা যেখানে আমি গানও গাইতে পারি এমনকি
    আরো অনেকটা সময়
    দশ বছর। সিঁড়ি বড্ডো খাড়া।
  • achintyarup | 125.187.53.211 | ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ১০:৪৮507603
  • ডাকপিয়ন,
    তুমি বড্ড দেরি করো আজকাল।
    জানো, আমাদের এদিকে এবার লক্ষ্মীপুজো হয়নি?
    সন্ধেবেলায়,
    দূরে শাঁখ বাজছিল,
    উলুর আওয়াজ
    মেঝের আলপনায় ধানের ছড়া
    জোড়া জোড়া পা।
    এখানে হিম পড়ছিল।

    আমাদের দুগ্গাপুজোতেও এবার আলো জ্বলেনি।
    মেলাতলার বেঞ্চিতে বসে
    এক খুরি চা
    ভাগ করে খাওয়া হয়নি।
    ফুচকা খেতে খেতে
    এমনি এমনি মজায়
    হেসে এ-ওর গায়ে ঢলে পড়া হয়নি।

    এ বছরটা যেন কেমন।

    আমি চৌকাঠে বসে থাকি,
    তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে
    বাড়ির নম্বর খুঁজতে খুঁজতে
    চলে যাও।
    একটা চিঠি
    আমাকে দিয়ে যেতে
    কী হয়?
    বড্ড দেরি করো।

    আর শোনো,
    তার সঙ্গে দেখা হলে
    বলে দিও,
    তার যদি নতুন কোনো বন্ধু হয়,
    তার কথা সে যেন আমাকে না বলে।
  • ফরিদা | ১১ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:৩৩507604
  • যে সব রাস্তা ছেড়ে এসেছি

    আমি যে সব রাস্তা ছেড়ে এসেছি, তারা বদলিয়ে গেছে এতদিনে। তখনো দেখেছি কেমন অনায়াসে ওদের দু-হাতের ফাঁকে পাশের গাছগুলো রোদ্দুর ছুড়ে ছুড়ে দিত। যেসব দৃশ্যের একক ঘুম চোখে নষ্ট পাতায় রাতভর ঘুরে বেড়িয়েছে, যেসব খুশিরা, যাদের অহঙ্কারের পা কখনো জমি ছুঁত না, তারা অনায়াসে লুটিয়েছে ঘাসে, কিম্বা যে বহু রাত ধরে অনীহার সঙ্গে ঘর করে বলে এখনও অনিদ্র।

    আসলে বহুধার কোনও গন্তব্য নেই। আঙুলু গুলো এক একটা আলাদা আলাদা মিনিবাসে উঠে বসল। একটা পায়ের পাতা গেল গঙ্গার ধারে ভিজে থাকতে – আরেকজন ঠায় দাঁড়িয়ে গ্রেট ইস্টার্ণের নীচে ম্যাগাজিনের দোকানে। জিভ গেছে টেলিফোন ভবনের দিকে ফুটপাথের খাবার দাবার পেতে। চোখ খুঁজে বেড়ায় কালো ফ্রেমের চশমা, শান্তিনিকেতনি ব্যাগ, তাঁতের শাড়ি। এমনিতে সাধারণ – কিন্তু হাসলে বৃষ্টি হয়ে যায়। গজদাঁত, গালের যে দিকটায় টোল পড়ে তার অন্য দিকে চিবুকের কাছে একটা তিল।

    আমার কথায় কখনো হাসে না সে। হাসার কথাও নয়। কেউ কাউকে চেনেনা, চেনেনি। বৃষ্টির ওপর হাত ছিল শুনেছি একমাত্র তানসেনের। তবু বৃষ্টি হলে খুব ভালো লাগে।

    আসলে কেউ কোত্থাও যায় নি। সবাই নিজের নিজের ইচ্ছার কথা বলছিল গোল হয়ে বসে। যেমন ঠিকানা লেখা থাকে না বলে চিঠিরা কাটা ঘুড়ি হয়ে যেতে চায়, পকেটে টাকা পয়সা না থাকলেই চারটে বাজতে না বাজতে খুব খিদে পেয়ে যায়। দু একটা ফোন নম্বরে যারা থাকবে ঠিক ছিল – তাদের পাওয়া যায় না। পায়ে ব্যথা করে – বাস দেখলেই। একটা একটা স্টপেজ করে এগোন যায় ঝুলে ঝুলে – কিন্তু তাকে ঠিক এগোন বলা যায় না।

    আমি যে সব রাস্তা ফেলে এসেছি – তারা সেই সময়ে রঙ বদলাচ্ছিল। রোদ্দুর পালটে পালটে ধুসর হয়ে গেল। দু-এক কুঁচি আলোর মতো ফোন নম্বরগুলো আর কেউ কোনোদিন তোলে নি। বোধ হয় জেনে গিয়েছিল ওরা। বাসগুলো এসে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে – ঝুলতে হয় না। ভেতরের লাল লাল সীট দেখা যায়। তবু কেউ ওঠে না তাতে।

    তারপরেও অনেক রাস্তা এসেছে, গেছে, কেউ এগিয়ে দিয়েছে কেউ বা বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছে – ফেলে আসা সেইসব রাস্তা গুলোর মধ্যে ছিল এইটা। এমনিতে সাধারণ – শুধু হেসে উঠলেই......
  • ফরিদা | ১২ নভেম্বর ২০১৫ ১১:৫৬507605
  • প্রায়শই অজস্র রোদ্দুরে বাজিরা ঝরঝরে হয়ে যায়
    ট্যাম ট্যাম বাজনায় ওরা হাত-পা ছুড়েছে দেখি
    যে যার মতো করে আলো শুষে নেয়, উত্তাপ যতটুকু জোটে
    ছোট ছোট হাতে পায়ে, খসখসে ঠোঁটে - স্বাদু শৈশব আর্দ্রতা
    হেমন্ত শেষের রোদ্দুর ভালোবাসে, বাজি দেখে লালায়িত হয়।

    তার ঠিক পরে, রোদ্দুরে অকারণ পড়ে থাকে তুবরির খোল
    উৎসব চলে যাওয়া দগদগে পোড়া দাগ, বাসী ফুল
    অনর্থ আকাঙ্খা নিয়ে যারা আসে এই প্রান্তরে মাঝে মাঝে
    তিথি নক্ষত্র যোগে অশরীরী কামনা যেমন করে
    ধীরে ধীরে বাজনার তালে কমে, বাড়ে – সম্মোহিত হতে হতে
    ভেসে যায়, ডুবে যায় – জেগে উঠে টের পায়
    শুয়ে আছে জ্বোরো রোদ্দুরে, দপদপ করে মাথা হাত পা –
    যেখানে আর্দ্রতা পায়, রোদ্দুর শুষে নেয়, বাজিরা টনকো হয়
    পুড়ে গেলে খোল পড়ে থাকে, রোদ্দুরের বড় বড় হাঁ।
  • sosen | 177.96.127.243 | ১২ নভেম্বর ২০১৫ ২১:৪৯507607
  • অনেক সন্ধ্যে জুড়ে হিমের নীচে অন্ধকার
    এলইডি নেই
    চন্দননগর নেই।
    ঠান্ডা জলে সারাদিন ভিজিয়ে রাখা মোমের জোনাকি
    ভেজা মাটি
    লম্বা মাঠের শেষে এয়ারপোর্টের ভাঙা পাঁচিলের গায়ে
    ম্যারাপ বাঁধা পুজো।

    বড়ো পরাতে খিচুড়ি ভোগের থেকে ধোঁয়া ওঠে
    লাইনে দাঁড়াই।
    রঙ্গোলি কাকে বলে কেউ জানে না
    শুধু অনেক জবাফুল
    আর খিচুড়ি প্লাস্টিকের প্যাকেটে বয়ে নিয়ে আসি
    দুদিন উৎসব
    আর কেউ কচুর শাক কাটে না
    কুপির আলোয় আমরা ভোগ খাচ্ছি
    গড়িয়ে যাওয়া, হলুদ, ভিক্ষান্নের ঝোল।

    শৈশব রাক্ষসের মতো তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
    অমিত এখনো সাপবাজি আর রংদেশলাই পোড়াচ্ছে কোথাও
    শুধু সেখানে আর যাওয়া যায় না।

    আমি হলুদ খিচুড়িকে ভয় পাই
    পাল্লাহীন জানলায় সবুজ প্লাস্টিকের ফাঁক দিয়ে
    ঘরে বয়ে আসা হিমকে
    ছোটো হয়ে যাওয়া কালো সোয়েটারকে
    বাবার কাশিকে

    শৈশব রাক্ষসের মতো জানান দ্যায়
    সে কোথাও যায়নি, এখানেই, যে কোনো সময়.....
  • Tim | 140.126.225.237 | ১২ নভেম্বর ২০১৫ ২২:১২507608
  • ফরিদা, সোসেন , ভালো লাগলো
  • ranjan roy | 192.69.12.136 | ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ২০:০২507609
  • ম্যাকলাউডগঞ্জ
    =========
    কাল বুঝি রাতভর শোঁ শোঁ করেছে হিমেল হাওয়া,
    কাল ছিল সারাদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টি।
    ওরা বলল হিমালয়ে বরফ পড়েছে।

    আজ তো ঝলমলে রোদ্দূর!
    উত্তরে মুখভর্তি সাদা ফেনা নিয়ে কলগেট হাসি হাসছে হিমালয়।
    আমি যাব বুদ্ধসন্দর্শনে।

    রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বিদেশিনি বড় ব্যস্ত ভারত চিনিতে,
    মৃদু হেসে পথ ছাড়ে টয়োটা ও করোলার সারি।
    পাথর বাঁধানো পথে পরিযায়ী পাখিদের ভীড়,
    হটাৎ পথের ধারে উচ্চশির এক বুড়ো চার্চ।

    কাছে গিয়ে চমকে যাই
    --এর জন্ম সিপাহী বিদ্রোহের পরে!
    পেছনে সবুজ ঘাসে ঘুমিয়ে রয়েছে ও কে?
    --লর্ড এলগিন?
    দাপুটে সে ভাইসরয়? মনে পড়ে কোলকাতা?
    মনে পড়ে চিনের জীবন? অথবা মেক্সিকো?
    কেন শেষে শুয়ে পড়লে এই পর্বতের পাদদেশে?
    অথবা তোমার বৌ অ্যানের যন্ত্রণা?

    তথাগত বলেছেন জরা-মৃত্যু ব্যতিরেক নয়।
    তাই বুঝি এইস্থানে ধর্মচক্র ঘুরে চলে অবিরাম
    বাঁ থেকে ডাইনে।
    জপমালা মৃদুস্বরে বলে ওঠে
    ওঁ মণিপদ্মে হুং!
    কিন্তু এই বিশাল সে পুণ্যধামে তোমার কারুণ্যেভরা মূর্তি
    নির্বাক, হাসতে ভুলে গেছে।

    আমাকে চিনিয়ে দাওঃ
    --কাকে বলে পতিচ্চসমুৎপাদ
    -আমাকে শিখিয়ে দাওঃ
    -- আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি, নির্বাণ।
    আমাকে জানতে দাওঃ
    --- কেন নয় ঝাঁপ দেওয়া রোজ রোজ একই নদীতে?
    আমাকে বুঝতে দাওঃ
    -- কেন নয় সমাগম আজীবন একই নারীতে?

    না থাক, হে তথাগত,
    কিচ্ছুটি কর না।
    তুমি শুধু একবার হো-হো করে হেসে ওঠো
    হিংসায়-উন্মত্ত-পৃথ্বীতে।।
  • সুকি | 129.160.188.152 | ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:২২507610
  • ছবি
    ------------------------------------------------------

    এতো ছবি থেকে কি বাছা যায়?
    আলাদা রকম আমি ছড়িয়ে আছি
    চেনা কিছুর দিকে পিছন ফিরে
    তার চেয়ে বরং বেছে নাও নিজের মত
    এর প্রতিটাই তো আমি
    অন্তত তাই ছিলাম ছবি তোলার মুহুর্ত পর্যন্ত
    শরীরের ভাষা পড়তে পারি না
    মনোবিজ্ঞানীও নই
    তাই ওইখানে আমার ভাঁজ করা হাত
    ঈষৎ আরামের জন্যই শুধু!
    যদি তোমার সংজ্ঞার সাথে আমারটা মিলে যায়
    দেখবে ভাঁজ করা হাতের মধ্যে
    কোন রহস্য লুকিয়ে নেই
    যা কিছু রহস্য ওই পিছন ফিরে থাকায়
    আর আমার ছড়িয়ে যাবার প্রবণতায়।
    যদি তোমার বাছার সাথে আমারটা মিলে যায়
    তাহলে কি ধরে নেব এরপর কোনদিন
    ছবি বাছার অনুরোধ আসবে না?
  • সুকি | 129.160.188.152 | ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:২৩507611
  • শক্তি কাপুর
    ------------------------------------

    জানতে পারলাম
    মাথায় ওড়না, টাইপরাইটার, লাল গাড়ী – ডাল লেক
    ও শক্তি কাপুরের মেয়ে -
    এইভাবে টিনের চালের শব্দ নিয়ে
    এক বর্ষাস্নাত সন্ধ্যায় শক্তি কাপুর
    আমার মাথার ভিতর ঢুকে গেল ।
    এর থেকে আর কতো ভালো চাও
    শক্তি কাপুরের মেয়েকে!

    আমি ওর মুখ খুঁজি না
    পান খাওয়া জিব গেঁথে আছে
    লালা গড়িয়ে পরা ঠোঁটের কষ
    একটা ছাঁচ গড়ি, আর তাতে ঢালি
    হাঁটুর উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নেওয়া হাসি
    ওই মেয়ে ঢেকে আসে
    ওই মেয়ে খুলে দেয় তার –
    কতই আর ভালো হবে
    শক্তি কাপুরের মেয়ে?

    শক্তি কাপুরের জন্য যখন অপেক্ষা করতাম
    তার আগে গান হত
    ফুল – পাখি – পাহাড়ের কোলে – তোয়ালেতে
    কত না নগ্ন ঘাড়

    মেয়েটি বন্দুক নিয়ে বিছানায় নাড়াচাড়া করে
    এই ভাবে মরে যাবে তুমি?
    কি করে মনে রাখাবে শক্তি কাপুরের মেয়ে তোমাকে?
    এতো বন্দুক ঘাঁটো কেন?
    তার চেয়ে অনেক আদর খেতে পারতে
    বরফ ছিল – হাউস বোট ছিল
    মানুষ ভালোবাসে সহজে খুলে যাওয়া
    খোঁজে শুধু আদরই
    শক্তি কাপুর যেমন ভাবে
    আমরা আদরের অপেক্ষা করতাম

    আত্মহত্যা করলে গল্প খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়
    শক্তি কাপুর খুব বেশী আত্মহত্যা করে নি।
  • ফরিদা | ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:৩৬507612
  • বড় বড় রাতে আগুন জ্বালাতে ভুল করে কেউ তুলে আনে কিছু
    সহজদাহ্য দেখে খটখটে টনকো ঘৃণাদের। এতদিন নির্জলা
    থেকে থেকে ওরা বেশ ঝরঝরে কাঠি কাঠি। বহুদিন আগে ওরা
    বাগান টাগান ছিল, ফুল টুলও হতো। সেইসব পরাগ রেণুরা
    আজ খসখসে বারুদের মতো, ইতস্তত পড়ে থাকে কাছাকাছি
    শীত ঋতু আসন্ন হলে সময়ের ভুলে পঙ্গপাল হয়ে গেছে মৌমাছি।

    বহুদিন বৃষ্টি আসেনি এই পৃথিবীতে। যার কাছে যতটুকু জল ছিল
    প্রত্যেকে লুকিয়েছে এতই যত্ন করে যে দরকারে পাওয়া গেল না।
    প্রতিবেশী লতাপাতা এলে, কিছু জল টল পেলে ফুল ফল ছায়া দিত
    গাছপালা বেড়ে গেলে কে জানে হয়ত বৃষ্টিও হতো কিছুদিন পরে।
    আসন্ন শীতঋতু জুড়ে উৎসব রাতভর। এখন, আগুন জ্বালাতে শুধু
    ঘৃণা উঠে আসে বারুদের জামা গায়ে, প্রত্যেক বুকের অনেক নীচে
    তালা দিয়ে রাখা ছিল জল। শীত থেকে সহজে নিস্তার পেতে গিয়ে
    আপাতত ছাই পড়ে থাকে। সহজতর ছিল ভাগ করে নেওয়া কম্বল।
  • sosen | 184.64.4.97 | ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:১৪507613
  • এখন মেঘ আসছে, জানালা দিয়ে, সবুজশ্যাওলা গজিয়েছে
    মেঘের গায়ে
    আর দু একটা ছানা মাছ খেলতে খেলতে মেঘের মধ্যে
    টুপটাপডুব শুনশান পাইনের হাওয়া
    এই কাঠের বাড়িটা দিদুর পছন্দ নয়
    হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসলে ঠান্ডা লাগে
    কিন্তু তাহলেও হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে
    গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমস্তুতে
    হা কৃষ্ণ, রক্ষা করো বলতে বলতে
    বেজে উঠছে পেতলের ক্ষয়া ঘন্টা
    সবাই জানে এই বাড়িটা স্বপ্নে ছিলো
    যতদিন না দিদু হঠাৎ মসজিদ ভাঙতে দূরে চলে গেল
    মরুভূমি বেশ গরম
    বালিতে ছ্যাঁকা।
    কাঠের বাড়িটা চুপ করে হাঁটু মুড়ে বসে আছে
    মেঘের শ্যাওলা আর ছোটো ছোটো মাছের ছানাদের নিয়ে।

    যুদ্ধ শেষ হলেই দিদুকে ফিরে আসতে হবে
    কৃষ্ণ বেচারার বড্ডো খিদে পায়,নিশিদিন নিশিদিন
  • i | 147.157.8.253 | ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫২507614
  • শুধু এই টইটার জন্য, মরে গেলেও , ভূত হয়ে গুরুতে আসব। এখনও এজন্যই আসি মূলতঃ।
  • dd | ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:২৪507615
  • হ্যাঁ।
    সব অতি ভালো ভালো কবিতা। নিঃশ্বাস বন্ধো হয়ে আসে - এম্নি সব।

    তবে ইসপেসালি সোসেনকে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। বোধয় আম্রিগায় পদ্য ভালো ফোটে।
  • সুকি | 129.160.188.188 | ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৪:৩৯507616
  • গহীন
    ---------------------------------------------

    কখনও ট্রেনের গহীনেও ঢোকা যায়
    ভিতর থেকে সরে আসে
    চেনা কেউ, শেষ হয় অপেক্ষা
    তবু ছুঁতে পারো না
    আরো গহীন, আরো নিবিড় চেয়ে থাকো
    জানালার দিকে, ট্রেনের গভীরতা কি পেরেছে
    মুছে দিতে সেই ছেড়ে আসা!
    চলে যাওয়া যায়, ফিরে আসা যায়
    তোমার রাতের গায়ে যদি লেগে থাকে গহীন দাগ
    সেই মূর্চ্ছনার কোন শব্দ নেই
    তুমি আর পরে থাকা রেশ
    আমি বাছতে থাকি, আমি কুড়াতে থাকি
    স্টারডাষ্ট – যার বাংলা প্রতিশব্দ আমার অজানা
    কেউ শুধাবার নেই ওইখানে
    না জেনেও কত ভালো থাকা যায়
    ট্রেনের গহীনে ঢোকার সময় তুমি কি দেখেছিলে
    অপেক্ষা ভালোবেসে কেউ কেউ জানতেই চায় না
    কিভাবে ফিরে যাওয়া যায়
    বা স্টারডাষ্ট
  • ফরিদা | ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৭:৪১507618
  • রং

    যাকে লাল বলে মনে হচ্ছে, আদতে সেটা আলো থেকে লাল ছাড়া বাকি সব রং হজম করেছে। লাল সে কোনওমতেই নয়। সেটা উদ্বৃত্ত মাত্র। এইভাবে প্রতিটি সবুজ আসলে কিছুতেই সবুজ নয়। হলুদ কিছুতে নয় প্রকৃত হলদে।

    রঙের ক্ষেত্রে এমন প্রতারণা জানা সত্বেও একথা সত্যি যে, বস্তুর আকার, প্রকার, আয়তন, এই ব্যাপারে বিশেষ গোলযোগ হয় না দৃশ্যত।

    এর থেকে ধারণা করা সম্ভব প্রকৃতিও নিরাপত্তাজনিত কারণে সততার বিভিন্ন স্তর রেখে দেন।

    আদতে নিরাপত্তাজনিত শব্দটাই দরকারে অদরকারে কাজে লাগে। একদম রঙেরই মতো।
  • sosen | 184.64.4.97 | ২২ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৩৪507619
  • তরল আগুনের মতো গড়িয়ে আসছে করুণা
    ভয় পেয়ে ল্যাপি বন্ধ করে দিলেও
    প্লাস্টিকের কিবোর্ড গলিয়ে আগুনের ফোঁটারা উঁকি মারতে থাকে
    চকচকে মুখগুলো ভিড় করে
    ঠেলাঠেলি করছে একেকটা ফোঁটার মধ্যে
    ওদের নাকমুখ নেই, গলে গেছে
    কিন্তু নাম আছে
    সেইসব নামেরা, যারা সবুজ ডায়রির পাতায়
    পোঁতা ছিল আর রাজকন্যা লুকিয়ে একটু জল দিলেই
    বাথটাব থেকে খাড়া হয়ে উঠে বসতো
    মুহূর্তে মাথার চারপাশ ঘিরে সবুজ মাংসাশী পাতারা লকলক করে উঠে
    পিচ্ছিল হাত বাড়িয়ে বলতো, দাও ভালোবাসা দাও
    খিদে পেয়েছে। অন্ত্রছেঁড়া খিদে, রাক্ষুসে।

    কারোর দু বিনুনি, কারোর গোলাপি জামা, কারোর
    পরীক্ষায় একটাও অঙ্ক মেলেনি আর
    ভিড় বাসে কারোর ছোট্টো বুক ধামসে দিয়েছে উন্মাদ
    কারোর বাড়ি ফিরতে ব্যথা করে, রাস্তায়
    হারিয়ে যাওয়ার আরামে বুঁদ হয়ে নেশার মতন
    কেউ বড়ো ক্লান্ত। করুণা অ্যাসিড হয়ে নেমে আসছে,
    বৃষ্টির মতন। গড়িয়ে আসছে, লাভার মতন

    ঢুকে যাচ্ছে, ছুরির মতন, শিশ্নের মতন

    আমি ভয় পাচ্ছি, কিন্তু ভয় পাচ্ছি বলতে ভয় করে
    এই আগুনের ভিড়েও সে
    জেদ ধরে এক্গুঁয়ে স্বরে বলে যাচ্ছে
    আমাদের মেয়ের নাম কল্যাণিয়াসু
    বড়ো ভালো মেয়ে
    শুধু নাকমুখ নেই বলে
    চিনতে পারিনি
    দাদা একবার নিখোঁজ ফাইলগুলো দেখবেন প্লিজ?
  • ফরিদা | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩১507620
  • জোনাকিতে নিম জ্বলে, অশ্বত্থ নিভু নিভু, তবু তাকিয়েছে।
    অপিচ অপাপবিদ্ধ জল ঘিরে মেঘে মেঘে সন্ধে নেমেছে।
    ঘুম ডাক ফিরে ফিরে আসে, বুড়ো নিম জমা রাখা মোহরের
    কাছে মৌতাতে নিঝুম। সশ্রম দিনান্ত যাপন, ফেরিঘাটে
    ঘেরাটোপ মাঝে মধ্যে ক্ষীণতম আলো টালো জুটে গেলে
    আগ্রহে নিকটবর্তী হলে দেখি নিসর্গ ফের মুখ ফিরিয়েছে।

    সম্বল বলতে বালি ছেনে তোলা কাদা জল – ওতেই তেষ্টা
    বলো চান চড়িভাতি ভাবনা জঙ্গল জুড়ে গাছ মাথা তোলে
    পৃথিবীর সমুদ্র অঞ্চল অকথিত লোনা ভ্রমনের স্বাদ পেলে
    বারবার ছুটে যায় মরুভূমি দেখে জলের দাগেই লেখে
    প্রিয়নাম। সাজানো খেলনা ভাষা, হেসে তাকে ছেড়ে যায় দূরে
    যেখানে সন্ধ্যা বলো, তার কাছে পিঠে বাসস্টপ অনন্ত দুপুরে।
    পিপাসায় পিপাসায় মুহূর্ত সঙ্কুল মেঘ এলে ভেবেছি সজলও -
    চেষ্টা তেষ্টা খায়। কবিতায় এইসব - শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছিল।
  • sosen | 177.96.90.175 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩৪507621
  • চেষ্টা তেষ্টা খায়....
  • sosen | 177.96.50.134 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:০২507622
  • একটা আমি ছিল
    ভাঁজ করা টুকরো কাগজের মতো
    সন্তর্পণে, বালিশের নিচে।
    একটা আমি ছিল, আগুনে দৈত্যের মতো খিদে
    হলুদ তেল গড়িয়ে যাচ্ছে শিথানে
    ঝড় ওঠাতো, ছুঁড়ে দিত বুড়ো গাছ
    উদ্ধত, সারা গায়ে কাঁটা

    একটা আমি ছিল
    কলেজপাড়ায় ছেঁড়া বইয়ের গন্ধে বুক ভরে নিয়ে
    হেঁটে গিয়েছিল মাতলার এপাশ ওপাশ
    কাঁধ থেকে ঝরে পড়ছিল ফ্রক

    আমিগুলো বাক্সে ঢুকে
    ডালা নামিয়ে দিল।
    বাক্সের উপর লেখা রয়েছে ডু নট ডিস্টার্ব।
    সামনে ফুলকাটা পাপোশ।

    অ্যান্টিকের দোকানে চুপচাপ, দ্রোহহীন ধুলো জমে
    আগুন, খিদে, কাঁটা ও ক্যাকটাসের ওপর
  • অনিকেত | 24.139.222.45 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৪২507623
  • সব সুন্দরের নাকি কেবল একটাই বসন্ত থাকে
    আমরা অবশ্য আরও দু-একটা বেশি পেয়েছিলাম
    তার মধ্যেই সুন্দরের প্রদক্ষিণকাল বাড়তে বাড়তে কোথায়...

    অথচ আমাদের জানলার পাশে একটা গাছ ছিল পলাশফুলের
    যখন-তখন ডেকে ওঠা কোকিলও ছিল পোষা
    তাছাড়াও এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে সোনালী বিকেল রক্তগোলাপ

    পুরোনো চিঠি লুকিয়ে রাখা কথা লুকিয়ে না রাখাও...
    কিছুটা অসহ্য আনন্দ। এসব জুড়ে জুড়ে আরও দু-একটা বসন্ত
    ঠিক চলে যাবে !

    কিন্তু তাপমান বেড়ে গেলে ওই দেখো সুন্দর একা হেঁটে যায়
    দীর্ঘ ছায়া । আমরা জমিয়েই চলি খড়কুটো ঝরা পাতা
    উড়ো চিঠি আর চুপিচুপি ডাকনাম ।।
  • ফরিদা | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩০507624
  • এখন যেখানে আবছা

    এখন যেখানে আবছা হয়ে আছে জায়গাটা – তোমার প্রেমের মতো, আছে, জানি, তবু স্পষ্ট বোঝা যায় না। সহজ হয় বলে কিছু একটা ভেবে নি। চেনা জায়গা হলে একটু সমস্যা হয় বটে এতে। যেমন জানা থাকে রাস্তার ঠিক এই জায়গায় বাঁদিকে একটা গাড়ি মেরামতির গ্যারেজ টিনের শেডওলা, পাশেই একটা কৃষ্ণচূড়া, এর ঠিক পরেই একটা পেট্রল পাম্প। ডানদিকে কিছু নেই -–কিছু নেই মানে কিছুই নেই, হ্যাঁ ঠাহর করলে দেখি একটা নিচু জমি সেখানে গ্রামের সব নর্দমার জল এসে মিলেমিশে জিরোয়। সময় নিয়ে নিয়ে ওরা কিছুটা পরিচ্ছন্ন হয় নিজে থেকেই। কিছু ঝোপ জঙ্গল ও আছে। আর ওই জায়গাটা তখনই চোখে পড়ে যখন কিছু পাখি আসে। বেশির ভাগই বক। সাদা বক। অল্প ডাঙায় বা ঝোপের সুবিধামতো ডালপালা দেখে চুপ করে বসে থাকে ঝাঁক বেঁধে। একটু কোনো শব্দ করে বড় ট্রাক মনে করো গেল রাস্তা দিয়ে তখন সবাই একসঙ্গে উড়ে যায়, কিছুটা গোল গোল ঘোরে। তখনই শুধু ডানদিকটা চোখে পড়ে।

    যা বলছিলাম, এখনও আবছা, কিছু চোখে পড়ে না। আমি তাই ভেবে নিতে থাকি কী থাকতে পারে এইখানে। চেনা জায়গা হলেও আমি চট করে ভুলে যেতে থাকি এখানে কি ছিল। সেই আবছায়াটুকু একটা জায়গা দেয় আমায় যা খুশি কিছু ভেবে নিতে – কৃষ্ণচূড়াটাকে একটা বয়স্ক মানুষ ভাবি – মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে – টিনের শেডটা তার একটা নড়বড়ে টেবিল। টেবিলে হাত রেখে ঝুঁকে আছে – তার পেছনে হলদে সূর্য উঠেছে যেন তার ঘরের টিমটিমে বাল্ব।

    তোমার সঙ্গে যে সব কথা বার্তা হয়েছিল – তার এক কথার উত্তরগুলো কিছুটা মনে থাকে – সেটা নিয়ে খেলা চলতে থাকে। কথার পিঠে কথা বসে – সেই কথা তখন কিছুটা এগিয়ে যায় তারপরে তার হাঁফ ধরে বলে পিঠের থেকে বোঝা নামিয়ে দেয়। যে পিঠে চেপেছিল তার খুব একটা পছন্দ হয় না ব্যাপারটা – সে ভাবে ইচ্ছে করে তাকে অপদস্থ করবে বলে ফেলে দিল ধুলোয়। তবে সে কিছু বলে না। রাগ পুষে রাখে। এতক্ষণ ভারবাহী কথাটা নিজেকে সোজা করতে করতে এগোতে গেলেই একটা ল্যাং খায়। আর ধুলোতে গড়িয়ে গিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হেসে ওঠে – এতে সেই অন্য কথাটা আরো ক্ষেপে যায়।

    দুটো কথায় একটা অনুচ্ছেদ হয়ে যায়। তিনটে হলে আরো এক চরিত্র আসে পৌনপৌনিকতা নিয়ে – সে আবার তার বন্ধুদের ডেকে আনে। বানানো কথাদের। শেষ অবধি তারা নিজেরা খেলাধুলো করতে করতে সন্ধে হয়ে যায় – কোন কথাদুটো যে আদতে তোমার উত্তর ছিল সেটা আর ঠাহর হয় না। সন্ধের দিকে প্রথম তারাটিকে – ওই যে সন্ধেতারার কথা বলছি – যদি তোমার একটি শব্দ ভাবি তার সঙ্গের পরের কথাটিও তোমার। তারপরে এত এত তারা এসে যায় – আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে কোন দুটো তারা প্রথমে ছিল মনে থাকে না।

    তবে আরো একটা ব্যাপার বোঝা গেল – একটা শর্ত ধরণের – ওই যে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকার ব্যাপারটা। এটা ওই জানলার পর্দা ধরণের বলে মনে হয়। এমনিতে জানলার পর্দারা ঘরের ভিতরের দিকে থাকে – যাতে আমরা নিজেরা সেটা খোলা বন্ধ করতে পারি – এছাড়াও আরো একটা পর্দা থাকে সচরাচর – জানলার পাল্লার বাইরে যেখানে হাত পৌছয় না। হাতে যখন সাঙ্ঘাতিক- কাজ ইচ্ছে করে হাতের নাগালের পর্দা বন্ধ রাখলাম কিছুক্ষণ, কয়েকঘন্টা, কয়েক মাস। তারপর হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পেলেই সেই পর্দা সরিয়েছি – তখন সেখানে আর কোনো দৃশ্য অবশিষ্ট নেই – বাইরের পর্দা পড়ে গেছে। তখন আবার ঘরে ফিরে আসা যায় – আবার অপেক্ষাও করা যায় সন্ধে অবধি যতক্ষণ না প্রথম তারাটি চোখে পড়ে। যতক্ষণ না অন্য কেউ বাইরে থেকে কেউ দ্যাখে এক বয়স্ক মানুষ একলা ঘরে একটা নড়বড়ে টেবিলে হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে।
  • ফরিদা | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩৩507625
  • ছাপ লাগানো শান্তিপ্রিয় পিছু হাঁটছেন থেকে থেকেই
    ঝুটঝামেলায় দূরে থাকছেন আঁচের সঙ্গে ফারাক রেখে
    পিছন দিকে চোখ থাকে না একটা সময় দেওয়াল আসে
    ঘরেই থাকেন শান্তিপ্রিয় কি বসন্ত কি মলমাসে।

    এদিকে তার ঘরের দেওয়াল ভীষণ বাধ্য প্রভুভক্ত
    সেও শিখেছে পিছু হাঁটতে যদিও গড়ন শক্তপোক্ত
    একটা সময় নিরালম্ব বহুতলের ওপর থেকে
    নিচে পড়ছেন শান্তিপ্রিয় দেওয়াল সহ আগলে রেখে

    ততক্ষণাৎ নড়ছে টনক হাওয়ার ঝটকা শান্তিপ্রিয়
    চেঁচাতে যান, পারছেন না, দ্রুতি বাড়ছে ঈর্ষনীয়
    হাত ছড়ালেন শেষ অবধি বাঁচার তাগিদ কী আর করা
    মাটি ছোঁয়ার অল্প আগেই শিখল পায়রা প্রথম ওড়া।
  • Abhijit Roy Chowdhury | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:০৬507626
  • আবার শীত নামের গুজব ছড়াবে শহরে।

    মাঙ্কি ক্যাপ আর শাল মুড়ি দিয়ে,
    সবজি ভাতের বাঙালি!
    ভোরবেলা বাজার ব্রিগেড যাবে।
    উসকো-খুসকো ত্বকে বোরলিন,
    আর কাঁচা সোনা রোদ মেখে,
    চলবে বাঙালির রুপবিলাস।

    যখন, শহরে শীত নামের গুজব ছড়াবে,

    তখন, মর্নিং স্কুলের খুদেরা,
    কুয়াশা আর গাড়ির ধোঁয়া
    গুলিয়ে ফেলে,
    হেটে যাবে ট্রামলাইন ধরে।
    মুখের থেকে ধোঁয়া ছেড়ে,
    বাবার, সিগারেট খাওয়ার,
    নকল চলবে প্রতিদিন।

    শীত নামের গুজব ছড়ালেই।

    আমরা, পার্কস্ট্রিটে ঠাকুর খুঁজতে বেরবো,
    খুঁজতে-খুজতেই, হাত ধরে, পাশে চলা প্রেমিকার
    শরীরে, নিজেকে উদ্ধার করব একসময়।
    লেপ কম্বলের নিচে খুঁজবো আমার কল্পনার
    রাজ্য।
    যেখানে কত শতাব্দীর উষ্ণতা লেগে আছে বালিশে।

    তাই শীত নামের গুজব ছড়ালেই,
    ভেতরের সাপটা কে শীতঘুম পাড়িয়ে,
    জ্বালাব, নিজের সত্ত্বার বন ফাইয়ার।
  • de | 69.185.236.52 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:২০507627
  • কি ভালো টই! সব্বাই যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে একে অন্যকে -
  • ranjan roy | 24.99.30.144 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:০৫507629
  • আত্মহত্যার আগে
    =============
    (১)
    না,আমি কোন অ্যাকসিডেন্টে মরতে চাই না।
    তাই
    যত জেব্রা লাইন, লাল-হলুদ-সবুজ বাতিদের চোখ মেরে
    মেপে মেপে রাস্তা পার হই।

    নাঃ, আমি বিছানায় শুয়ে কেঁদে ককিয়ে মরতে চাই না।
    তাই
    নিয়মিত লাল প্যাথোল্যাবে আসি যাই, জেনে নিই
    রক্তে চিনি কতটুকু গাঢ়
    আর বুকের ভেতরে ধুকধুকির লেফ্ট রাইট
    তাল মিলিয়ে চলছে কী না।

    কিন্তু এই ডিমসুম রাত্তিরে ওর সামনে বসে থেকে হটাৎ ইচ্ছে হয়
    ব্লেড দিয়ে
    চিরে ফেলি ধমনী ও শিরা;
    ফিনকি দিয়ে ছুটবে এক গাঢ় রক্তধারা।
    আর ও প্রথমবার চমকে উঠে অপার বিস্ময়ে আমাকে দেখবে
    আর বলে উঠবে--তুমি কি সুন্দর!

    (২)
    কী মুশকিল!
    আজকাল তাজমহল দেখেও আমার কোন চিত্তচাঞ্চল্য হয় না।
    পর পর ক'রাত্তির জেগে জেগে দেখেছি ওদের,
    ব্রিজিৎ বার্দো, মেরিলিন, সোফিয়া লোরেন।
    কী অসম্ভব প্রেডিক্টেবল!!
    অথচ সেই ডালহৌসি পাহাড়ের বক্রগতি পথ !
    আর তীব্রগতি টুরিস্ট কোচের বাঁক নেওয়া,
    মনে হয় স্টিয়ারিংয়ে ট্র্যাফিক জ্যাম যদি লেগে যায়।
    আহা! গাড়িকে খাদের পাশে যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়তে বলে?
    ছ'হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়তে পড়তে
    সারি সারি ওক, বার্চ, পাইনের বন যদি দুহাত বাড়িয়ে ডেকে নেয়!

    (৩)
    ম্যাকলাউডগঞ্জে গিয়ে প্রাণপণে জাপটে ধরেছি এক লামা।
    পীতবস্ত্র, শ্মশ্রুগুম্ফহীন,
    চশমাচোখে মুন্ডিতমস্তকে
    হাসিতে কেমন যেন দগ্ধশুক্র দগ্ধশুক্র ভাব।
    ---এ আমার প্রথম শিকার!

    ভন্তে! বলুন দেখি আত্মহত্যা নির্বাণের কাছাকাছি নিয়ে যায় কি না?
    শিকারটি ছটফট ছটফট পালানোর রাস্তা খোঁজে,
    আমিও নাছোড়,
    অগত্যা সে ঘাম মুছে বিড়বিড় বিড়বিড় করে
    --পতিচ্চসমুৎপাদ! পতিচ্চসমুৎপাদ!
    ওইটুকু শোনামাত্র আমি
    হাসিমুখে আলিঙ্গনে জড়িয়েছি তাকে।
    তারপর দিই-ঝাঁপ দেবো-ঝাঁপ করে
    দুজনেই বায়ুমার্গে;
    ছ'হাজার ফুট নীচে ছুটে আসছে কাংড়া উপত্যকা।
    ======================
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন