এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইস্কুলের গল্প

    Abhyu
    অন্যান্য | ১৩ জুন ২০১৩ | ৭৬১৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kd | 47.228.106.191 | ২২ জুন ২০১৩ ০৩:২৬613967
  • প্রচারের পোস্ট এই পড়লুম ৷ আয়োডিন চুরি করেছিলো শুভেন ডাক্তার আর চেয়ারে ছড়িয়েছিলো মনজিত ৷

    ইস্কুলের আর একটা ঘটনা মনে পড়ল ৷ একজন বিশেষ অতিথি এসেছেন - সেই উপলক্ষে দেবী (ব্যায়ামবীর) একটা পেরেকের বিছানায় শুয়ে বুকে তিনজনকে তুলে নিজের খ্যামতা দেখালো ৷ বিশেষ অতিথি হেবি ইম্প্রেস্ড - ওই ঘেমো দেবীকে বুকে জড়িয়ে আদর করে পিঠে পেরেকের দাগগুলোয় হাত বুলিয়ে দিয়ে খুব প্রশংসা করলেন ৷ ছাড়া পেয়ে দেবী নীতিনবাবুকে জিগালো - উনি কে স্যার? নীতিনবাবু বললেন, ওরে তুই ধন্য হয়ে গেলি, উনি সত্যেন বোস ৷

    দেবী ওখান থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কাছে পুরো মাস্তানের মতো বললো, দেখলি, তোরা দেখলি, নেতাজি কেমন আমায় জড়িয়ে ধরে ওয়েল ডান বললেন ৷
    আমরা দেবীকে ভালোই চিনতুম, তাই কেউই অবাক হইনি - কারেক্ট করে দিলেও কোনো লাভ হবে না জেনে চেষ্টাও করিনি ৷
  • Abhyu | 118.85.89.109 | ২২ জুন ২০১৩ ১২:২০613968
  • কুমুদি উইকেন্ডে সময় হবে?
  • প্রচার | 69.93.196.146 | ২২ জুন ২০১৩ ২২:৪০613969
  • [প্রচারের পোস্ট এই পড়লুম ৷ আয়োডিন চুরি করেছিলো শুভেন ডাক্তার আর চেয়ারে ছড়িয়েছিলো মনজিত ৷]

    বাঁচালি কাদা ( কেডি) । তবে শুভেন তখন ডাক্তারও ছিল না আর নামটাও শুভেন ছিল না । নাম ছিল শুভেন্দু , আমরা ডাকতাম শুভু । যাক রাজেন বাবুকে আর স্বর্গ থেকে এসে জবাবদিহি করতে হবে না । উনি দেননি , শুভু চুরি করেছিল ।
  • kumu | 69.178.49.209 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৬:৪৩613970
  • ইশকুলের গল্প,অভ্যুর কথায়-

    তা বুঝলে কিনা,আমাদের ক্লাশে দুটো দল ছিল-উত্তম-ফ্যান আর সৌমিত্র-ফ্যানদের।টিপিন বেলায় প্রায়ই দুদলে মহারণ বেধে যেত-চেঁচিয়ে -মেচিয়ে ঝগড়া,হাতাহাতি,শেষে খিমচাখিমচি, মারামারি পর্যন্ত গড়াত ব্যাপারটা।

    ক্লাশ টেনের বায়োলজি প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা শেষে ম্যাম বল্লেন,ল্যাব পরিষ্কার করা হবে,তোমরা বরম নীচে তোমাদের ক্লাশঘরে গিয়ে বোসোগে।তখনও জানিনা এই আপাতনিরীহ নির্দেশটি জীবনে কী বিপর্যয় বয়ে আনবে।

    যা হয়,ক্লাশে বসে থাকতে থাকত ফিসফাস,গুজুর-গুজুর হতে হতে লেগে গেল কুরুক্ষেত্র,পরদিন কেম প্র্যাকের বিভীষিকা ভুলে।
    -বিকেলে ভোরের ফুল দেখেছিস?এরে কয় অভিনয়?
    -অভিনয়?অপুর সংসারে সৌমিত্র শেষ কথা বলে দিয়েছে।
    -ঐসব আর্ট ফিলিম টিলিম পোষায় না বুঝলি।অমানুষ(বা অন্য কোন ফিলিম) দেখে আমরা বাড়ীশুদ্ধু লোক তো চোখের জল ধরে রাখতে পারিনা।
    -ঐ পাঁউরুটির মত মুখ দেখেও তোদের চক্ষে জল আসে?
    -তবে রে ঢেঙী,পেঁচী,দ্যাখ তবে-
    এখানে বলাপ্রয়োজন,আমরা সৌমিত্র অনুরাগিনীরা সংখ্যায় কম,সে কারণে শত্রুব্যুহের সকলের মুখ ভালভাবে দেখার ও সমুচিত উত্তর দেয়ার সুবিধের জন্য আমরা ডেস্কের ওপর উঠে দাঁড়িয়েছিলাম।ভয়ংকর মুখে ব্রততীকে তেড়ে আসতে দেখে কি মনে হল,আমি পিছিয়ে যাবার চেষ্টা করেই বুঝলাম,পেছনে কিছু নেই,অত্যন্ত অসহায়ভাবে আমি পড়ে যাচ্ছি।
  • kumu | 69.178.151.45 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:২১613971
  • পড়ে গেলে তেমন অসুবিধে ছিলনা,জীবনে ওঠাপড়া আছেই,কিন্তু কিছুটা পড়ার পর মনে হল বেশ নরম ,অসাধারণ বিদেশী সুরভিমাখা,সিল্কের শাড়ী পরা একটা কিছুর ওপর পড়লাম,আর সেই জিনিসটাও আমাকে শুদ্ধ ধীরে ধীরে মাটিতে বসে গেল।
    সকলের নিশ্বাসের শব্দ অব্দি যেন শোনা যাচ্ছে,এত ভয়ঙ্কর নীরবতা।
    প্রাণপণ সাহস সঞ্চয় করে একটাচোখ সামান্য ফাঁক করে যা দেখলাম,তাতে মনে হল বাকী জীবনটা চক্ষুবুজেই কাটাতে পারলে ভাল।

    প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কোলে আমি বসে আছি,সেই ম্যাডাম যাঁর গাড়ী বিবেকানন্দ রোডে পড়লেই সারা স্কুলে,(ইনক্লুডিং টিচার্স রুম ) পিনড্রপ সায়লেন্স নেমে আসে,যাঁর মুখের দিকে তাকানোর হিম্মত এইস্কুলে আঙুলে গোনা কয়েকটি মেয়ের হয়েছে,যাঁর চটির/গলার আওয়াজ পেলে এই স্কুল ছাড়িয়ে স্কটিশের ছেলেরা পর্যন্ত শান্ত হয়ে যায়।

    অনন্তকাল পর,মানে তাই মনে হয়েছিল,কয়েকজন ধরেটরে আমায় দাঁড় করিয়ে দিল,তারপর ভূপতিত ম্যাডামকে সভয়ে দূর থেকে দেখে নিয়ে অন্য টীচারদের ডাকতে গেল।
    ততক্ষণে এইগুলো ভাবা হয়ে গেছে-
    স্কুল থেকে বের করে দেবে,
    হেন্স,বাড়ী থেকেও।
    ছোটমাসীর বাড়ী আপাতত আশ্রয় নিতে হবে,কিন্তু ব্যারাকপুর অবধি যাওয়ার পয়সা?
    বাকী জীবনটা তবে বাসন মেজেই কাটবে।
    অন্য টীচাররা আসার আগেই অবশ্য মেডাম উঠে পড়েছিলেন।তাও ধরেটরে নিয়ে গেলেন সবাই,কিন্তু পরিষ্কার শুনলাম,যেতে যেতে কাউকে বল্লেন"উত্তম আর সৌমিত্রর তুলনা?'
    আর একটু পরে ইলেভেনের একটা দিদি এসে বলে গেল,টেন-বির সব্বাই দুশোবার লিখবে,"কোনদিন ক্লাশে সিনেমার হিরোদের নিয়ে ঝগড়া করব না।"
  • Lama | 213.99.212.53 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৩৭613972
  • উরেব্বাবারে! হাসতে হাসতে হেঁচকি উঠে গেল
  • শ্রী সদা | 132.176.98.243 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৩৯613973
  • অসাম অসাম ঃ)
  • প্রচার | 69.93.212.104 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৪৭613974
  • দারুন ভাল লাগ্ল । সবচেয়ে ভাল নীচের লাইন ।

    [পড়ে গেলে তেমন অসুবিধে ছিলনা,জীবনে ওঠাপড়া আছেই,কিন্তু কিছুটা পড়ার পর মনে হল বেশ নরম ,অসাধারণ বিদেশী সুরভিমাখা,সিল্কের শাড়ী পরা একটা কিছুর ওপর পড়লাম,আর সেই জিনিসটাও আমাকে শুদ্ধ ধীরে ধীরে মাটিতে বসে গেল।]
  • Lama | 213.99.212.53 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৫২613975
  • আমাদের ছিলেন সুধাংশু স্যর। চেয়ারে বসে লাস্ট বেঞ্চ অবধি নাগাল পেতেন না। তাই লাস্ট বেঞ্চের বাপির অপরাধের শাস্তি হিসেবে ফার্স্ট বেঞ্চের রাণাকে প্রবল চপেটাঘাত করতেন, আর মুখে বলতেন 'অ্যাই বাপি!' সজ্ঞানে ঘোষণাও করেছিলেন যে, নাগাল পান না বলেই উনি এরকম করেন, আর কোনো কারণ নেই। আর কৈফিয়ৎও দিয়েছিলেন, 'নামটাতো বাপিরই বলেছি।'
  • 4z | 209.119.232.212 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৫৫613822
  • ওরে বাবারে কুমুদি, হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। উফ্ফ্ফ। আরও হোক।
  • Lama | 213.99.212.53 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৭:৫৭613823
  • আরেকবার সুধাংশু স্যরের ক্লাস থেকে 'স্যর, জল খেয়ে আসছি।' বলে বারবার বেরিয়ে যাচ্ছি, আর এদিক ওদিক দু তিন মিনিট আড্ডা মেরে 'আসব স্যর?' বলে আবার ঢুকছি। স্যর বোর্ডে লেখায় ব্যস্ত থাকায় তাকাচ্ছেন না, আর ভাবছেন আলাদা আলাদা ছেলে ঘন ঘন ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থবার যেই বলেছি 'আসব স্যর?', অমনি 'তুই তাহলে একটাই' বলে যে ঘটনা ঘটালেন সেটা ব্যাসদেব পরবর্তীকালে 'কীচক বধ' নাম দিয়ে মহাভারতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
  • Lama | 213.99.212.53 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৮:০৭613824
  • তারপর মণিময়বাবুঃ

    তরা আজকালকার পোলাপান ত পড়াশুনাই করস না। শুন তবে। zeইবার আমি বি এ পরীক্ষা দিলাম, হেইবারের কথা। পরীক্ষার আর এক সপ্তাহ বাকি। একদিন সকালে বই লইয়া বইলাম। পড়তে পড়তে zaখন হুঁশ ফিরল তখন দেখি চাইরদিকে অন্ধকার আর তুলসীতলায় শঙ্খধ্বনি শুনা zaaয়। ভাবলাম, আzকে সারাদিন সলিড পড়া হইল। আমার মায়ে দেখি আমারে কয়, 'বাবুসোনা, তুমি তিন দিন ধইরা পড়তাসো।'

    আমার পাশ থেকে অমিতাভ, 'স্যর, সারা বছর না পড়লে এই হয়।'
  • byaang | 132.167.229.36 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৮:০৯613825
  • উফ্ফ কুমুদি। ঃ-))))))) দারুণ এটা। আরো বল তোমার ইস্কুলের গল্প।
    লামার গল্পগুলো-ও দারুণ।
  • san | 213.88.22.135 | ২৪ জুন ২০১৩ ১৮:১০613826
  • কুমুদি ব্যাপক।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৪ জুন ২০১৩ ২০:৪৩613827
  • কী সব গল্প!!
  • | 24.97.67.184 | ২৪ জুন ২০১৩ ২০:৪৩613828
  • হা হা হা হা ব্যপক কুমু।
  • sosen | 125.244.237.23 | ২৪ জুন ২০১৩ ২০:৪৬613829
  • দা-আরুণ।
    ও ফজ্জি, বকুলদির গপ্প বল কয়েকটা।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ২৪ জুন ২০১৩ ২০:৫৪613830
  • পাগলা ক্ষীর খা। :)
  • Abhyu | 118.85.89.109 | ২৫ জুন ২০১৩ ০৯:৫০613831
  • অসাম, কুমুদি আরো হোক। লামাদাও।
    টেঁপির আর তার বন্ধুর গল্পও হোক।
  • Lama | 213.132.214.156 | ২৫ জুন ২০১৩ ১৫:৩২613833
  • জীবনবিজ্ঞানের সুশীলবাবুঃ ক্লাসে শান্তিভঙ্গকারী ছাত্রদের ডেকে এনে সামনে দাঁড় করিয়ে অভিনয় করাতেন। কিসের অভিনয়? না, অপরাধ সঙ্ঘটিত হবার মূহুর্তে স্যর যে প্রাণী বা উদ্ভিদ সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন সেই প্রাণী/ উদ্ভিদের ভূমিকায়।

    উদাহরণ, 'মাকড়সা' চ্যাপটার পড়ানোর সময় নির্মলকান্তি পাল যদি লাস্ট বেঞ্চে ফিসফিস করে কথা বলতে গিয়ে ধরা পড়ে, তাহলে পরের দৃশ্য হবে- ডায়াসের সামনে নির্মলকান্তি পাল অদ্ভুত অষ্টাবক্র ভঙ্গিতে হামাগুড়ি দিচ্ছে আর সুশীলবাবু পড়িয়ে চলেছেন, 'এঁইটা এঁকটা মাকড়সাঁ। এইঁটা কঁথা বঁলতে পাঁরে নাঁ' ইত্যাদি।
  • lcm | 34.4.162.218 | ২৫ জুন ২০১৩ ১৫:৩৭613834
  • হা, হা, অমানুষে উত্তমকুমারের পাউরুটির মতন মুখ!
  • kumu | 69.178.38.186 | ২৫ জুন ২০১৩ ১৫:৫৭613835
  • প্রিন্সি ম্যাডাম উত্তম/সৌমিত্র কার ফ্যান ছিলেন এইটে জানা যায় নি।
    লামার লেখা সম্বন্ধে কীইবা বলি।দুর্দান্ততম বল্লে একটুখানি বলা হয়।থেমো না লামা-
  • jhumjhumi | 127.194.244.68 | ২৫ জুন ২০১৩ ১৭:২৯613836
  • উফ্ফ্‌, এই টইটা পড়লে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়। কুমুদি দারুণ!! লামার জল খেতে যাওয়ার গল্পতে মনে পড়ল , আমাদের ভূগোল ক্লাসে জল খেতে গিয়ে আড্ডা মারার কথা। আমাদের ভূগোল ক্লাসটা ছিল অখাদ্য। দিদিমণি এসে কোন চ্যাপ্টারের খানিকটা দাগিয়ে দিয়ে বলতেন পড়, আর তিনি চুপটি করে উদাস মুখে বাইরের আকাশ দেখতেন। ক্লাস ফাইভ টু টেন এর কোন ব্যাত্যয় হয় নি। আমরা যখন একটু বড় হলাম, তখন উনি ক্লাসে এলেই মিনিট পাঁচেক পরে জল খেতে যাবার নাম করে দুজন বেরিয়ে যেতাম, বেশ খানিক আড্ডা মেরে আবার ফিরতাম। মোটামুটি সকলেই চান্স পেত , বেশিজন তো ছিলাম না।
  • kiki | 69.93.242.156 | ২৫ জুন ২০১৩ ১৮:৫২613837
  • ওহ! দারুন টই।

    এটা অবশ্য কলেজের।

    ক্ষুদে টেস্ট পরীক্ষায় বরে বরে ছোটবাইরে যাচ্ছে আর মুচ কাঁচুমাচু করে ফিরে আসছে। শেষে স্যর আর না পেরে বল্লেন, কিরে, কিছুই কমন পরছে না? ক্ষুদেও প্রয় ভ্যাঁ করে দেয় আর কি! না স্যর কিচ্ছু না।

    অরেকবার , সেটা স্কুলেই। অংশুমান, খ্যাঁড়া কাঠি, কিন্তু বেজায় লম্বা, রিঙ্কু কে ( আমাদের সময়ের মাধুরী দিক্ষিত বলা হত তাকে) বল্লো, শিগ্গিরি হ্যাঁ বল, নইলে লাফ দেব। তো সেকি আর কেউ দেয়, রিঙ্কু কিছুই বল্লো না। আর অংশুমান ঝপাং করে ঝাঁপ দিলো। নীচের ক্লাস থেকে পুলীন(?) স্যর সর্ট মারবার জন্য বারান্দা থেকে নেমেছেন , তো তার সামনেই পরলো গিয়ে। স্যর প্রচন্ড ঘাবরে জিগালেন, মাটি ফুঁড়ে না আকাশ থেকে উদয় হলি?
  • byaang | 132.172.195.189 | ২৫ জুন ২০১৩ ২০:১৮613838
  • সিস্টার মোনিকা।
    নামটা শুনলেই পুরনো ছাত্রীরা আজও নড়েচড়ে বসে। আর সব্বার ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে যায়। সব্বারই একটাই ডায়লগ মনে পড়ে, "এ মেয়ের মনে শয়তান ঢুকেছে!" চোখদুটো গোলগোল করে হিসহিসে গলায় কথাটা বলতেন। যে মেয়ে সদ্য সদ্য চিহ্নিত হয়েছে শয়্তানের আশ্রয়্দাত্রী হিসেবে, সে হয়তো একটু আগে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিমগাছের মাথায় কাকের বাসা দেখছিল, অথবা পাশের রোয়ে বসা বন্ধুর চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় ফিক করে একটু হেসে ফেলেছিল, আর ব্যাস অম্নি। অম্নি সিস্টার মোনিকার চোখে পড়ে গেছে তার কুকর্ম (মানে ঐ উদাস হওয়া আর কি!) । আর উনিও ওনার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে সেই মেয়ের মনে ঘাপটি মেরে থাকা শয়তানকে দেখে ফেলেছেন। সিস্টার মোনিকা মারতেনও না, বকতেনও না, শুধু ওনার সিগনেচার ডায়্লগটি বলে তারপর পাক্কা আধ ঘন্টা ধরে প্রভু যীশুর বাণী শোনাতেন যাতে সেইসব শুনে যীশুর ভয়ে কাতর হয়ে শয়তান সেই মেয়ের দেহ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ঐ আধ ঘন্টা ধরে জ্ঞানটি শোনার ভয়ে কোনো ছাত্রীই ওনাকে তেমন পছন্দ করত না।
    ক্লাস সেভেন বির থার্ড পিরিয়ড ভূগোল ক্লাসে সেদিন ভূগোলের দিদি আসেন নি। সামনেই পুজো আসছে। ঝকঝকে আকাশ। কারুরই পড়ায় তেমন মন নেই সেদিন। নীচে হলঘরে কোনো এক আসন্ন প্রোগ্রামের জন্য একদল মেয়ে রিহার্সাল দিচ্ছে। অধিকাংশ টিচার তারই তদারকিতে ব্যস্ত। সেভেন বির কিছু মেয়েও অংশ নিচ্ছিল সেই প্রোগ্রামে। বাকিরা ক্লাসে বসে গুলতানি করছিল। ভালো ই সময় কাটছিল। এমন সময়ে সব্বার মাথায় বজ্রপাত। সিস্টার মোনিকা লম্বা বারান্দায় টহল দিতে গিয়ে আবিষ্কার করে ফেলেছেন এই ক্লাসে কোনো টিচার নেই, মেয়েরা হাসিগল্পে সময় কাটাচ্ছে। এমন সুযোগ কি উনি ছেড়ে দিতে পারেন! অম্নি উনি ক্লাসে এসে চেয়ারে বসলেন। কী ক্লাস? মেয়েরা উত্তর দিল "ভূগোল"। উনি বললেন "বই বার করে শেষ যে চ্যাপ্টারটা পড়ানো হয়েছে, সেইটা মন দিয়ে পড়।" কয়েকজন চালাকচতুর ছাত্রী অম্নি উঠে দাঁড়াল। দুইজন বলল "জল খেতে যাব" আর দুইজন বলল "বাথ্রুম যাব।" ক্লাস থেকে একসঙ্গে চারজনের বেশি জল খেতে বা বাথরুমে যেতে পারত না একসাথে। থার্ড পিরিয়ডে এগুলো করতে যাওয়াই যায়, এমন কোনো আইন নেই, যে আইনে উনি তাদের জল খেতে যাওয়া আর বাথরুমে যাওয়া রোধ করতে পারেন। যেতে দিতেই হল। বাকিরা ভাবল "ফিরুক এই চারটে। তারপরে আমরাও কেটে পড়ব, জল খাওয়া আর বাথরুমের নাম করে। একবার ক্লাস থেকে বেরোতে পারলে সোজা একতলায় হলঘরে চলে যাব, আর ফিরছি না পিরিয়ড শেষ না হলে!" এদিকে যে চারজন বেরিয়েছে, তাদের আর ফেরার নাম নেই। বোঝা গেল তারা অলরেডি হলঘরে চলে গেছে, সহজে আর এই পিরিয়ডে তারা ক্লাসমুখো হবে না। এবার চার-পাঁচজন বুদ্ধি করে বলল "সিস্টার আমাদের রিহার্সাল আছে, ছোটকৃষ্ণাদি গান তুলতে যেতে বলেছেন প্রাইমারির টিচার্সরুমে। যাই?" একজন শিক্ষিকা হয়ে আরেকজন শিক্ষিকার নির্দেশ অমান্য করতে তো আর শেখানো যায় না মেয়েদের, তাই এদেরও যেতে দিতেই হল। ক্লাসে বাকি যারা ছিল এবার তাদের বেজায় মুশকিল। আর কোনোরকম অজুহাত নেই বাইরে যাওয়ার। এই ক্লাস থেকে কেটে পড়ার। সব কটা এক্জস্টেড।
    এমন সময়ে এক অতিচালাকের দিমাগের বাতি জ্বলল। সে ভূগোল বইটা দেখিয়ে বলল "সিস্টার একটা জায়্গা বুঝতে পারছি না। স্টাডিতে বোধ হয় মিনতিদি আছেন (নাইনের ভূগোল টিচার), ওনাকে জিজ্ঞেস করে বুঝে আসি?" এবার সিস্টার মোনিকার বেজায় সন্দেহ হল যারা জল খেতে আর বাথরুমে গেছিল, তারা এখনো ফেরে নি, আর এমেয়ে তো পুরনো পাপী, একে একবার ছাড়লে এ নির্ঘাত ফিরবে না আর। উনি বললেন "বই নিয়ে এস আমার টেবিলে"। ছাত্রী আর কী করে, বই নিয়ে গেল। সিস্টার বললেন "কোন জায়্গাটা বুঝতে পারছ না? কোন প্যারা টা? জোরে জোরে রিডিং পড়, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।" ছাত্রী ভাবে, এ তো মহা জ্বালা হল, কিছুতেই বাইরে যেতে দেবে না! কী করি এবার? এমন সময়ে আরো একবার দিমাগের বাতি জ্বলল, পেয়েছি! সিস্টার তো বাংলা পড়তে জানেন না, ভুল পড়লে ধরতে পারবেন না। আবার বোঝাতেও পারবেন না। সে তাই রিডিং পড়ার সময়ে বুদ্ধি করে দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে পড়ল উত্তরদক্ষিণ মৌসুমি বায়ু, যাতে সিস্টারের সব গুলিয়ে যায় আর সিস্টার হাল ছেড়ে দিয়ে তাকে মিনতিদির কাছে পাঠাতে বাধ্য হন। যেই না মৌসুমি বায়ুর দিক গুলিয়ে দেওয়া, অম্নি সিস্টার বাজের মতন ফেটে পড়লেন, "এ মেয়ের মনে শয়তান ঢুকেছে। নিজের মাতৃভাষা ঠিক করে পড়তে জানে না। দেখে দেখে ভুল পড়ে!" ছাত্রী অবাক হয়ে আর্তচিৎকার করে "সিস্টার আপনি বাংলা পড়তে জানতেন না যে! শিখে নিয়েছেন এর মধ্যেই?" সিস্টার বলেন "হ্যাঁ, আমি জানি। এ আমার নিজের ভাষা নয়, কিন্তু শিখে নিয়েছি। কিন্তু তুমি? বাংলা না তোমার নিজের ভাষা!" আবার উনি নিশ্চিৎ হয়ে যান, মনে শয়তান বাসা না বাঁধলে কারুর পক্ষে এত বড় ভুল পড়া সম্ভব নয়। অতঃপর আবার প্রভু যীশুর মহিমাকীর্তন এবং শয়তানকে বিতাড়ন।
  • | 24.96.176.89 | ২৫ জুন ২০১৩ ২০:২৬613839
  • :-))))) এই শেষের মেয়েটা নির্ঘাৎ ব্যাঙ।
  • ন্যাড়া | 213.83.248.37 | ২৫ জুন ২০১৩ ২০:৩৩613840
  • আপনারা কেউ ক্লাসের মধ্য নাইনটি-দেওয়া বা নাইনটি-মারা কাকে বলে জানেন?
  • pharida | 192.64.1.136 | ২৫ জুন ২০১৩ ২১:১৬613841
  • ক্লাস নাইন।
    হাফ ইয়ার্লির অঙ্ক খাতা বেড়িয়েছে – পুরো হুব্বা প্রায় সবাই। জনাপাঁচেক চল্লিশের ওদিকে ত্রিশ থেকে চল্লিশে আরো জনা দশ। বাকিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

    একশোয় এগার পেয়ে ব্যাজার মুখে অয়ন মাঠে নেমে দেখল মৌননীল একা একা পায়ে রাবার বল নাচিয়ে যাচ্ছে – এর আগে কাউকেই সে প্রশ্ন করতে সাহস করে নি – মৌনকে দেখে বল্ল – কি রে কত পেলি?
    মৌন মৌন হয়েই বল নাচাচ্ছে, অফুটে বল্ল - কিছু না
    অয়ন শুনতে পায় নি কিছুক্ষণ পরে - কি রে বল না?
    – মৌন – কিছু পাইনি।
    -কি রে বল না বে, আমিও তো দেখ মাত্তর এগার পেয়েছি।
    কাঁহাতক সহ্য হয় এবার। বল নাচাতে নাচাতে হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে গাঁতিয়ে শট মারল স্কুলের দেওয়ালে – তারপর কোমরে হাত দিয়ে বল্ল – বললাম তো কিছু পাইনি কতবার বলব শূন্য, হ্যাঁ শূন্য !
  • kumu | 69.178.63.194 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১৬:৪১613842
  • সিকি,এইটা?
  • b | 135.20.82.166 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১৯:৩৮613844
  • ব্যাংএর গল্প শুনে একটা কলেজের গল্প মনে পড়ল। অবশ্য আমার নয়।
    সেন্ট জেভিয়ার্সের অংকের প্রবাদপ্রতীম অধ্যাপক ফাদার গোরে। বেলজিয়ান। এখন অনেক পন্ডিতেরই যে সমস্যা, ফাদার গোরে নাকি শিক্ষক হিসেবে বেশ খারাপ ছিলেন। তবু লোকজন দাঁতে দাঁত পিষে ক্লাস করত।

    একদিন এরকম ভয়াবহ দুর্বোধ্য এক ক্লাসের পরে, ফাদার বেরিয়ে যাচ্ছেন ক্লাস থেকে, একজন পিছনের বেঞ্চি থেকে চেঁচিয়ে বলল ঃ 'ফাদার গোরে অংক জানে-এ-এ না-আ-আ'। উনি তপেছন ঘুরে বললেন " ফাদার গোরে অংক জানে না, কিন্তু বাংলা জানে'।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন