এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাড়ি বদলে যায়।

    I
    অন্যান্য | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ | ৩৩৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 24.99.237.8 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:৫১584999
  • বাড়ি। বদলে যায়।

    প্রথমে ছিল একতলা একখানা মাত্র ঘর। দূরে একখানা বাথরুম। আসলে কলতলা। একটা তেকোনা চৌবাচ্চা। তার মধ্যে মাকড়সার ঝুলে ভর্তি। আরো কিসব অন্য পোকামাকড়ের ডিম। গা ঘিন ঘিন করে। লাগোয়া কুয়ো। পাম্প করে জল তুলতে হয়। ওয়াশার শুকিয়ে গেলে ওপর থেকে জল ঢালতে হত। তারপর প্রাণপণে পাম্প করতে হত। প্রথম প্রথম কলের আওয়াজ শোনাত যেন ভাঙা গলায় ব্যাঙ ডাকছে। আওয়াজ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকলে বোঝা যেত জল আসছে।
    অন্যদিকে পায়খানা। এটা নতুন তৈরী। বাবার জমানায়। দাদুর আমলের খাটা পায়খানা বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অশত্থের চারা। নারকেল গাছের শিকড় ঢুকছে। আমাদের বাড়ির চারপাশ ঘেরা নারকেল-সুপুরির গাছ। আমগাছ। সামনে ও পিছনে দুটি হিমসাগর। সামনে আর একটি কলম করা আমগাছ, তাতে দুরকমের আম হয়। একটি ভারি সুন্দর। রাঙা টুকটুকে, তাতে কমলা-হলুদের হাল্কা শেড। মিষ্টি অচেনা গন্ধ। নাম জানিনা। বাড়ির পুবদিকে জঙ্গুলে আমগাছ। ঝাঁপালো পাতা। গাছ ভর আম হয়। ছোট ছোট আম । পাকলেও সবুজ। ওরে টক ! কাকদেশান্তরী নাম দেওয়া যেতে পারে। কেটে খাওয়া যায় না। বোঁটার উল্টোদিকটা খুবলে চুষে খেতে হয়। সে গাছের পাশেই জামরুল। ছোট মিষ্টি জামরুল। মুখের কাছটায় লাল লাল পাপড়ির মত জিনিষ, জামরুলের থাকে না? ফুল হলে জামরুল গাছটাকে স্বর্গের জিনিষ মনে হয়। জামরুলের ফুল কী অপূর্ব; সাদা সাদা ঝিরি ঝিরি, যেন মোম দিয়ে বানানো। ফুলের মাসে গাছের তলা ঝরা কেশরে সাদা হয়ে থাকে।
  • I | 24.99.237.8 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:৪৬585079
  • আর করমচা গাছ। একটা, দুটো, তিনটে। লালচে-সবুজ করমচা। জোদা টক। তুলতে গেলে প্যাঁক করে কাঁটা ফুটে যাওয়ার ভয় আছে। প্রায় রাতে স্বপ্ন দেখি করমচা গাছে সাপ জড়িয়ে আছে।বাড়ির পেছনের জঙ্গুলে বাগানে সুপুরি গাছ জড়িয়ে মৌশিম লতা উঠেছে। কুয়োর পাড়ে গিমা শাক। সামনে-পেছনে খারকোল পাতা। ঘাস-জঙ্গলের মাঝখানে কোথায় যে শাকালুর লতা লুকিয়ে আছে, আমি বুঝি না। ডলিদি চেনে। মজলে লতা শুদ্ধ টেনে তুলতে হয়। মিষ্টি রস। মেটে আলুর গাছ থেকে ছাই ছাই ফল ঝুলছে। ছাড়ালে ঘন বেগুনী বর্ণের রস। আসল আলুটি প্রকাণ্ড। বেগুনীবর্ণ একখানা আলসে পাথরের মত হাত -পা ছড়িয়ে মাটির নিচের অন্ধকারে আয়েস করে ঘুম মারছে। একজনে টেনে তোলা যায় না।
    কত বলব। শোলা কচু গাছ। গাঠি কচু গাছ। কলা বাগান। মানে, নামেই বাগান। অল্প ক'টা কলা গাছের ঝাড়। পাকলে খাওয়া যায় না। কাঁচকলার গাছ ছিল নাকি? কিন্তু সময়ে মোচাটা, থোরটা। কাঁঠাল গাছ ভরে কাঁঠাল। এঁচোড়ই ভালো লাগে, পাকা কাঁঠাল নয়। কাঁঠালের বিচি ভাজা , মনসা পূজোর সময়। কচু ফুলের গন্ধ। সামনের বুড়ো কুচি টগরের গাছটা আমার বড় প্রিয়। গাছে উঠে ফুল পাড়ি অনেকক্ষণ ধরে। আমাদের একটা পেতলের ফুলের সাজি ছিল। শীতকালে গাঁদা ফুল। আমগাছের তলায় কখন যেন ভুঁইচাপা ফোটে। কেমন তার সময়ের জ্ঞান কে জানে। সেও মোমের মত ফুল। সাদা পাপড়ি ক'টি। মাঝখানে হলদে ছোপ। আহ, কী গন্ধ। পাশের সিংহবাড়িতে কাঁঠালিচাঁপা গাছ।হলদে সবুজ আশ্চর্য রং । ও গন্ধ। মিত্রবাড়ি কাঠগোলাপ, মিত্রবাড়ি লিচু গাছ। টক লিচু, ছোট ছোট। কুড়াতে গেলে বুড়ো হীরালাল মিত্র তেড়ে আসেন। সম্পর্কে আমার দাদু হন। কালবৈশাখী হয়ে গেলে পরদিন ভোর ভোর গাছতলায় আম খোঁজা। ঘন ঘাস-আমপাতার ফাঁকে-ফোঁকড়ে কখন যেন সবুজ কুশি কুশি আম উঁকি মারে। অদ্ভুত আনন্দ। আনন্দের চেয়েও অবাক ভাব বেশী। শৈশবের ঐ বোধগুলি, স্বপ্নের মত তীব্র। একটা বই পড়েছিলাম, ছবিওয়ালা-কচুপাতার মত আকৃতির পাতার তলায় ব্যাঙ বসে আছে। আজো ঐ বইটার কাছে যেতে চাই। পাতাটিকে ছুঁতে চাই। যখন গলা শুকিয়ে আসে।
  • sosen | 24.139.199.1 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:৫৮585090
  • পড়ছি।
  • I | 24.99.237.8 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:৫২585101
  • কলা বাগানে এককালে নাকি সজারু আসত। সজারুর মাংস বলে পরম উপাদেয়। একটা কলাগাছ কেটে সজারুর পিঠের ওপর ফেলে দিলেই সজারু আর নড়তে-চড়তে পারবে না। শেয়াল দেখেছি ছোটবেলায়। ডাক শুনতাম নিয়ম করে প্রায় রাত্তিরে। সেই সব শেয়ালেরা-বললেই কাব্যি চলে আসে-কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে।ভাম তো এখনো আসে। বেজিরাও , কাচ্চাবাচ্চা সমেত। যারা আসে না, তারা হল কাছিম। আগে কত কাছিম খেয়েছি। এককালে নিয়ম করে ভোরবেলায় ছোট আমি যুবক মানিকদা'র সাথে হাত ধরে স্বাস্থ্যরক্ষায় হাঁটতে বেরোতাম। একদিন বাড়ির কাছে ফিরে এসে মানিকদা চীৎকার করে উঠল-কাছি-ম ! এত্তবড় একটা কাছিম, ড্রেনের মধ্য দিয়ে গুটগুটিয়ে হাঁটছে। তাকে তুলে আনা হল। কে তুলবে, মা ছাড়া? ধুয়ে টুয়ে চালের ড্রামে ফেলে রাখা হল। ড্রামের ভেতরে তার খচমচ আওয়াজ। কাটতেও সেই মা। অথচ মা মাংস মুখেও তোলে না। ছোটবেলায় মুরগী কাটা দেখে নাকি অভক্তি জন্মে গেছিল।
    কিন্তু শিশুরা কত নিষ্ঠুরও হয়। নিষ্ঠুরই হয়।সাধারণতঃ।কাছিম কাটা দেখে, মিত্রবাড়ি মনসা পুজোর পাঁঠাবলি দেখে কিংবা ছোটপিসির বিয়েতে যখন গাদাগাদা মুরগী কাটা হচ্ছে, আমার কিচ্ছু হচ্ছে না। আমি নির্বিকার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। রাক্ষসের গল্প হচ্ছে। ঝরুদাদু মুরগী ছাড়াতে ছাড়াতে বলছে, মানুষই তো রাক্ষস; সব খায়। কানে রক্তের ছিটে লেগে আছে। জামায় মুরগীর পালক।
    নিষ্ঠুরতা মানে সাপের কথা। কতরকম যে সাপ। অল্পই বিষধর। মূলতঃ হেলে, লাউডগা, জলঢোঁড়া। সাপ দেখলেই মারতে যে কী উল্লাস, মানুষের ! একরকম সাপ নাকি ছিল, উড়ে উড়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে চলে যেতে পারত। বাবা, শুনে যে কী ভয় লাগত ! যদি গায়ে এসে পড়ে! চাঁদকাকু ছিল সাপ মারবার ওস্তাদ। মেরে আবার তাদের পুড়িয়ে ফেলতে হত। নইলে মরা সাপ বেঁচে উঠে প্রতিশোধ নিতে ছোবল দেবে। কাকে? যে মেরেছে তাকে। একবার ইঁটের পাঁজা সরিয়ে রাশি রাশি সাপের বাচ্চা বেরোল। সাদাটে , গোলাপী গায়ের রং। থেঁতলে মারা হল সবকটাকে। আজ বুঝি কী সন্ত্রস্ত ছিল ওদের জীবন। সাপেরা এখন আর নেই। ব্যাঙ, খুব অল্পই আছে। ছোটবেলায় আমার প্রিয় খেলা ছিল ছোট ছোট ব্যাঙের বাচ্চা ধরে তাদের দু ঠ্যাং টেনে ছিঁড়ে ফেলা। কিম্বা জ্যান্ত ব্যাং বাচ্চা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। একটা -দুটো বৃষ্টি হয়ে গেলেই ছোট ছোট ব্যাঙের বাচ্চাদের উঠোনময় লাফিয়ে বেড়াতে দেখা যেত। ছোট্ট ছোট্ট লাফ।কলতলায় ঘন শ্যাওলা জমত। যে কোনো সময় পিছলে পড়ে যাবার ভয়।
    আর সন্ত্রাস মানে চোর। ডাকাতের কথা অল্পই শুনেছি। কিন্তু চোর, নিয়মিত। একদিন কোণার ঘরে মানিকদা'র জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালো। মানিকদা জানলা খুলে ঘুমোতো। ভয়ে মানিকদার গলা থেকে স্বর বেরোচ্ছে না। ভাঙা গলায় কোনোমতে চো-চো- বলছে। চোরেরা কোথায় থাকে কে জানে। খুব নিশ্চয় ভয়ঙ্কর দেখতে। তেলমাখা গা। রক্তবর্ণ চোখ। কোমরে ছুরি গোঁজা। কিন্তু যখন একবার দুজন চোর ধরা পড়ল-বাপ-ব্যাটা, তাদের দেখে তো অন্য যে কোনো মানুষের মতই লাগলো। একটি অল্প বয়সী ছোকড়া, আর একটা বুড়ো মত লোক। ভাঙা গাল। দুজনে বাবা আর ছেলে, স্বীকার করেনি। কিন্তু পাড়ার লোকে সবাই তাই বলছিল। ক্লাবঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল ওদের। চুল ছিঁড়ে নেওয়া, ঠোঁটের কষ বেয়ে রক্ত। আমি দেখতে পারি নি। কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে এসেছি। নিষ্ঠুরতারও থ্রেশহোল্ড থাকে। তাছাড়া তখন আমার বয়েস বাড়ছে। তারপর তো পাড়াময় বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে মারা হল তাদের। মারতে মারতে মেরেই ফেলল। মধ্যবিত্ত আস্তিনের তলায় কত যে রক্ত লেগে থাকে !
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:৫৮585112
  • হুম।
  • I | 24.99.237.8 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১৪:৩৯585123
  • এই মৃত্যু, এই দাহজন্ম, নরম আঙুল দিয়ে ফড়িং ও প্রজাপতির ডানা ছিঁড়ে নেওয়া, লালাদাগ টেনে টেনে চলা শামুক দেখতে পেলে খড়মড়িয়ে তাদের পায়ের তলায় পিষে ফেলা, এক হিজল গাছ ভর্তি শুঁয়োপোকাদের আগুন দিয়ে ঝলসে মেরে ফেলা-এইসব দিয়ে আমার বাড়ি ভরে আছে। আমার ছেলেবেলা। আমার বেঁচে থাকা।

    এই মুহূর্তে উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা, এই মুহূর্তে বাথরুমের কার্ণিসে পায়রার বাচ্চার সবুজ দানা খাওয়া, উড়তে শেখার ঝটপট, এই মুহূর্তে ভামের গোপন কালো গতি, আমার জানালার বাইরে হরিয়ালের হাড়-মাস চিবিয়ে খাওয়ার কড়মড়-আমিই পাখিটিকে বের করে দিয়েছি রাতে ঘুম হবে না বলে, সে জানলার গ্রীল ভেদ করে আমার ঘরে ঢুকে এসেছিল আশ্রয়ের জন্যে। এই মুহূর্তে গোবর-শালিখের ঠোঁটে ফড়িংয়ের ঝটপট, শিশুর হাতে শুঁয়োপোকার নরম সবুজ জেলি, অকারণ। গোবিন্দমাণিক্য আর রঘুপতি দিগন্তের পারে কুস্তি করছেন। বহুরূপীর দল গাইতে গাইতে চলে যাচ্ছে। ট্রেন , সেও চলে যায়।

    "আমি যেন বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে গেছি, আর তাদের বসার ঘরের ল্যাম্পশেড দেখে বলছি- বাঃ, দিব্যি তো ল্যাম্পশেডটা! আর তারা যেন বলছে, হ্যাঁ, সুন্দর না? পোলিশ-ইহুদী চামড়ার। এটাই দেখলাম সব চেয়ে ভালো, বুঝলে? অল্পবয়সী কুমারী পোলিশ-ইহুদী মেয়ের চামড়া। আর তারপরে আমি বাথরুমে গেলাম, সাবানের মোড়কে লেখা আছে-ট্রেবলিংকা, ১০০% হিউম্যান স্টিয়ারেট। আমি স্বপ্ন তো দেখছি না? এ কেমনধারা বাড়ি?

    না ঃ, স্বপ্ন দেখছি না। আমি তোমার চোখের দিকে তাকাই, নর্মার চোখে, বাচ্চাদের চোখে- সেখানে কেবলি দয়া। মানবিক দয়া। শান্ত হও। বলি তো, নিজেকে। জীবন তো এইরকম, হ্যাঁ , এরকমই। তিলকে তাল কোরো না। সবাই তো বেঁচে আছে, মেনে নিয়েছে, তুমি পারো না?কেন পারো না? কেন?"
    (এলিজাবেথ কস্টেলো- জে এম কোয়েটজি)
  • de | 190.149.51.66 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:২৮585134
  • বাঃ!
  • sosen | 111.62.31.235 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ২১:০৬585145
  • এগোক। আছি , আছি, বেশি কথা বলে এখন তালভঙ্গ করতে চাইনা।
  • I | 24.99.15.117 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:৩২585156
  • শীতের দুপুরে আম-নারকেলে ভরা বাগানে (নামেই বাগান, আসলে তো জঙ্গল) মাদুর পেতে বসে বাংলা পড়ছি। ঝরা পাতা খচমচ করছে, কাদাখোঁচা পাতা উল্টে উল্টে পোকা খুঁজে বেড়াচ্ছে। আম অথবা সুপুরি গাছে কাঠঠোকরা খটাস খটাস করে গর্ত খুঁড়ছে। অনেক উঁচু সুপুরি গাছের মাথায় টিয়ার বাসা। কে একবার সুপুরি গাছ বেয়ে উঠে দেখে এসেছিল, টিয়ার হালকা সবুজ রংয়ের ডিম। মেয়ে কোকিলের গায়ের রং ছাই ছাই , তার ওপরে ছিট ছিট কালো দাগ, কোন বাড়িতে কুল শুকোতে দিয়েছে, সেখান থেকে মুখে করে টোপা কুল তুলে নিয়ে এসেছে। পাপিয়াকে চোখে দেখা যায় না, তার আওয়াজে ভরপুর গোটা পাড়া। বেনে-বৌকে মা বলে ইষ্টি কুটুম,নাকি ঐ বলেই ডাকে। আমাদের পাখির বাড়ি, কত হরিয়াল, টুনটুনি,দুর্গা টুনটুনি, ছাতারে, বসন্ত বৌরি,দোয়েল, ফিঙে,নানা জাতের কাঠ ঠোকরা ও মাছরাঙা, বাঁশপাতিতে ভরা আমাদের পাখির সংসার। ভেজা বর্ষার দুপুর কুবো পাখির গম্ভীর-বিষণ্ণ কুব কুব ডাকে ভরাট হয়ে থাকে।হাঁড়িচাচা দূরের রাধাচূড়া কি কদম গাছে বসে লেজ দোলায়। আমগাছে এক রকমের পরগাছা হয়েছে, তাতে গোল গোল ফল হয়। সেই ফল খেতে আসে ছোট চড়াইয়ের মত একধরণের পাখি। তলপেটটা ছাই ছাই, পিঠের দিক ঘন কালো, তার নীচে ফ্লুরোসেন্ট নীলের হালকা আভা। পিঠের মাঝখান দিয়ে কেশরের মত রাগী লাল স্ট্রাইপ চলে গেছে। এই কিছুদিন আগে তার নাম জানতে পারলাম। ফুলঝুরি।

    এই ভরন্ত পাখির সংসারে বসে আমি বুড়ো আংলা পড়ি। ঘুঘু তার বৌকে সোহাগ করে ডাকছে-বুবু , ওঠো দেখি মম্‌ ! শরীরে কেশর জাগে, তার যাতায়ত টের পাই। সবুজ অম্লভাব জাগে, কিছুটা যেন কষ কষ। যৌনতা। পড়ার বইয়ের নীচে লুকোনো ফ্রয়েডের ভালবাসা।
  • rivu | 85.102.68.249 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ০৩:২৯585011
  • আহা !
  • achintyarup | 69.93.246.30 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ০৩:৩২585022
  • আমার ছোটোবেলাটা কি করে জানলে ডাক্তার?
  • de | 69.185.236.51 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:১৮585033
  • পাখির ছবি দেখিনি আগে - -এই সব ছবি বড়াইয়ের তোলা???? কোথায়? সোদপুরে?

    অসাধারণ!! হারিয়ে যাওয়া পাখিগুলো সব -- আমি মেয়েকে এই সব পাখি দেখাতে চাই -- কিন্তু কোত্থাও পাই না!
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৪:৫২585044
  • খুব সুন্দর লাগলো লেখাটা
  • I | 24.96.67.136 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৬:১৮585055
  • জবরদখল কলোনির পাশে থাকি। লোকে বলে জায়গাটা ভালো না। আজ বলে; আগেও বলত নিশ্চয়, আমি শুনতে পেতাম না। কিম্বা হয়তো এমন হয়ে থাকতে পারে, কিছু লোক এখন ভালো হয়ে গেছে, তারা সব ভালো ভালো জায়গায় উঠে চলে গেছে, কিম্বা অনেকে আছে, চলে যায় নি, তবে অনেকে মিলে তাদের পুরনো খারাপ থাকার জায়গাটাকে একটু একটু করে ভালো করে নিয়েছে। আমার সেই শৈশবে আমরা সবাই মিলে একটা বড়সড়ো খারাপ জায়গায় থাকতাম। ভারতবর্ষে মনমোহিনী জমানার পরেপরেই বেশ হড়বড়িয়ে কিম্বা তারো আগে খুব অল্প অল্প করে এই খারাপ থাকার জলজঙ্গলের মধ্যে ভাসমান সব দ্বীপ তৈরী হচ্ছিল ভালো থাকার।আমার পাশের কলোনিতে বাংলাদেশের কাদামাখা মানুষদের বাস। না, এদের কারো জমিদারী ছিল না সেদেশে। হাতিশালে হাতি, আদিগন্ত ধানমাঠ, পদ্মবিল ছিল না। নিকিরি-কৈবর্ত-মালো-নমঃ শুদ্র ছিল বোধ হয় এরা। যোগেন মণ্ডল কি এদেরি নেতা ছিলেন একদা? এদের অনেকে দণ্ডকারণ্য অথবা রাণাঘাট কুপার্স ক্যাম্প ঘুরে এসেছে সে আমি শৈশবেই শুনতে পাই আবছা। মরিচঝাঁপিতেও কি যায় নি? সেখান থেকে তাড়া খেয়ে আবার দণ্ডকারণ্য-তারপর কি তারা আবার একজন -দুজন করে বাংলাদেশের মাটির লোভে ফিরে এল , আর আস্তে আস্তে পত্তন করল আর এক জবরদখল কলোনি?

    আমার পাশের কলোনি থেকে আমাদের কাজের মাসিরা আসে। তাদের ছেলেমেয়েরা কেউ পড়াশোনা করে না, এর -তার বাড়িতে ফুলচুরি-ফলচুরি করে, বিড়ি খায় ছোটবেলা থেকে। গায়ে কিছু পরে না। খড়ি ওঠা চামড়া ও তামাটে-স্বর্ণাভ চুল , না খেতে পেয়ে। আরেকটু বড় হলে এরা চুরি-ছিনতাই করবে, সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করবে। রিক্সা চালাবে, সন্ধ্যেয় নেশা-ভাঙ করবে, কাছের স্টেট জেনারেল হসপিটালে রোগী খারাপ হলে দল বেঁধে ভাঙচুর করবে।
    আমাদের পাড়াতেও সবাই ভালো করে খেতে পায় না। বাড়িতে অবিবাহিত মেয়ের থাক জমে ওঠে, কলতলায় বাসন মাজার ঝোঁকে কি টাইমের জল নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের অশ্রাব্য গালিগালাজে নরকের কাদা ঘুলিয়ে ওঠে। তবে আমাদের পদবী ঘোষ-বোস-গুহ-মিত্র-চক্রবর্তী-বন্দ্যোপাধ্যায়। কারো কারো বাড়িতে গরু থাকে, সন্ধ্যায় সাঁজাল দিতে হয়।একটি দুর্গাপূজা হয়, একখানা ক্লাব আছে। ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো-রয়ানি গান-শনি-সত্যনারায়ণ। কখনো তেন্নাথের মেলা। সত্যনারায়ণ একজন অসাম্প্রদায়িক দেবতা, তাঁর অপর নাম সত্যপীড়। যেমন বনবিবি-দক্ষ্মিণ রায়।
    আর মাঝে মাঝেই শীর্ষেন্দুর ভুতেদের মত আমরা এপাড়া-ও কলোনি দুলতে দুলতে এ ওর গায়ে মিশে যাই, আমাদের সহজে আলাদা করা যায় না। ওদের ছেলেদের সঙ্গে আমরা খেলতে যাই তো, অমুকের মাকে আমি পিসি বলি, আমাদের কাকুরা কেউ কেউ ওদের ছেলে-বুড়োদের সঙ্গে একত্র বসে নেশা করে।
    তবে কিনা, আসলে মিশি না,আমরা এমনিতে সেয়ানা । খেলার মাঠ থেকে কান ধরে তুলে আনা হয়-অমুকের সঙ্গে তোমাকে খেলতে বারণ করেছি না?
  • nina | 79.141.168.137 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৬:৩২585066
  • আমার মন এখন ব্লটিং পেপার---
  • kumu | 132.160.159.184 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৫৭585076
  • লেখো হে ডাক্তার, লেখো।আর সিনিমা দেখে না।
  • | 75.255.37.135 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:২০585077
  • মিলিয়ে নিচ্ছি
  • I | 24.96.119.120 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:৩৭585078
  • সত্তর ফুরিয়ে আসছে।শৈশবের প্রথম স্মৃতি বলতে মা'র হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছি লাল রংয়ের গ্যালিস দেওয়া প্যান্ট পরে। হেঁটে যাচ্ছি, মাঠ ভেঙে কোণাকুণি। আকন্দ গাছের পাশ দিয়ে । আন্দাজ '৭৬ হবে তাহলে। তখনো তাহলে বামফ্রন্ট সরকারের পত্তন হয় নি। কিন্তু আর একটু পরে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার নিয়ে উদ্দীপনার কথা কিছু মনে নেই। মরিচঝাঁপির কথা মনে নেই। মনে থাকার কথা নেই, আমাদের বাড়ি তখন কাগজ আসত না। এবং গোঁড়া সিপি এম আমাদের বাড়িতে মরিচঝাঁপি নিয়ে কোনো হা হুতাশ স্বভাবতঃই থাকবার কথা ছিল না। মনে আছে বাবা- মা'র মুখে অজস্রবার শোনা বাবা'র বাড়ি ছেড়ে পালানোর কথা ( আন্ডারগ্রাউন্ড শব্দটা ব্যবহার করেছিল কি?), আমাদের পূব দিকের নারকেল গাছের কোণ থেকে পাশের বাড়ির অমুক জ্যেঠুর দিকে স্টেনগান তাক ধরে ধরা, আমার পিসি কেমন করে দৌড়ে গিয়ে সেই জ্যেঠুকে বাঁচায়, ভোটের সময় প্রিসাইডিং অফিসার বাবাকে টিফিন পৌঁছে দিতে গিয়ে মায়ের রিভলভারের মুখোমুখি হওয়ার কথা। বারবার শুনে শুনে যেন মনে হয় সেসব আমি নিজের চোখে দেখেছি, অথচ আমার তখন স্মৃতিধারণক্ষমতাই জন্মায় নি।মনে আছে উত্তর কল্যাণপুরের বড় মাঠে ( সেসব মাঠ এখন হাপিশ, মনেও পড়ে না কেমন ছিল সেকালের টোপোগ্রাফি) মিটিং হত কম্যুনিস্ট পার্টির, মিটিং শেষে রুটি-আলুর দম, বাড়ি-বাড়ি থেকে রুটিসংগ্রহ মনে আছে।ভরা মিটিংয়ে বসে থাকি ,ভাষণ একদম কিচ্ছু বুঝি না, কিন্তু ভাষণশেষে গান হবে গণসঙ্গীত, নাচ হবে শম্ভু ভট্টাচার্য'র, নাটক হবে, গণনাট্য, লাল-নীল-সবুজ কাগজ ফেলে আলো হবে নাটকের। আমার তাইতেই উৎসাহ। হয়তো মঞ্চের ওপর বোমা ফাটার মত কিছু একটা হবে, সত্তরের কংগ্রেসী অত্যাচার বোঝাতে ,সঠিক মনে নেই। তবে ভাষণ শুরুর আগে প্রত্যেকবার যে ঘোষক বলতেন-এবার ভাষণ দেবেন কংগ্রেস অমুক বা কংগ্রেস তমুক, তাতে ভারি কনফিউজড লাগত। এদের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই না? তাহলে কংগ্রেসের লোক কেন এসে বক্তৃতা দেবে? পরে বোঝা গেল, ওটা হবে কমরেড।
    বাবা-মা বাড়িতে ফিরে এসে সিরিয়াস মুখ করে আলোচনা করবে- মাসলটা দেখলে? কেমন ঢেউয়ের মত উঠছিল। অর্থাৎ কিনা নাচের দলের। গোর্কি'র মা খুব কঠিন নাটক, ওরা যে করবার চেষ্টা করেছে, এই অনেক। (তার মানে বোধ হয় নাটকটা ধেড়িয়েছিল, এখন মনে হয়)উৎপল দত্তের নাম খুব শুনতে পাই, নিবারণ পণ্ডিতও, কিন্তু না, হেমাঙ্গ বিশ্বাস নয়, ঋত্বিক তো নয়ই। কম্যুনিস্ট পার্টি মানেই সংস্কৃতির পরাকাষ্ঠা,কম্যুনিস্ট পার্টি মানে রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল (কিন্তু দশ-বারোটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাইরে কেউ গায় না), আবৃত্তি ও বসে আঁকো, পাঞ্জাবী ও ঝোলা সাইডব্যাগ; কংগ্রেস মানে গুন্ডা , হিন্দি গান ,কিশোরকুমার, আর ডি বর্মণ, অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি ব্যাপারটা খুব চলত তখন। এখন যেমন মধ্যমেধা।
  • I | 24.96.119.120 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৭:৩৪585080
  • সত্তর গড়িয়ে আশির দিকে চলে যায়। পিসতুতো দিদির হাতে রেডিয়োতে বিবিধভারতী আর কলকাতা ক বাজে। 'বাঁশবাগানের মাথার ওপর' থেকে 'আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম'। সন্ধ্যার বিবিধ গলা-কাঁপানো,"কাহারবা নয় দাদরা বাজাও' এবং 'বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা'। 'অলির কথা শুনে বকুল হাসে' শুনে কান্না পেয়ে যাওয়া, আমার ফুল পিসিমা ঐ গানটা খুব ভালোবাসতো। স্কুলে বসে দুপুর বেলায় ঐ গানটার কথা মনে পড়ে যাওয়া এবং জিভ শুকিয়ে গলায় এক ধরণের দলা পাকিয়ে ওঠা।তার নাম বিষাদ,জীবনের প্রথম। পরে বুঝি , হয়তো ফুল পিসি নয়, মন খারাপ মূলতঃ নিজের জন্য, নিজের একলা থাকা, নিজের ঘরের কোণ মিস করা। স্কুল ঘরের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকানো। উল্টোদিকের বাড়ির উঠোনে দুটো বড় গাছের গায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা ছেলে আর তার বোন মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ির সুতো শুকোচ্ছে। আকাশের অনেক ওপরে চিল উড়ছে। তিনতলার জানলা থেকে অনেক দূরের পৃথিবী দেখা যায়, কিন্তু আমাদের বাড়ির ছাদটা, আমাদের পাড়ার জলের ট্যাঙ্ক? কোথায় তারা? হিস্ট্রী ক্লাসে আর্যদের এরিয়ান বলছে, দ্রাবিড়দের ড্রাভিডিয়ান, কৃষ্ণের নাম লর্ড কৃষ্ণা। একদিন পড়া না পেরে বিচ্ছিরি অপমান, শীত করে গায়ে জ্বর আসা। একদিন প্যান্টে পায়খানা হয়ে যাওয়া, বন্ধুদের হাসি। তখনো কেউ পটি বলে না, শিট বলে না।

    আশি মানে উত্তমকুমার ফুলে ফুলে ঢাকা, সুচিত্রা সেনের বাণপ্রস্থ। আশিতে সিনেমা দিশাহারা, কেউ নেই , কোনো টাইটান নেই । সিনেমা মানে তো বাংলা সিনেমা। অথচ তখনো সত্যজিত রায়, তখনো মৃণাল সেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে ওঁরা ঢোকেন না, কেননা সংস্কৃতি মানে তো গণনাট্য, রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল সন্ধ্যা। হিন্দি সিনেমায় ঘেন্না, অমিতাভ বচ্চন খারাপ লোক, যদিও আরো ছোট থাকতে বাবা-মার কোলে বসে জঞ্জির দেখা। কারো কেউ নই গো আমি শুনে ড্যানির জন্যে দুঃখ সেসবও তখন চুকেবুকে গেছে। গুগাবাবা দেখিনি, পথের পাঁচালী দেখলাম অনেক পরে , যখন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হল, আর দূরদর্শনে সরাসরি সূর্যগ্রহণ দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে ফিলার হিসেবে পথের পাঁচালি। অন্যের বাড়ি টিভি দেখা, আমাদের বাড়িতে টিভি আসবে আরো অনেক পরে, আমি যখন মাধ্যমিক দিয়ে উঠেছি। আনন্দমেলা আসত না আমাদের বাড়ি, কাগজই আসত না তো। আমি শুধু বায়না করে প্রায়ই চাঁদমামা আদায় করেছি। তবে শুকতারা, হ্যাঁ। বেশ অল্প বয়স থেকে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য কি জানি কেন তৃষ্ণা, রেডিওতে শুনে শুনে ভালোবাসা। আরো বাড়বে যখন আমি ক্লাশ টেনে প্রথম প্রেমে পড়ব, এক তরফা, আমার থেকে বয়সে বড় মেয়েটিকে মুখ ফুটে সে কথা বলতেও পারবো না কোনোদিন। আর মুহূর্তে সব শুদ্ধ হয়ে যাবে যেন, দেহবোধকে পাপ মনে হবে, আমারে যে জাগতে হবে এই ভাব আত্মায় মেখে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সবরকমের অনুষ্ঠান শুষতে থাকা।
  • nina | 79.141.168.137 | ২১ জানুয়ারি ২০১৩ ২১:২৩585081
  • আছি----
  • I | 24.99.154.171 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:৪১585082
  • আশিতে কিছু ঘটে না। নতুন কোনো গান নেই, নতুন সিনেমা নেই, নাটক দেখার মত বড় হয়ে উঠিনি; উঠলেও নতুন নাটক কিছু আছে কি? অজিতেশ নেই, শম্ভু মিত্র অস্তে গেছেন, উৎপল দত্ত নতুন কি করলেন মনে পড়ে না। সত্যজিত রায় নামক ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন, ঋত্বিক তো কবে মরে হেজে গেলেন।কৃত্তিবাস গল্পকথা এবং হাংরিরা নিভে গেছেন। ছুটকো ছাটকা দেয়ালে খবরের কাগজে কালো রং দিয়ে সি পি আই এম এল দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া আর কোনো আগুনের আঁচ নেই। টিভিতে শনিবার বাংলা সিনেমায় রঞ্জিত মল্লিক-শমিত ভঞ্জ-সন্তু-সুমিত্রা-আরতি'র মাঝারিয়ানা। একঘেঁয়ে গ্যাদগেদে।দশক জুড়ে বামফ্রন্ট সরকার।ছাই রং দিন।একটাই লম্বা দিন। দশ-বারো বছর জুড়ে মালগাড়ির মত নিরুৎসাহ লেংচে লেংচে চলছে।

    আমাদের বাড়ি বড় হয়। অপরিকল্পনায়। লম্বাটে হয়ে যায়। হাতে কিছু টাকা এলে একটা করে ঘর বাড়িয়ে নেয়ার মধ্যবিত্ত আয়োজনে। নিমদারিদ্র থেকে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ানো। অজস্র বোনেদের মধ্যে বাবা একা ভাই। কেন্দ্রীয় সরকারী চাকুরি, ভাগ্যিস! আমার দীর্ঘদেহী ঠাকুরদা সহজে থিতু হতে পারেন নি কোথাও। বরিশাল, জামশেদপুর, কলকাতা সীতারাম ঘোষ স্ট্রীট, সোদপুর। বিচিত্র সব জীবিকার পেছনে ছোটা। ৬২ তে তো মারাই গেলেন। আমি জন্মাবো তারও ৯ বছর পরে। বড়পিসি মারা যাবেন অল্প বয়সে। ফুল পিসি মারা যাবেন , সেও অল্প বয়স। আমার তখন ক্লাস ওয়ান হবে। ঘর মুছতে মুছতে গোঁ গোঁ আওয়াজ। গড়িয়ে গড়িয়ে আমায় ধরতে আসছেন। আমি তখন খাটের ওপর বসে অঙ্ক করছি। ভয়ে কাঠ। পিসিকে নিশ্চয় ভুতে ধরেছে। ভর দুপুরে। কিম্বা রাক্ষসী হয়ে গেছে। আমাকে ধরতে আসছে। কলতলায় মা-কে ডাকতে যেতেও পারছি না। খাট থেকে নামতে হবে যে। পিসি তখনো গড়িয়ে আসছে। প্রাণভোমরার ঠ্যাং ছিঁড়তে থাকলে রাক্ষসী যেমন যাতনায় অন্ধ হয়ে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসে। মা কী করে খবর পেল মনে পড়ে না। কাছের পানিহাটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। ফিরে এলেন সাদা চাদর জড়িয়ে, বন্ধ চোখ। অত গোঙানি আর গোল গোল চোখ করে ভয় দেখানো যে কোথায় গেল ! মৃত্যু বুঝিনি তখন, প্রথম মৃত্যু দেখার সেদিন। আমার হাতে মৃত্যু লেগে গেল। যদি আর একটু আগে মা'কে ডাকতাম ! মেজপিসী এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আমার জেরার মত লেগেছিল। গলা শুকিয়ে কাঠ। অপরাধবোধ। আজো লেগে আছে। মাথার মধ্যের নীল কুঠুরিতে। মাকড়সার জাল আর অচেনা পোকামাকড়ের ডিমে জড়ানো। কখন লোমে ভরা ঠ্যাং নিয়ে আলোয় বেরিয়ে আসবে জানি না।
  • I | 24.99.154.171 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:৫৯585083
  • ঝগড়া আর ঝগড়া। আধাদারিদ্র। অপমানবোধ। ছোট্ট মাসতুতো ভাই বেড়াতে এসেছে। শোনপাপড়ি খেয়ে তার ভালো লেগেছে, আরো চাই। মা'র কালো মুখ, পিসী'র কালো মুখ। ও সোনা, আর তো নাই ! সেই প্রথম নিজেদের আর্থিক অক্ষমতার কথা বুঝতে পারা। চারিদিকে দরিদ্র আত্মীয়দের কষ্টদিন। আমরা তো তা-ও ওরি মধ্যে কিছুটা সচ্ছল।
    কিন্তু তেতো দিন। চারিদিকে ঝগড়া। ঘুলিয়ে উঠছে কলতলার ময়লা। কাঁচা নর্দমার পাঁক। পিসতুতো দিদির সন্দেহজনক বান্ধবীদের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া। সন্ধ্যার অন্ধকার, তাও বাড়ি ফিরছি না। আমার ভয় হচ্ছে। মা বকবে। কলোনি পাড়া। বাঁশঝাড়। হঠাৎ প্রচুর চেঁচামেচি। কে যেন ছুরি খেয়েছে। দিদি'র বান্ধবীর ভাই। বান্ধবী শকারান্ত বকারান্ত শাপমন্যি করতে করতে ছুটল। আমার কালচারাল শক। আর সাহস দেখে অবাক। আমায় তো ঐ কালো'র মধ্যেই মা আড়াল দিয়ে বড় করছে। খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতে দেয় না। বাড়ির কাজ করায় না। পুতুপুতু করে মানুষ। পড়ো। বড় হও। কলোনি পাড়া থেকে বেরিয়ে এসো। এখানে সারা রাত লোডশেডিং। সন্ধে বেলা আলো এলে পাড়াময় হৈ হৈ আওয়াজ। ভুতের ছানাদের মত একদল কাচ্চাবাচ্চা রাস্তার আলোর নিচে বেরিয়ে এসে নাচতে শুরু করে দেয়। ওদের পড়াশোনা নেই?

    শৈশব, শৈশব! আমার শৈশব নীলও নয়। কালচে ছোপ ছোপ। আমি শৈশবে ফিরে যেতে চাই না।
  • kiki | 69.93.254.76 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:৩২585084
  • ঃ(
  • I | 24.96.103.12 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:১০585085
  • আসলে হাতের জং ছাড়াচ্ছি। বহুদিন বড় লেখা লিখি না কিনা। লেখায় ফ্রি ফ্লো আসে না তাই ঝরঝরিয়ে হাবিজাবি লেখা। যাঁরা এই ঢপের সেমিঅটোবায়োগ্রাফি পড়ছেন কিম্বা পড়ছেন না ও বোর হচ্ছেন, তাঁদের জন্য বললাম।
  • lcm | 34.4.162.218 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:২১585086
  • জং কোথায়, এতো স্বর্ণচূর্ণ !
    আরো চাই ...
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:২২585087
  • কে বোর হচ্ছে শুনি!!!!!! আমি তো গিলছি,
  • শ্রাবণী | 127.239.15.101 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:৩০585089
  • বোঝো, হাত ঝেড়ে এইসব বেরোয় তাহলে ঠিকঠাক হাত চললে কী হবে!
  • Tim | 188.91.253.11 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:৩০585088
  • এইযে ইন্দোদার সাথে শৈশব কৈশোর খানিকটা করে মিলে যাচ্ছে, বুকের মধ্যে পোষা জায়গাগুলো, মানুষগুলো চিনে নেওয়া যাচ্ছে এই লেখায় --- এতে প্রভূত আরাম হচ্ছে। আর গর্ব।
    হায়! আর আমি ভাবতাম আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকা ছোটবেলা চিরতরে আউটকাস্ট করে দিয়েছে।
  • I | 24.96.103.12 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:১৭585091
  • এর মধ্যে আমায় বাঁচিয়ে রাখে বই। হাবিজাবি ভালো-খারাপ যা খুশি বই। কৃত্তিবাসী-কাশিদাসী রামায়ণ-মহাভারত, বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল থেকে শুরু করে চাঁদমামা,শুকতারা,দেব সাহিত্য কুটীরের শারদীয়া,অজস্র রুশ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ( আহা, অমল ধবল পাল, পেন্সিল আর সর্বকর্মা, চলো সোভিয়েত দেশ ঘুরে আসি!), শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ,বনফুল,নীহাররঞ্জন ( অফ কালো ভ্রমর ফেম), নবকল্লোল । হ্যাঁ, নবকল্লোলও। বই ধরতে, বই পড়তে কেউ বারণ করে না। তাই আমি বেশ অবাকই হয়ে গেছিলাম জামশেদপুরে গিয়ে। আমার ছোড়দাদুর বাড়ি। বড়দের কোনো একটা সাময়িকী ধরেছিলাম, কী ধরেছিলাম নাম মনে নেই। পিসীদের সে কী তম্বি ! রাগ হওয়ার থেকে অবাকই হলাম বেশী। আবার কাশ্মীর গেলাম যখন আশি সালে, হিমিগিরি এক্সপ্রেসে লাইব্রেরি ছিল, লাইব্রেরিয়ান একজন বাঙালী ভদ্রলোক, তাঁর কাছে জিগ্গেস করলাম যখন -কী বই আছে? তিনি বললেন -উল্টোরথ।
    -উল্টোরথ দিন তাহলে !
    -সে বই তোমার পড়বার নয়।
    আবার অবাক। বইয়ের আবার ছোট-বড় আছে নাকি ! আমার বই পড়ার সবচেয়ে বড় প্যাট্রন যাদবপুরের মেজপিসী, কই তিনি তো কখনো এরকম বলেন নি !
    আর আমার ঠাকুমা। আমি ডাকতাম ঠাকুর। বই-অন্ত প্রাণ। বইয়ের নেশা ওঁর থেকেই পাওয়া। ছোট থেকেই ওঁকে বই পড়ে শোনাতে হত। শুনতে শুনতে রামায়ণ মুখস্ত। মহাভারত মুখস্ত। মানে আধামুখস্ত আর কি।
    এইমাত্র বনফুল লিখতে গিয়ে একটি মজার গল্প মনে পড়ে যাওয়া। বনফুলের একটি ছোট গল্পের সঙ্কলন ছিল -অদ্বিতীয়া। তাতে সব গল্পই নিছক নিরামিষ ছিল না। তেমনই একটি আমিষ গল্প ঠাকুমাকে পড়ে শোনাতে গিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশায়ে কিঞ্চিৎ রগরগে করে পরিবেশন করি। বললাম না, তখন যৌনকেশর গজাচ্ছে ! ঠাকুমার সে কী রাগ লেখকের ওপরে। বেচারা বলাইচাঁদবাবু !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন