এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাড়ি বদলে যায়।

    I
    অন্যান্য | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ | ৩৩৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kumu | 132.160.159.184 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:৩৩585092
  • বাহ,বাহ ,চমৎকার।
  • ব্যাং | 132.167.208.17 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:৩৮585093
  • লিখতে থাকো ডাক্তার। বড় ভালো লাগছে। সব কটা লোককেই তো চিনি, আসলে যে ঐ সময়্টাকেই চিনি।
  • I | 24.96.103.12 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:৪৮585094
  • এমনি করে কেটে যাওয়া। একতলা থেকে দোতলা হওয়া, আগরপাড়ার স্কুল থেকে খড়দার স্কুলে যাওয়া। ছোটপিসীর বিয়ে, ঠাকুমার মৃত্যু, পিসতুতো দিদিদের বিয়ে হয়ে যাওয়া। সংসার ছোট হয়ে আসা, মা'র স্কুলের চাকরী ছেড়ে দেওয়া, মা'র ঘাড় থেকে দায়দায়িত্ব কমে আসা, মা'র ধীরেসুস্থে মাথা তুলে দাঁড়ানো। একটুখানি হাঁপ ছাড়বার সময় পাওয়া। হাত-পা ছড়াতে পারা।

    কৈশোর পেরিয়ে তরুণ। স্কুল থেকে কলেজ। জ্ঞান হওয়া ইস্তক বামফ্রন্ট সরকার। মনে রাগ, যা হচ্ছে সব ঠিক হচ্ছে না। মনে দুঃখ, সেই ছেলেগুলো কোথায় ! আমি বুঝে উঠতে না উঠতেই তারা ময়দানের শীতের কুয়াশায় মিশে গেছে। আরো পরে আমি পড়ে উঠবো "তিমির বিষয়ে দুটুকরো'- আকাশ ভরে ওঠে ভস্মমেঘে/ দেবতাদের অভিমান এইরকম। পড়বো দ্রোণাচার্য ঘোষ ও সৃজন সেন। নবারুণ ভট্টাচার্য। মণিভূষণ ভট্টাচার্য। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। থানাগারদ থেকে মা-কে, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়, গান্ধীনগরে রাত্রি। পাথরে পাথরে নাচে আগুন। বাবা ঘোর সিপিএম বলে বাবার ওপরে চাপা রাগ। আরো কিসব অজ্ঞাত কারণে রাগ। ইদিপাস কমপ্লেক্স? বাবা মানে কী পিতৃতন্ত্র? সমাজ ও প্রতিষ্ঠান? মা-নদী-পরিবেশের উল্টোদিকে বৃহৎ বাঁধ, মিলিটারি-ইণ্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স? হাঃ, তখন এসবের নাম কে জানে! কিন্তু রাগ। দাবা খেলতে বসলে যুদ্ধ। হারাতেই হবে।

    কিন্তু পতাকাহীন। তখনো। ঝাণ্ডা দেখলে ঘোর লাগে। মিছিল দেখলে হাঁটতে চাই।বন্ধু নিয়ে যায় তার ফিজিক্সের মাস্টারমশায়ের কাছে। আই পি এফ। তখনো সিপি আই এম এল প্রকাশ্য নয়। কাগজে পড়ছি জেহানাবাদ-আরা-ভোজপুরে ব্রহ্মর্ষি সেনা-লোরিক সেনা-সানলাইট সেনার সঙ্গে আইপিএফ কী লড়াইটাই না দিচ্ছে। আজকাল তখনো অঘোষিতভাবে তৃতীয়্ধারার বামপন্থায় সহানুভুতিশীল কাগজ।
    মাস্টারমশাই প্রথম কথাই বলেন -বিপ্লবটা আমরাই করবো। শুনে ফ্লোরড হয়ে যাই। এমনি আত্মবিশ্বাস !
  • sosen | 24.139.199.1 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৫৪585095
  • ভালো লাগছে, হাত ঝেড়ে নেওয়া সে-ও বুঝতে পারছি- কিন্তু এই শ্বাসরুদ্ধকর ফ্লো আবার ভেবেচিন্তে লিখতে গেলে রুখে যাবে তো। সঙ্গে আছি, দৌড়চ্ছি ।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:২২585096
  • ডাক্তার দা, কেমন চেনা চেনা গন্ধ লেখা জুড়ে।
  • I | 24.96.84.165 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:২৮585097
  • ৯২ তে সুমন চট্টোপাধ্যায় এলেন। মনে আছে, শুভ্রদীপ বলেছিল, একজন নতুন গায়্ক খুব ভালো গান গাইছেন। তার আগে বোধহয় আজকালে একটা অনুষ্ঠানের রিভিউ বেরিয়েছিল। শুভ্রদীপের কাছ থেকে ক্যাসেট নিয়ে শোনা। তোমাকে চাই শুনে সেই বিস্ফোরণ, সে আর নতুন করে কী বলার আছে। আমার বয়সী সবাই তা জানে।সারাদিন ধরে অজস্রবার ঘুরিয়েফিরিয়ে সেই সব গান শুনছি। পরের দিন এন আর এস-এর কলেজ ক্যান্টিনে বন্ধুদের সুমনের গানের কথা বললাম। দীপাংশু খুঁজে খুঁজে ক্যাসেট কিনে নিয়ে এল। বছরে তিরিশবার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা-শাপমোচনের অশ্রুমোচন-শুনে সন্দীপ বলেছিল- সে কী রে, তুই এই গান শুনছিস ! তোর যে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো লাগে ! ওকে কী করে বোঝাই, রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো লাগা যেমন সত্যি, গানের ঐ লাইনটাও ততটাই।তখনো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের " ব্যক্তিগত রবীন্দ্রনাথ' এই এক্সপ্রেশনের সঙ্গে পরিচয় হয় নি। কিন্তু ব্যাপারটা বুঝি।

    খুঁজে-খুঁজে সুমনের অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করলাম।সোদপুর-ব্যারাকপুর-রবীন্দ্রসরোবর মুক্তমঞ্চ। সেইসব নিরাভরণ মঞ্চ, যেন নাটকের জন্য তৈরী, একটিমাত্র আলোর নীচে সুমন চট্টোপাধ্যায় এসে দাঁড়াচ্ছেন, সেই কোমর থেকে ভাঁজ হয়ে দর্শককে প্রণাম, কাঁধে ঝুলছে গীটার নয় বন্দুক, গলা থেকে হারমোনিকা, যেন আমদের নিজস্ব গেরিলা এইমাত্র জঙ্গলের হাইড আউট থেকে উঠে এলেন। নাগরিক বাঙালী আবার বাংলা গানে ফিরে এল।গানের মধ্যে অজস্র কথা, কথার পাহাড়, আজ বাচালতা মনে হয়, আমিময় আস্ফালন লাগে, সেদিন হাঁ হয়ে গেছিলাম। বিশেষ করে মনে আছে রবীন্দ্রসরোবর মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠান, সুমন গোল্ডেন ডিস্ক পেয়েছেন, খোলা আকাশের নীচে গান শুরুর আগে কথাই বললেন বোধ হয় পনেরো-কুড়ি মিনিট। বাংলা গানের পূর্বসূরীদের নাম ধরে ধরে প্রশংসা , এইচ এম ভি-কে মৃদু গালাগাল, সিপিএমকে গালাগাল, নিকারাগুয়ার বিপ্লব ও স্যান্দিনিস্তা গেরিলাদের কথা, পীট সীগার ও এর্নেস্তো কার্দেনাল। কানায় কানায় ভরা মুক্তমঞ্চ হাঁ হয়ে শুনছে। আপনারা যাঁরা আমাকে খুন করতে চান, আসুন ভাই, চলে আসুন। আমার সঙ্গে গুলিভরা রিভলভার রয়েছে, আমি নিকারাগুয়ার বিপ্লব দেখেছি.... সব গিলছি। এখন ভাবলে হাসিও পায় না। বিরক্ত লাগে।
  • aranya | 154.160.226.53 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৪৯585098
  • অসাধারণ। এক নিঃশ্বাসে পুরোটা পড়লাম, জাস্ট অসাধারণ।
  • kiki | 69.93.254.10 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:২১585099
  • ডাগতারের তাল ভালো না। কি তাড়াতাড়ি বিরানব্বইতে ল্যান্ড করে গ্যালো। ধুস্স্স!!!

    ফাঁকি দেওয়া মানছি না, মানবো না।ঃ((
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:৫৬585100
  • কিন্তু আমার কথাগুলো ডাগদার দাদা জানলো কি করে? কোনদিন তো এইভাবে বলতে পারতাম না, আনমনে ভেবেছি হয়ত। সেই কথাগুলোই তো লিখিত হয়ে গেল।
  • I | 24.99.79.144 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০১:৩৯585102
  • ১৯৮৯-তে তিয়েন আন মেন স্কোয়ার।১৯৮৯তে রোমানিয়ার পতন, চৌসেস্কু-হত্যা। এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বুর্জোয়া ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, ভারতীয় কমিউনিস্টরা বিহ্বল, কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আমাদের মত ছেলেছোকড়ারা তো আরোই না, আমাদের তত্ব নেই, প্রশ্ন নেই, বিশ্বাস আছে, আমরা কমিউনিজমের ফুট ফলোয়ার। কিম্বা তাও নই, সেরেফ সমর্থকমাত্র। কিন্তু এসব হচ্ছেটা কী? কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে তো নিশ্চয়, ইতিহাসের চাকা কি তবে উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করল? এত মানুষ কি একসঙ্গে ভুল করবে?শিল্পে অনুন্নত দেশে জোর করে বিপ্লব আনতে যাওয়ার মাশুল?পার্টির একনায়কতন্ত্রকে ছাপিয়ে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী ছাপিয়ে শেষে ব্যক্তির একনায়কতন্ত্র? বিশ্ববিপ্লবের তত্বকে পাত্তা না দেওয়ার একরোখোমি?

    পরের বছর বার্লিন পাঁচিলের পতন, দুই জার্মানী এক হয়ে যাওয়া। বিপ্লবের পীঠস্থানে মিখাইল গর্বাচভ, পেরেস্ত্রৈকা ও গ্লাসনস্ত এবং শেষমেস '৯২তে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো। এসব কী ঘটছে, চোখ কচলে দেখার আগেই আলোর গতিতে পৃথিবীর চেহারা বদলে গেল। এত বড় সব ঘটনা, আমরা টেরও পেলাম না আগে থাকতে ! অথচ একটু সজাগ থাকলেই দেখে নেওয়া যেত প্রাহা স্প্রিং, '৫৬-র হাঙ্গেরীয় বিপ্লব, ইমরে নাগির বিচার ও হত্যা, সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির গ্রেট পার্জিং ও গুলাগ। যারা সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের তত্ব আওড়ায় তাদের সঙ্গে আমার তখনো ভালো করে আলাপ হয় নি।

    হোম ফ্রন্টেও ঘটনার ঘনঘটা। ১৯৯১ সালে শংকর গুহ নিয়োগী ভাড়াটে খুনীদের হাতে খুন হলেন। এর আগে শংকর গুহ নিয়োগী কিম্বা ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা'র নাম জানতাম না।তৃতীয় ধারার বামপন্থী আন্দোলন যে শিকড় ছড়াচ্ছে দেশের অন্য কোনো প্রান্তে, ট্রাডিশনাল বাম ব্যাস্টিয়ন-এর বাইরে, জানতে পেরে উত্তেজিত লাগল। পরের বছর কানোরিয়া জুট মিলে সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের মিল দখলের লড়াই। র‌্যাডিক্যাল তাত্বিকরা গ্রামসি'র ফ্যাক্টরি কাউন্সিলের কথা বলছেন, গণরান্নাঘরে সকলের জন্য রান্না হচ্ছে, কলকাতা থেকে ছাত্ররা যাচ্ছেন। সুমন গিয়ে গান গাইছেন। এরই মধ্যে বাবরি মসজিদ ভাঙা হল, এই শক কিভাবে সামলাতে হয় জানিনা। দেশভাগের কাছাকাছি সময়ের দাঙ্গার কথা কেবল বইয়ে পড়া, এত বড় কম্যুনাল আউটরেজের সামনা এত কাছ থেকে আগে করিনি( যদিও কলকাতায় তেমন বড় কিছু ঘটেনি,শুধু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদের মুখোশ কীভাবে খুলে পড়ে , তা দেখবার দুর্ভাগ্য হয়েছিল), অবশ্য ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু-পরবর্তী দাঙা, সে -ও একরকমে কম্যুনাল বটে।

    ৯৩-তে ফুলেশ্বরে ভিখারী পাসোয়ানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে আর একদফা হৈ চৈ। তখন আমি মনস্থির করে ফেলেছি, সংকোচের বিহ্বলতা আর নয়, প্রথম র‌্যালিতে গেলাম সেকেন্ড এম বি বি এস পরীক্ষার দিন পনেরো আগে। নৈহাটি থেকে গঙ্গা পার হয়ে যাওয়া, সঙ্গের কাউকেই চিনি না; থানা ঘেরাও অভিযান, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কখন অশান্ত হয়ে উঠল, কে যেন এক ঘুষিতে ওসি'র দাঁত ভেঙে দিয়েছে, আমার চোখের সামনেই ঘটল ঘটনাটা। তারপরে তো পুলিশের কী মার কী মার, একটা বড় মাঠ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে লাঠিচার্জ। সবাই ছত্রাখান, পালাতে গিয়ে পেটেন্ট লেদার বুটের লাথি খেলাম। বেশ কিছু কমরেড অ্যারেস্ট হলেন, এবার তাঁদের মুক্তির দাবীতে চুঁচুড়া-চন্দন নগর মিছিল। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বেলা গড়িয়ে সন্ধে। অবশেষে খেয়া পার হয়ে ফের শ্যামনগরের ঘাটে ফেরা, সেখান থেকে ট্রেন। ততক্ষণে অচেনা মানুষেরা বন্ধু হয়ে উঠেছেন কয়েকজন। দীপাংশু পরে শুনে সে কী বকা ! এম বি বি এসের আগে এরকম ঝুঁকি কেউ নেয়, যদি লক আপে পুরে দিত! সে ব্যাপারটা অবশ্য ভেবে দেখি নি।
  • achintyarup | 125.111.248.134 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০১:৪০585103
  • হুম
  • aranya | 154.160.226.53 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:০৫585104
  • তৃতীয় ধারার আন্দোলন - নস্টালজিয়া, অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল আমাদের ছাত্রাবস্থাতেও।
  • ranjan roy | 24.99.219.108 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:০৭585105
  • এই কথাগুলো লিখতে চেয়েছিলাম। আসলে এই ভাবে বলতে চেয়েছিলাম। মানে সেই সময়, বদলে যাওয়া সময়, রং বদলাতে থাকা সময়ের আলো-আঁধারি আর ছোটবেলার হীনমন্যতা--- সব শব্দে ধরতে চেয়েছিলাম। পারিনি। ডাক্তার পেরেছে। আমার আর দুঃখ নেই।
  • I | 69.161.177.209 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০৮:৩১585106
  • এই সময় থেকে ছুটকো ছাটকা বাড়ির বাইরে থাকা। ক্রীক রো-তে পার্টি অফিস, সেখানে যাতায়ত বাড়তে থাকে।ছেলেমানুষ বলে বিশেষ পাত্তা পাই না,ডাক্তার বলে (আর সন্দেহ করি, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো মার্কশীট আছে বলেও) একটা সময় পাত্তা পেতেও থাকি। ডাক্তারের চাহিদা সব খানে। কলকাতা শহরে তখন একই সময়ে বিভিন্ন কলেজের বেশ কিছু ছাত্র হঠাৎ করে লিবারেশনের হাতায় এসে জমায়েত হচ্ছে। ছোট থেকেই পেটের গোলমাল থাকা সত্বেও ভাজাভুজির দিকে আমার নজর বরাবরের। ক্রীক রো-তে ঢোকার ঠিক আগেই রাস্তার একটা তেলেভাজার দোকানে দারুন চিংড়ির চপ পাওয়া যায়, ন্যাজের ডগাটুকু বেরিয়ে থাকে। মোচার চপ, আমচুর দেওয়া আমের চপ ইত্যাদিও। অমনি নোলা সকসক।

    এক রাতে কী এক কারণে পার্টি অফিসে থেকে গেলাম। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, কুটকুটে কম্বল ও ছারপোকা। ভোরের দিকে ঘুমটা এসেছিল। ভেঙে গেল একটা অচেনা , ঈষৎ হাস্কি মহিলা কণ্ঠের অসম্ভব সুরেলা আলাপে। ভয়রোঁ। কিশোরী আমোনকর। সেই ভোরের কথা, সেই গলা হয়তো এ জীবনে ভুলব না। সন্ময়দা (নাম বদলানো) দু হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসে বসলেন-নাও, চা খাও। সন্ময়দা'র হাসিটা খুব মিষ্টি লাগে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর ফটোগ্রাফির শখ ওঁর। হোলটাইমার , বলা বাহুল্য।
    বন্‌ধ ছিল সেদিন। সিপি এম এর ডাকা হবে, এখন আর মনে নেই। বন্‌ধের কলকাতা দেখিনি কখনো আগে। চারিদিক শুনশান। ছেলেরা মৌলালীর মোড়ে রাস্তার ওপরে ক্রিকেট খেলছে। প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে। ফাঁকা ভিড়ভাট্টাহীন জায়গা আমার বরাবর ভালো লাগে। দিনটা কেমন অন্যরকম ভাবে শুরু হয়ে গেল।

    আস্তে আস্তে কলকাতার সঙ্গে আলাপ বাড়ে। কলকাতা মানে মধ্য কলকাতা। শিয়ালদার আশপাশ।রাতে কখনো কখনো কালীর দোকানে ডিম ভুজিয়া খেতে যাই। কালীর দোকানে যে বসে সে-ই কালী। অরণ্যদেবের মত। আসল কালী হয়তো মরেধরে গেছে। বিশাল বড় থলথলে ভুড়ি বাগিয়ে খালি গায়ে এখনকার কালী ডিম-ভুজিয়া বানায়। খদ্দের এন আর এসের কিছু রাতজাগা ছোকড়া ডাক্তার আর কোলে মার্কেটের কুলি-কামিন। আর কিছু মোদো-মাতাল। খেয়ে উঠে এক ভাঁড় দুধ গোলা চা। পাশের পানের দোকান থেকে কণ্ডোমের প্যাকেট ঝুলছে।ন্যাংটো মেয়েদের ছবি সাঁটা। মাঝরাত ঝমঝম করছে। কোলে মার্কেট জেগে উঠেছে।

    মাঝরাতের এন আর এসের এমার্জেন্সি ডিউটিগুলো এক একটা অভিজ্ঞতা। অনেক রোগী আসতো পেট ব্যথা নিয়ে। গৎ-এ ধরা র‌্যান্টাক, ফোর্টউইন-কাম্পোজ লিখতে হত। সিনিয়র দাদাদের অভিজ্ঞ চোখ বলে দিত এদের অনেকেই নেশাখোর। নেশার যোগান না পেয়ে পেটব্যথার নাম করে ফোর্টউইন-কাম্পোজ নিতে এসেছে। একদম দিবি না। মারামারি-অ্যাক্সিডেন্ট কেস আসতো প্রচুর। আর আসতো ড্রাংক ড্রাইভিং। বড়লোকের ঘরের ছেলেপিলেদের পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। তাদের সে কী তম্বি !
    আর একবার সার্জারীতে ইন্টার্নশীপের সময় একটা স্ট্যাব ইনজুরির কেস এল। সারা শরীরে হেন জায়গা নেই ছুরি মারে নি। বাঁচবে না জানতাম। অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। আমরা তিন চার জন মিলে সেলাই দিচ্ছি মুচির মত। হাইপক্সিক ব্রেনের ক্রিয়ায় সে তার রক্তাক্ত হাত আমার গায়ে ছুঁড়ে মারল। রিফ্লেক্সে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল-গেল সাদা জামাটা ! সঙ্গে সঙ্গে জবাব- আমি মরে যাচ্ছি , আর আপনি জামার কথা ভাবছেন ! ঐটুকু জ্ঞান তখনো ছিল। পরদিন খবরের কাগজে পড়লাম, একজন কুখ্যাত গুণ্ডা বেলেঘাটা খালপাড়ে স্ট্যাবড হয়। এন আর এস হাসপাতালে সে কাল রাতে মারা গেছে।

    একবার একজন মহিলা এলেন জিভ কেটে। কেটে মানে পুরো আদ্ধেকটা জিভ ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে দিয়েছেন। মুখ দিয়ে গল গল করে রক্ত পড়ছে, জিভ তো অসম্ভব ভ্যাস্কুলার অর্গ্যান ! মুখে কিন্তু কোনো যন্ত্রণার চিহ্ন নেই। আশ্চর্য, সে রাত ছিল কালীপূজার রাত।
    গাইনিতে ইন্টার্নশীপ করবার সময় লেবার রুম ডিউটি পড়ত। ওঃ, সেই আঁশটে গন্ধ ! কুকুর এসে প্ল্যাসেন্টা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়সী কিছু মেয়ে মাঝে মাঝে আসতো। তলপেট যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। যোনির মুখে যন্ত্রণা। পিভি ( গ্লাভস পরা হাতে পার ভ্যাজাইনাল এক্জামিনেশন) করতে হত। করে কিছুই পেতাম না। কড়া সিস্টার থাকলে কোনো কোনো মেয়েকে কখনো ধমক দিতেন। চলে গেলে বলতেন, আপনারা বুঝবেন না। ও মেয়ে ভালো নয়। যৌবনজ্বালা সহ্য করতে না পেরে নাকি হাসপাতালে এসে পিভি করিয়ে নেওয়া। কে জানে বাবা !
    এই লেবার রুম করতে এসেই জন্ম-মৃত্যুর অসামান্য অভিজ্ঞতা। পাশের একটা ছোট ঘরে সার সার মহিলা হাত-পা বাঁধা অব্স্থায় শুয়ে আছেন। তাঁদের মুখ যন্ত্রণায় বেঁকে যাচ্ছে, না, লেবার পেইন নয়। তাঁরা উন্মাদিনীর মত বিড়বিড় করছেন, চীৎকার করছেন। এক্লাম্পসিয়া। ঘরে রুম হীটার চলছে, শীতকাল। তাদের শরীরে কোনো সুতো নেই কেন কে জানে। এই সার সার নগ্নিকা মাতৃমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মাথার মধ্যে ঝাঁকি লাগে। যেন গভীর কালো মহাকাশ। নীহারিকা ফাটছে, তারার জন্ম হচ্ছে। তারার মৃত্যু। নিহত অশ্বের স্বরলিপি লেখার সময় লেবার রুমের এই ছবি মাথায় ছিল।
  • dd | 132.167.10.181 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০৮:৪২585107
  • ক্যানো? হাত পা বেঁধে ওম্নি বিড় বিড় করছে ক্যানো? এসব কি?

    ভালো কথা। তোর শৈশব আর ছেলেবেলার কহানীতে একদম নিজের মতন লিখলি। সেই কবিতা কবিতা করে। আর মাজখানে পলিটিক্যাল সময়টা যখন লিখলি তখন লিখলি অ্যাকাউন্টেন্টের মতম। সেটা বেশ করেছিস।

    আবার ডাক্তারির কথায় ফের কাব্যি করে লিখছিস। এর ব্যাখ্যা কে দিবে?

    আর বৌমার কথা লিখলি না?
  • a x | 138.249.1.202 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০৮:৫৯585108
  • ইন্দোর লেখার পরে কখনও কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। মনে হয় কী লিখব? সব লেখার মধ্যেই এই অসম্ভব ইন্টেন্সিটি, আবার এই মায়াময় বিষাদ, এর সামনে যাইই লিখি, খুব সাধারণ লাগে। শুধু জানাতে চাই, শুষে নিচ্ছি নিজের মত করে। ঐ ছেলেবেলার গল্পের মায়া, এই ডাক্তারির গল্পের বমি।
  • জিতু | 84.78.226.70 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ১০:১২585109
  • "ইন্দোর লেখার পরে কখনও কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। মনে হয় কী লিখব? সব লেখার মধ্যেই এই অসম্ভব ইন্টেন্সিটি, আবার এই মায়াময় বিষাদ, এর সামনে যাইই লিখি, খুব সাধারণ লাগে।"

    আমি বয়েসে ছোট, হয়তো অনুভূতিতেও তেমন পাক ধরেনি। তবু ওনার লেখা পড়ে ঠিক এটাই মনে হল। এ লেখার আগে-পরে কিছু লেখা মানে ভৈরবীতে শুদ্ধ রে লাগানো। স্রেফ বিবাদী স্বর। কি করে এই গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠা, একলা দুপুর, বয়:সন্ধির জটিলতাকে শব্দে ধরলেন?

    “একটিমাত্র আলোর নীচে সুমন চট্টোপাধ্যায় এসে দাঁড়াচ্ছেন, সেই কোমর থেকে ভাঁজ হয়ে দর্শককে প্রণাম, কাঁধে ঝুলছে গীটার নয় বন্দুক, গলা থেকে হারমোনিকা, যেন আমদের নিজস্ব গেরিলা এইমাত্র জঙ্গলের হাইড আউট থেকে উঠে এলেন।”

    আবার সেই প্রশ্ন। কি করে জানলেন? কলামন্দিরে সুমন শুনছি। কাঁধে গীটার, গলায় হারমোনিকা নিয়ে সুমন গাইছেন – কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়। স্টেজে পিনাকীর মায়াবী আলোর বৃত্ত, তার বাইরে মনখারাপিয়া অন্ধকার। পিছনের দেওয়ালে সুমনের মস্ত ছায়া। একেই কি বলে লার্জার দ্যান লাইফ? আমার খালি মনে হচ্ছে গানের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীকে দেখছি।

    ডাক্তারবাবু ভালো থাকুন। আরো লিখুন। আমাদের ইন্দ্রিয়, বোধ-বুদ্ধি, মেধা, রুচি আপনার লেখার শুশ্রুষা পাক …
  • san | 127.194.205.131 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ১৮:২৪585110
  • এক্কেবারে মুগ্ধ ও মোহিত হয়েও কিকির সঙ্গে একমত।
  • I | 24.99.213.235 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৩৪585111
  • সকলকে ধন্যবাদ।
    ডিডিদা। এক্লাম্পসিয়াতে ব্রেনের সমস্যা হয় তো। খিঁচুনি হয়,সেন্সোরিয়াম অল্টার্ড হয়ে যায়।
  • sosen | 125.241.4.69 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৪২585113
  • ডাগদারবাবু, ইন্টার্নশিপের দিনগুলো আরেকটু লেখা হোক। অনুরোধ রইলো। জন্ম মৃত্যুর কবিতা, আরেকটু।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:১৮585114
  • একেবরে অন্য স্বাদের লেখা----যত পাই তত চাই----

    আর ডিডির সঙ্গে গলা মেলালাম--
    বৌমর কথা লিখলি না ?!
  • I | 24.99.187.92 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:১০585115
  • সুষেনকে,
    আর তেমন ভালো গপ্পো মনে আসছে না। ভাবতে বসলে লেখা আটকে যাবে। আর একটু বিপথগামী হতে পারে। আসলে ভেবেছিলাম যেসব বাড়িতে আমি থেকেছি তার একটা গপ্পো লিখবো। তবে, বাড়ি মানে কী আর শুধুই বাড়ি ? এদিকে যেহেতু হাতে একসঙ্গে একগাদা সময় চলে এল, লেখাও অমনি গড়গড়িয়ে বড় হতে থাকলো। কিন্তু আর বড় হলে বড্ড অটোবায়োগ্রাফি গন্ধ হয়ে যাবে, বা অলরেডি হয়ে গেছে। সে বড়ই লজ্জা কি বাত। তাই এবার গোটানো লাগে।
    পরে শুইন্যো মনু।
  • I | 24.99.187.92 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০১:০৮585116
  • ঠিকঠাক করে বাড়ির বাইরে আর তেমন থাকা হল কই? এন আর এস হোস্টেলে একটা ঘর ছিল, পরীক্ষার আগে কিছুদিন থেকে পড়তাম, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। আসলে আমি বড্ড ঘরকুনো।

    এন আর এসে আমার ঘরটা ছিল একদম পাঁচতলায় সাউথ ব্লকে। অ্যাটাচড বাথ বলা যেতে পারে, কেননা ঘরের পাশেই বাথরুম। আমার রুমমেট ছিল হুগলী জেলার একজন সিনিয়র দাদা। সে আবার এস ইউ সি আই করত। সাউথ ব্লক ছিল বিদ্রোহীদের আস্তানা মত। আরো কিছু ডি এস ও, কিছু বিক্ষুব্ধ এস এফ আই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। তার ওপর গিয়ে পড়লাম আমরা দুটি আইসা। আমার সেই রুমমেট পরে বলেছিল, সে শুরুতে আমাদের এস এফ আইয়ের আমদানি বলে সন্দেহ করত, ডি এস ও-দের চোখে চোখে রাখবার জন্য এস এফ আই গুপ্তচর পাঠিয়েছে বলে ভেবেছিল।
    শেষরাত্তিরে বিটলে ছেলেদের পড়াশোনা শেষ হলে পরে শুতে যাওয়ার সময় বিকট শব্দে থালা পেটানো ও ভুতুড়ে গালবাদ্যে প্রায়ই ঘুম ভেঙে যেত। আর ক্কচিৎ কদাচিৎ লোডশেডিং হলে তো কথাই নেই। একদিন অনেক রাত জেগে পড়ে ঘুমোতে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি দীপাংশু বিছানার ওপর উঠে বসল; ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অদ্ভুত মুদ্রায় নাচ। সামনে সেকেন্ড এম বি বি এস; দুঃখে কষ্টে দীপাংশু কি পাগল হয়ে গেল শেষটা? সেইসব সময়ে আমাদের দিনে ১৭-১৮ ঘন্টা করে পড়তে হত।
    হোস্টেল ছিল বেলেঘাটা মেন রোডের ঠিক পাশে।রাস্তার ওপর থেকে আমার ঘরটা ইন ফ্যাক্ট দেখাও যেত। উঁচু পাঁচিলের ঠিক বাইরেই বেশ কিছু নার্সারি, সেখান থেকে ফুলের গন্ধ। আর পাঁচিলের ভেতরেই মর্গ, তার সুরভি মাঝে মধ্যেই জোরালো হাওয়ায় ভেসে আসে। প্রথম দিন মর্গে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। ডোমেরা কী অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় ডিসেকশন করত ভাবা যায় না। মিনিট পাঁচেকে ডিসেকশন শেষ। একটি লাশ বের করার সঙ্গে সঙ্গে হলদেটে রস গড়িয়ে গেল চারপাশে। খুলি খোলার সঙ্গে সঙ্গে থিকথিকে ম্যাগটে ছয়লাপ। বমি আটকানো কীভাবে সম্ভব হয়েছিল মনে নেই।
    অবশ্য অ্যানাটমি ডিসেকশন ক্লাশে সমস্যা হত না। শুধু ফরম্যালিনের গন্ধে চোখ জ্বালা করত। বেশ হিরো হিরো ভাব জাগত মনে। আশেপাশে অজস্র হিরোয়িন। একসঙ্গে এত স্মার্ট ও সুন্দরী মেয়ে আগে কখনো দেখি নি। একজনের সঙ্গে প্রথমবার ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে গিয়ে তো জিভটিভ জড়িয়ে একাক্কার। আস্তে আস্তে দিব্যি ভাব হয়ে যায়। আধখোলা বডির পাশে বসে ভাগ করে টিফিন খেতাম। মোটা লোকেদের সাব কিউটেনিয়াস ফ্যাট দেখতে বেশ আমসত্ত্বের মত লাগত, যদি অবশ্য বডি টাটকা থাকত।

    হোস্টেল জীবনের অ্যানার্কি এক অন্য স্বাদ, অনেকেই এখানে হোস্টেলে আমার থেকে বেশীদিন থেকেছে, আমার চেয়ে ভালো জানে। আমার পাশের ঘরে থাকত রঞ্জন পাল,শিলিগুড়ির ছেলে আর ত্রিপুরা থেকে নীলু। ফার্স্ট এম বি বি এস থেকে টানা হোস্টেলে থাকে। রঞ্জন ছিল অসম্ভব গাঁতু। সে-ই আমাকে প্রথম অ্যালপ্রাজোলাম খাওয়ায়। প্রথমবার আমি রিফিউজ করি, কী জানি যদি ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা হয় ! দীপাংশু চেয়ে খেল। তখন সেকেন্ড এম বি বি এস চলছে। পরদিন সকালবেলায় দীপাংশু আমার থেকে আধ ঘন্টা আগে উঠে গেছিল। তখন কেউ আগে উঠে পড়লে কি একটু বেশী রাত জেগে পড়লে বেশ হিংসে হিংসে মত লাগত।
    কান্তি বলে একটি ছেলে ছিল ( নাম বদলানো), আমাদের রহড়ারই ছাত্র ।সে ছিল সদাহাস্যমুখ, বজ্রবাঁটুল, তবে তার চরিত্রবোধ ছিল ঋজু ও প্রখর। রুমমেটের বিছানার ওপরে মাধুরী দীক্ষিতের পোস্টার দেখে সে রুমমেটকে কিছু কম আধ ঘন্টার একটি ভাষণ দেয়। রুমমেট বেচারা এমন কখনো শোনে নি, সে ঘাবড়ে গিয়ে পোস্টারটি তোষকের তলায় গুঁজে রাখে। কান্তি তাতে খুশী হয়ে বলে- বেশ, এইবারে কিছুটা ধর্মপথে এলে। তোমাকে দশে ৫ নম্বর দেওয়া যেতে পারে। যদি ছবিটা ডাস্টবিনে ফেলতে, তাহলে সাড়ে সাত দিতাম। আর যদি পুরো জানলা গলিয়ে ফেলে দিতে তবে পুরো দশে দশ পেতে। আর এক নীলু টাইফয়েড হওয়ার পরে কিছুটা পেগলে গেছিল। সকলের কাছে নয়, বিশেষ বিশেষ কিছু সহপাঠীর কাছ থেকে সে অটোগ্রাফ চেয়ে বেড়াত, তার অটোগ্রাফদাতা- নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া ছিল সম্পূর্ণ অজানা। একবার লেকচার থিয়েটারের ডায়াসে উঠে সে ঘোষণা করে, মনীষাতে খুব ভালো রঙীন ছবিওলা বই এসেছে, জিরাফের ছবিও আছে। তোরা চাইলে নিয়ে আসতে পারিস।
    পাগলামোর কথায় মনে পড়ল আমাদের এক সহপাঠিনীর কথা, কোর্স শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তার মস্তিষ্কবিকৃতির লক্ষণ দেখা যায়, শেষ অবধি তাকে এম বি বিএস পড়া ছাড়তে হয়। সে ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে, অসুন্দরী, এই চড়া গ্ল্যামার আলোয় ভাসা দুনিয়াতে, এই ইংরেজী ভাষার কাচঘরে, এম বি বি এস পাঠক্রমের চূড়ান্ত চাপে সে হয়তো তার নিজের মাতৃভাষা হারিয়ে ফেলেছিল।
    বস্তুতঃ , ডাক্তারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মানসিক অবসাদ ছিল বেশ চলতি ব্যাপার। ন্যাশন্যাল ছিল এ ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে, ফি বছর সেখানে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করত।
  • I | 24.99.187.92 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:০৪585117
  • সব হোস্টেলেই যেমন, এন আর এসেও বেশ কিছু চরিত্র থাকত। কারো হয়তো একমাত্র আমোদ ব্যবহৃত চাড্ডি দরজার সামনের দড়িতে টাঙিয়ে রাখা, যাতে অসাবধান কেউ এলেই সে অমূল্যধন তার মাথায় ঠেকে। কেউ মোজা কাচার ওল্ড ওয়ার্ল্ড কুসংস্কার জীবন থেকে উড়িয়ে দিয়েছিল, একমাত্র সক টেস্টে পাশ করলেই কোনো কোনো দুর্বলতর চিত্ত আবার মোজা কাচার শ্রমসাধ্যে কাজে হাত দিত। সক টেস্ট আর কিছুই নয়, যখন ঘামে ঘামে মোজার কাপড়োচিত বন্ধন যাবে টুটে, যখন তাকে ফ্যানের তলায় হাত দিয়ে ঝুলিয়ে দিলেও সে নট নড়ন চড়ন, আপন কাঠিন্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে সিধা বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। চাইলে ঐ অবস্থায় মোজাকে মেঝেতে ফেলে দিলে ঠং করে আওয়াজও হতে পারে।অমুকদা , জনশ্রুতি এই , গোটা এম বি বি এস কোর্স জুড়ে কখনো টুথপেস্ট কেনে নি, তার থিওরি ঃ আমার ভাণ্ডার আছে ভরে, তোমা সবাকার ঘরে ঘরে; অবশ্য টুথব্রাশ কিনেছিল কিনা সে বিষয়ে কবি নীরব। উল্টোদিকে ধৃতব্রত, সর্বদাই সাদা ধবধবে ইস্ত্রি করা পাজামা-পাঞ্জাবিতে ফিটফাট। ধৃতর সঙ্গেই প্রথম নিজামে খাওয়া, বীফ রোল ও সরবৎ, তখনো সুমন "প্রথম সবকিছু 'গানটি লিখে ওঠেন নি। সাথে ফিল্ম দেখেছিলাম দ্রোহকাল- গোবিন্দ নিহালনী; আশিষ বিদ্যার্থীকে সেই প্রথম দেখা। ববিদার ছিল পাখী ও মাছের শখ, ঘর ভর্তি করে কমন প্যাসেজে উপচে পড়ত তার বদ্রি পাখীর খাঁচা। আমাদেরও নিজস্ব ক্লেপ্টোম্যানিয়াক ছিল, লেডিজ হস্টেলের নিম্ফোম্যানিয়াক ছিল। বয়েজ হস্টেলের মাঝখানে গাঁজাগাছ ছিল, তাতে রসিকজনেরা খেয়ে উঠে ঘরে ফেরার সময় নিয়ম করে এক-আধ গ্লাস জল দিত।
    আর ছিল জে এম টি টি, সে নিজেকে ঐ নামেই ডাকত। বিশাল এন আর এস হসপিটালের কোনো না কোনো বিভাগের কর্মচারী, অথবা তাদের কারো আত্মীয়। সক্কালবেলা কি ভরদুপুরেও সে আকন্ঠ মদ গিলে হোস্টেলের সামনে এসে হল্লা করত, আর বুক বাজিয়ে বলত -আমি হচ্ছি জে এম টি টি, জাতে মাতাল তালে ঠিক।
    সাউথ ব্লকের ঠিক পরেই একটা বড়সড় স্ক্র্যাপইয়ার্ড, রাজ্যের ভাঙাচোরা গাড়ি ও গাড়ির কঙ্কাল সেখানে ডাঁই করে রাখা থাকতো। তার পাশে কয়েকটি ঘর, কাদের ঠিক জানি না। ডোমেদেরই সম্ভবতঃ। সেই বসতিতে থাকতেন আমাদের বৌদি। দুপুর হলেই সবাই সার বেঁধে দাঁড়িয়ে যেত আমাদের বারান্দায় , বৌদির স্নানলীলা দেখবার জন্য। ভিড় কন্ট্রোলের জন্য বোধ হয় অন্য ব্লকের ছেলেদের কাছ থেকে টিকিট নেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল , ঠিক মনে নেই। বৌদি সানন্দে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দীর্ঘসময় ধরে নানান বিভঙ্গে স্নান করতেন ও ঐ দূর থেকে আমাদের সঙ্গে খোশগল্প করতেন। শেষে একদিন দাদা বাইরে বেরিয়ে এসে উত্তেজিত ভাবে হাত নেড়ে বেশ কিছু চোখা চোখা গালি বর্ষণ করাতে ব্যাপারটা বন্ধ হয়। গালির সঙ্গে আরো বিপজ্জনক কিছু জোটারও আশঙ্কা ছিল, নইলে অত সহজে পিছু হটবার ছেলে তারা নয়। এন আর এস সেসময় ( এখনো নিশ্চয়) ছিল দোর্দন্ডপ্রতাপ ডোম বাহিনীর সুশীতল ডাণ্ডার স্নেহচ্ছায়ায় লালিত, বড়সড় ঝামেলা হলে কাটা নল, রামপুরিয়া, হকিস্টিক, পেটো বেরিয়ে আসত।
    দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে নামলে কোথায় ড্রামের আওয়াজ শোনা যেত, তালে তালে মার্চ পাস্ট করছে কারা। ছোটবেলার মণি মেলা কিংবা ব্রতচারীর স্মৃতি মনে আসত, যদিও আমি কখনো সেসবে পার্টিসিপেট করিনি। নর্থ ইস্টের ছেলে এলিন সুন্ডাসের ঘর থেকে গীটারের আওয়াজ ভেসে আসত। ছাদে উঠে যেতাম , বিশাল ছাদ। স্নান শেষে লিরিল সাবানের সুগন্ধী ভাপ, গ্রীষ্মের বিকেলের হালকা হাওয়া, আঃ,প্রাণ জুড়োচ্ছে। অদূরে শিয়ালদা স্টেশন, ইঞ্জিনের ধসধস, যাত্রীর ব্যস্ততা ইত্যাদি।

    সন্ধে হলে যেতাম দাঁড়ে বসে চা খেতে। এন আর এসের দ্বিতীয় গেটের পাশেই ঘুপচিতে চায়ের দোকান। পাঁচিলের রেলিংয়ে বসে আমরা চা খেতাম, খেয়ে কাপ ওখানে রেখে দিলেই চলত, বাচ্চা এসে নিয়ে যেত। এই ঠেকটিকে আমরা বলতাম দাঁড়। সেখানে বসে নানাবিধ দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম চলত- লেডি এলিয়টের মেয়ে দেখা, টুনি নার্সদের দেখা। কত অজস্র মানুষ দেখা। সাদা চাদরে ঢাকা শরীর বেরিয়ে আসছে, বোজানো চোখে তুলসীপাতা, কপালে চন্দনের টিপ। একবার একদল লোক দেখেছিলাম, কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসছে, মেয়ে হয়েছে বলে। জীবন ও মৃত্যু স্রোতের মত চলেছে, আমরা সামনে বসে নির্মোহ চা খাচ্ছি। সন্ধ্যার কলকাতা আলোয় ঝলমল করে উঠছে।
  • সায়ন | 59.249.138.215 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:৫৪585118
  • সত্যিকারের ডাক্তারদের সঙ্গে এমন সাবলীল গদ্যকবিতার কোথায় যেন একটা লুকানো স্রোত বয়। চোখে দেখি না, শুধু বুঝি, যখন এঁরা কথা বলেন, বাক্যরচনা করেন। বেশ বৃদ্ধ এক চিকিৎসক, আশীর কোঠায় এখন, মা'এর প্রেশার বেড়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিল বলে ছুটে এসেছিলেন। পরে আমি দেখা করি। আমার বয়সের চাইতে বেশী বয়সের এক ডিস্পেনসারীর ছোট একটি কোণা ঘরে "পেশেন্ট" দেখেন যিনি একঘন্টার উপর। কালির দোয়াত দেখি টেবিলের একপাশে সেই আকাশী রঙের চেলপার্ক। আমার মাথায় তখন লম্বা চুল। দেখেই মন্তব্য করলেন, 'একী, এমন কাজী নজরুলের মত চুল রেখেছ কেন!?', আর তারপরে আমার উত্তরের তোয়াক্কা না করেই "বিদ্রোহী" আবৃত্তি করে গেলেন পুঙ্খানুপুঙ্খ, লাইন বাই লাইন। তাঁকে আমি বলেছিলাম ইন্দোদার কথা, লেখার কথা। সব শুনে হাসলেন শুধু।
    যোগসূত্র তো রয়েইছে। লুক্কায়িত অবগাহন যখন শীতল প্রাণ জুড়ায়, সেরকম কিছু জ্বলজ্যান্ত বাক্যের দাপাদাপি।
  • Abhyu | 85.137.9.18 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:২৪585119
  • ইন্দোদা অসাধারণ হচ্ছে।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:৪৫585120
  • বড় সুন্দর--
  • nina | 79.141.168.137 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:২৪585121
  • টপে তুল্লাম--
  • I | 24.99.195.220 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০৯:৩৯585122
  • ঠিকঠাক করে বাড়ির বাইরে থাকা বলতে '৯৮। এম ডি পড়তে পাটনা গেলাম। প্রথম কদিন ভেসে বেড়ানো। স্থায়ী আস্তানা নেই। লঙরটোলিতে বাঙালী ছেলেদের একটা ভাড়া বাড়ি ছিল। সেটা তখনি ওভারক্রাউডেড। তারি মধ্যে কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকা। তারপর ববিদা-দীপাংশুর সঙ্গে বন্দোবস্ত করে ভিখনাপাহাড়ীর বাঙালী বাড়িওলার দোতলায় উঠে আসা। বেশ আরামপ্রদ বন্দোবস্তই বলব। সে সময় বাঙালী ছেলেদের মধ্যে আমরাই সবচেয়ে আরামে ছিলাম বলে মনে হয়।
    পাটনা এসে প্রথম সার্বিক স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম। প্রথম কিছুদিন লঙরটোলির ভাতের হোটেলে সাদা খানা খেতাম। তারপর হোস্টেলের মেসে বন্দোবস্ত করে খাবার আনিয়ে নেওয়া শুরু হল। জয়নাথ বলে অল্পবয়সী একটি হাস্যমুখ ছেলে খাবার নিয়ে আসত। খাবার প্রায় কিছুই মুখে দেওয়া যেত না, আমার আবার নকড়-ছকড় ছিল বিস্তর। ববিদা যা পেত সবই হাসিমুখে খেয়ে নিত। মাংস বিশেষ প্রিয় খাবার ছিল ববিদা'র। বলত , একমাত্র কাঁচা মাংস ছাড়া আর যে কোনো ফর্মে মাংস দে, খেয়ে নেব। আধসেদ্ধ মাংসও। আমি মাঝেমধ্যেই খাবার ফেলতাম বলে বাকি দুজনেই বিশেষ ক্ষুব্ধ থাকত আমার ওপর। পরের দিকে এমন হয়েছিল, কোনো বিশেষ একটা খাবার -কি রে খাবি তো? বলে জিগ্গেস করে আমার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই পাত থেকে তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলত ববিদা। জয়নাথের দাদা আমাদের জল দিত, তাই তার নাম দিয়েছিলাম জলি। সেই সুবাদে জয়নাথের নাম হয়ে গেল বরফি।
    কুঁদরির তরকারি প্রায়ই থাকত। এবং লিট্টি। কিন্তু তেমন মনোহরণ স্বাদ ছিল না। আগে -পরে এর থেকে অনেক ভালো স্বাদের লিট্টি খেয়েছি। প্রায়ই একটা ঘন সাদাটে ঝোলের মধ্যে বেসনের গোল্লামত কি একটা বস্তু দিত, এখন আর তার নাম মনে পড়ছে না। মাছ থাকত সর্বদাই সর্ষেবাটা দিয়ে, কিন্তু ব্যতিক্রমহীন ভাবে তেতো ও বিস্বাদ হত। সেখান থেকে আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেল বিহারীরা মাছ রান্না করতে জানে না। আর থাকত ক্ষীর নামে ফোটানো দুধ-ভাতের একটি পদ, তাতে চিনির স্রেফ গন্ধটুকুই থাকত। কিছুকাল পরে খাবার কারোরই আর মনোমত না হওয়াতে একজন রাঁধুনীর বন্দোবস্ত করলাম ।
  • I | 24.96.131.37 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:০০585124
  • ভিখনাপাহাড়ীর সেই বিকেলগুলো। মছুয়াটোলি থেকে মাছ কেনা হত, লঙরটোলি থেকে সব্জি বাজার। লঙরটোলির কাছেই একটা বাজার ছিল, সেখানে সব দোকানদারই বিহারী মুসলমান। বেশ একটা মিনি লাহোর বলে মনে হত। আমাদের পাড়াটা ছিল হস্টেল-মেস পাড়া। যেদিকেই তাকাই বিভিন্ন ছিরি ও ছাঁদের মেস / হস্টেল চোখে পড়ত। বিহারের সকল প্রান্ত থেকে ছেলে-মেয়েরা পাটনা আসত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ও কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিতে। প্রচুর ছেলে -মেয়ে অবশ্য দিল্লী চলে যেত। বিহারীরা প্রতি বছর ভালো সংখ্যায় আই এ এস-আই পি এস ক্র্যাক করে একথা জানতে পেরে অবাক হয়ে গেছিলাম। এই তথ্য নোটবইতে ছিল না।
    কিন্তু বাদবাকি যা তথ্য ছিল, সেগুলো বেশ ভালোভাবে মিলিয়ে দিয়েছিল বাস্তবের বিহার। মূলতঃ মহাশ্বেতা দেবীর বইপত্তর ও মূলধারার গণমাধ্যমের সুবাদে তৈরী হওয়া ধারণা। বিহারে এসে সেসব মিলে যেতে থাকল। আমার গাইড ছিলেন বিখ্যাত ডাক্তার, উচ্চবর্ণীয় রাজপুত। ছ ফুটের ওপরে লম্বা, তেমনি প্রস্থ। ফর্সা। দেখলে ভয় লাগত। প্রবল রক্ষণশীল, প্রবল দক্ষিণপন্থী। খোলাখুলি দলিতদের সম্বন্ধে ডেরোগেটরি কাস্টিস্ট মন্তব্য করতেন। ওখানে কেউ এম ডি পাস করে গেলে নিয়ম করে ইউনিটের পার্টি দিতে হত। সেরকম কোনো এক পার্টিতে আমাকে ও আমার এক বাঙালী সহপাঠিনীকে সামনে বসিয়ে দিব্য বাঙালীদের গাল দিতে থাকলেন। তিনি ও তাঁর এক ডাক্তার বন্ধু। বাঙালী নিজেকেও শালা বলে, আসানসোল পেরোলেই বাঙালীর সব বীরত্ব ফুস হয়ে যায় এইসব। স্যাডিস্ট ছিলেন, র‌্যাগ করে মজা পেতেন।
    সরাসরি কাস্টিস্ট লাইন বরাবর বিভাজিত ছিল বিহারের সমাজ। ডাক্তার ও ডাক্তারী ছাত্ররাও এর কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। হস্টেলের ঘর বাঁটোয়ারা হত কাস্টের বেসিসে। এ কাস্ট -ও কাস্ট মারপিট দুর্লভ ঘটনা ছিল না। অনেকেই পদবী গোপন রাখত জাত চাপা দেওয়ার জন্য। সিনিয়রদের বস বলে ডাকতে হত। হাসপাতলে নিম্নববর্ণের রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনেরা এসে ডাক্তারদের হজৌর-মালিক-সরকার বলে ডাক্ত। চেয়ারে বসত না, মেঝেয় বসে থাকত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন