এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে

    সে
    নাটক | ২১ অক্টোবর ২০১৩ | ৫৪৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 198.155.168.109 | ১৭ জুন ২০১৬ ১৬:৩১620895
  • প্রথমদিনে কাজের শেষে যখন হোটেলে ফিরেছিলাম তখন সন্ধে হবো হবো করছে। কাছাকাছি তিনটে হোটেলে সকলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেলগুলো বাইরে থেকে দেখতে কেমন বাড়ি বাড়ি মতন। ভেতরের অবস্থাও তেমন সুবিধের নয়। চলে যায় টাইপ। ননবেংগলিরা একটা হোটেলে উঠেছে, তারা সংখ্যায় নগন্য। মেয়েদের এবং ফ্যামিলিমেনদের দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে ভালো হোটেলটা। সবচেয়ে ভালো, কারণ একমাত্র এটাতেই কার্পেট আছে। কয়েকজন ব্যাচেলরও থাকবে এখানে, ইনক্লুডিং আমাদের টীমলিডার ও সেই জুনিয়ার। টীমলিডারের মেজাজটা খুব ফুরফুরে হয়ে আছে ইদানীং। খবরে প্রকাশ, প্রোজেক্ট ম্যানেজার দিদিমুনি বোম্বে অফিসে ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাচ্ছেন শিগগিরি। উনি চলে গেলেই সে ম্যানেজারি করতে পারবে বলে আশা করছে। তারওপরে এখানে তো দিদমুনি থাকবেনও না, তাই সে ই অল ইন অল। ওহ্যাঁ, কথায় কথায় তিন নম্বর হোটেলটার কথা ভুলে গেছি। সেটা পাশের গলিতে। সেখানে ম্যাক্সিমাম কনসাল্টেন্টকে ঠেশে ঠেশে ঢোকানো হয়েছে।
  • paglu | 193.82.199.156 | ১৭ জুন ২০১৬ ২১:৪৪620896
  • এই লেভেল থেকে কিন্তু "জলের" কোম্পানীকে চেনা যাচ্ছে।
  • সে | 198.155.168.109 | ১৭ জুন ২০১৬ ২২:০১620897
  • জলেরও দাম আছে
  • সে | 198.155.168.109 | ১৭ জুন ২০১৬ ২৩:১৯620898
  • প্রথমদিন হোটেলে চেক ইন করে ঢুকতেই দেখি রিসেপশানের পাশেই সোফাগুলোয় বৌয়েরা গল্প করছে নিজেদের মধ্যে। তাদের সব নিজেদের মধ্যে নতুন আলাপ হয়েছে। স্বামীরা হোটেলে ফিরেছে, কাজে কাজেই আড্ডা বন্ধ হয়ে গেল তখনই। এর মধ্যে বিশ্বনাথের ( নাম পরিবর্তিত) বৌয়েরই উঠে দাঁড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এরকম অ্যাডভান্সড স্টেজে কেন নিয়ে এল বৌকে বিশু? সারাটা দিন বসে ছিল লবিতে মেয়েটা।
    বিশু বৌয়ের কাছে গিয়ে খুব আলতো গলায় শুধোয়, তুমি খেয়েছ?
  • aranya | 83.197.98.233 | ২০ জুন ২০১৬ ০০:২৫620899
  • সে-র লেখাগুলো খুবই উপভোগ্য। সঙ্কলন করে বই হিসাবে বেরোলে ভাল লাগবে
  • সে | 198.155.168.109 | ২২ জুন ২০১৬ ২০:১৭620900
  • প্রকাশ্যে বৌয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে নেই। যদিও স্ত্রৈণ শব্দটা আমাদের ভোকাবুলারিতে ব্যাকডেটেড হিসেবেই গন্য হয়, কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশুকে ঐ ক্যাটেগোরীতেই ফেলা হলো। তারপরে বৌ কাছাকাছি না থাকলেই প্যাঁকের পরে প্যাঁক। তুমি খেয়েছ?
    আমরা দুটি মেয়ে পাশাপাশি দুটো সিংগল রুম পেয়েছি তিনতলায়। হোটেলের প্রায় সারাটা মেঝেই রোঁয়া ওঠা কম্বলের মতো একটা মেটিরিয়াল দিয়েমোড়া। এরা বলছে কার্পেট। বাথরুম বাদ দিলে সব জায়গায় ঐ কার্পেট দেখা যাচ্ছে। সিঁড়িগুলোয় সবুজ বাকি জায়গায় লাল রঙের ঐ কার্পেট ব্যবহার হয়ে হয়ে নানারকম ছোপ ধরেছে। কোনো কোনো জায়গায় গাঢ় দাগ বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে, ভাল করে পরিষ্কার হয়নি অল্প অল্প রান্না করা ডালের মত কীসব তখনো লেগে রয়েছে। এ সবই করিডোরে। ঘরের ভেতরকার অবস্থা তুলনায় অনেকটাই ভাল। আমাদের দৈনিক বরাদ্দ দেড়শো (ব্রেকফাস্ট পঞ্চাশ + ডিনার একশো, এরকম কী একটা হিসেব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল রিসেপশানে চেকিন করবার সময়েই) টাকা খাবারের জন্য। ব্রেকফাস্ট ও ডিনার মিলিয়ে। এই হোটেল থেকেই অর্ডার করতে হবে। ঘরে ঘরে দিয়ে যাবে। আলাদা করে টাকা খরচ করে খাওয়া দাওয়া করা, সেই বিল জমিয়ে রেখে পরে ক্লেইম করবার ঝামেলা নেই। সারাদিনের পথশ্রম ও নতুন জায়গায় কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরিশ্রমে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম পেয়ে গেল। কিন্তু অনেক কাজ তখনো বাকি। ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র বের করা, স্নান, খাওয়া। বিছানার পাশেই ছোট টেবিলে টেলিফোন ও মেনুকার্ড। একশো টাকার মধ্যে চমৎকার খাওয়া যাবে। চিংড়ির প্রিপারেশান রয়েছে গোটা দুতিন। চিংড়ি থাকলে আর কোনো খাবারের দিকে চোখ যাবে না আমার। ন্যাচারালি দাম বেশি। তাও বাজেটের মধ্যে কুলিয়ে যাবে টায়ে টায়ে। রিসেপশানে ফোন করে খাবারের অর্ডার দিলাম। ওরা বলল আধঘন্টা পরে ঘরে পৌঁছে দেবে। আমি তাড়াতাড়ি চান সেরে ফেলব ঠিক করলাম। আমার ঘরটার পাশেই সেই মেয়েটির ঘর, কিন্তু দুজনেই টায়ার্ড আজ তাই কাল সকালে আবার দেখা হবে বলে আগেই গুড নাইট করে দিয়েছি। আমাদের ঘরদুটোও করিডোরের একেবারে শেষ প্রান্তে। ছেলেরা, সংসারীরা কোন ফ্লোরে কে কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রুম পেয়েছে জানি না।
    আপন মনে চান করে চলেছি, হঠাৎ মনে হলো ঘরের মধ্যে টেলিফোনটা বাজছে যেন। জল বন্ধ করলাম। নাঃ, কোনো শব্দ নেই। ভুল শুনেছি তাহলে। আবার চান কন্টিনিউ করছি আবার আওয়াজ ফোনের। ভাবলাম চান তো প্রায় হয়েই গেছে, খাবারও দিতে আসবে এবার, জলটা বন্ধ করলাম। এবার পরিষ্কার শুনতে পেলাম ফোনটা বাজছে। হ্যাঁ, আমার ঘর থেকেই। যেই তোয়ালে জড়িয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়েছি, আর ফোন বাজছে না। মনের ভুল হতে পারে, বা অন্য ঘরে হবে হয়ত। এবার রুম সার্ভিস আসবে। তৈরী হয়ে নিলাম। ঘরে একটা টিভি রয়েছে, সেটা এখন চালাতে ইচ্ছে করছে না। খিদে পেয়েছে, ভাবলাম দরজাটা ঠিকমতো লক করা আছে কিনা দেখি। দরজার কাছাকাছি যেতেই যেন শুনতে পেলাম দূরে কোথাও বাসনপত্র পড়ে যাবার আওয়াজ। কাচের বাসন। কিছু একটা ভেঙেছে মনে হয়। প্রায় একঘন্টার ওপর হয়ে গেল, রুম সার্ভিস এখনো আসছে না কেন? কত দেরি করবে এরা ডিনার সার্ভ করতে? চিংড়ির ডিশ চেয়েছি বলে কি এখন নদীতে গেছে নাকি চিংড়ি ধরতে? ফোন করে জিজ্ঞাসা করব নাকি রিসেপশানে? ফোনের দিকে যেই হাত বাড়িয়েছি, ফোনটা ঝনঝন করে বেজে উঠল। সেইসঙ্গে দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ।
  • সে | 198.155.168.109 | ২২ জুন ২০১৬ ২০:৫৯620901
  • দুটো জিনিস একসঙ্গে ঘটায়, আমি চমকে গেছলাম। বোধহয় বলতেও চাইলাম, কে? কিন্তু অনেকক্ষণ কথা না বলায় গলাটা কেমন ধরে ছিল। জোরে আওয়াজ বেরোলো না।
    কোনটা আগে করি? ফোনটা ধরব, না দরজা খুলব? ফোনটাই ধরলাম আগে। হ্যালো বলতেই, ওপ্রান্ত থেকে চেঁচানি শোনা গেল - এতক্ষণ ফোন ধরছিলে না কেন? করবার ট্রাই করেছি জানো? ঠিকঠাক পৌঁছলে কিনা সেটা জানানোর দরকার নেই?
    তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে দরজা খুলি। আমার চিংড়ির প্রিপারেশান নিয়ে বেয়ারা ঘরে ঢুকে পড়ল। খাবার রেখে বেরিয়ে যাবার সময় বলল, ঐ সিঁড়ির দিকটায় যদি যান, দেখে যাবেন, ভাঙা কাঁচ আছে।
    - কিছু ভেঙেছে বুঝি?
    - হ্যাঁ, বিয়ার বটল। সরিয়ে নেবে। তাও দেখে যাবেন। বলা তো যায় না, যদি লেগে যায়।
    সে চলে গেল। দরজা লক করতে গিয়ে একবার করিডোরে উঁকি দিয়ে দেখে নিলাম। কয়েকটা আলো নিবিয়ে দিয়েছে। দূরে একটা জ্বলছে। সে আলোয় স্পষ্ট করে কিছুই প্রায় দেখা যায় না।
    আমার তাতে কিছু এসেও যায় না। এত রাতে আমি সিঁড়ির দিকে যাবই বা কেন খামোখা?

    যাক। তাহলে আমি কিছুই ভুল শুনিনি। না টেলিফোনের শব্দ, না কাচের আওয়াজ। তবু কেমন যেন ভয় ধরে গেছল একলা ঘরে। মনে হচ্ছিল হরর মুভির মতো কিছু হতে চলেছে।

    তারিয়ে তারিয়ে চিংড়ি খেয়ে, এঁটো বাসন একধারে সরিয়ে রেখে সেই যে ঘুমোলাম, একঘুমে সকাল। কোত্থেকে যেন হিন্দি সিনেমার গানের আওয়াজ আসছে। টিভি বাজছে পাশের ঘরে।

    না না না আ-
    গোরিয়া চুরানা মেরা দিয়া,
    গোরিয়া চুরানা মেরা দিয়া...

    সেই সঙ্গে মিউজিক।
  • সে | 198.155.168.109 | ২২ জুন ২০১৬ ২২:৪১620902
  • ঘরে ব্রেকফাস্ট আনিয়ে খেয়ে দেয়ে অফিসের পোশাক পরে চুল আঁচড়ে পাশের ঘরের দরজায় টোকা দিলাম। সেখানে তখনো টিভি বাজছে। সেই মেয়েটিও চান টান করে দস্তুরমতো রেডি, যদিও ব্রেকফাস্ট শেষ করতে পারেনি। টোস্ট মাখন জেলি ওমলেট সমস্তই অল্প অল্প খেয়েছে। সকালের দিকে কোনো একটা কেবল্ চ্যানেলে একেরপর এক হিন্দি গানের চিত্রমালা হয়, সেটাই দেখে চলেছে। বেশ কয়েকটা আমার চেনা গান। এর মধ্যে, আঁখিয়োসে গোলি মারেটার সঙ্গে আমি ছাত্রজীবনের শেষের দিকে নিজেও কোমর দুলিয়েছি। গানটা শুনলেই কোমরটা দুলে ওঠে। এটা সম্ভবত কন্ডিশান্ড রিফ্লেক্স অ্যাকশান। কিন্তু, এটা অফিস। হোটেল হলেও অফিস। সবাই অফিস কোলিগ। যতই হাসি ঠাট্টা গল্প গুজব করি না কেন, যতই তুমি থেকে তুইয়ে নেমে আসুক না কেন সম্বোধন, নিজেকে সংযত করতে হয়। কে কোথা থেকে কাকে কী লাগিয়ে দেবে, তা বলা যায় না। মেয়েটিকে তাড়া লাগাই। আটটায় গাড়ি আসবার কথা না নীচে? আটটা তো বেজে গেছে।
    সে খুব একটা গা করে না। বলে, আটটা না, সাড়ে আটটা। এত সকাল সকান গিয়ে কী করবি? ঝাড়ু দিবি নাকি?
    তা ও ওকে প্রায় জোর করেই নীচে নিয়ে আসি। সিঁড়িতে করিডোরে কোথাও ভাঙা কাঁচের টুকরো দেখতে পাই না। গাড়ি এসে যায় একটু পরেই। কিন্তু আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। জীপ টাইপের গাড়ি। সুমো সম্ভবত। ছ সাতজন অনায়াসে এঁটে যাবে। দুজন ফ্যামিলি ম্যান নেমে আসেন এবার, তাদের একজন বিশু। আমাদের হোটেল থেকে তাহলে আপাতত চারজন হলো। বাকিদের সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের চারজনকে নিয়ে জীপ ছেড়ে দেয়, যাবার পথে পাশের হোটেল থেকে আরো কয়েকজনকে তোলে। তার মধ্যে একজন হচ্ছে সুদীপ্ত। সুদীপ্তর হোটেল পছন্দ হয় নি, সে আমাদের হোটেলে শিফট করবে কিনা ভাবছে। সেরকম শীত নেই যদিও, তবু সে পরে আছে রোল কলার পুলোভার, নেভি ব্লু রঙের। বারবার বলছে যে ওর খুব ঠাণ্ডা লেগে যাবার ধাত। আসবার আগে ওর দিদি বারবার বলে দিয়েছে সবসময় সোয়েটার পরে থাকতে। এই সোয়েটার দিদি নিজের হাতে বুনে দিয়েছে।
    এতসব কথা কেন যে ও বলছে কে জানে। সবই তো ফুল টস। এরপরে পাবলিক ওকে কথায় কথায় খেপাবে তা কি ও জানে না?
    বিশু চুপচাপ। আমাদের হোটেলের অন্য ফ্যামিলিম্যান, ধরা যাক তার নাম কৌশিক, সে একবার বলতে গেল, বিশু, তুমি খেয়েছ?
    বিশু রেগে গেলে অল্প তোৎলায়। বলল, সবকিছুরই লি—
    কৌশিক চুপ করে আছে।
    - লিমিট থাকা উচিৎ
    বিশু সেন্টেন্স শেষ করবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কারখানার গেটের সামনে পৌঁছে গেছি।
    অফিসঘরে ঢুকে দেখি আরো দুজন সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। তারা মন দিয়ে কাজ করছে। এদের একজনকে আমি আগেই চিনি। এ হচ্ছে কম্প্যাকের সেই ইঞ্জিনীয়ারের অ্যাসিস্টেন্ট। আমাদের সেই তিনমূর্তির আরেকজন, যারা তারাতলা রোডের বাসে সেই তর্ক ও আলোচনার সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু সে এখন আমায় দেখেও চিনছে না। অন্য লোকটি একদম অচেনা মুখ। কিছুক্ষণ পরে আমাদের গ্রুপের একটা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ লোকটা কে রে?
    সে ও বিশেষ কিছু জানে না। লোকটা গম্ভীর মত। চুপচাপ কীসব কাজ করে চলেছে। একবার উঠে বাইরে গেল। তারপর হৈ হৈ করে হুড়মুড়িয়ে অফিসঘরে ঢুকে পড়ল আমাদের টিমের বাকি জনতা। একে তো সব দেরি করে এসেছে, তায় সকলের তখনো ঠিকমতো ঘুম ভাঙেনি। আমার ঠিক পাশের টেবিলটা সেই জুনিয়ারের। নাম শমিত। ওর চোখদুটো লাল হয়ে রয়েছে। আমার সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে সে বলল, তিনটের সময় ঘুমোতে গেছি, এখনো সিস্টেম ঠিকঠাক বুট হচ্ছে না। আচ্ছা, এদের কফি মেশিন নেই? বালের জায়গা মাইরি।
  • সে | 198.155.168.109 | ২২ জুন ২০১৬ ২৩:২১620903
  • লাঞ্চের একটু আগে কমপ্যাকের সেই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
    - আপনারা কবে এলেন? কালকে?
    - হ্যাঁ কালকে। আপনি?
    - আমিও কাল এসেছি। রাত্রে।
    - রাত্রে? সিলভারজেট রাত্রেও চলে নাকি! আমাদের যে বলল-

    সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিষাদের সুরে বলে, আপনারা আছেন ভাল। আমাদের অফিস সিলভারজেটের টিকিটের দাম দেবে না। ট্রেনে এসেছি।
    হলদিয়া অবধি যে রেল লাইন হয়ে গেছে এটা আমার জানা ছিল না। তাই আবার প্রশ্ন করি, তাই বুঝি? অথচ এদিকে আমাদের বুঝিয়েছে ট্রেন নেই, সিলভারজেটই একমাত্র ভরসা।
    ছেলেটি বলে, না না ঠিকই বলেছে, হলদিয়ায় ট্রেন আসে না তো, কুকড়াহাটি অবধি আসে, তারপরে বাস নিতে হয়, বা প্রাইভেট।
    - আপনার সঙ্গে আরেকজন আছেন দেখলাম। আগে দেখিনি। দুজনে একসাথে এলেন?
    - না। আমি তো একা এলাম। কার কথা বলছেন বলুন তো? ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। ও এদের লোক। ভেতরের লোক। আমাদের ওপর নজর রাখছে মনে হয়।
    - তার মানে গুপ্তচর?
    ছেলেটা মুচকি হেসে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
  • সে | 198.155.168.109 | ২২ জুন ২০১৬ ২৩:৫৫620749
  • লাঞ্চের পরে যে শমিত ফেরেনি সেটা আমি একদম খেয়াল করিনি। গুপ্তচর লোকটিও লাঞ্চের আগেই কোথায় যেন চলে গেল। তার সীটে এখন আমাদের টিমেরই একটা ছেলে বসে আছে।
    বিকেলের দিকটায় একটা ছোটো ব্রেক নিলাম। অন্য মেয়েটির সঙ্গে হেঁটে গেট অবধি যাবো, এই আমাদের অভিপ্রায়। সঙ্গে সুদীপ্তও এলো। সে তো কথা বলতে শুরু করলে আর থামে না। কবে তাদের বাড়িতে কিছু কাঠের কাজ হয়েছিল, বেশ কয়েক হাজার টাকার কাজ। তা ছুতোর মিস্তিরিকে অতগুলো টাকা ক্যাশ একসঙ্গে দেবার আগে সুদীপ্তর বাবা ব্যাঙ্কে যাবেন যাবেন করছেন, তখন ছুতোর মিস্তিরি বলল, আপনি আমাকে চেক দিয়ে দিন। তাই শুনে সুদীপ্তর বাবা কাঠের মিস্তিরিকে বেয়ারার চেক লিখে দিলেন। এদিকে দিন যায়, সপ্তাহ যায়, চেক কেউ ভাঙায় নি। সুদীপ্তর বাবা ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নেন, কেউ চেক ভাঙিয়েছে কিনা, জানা যায় টাকা কেউ তোলে নি। এসব থেকে সুদীপ্তর বাবা চিন্তায় পড়ে যান। পাড়ার কে যেন ওঁকে বলেছে, যে চেক ঘোরে।
    এই "চেক ঘোরে" টা শুনে আমরা দুজন সুদীপ্তর কাছে জানতে চাইলাম ব্যাপারটা। ও বুঝিয়ে দিক। তখন সুদীপ্ত বলল যে, ওদের ওদিকে টাকার বদলে বেয়ারার চেক দিয়ে হাতে হাতে পেমেন্ট হয়। একজন কোনো কাজের জন্য বেয়ারার চেক পেল, সে আবার কিছু একটা কিনল, সঙ্গে ক্যাশ নেই ঐ চেকটাই দোকানদারকে দিয়ে দিল, কি ধার শোধ করল। এইরকম। কিন্তু এইরকম কাজে অনেক ঝামেলাও থাকে। চেক যদি কোনো গুণ্ডা বদমাইশ মাস্তান কি খুনি টুনির হাতে পৌঁছে যায়, তখন কী হবে? ধরা যাক, ফাইনালি চেকটা খুনির হাতে গেছে, সে তখনো চেকটা ভাঙায় নি, এদিকে পুলিশ তাকে চেক সমেত অ্যারেস্ট করেছে। পুলিশ তো চেকটা হাতে পাবে। পাবে কি না?
    আমরা মাথা নাড়ি, সায় দিই।
    তারপর? তারপরেই তো আসল ঝামেলাটা পাকবে। চেকটা কার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের? পুলিশ ঠিক সেটা বের করে ফেলবে দুমিনিটও লাগবে না। তারপরে যার চেক তাকে এসে ধরবে।
    আমাদের সব গুলিয়ে যেতে থাকে। তারমানে সুদীপ্তর বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে ইশু করা চেক একজন খুনির পকেটে চলে গেছে? পুলিশ সুদীপ্তর বাবাকে অ্যারেস্ট করতে পারে যেকোনো সময়ে। এতো ডেঞ্জারাস ব্যাপার।
    সুদীপ্ত আমাদের আশ্বস্ত করে, আহা , না না, এখনো তেমন কিছু হয় নি, কিন্তু হতেও তো পারে। তারওপর আমাদের ওদিকে অ্যান্টিসোশাল এলিমেন্টস প্রচুর।
    কোনদিকে থাকিস তুই?
    আমরা প্রায় সমস্বরে জিজ্ঞাসা করি।
    আমাদের প্রোজেক্ট অফিসটা জানিস তো কোলকাতায়? স্টেট গ্যারেজ। ওখান থেকে আরো অনেক ওয়েস্টের দিকে। গার্ডেনরীচ জানিস তো? সেই দিকে। রাজাবাগান এরিয়া। ওসব এরিয়ায় একটু সাবধানে থাকতে হয় চেক টেকের ব্যাপারে।
    আমরা গেটের সামনে এইসমস্ত আলোচনা করছি, একটা ভ্যান রিক্সা এসে দাঁড়ায় সেখানে। রিক্সার ওপরে বাবু হয়ে বসে আছে শমিত। ওর হাতে একটা খবরের কাগজের প্যাকেট। বেশ বড় প্যাকেট। কিন্তু ময়লা মত। ভ্যান থেকে নেমে আমাদের দিকে হাসিমুখে এগিয়ে আসে শমিত। তারপর আমার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে বলে, তুমি এটা নিয়ে ভেতরে চলে যাওতো, আমার সীটের নীচে রেখে দিও, কি নিজের কাছেও রাখতে পারো।
    - কী আছেরে এর মধ্যে?
    শমিত উত্তর দেয় না। বলে, যাও না, আসছিতো রে বাবা দুমিনিটের মধ্যে।
  • ranjan roy | 132.180.220.170 | ২৩ জুন ২০১৬ ০০:১০620750
  • সে কোন মানুষ নয়; অদ্ভূত সব অভিজ্ঞ্তার খনি একটি!
    ওর প্যাঁটরা থেকে কী কী যে বের করে দেখাবে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ০০:৫৭620751
  • আমরা আবার প্ল্যান্টের কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢুকে গেলাম, কেউ গেটপাস দেখতে চাইল না। কোনো চেকিং হলো না। দামি সালোয়ার কামিজপরা লেডিসলোকেদের সংখ্যা এখানে নগন্য। সবাই পুরুষ। কোনো মেয়ের মুখ দেখেছি বলে মনেই পড়ে না। প্যাকেটটা নারকোলের সরু দড়ি দিয়ে বাঁধা। সাইজের তুলনায় ওজন খুবই হাল্কা। এখন অফিস স্পেসে ফিরবার তাড়া। অনেকটা ব্রেক নেওয়া হয়ে গেছে। ফেরার রাস্তায় অন্য মেয়েটি সুদীপ্তর সঙ্গে প্রোগ্রামিং ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করে দিল। একদিক দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত, যে সুদীপ্তর বাবার এখন পুলিশঘটিত কোনো ফাঁড়া নেই। সেই চেকটার আল্টিমেটলি কী হলো, সেটা অবশ্য সে আর বলবার স্কোপ পেল না, শমিতকে ভ্যান রিক্সার ওপরে ওভাবে আসতে দেখে আমাদের আলোচনার খেই হারিয়ে গেছল। ফেরার রাস্তায় টপিক ঘুরে গেল টেকনিক্যাল আলোচনায়। এর মধ্যে সূর্য ডুবে গিয়ে জায়গাটা অন্ধকার হয়ে আসছে। অফিস ঘরে লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাস্ট বেঞ্চের দিকটায় মৃদু জটলা। আমাদের টেবিলগুলো এত ছোটো ছোটো যে মাউস ঘোরাবার জায়গাও প্রায় থাকে না। শমিতের টেবিলের তলায় একটা ব্যাগ রয়েছে। চেয়ারের তলাটা ফাঁকা। চেয়ারের তলায় আমি প্যাকেটটা রেখে দিলাম।
    নিজের সীটে বসে কাজ করতে করতে পেছন ফিরে দেখলাম ঐ জটলার মধ্যে একজন পূর্বকথিত গুপ্তচর। আবার সে এসেছে ফিরিয়া। কিন্তু শমিত দুমিনিটের মধ্যে আসবে বলে কোথায় চলে গেল আবার? প্রোজেক্টের কাজ না করে ও কোথায় গেছল লাঞ্চের পরে? আমাদের টিম লিডার প্রসন্ন কি এসব জানে? শমিত যে এতক্ষণ ধরে উধাও, তা সত্ত্বেও কেউ তো ওকে খোঁজে নি।
    পেছনের জটলা শেষ। কয়েকজন লোক আলোচনা শেষে বেরিয়ে যাচ্ছে। শমিতের টেবিল ও আমার টেবলের মধ্যিখানের যে রাস্তাটা, সেখান দিয়েই লোকে যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তা খুবই সরু। আসতে যেতে সতর্ক না থাকলে ধাক্কা লেগে যায়। এখন গুপ্তচরসহ দুচারজন বেরিয়ে যাবার টাইমে ধাক্কা লেগে শমিতের চেয়ারটা একটু সরে গেছে কখন। শুধু তাই নয়, চেয়ারের তলায় রাখা সেই ময়লা খবরের কাগজটার ওপরে কারো বুটের চাপ লেগে সেটা ফেটেও গেছে। প্রথমদিকে কেউ সেটা দেখেনি। আমার পেছনে বসা মেয়েটি একটু পরে লক্ষ্য করল, কোণাকুনি পেছনে বসবার এই একটা অ্যাডভান্টেজ। সবার আগে ওরই চোখে পড়েছে যে প্যাকেটটা ছিঁড়ে গেছে, বা খুলে গেছে, এবং খবরের কাগজের নিজস্ব একটা ধর্ম আছে, আপনা আপনি খুলে যায়। সেই খোলা প্যাকেটের ভেতর থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শুকনো পাতার মত কিছু জিনিস।
    টিম লিডার প্রসন্ন তাড়াতাড়ি এসে প্যাকেটটা তুলে নিয়ে ভালো করে বেঁধে ফেলল।
    - শমিত কোথায়?
    আমি আমতা আমতা করে বললাম, আসছে, দুমিনিটের মধ্যে।
    - এখানে এটা কে রেখেছে?
    আমি বুঝতে পারছি না কী বলব। চুপ করে আছি যেন কিছুই জানি না। প্রসন্ন বিরক্ত হয়ে বলল, গাঁজা এভাবে ওপেনলি রাখতে হয়? কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? এটা ক্লায়েন্ট সাইট। যদি কেউ দেখে নিত?
    এই বলে প্রসন্ন গাঁজাটা নিজের কাছে রেখে দিল।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ০১:৫১620752
  • শমিত ফিরে আসবার পরে টাকা পয়সার হিসেব শুরু হয়ে গেল। গ্রুপের উদ্যোগেই এই গাঁজা কিনতে গেছল ও আজ লাঞ্চের পরে। প্রচুর ঘুরতে হয়েছে। প্রথমে একটা জায়গায় গেছল, সেখানে দাম বেশি চাইছে, কোয়ালিটিও দেখে বিশেষ সুবিধের মনে হয় নি। অল্প টেস্ট করতে দিয়েছিল। তারপর ভ্যান রিক্সাওয়ালাকে বলে আরো বেশ একটু দূরে কী একটা মোড় আছে, সেখানে চায়ের দোকানেই পাওয়া যায়। বলে রেখেছে সেখানে, দরকার হলে আরো আনিয়ে রাখবে বা ওদের লোক এসে গেটের বাইরে দিয়ে যাবে। প্রায় দুতিনঘন্টা কি আরো বেশি সময় রোদে রোদে ঘুরে ঘুরে টেস্ট করে করে গাঁজা কিনে ওর চেহারায় বেশ রুক্ষ্মমত ভাব, তারওপর গতরাতে ঘুমোয়ওনি বিশেষ।
    প্রসন্ন কিছুতেই ওর থেকে টাকা ফেরৎ নেবে না। ওযে এত রিস্ক নিয়ে এতবড় একটা কাজ করে ফেলেছে সাকসেসফুলি, সে ব্যাপারে ওর প্রতি অনেকেই কৃতজ্ঞ। প্রথমদিন কোলকাতা থেকে অত ভোরে সিলভারজেট ধরবার তাড়া না থাকলে আজ এত খাটতে হতো না। অবশ্য সে স্টকও খুব বেশি না। আশা করা যাচ্ছে আজকের স্টকটায় বেস্পতিবার অবধি চলে যাবে আরামসে। তিনটে তো রাত। আর খুব বেশি টানাটানি হলে, হোটেলের বেয়ারাদের বলবে। টুম্পাদের কাছ থেকে এনে দেবে, কাল যেমন এনে দিলো।
    টুম্পার নাম এর আগেও ওদের আলোচনায় শুনেছি। ওদের চেনা কোনো মেয়ে? হলদিয়ায় থাকে? কারো আত্মীয়, নাকি বন্ধু? হয়তবা গার্লফ্রেণ্ড। কিন্তু নামটা সকলেরি চেনা। আমাদের প্রোজেক্টের কেউ?
    আমার পেছনে বসা মেয়েটিকে বলবার পরে, সে হেসে কুটিপাটি। বলে, তোর একটা ইন্ডাকশান ট্রেনিং চাই আমাদের টিমে কাজ করবার জন্যে। কোন গ্রহ থেকে এসেছিস তুই? টুম্পা হলো, টিপিকাল আনসিভিলাইজড মিদনাপুরিয়ান পিপলস অ্যাসোসিয়েশান, এক কথায় লোকাল পাবলিক। আই আই টি খড়গপুরের কমন টার্ম।
    তা হলদিয়ায় তো মেদনিপুর জেলাতেই। টুম্পা এখানেও আছে। কোড ওয়ার্ড। বুঝতে পেরেছিস এখন?
    পাশ থেকে শমিত ফুট কাটে, আরেকটা টার্ম হচ্ছে "বাপী"। ওটা এত তাড়াতাড়ি তোমাকে বলা যাবে না। ওটা অ্যাডাল্ট টার্ম।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ০৩:৩৭620753
  • সেইদিন থেকেই হোটেল গমগমিয়ে উঠতে লাগল সন্ধের পর থেকে। যেসব কনসাল্টেন্টরা অন্য হোটেলে ঠেশে গেদে ছিল, তারা আমাদের হোটেলের ফাঁকা ঘরগুলো ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ বেসিসে দখল করে নিল। রাত নটার পর থেকে আওয়াজের তীব্রতা বাড়তে থাকে। আমাদের ফ্লোর ও নীচের ফ্লোর থেকে হুপহাপ ধুপধাপ আওয়াজ চিৎকার হাসাহাসি বোতল বা অন্যকোনো কাচের সামগ্রী ভাঙার আওয়াজ শোনা যায়। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে, হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছি, তারপরে হঠাৎ মধ্যরাতের স্তব্ধতা ভেঙে খানখান করে হিহি হাসি বা চিল চিৎকারে আঁতকে ঘুম ভাঙবার পরে ঠাওর করি কোথায় রয়েছি, শুনতে পাই হোহো হাহা খিলখিল হাসি, সে আওয়াজ কমতে না কমতেই গমকে গমকে অট্টহাস্য। আওয়াজ কমে গেলেও চট করে ঘুমোতে সাহস হয় না, ফের যদি আবার আচমকা ওরকম কিছু ঘটে সেই ভয়ে। করিডোরে অল্প দৌড়োদৌড়ির শব্দ, তারপরেই দাম্ করে কোথাও দরজা বন্ধ হয়ে গেল। মোটকথা, এইসমস্ত আওয়াজের কারণ যদি কারো না জানা থাকে তো সে ভাবতেই পারে যে এ হোটেলে প্রেতাত্মারা আছে, রাত বাড়লেই এদের উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। যাইহোক, তিনটেতো মোটে রাত - মঙ্গল, বুধ আর বিষ্যুদবার। শুক্রবার বিকেলেই আমরা সিলভারজেটে করে ফিরে যাব কোলকাতা। কোলকাতায় ফিরে শান্তিমতো ঘুমিয়ে নেবো। তারপরে আসছে নতুন বছর। ওয়াই টু কে। বর্ষশেষের গভীর রাতে, কী যে হবে তা কেউ জানে না। যত পারো এখন ফুর্তি করে নাও। দুনিয়া রসাতলে যেতে পারে ঐদিন।
    বেস্পতিবারে কমপ্যাকের সেই ছেলেটি সন্ধেবেলায় আমার কাছে এসে টাটা করে চলে গেল। অনেকটা পথ এখন যেতে হবে তাকে। প্রথমে কুকড়াহাটি, তারপর ট্রেনের অপেক্ষা।
    - কিন্তু বেস্পতিবারে কেন? তুমি কালকে কী করবে? কাল তো শুক্রবার।
    - কাল কোলকাতার অফিসে যাব।
    - সে অফিসে তো কিছু নেই। সব মেশিন পত্রই তো এখানে চলে এসেছে।
    - কই তেমন কিছু তো জানিনা। দুটো সারভার এখানে এসছে জানি। আর দুটো তো এখনো পর্যন্ত কোলকাতায়। প্রোডাকশান সারভারটাইতো কোলকাতায় রয়ে গেছে। স্যান্ডবক্সটাও। বিকাশদাতো রোজ ঐ অফিসেই যাচ্ছে।
    বিকাশদা হচ্ছেন মূল ইঞ্জিনিয়ার যিনি।
    এর পরে সে ব্যাগ হাতে নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে যায় কুকড়াহাটির জন্য ট্যাক্সি ধরতে।
    আগামীকাল বিকেলে আমরা ধরব সিলভারজেট। তারপরে ফের সোমবার ভোরে। এরকম কতদিন চলবে কে জানে।
    শুক্রবার সকালে সবাই হোটেল থেকে চেকাউট করলাম যদিও, কিন্তু সব ঘর ছেড়ে দেওয়া হলো না। তিনটে ঘর শনি রবিও থাকবে তিনজনের নামে। তারা যদিও ফিরে যাচ্ছে, তবুও ঘরগুলোর ভাড়া গোনা হবে। কাগজে কলমে তারা এখানেই থেকে যাচ্ছে।
    বিকেল সাড়েচারটে নাগাদ হলদি নদীর ম্যাদামারা ছাপোষা বন্দরে গিয়ে গুটি গুটি সবাই উঠলাম সিলভারজেটে। এবারে অত কায়দা টায়দা বিশেষ নেই। বোর্ডিং পাস, চেকিং, ওসবের বালাই ছিল না। মারমেইডেরা ছিলেন, কিন্তু একটু টায়ার্ড। ক্যাটামারান হুগলী নদীতে পড়বার পরেই ঝপ করে সন্ধে নেমে এলো। সেই নাইনটি নটিক্যাল মাইল পার আওয়ারে চলছে জলযান। তখন জোয়ার না ভাটার টাইম সে নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। পশ্চিম আকাশ লাল হতে হতে একদম অন্ধকার হয়ে গেল। জাহাজের ভিড় কাটিয়ে আমরা চলছি সোজা উত্তরমুখো, সবার মনে হেবি টেনশান, কোলকাতায় পৌঁছে ট্যাক্সি পাবো তো? ঘাটের কাছে যদি ট্যাক্সি না পাওয়া যায় তাহলে কী হবে? বাস পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই ধর্মতলা অবধি। ব্যস, তাহলে টেনশানের কিছু নেই।
    সিলভারজেটের মধ্যেই প্রসন্ন জানিয়ে দেয় সবাইকে আগামী সপ্তাহে আসবার দরকার নেই। মেয়েদের মধ্যে আমি সেই লিস্টে। আমি থাকব কোলকাতা অফিসে। ওয়াই টু কে র রাতে হয়ত সারারাত থাকতে হতে পারে কোলকাতা অফিসে। বিপদ কোত্থেকে আসবে কেউ তো জানে না।
    যাবার দিন সকালে আমাদের মধ্যে যে গ্ল্যামার ছিল, ফেরার পরে সেসব টোটাল উড়ে গেছে। তাও ভাল, মাঝে একটা সপ্তাহ কোলকাতায় থাকতে পারব।
    ফ্যামিলিমেনদেরো বৌ নিয়ে ক্লায়েন্টসাইটে যাবার আগ্রহ আর দেখা যাচ্ছে না। বিশুতো সোজা বলে দিয়েছে, পরেরবের বৌকে আনবার প্রশ্নই নেই।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ০৩:৪৯620754
  • কোলকাতার যত কাছে আসি আলো তত বাড়ে। আর একটু পরেই তো খ্রিস্টমাস। ফিরতে সময় একটু বেশি লেগেছে ঠিকই, তবে সবে তো সন্ধ্যারাত্রি। ঝলমল করছে কোলকাতা বন্দর। সেখানে অবিশ্যি আমাদের নৌকো নোঙর করবে না। আমাদের জন্য স্পেশাল ঘাট।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ০৪:৩৮620755
  • আবার সেই পুরোনো অফিস। আবার সেই তারাতলা রোড। সেই ধুলো, ট্র্যাফিক জ্যাম, আওয়াজ, ভীড়। তবু মনে হতে থাকে মাঝখানে যেন অনেকদিন ছিলাম না এখানে। যেন অনেক মাস। অফিসটা মোটের ওপরে ফাঁকা। কমপ্যাকের দুজন, এবং আমাকে নিয়ে হলদিয়া ফেরৎ গোটা পাঁচজন। আর আছে এই কোম্পানীর কিছু লোকজন। তাদের সঙ্গে আগে মেলামেশা করবার সুযোগ ছিল কম, এখন লোক কমে গেছে, তাই কথা বার্তা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বারোজন মত। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালে কাজ করে দুজন মেয়েও এখানে আছে। তাদের আগে দেখেছি কিন্তু তারা ক্লায়েন্ট পার্টি বলে একটু দূরত্ব রাখতে হতো। এখন লোক কম, বাধানিষেধের ধার ধারেনা কেউ। প্রোজেক্ট ম্যানেজার দিদিমুনি বা টিম লিডার প্রসন্ন, কেউই নেই। যে দুটি মেয়ে ছিল ওখানে তাদের একজনের নাম সুরঞ্জনা, সে নাকি আগে আমাদের এই কনসাল্টিং কোম্পানীতে কাজ করেছে, তারপরে চাকরি পায় এইখানে। সেই সুরঞ্জনাকে আমাদের টিমের লোকেরা আড়ালে অন্য নামা ডাকে। ললিতা। অনেকেরই হয়ত আড়ালে অন্য নাম দেওয়া হয়। হয়ত আমাকেও ওরকম নাম দিয়েছে কিছু।
    শুক্রবার সন্ধেয় সিলভারজেটের মধ্যেই একটা প্রোজেক্ট মিটিং মতো হয়ে গেল। সেখানেই আমাকে বলা হলো, কোলকাতা অফিসে ললিতা সখী আছে, আরো কে কে যেন আছে। বিকাশের সঙ্গে বসে হয়ত সারারাত জাগতে হবে একুত্রিশে ডিসেম্বর।
    - ললিতা সখীটাকে?
    তখন টিম লিডার প্রসন্ন চিনিয়ে দেয়। - ঐ সুরঞ্জনা আরকি। সখী টখি নয়, জাস্ট ললিতা। ইয়ার্কি মেরে বললাম। ওর সামনে আবার বোলো না যেন।
    - কিন্তু নাম ললিতা দেওয়া হয়েছে কেন?
    প্রসন্ন হালকা হেসে একটা চোখ অল্প কুঁচকে ছোটো করে দেখিয়ে বলে, ললিতা পাওয়ার থেকে ললিতা। হিন্দি সিনেমায় দেখনি ললিতা পাওয়ার কে?

    এইবারে সুরঞ্জনাকে কাছ থেকে দেখি। বেশ কাছ থেকে। হ্যাঁ, ওর ডান চোখটা ও পুরোপুরি খুলতে পারে না, দুটো চোখ খুললে দুটো সমান লাগে না। সুরঞ্জনা যতবার আমার কাছে আসে, ততবার আমার মনে পড়ে যায় প্রসন্নর সেই চোখ কুঁচকে নামটা বলে দেবার ভঙ্গীটা। আমি ওর দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে কথা বলতে পারিনি প্রথম দিকে। ও কিন্তু অকপটে সবার কুশল সংবাদ জানতে চায়, এমনকি প্রসন্নরও।
    অন্য মেয়েটা ইন্দ্রাণী, কাছেই থাকে বেহালায়। সে ঐ এক সপ্তাহের মধ্যে অন্ততঃ তিনদিন মেয়েদের বাথরুমের পাশটায় লাগোয়া ঘরটাতে নিয়ে গিয়ে প্যাকেট খুলে খুলে দেখায় নতুন কেনা সালোয়ার কামিজের কাটপিস। ঐটাই ওর একমাত্র শখ। একেকটা পোশাক একেকরকম ডিজাইনে বানাতে দেবে দর্জিকে। আর তো মেরেকেটে দুমাস। মার্চের গোড়াতেই বিয়ে হয়ে যাবে। তারপরেও চাকরি করবে ও। তবে বিয়ের পরে তো নতুন অ্যাটমসফেয়ারে থাকতে হবে, তাই এখন চুটিয়ে সব শখ মিটিয়ে নিচ্ছে। পরে কী হবে, সে পরে দেখা যাবে।
    বিকাশ এমনিতে কথা কম বলে, তবে এখন আমাদের কাজের প্রেসারটা সেরকম কিছু নয়। মানে সবাই হয়ত ভাবছে, ওয়াই টু কে আসছে, না জানি কত কী করতে হচ্ছে তার আগে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, এই মুহূর্তে সত্যিই সেরকম কিছু করবার নেই অপেক্ষা করা ছাড়া। যা যা পরখ করে নেবার, সেসব হয়ে গিয়েছে। তবু সারাটা দিন অফিসে থাকতেই হয়। বিকাশ আসে শ্রীরামপুর থেকে। একটা ছোট্ট মেয়ে আছে ওর, আর বৌ। বৌ কেবল ভোগে, কেবল জ্বর হয়। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান। ডাক্তার বলেছে বেশি করে জল খেতে, তবু বৌ জল খেতে ভুলে যায়।
    সামনের শুক্রবার আর বাড়ি ফেরা হবে না আমাদের। সেদিন হচ্ছে বর্ষশেষ, তারপরে নিউ ইয়ার হ্যাপি হবে কি আনহ্যাপি কেউ জানে না।
  • d | 144.159.168.72 | ২৩ জুন ২০১৬ ১০:২৪620756
  • রিমলির ছিল এমনি জামাকাপড়ের নেশা। আমিও জামাকাপড় খুবই ভালোবাসি, কিন্তু রিমলি প্রত্যেক সপ্তাহে কিনত, নিজেই নানারকম ডিজাইন করে সেগুলো বানাতে দিত ....

    লিখুন
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ১৪:৪৯620757
  • একুত্রিশে ডিসেম্বরে কৌশিক অফিসে এলো একগাল হাসি নিয়ে। সব টাকা পয়সা এরই মধ্যে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে রেখে দিয়েছে। আমরা ভয় দেখালাম, এখন যদি বাড়িতে ডাকাত পড়ে তাহলে কী করবে?
    কৌশিক দমে না। বলে, সে আর কী করা যাবে? সেটাকে ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দেবো।
    এদিন কাজকর্ম কিচ্ছু নেই। কেবল গুলতানি আর গান আর এর ওর পেছনে লাগা। সিস্টেম ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে, তারপরে একাধিক ব্যাকাপ নেওয়া হয়ে গেছে, অনলাইন ব্যাকাপ, অফলাইন ব্যাকাপ, ফুল সিস্টেম ব্যাকাপ, মোদ্দা কথা যতরকমের সুরক্ষা নেওয়া যায় সব কমপ্লিট।
    দুপুরে ননভেজ লাঞ্চের প্যাকেটগুলো ভাগাভাগি করে খাওয়া হল ক্লায়েন্টের লোকজনদের সঙ্গে, কমপ্যাকের ওরাও এলো। এরকম বিনা পয়সায় রাজসিক লাঞ্চ বিলাসিতা তো ওদের নেই। মাঝে মাঝে সারভার রুমে কেন যে আমরা উঁকি দিয়ে দেখছি, তার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। বিকেলের দিকে প্রোজেক্ট ম্যানেজার দিদিমুনি ফোন করলেন - সব ঠিকঠাক চলছে তো?
    এটা জাস্ট সাহস দেবার একটা পদ্ধতি। বিকেল হয়। কৌশিক গল্প করে ফিলাডেলফিয়ার। আমরা ঝুঁকে পড়ে শুনি। ফিলাডেলফিয়া ফেরৎ আরো দুজনও যোগ দেয় সেই আড্ডায়। যখনই কৌশিক কিছু বাড়িয়ে বলে, ওরা হাঁ হাঁ করে বাধা দেয়, কৌশিক সামলে নেয়।
    ফিলাডেলফিয়ায় ওরা গেছল কোনো প্রোজেক্টের কাজে নয়, গেছল এই সফ্টওয়্যারটা শিখতে, কোর্স করতে। তখন তো ভারতে এই সফটওয়্যারটা শেখানোর তেমন কোন সেন্টার ছিল না, ব্যাঙালোর ছাড়া। সেখানেও খুবই সীমিত রিসোর্স। তাই নতুন কনসাল্টেন্টরা জয়েন করলেই সোজা দুমাসের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো অ্যামেরিকায়। মূল উদ্দেশ্য ট্রেনিং তো বটেই, সেই সঙ্গে বেশ খানিকটা পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট। আদব কায়দা, কথা বলবার স্টাইল, হড়বড়িয়ে কথা না বলা, কেমন করে পোশাক পরতে হয়, কেমন করে খেতে হয়, কথায় কথায় থ্যাংকস দেওয়া, এক্সকিউজ মী বলা, স্বসমক্ষে ঢেকুর না তোলা, হেঁচকি উঠলে কী করতে হয় -
    হেঁচকির কথা তুলতেই বাকি দুজন ওকে থামিয়ে দিল, এটা টুমাচ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
    তারপরে শুরু হলো, ঐ তিরিশ চল্লিশ কি ষাট দিনের পকেটমানি জমানোর চেষ্টায় কৃচ্ছসাধনের ঘটনাগুলো। দিনের পর দিন শুধু রুটি ও আলুর ঝোল খেতে খেতে, শেষে বিদ্রোহ করেছিল কে একজন। সে এখন এই প্রোজেক্টে নেই। তিনি একটু সিনিয়র। তিনি নাকি একদিন লুকিয়ে খানিকটা ল্যাম্ব কিনে আনলেন। রান্নাবান্না কিছুই জানেন না, কিন্তু মাংস না খেলে আর চলছে না। অন্যরা জানতে পারলে ভাগ দিতে হবে, তাই নিজের ঘরেই লুকিয়ে রান্না চাপিয়ে দিলেন। কিন্তু পাপ কি চেপে রাখা যায়? এতজন কোলীগকে বঞ্চিত করে লুকিয়ে মাংস খাওয়া অপরাধ বৈকি। রান্না লুকিয়ে করা যেতে পারে, কিন্তু সেই রান্নার গন্ধ কি অত সহজে চাপা যায়? ক্রমশ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল সেই ল্যাম্বের দুর্গন্ধ। গন্ধের জ্বালায় টিঁকতে না পেরে দলে দলে কনসাল্টেন্ট তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল গন্ধের উৎস সন্ধানে। গন্ধের তীব্রতা লোকেট করতে করতে সবাই পৌঁছল অরুণাভদার ( সেই ল্যাম্ব যিনি রাঁধছিলেন) ঘরের সামনে। দরজা ভেতর থেকে এঁটে বন্ধ করা ছিল। প্রথমে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া মেলেনি। তারপরে সম্মিলিত করাঘাতের ঠেলায় দরজা খুলে কাঁচুমাচু মুখে অপরাধীর মত দাঁড়ালেন। ধরা যখন পড়েই গেছেন, তখন ভাগ না দিয়ে আর উপায় কোথায়?
    কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা বিচারের বাণী অন্যরকম করে শোনালো। মাংসে ভাগ বসানোর তো প্রশ্নই নেই, গন্ধে গা গুলিয়ে উঠছে লোকজনের। শাস্তিস্বরূপ অরুণাভদাকেই একা খেতে হবে ঐ মাংস, নতুবা ফেলে দিতে হবে অবিলম্বে। জনতার কোর্টের বিচার, অমান্য করবার উপায় নেই। অরুণাভদা সেই ল্যাম্ব একটু একটু করে খাচ্ছেন, সবাই গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে, মাঝে মাঝে কারোকে রিকোয়েস্ট করছেন, তুমি একটু খেয়ে দেখলে পারলে কিন্তু, খেতে কিন্তু খারাপ হয়নি, নাও না, নাও, ইত্যাদি। জনতা তাতে ভুলছে না। এক সিটিংয়ে পুরো মাংসটা খাওয়া হয়ে যাবার পরেই নাকি ওঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
    এই গল্পটা বাকি দুজন ভেরিফাই করেনি, তারা তখন নীজে গেছল সিগারেট কিনতে।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ১৫:১০620758
  • কৌশিক এই গল্পটা বলবার পরে একটা তৃপ্তির হাসি হাসে। বলে, এখন বুঝতে পারছ তো যে কত কষ্ট করে পয়সা জমাতে হয়েছে? দিনের পর দিন আলুর ঝোল, আর ঐ একদিন মাত্র ঘ্রাণেন অর্ধভোজনমের ল্যাম্বটুকুও যদি ধর, তাও কি সেটা যথেষ্ট কৃচ্ছসাধন নয়? সেই পয়সা যাতে ওয়াইটুকের ঝামেলায় হাওয়া হয়ে না যায়, তার জন্যে প্রিকশনটুকু নিজের যা ভাল মনে হয়েছে করেছি, এতে তোমরা ঠাট্টা করতে চাও কর। ইউ আর ফ্রি টু ডু হোয়াটেভার ইউ ওয়ন্ট।

    একটু পরে সভা ভেঙে যায়। সবাই চলে যায় বাড়ি। থেকে যাই আমরা তিন মূর্তি। সেই বাসে চড়েছিলাম যে তিনজন। ওরা দুজন সেরকম জমিয়ে আড্ডা দিতে পারে না, চুপচাপ বসে থাকে। রাত নটা নাগাদ বিকাশ আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে, একটা কথা বলি? কিছু মনে যদি না করেন।
    - কী কথা?
    - আপনার সারারাত থাকবার কোনো দরকার নেই। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, যদি কিছু হয় সব দায়িত্ব নিজে নেবো। আপনি ভোরবেলা চলে আসুন। সাতটা সাড়ে সাতটা নাগাদ। কেউ জানতে পারবে না। প্রমিস। কতক্ষণ এখানে বসে থাকবেন? আমরাও একটু পরে পালা করে করে ঘুমিয়ে নেবো সারভার রুমে। চলে যান। কাল সকালে আসবেন।
  • Bratin | 233.191.42.25 | ২৩ জুন ২০১৬ ১৫:২৬620760
  • সে দি দারুন
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জুন ২০১৬ ১৬:১৩620761
  • আর তিন ঘন্টাও বাকি নেই শুরু হচ্ছে নতুন শতাব্দী। না, শুধু নতুন শতাব্দী নয়, নতুন সহস্রাব্দ। অবশ্য, হিসেবটা একটু ভুলভাল মনে হয়। দুহাজার সাল শেষ হলে তবেই তো তৃতীয় সহস্রাব্দ শুরু হওয়া উচিৎ, নাকি আমারই হিসেবে গুলোচ্ছ? সবাই যখন থার্ড মিলেনিয়াম, থার্ড মিলেনিয়াম করে চেঁচাচ্ছে, তখন ওরকমই হিসেব হয়ত। নতুন বছরে তারিখ লিখব কেমন করে? এই সমস্ত ভুলভাল চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে, ট্যাক্সি চলছে, আমি আর অফিসের কাজ নিয়ে কিছু ভাবছি না। কটা ঘন্টার জন্য ছুটি পেয়েছি - সেটুকু দায়িত্ব নিয়ে উপভোগ করতে হবে।
  • | 213.99.211.81 | ২৩ জুন ২০১৬ ১৭:২৩620762
  • তারপরে ?..
  • সে | 198.155.168.109 | ২৪ জুন ২০১৬ ০১:৫২620763
  • পয়লা জানুয়ারী সক্কাল সক্কাল পৌঁছে যাই অফিসে। সাতটা তখনো বাজেনি। মেইন গেটের দরজা বন্ধ। তবে ঠেলা দিতেই খুলে যায়। আধ সিঁড়িতে রাজুদা তার চায়ের দোকান খুলে ফেলেছে। স্টোভ জ্বলছে। তোবড়ানো কালসিটে পড়া অ্যালুমিনিয়ামের সসপ্যানে ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ, রাজুদা পাতলা করে অমলেট ভাজছে। আরো আধতলা উঠে আরেকটা দরজা ঠেলে অফিসে ঢুকি। বিশাল অফিস স্পেস খাঁ খাঁ করছে। ডান হাতে সার্ভার রুম। বুক ঢিপ ঢিপ করে, তাও দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ি সেখানে। ওরা আমার পায়ের আওয়াজ পেয়েছিল সম্ভবত। দুই ইঞ্জিনিয়ার আমার দিকে তাকায়। ফাঁকা দৃষ্টি, গম্ভীর মুখ। সেই মুখদুটোর দিকে তাকিয়ে মাথার ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাহলে কি মারাত্মক কিছু হয়ে গেছে? তবু সাহস করে বলি, হ্যাপী নিউ ইয়ার।
    - হ্যাপী নিউ ইয়ারই বটে।
    ওদের মুখে দুঃখের ছায়া।
    - কেন? কী হয়েছে?
    - চা খাবেন তো?
    - চা পরে হবে। সিস্টেম কী বলছে? সব ঠিক আছে তো?
    - আর ঠিক থাকা। নিন চা খান।
    এর মধ্যে রাজুদা দুপ্লেট অমলেট টোস্ট নিয়ে ঢোকে সেখানে। আমি চুপ করে মাথা নীচু করে বসে পড়ি একটা কাঠের বাক্সের ওপর।
    - আপনাকেও কি চা অমলেট টোস্ট দেবো?
    রাজুদা সম্ভবত আমাকেই জিজ্ঞাসা করল।
    - না। আমি খেয়েই বেরিয়েছি।
    এবার ওরা হো হো করে হেসে ওঠে দুজনে।
    - রাজুদা তিনটে চা নিয়ে আসুন।
    বিকাশ হাসতে হাসতে বলে, সব পারফেক্ট। কোনো ট্রাবল হয়নি। তাও আপনাদের প্রোজেক্ট টিম এসে চেক করে নিক, তারপরে সিস্টেম হ্যান্ডওভার করে দেবো।
    হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল। আটটার পরে মডিউল এক্সপার্টরা এসে যায় এক এক করে। একঘন্টার মধ্যে টেস্ট কমপ্লিট। এতক্ষণে সত্যিকরে হ্যাপী নিউ ইয়ার হলো আমাদের। এই পার্টটাই ছিল মিলেনিয়াম প্রোজেক্ট। উৎরে গেছে। শনিবার হলেও অনেকেই এলো একে একে খবর নিতে। এরকম নাটক তো বছর বছর হয় না। আজ আর লাঞ্চ অবধি আমাদের থাকতে হচ্ছে না, কিন্তু আমাদের কোম্পানী ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে নিউ ইয়ারের পার্টি, যে সে পার্টি নয়, মিলেনিয়াম পার্টি। সেক্টর ফাইভে অফিসের ছাদের ওপর সন্ধেবেলা দারুণ খানাপিনার আয়োজন হয়েছে। সন্ধেবেলা সেজেগুজে যেতে হবে সেখানে। ভালো ভালো খাবার আর দামি দামি মদ থাকবে। আমরা তো কেল্লা ফতে করে ফেলেছি। ওয়াই টু কে র প্রবলেম সলভড। সেই জন্যই এত সমাদর।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৪ জুন ২০১৬ ০২:৪৭620764
  • অফিসের ছাদে, সাততলায় ওপেন এয়ার পার্টি। সবাই হাল্কা সেজেগুজে এসেছে। কোথায় বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবে লোকে নতুন বছরের দিনটায়, তা নয়, অফিস পার্টি। মানে সন্ধেবেলাতেও অফিস। বসবার কোনো অ্যারেঞ্জমেন্ট নেই। খাবার দাবার সাজানো রয়েছে, রয়েছে প্লেট। যেটা খুশি তুলে তুলে খাও। যত খুশি খাও। একদিকে সফট ড্রিংক আছে, সেখানেও কোনো বাধা দেবার কেউ নেই। কিন্তু ডানদিকে একটা শেডমতো জায়গায় হার্ড ড্রিংক্সের একটা বার মতো খোলা হয়েছে, সেখানে অমন হুটহাট তুলে তুলে খাওয়া চলবে না। স্বয়ং ডিরেক্টরের সেক্রেটারী কেটি সেখানে এককোণে বসে মদের ব্যাপারটায় নজর রাখছেন। বোতোল টোতোল সব পেছনে একটা র‌্যাকে রাখা আছে। দেখা যাচ্ছে, তবে ছোঁবার নাগালের বাইরে। একজন বেয়ারা কেটিদিদির নির্দেশ ও অনুমতি পেলে গেস্টদের অর্ডার অ্যাকসেপ্ট করে ড্রিংক্স বানিয়ে দিচ্ছে। মেয়েরা সংখ্যায় কম। তারা ওদিকটায় যাচ্ছে না। যেন ওই বারটা তারা দেখতেই পাচ্ছে না। ওটা একজিস্টই করে না যেন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মদ সার্ভ করবার ব্যাপারটা দেখলাম। একা ঐ বেয়ারা হিমসিম খাচ্ছে পেগের পর পেগ বানাতে বানাতে। এদিকে লাইন বড়ো হচ্ছে। লাইনের লোকেরা অল্প অধৈর্য, কিন্তু সেই অসন্তোষ তারা ঢেকে রাখছে। অধিকাংশই হুইস্কি খেতে ভালবাসে। একের পর এক হুইস্কির বোতল ফাঁকা হয়ে গেল। ভেতরের দিকে প্রচুর বিয়ারের বোতল স্ট্যাক করে রাখা, কিন্তু বিয়ার কেউ নিতে চায় না। কেটিদিদি নিজেও একটা পানীয় খাচ্ছেন, স্বচ্ছ গোলাপী কালার সেই পানীয়ের। ভোদকার সঙ্গে কিছু মিশিয়ে ওরকম রং ধরেছে মনে হলো। টাকনা হিসেবে রয়েছে প্রণ ককটেল। কায়দা করে একটু এগিয়ে গিয়ে নিরীক্ষণ করলাম, হ্যাঁ প্রণই বটে। তারমানে এই বুফেতে প্রণ ককটেল আছে। আমার প্রিয় খাদ্য, চিংড়ি। বুফেতে গিয়ে খুঁজলাম, প্রত্যেকটা ডিশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম, উঁহু প্রণ ককটেল নাই। চিংড়ির কোনো ডিশই নেই। স্তুপীকৃত তন্দুরী চিকেন রয়েছে, সেটা হাইস্পীডে শেষ হচ্ছে, শেষ হতে না হতেই অন্য এক বেয়ারা আলাদিনের দৈত্যের মত কোত্থেকে আরেক থালা তন্দুরী চিকেন এনে রেখে দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, অনন্ত সাপ্লাই আছে তন্দুরী চিকেনের। বড়ো সায়েবেরা রয়েসয়ে খাচ্ছেন। বলতে গেলে খাচ্ছেনই না। ওঁদের হাতে আলতো করে ধরা আছে ড্রিংক্সের গ্লাস, সোনালী রঙের ড্রিংক্স। তাতে খুব সাবধানে আলতো চুমুক দিচ্ছেন কি দিচ্ছেন না। ওঁরাই হোস্ট। ঢকঢক করে মদ গিলে মাতাল হয়ে পড়লে চলবে না। তারপরে ব্লাডপ্রেশার ব্লাডশুগার এসবও আছে কয়েকজনের। কেবল সেই অরুণাভদা ( ফিলাডেলফিয়ায় যিনি ল্যাম্ব কারি বানিয়েছিলেন) এসবের তোয়াক্কা করেন না। ফলে রাত তেমন বাড়বার আগেই মাতাল হয়ে গেলেন। আমাদের প্রোজেক্ট ম্যানেজার দিদিমুনির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, অঙ্গনা, তুই আমার সঙ্গে নাচবি?
    এমনিতে, এরকম পার্টিতে যেমন গুনগুন গুজগুজ একটা আওয়াজ থাকে ( সকলের টুকটাক কথা বলবার ফলে একটা নয়েজ মত) সেটা কমে গেল। প্রায় থেমেই গেল বলা চলে। কেবল প্লেট ফর্ক চামচের খুচরো নয়েজ। কথা থেমে গেছে সকলের। এমনকি বারের সামনে যে কনস্ট্যান্ট জটলাটা ছিলো, সেখানকার লোকজনও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ ভিড় কাটিয়ে একটু সাইডে চলে গেল ব্যাপারটা ভালো করে দেখবে বলে।
    প্রোজেক্ট ম্যানেজার দিদিমুনি হেসে বললেন, তুই বসে পড়লি কেন?
    - তুই নাচবি কিনা বল আগে?
    অঙ্গনাদি একহাতে অরুণাভদার একটা হাত ধরে বললেন , ওঠ। নাচব না কেন? কিন্তু মিউজিক কোথায়? মিউজিক ছাড়া নাচা যায়?
    সঙ্গে সঙ্গে কে যেন ভিড়ের মধ্যে থেকে বলে উঠল, এটা একটা কথা হলো? এই! মিউজিক লাগাও।
    মিনিট খানেকের মধ্যে একটা মিউজিক সিস্টেম নিয়ে এলো কেউ। তারমধ্যে অরুণাভদা উঠে দাঁড়িয়েছেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। বলছেন, তুই আমার সঙ্গে নাচলে তোর বর তোকে বকবে?
    মিউজিক শুরু হয়ে গেল। অঙ্গনাদি কড়া করে ধমকে দিলেন অরুণাভদাকে, এবার মাতলামি করলে তুই আমার হাতে মার খাবি কিন্তু।
  • Ranjan Roy | ২৪ জুন ২০১৬ ০৬:৫৭620765
  • সে,
    চালাও পানসি বেলঘরিয়া! হেব্বি জমে গেছে। মিলেনিয়াম পার্টি যেন চোখের সামনে দেখছি।
  • sp | 175.225.104.51 | ২৪ জুন ২০১৬ ১৮:২৩620766
  • অনেক কিছু কমন পড়েছে .."জল"এর কোম্পানি, HPL, হলদিয়া.. চোখের সামনে ভেসে উঠছে মন্জুশ্রী মোড়, ক্লাসিক ইন হোটেল, দুর্গাচক, হাতিবেড়িয়া.. বেড়ে হচ্ছে, চালিয়ে যান। শুধু একটা খটকা - কুক্ড়াহাটি থেকে এপারে (কোলকাতার দিকে) রায়্চক তো স্টীমারে এপার ওপার করা হত/হয়, ওখানে ট্রেন যায় না তো। ট্রেনের জনতা মেচেদা দিয়ে যাতয়াত করত।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ০০:১১620767
  • মধ্যরাতের সেক্টর ফাইভ। বাড়ি ফিরছি। যাদের যাদের গাড়ি ছিল সঙ্গে, তারা গাড়িহীনদের লিফ্ট দিচ্ছে। এটাই দস্তুর, এর নাম সলিডারিটি এবং খুব সম্ভবত টিম স্পিরিট। যাদের গাড়িতে মাইনে করা ড্রাইভার ছিল তারা তুরীয় অবস্থায়। পার্টি অবশ্য তখনো ভাঙেনি, চলছে, তবে একটু লোকজন কমে গেল এই যা। আরো কতক্ষণ চলবে সে আমরা জানিনা। আগামী সপ্তাহে আবার হলদিয়া যেতে হবে, আবার ঝকঝকে ক্যাটামারান অপেক্ষা করে থাকবে আমাদের জন্য নদীর ঘাটে।
    গোটা চারেক গাড়িতে চেপে চেপে বসেছি আমরা, সকলেই সাউথের দিকে যাব। চিংড়হাটার মোড় থেকে লেফট টার্ণ। ইস্টার্ণ মেট্রোপোলিটান বাইপাস। একবছর আগেও আমি এই এলাকাটার নাম পর্যন্ত জানতাম না। কোলকাতার পূবে যে এরকম একটা অফিসপাড়া তৈরী হয়ে গেছে সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিল না। নাথিং।
    অঙ্গনাদিও কায়দা করে কেটে পড়েছেন। ওঁর গাড়িটাও প্রায় আমাদেরটার সঙ্গে সঙ্গেই বেরোলো যেন। এখন অবশ্য দূরত্ব বেড়ে গেছে।
    অরুণাভদা একেবারেই নাচতে পারছিল না, টলে টলে পড়ে যাচ্ছিল। অনেকেই না দেখার ভাণ করে আড়চোখে মজা দেখছিলাম। তারপর বড়োসায়েবেরা অরুণাভদাকে সরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেল। ছাদের একটা কোণে দুতিনজন পাঁচিলে ঝুঁকে বা হেলান দিয়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারা বিশেষ কথা টথা বলছিল না। থম ধরা মত। তাদের হাতে হুইস্কির গ্লাস ছিল কি ছিলনা তা বুঝবার উপায় নেই। একটু এগিয়ে তাদেরকে বাই করতে গেলাম। একজন আমাদের টিম লিডার, অন্যজন সেই জুনিয়ার শমিত, তৃতীয়জন আমাদের প্রোজেক্টের লোক নয়, তার নামও জানিনা। বা হয়ত শুনেছি কখনো, কিন্তু ভুলে গেছি। তাদের চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে। আমাদের প্রোজেক্টের অন্য মেয়েটি আমায় টেনে ডেকে নিল অন্যদিকে। ওরা নাকি বাইরে থেকে অন্য কিছু নেশা করে এসেছে। বলল, ওদের এখন ঘাঁটাস না; দেখবি, পরে আবার নরম্যাল হয়ে যাবে।
    থার্ড মিলেনিয়াম শুরু হয়ে গেছে ভাবতে যেমন অদ্ভুত লাগে, তেমনি থেকে থেকে মনে হয়, কী আশ্চর্য এই জীবন। কটা বছরের মধ্যে কেমন পাল্টে গেছে সবকিছু। হয়ত ভালোর দিকেই। হয়ত কেন? নিশ্চয়ই অনেকটা ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে গত তিন বছরের মধ্যে। ছিলাম রাস্তার ভিকিরি, এখন মাঝরাতে পার্টি সেরে দামি গাড়িতে লিফট পাচ্ছি। ভাবা যায় না। তবে, এখানেই তো সব থেমে থাকবে না। ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। আবার কোনদিন হয়ত ফের গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ব সেই রাস্তাতেই। ঐ যে সেই বলেনা, সুখানি চ দুঃখানি চ। কেউ কিছু বলল মনে হয় আমাকে, অন্যমনস্ক ছিলাম, শুনতে পাইনি। আবার রিপিট করল তাই। আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বলি, হ্যাঁ এখানেই নামিয়ে দাও আমাকে, এইখান থেকেই চলে যেতে পারব। থ্যাংক্স ফর দ্য লিফ্ট অ্যান্ড অ্যা ভেরী হ্যাপী নিউ ইয়ার।
  • kc | 198.71.207.23 | ২৫ জুন ২০১৬ ০০:৫১620768
  • ভারি সুন্দর লেখাটা। কোনওরকম ঘটনার ঘনঘটা নেই। শুধুমাত্র লেখনীর গুণেই পড়ে ফেললাম। সেদি, এরকম আরও লিখুন।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ০১:৪৪620769
  • এখনো শেস হয়নি কিন্তু
  • | 37.63.147.77 | ২৫ জুন ২০১৬ ০২:০৫620771
  • সে দি, তোমার এত ছোট ছোট ঘটনা মনে থাকে কী করে? এত একেবারে ফটোগ্রাফিক মেমারি যাকে বলে।

    আর তোমার লেখার তো আমি বহু দিনের ফ্যান। একট অদ্ভুত নৈব্যক্তিকতা (?) দেখতে পায় তোমার লেখার মধ্যে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন