এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.168.222.193 | ১২ জুন ২০১২ ০১:৫৭547143
  • বাইনারিকে অনেকগুলো ক। যদিও কালকের এপিসোড মিস করেছি।
    রিদ্ধিমান,
    গল্পটা হল আমার স্ত্রী নিজে প্রায় সামর্থ্যহীন অবস্থায় ( আমি তখন ইউনিয়নের কারণে সাসপেন্ড), অতি সাধারণ পরিকাঠামোয় একটি স্কুল খুলেছিলেন। দশ বছর চলে। আমার মেয়েরাও সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। উনি সেখানে চারটি প্রতিবন্ধী বাচ্চাকে কেজি ও প্রাইমারি লেভেলে নর্মাল বাচ্চাদের সঙ্গে রেখেছিলেন।
    কিছুদিন পরে গার্ডিয়ানরা আপত্তি করল। ওই বাচ্চাদের জন্যে নাকি ওদের বাচ্চাদের স্বাভাবিক গ্রোথ স্লো হয়ে যাবে। যেমন অনেকে ড্রাইভারের বাচ্চার পাশে একই ডেস্কে ওনাদের বাচ্চারা বসবে-- এটা মেনে নিতে পারছিলেন না।
    আমার স্ত্রী জিদ ধরে রইলেন।কিছু বাচ্চা অন্য স্কুলে গেল। কিন্তু উনি বোঝাতে লাগলেন-- এতে নর্মাল বাচ্চারা সংবেদনশীল হবে, গ্রুপ ফিলিং বৃদ্ধি পাবে। আর প্রতিবন্ধীরা হীনমন্যতা থেকে মুক্তি পেয়ে দ্রুত নর্মাল হবে।
    তাই হল, কিন্তু অভিভাবকদের বোঝাতে জান কয়লা হয়ে গেছল।
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ০২:২৬547144
  • তার পরে? দশ বছর চলার পরে? কী হোলো সেই স্কুলের?
  • cb | 126.89.121.11 | ১২ জুন ২০১২ ০৭:১০547145
  • সেটা খুব একটা ইম্পরট্যান্ট নয় কি হল স্কুল এর । যদি উঠে গিয়েও থাকে তাহলে প্রতিবন্ধী বাচ্চা দের একসাথে পড়াবার জন্য ওঠে নি। কারণ রন্জন দা বলেছেন তাঁরা বোঝাতে পেরেছিলেন অভিভাবকদের।
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ০৭:৩৭547146
  • বলেন কী!!! ইম্পর্ট্যন্ট নয়????
    একটা ব্যতিক্রমী ধরনের স্কুল যেখানে প্রতিবন্ধী ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা একত্রে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে, যেই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত দেওয়া যাচ্ছে, সেই স্কুল উঠে গেল কি উঠে গেলো না সেটা ইম্পর্ট্যান্ট কিছু না???? এই স্কুল তো চলতেই থাকবে, আর তা থেকে প্রেরণা পেয়ে আরো পাঁচটা এমন স্কুল শুরু হবে, সফল হবে, সেটা ই কি আশা করতে পারি না আমরা? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে তার কারণ অনুসন্ধান দরকার নয় কি??????
  • aka | 85.76.118.96 | ১২ জুন ২০১২ ০৭:৪১547147
  • প্রতিবন্ধীরা তো বরাবরই একই স্কুলে পড়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধী না মানসিক প্রতিবন্ধী কাদের কথা হচ্ছে?

    শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের সাথে কোন শারীরিক ভাবে সুস্থ বাচ্ছা একসাথে পড়লে যে সুস্থ বাচ্ছার গ্রোথ স্লো হতে পারে না এরজন্য টাকা পয়সার দরকার নেই। দরকার একটু সুস্থভাবে চিন্তা করার। কোটি কোটি টাকা ভুলভাল জায়গায় বাজে খরচ না করে কিছু প্রচার ইত্যাদির। সদিচ্ছা থাকলে তবে না এসব হবে, অতএব সবার আগে দরকার সদিচ্ছা।
  • cb | 202.193.164.10 | ১২ জুন ২০১২ ০৮:৫৮547148
  • যেটা বলতে চেয়েছিলুম, বিভিন্ন বাচ্চাদের একসাথে পড়াবার জন্য স্কুল টা নিশ্চই ওঠেনি, কারণ রন্জনদা বলেছেন যে ওনারা অভিভাবকদের বোঝাতে সখ্খম হয়েছিলেন। অন্য কোন আর্থসামাজিক কারণ হলেও হতে পারে। আর কিছু না।
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২০:২৬547149
  • আরে সেটাই তো জানতে চাইছি, আর্থসামাজিক বা অন্য কারণগুলো। স্কুল কিন্তু একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ব্যাপার, এক দুই ব্যক্তিতে স্কুল হয় না, বহুলোকের দরকার। প্রাইভেট হোক কি পাব্লিক হোক, স্কুল সামাজিকতা এড়াতে পারে না।
    তাই একটা উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াতে পারা স্কুল, তাও আবার ব্যতিক্রমী রকম করে সাধারণ ও প্রতিবন্ধী স্টুডেন্ট একত্রে পড়াশোনা করানো স্কুল, বন্ধ হয়ে যাওয়া (যদি গিয়ে থাকে) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, সমাজে এর প্রভাব কম না।
  • xi | 161.141.84.239 | ১৩ জুন ২০১২ ২২:০৮547150
  • কী হোলো রে বাবা! রঞ্জনদা কি আসছেন না দু'দিন?
  • SS | 109.120.125.223 | ১৮ জুন ২০১২ ০৩:১৮547151
  • সত্যমেব জয়তে'র আজকের এপিসোড, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর উপর,
  • ranjan roy | 24.99.211.251 | ১৮ জুন ২০১২ ১৭:২৭547153
  • সরি! xi,
    কদিনের জন্যে রায়পুর গেসলাম; পাপী পেট কা সওয়াল হ্যায়।

    হ্যাঁ, সেই স্কুলটা ওঠার কারণ অবশ্যই আর্থ-সামাজিক। শ্রীমতী রায় স্কুল-অন্ত প্রাণ। কিন্তু ক্যাপিটাল বিল্ড ( মানে স্কুলের জন্যে কোর ফান্ড) আপের চেষ্টা করেন নি। কয়েক বছরের মধ্যেই কিন্ডারগার্টেন থেকে প্রাইমারি, তার থেকে সোজা সেকন্ডারি, পরের বছর সায়েন্স, কমার্স নিয়ে হায়র সেকন্ডারি। আমাদের সঙ্গে মতভেদ হল। উনি আমাকে অব্দি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি বানিয়ে চালাতে লাগলেন। কিন্তু ভাড়ার বাড়িতে সমস্যা হতেই লাগল। শেষে স্কুল গেল একটি বাড়িতে যার মালিক কয়লার স্মাগলার এবং ২০০ কিমি দূরের শহরে ( শাহডোল ও বুরারে) পেট্রোল পাম্প, আরও অনেক কিছু। ও পোস্ট ডেটেড চেক বাউন্স করিয়ে সেখানে কেস লাগাল, বাড়ি খালি করতে বলল। এদিকে কিছু রাজনৈতিক গুন্ডা বলল ওদের স্কুল কমিটিতে কো-অপ্ট করতে হবে। শিক্ষা বিভাগ ঘুষ চাইল। উনি অভিমন্যু হয়ে একা সবার সঙ্গে লড়াইয়ে নামলেন। অনেকগুলো ফ্রন্ট খুলে দিলেন। ভোপালে এডুকেশন সেক্রেটারি জি বোস অবশ্য ওনাকে খুব সমর্থন করেছেন, সাহায্য করেছেন।
    উনি পুলিশ গ্রাউন্ডে স্কুলের স্পোর্ট্স্‌, সুইমিং শেখানো, রেলওয়ে স্টেজ নিয়ে কালচারাল প্রোগ্রাম সব স্কুলের পয়সায় করাতে লাগলেন। অন্য অনেক বড় বড় স্কুল এসব করাতো না। ছাত্রদের ট্রেকিং, এবং দার্জিলিং-ফুন্টসিলিং, দাক্ষিণাত্যে কেরল-রামেশ্বরম- সালারজঙ্গ মিউজিয়াম- ইন্স্টিত্যুট অফ সায়েন্স বেড়াতে নিয়ে যাওয়া এসব করাতেন। স্কুলের ডেফিসিট ভরপাই করতে স্পোকেন ইংলিশের কোচিং এইসব করতেন। শেষে বিল্ডিং নিয়ে প্রবলেম বেড়ে গেল। কারণ জেলাসি হল আর অনেকে ভাবল নিশ্চয় অনেক পয়সা হয়েছে। কেউ কেউ জমি দেবে বলে টাকা নিল। এইসবে শেষে শরীর-মন খানিকটা ভেঙে গেল।
    তাই ২০০০ সালে আমার দুই মেয়ে মায়ের স্কুল থেকেই হায়ার সেকন্ডারি পাশ করার পর আমরা না পারতে স্কুল বন্ধ করে দিলাম। ফার্ণিচার ও ল্যাব এবং লাইব্রেরির জিনিসপত্র --- গাঁয়ের গরীব বাচ্চাদের দুটো স্কুলকে ডোনেট করে দিলাম।
    যখন কোথাও ট্রেনে বা পথে কেউ এসে পায়ে হাত দিয়ে বলে-- রায় ম্যাম না! আমায় চিনতে পারছেন না? আপনি আমাদের নিজের মত করে লিখতে উৎসাহ দিতেন। তাই আমার কোম্পানিতে আমি যখন কনটেন্ট বা রিপোর্ট লিখি তখন মুম্বাই অফিস থেকে ভিজিটে আসা এম ডি জিগ্যেস করেন-- কোন স্কুলে পড়েছো? আমি আপনার কথা বলি। তখন রায় ম্যামের মুখে হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে ওঠে।
  • রোকেয়া | 213.110.243.22 | ১৮ জুন ২০১২ ২০:৪৯547154
  • রঞ্জনদা, একটু বড়ো করে লিখুন না!
  • cb | 126.89.121.11 | ১৮ জুন ২০১২ ২২:২১547155
  • আপনারা ধন্য
  • cb | 126.89.121.11 | ১৮ জুন ২০১২ ২২:২১547156
  • আপনারা ধন্য
  • bb | 127.216.212.12 | ১৮ জুন ২০১২ ২২:৫০547157
  • রঞ্জন দা এবং বৌদি দুজনেই একেবারে মাণিকজোড়। বৌদিকে বলুন না একটু লিখতে ওনার অভিজ্ঞতা।
  • PM | 233.223.140.196 | ১৮ জুন ২০১২ ২৩:৪৬547158
  • হ্যাঁ, রন্জনদা। বৌদি লেখেননা কেনো?
  • pi | 82.83.85.246 | ১৯ জুন ২০১২ ২০:১১547159
  • বিবিদা, পিএমদাকে ক।
  • ranjan roy | 24.96.136.34 | ১৯ জুন ২০১২ ২০:১৩547160
  • রোকেয়া/বিবি/পিএম,
    বৌদি বাংলা লিখতে ও পড়তে পারেন না। নিউটাউনে রোজ পথে-ঘাটে-দোকানে, বাড়িতে কাজের লোকের সঙ্গে বাংলা বলতে বলতে হাঁফ ধরে গেছে। তাই প্যাকেটের দুধ ছেড়ে দিয়ে বিহারি গয়লার থেকে দুধ নেয়ার অছিলায় রোজ দু'মিনিট হিন্দিতে কথা বলে নেয়।
    নিজেদের নিয়ে বেশি লিখতে সংকোচ হয়। তবে ওর স্কুলে দুজন মানসিক এবং দুজন শারীরিক প্রতিবন্ধী বাচ্চা ইত্যাদি নিয়ে যা অভিজ্ঞতা , প্লাস-মাইনাস, খুব সংক্ষেপে ওর সঙ্গে কথা বলে কাল লিখে দেব।
  • pi | 82.83.85.246 | ১৯ জুন ২০১২ ২০:১৯547161
  • আপনি আছেন তো, অনুবাদের জন্য ঃ)
  • কান্তি | 212.90.109.118 | ১৯ জুন ২০১২ ২২:৫৭547162
  • রঞ্জন, একটা কোশ্ন মনটাকে অসম্ভব জ্বালাচ্ছে। কোরেই ফেলি।
    আচ্ছা, দিদিমনি একজন আদ্যন্ত বাংগালীর সংগে ঘরে-বাইরে,ঝড়ে
    ঝঞ্ঝায়,সুখে-দুঃখে জীবনের বেশ কিছু বছর পেরিয়ে এলেন। তিনি কেন ভালবেসে বাংলা লিখতে-পড়তে শিখলেন না? এটা অসম্ভব
    যে চাইলে তিনি সেটা পারতেন না।খুব বেয়াড়া কিছু বলে থাকলে
    মাফ কোরবেন। কান্তি
  • Tim | 208.82.20.49 | ১৯ জুন ২০১২ ২৩:০৮547164
  • রঞ্জনদার এই স্কুল নিয়ে প্রোজেক্টটা একটু বড়ো করে লিখলে ভালো হয়। দরকার হলে ধারাবাহিক বুবুভা বা এরম কিছু। তারপর সেটা শেয়ার ইত্যাদি করে দেওয়া যেত।
  • Nina | 22.149.39.84 | ২০ জুন ২০১২ ০১:৫৫547165
  • রঞ্জনভাউ
    হ্যা হ্যা রত্নাভাবির মুখেও শুনতে চাই--
  • PM | 233.223.138.224 | ২০ জুন ২০১২ ১০:০১547166
  • সত্যমেব...র শেষ এপিসোড দেখলাম। সত্যি কি প্রতি ২ জন মহিলার এক্জন স্বামীর হাতে মার খায়? বাঙালী সমাজে বোধ হয় এই স্ট্যট খাটে না। স্ট্যটটা সত্যি অবাক করলো
  • dukhe | 212.54.74.119 | ২০ জুন ২০১২ ১০:১১547167
  • অবাকের কী আছে? দুটি পরিবার নিন । একটিতে স্ত্রী স্বামীর হাতে মার খান। অন্যটিতে স্বামী স্ত্রীর হাতে । স্ট্যাট কিলিয়ার ।
  • শ্রাবণী | 134.124.86.27 | ২০ জুন ২০১২ ১২:৪১547168
  • আমি প্রোগ্রামটা দেখিনি.........আজ প্রায় বারো বছর আছি এখানে, বেশ কিছু কাজের মেয়ে আমার বাড়িতে কাজ করেছে বাঙালী, অবাঙালী মিশিয়ে, দু তিনজন বাদ দিয়ে প্রতিটি মহিলা সারাদিন কাজ করে টাকা রোজগার করে, অবাঙালীদের বরেরা কেউ রিক্শা চালায়, কেউ ছোটখাটো কারখানায় কাজ করে, কেউ আবার ঘরে বসে থাকে....বাঙালীদের সবাই অবশ্য চেনাজানা, আমাদের বা কাছেপিঠে অন্যান্য অফিসে কনট্রাক্টরের লেবার হিসেবে কাজ করে, একটু ভালো রোজগার...... তবু এখানে আজকাল যা রেট তাতে বৌয়েদের বেশী রোজগার.......
    এই অবস্থায়, এদের প্রায় প্রত্যেকেই কমবেশী মারধোর রেগুলার খেয়ে থাকে, কখনো চোখ, হাত ফুলিয়ে চলে আসে, গলায় টিপে ধরার দাগ...রিসেন্টলি, যে মেয়েটি , বাঙালী, আমার রান্নার কাজ করত, তার স্বামী তাকে ছেড়ে আর এক মহিলার কাছে প্রায় যায় যায়....এর সমস্ত টাকা নিয়ে তাকে দিয়ে দিয়েছে, ঐ পয়সার জন্যেই একেবারে যাচ্ছেনা...রোজ প্রচুর মারধোর করে...দুটো বাচ্চা আছে, মেয়েটি কাজ ছেড়ে বসে ছিলো, তাকে মেরেধরে আবার কাজ করতে পাঠিয়েছে(আমার বাড়ি আসেনি)...............আমি সবাইকেই উল্টে বরেদের মারতে পরামর্শ দিই, তারা হাসে! কিছু করতে পারিনা, তবু এরা এসে এসে আমাকে বলে, অনেক বাড়ির মালকিনদেরই বলেনা, তারা জানেনা এসব ব্যাপারে থাকতেও চায়না............. একজনের বর আমাদের অফিসের সুইপার, আমি এইচ আরের এক বাঙালী ভদ্রলোককে বললাম, একটু ভয় দেখিয়ে কড়কে দিতে তা সেই ভদ্রলোক উল্টে আমাকে পরামর্শ দিলেন এসব ওদের ক্লাসের (!) লোকেদের ব্যাপারে না থাকতে, কিছু কথা না বলতে, কবে বৌকে মার্ডার করে দেবে, তুই পুলিশের ঝামেলায় পড়ে যাবি!
  • গান্ধী | 213.110.246.230 | ২৫ জুন ২০১২ ১৪:৫১547169
  • @ SS কোথায়?????
  • SS | 109.120.125.223 | ২৫ জুন ২০১২ ১৮:১২547170
  • :D
    গতকালের এপিসোড পেস্টিসাইডের উপর,
  • ranjan roy | 24.99.100.104 | ২৭ জুন ২০১২ ০০:২৪547171
  • কান্তি,
    আসলে দিদিমনির ভোপালে জন্ম, রবীন্দ্রসংগীতের চেয়ে গজল শুনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মাকে বলেছিলেন--- কোন কোলকাতার বাঙালীর সঙ্গে যেন বিয়ে না হয়। সব অকম্মার ঢেঁকি, আর ন্যাকা-ন্যাকা কোবতে শোনায়!
    মা বল্লেন-- না, না, নিশ্চিন্ত থাক, বাছা! এটি ভিলাইয়ের ছেলে, রায়পুর ইউনিভার্সিটির ছাত্তর। তবে পড়াশুনোয় বোধহয় ইয়ে। সাতাশ বছর বয়সে এম এ করল!
    কিন্তু বিয়ের দু'দিন পরই দিদিমণির চেঁচামেচি--- মা, তোমাদের ঠকানো হয়েছে, এ কোলকাতারই ছেলে। কলেজের পড়া মধ্যপ্রদেশে শেষ করেছে,কিন্তু আমায় রাত্তিরে কোবতে শোনাচ্ছিল। তোমরাও ডোবালে।
    তারপর জীবন কেটেছে ছত্তিশগড়ের আদিবাসী অঞ্চলের গাঁয়ে। বাঙলা পত্রিকাই পৌঁছয় না। বাংলা শুধু বলার মত শিখেছে।
    টিম,
    বচন দেতা হুঁ। স্কুলের গল্প সংক্ষেপে লিখব। একটু টাইম চাই। এখন কোলকাতায় পেটের ভাত জোগাতে এদিক-ওদিক হাত-পা চালাচ্ছি। বোকারো যাচ্ছি ২৯ তারিখ। একটি উঠতি কোম্পানীর মার্কেটিং স্টাফদের সেমিনারে মার্কেটিং ফিলজফি( এলিমেন্টারি), কম্যুনিকেশন স্কিল, মোটিভেশন ইত্যাদি নিয়ে একটু ডেমো দেব। জমে গেলে ওদের ট্রেনিংদেয়ার চান্স পাব। কিছু অক্সিজেন পাওয়া যাবে।
  • pi | 147.187.241.5 | ২৭ জুন ২০১২ ০০:২৬547172
  • রঞ্জনদা, মেইলটা একটু দেখে যাবেন।
  • ্পুণ্যব্রত গুণ | 24.96.99.48 | ৩০ জুন ২০১২ ১৯:২৯547173
  • স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধার হবে কোন পথে?

    ভীমরুলের চাকে ঢিল পড়েছে—অনেকগুলি টিভি চ্যানেলে এক সঙ্গে প্রচারিত আমির খানের অনুষ্ঠান ‘সত্যমেব জয়তে’ ২৭শে মে, ২০১২ আঘাত হেনেছে এক মহাক্ষমতাশালী শক্তির উপর। এবার স্ত্রী-ভ্রূণ হত্যা, পণপ্রথা বা শিশুদের যৌন-শোষণের বিরোধিতা নয়—আমির খান এবার প্রশ্ন তুলেছেন—‘Does Healthcare Need Healing?’--চিকিৎসাব্যবস্থারই কি চিকিৎসা দরকার? আক্রমণের বর্শামুখ এবার চিকিৎসকদের দুর্নীতির দিকে। অনেকে বলছেন আমির কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত ডাক্তারদের আক্রমণ করেছেন এমন নয়, সত্যমেব জয়তে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসককুলকেই অপমান করেছে। ইন্ডিয়ান মেডিকাল এসোসিয়েশন ২রা জুন দাবী করেছে—চিকিৎসকদের দুর্নাম রটানোর জন্য আমির খানকে ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে আইনের আশ্রয় নেবে তারা।
    আবার অনেকের বক্তব্য—আই এম এ কি বলল তাতে কিছু আসে যায় না, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার ডাক্তারদের এক-তৃতীয়াংশেরও কম সংখ্যক ভারতীয় ডাক্তার আই এম এ-র সদস্য, আই এম এ সব ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
    কেন মহাক্ষমতাশালী শক্তি বলছি আমার পেশাকে? সত্যিইতো এমন কোন পেশা আছে যেখানে মানুষের জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারেন এক পেশাদার? রোগীর রোগ-নির্ণয় করতে পারেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগ সারাতে পারেন, না পারলে রোগীর কষ্ট কমাতে পারেন। এমন পেশার মানুষদের সাধারণ মানুষ ভগবানের আসনে বসান তাই যুগ-যুগান্ত ধরে। ভগবানের পদস্খলন কি মেনে নেওয়া যায়?!
    এই পেশার একজন সদস্য হিসেবে আমি জোরের সঙ্গেই বলতে পারি—সত্যমেব জয়তে-তে যেসব দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বানানো নয়। যে সমাজব্যবস্থায় সাংসদ বা বিধায়ক হওয়ার পর অধিকাংশ রাজনেতা কোটিপতি হয়ে যান, উৎকোচ দিয়ে বিচারের রায়কে প্রভাবিত করা যায়, পুলিশ যেখানে পয়সার বশ, যেখানে ঘুষ না দিলে সরকারী দপ্তরের ফাইল নড়ে না, সেখানে ডাক্তাররাই কেবল দুর্নীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলবেন—এমনটা ভাবা অযৌক্তিক।
    ডাক্তারী পাস করার পর মেডিকাল কাউন্সিলে নথিভুক্ত হওয়ার সময় ডাক্তারদের নীতি-নৈতিকতার শপথ নিতে হয়—হিপোক্রেটিসের শপথ—
    ১। আমি আমার জীবনকে মানবসেবায় নিয়োগ করার শপথ নিচ্ছি।
    ২। কোনো হুমকির সম্মুখীন হয়েও আমি আমার চিকিৎসা-বিদ্যার জ্ঞানকে মানবতার আইনের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবো না।
    ৩। গর্ভ-সঞ্চারের সময় থেকেই মানব-জীবনের প্রতি আমি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করব।
    ৪। আমার কর্তব্য ও আমার রোগীর মধ্যে আমি ধর্ম, জাতীয়তা, জাত-পাত, রাজনৈতিক দলীয় মত, সামাজিক অবস্থান, ইত্যাদিকে বাধা হতে দেব না।
    ৫। আমার পেশাকে আমি বিবেক ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করব।
    ৬। আমার রোগীর স্বাস্থ্যই আমার কাছে প্রাথমিকতা পাবে।
    ৭। আমার কাছে যেসব গোপনীয় তথ্য জানানো হবে আমি সেসবের গোপনীয়তা রক্ষা করব।
    ৮। আমি আমার শিক্ষকদের তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা ও কৃতজ্ঞতা দেব।
    ৯। আমার ক্ষমতা অনুসারে সমস্ত সাধ্যমত চিকিৎসা পেশার মর্যাদা ও মহান ঐতিহ্যগুলোকে আমি অনুসরণ করব।
    ১০। আমার সহকর্মীদের প্রতি আমি সমস্ত শ্রদ্ধা ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করব।
    ১১। ২০০২-এর ইন্ডিয়ান মেডিকাল কাউন্সিল (পেশাগত আচরণ, এটিকেট ও নীতি) নিয়ন্ত্রণ বিধিতে বিবৃত চিকিৎসা নীতিমালা আমি মেনে চলব।

    সত্যমেব জয়তে-তে আমির খান কতগুলো ঘটনা দেখিয়েছেন—
    তার মধ্যে কিছু ঘটনা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি—
    •একজন ডায়াবেটিস রোগীকে দেখানো হয়েছে, যাঁর পায়ের এক ঘায়ের জন্য ডাক্তার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন, পায়ের একটা আঙ্গুল কেটে বাদ দেওয়া হয়। পরে আরেকজন ডাক্তার তাঁকে বলেন তাঁকে এন্টিবায়োটিক দিলেই হত, আঙ্গুল কাটার দরকার ছিল না। চিকিৎসা-বিজ্ঞান সমন্ধে যাঁদের ন্যূনতম ধারণা আছে তাঁরা ভাল করেই জানেন যে হাতের আঙ্গুল-পায়ের আঙ্গুল, এমনকি হাত-পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে জীবাণু-সংক্রমণকে প্রতিহত করার জন্যই।
    •মেজর রাই ও তাঁর মেয়ের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে—তাঁদের স্ত্রী/মা কিডনী ও অগ্ন্যাশয় প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে মারা যান। আমির খানের বিরোধীরা মেজর রাইকে নাটক করেছেন বলে ব্যঙ্গ করেছেন। আমি কখনই সে কথা বলব না। কিন্তু সে সাক্ষাৎকার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি—কেন না মৃতদেহ থেকে কিডনী ও অগ্ন্যাশয় নিয়ে শ্রীমতী রাই-এর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, এ সব ক্ষেত্রে সব সময়ই অনুমতি নিয়ে রাখা হয় আগে থেকেই, সুতরাং অনুমতি না নিয়ে শ্রীমতী রাই-এর অপারেশন করা হয়েছিল এমনটা হতে পারে না। শ্রীমতী রাইকে যত বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছিল বলা হয়েছে সে হিসেব মিলছে না চিকিৎসক দলের নেফ্রোলজিস্টের হিসেবের সঙ্গে। তাঁর কথা অনুযায়ী শ্রীমতী রাই-এর DIC (disseminated intravascular coagulation) হয়েছিল। কার এই সমস্যা হবে তা আগে থেকে বোঝা বা বলা যায় না আর এমনটা হলে রক্ত-সঞ্চালন ছাড়া চিকিৎসা নেই তেমন কিছু।
    •অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রামাঞ্চলের কাহিনী দেখানো হয়েছে, যেখানকার অধিকাংশ মহিলাকে নাকি অপ্রয়োজনে জরায়ুকর্তন করা হয়েছে। সমস্ত জরায়ুকর্তন (hysterectomy) –ই প্রয়োজনীয় এমনটা বলব না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুকর্তন প্রথম পছন্দের চিকিৎসা না হলেও তা করতে হয় উন্নততর চিকিৎসা-পদ্ধতির সুযোগ বা ব্যবস্থা না থাকায়। রোগী নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা নিয়ে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেছেন, না হলে ডাক্তার অপারেশনের সুযোগ পাবেন কেমন করে। অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুকর্তন করতে হয় ডিসফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং-এ, যেখানে হরমোনের ভারসাম্যের অভাবে প্রচুর রক্তপাত হয়ে বিপদ দেখা দেয়। বড় শহরে যেখানে ব্যবস্থা আছে এবং রোগীর পয়সা আছে সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে জরায়ুর ভিতরের ঝিল্লি পুড়িয়ে বা জরায়ুর গহ্বরে কপার টি-র ধরনের এক দামী ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস ঢুকিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। কিন্তু যেখানে এ সব সম্ভব নয়, সেখানে জরায়ুকর্তন করা ছাড়া উপায় থাকে না। আমির যে মহিলাদের দেখিয়েছেন, তাঁরা ডাক্তারের কাছে কোন সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের রেকর্ডে কোন রোগের জন্য অপারেশনের কথা বলা আছে সে সব না দেখে ডাক্তারদের আক্রমণ করে বোধ হয় ঠিক করেন নি আমির।

    যে সব ঘটনা সম্বন্ধে আমি একমত—
    •একজন প্যাথোলজিস্ট কমিশন প্রথার কথা বলেছেন। কেবল প্যাথোলজি পরীক্ষাতেই নয়, সমস্ত ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই ব্যাপক ভাবে কমিশন চলে। প্যাথোলজিতে ৫০% অবধি কমিশন অফার করা হয় সে ডাক্তারকে, যিনি পরীক্ষা লিখছেন। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ২৫%, সিটি স্ক্যানে ৩৩%, এক্স-রেতে প্লেট-পিছু প্রায় ২০-২৫ টাকা পাওয়া যেতে পারে। অনেক ডাক্তার কমিশন নেন এটা যেমন সত্যি, তেমনই অনেকে কমিশন নেন না, ল্যাবরেটরীকে বাধ্য করেন রোগীর খরচ থেকে কমিশনের অংশটা বাদ দিতে—সে কথাটাও বলা উচিত ছিল আমির খানের।
    •একজন অতি-বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসকের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়, যিনি রেফারিং ডাক্তারদের কমিশন দিতে নারাজ হয়ে বিদেশে ফিরে যান। রেফারিং ডাক্তাররা কেউ কেউ কমিশন চান এমনটা ঘটনা, কিন্তু এটাও ঘটনা যে বিশাল সংখ্যক ডাক্তার কিন্তু পরস্পরের কাছ থেকে কমিশন না নিয়ে-না দিয়ে এ দেশেই ডাক্তারী করে চলেছেন।
    •আমির খানের টক-শোতে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা-চিকিৎসক যিনি মেডিকাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, মেডিকাল কাউন্সিলের নানা দুর্নীতি নিয়ে, বিশেষত প্রাইভেট মেডিকাল কলেজগুলোকে অনুমোদন-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে বলেছেন। এম সি আই-এর স্থান নেওয়া বর্তমান কমিটির প্রধানও আমিরের প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকদের দুর্নীতি ও দুর্নীতি-দমনে এম সি আই-এর নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেছেন—তা নিয়েও বলার কিছু নেই।
    •MIMS (মান্থলি ইন্ডেক্স অফ মেডিকাল স্পেশালিটি)-র সম্পাদক ডা চন্দ্র মোহন গুলাটি ভারতের ওষুধ-বাজারের দুর্নীতি, নিজ কোম্পানীর ওষুধ লেখাতে ডাক্তারদের যে ঘুষ দেওয়া হয়—সেসবের কথা বলেছেন। ভারতে ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহারের আন্দোলনে এক পুরোধা পুরুষ ডা গুলাটি—তাঁর বক্তব্যে বিরোধিতা করার কিছু নেই।

    আমিরের মতে সমস্যার সমাধান—
    •রাজস্থানের এক চিকিৎসক আই এ এস-এর কথা আমরা আগেই জানতাম। তিনি এক জেলার জেলা-শাসক থাকার সময় সরকারী উদ্যোগে জেনেরিক নামের ওষুধের দোকান খুলেছিলেন। তামিলনাড়ুতেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯ শে জুন এক সংসদীয় কমিটির আহ্বানে গিয়ে আমির খান সারা দেশে জেনেরিক নামের ওষুধের দোকান খোলার প্রস্তাব দিয়েছেন।
    •আমির খানের আরেক সমাধান—ডা দেবী শেঠির নারায়ণ হৃদয়ালয়ের মডেল। নারায়ণ হৃদয়ালয় ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণের কোনো কোনো রাজ্যে চিকিৎসা-বীমা চালু করা হয়েছে। এক শিশু হৃৎরোগী কন্যার কাহিনী শুনিয়ে আমির সেই চিকিৎসা বীমা ব্যবস্থার গুণগান গেয়েছেন। ডা শেঠি নিঃসন্দেহে এক দক্ষ-উদ্যমী হৃৎশল্যচিকিৎসক। এম সি আই-এর স্থানগ্রহণকারী কমিটির অন্যতম সদস্যও তিনি। একই সাথে তিনি এক সফল চিকিৎসা-ব্যবসায়ী, প্যারামেডিকাল শিক্ষা (ভবিষ্যতে হয়ত মেডিকাল শিক্ষা)-ব্যবসায়ী। তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসার মান বেশ ভালো, চিকিৎসার খরচ কম কিছু নয়, অনেক রোগীর কাছ থেকে মুনাফা করার পর মাঝে-সাঝে একটা- দুটো অপারেশন তাঁরা কম খরচে বা বিনা খরচে করেন। তবে ডা শেঠির নাম-মাহাত্ম্য এমনই যে সেই একটা-দুটোই সংবাদ-মাধ্যমে প্রচার পায়। পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনের সরকারের সাথে প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপে শীঘ্রই আমরা দেখব তাঁকে, যেখানে সরকারী জমিতে, সরকারী পরিকাঠামোয় হাসপাতাল বানিয়ে পরিষেবা দেবে, অবশ্যই মুনাফা করবে তাঁর সংস্থা।

    আমিরের সমাধান সমাধান নয়—
    •সরকার ওষুধ-কোম্পানীগুলোকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর, বিদেশে নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ হওয়ার উপযুক্ত ওষুধ উৎপাদনে বাধা দেবে না, জেনেরিক নামের ওষুধ উৎপাদনে বাধ্য করবে না, অত্যাবশ্যক ওষুধ উৎপাদনে বাধ্য করবে না—অথচ আশা করা হবে চিকিৎসক জেনেরিক নাম (আসল কথা হল—আন্তর্জাতিক অব্যবসায়িক নাম বা INN—International Non-proprietary Name)-এ ওষুধ লিখবেন?! সমাধানের রাস্তা দেখানো হয়েছিল কিন্তু আজ থেকে ৩৭ বছর আগে, যখন জয় শুকলাল হাথীর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি ১৯৭৫-এ বাজারের প্রায় ৬০ হাজার ফর্মুলেশনের বদলে ১১৭ টা ওষুধকে দেশের জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, ওষুধ-কোম্পানীগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা কমিয়ে এনে পরে কোম্পানীগুলোকে জাতীয়করণ করার সুপারিশ করেছিল। আজ যদি ডাক্তার কেবল প্রয়োজনীয় ওষুধই লেখেন জেনেরিক নামে, তার অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাবে না। বেশীর ভাগ ওষুধ কোম্পানীর জেনেরিক ডিভিশন আজ যে সব ওষুধ তৈরী করে তাদেরও ব্র্যান্ড নাম আছে, এদের পোষাকী নাম ব্র্যান্ডেড জেনেরিক্স। জেনেরিক নামে ওষুধ লিখলে কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ রোগী পাবেন তা নির্ভর করবে ওষুধের দোকানীর ওপর। যে ব্র্যান্ডে দোকানীর লাভ বেশী, সে ব্র্যান্ডই পাবেন রোগী। এর চেয়ে বরং ডাক্তার কমদামী ব্র্যান্ড লিখলে রোগীর খরচ কমবে। আমির খানের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক জেনেরিক নামের ওষুধের বিরোধিতা করছেন। বর্তমান লেখকের প্রায় তিন দশকের চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য। গুণবত্তায় ও কার্যকারিতায় জেনেরিক নামের বা কমদামী ব্র্যান্ডের সঙ্গে দামী ব্র্যান্ডের কোনো ফারাক নেই। দামী কোম্পানীর দামী ওষুধের মোড়কে ছোট অক্ষরে লেখা (fine prints) দেখুন। দেখবেন সে ওষুধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছে (manufactured at) ছোট কোনো কোম্পানীতে, বাজারজাত করছে (marketed by) নামী-দামী কোম্পানী।
    •চিকিৎসা বীমা সমাধান নয়, চিকিৎসা-বীমার আঁতুড় ঘর আমেরিকায় কিন্তু সব নাগরিকের চিকিৎসার সুযোগ নেই। আসল সমাধান অন্য পথে—যে দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থার ধাঁচে আমাদের দেশের আধুনিক চিকিৎসা-ব্যবস্থার শুরু—সে দেশ গ্রেট ব্রিটেন সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়, অথচ সে দেশে ৪০-এর দশকের শেষ থেকে নাগরিকদের চিকিৎসা-পরিষেবা দেয় জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প (National Health Scheme)। ডাক্তাররা সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিশ করেন না বললেই চলে, তাঁরা রাষ্ট্রের কর্মচারী। রোগী কোন প্রাথমিক চিকিৎসককে দেখাবেন তা নির্ভর করে কোন অঞ্চলে তিনি থাকেন, প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট প্রাথমিক চিকিৎসক আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছু করাতে হলে চিকিৎসক পাঠাবেন NHS-নির্দিষ্ট সংস্থায়, কোন এলাকার প্রাথমিক চিকিৎসক কোন বিশেষজ্ঞ বা অতি-বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন তাও NHS নির্দিষ্ট করা আছে। ডাক্তাররা ওষুধ লিখতে পারবেন কেবল এক নির্দিষ্ট তালিকা থেকে, যার নাম BNF (British National Formulary), বছরে তার চারটে সংস্করণ বেরোয়, তার অন-লাইন সংস্করণ আছে, ছাপা বই তিন মাস ছাড়া ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যায়।

    এমন এক ব্যবস্থাই আসলে সমাধান। যেখানে ডাক্তার ও রোগীর মাঝে লেন-দেনের সম্পর্ক থাকবে না এমন এক ব্যবস্থাই আসলে দুর্নীতি-মুক্ত হতে পারে।

    রাষ্ট্র চিকিৎসা-পরিষেবা থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের মৃগয়া-ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা—সে বিষয়ে নীরব থেকে কেবল চিকিৎসকদের ঘাড়ে সব দোষ চাপানো সমীচীন নয়, তবু আমির খানকে ধন্যবাদ এক জ্বলন্ত সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য, তা তিনি ‘সত্যমেব জয়তে’-র এপিসোড-পিছু যত কোটি টাকাই পেয়ে থাকুন না কেন।

    লেখক জেনেরাল ফিজিশিয়ান ও গণস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী
  • ্পুণ্যব্রত গুণ | 24.96.99.48 | ৩০ জুন ২০১২ ১৯:২৯547175
  • স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধার হবে কোন পথে?

    ভীমরুলের চাকে ঢিল পড়েছে—অনেকগুলি টিভি চ্যানেলে এক সঙ্গে প্রচারিত আমির খানের অনুষ্ঠান ‘সত্যমেব জয়তে’ ২৭শে মে, ২০১২ আঘাত হেনেছে এক মহাক্ষমতাশালী শক্তির উপর। এবার স্ত্রী-ভ্রূণ হত্যা, পণপ্রথা বা শিশুদের যৌন-শোষণের বিরোধিতা নয়—আমির খান এবার প্রশ্ন তুলেছেন—‘Does Healthcare Need Healing?’--চিকিৎসাব্যবস্থারই কি চিকিৎসা দরকার? আক্রমণের বর্শামুখ এবার চিকিৎসকদের দুর্নীতির দিকে। অনেকে বলছেন আমির কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত ডাক্তারদের আক্রমণ করেছেন এমন নয়, সত্যমেব জয়তে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসককুলকেই অপমান করেছে। ইন্ডিয়ান মেডিকাল এসোসিয়েশন ২রা জুন দাবী করেছে—চিকিৎসকদের দুর্নাম রটানোর জন্য আমির খানকে ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে আইনের আশ্রয় নেবে তারা।
    আবার অনেকের বক্তব্য—আই এম এ কি বলল তাতে কিছু আসে যায় না, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার ডাক্তারদের এক-তৃতীয়াংশেরও কম সংখ্যক ভারতীয় ডাক্তার আই এম এ-র সদস্য, আই এম এ সব ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
    কেন মহাক্ষমতাশালী শক্তি বলছি আমার পেশাকে? সত্যিইতো এমন কোন পেশা আছে যেখানে মানুষের জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারেন এক পেশাদার? রোগীর রোগ-নির্ণয় করতে পারেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগ সারাতে পারেন, না পারলে রোগীর কষ্ট কমাতে পারেন। এমন পেশার মানুষদের সাধারণ মানুষ ভগবানের আসনে বসান তাই যুগ-যুগান্ত ধরে। ভগবানের পদস্খলন কি মেনে নেওয়া যায়?!
    এই পেশার একজন সদস্য হিসেবে আমি জোরের সঙ্গেই বলতে পারি—সত্যমেব জয়তে-তে যেসব দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বানানো নয়। যে সমাজব্যবস্থায় সাংসদ বা বিধায়ক হওয়ার পর অধিকাংশ রাজনেতা কোটিপতি হয়ে যান, উৎকোচ দিয়ে বিচারের রায়কে প্রভাবিত করা যায়, পুলিশ যেখানে পয়সার বশ, যেখানে ঘুষ না দিলে সরকারী দপ্তরের ফাইল নড়ে না, সেখানে ডাক্তাররাই কেবল দুর্নীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলবেন—এমনটা ভাবা অযৌক্তিক।
    ডাক্তারী পাস করার পর মেডিকাল কাউন্সিলে নথিভুক্ত হওয়ার সময় ডাক্তারদের নীতি-নৈতিকতার শপথ নিতে হয়—হিপোক্রেটিসের শপথ—
    ১। আমি আমার জীবনকে মানবসেবায় নিয়োগ করার শপথ নিচ্ছি।
    ২। কোনো হুমকির সম্মুখীন হয়েও আমি আমার চিকিৎসা-বিদ্যার জ্ঞানকে মানবতার আইনের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবো না।
    ৩। গর্ভ-সঞ্চারের সময় থেকেই মানব-জীবনের প্রতি আমি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করব।
    ৪। আমার কর্তব্য ও আমার রোগীর মধ্যে আমি ধর্ম, জাতীয়তা, জাত-পাত, রাজনৈতিক দলীয় মত, সামাজিক অবস্থান, ইত্যাদিকে বাধা হতে দেব না।
    ৫। আমার পেশাকে আমি বিবেক ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করব।
    ৬। আমার রোগীর স্বাস্থ্যই আমার কাছে প্রাথমিকতা পাবে।
    ৭। আমার কাছে যেসব গোপনীয় তথ্য জানানো হবে আমি সেসবের গোপনীয়তা রক্ষা করব।
    ৮। আমি আমার শিক্ষকদের তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা ও কৃতজ্ঞতা দেব।
    ৯। আমার ক্ষমতা অনুসারে সমস্ত সাধ্যমত চিকিৎসা পেশার মর্যাদা ও মহান ঐতিহ্যগুলোকে আমি অনুসরণ করব।
    ১০। আমার সহকর্মীদের প্রতি আমি সমস্ত শ্রদ্ধা ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করব।
    ১১। ২০০২-এর ইন্ডিয়ান মেডিকাল কাউন্সিল (পেশাগত আচরণ, এটিকেট ও নীতি) নিয়ন্ত্রণ বিধিতে বিবৃত চিকিৎসা নীতিমালা আমি মেনে চলব।

    সত্যমেব জয়তে-তে আমির খান কতগুলো ঘটনা দেখিয়েছেন—
    তার মধ্যে কিছু ঘটনা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি—
    •একজন ডায়াবেটিস রোগীকে দেখানো হয়েছে, যাঁর পায়ের এক ঘায়ের জন্য ডাক্তার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন, পায়ের একটা আঙ্গুল কেটে বাদ দেওয়া হয়। পরে আরেকজন ডাক্তার তাঁকে বলেন তাঁকে এন্টিবায়োটিক দিলেই হত, আঙ্গুল কাটার দরকার ছিল না। চিকিৎসা-বিজ্ঞান সমন্ধে যাঁদের ন্যূনতম ধারণা আছে তাঁরা ভাল করেই জানেন যে হাতের আঙ্গুল-পায়ের আঙ্গুল, এমনকি হাত-পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে জীবাণু-সংক্রমণকে প্রতিহত করার জন্যই।
    •মেজর রাই ও তাঁর মেয়ের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে—তাঁদের স্ত্রী/মা কিডনী ও অগ্ন্যাশয় প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে মারা যান। আমির খানের বিরোধীরা মেজর রাইকে নাটক করেছেন বলে ব্যঙ্গ করেছেন। আমি কখনই সে কথা বলব না। কিন্তু সে সাক্ষাৎকার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি—কেন না মৃতদেহ থেকে কিডনী ও অগ্ন্যাশয় নিয়ে শ্রীমতী রাই-এর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, এ সব ক্ষেত্রে সব সময়ই অনুমতি নিয়ে রাখা হয় আগে থেকেই, সুতরাং অনুমতি না নিয়ে শ্রীমতী রাই-এর অপারেশন করা হয়েছিল এমনটা হতে পারে না। শ্রীমতী রাইকে যত বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছিল বলা হয়েছে সে হিসেব মিলছে না চিকিৎসক দলের নেফ্রোলজিস্টের হিসেবের সঙ্গে। তাঁর কথা অনুযায়ী শ্রীমতী রাই-এর DIC (disseminated intravascular coagulation) হয়েছিল। কার এই সমস্যা হবে তা আগে থেকে বোঝা বা বলা যায় না আর এমনটা হলে রক্ত-সঞ্চালন ছাড়া চিকিৎসা নেই তেমন কিছু।
    •অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রামাঞ্চলের কাহিনী দেখানো হয়েছে, যেখানকার অধিকাংশ মহিলাকে নাকি অপ্রয়োজনে জরায়ুকর্তন করা হয়েছে। সমস্ত জরায়ুকর্তন (hysterectomy) –ই প্রয়োজনীয় এমনটা বলব না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুকর্তন প্রথম পছন্দের চিকিৎসা না হলেও তা করতে হয় উন্নততর চিকিৎসা-পদ্ধতির সুযোগ বা ব্যবস্থা না থাকায়। রোগী নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা নিয়ে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেছেন, না হলে ডাক্তার অপারেশনের সুযোগ পাবেন কেমন করে। অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুকর্তন করতে হয় ডিসফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং-এ, যেখানে হরমোনের ভারসাম্যের অভাবে প্রচুর রক্তপাত হয়ে বিপদ দেখা দেয়। বড় শহরে যেখানে ব্যবস্থা আছে এবং রোগীর পয়সা আছে সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে জরায়ুর ভিতরের ঝিল্লি পুড়িয়ে বা জরায়ুর গহ্বরে কপার টি-র ধরনের এক দামী ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস ঢুকিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। কিন্তু যেখানে এ সব সম্ভব নয়, সেখানে জরায়ুকর্তন করা ছাড়া উপায় থাকে না। আমির যে মহিলাদের দেখিয়েছেন, তাঁরা ডাক্তারের কাছে কোন সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের রেকর্ডে কোন রোগের জন্য অপারেশনের কথা বলা আছে সে সব না দেখে ডাক্তারদের আক্রমণ করে বোধ হয় ঠিক করেন নি আমির।

    যে সব ঘটনা সম্বন্ধে আমি একমত—
    •একজন প্যাথোলজিস্ট কমিশন প্রথার কথা বলেছেন। কেবল প্যাথোলজি পরীক্ষাতেই নয়, সমস্ত ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই ব্যাপক ভাবে কমিশন চলে। প্যাথোলজিতে ৫০% অবধি কমিশন অফার করা হয় সে ডাক্তারকে, যিনি পরীক্ষা লিখছেন। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ২৫%, সিটি স্ক্যানে ৩৩%, এক্স-রেতে প্লেট-পিছু প্রায় ২০-২৫ টাকা পাওয়া যেতে পারে। অনেক ডাক্তার কমিশন নেন এটা যেমন সত্যি, তেমনই অনেকে কমিশন নেন না, ল্যাবরেটরীকে বাধ্য করেন রোগীর খরচ থেকে কমিশনের অংশটা বাদ দিতে—সে কথাটাও বলা উচিত ছিল আমির খানের।
    •একজন অতি-বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসকের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়, যিনি রেফারিং ডাক্তারদের কমিশন দিতে নারাজ হয়ে বিদেশে ফিরে যান। রেফারিং ডাক্তাররা কেউ কেউ কমিশন চান এমনটা ঘটনা, কিন্তু এটাও ঘটনা যে বিশাল সংখ্যক ডাক্তার কিন্তু পরস্পরের কাছ থেকে কমিশন না নিয়ে-না দিয়ে এ দেশেই ডাক্তারী করে চলেছেন।
    •আমির খানের টক-শোতে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা-চিকিৎসক যিনি মেডিকাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, মেডিকাল কাউন্সিলের নানা দুর্নীতি নিয়ে, বিশেষত প্রাইভেট মেডিকাল কলেজগুলোকে অনুমোদন-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে বলেছেন। এম সি আই-এর স্থান নেওয়া বর্তমান কমিটির প্রধানও আমিরের প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকদের দুর্নীতি ও দুর্নীতি-দমনে এম সি আই-এর নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেছেন—তা নিয়েও বলার কিছু নেই।
    •MIMS (মান্থলি ইন্ডেক্স অফ মেডিকাল স্পেশালিটি)-র সম্পাদক ডা চন্দ্র মোহন গুলাটি ভারতের ওষুধ-বাজারের দুর্নীতি, নিজ কোম্পানীর ওষুধ লেখাতে ডাক্তারদের যে ঘুষ দেওয়া হয়—সেসবের কথা বলেছেন। ভারতে ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহারের আন্দোলনে এক পুরোধা পুরুষ ডা গুলাটি—তাঁর বক্তব্যে বিরোধিতা করার কিছু নেই।

    আমিরের মতে সমস্যার সমাধান—
    •রাজস্থানের এক চিকিৎসক আই এ এস-এর কথা আমরা আগেই জানতাম। তিনি এক জেলার জেলা-শাসক থাকার সময় সরকারী উদ্যোগে জেনেরিক নামের ওষুধের দোকান খুলেছিলেন। তামিলনাড়ুতেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯ শে জুন এক সংসদীয় কমিটির আহ্বানে গিয়ে আমির খান সারা দেশে জেনেরিক নামের ওষুধের দোকান খোলার প্রস্তাব দিয়েছেন।
    •আমির খানের আরেক সমাধান—ডা দেবী শেঠির নারায়ণ হৃদয়ালয়ের মডেল। নারায়ণ হৃদয়ালয় ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণের কোনো কোনো রাজ্যে চিকিৎসা-বীমা চালু করা হয়েছে। এক শিশু হৃৎরোগী কন্যার কাহিনী শুনিয়ে আমির সেই চিকিৎসা বীমা ব্যবস্থার গুণগান গেয়েছেন। ডা শেঠি নিঃসন্দেহে এক দক্ষ-উদ্যমী হৃৎশল্যচিকিৎসক। এম সি আই-এর স্থানগ্রহণকারী কমিটির অন্যতম সদস্যও তিনি। একই সাথে তিনি এক সফল চিকিৎসা-ব্যবসায়ী, প্যারামেডিকাল শিক্ষা (ভবিষ্যতে হয়ত মেডিকাল শিক্ষা)-ব্যবসায়ী। তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসার মান বেশ ভালো, চিকিৎসার খরচ কম কিছু নয়, অনেক রোগীর কাছ থেকে মুনাফা করার পর মাঝে-সাঝে একটা- দুটো অপারেশন তাঁরা কম খরচে বা বিনা খরচে করেন। তবে ডা শেঠির নাম-মাহাত্ম্য এমনই যে সেই একটা-দুটোই সংবাদ-মাধ্যমে প্রচার পায়। পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনের সরকারের সাথে প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপে শীঘ্রই আমরা দেখব তাঁকে, যেখানে সরকারী জমিতে, সরকারী পরিকাঠামোয় হাসপাতাল বানিয়ে পরিষেবা দেবে, অবশ্যই মুনাফা করবে তাঁর সংস্থা।

    আমিরের সমাধান সমাধান নয়—
    •সরকার ওষুধ-কোম্পানীগুলোকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর, বিদেশে নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ হওয়ার উপযুক্ত ওষুধ উৎপাদনে বাধা দেবে না, জেনেরিক নামের ওষুধ উৎপাদনে বাধ্য করবে না, অত্যাবশ্যক ওষুধ উৎপাদনে বাধ্য করবে না—অথচ আশা করা হবে চিকিৎসক জেনেরিক নাম (আসল কথা হল—আন্তর্জাতিক অব্যবসায়িক নাম বা INN—International Non-proprietary Name)-এ ওষুধ লিখবেন?! সমাধানের রাস্তা দেখানো হয়েছিল কিন্তু আজ থেকে ৩৭ বছর আগে, যখন জয় শুকলাল হাথীর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি ১৯৭৫-এ বাজারের প্রায় ৬০ হাজার ফর্মুলেশনের বদলে ১১৭ টা ওষুধকে দেশের জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, ওষুধ-কোম্পানীগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা কমিয়ে এনে পরে কোম্পানীগুলোকে জাতীয়করণ করার সুপারিশ করেছিল। আজ যদি ডাক্তার কেবল প্রয়োজনীয় ওষুধই লেখেন জেনেরিক নামে, তার অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাবে না। বেশীর ভাগ ওষুধ কোম্পানীর জেনেরিক ডিভিশন আজ যে সব ওষুধ তৈরী করে তাদেরও ব্র্যান্ড নাম আছে, এদের পোষাকী নাম ব্র্যান্ডেড জেনেরিক্স। জেনেরিক নামে ওষুধ লিখলে কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ রোগী পাবেন তা নির্ভর করবে ওষুধের দোকানীর ওপর। যে ব্র্যান্ডে দোকানীর লাভ বেশী, সে ব্র্যান্ডই পাবেন রোগী। এর চেয়ে বরং ডাক্তার কমদামী ব্র্যান্ড লিখলে রোগীর খরচ কমবে। আমির খানের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক জেনেরিক নামের ওষুধের বিরোধিতা করছেন। বর্তমান লেখকের প্রায় তিন দশকের চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য। গুণবত্তায় ও কার্যকারিতায় জেনেরিক নামের বা কমদামী ব্র্যান্ডের সঙ্গে দামী ব্র্যান্ডের কোনো ফারাক নেই। দামী কোম্পানীর দামী ওষুধের মোড়কে ছোট অক্ষরে লেখা (fine prints) দেখুন। দেখবেন সে ওষুধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছে (manufactured at) ছোট কোনো কোম্পানীতে, বাজারজাত করছে (marketed by) নামী-দামী কোম্পানী।
    •চিকিৎসা বীমা সমাধান নয়, চিকিৎসা-বীমার আঁতুড় ঘর আমেরিকায় কিন্তু সব নাগরিকের চিকিৎসার সুযোগ নেই। আসল সমাধান অন্য পথে—যে দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থার ধাঁচে আমাদের দেশের আধুনিক চিকিৎসা-ব্যবস্থার শুরু—সে দেশ গ্রেট ব্রিটেন সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়, অথচ সে দেশে ৪০-এর দশকের শেষ থেকে নাগরিকদের চিকিৎসা-পরিষেবা দেয় জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প (National Health Scheme)। ডাক্তাররা সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিশ করেন না বললেই চলে, তাঁরা রাষ্ট্রের কর্মচারী। রোগী কোন প্রাথমিক চিকিৎসককে দেখাবেন তা নির্ভর করে কোন অঞ্চলে তিনি থাকেন, প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট প্রাথমিক চিকিৎসক আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছু করাতে হলে চিকিৎসক পাঠাবেন NHS-নির্দিষ্ট সংস্থায়, কোন এলাকার প্রাথমিক চিকিৎসক কোন বিশেষজ্ঞ বা অতি-বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন তাও NHS নির্দিষ্ট করা আছে। ডাক্তাররা ওষুধ লিখতে পারবেন কেবল এক নির্দিষ্ট তালিকা থেকে, যার নাম BNF (British National Formulary), বছরে তার চারটে সংস্করণ বেরোয়, তার অন-লাইন সংস্করণ আছে, ছাপা বই তিন মাস ছাড়া ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যায়।

    এমন এক ব্যবস্থাই আসলে সমাধান। যেখানে ডাক্তার ও রোগীর মাঝে লেন-দেনের সম্পর্ক থাকবে না এমন এক ব্যবস্থাই আসলে দুর্নীতি-মুক্ত হতে পারে।

    রাষ্ট্র চিকিৎসা-পরিষেবা থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের মৃগয়া-ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা—সে বিষয়ে নীরব থেকে কেবল চিকিৎসকদের ঘাড়ে সব দোষ চাপানো সমীচীন নয়, তবু আমির খানকে ধন্যবাদ এক জ্বলন্ত সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য, তা তিনি ‘সত্যমেব জয়তে’-র এপিসোড-পিছু যত কোটি টাকাই পেয়ে থাকুন না কেন।

    লেখক জেনেরাল ফিজিশিয়ান ও গণস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন