এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে

    সে
    নাটক | ২১ অক্টোবর ২০১৩ | ৫৪৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 203.108.233.65 | ২১ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৪৮620747
  • খেরোর খাতা আমার নেই। তাই শুরু করছি নতুন টই। এখানে থাকবে কলকাতাকে নিয়ে/বা নিয়ে গল্প এবং ঘটনা। উদ্দেশ্য এইরকমই - তবে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
  • সে | 203.108.233.65 | ২১ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:১০620816
  • শোনা কথায় বিশ্বাস করবেন না।

    একবার একটা ছিঁচকে চুরির মামলার জন্যে সাক্ষীকে তলব করা হয়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছাপোষা বাঙালী মধ্যবিত্ত গড়গড় করে বলে চলেছে ম্যাজিস্ট্রেটকে - হুজুর, চোরটা শেষরাতে পাঁচিল টপকে ওবাড়ির উঠোনের পাশে চৌবাচ্চার গা ঘেঁষে লাফ দিয়ে নেমে এলো। তারপরে গেঁড়ি মেরে এগিয়ে বাঁহাতে বৈঠকখানার দরজা খোলা পেয়ে সেখানে ঢুকে ছিলো। সেখানে টেবিলের দেরাজ থেকে রিস্টওয়াচ চুরি করে, আরো টুকিটাকি যেমন ধরুন টাকা পয়সা এইসব হাতিয়ে ও সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল দোতলায়। সিঁড়ির মুখটায় শুয়ে ছিলো বাড়ির চাকর। তাকে ডিঙোতে গিয়ে পায়ের ধাক্কা লেগে গিয়েছে তাতেই চাকরটা জেগে গিয়ে চেঁচাতে শুরু করেছে। তারপরে তো..
    এই অবধি শুনবার পরে ম্যাজিস্ট্রেট বললেন - আপনি নিজে দেখেছেন এসব?
    - আজ্ঞে না।
    - তবে এত সব বলছেন কীকরে?
    - আমি দেখিনি, তবে শুনেছি।
    ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষীকে তৎক্ষণাৎ বাতিল করে দিয়ে বললেন "শোনা কথায় বিশ্বাস করবেন না"।
    সাক্ষী অপ্রতিভ হয়ে কাঠগড়া থেকে নেমে যেতে যেতে বলল, কি বিটকেল ম্যাজিস্ট্রেট রে বাবা!
    ম্যাজিস্ট্রেটের কানে কথাটা গেছে, তিনি সাক্ষীকে ডেকে বললেন,
    আপনি আমাকে কিছু বললেন?
    - আমি? কই কিছু বলিনি তো!
    - বাঃ আমি এইমাত্র নিজের কানে শুনলাম।
    সাক্ষী দৃঢ় গলায় বললেন - শোনা কথায় বিশ্বাস করবেন না।
  • ঈশান | ২১ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:০৮620827
  • খাতা তো লগিন করলেই খোলা যাবে। ইচ্ছে হলে খুলতেই পারেন।
  • সে | 203.108.233.65 | ২১ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:২৯620838
  • বাঙাল মেয়ের কাণ্ড

    ১৯৫০ এর কোনো এক বিকেলে কলেজ শেষে মেয়েটা ট্রামে করে বাড়ি ফিরছিল। পার্কসার্কাস থেকে ট্রামে করে প্রথমে যাবে হাওড়া। হাওড়া থেকে বাসে করে রামরাজাতলা। কডাক্টর এসে টিকিটের পয়সা চাইতেই সে রুমালের গিঁট খুলতে গিয়ে লক্ষ্য করে গিঁট কখন খুলে গিয়ে পয়সা কোথায় পড়ে গিয়েছে। হাতের বইপত্তরের মধ্যে পয়সা রাখবার আর কোনো জায়গা নেই, খুঁজে দেখবার জন্যে কোনো মানিব্যাগ, থলে, কিছুই ছিলো না। অগত্যা কণ্ডাক্টরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সে।
    - টিকিট, টিকিট!
    তাড়া খেয়ে ষোলো বছরের মেয়েটা ঘাবড়ে গিয়ে বাঙাল উচ্চারণে জানিয়ে দেয় পয়সা সে খুঁজে পাচ্ছে না। টং করে ঘন্টা নেড়ে দেয় কন্ডাক্টর। ট্রাম থেমে যায়। মেয়েটাকে নেমে যেতে হয়। নামবার পরেও সে শুনতে পেয়ে যায় কে যেন বলে ওঠে - উঃ এই রিফিউজিগুলোর জ্বালায় একেবারে...
    ট্রাম থেকে নেমে মেয়েটা ভাবতে শুরু করে এখন সে ফিরবে কেমন করে? রাস্তা পুরোটা চিনে ফিরতে পারবে কি? সে নাহয় লোকজনকে জিগ্যেস করে করে ফেরা যাবে, কিন্তু পার্ক সার্কাস থেকে রামরাজাতলা - অতটা হাঁটতে পারবে তো?
    চট্ করে মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় - কাছেই তো ময়দানের ওপারে দরগা রোডে তার মায়ের মামার বাড়ি। সেখানে গিয়ে কারো কাছে বললে কেমন হয়?
    হেঁটে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেখানে গিয়ে কড়া নাড়ে সে। মায়ের বড়োমামী দরজা খুলে খুব যত্ন করে ভেতরে নিয়ে যান। হঠাৎ কেন এসেছে সে তাও জিগ্যেস করে নেন। মেয়েটি বলে দেয় পয়সা হারিয়ে যাবার কথা। দু আনা পয়সা ছিলো রুমালে, দু আনাই পড়ে গিয়েছে। ট্রাম থেকে যে নামিয়ে দিয়েছে সেটা অবশ্য চেপে যায়। লজ্জায় মামীর কাছে হাত পেতে দুটো আনা কিছুতেই চাইতে পারে না। মামী তো নিজে থেকেই দুটো আনা হাতে ধরিয়ে দিতে পারত, আহা একেবারে নয় - ধার হিসেবে। এক গেলাস জল খেয়ে নিয়ে হাঁটা দেয় রামরাজাতলার দিকে। এবার সে পায়ে জোর পেয়ে গিয়েছে।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৪:২০620849
  • ভূতের টই থেকে

    দিদি জামাইবাবু ভাগ্নে ভাগ্নীকে নিয়ে বেড়াতে গেছি পাহাড়ে। জামাইবাবু ড্রাইভিং জানে না। সারাটা পথ একটানা ড্রাইভ করে পৌঁছলাম গন্তব্যে। পাহাড়ি শহরের থেকে একটু দূরে একটা দোতলা বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো। পৌঁছেছি দুপুরে। কেয়ারটেকারের কাছ থেকে বাড়ির চাবি নিয়ে ঘর খোলা হলো। একতলায় একটাই ঘর। পাশে রান্নাঘর, বাথরুম। দোতলায় দুটো ঘর ও লাগোয়া টয়লেট। আমি রইলাম একতলায়, দিদি ওরা সব দোতলায়। দিদি রান্নায় লেগে গেল। জামাইবাবু ড্রাইভ না করেও টায়ার্ড, বিছানা পেয়েই টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। বাচ্চাদুটো হৈ চৈ করছে। ভাগ্নেটা ছোটো বছর সাতেক তখন। ভাগ্নী ওর চেয়ে দুবছরের বড়ো। দুজনেই বাইরে ঘুরে পাহাড়ে হেঁটে ঘুরতে চায়। আমার ভালোমতন খিদে পেয়ে গেছে - দিদি খিচুরি চাপালো। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে সামনের রাস্তা ধরে উৎরাইয়ে কিছুটা ঘুরলাম। ফের চড়াই ধরে ওপরে ওঠা। ও রাস্তায় গাড়ি চলে একপাশে খুব খাড়া খাদ। বাড়ি ফিরে পেট ভরে খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি। কাছাকাছি লোকালয় বলতে রাস্তার ওপারে ঝোপের পেছনে দূরে দেখা যায় আলো। সম্ভবত গ্রাম। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। দুপুরের খিচুরি খেয়ে পেট ভার। তবুও বাচ্চাদের কথা ভেবে দিদি ফের রান্না করতে শুরু করে দিলো। প্রথমেই চা। আমি চা নিয়ে দোতলায় জামাইবাবুর সঙ্গে গল্প করতে গেলাম। দোতলায় উঠবার সিঁড়ি কাঠের। অর্ধেকটা উঠে একটু ঘুরে পাশে একটা বন্ধ দরজা, সেটা অবশ্য ব্ন্ধ ফের আরো আট দশ ধাপ উঠলে তবে দোতলা।
    জামাইবাবুর সঙ্গে একদান দাবা খেললাম। আমি জঘন্য খেলি। তাসের প্যাকেট ছিলো সঙ্গে কিন্তু দুজনে খেলা হয় না। বাচ্চারা খেলতে জানে না। কিছু পুরোনো ম্যাজিক দেখাবার চেষ্টা করলাম। তারপরে ওদিকে দিদি ডাকছে। সকলে মিলে নীচে আমার ঘরে বসেই খাওয়া দাওয়া সারলাম। ওখানে রাত আটটা সাড়েআটটার সময়েই মনে হচ্ছিলো যেন নিশুত রাত।
    খাওয়া দাওয়া সেরে ওরা সব ওপরে চলে যাচ্ছে কারন পরদিন সকাল সকাল সব সাইট সীইং এ বেরোবো। দিদি খুবই ক্লান্ত। ভাগ্নীও ঘুমে ঢলে পড়ছে। জামাইবাবুও তথৈবচ। এদিকে ভাগ্নেটা সবচেয়ে ছোটো হলে কি হবে, ডিনারের পরে ঘুম কেটে গেছে। বলছে - মামা চলো না একটু হেঁটে আসি। তো মোটাসোটা পুলোভার পরিয়ে ওকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি, দেখি দেড়তলার সেই দরজাটা অল্প খোলা। ভেতরে লাইট জ্বলছে। বুঝলাম কেয়ারটেকার ওখানেই থাকে। আমরা যখন ওপরে ছিলাম তখন হয়ত এসেছে।
    ভাগ্নেকে নিয়ে এবার চড়াইয়ে কিছুদূর হাঁটলাম দূরে কয়েকটা বাড়ি, হোটেল দেখা যাচ্ছিলো। এই সুযোগে সিগারেট খেলাম। জামাইবাবুর সামনে সিগারেট খাইনা। রাত্রে আকাশ পরিষ্কার, নীচে মেঘ নেমে গেছে ঐ দূরের গ্রামগুলোর মধ্যে। সিগারেট শেষ করে আবার উৎরাই ধরে মামা-ভাগ্নে মজার মজার ধাঁধা বলতে বলতে ফিরে এলাম। ভাগ্নে দোতলায় উঠে গেল। আমি আধ সিঁড়ি অবধি এগিয়ে দিতে গিয়ে দেখি সেই দরজাটার একটা পাল্লা অনেকটাই খোলা। ভেতরে একটা চেয়ারে দরজার দিকে পেছন ফিরে একজন লোক বসে , তার সামনে টেবিল, কিছু লিখছে। হয়ত হিসেব পত্র।
    বুঝলাম ও ই গিরীশ (কেয়ারটেকার)। ওকে ডাকিনি। তারপরে নীচে এসে সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। ভোরে ঘুম ভাঙল দিদির চা তৈরী করবার আওয়াজে। উঠে দেখি বাইরে আমার গাড়িটা শিশিরে ভিজে রয়েছে। প্রচন্ড ফগ। ভিজিবিলিটি খুব কম। কুয়াশা না কাটলে গাড়ি নিয়ে বেরোনো খুব রিস্ক।
    এমন সময়ে দরজায় ধাক্কা। সদর খুলে দেখি গিরীশ। আমি তো অবাক।
    ওকে তো বাড়ির ভেতরেই দেখলাম রাত দশটা নাগাদ, ও বেরিয়ে গেলেও দরজা আবার ভেতর থেকে বন্ধ করল কে? অবশ্য রাতে ওর মুখ আমি দেখিনি অন্য কেউ হতে পারে।
    খটকা কাটাতে মাঝসিঁড়িতে উঠে দেখি সেই দরজা বন্ধ এমনকি একটা তালাও ঝুলছে।
    গিরীশ বলল ঐ ঘর বন্ধই থাকে সবসময় ওটার চাবিও ওর কাছে এখন নেই। ভাগ্নে ঘুম থেকে উঠে আমার কথার সমর্থন করল। ও ও দেখেছে কাল দরজা খোলা, লাইট জ্বলছে একজন লোকও ছিলো চেয়ারে বসে টেবিলে ঝুঁকে লেখালেখি করছিলো।
    কিন্তু বাকিরা এটা বিশ্বাস করল না।
    ঐ একদিনই। তারপরে আরো দিন সাতেক থেকেছি কিন্তু ঐ ঘর সবসময় বন্ধই ছিলো।
    এটাকে যদি ভূতুড়ে কান্ড বলা যায়, তবে এটা ভূতের গল্প। চল্লিশ বছর আগের গল্প।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৫:২৯620860
  • ভজুদার মোকাসিন

    বাবা ওঁকে ডাকত ভজুদা বলে, মা ডাকত ডক্টর সরকার বলে, আমরা বাড়ীর বাচ্চারা ওঁর সামনে ওঁকে ভজুদা-দাদু বলতাম, আড়ালে ভজুদা। আদতে উনি ছিলেন আমার দাদুর চেয়েও বড়ো, দাদুর সঙ্গে একই কলেজে পড়েছেন।
    ভজুদা প্রায় ন দশ বছর সময় নিয়েছিলেন এম্বি পাশ করতে। কতবার যে ফেল করতেন নিজেরও মনে নেই। পরবর্তীকালে ডাক্তার হিসেবেও কোনো পশার জমাতে না পেরে ওঁর পারিবারিক পাব্লিশিং কোম্পানীর বাঁধা মাইনের ডাক্তারের পদে বহাল হয়েছিলেন। ডাক্তার হিসেবে সুবিধে করতে না পারার দরুন প্রচুর সময় থাকত ওঁর হাতে। প্রায় নিয়ম করেই আড্ডা দিতে আসতেন আমাদের বাড়ী। গল্পের স্টক ছিলো বিরাট। ছোটোদের সামনে বলতেন দেশ বিদেশের গল্প। ওঁর বড়ো মেয়ে বিয়ের পরে অ্যামেরিকায় থাকত, ভজুদা প্রতি বছর পুজোর সময় অ্যামেরিকা চলে যেতেন এবং ফিরে এলেই আমরা ভীড় করতাম সেখানকার গল্প শুনতে। সব গল্প হয়ত বুঝতে পারতাম না কিন্তু চোখ গোল গোল করে হাঁ করে সব গোগ্রাসে গিলতাম।
    একটা গল্প শেষ হলেই, আরেকটা গল্প শোনানোর জন্য অনুরোধ আসত। উনি যাতে চলে যেতে না পারেন সেজন্য ওঁর জুতো আমরা লুকিয়ে ফেলতাম। ভজুদা দেখতে খুব একটা চওড়া না হলেও প্রকান্ড ছিলো ওঁর জুতোর মাপ। সবসময় ওঁর মাপের মোকাসিন দোকানে পাওয়া যেত না তখন অর্ডার দিয়ে বানাতে হতো।
    সেবার ভজুদা অ্যামেরিকা থেকে ফিরে নতুন নতুন গল্প শোনাচ্ছেন। অ্যামেরিকায় নাকি সায়েবদের জন্যে আলাদা চুল কাটবার সেলুন সেখানে নাকি যারা সায়েব নয় মানে কালোদের, ভারতীয়দের ঢুকতে দেয় না, তাই ভজুদার মেয়ে নিজেই তার বরের চুল কেটে দেয়। এবারে তাঁর মাথায়ও মেয়ে একটা নতুন ছাঁট দিয়েছে। আমরা ভজুদার হেয়ার কাট পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম। উনিও রসিয়ে রসিয়ে আরো নানান গল্প বলতে লাগলেন। এদিকে আমরা সুযোগ বুঝে ভেতরের বারান্দা থেকে ওঁর জুতো সরিয়ে চিলেকোঠায় পুরোনো ইজিচেয়ারের তলায় লুকিয়ে রেখে এসেছি। গল্প শেষ করে ভজুদা উঠতে উঠতেই বললেন - জুতো আজ আর লুকিও না আজ আরেকটা জায়গায় যেতে হবে। আরেকদিন আসবো অনেকক্ষণ থাকব তখন।
    এই কথার পরে আর কীই বা করা যায়? আমাদের মধ্যেই একজন বাচ্চা ছাদের ঘর থেকে জুতোজোড়া নিয়ে এসে ভজুদার সামনে রেখে দিলো। জুতো দেখে উনি বললেন - এটা বোধয় অন্য জুতো, এটা আমার জুতো নয়।
    এবার চিলেকোঠায় দৌড়ে গেলাম আমি। দেখলাম আর কোনো জুতো নেই সেখানে। পুরোনো কয়েকটা ট্রাঙ্ক, নড়বড়ে একটা টেবিল, ঝুলঝাড়ু, একগাদা পুরোনো পত্রিকা, কিন্তু নাঃ জুতো আর নেই সেখানে। নীচে এসে বললাম, আর কোনো জুতো নেই। ভজুদা তখন বিরক্ত হলেন। বাবা জুতোটার দিকে তাকিয়ে বলল - এত বড়ো মাপের জুতো তো আমাদের বাড়ীতে আর কেও পরে না। সাইজ তো আপনারই মনে হচ্ছে। একটিবার পা গলিয়ে দেখুন।
    ভজুদা তখন রেগে গেলেন- আরে, সাইজ ঠিক হলেই সেটা আমার জুতো হবে, এ কেমন কথা? এতো পুরোনো জুতো, আমি আজ পরে এসেছি নতুন মোকাসিন। অ্যামেরিকা থেকে কেনা। আরেকবার দ্যাখো খুঁজে তোমরা । আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
    কিন্তু সত্যিই অনেক বকাঝকা খেলেও আমরা স্বীকার করলাম যে অন্য কোথাও জুতো লুকোইনি।
    যাই হোক সেই জুতোটা ভজুদার পায়ে দিব্যি এঁটে গেল। তবুও উনি অ্যামেরিকা থেকে কেনা ওঁর নতুন মোকাসিনের শোকে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।
    ভজুদা চলে গেলে আমরা বাচ্চারা অনেক ধমক ধামক খেলাম। শেষে বাবা বলল, ভজুদা হয়ত ভুল করেছে, হয়তো পুরোনো জুতো পরেই এসেছে, বাড়ি ফিরলেই দেখবে নতুন জুতো পড়ে রয়েছে।
    এরপরে ভজুদা বেশ কিছুদিন আসেননি। আমরা ছোটোরা ভয়ে আর কিছু বলিনা। আমাদের দুষ্টুমির ঠেলাতেই উনি রেগে গিয়ে আর আসছেন না বুঝতে পারছি, আবার গল্প শুনবার লোভও সামলানো শক্ত।
    তারপরে ক্রীসমাসের ছুটির সময়ে উনি আবার এলেন। জুতোর কথা আমরা কেউ তুলিনি। সেদিনও সেই পুরোনো জুতোটা, আগেরদিন যেটা পরে ফিরে গেছলেন সেই রংচটা ব্রাউন জুতোটাই পরেই এসেছেন। আমরা আর কেউই সেদিন জুতোর দিকে হাত বাড়াই নি। অনেকদিন পরে এসেছেন, অনেক গল্প হচ্ছে, বড়োদের গল্পই বেশি - পোলিটিক্স্‌, কবিতা, সাহিত্য, নানান দেশের নানান রকমের মদের কথা, .. বাচ্চাদের গল্প সেরকম নেই। তারপরে যখন উঠছেন তখন সন্ধে হয়ে গেছে সিঁড়ির দিকের আলোটা জ্বালাতে গিয়ে দেখা গেল বাল্ব কেটে গেছে। ভজুদা আন্দাজেই জুতোয় পা গলালেন।
    জুতো পায়ে গলিয়ে একপা হাঁটতে গিয়েই প্রায় লাফ দিয়ে উঠে বললেন - এটা কোন জুতো?
    আমরা ছোটোরা ভয়ে সিঁটিয়ে গেছি। বিনা দোষেই না বকুনি খাই। ওদিকটায় অন্ধকার, তাই উনি হেঁটে বৈঠকখানা অবদি এলেন জুতো পায়ে। বৈঠকখানার আলোয় দেখলাম চকচকে কালো নতুন মোকাসিন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিদেশি জুতো, জুতোর সুকতলাও একেবারে নতুন। ধুলো টুলো প্রায় কিছুই লেগে নেই। জুতোর ভেতরেও বিদেশি কোম্পানীর ছাপ দিব্যি পড়া যাচ্ছে।
    ভজুদা বিশ্বাস করেননি যে আমরা কেউ ওঁর জুতো সেদিন পাল্টাই নি। শুধু উনি নন, বড়োরাও কেউ বিশ্বাস করেনি। অথচ যে জুতোটা পরে উনি সেদিন এসেছিলেন সেই জুতোটা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। আরো পনেরো বছর পরে ঐ বাড়ী ছেড়ে দিয়ে আমরা অন্য জায়গায় চলে গেছলাম। জিনিসপত্র যখন গোছানো হচ্ছিলো একবার মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা জেগেছিলো - হয়ত হুট করে সেই জুতোটা পাওয়া যাবে। কিন্তু নাঃ।
  • cb | 202.193.116.137 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:৪৯620871
  • এ গপ্পটা তো বেড়ে হয়েছে
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:৫০620882
  • cb ,
    ঃ-) থ্যাঙ্কু!
  • | 127.194.82.98 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৭:৫৬620893
  • বাহ চমৎকার।

    কিন্তু ভাটিয়ালি তে দেখলুম আপনি রোবু বাবু কে খাওয়াবেন। তা অনেক দিন আগে একবার আমকে খাওয়াবেন বলে ভয় দেখিয়েছিলেন। সেই নেমোতন্নো ট ভ্যালিড আছে তো? ঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৭:৫৮620748
  • ভ্যালিড। এখন একটু চাপে আছি। এক কাজ করলে হয় না, ক্রিস্মাসের সময় যদি একটু সময় হয় আপনাদের, মানে আপনি, রোবু, ইঃ সকলে মিলে?
  • | 127.194.82.98 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৮:০০620759
  • একদম। নো চাপ। সেই সময় ই হবে ঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৮:৩৮620770
  • শাট্‌ আপ্‌ প্লিমাউথ্‌

    বড়দা মেঝদা সেজদা তিনজনেই অনেক বড়ো আমার থেকে। এদেরও পরে ন'দা, ছোড়দা, দিদি, মেঝদি, সেজদি, আরো অনেক দাদা দিদির পরে পুরো গুষ্টিতে আমি ছোটো। সর্বকনিষ্ঠ।
    বড়ো পিশেমশায়ের একটা ল্যান্ডমাস্টার ছিলো সর্ব্বক্ষনের ব্যবহারের জন্যে। উনি সেই গাড়িটা নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। আমার তখন পাঁচ ছ বছর বয়েস হবে, পিসীমার আবদারে পিশেমশাইকে একটা প্লিমাউথ্‌ কিনে দেওয়া হলো এ বাড়ি থেকে। পিশেমশাই ব্যারিস্টার কিন্তু পসার নেই। পিস্‌তুতো দিদিরা প্রায় সকলেই স্কুলে পড়ে, কেবল এক্কেবারে ছোটোটির তখন ছ সাতমাস বয়েস। পিসীমা যখন তখন রাগ করে বাপের বাড়ি চলে আসত। কয়েকদিন পরে পিশেমশাই এসে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মানভ্ঞ্জন করে ফিরিয়ে নিয়ে যেত।
    সেবারো পিসীমা ঝগড়া করে চলে এসেছে। যথারীতি কয়েকদিন পরেই পিশেমশাইয়ের আগমন। কিন্তু এবার পিসীমার মানভঞ্জন করা শিবের ও অসাধ্য হয়ে উঠেছে। কিছুতেই ফিরবে না।
    পিশেমশাই চেষ্টা করেই চলেছেন, তো শেষে একটা রফা হলো। সেটা হচ্ছে যে পিসীমাকে নিয়ে বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে হবে। কোথায় যাওয়া হবে? না পিসীমা বায়না ধরেছে কাশ্মীর। কাশ্মীর তো আর কাছাকাছি নয়, রেলের টিকিট লাগবে, গরম জামা গোছগাছ করা আছে, কাশ্মীরে গিয়ে কোথায় ওঠা হবে সেসব ব্যবস্থা করতেও হপ্তা দুহপ্তা লাগবে। কিন্তু পিসীমা ত একদণ্ড সময় দিতে চায় না, তক্ষুনি যেতে হবে। এ হেন বিপদে পিশেমশাই তখন দরাদরি আরম্ভ করলেন। কিছুক্ষণ পরে পিসীমা, কাশ্মীর থেকে নেমে কাশী অবধি এলো। কাশীতে কেদারঘাটের গায়েই ঠাকুর্দার প্রকান্ড বাড়ি রয়েছে কাজেই থাকবার জায়গা নিয়ে সমস্যা হবে না। রেলের টিকিটেরো ঝামেলা নেই। ঐ নতুন কেনা প্লিমাউথ্‌ চেপেই পিসীমা ছোটো বাচ্চা নিয়ে দিব্যি যেতে পারবে। পিশেমশাইকে গাড়ি চালাতেও হবে না, সঙ্গে যাবে ড্রাইভার বাবুলাল।
    এত অবধি শুনে আমিও বেঁকে বসলাম। আমিও সঙ্গে যাব। ব্যাস্‌ পিসীমাও একবাক্যে রাজি। পিশেমশাই প্রমাদ গুনলেন। আবার আরেকপ্রস্থ দরাদরি করে কাশী থেকে আরেকটু কম দূরে হাজারিবাগে দূরত্ব কমিয়ে আনবার চেষ্টা চলতে লাগল। হাজারিবাগে আমাদের একটা বাগানবাড়ি ছিলো, সেখানে ফি বছরেই যাওয়া হতো। পিসীমা কিছুতেই রাজি নয়। রেগে গিয়ে কাশী ক্যানসেল করে ফের কাশ্মীরে ফিরে যাবার উপক্রম তখন। শেষে একটা রফা হলো - গিরিডি। সেখানে ঠাকুর্দার কোনো বাড়ি না থাকলেও পিশেমশায়ের এক বন্ধু কাম পুরোনো মক্কেল নাকি আছে। নাম দিলীপ রাজগড়িয়া। লোকটার নাকি কয়েকটা মাইকা মাইন্‌স্‌ আছে। রাজগড়িয়াকে টেলিগ্রাম করে দেবার ব্যবস্থা হলো এবং সেদিন বেশ রাত হয়ে যাওয়ায়, পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই আমরা গিরিডির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।
    তখন শীতকাল। কিন্তু বেলা যত বাড়তে লাগল তত গরম লাগতে শুরু করল। সোয়েটার খুলে ফেলে জানলার পাশে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছি। কাচ বেশি নামানো যাচ্ছে না - ছোট্টো পিস্‌তুতো বোনের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
    তখন গাড়িতে এয়ারকন্ডিশনিং ছিলো না, আবার হাওয়ার সঙ্গে ধূলোও ঢুকছে দেদার।
    বাস্কেটে কেক কমলালেবু লুচি তরকারি ছিলো। দুপুরের দিকে একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে সেসব খাওয়া হলো। জল খুব বেশি আনা হয় নি সঙ্গে কয়েক বোতল জল ছিলো কিন্তু জল গরম হয়ে গেছে।
    পিশেমশাই ও বাবুলাল পালা করে গাড়ি চালাচ্ছিলো, আমরা পেছনে। বিকেলের আগেই আমরা বাংলা পেরিয়ে বিহারে ওপর দিয়ে চলেছি। আবারো দু একটা ব্রেক। তারপরে ঝপ করে অন্ধকার নেমে এলো। রাস্তায় আলো নেই, শুধু হেডলাইটের আলো দুপাশে জঙ্গল এবং রাস্তা খুব একটা মসৃণ নয়।
    একটু পরেই ব্যাপারটা ঘটল।
    (ক্রমশঃ)
  • দেব | 59.136.237.169 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ২২:৫০620781
  • তারপর?
  • সে | 203.108.233.65 | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০১:১৩620792
  • বাবুলাল খুব ভালো ড্রাইভার। ঠাকুর্দার আমল থেকে এবাড়ীতে গাড়ি চালাচ্ছে। বয়েস হয়ে গেছে অনেক তাই চোখে হয়ত খুব একটা ভালো দেখে না, তবুও সে ই সময় বুঝে ব্রেক না করলে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেত।
    হঠাৎ ব্রেক কষায় ঝাঁকুনিতে ছোট্টো বোনের ঘুম ভেঙে গেল। সে এতক্ষণ পুসীমার কোলে ঘুমোচ্ছিলো এবং পিসীমাও ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভেঙে অত অন্ধকার দেখে বোন কেঁদে উঠলো।
    হেডলাইটের আলোয় দেখা গেল আড়াআড়ি বাঁশ ফেলে রাখা আছে রাস্তার ওপরে। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, দুপাশে হালকা বন এবং রাস্তা ক্রমশঃ সরু হয়ে গেছে সামনে।
    যেটা লিখতে ভুলে গেছি সেটা হচ্ছে গাড়ীটায় ড্রাইভিং সীট বাঁদিকে। সেই কারণে বড়ো রাস্তায় সাবধানে গাড়ী চালাতে হতো। সেইজন্যেই খুব বেশি স্পীডে গাড়ি চালানো হয়নি এবং পথে বেশ কয়েকবার থামা হয়েছে নানা কারনে - নইলে ততক্ষণে আমাদের প্রায় পৌঁছে যাবারই কথা।
    কিন্তু রাস্তার মাঝখানে অতবড় একটা বাঁশ পড়ে থাকা খুব একটা ভালো লক্ষন নয়। বাঁশ সরাতে নীচে নামলে পাশের অন্ধকার থেকে ডাকাতের দল ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ডাকাতের সম্ভবনা একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়।
    পিশেমশাই জানলার কাচ নামাবার চেষ্টা করতেই বাবুলাল বারণ করল এবং তৎক্ষণাৎ গাড়ী স্টার্ট করে মুহূর্তের মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে যে দিক থেকে এসেছিলাম সেইদিকেই ফিরে চললাম আমরা।
    অনেকক্ষণ একটাও কথা বলিনি কেউ। প্রায় তিন চার মাইলেরও বেশি পথ ফিরে আসাবার পরে বাবুলাল বলল সে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে, ঠিক চিনতে পারছে না। গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট থেকে টর্চ বের করে পিশেমশাই রিস্ট্‌ওয়াচে সময় দেখল, রাত তখন আটটার কাছাকাছি এবং পেট্রল কমে এসেছে, তাই ঠিক রাস্তা খুঁজে পেতে তো হবেই কিন্তু সবার আগে একটা পেট্রল পাম্পের হদিশ পাওয়া দরকার। পিসীমা তো ঠাকুরকে ডাকছে আবার মাঝেমাঝে বাবুলালকে বকছে - কেন তুমি রাস্তা ভুল করলে, আজ যদি আমরা সব বেঘোরে মরে যাই, ইত্যাদি।
    যাইহোক প্রায় ঘন্টাখানেক পরে আমরা সঠিক পথ ও পেট্রলপাম্পের সন্ধান প্রায় একই সঙ্গে পেলাম। বড়ো রাস্তার পাশে "এসো"(Esso) পেট্রলপাম্পে এসে তেল ভরা হলো। সঠিক পথ তারাই বাৎলে দিলো বাবুলালকে। বাইরে তখন অসম্ভব ঠান্ডা হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো আমাদের।
    অনেকটা ভুল পথ চলে আসায় দেরী হয়ে গেছলো তাই গন্তব্যে যখন উপস্থিত হলাম অনেক রাত হয়ে গেছে।
    প্রাসাদের মতো সেই বাড়ীর ড্রাইভ্‌ওয়ে পেরিয়ে সদর দরজায় পৌঁছতেই স্বয়ং গৃহস্বামী আমাদের অভ্যর্থনা আপ্যায়ন করে থাকবার ব্যবস্থা করে দিলেন। তৎক্ষণাৎ বোনের জন্যে আয়া এসে গেল। আমি তখন একটা বিছানা পেয়ে ঘুমোতে পারলেই বাঁচি।
    (ক্রমশঃ)
  • nina | 22.149.39.84 | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০২:১৯620803
  • এই রে আমাদের জাগিয়ে রেখে নিজে ঘুমিয়ে পল্লেন
    :-(((((
  • সে | 203.108.233.65 | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:৩৯620812
  • পরেরদিন ঘুম ভেঙ্গে প্রথমে বুঝতেই পারিনি কোথায় আমি। তারপরে সব মনে পড়ল। আমি একটা আলাদা ঘরে, পিসীমারা কোথায়? বিছানা থেকে নামতেই ঠান্ডা মেঝেয় পা যেন জমে গেল। পাশেই ব্যালকনি। সেখানে যেতেই দেখি নীচে বিরাট বড়ো একটা বাগান, সেই বাগানে হাজার হাজার ফুল। কতো রঙের গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকার তো শেষ নেই, প্রকান্ড প্রকান্ড সব ডালিয়া, গাঁদা, আরো অনেক অনেক ফুল। বাগানের সামনেটায় অনেকটা জায়গা জুড়ে লন, সেই লনে ব্যাডমিন্টনের নেট টাঙানো রয়েছে। একটু পরেই পিসীমা এলো, তারপরে ব্রেকফাস্ট, চান, আবার খাওয়া, গল্প, মোটরে করে অল্প বেড়িয়ে আসা, এই করেই করেই বিকেল হয়ে গেল।
    পিশেমশায়ের বন্ধু বাঙালী না হলেও বাঙলা বলেন। বিকেলে উনি আমাদের দেখালেন ওঁর বন্দুকের কালেকশান। একটা ঘরে মধ্যে শুধু নানান রকমের বন্দুক। সেই বন্দুকের কোনটা দিয়ে কী শিকার করেছেন সেসবের গল্প। বাঘ কখনো মারেন নি সেটা বললেন।
    বাড়ীতে কোনো আমার বইসী বাচ্চা নেই। শুধু আমার বইসী কেন, আমার চেয়ে ছোটো বা বড়ো কোনো বাচ্চাই নেই। একা একা একটু ঘুরেছিলাম বাড়ীটার মধ্যে; একটা ঘরে দেখলাম ধপ্‌ধপে সাদাচুলের একটা বুড়ি মেঝেতে বসে ঠাকুর পুজো করছে। তার সামনে সিংহাসনে ঠাকুরদেবতার মূর্তি। এ ছাড়া বাড়ীতে সবসময়ই চাকর বাকরেরা ঘুরে বেড়ায় কাজ করে। কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও ধুলো ঝাড়ছে নয়ত মেঝে মুছতে লেগেছে।
    বাড়ীর গিন্নি - যিনি দিলীপবাবুর বউ, সর্বক্ষণ খালি আমাদের এটা ওটা খেতে দেন।
    সবসময় কি খাওয়া যায়, না খেতে ভালো লাগে? এরা মাছ মাংস ডিম কিছু খায় না, শুধু নিরিমিষ খায়।
    যেটা বলতেই ভুলে গেছি। সকালে ব্রেকফাস্টের পরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো - ট্রাঙ্ককল। ঐ অতো দূরের কলকাতার বাড়ীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলো, ওদের জানিয়ে দেওয়া গেল যে আমরা সব ভালোমতন পৌঁছে গেছি।
    আরো একটা অদ্ভুত জিনিস হচ্ছে যে পিসীমা একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। আমাদের সঙ্গে সবসময় অতো চেঁচায় আর ঝামেলা করে, কিন্তু এখন তো সব বাইরের লোক - তাই শান্ত শিষ্ট হয়ে হাসি হাসি মুখ করে রয়েছে।
    ঠিক হলো সন্ধেবেলায় ক্লাবে যাওয়া হবে।
    ক্লাবে যাওয়া - শুনেই পিসীমা পিশেমশাই কেমন একটু গম্ভীর হয়ে গেল। কিন্তু দিলীপবাবু খুব জোর করতে লাগলেন, জানালেন এমনকি বাচ্চাদেরও সেখানে যেতে কোনো অসুবিধে নেই।
    সন্ধেবেলা ডিনার সেরে ফুলপ্যান্ট কোট পরে আমিও সবার সঙ্গে ক্লাবে চললাম। দুটো গাড়ি। একটা যেটায় আমরা এসেছি, আরেকটা দিলীপবাবুর ক্যাডিলাক সেটাতেও ড্রাইভিং সীট বাঁদিকে। দিলীপবাবু ড্রাইভ করছেন, পাশে ওঁর বউ। পেছনের সীটে পিসীমাদের সঙ্গে আমি জানলার পাশে অন্ধকারে দৃশ্য দেখতে দেখতে যাবো। আমাদের গাড়ীটায় পেছন পেছন আসছে আয়া, দুজন ড্রাইভার (তাদের মধ্যে একজন আমাদের বাবুলাল)ও আরেকজন লোক। এই আরেকজন কিন্তু ড্রাইভারের পোষাকে নয়, অথচ মাথায় পাগড়ি। একে আজ ও বাড়ীতে বন্দুক কাঁধে নিয়ে লনের কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। কাছে যেতে কেমন যেন ভয় করে, চোখ দুটো লাল, ইয়া বড়া বড়া গোঁফে তা দেওয়া মুখ। ও দিলীপ রাজগড়িয়ার খাস চাকর- নাম লালবংশী।
    (ক্রমশঃ)
  • শঙ্খ | 169.53.46.142 | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ২০:৪৫620813
  • বাহ, ভালো লাগছে। একটানে পড়ে ফেলা যায়।

    আর ইসে, যদি কিছু মনে না করেন, ওটা 'বয়েসী' হবে, বইসী না।
  • ঐশিক | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৫৭620814
  • বেশ ভালো লাগলো, পরের কিস্তির অপেক্ষায়
  • সে | 203.108.233.65 | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ১৭:৪৬620815
  • অনেক ঢালু নীচু উঁচু রাস্তার ঝাঁকুনি পেরিয়ে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম ক্লাবে। গিরিডি আমার কাছে তেমন পাহাড় নয় কেননা এর আগেই আমার শিলং এ বেড়ানো হয়ে গেছে, এরোপ্লেনেও চড়া হয়ে গেছে, তাই এখানকার পাহাড়ি রাস্তা দেখে তেমন অবাক হচ্ছি না।
    ক্লাবে পৌঁছে বাগান, লন পেরিয়ে আমরা ক্লাববাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলাম। সেখানে একটা ঘরে বিলিয়ার্ড খেলা হচ্ছে। ঘরের মধ্যিখানে খুব নীচু করে ঝোলানো আলোর তলায় বিলিয়ার্ডের টেবিল- সেখানে খুব মনোযোগের সঙ্গে খেলা চলছে। ঘরের দেয়াল ঘেঁষে চারপাশে বসবার জায়গা, সেখানে যারা বসে আছে সব ছায়াছায়া মতন, ছাদের দিকে তাকালেও সেইরকম আবছা আবছা ব্যাপার।
    আমি সেখান থেকে পা টিপে টিপে পালিয়ে পিসীমার কাছে অন্যঘরে চলে গেলাম। সেখানে সব মেয়েরা গল্প করছে- আমার বয়েসী ছেলে মেয়ে কেউ নেই। বোনকে ঘুম পাড়াচ্ছে আয়া পাশের একটা ঘরে।
    আমি ভেবেছিলাম খুব গানবাজনা হবে এখানে এলে, আমার মতো আরো বাচ্চা থাকবে - খেলবো তাদের সঙ্গে। সবাই নিজেদের মধ্যে গল্প করে, নয়ত খেলছে।
    দিলীপবাবু মদ খেয়ে জোরে জোরে কথা বলছেন। এই মাইনগুলো আর বেশিদিন থাকবে না ওঁদের কারো। সব নাকি কারা যেন নিয়ে নেবে। কোন এক লোক - নাম দেসাই, সেই নিয়ে নিচ্ছে সব কিছু। আমি দৌড়ে এসে পিসীমাকে জিগ্যেস করি - পিসীমা দেসাই কে?
    পিসীমা আমার কথা বুঝতে পারেনা, দেসাইকেও চেনে না।
    (এর কদিন পরে পিশেমশাই আমাকে নিউজপেপারে দেসাইয়ের ছবি দেখিয়েছিলো- মাথায় ভাঁজ করা গান্ধি টুপি পরা। পাগড়ি নেই, মুকুট নেই, - এই লোকটা নাকি মন্ত্রী! এই মন্ত্রীমশাই সব মাইন, সব কোলিয়ারি, বড়ো বড়ো কোম্পানি যা রয়েছে সব কেড়ে নেবে। আমি বলেছিলাম- কেড়ে নিতে যদি না দিই? যদি যুদ্ধ করি বন্দুক দিয়ে? পিশেমশাই সেকথা রাজগড়িয়াকে বলতে সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিলো)।
    আমি ভাবি, এই বাড়িঘর ক্লাব বাগান সমস্ত কেড়ে নিলে ওরা কোথায় যাবে? কেন কেড়ে নেবে?
    আবার যদি পরে কখনো এখানে বেড়াতে আসি তখন এসব আর থাকবে না?
    হঠাৎ হোওওওও করে একসঙ্গে অনেকে আওয়াজ করে ওঠে বিলিয়ার্ডরুম থেকে। তারপরে হাততালি। আমার কিন্তু মন খারাপ হয়ে থাকে। সব কেড়ে নেবে কেন?
    অনেক গল্প আওয়াজ হাসির পরে আমরা ফিরতে থাকি। ফেরার পথে আমরা আলাদা আলাদা গাড়িতে ফিরি। দিলীপবাবুর গাড়ি চালায় তার ড্রাইভার, সেই গাড়ীতেই উঠে পড়ে লালবংশী। উনি লালবংশীকে দেখিয়ে জোরে জোরে বলে ওঠেন- হি ইজ্‌ মাই ডোবারম্যান! হাঃ হাঃ হাঃ...
    ওঁর মদ খেয়ে নেশা হয়ে গেছে।

    (ক্রমশঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ০০:৩০620817
  • পরদিন সকালে খুঁজে পেলাম খেলার সাথী - সুমতিলালকে। সেই ব্যাডমিন্টন কোর্ট পেরিয়ে, বাগান পেরিয়ে একটা দেয়াল। সেই দেয়াল ঘেঁষে একসারি ঘর। আমাদের বাবুলালও এখন সেখানেই থাকছে।
    একটা নীল রঙের পালক কুড়িয়ে পেয়েছিলাম সেদিন। পুরো নীল নয় পাশে অল্প একটু সাদা।
    আগের রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেছল। জল তেষ্টা পাচ্ছিলো। তখনই শুনেছিলাম দূরে কে যেন খুব জোরে জোরে বকছে কাউকে "শাটাপ্‌, শাট্‌ আপ্‌...ই ..মাউথ্‌!" আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জল না খেয়েই।
    পালক হাতে নিয়ে সকালে আমি একা একাই বলে ফেললাম, "শাট্‌ আপ্‌ প্লিমাউথ্‌ ! " দারুণতো!
    আমি লাফাতে লাফাতে চলি পালক নিয়ে আর বলি, শাট্‌ আপ্‌ প্লিমাউথ্‌ ! শাট্‌ আপ্‌ প্লিমাউথ্‌ ! শাট্‌ আপ্‌ প্লিমাউথ্‌ ! হি হি হি।
    এমনি লাফাতে লাফাতেই পৌঁছে গেছি সেই ঘরগুলোর কাছে। দেখি আমারই মতো একটা ছেলে সেখানে দাঁড়িয়ে আমাকেই দেখছে।
    সে ই সুমতিলাল। আমি ওর কথা বুঝিনা, ও আমার কথা বোঝে না, কিন্তু আমরা খেলতাম- দৌড়োদৌড়ি, তাক করে করে ঢিল ছোঁড়া, তবে দৌড়তে দৌড়তে আমি বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলে ও থেমে যেত, ভেতরে আসত না।
    হতে পারে ও মালির ছেলে বা ড্রাইভারের ছেলে, লালবংশীর ছেলে হয়ত বা।
    ওদের ঘরের পাশেই রান্না হয় মাটির উনুনে। ধোঁয়া হয় খুব।
    আমি বাড়ি ফিরে আসি পিসীমা খুঁজবে নইলে।
    পিসীমা আবার রেগে রয়েছে আজ। আজ একাদশী - মাছ খেতে হয়। এদিকে এরা তো মাছ খায় না। পিশেমশাই বলছে সন্ধেবেলা ক্লাবে হয়ত পেয়ে যাবে মাছ মাংসের খাবার, তবু পিসীমা রেগে থাকে।
    আমি ভাবলাম হয়ত সুমতিলালেরা মাছ খায়- একবার দেখে আসবো ছুটে গিয়ে?
    দৌড়ে ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আমার পা হড়কে গেল, তারপরে গড়িয়ে গিয়ে পড়ছি তো পড়ছিই, গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছি মাথায় লাগছে প্রত্যেকবার তবু থেমে যেতে পারছি না - যখন থামলাম সব কিছু ঘুরছে চোখের সামনে, ঘুম পাচ্ছে, টেলিফোন বেজে যাচ্ছে ক্রীং ক্রীং ক্রীং ক্রীং...

    (ক্রমশঃ)
  • i | 147.157.8.253 | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:০৯620818
  • শাটাপ প্লিমাউথ পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে সাদা কালো সিনেমা দেখছি-না টিভিতে না-সিনেমা হলে বসে। কতদিন পরে।
    মোকাসিনের গল্পটাও দারুণ।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০৬620819
  • গল্প নয় তো! ☺
  • সে | 203.108.233.65 | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ১৩:১৫620820
  • জেগে দেখি আমি অন্য একটা বিছানায়। শুয়ে শুয়েই দেখি। এটা পিসীমাদের ঘর। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। পিসীমা কাছে এসে বলে - এই তো জেগে গেছে, উঠিস না, উঠিস না, শুয়ে থাক।
    মনে পড়ে আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে কত কী হয়ে গেছে, কপাল ফুলে আলু বেরিয়ে গেছে, মাথায় কেটে গেছে, ডাক্তার এসে স্টীচ করে দিয়েছে, মাথায় ব্যান্ডেজ, হাঁটুতেও স্টিকিং প্লাস্টার।
    শুয়ে থাকতে হবে আমাকে? কতক্ষণ? খেলতে পারবো না?
    আমার জ্বর। উঠতে গেলে মাথায় লাগে, অনেক ওষুধ খেতে হবে।
    পিশেমশাই একটা কাগজের বাক্স এগিয়ে দেয় পিসীমার হাতে, পিসীমা তার থেকে একটা পেস্ট্রী বের করে আমাকে দেয় - খেয়ে নে, খুব নরম।
    আমার খেতে ইচ্ছে করছে না- তুমি খাও।
    আমি পরে খাব, তুই খেয়ে নে বাবু। এটা খেয়ে ওষুধ খাবি। সারাদিন কিছু খাস নি।
    তুমিও খাও পিসীমা, কেকে ডিম থাকে, আজ একাদশী।
    তবে রে! পিসীমা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে, ছোটো বোনটা তার মায়ের দিকে ড্যাব্‌ড্যাব্‌ করে তাকিয়ে থাকে।
    পিশেমশাই আমাকে বলে ব্রেভ বয়। চলো নীচে যেতে হবে, একটা ট্রাঙ্ককল বুক করা হয়েছে। কথা বলবে মায়ের সঙ্গে?
    মায়ের সঙ্গে? আমি এই দিনগুলো মাকে পুরো ভুলে ছিলাম। একবারও মাকে মনে পড়েনি, বাবাকে মনে পড়েনি, কলকাতার বাড়ীর কাউকেই মনে পড়েনি।
    পিশেমশায়ের কোলে চেপে নীচে সেই প্রকান্ড ঘরটায় আসি যেখানে টেলিফোন। একটু পরেই ফোন বেজে ওঠে, ট্রাঙ্ককল।
    প্রথমে পিসীমারা আমার পড়ে যাবার খবর জানিয়ে দেয়, তারপরে আমি কথা বলি মার সঙ্গে। ওদিকের কথা তেমন শোনা যায় না ভালো। মা বুঝি বলে - কেমন আছিস?
    আমি বলি - আমাদের এখানে বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে।
  • | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৪০620821
  • মোকাসিনের গপ্পটা দারুণ। পরেরটা পরে পড়ছি।
  • i | 147.157.8.253 | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৫৮620822
  • সে র লেখায় কী একটা আছে-
    "ওদিকের কথা তেমন শোনা যায় না ভালো। মা বুঝি বলে - কেমন আছিস?
    আমি বলি - আমাদের এখানে বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে।"
    কী আছে বলুন তো এই দুটো লাইনে?
    আশ্চর্য লাইন দুটো।
    আর ঐ সাদা কালো সিনেমা। একটা ছেলে হাতে সাদা পালক নিয়ে নিজের মনে বলে চলেছে শাটাপ প্লিমাউথ শাটাপ প্লিমাউথ..
  • dd | 132.167.8.244 | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:০২620823
  • সিনেমাটিক।

    খুব ছবি দিয়ে দিয়ে ল্যাখা।
  • সে | 203.108.233.65 | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:৫২620824
  • (ক্রমশঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:৫৪620825
  • মাথার স্টীচ্‌ কাটাতে হবে কদিন পরে। সে কি এখানেই কাটানো হবে নাকি কোলকাতায় ফিরে গিয়ে তা ঠিক হয় নি। আমি চাই এখানেই হোক নইলে তো কোলকাতায় চলে যেতে হবে।
    সেদিন সকালে উঠে ঘুম থেকে দেখি পিশেমশাই, দিলীপবাবু দুজনেই নেই। তারা বেরিয়েছে বন্দুক নিয়ে শিকার করতে। কান্না পেয়ে যায় আমায় সঙ্গে নিলো না কেন?
    পিসীমা বলে - তুই তো ঘুমোচ্ছিলি
    - আমায় ডেকে দিলে না কেন তবে?
    - তোর তো মাথা ফেটে গেছে তাই নেয় নি, সেরে গেলে আরেকদিন নিয়ে যাবে।
    - তবে আমি খেলতে যাই সুমতিলালের সঙ্গে?
    - না বাবু দৌড়োদৌড়ি কোরো না, আবার ব্যাথা লেগে যাবে।
    একটু পরে আমার মাথায় অন্য বুদ্ধি খেলে যায়।
    - পিসীমা বাবুলালের সঙ্গে গাড়ি করে বেড়াতে যাবে?
    পিসীমা যেতে চায় না, বোনকে কোলে নিয়ে খালি দিলীপবাবুর বৌয়ের সঙ্গে গল্প করে।
    - তবে আমি যাই বাবুলালের সঙ্গে?
    -একা যাবি?
    - একা কেন? তুমি বাবুলালকে বলে দাও।
    পিসীমার হাত ধরে টানাটানি করি। শেষে পিসীমা রাজি হয়, আমি নীচে গিয়ে বাবুলালকে জানলার নীচে টেনে নিয়ে এলে পিসীমা তাকে হাত নেড়ে বলে দেয় আমায় ঘুরিয়ে আনতে।
    গাড়ীতে সামনের সীটে বসে খুব ইচ্ছে করে গাড়ি চালাতে। বাবুলালকে বলি, আমি চালবো একটু?
    বাবুলাল গাড়ি থামিয়ে দেয় রাস্তার ধারে। তারপরে আমায় তার কোলে বসিয়ে ফের স্টার্ট করে ইঞ্জিন। আমি ধরে থাকি স্টীয়ারিং, গাড়ী চলছে ঢালু রাস্তা বেয়ে, কী আনন্দ কী আনন্দ!
    হর্ণ বাজাতে ইচ্ছে করে খুব কিন্তু আমার হাতে হর্ণ বাজে না। বাবুলাল দেখিয়ে দেয়।
    তার পরে সেই ফাঁকা রাস্তায় যেখানে আর কোনো গাড়ী নেই, যেখানে শুধু অনেক পরে পরে হেঁটে যায় গ্রামের লোক, দুপাশে শুধু ক্ষেত নয়তো শুধুই ফাঁকা, বাবুলালের কোলে বসে আমি চালাই প্লিমাউথ, হর্ণ বাজাই ইচ্ছে মতো।
    ফিরবার সময় সে নিজেই চালায়, পাশে বসে দেখি গীয়ার পাল্টানো - ওটাও এবার শিখে নেবো।
    শিকারে যেতে না পারার সব দুঃখ কেটে গেছে।
    আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে পিসীমার কাছে ছুটে যাই। ওরা তখনো সেই গল্প করেই চলেছে। পিশেমশাইরা তখনো ফেরেনি।
    - জানো আমি এক্ষুনি গাড়ী চালালাম।
    - ওমা! সত্যি?
    - হ্যাঁ বাবুলালের সঙ্গে।
    দিলীপবাবুর বউ কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে হাসি তবু বুঝি ওঁর মন খারাপ করেছে।

    (ক্রমশঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৩:৩৯620826
  • এটাও।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৭:৪৫620828
  • সেই পাখীর পালক হারিয়ে গিয়েছে। খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাই। পিসীমাকে জিগ্যেস করি। কেউ জানে না, কেউ দেখেনি সেই পালক।
    পিসীমা বলে - দ্যাখ কোথায় রেখেছিস, নয়তো আরেকটা কুড়িয়ে পেয়ে যাবি। কত পাখী এখানে- আরো কত পালক পাবি।
    কিন্তু আমার যে ওটাই চাই। ঐ নীল রঙের ছোট্ট পালক একপাশে একটু সাদা দাগ।
    আবার পালক খুঁজতে বেরোই। বেরিয়ে সুমতিলালের ঘরের দিকে চলে যাই। তাকে সেখানে না পেয়ে ফিরে আসি।
    আমার মন খারাপ দেখে পিসীমা বলে - তোকে ময়ুরের পালক এনে দেবো, কটা চাই বল?
    - চাই না আমায় ময়ুর পালক।

    সন্ধে হয়ে যায় তবু পিশেমশাইরা শিকার থেকে তখনো ফেরে নি। সবাই চিন্তা করছে। কেউ কি জানে কোনদিকে গেছে তারা?
    পুজোর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে পিসীমা বোনকে কোলে করে। সেখানে তখন পুজো হচ্ছে চামর দুলিয়ে দুলিয়ে।
    পুজো শেষ হয়ে গেল, রাত বেড়ে গেল তখনো ওরা ফেরেনি। সব কিছু শান্ত থমথম। মোটরগাড়ীর আওয়াজ, হর্ণের শব্দ শুনবার জন্যে কান পেতে রয়েছে সকলে।
    পালকের দুঃখ ভুলে গিয়ে আমিও চাইছি ওরা এখনি ফিরে আসুক।
    তারপরে ঘুমিয়ে পড়ি।
    কাদের কথা বলার আওয়াজে একসময় ঘুম ভেঙে যায়। আমাকে কখন যেন আমার ঘরেই এনে শুইয়ে দিয়েছে। তখনো রাত্তির। অনেকে কথা বলছে - তার মধ্যে ছেলেদের গলা। উঠে হেঁটে যাই সেই দিকে- সেই হলঘরের দিকে।
    ঐতো পিশেমশাই এসে গেছে! বসে রয়েছে চেয়ারে। তার পাশেই পিসীমা। দিলীপবাবু হেঁটে বেড়াচ্ছে ঘরের মধ্যিখানে। দিলীপবাবুর বউ জানলার পাশে দাঁড়িয়ে। কী একটা ব্যাপার যেন হচ্ছে। ঘরের বাইরে একটু দূরে লালবংশী। শিকার করে বাঘ ভাল্লুক হরিণ সিংহ আনেনি?
    চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়লাম ভেতরে তবু কেউ যেন আমাকে দেখতেই পেল না।
    ওদের কথাও বুঝতে পারলাম না। ওরা কি ঝগড়া করছে না কী?
    রাগ হয়ে যায় তাই চেঁচিয়ে বলি - কী হচ্ছে এখানে?

    (ক্রমশঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন