এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে

    সে
    নাটক | ২১ অক্টোবর ২০১৩ | ৫৪৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.85.8 | ২৫ জুন ২০১৬ ০২:১১620772
  • একটা রেফ বাদ গ্যাছে ব্রতীন।
    নৈর্ব্যক্তিক
  • Bratin | 37.63.147.77 | ২৫ জুন ২০১৬ ০২:৫১620773
  • ধন্যবাদ আটোজ ঃ))
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ০৩:০৪620774
  • ওয়াই টু কে পার্টটা তো একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, প্রোজেক্ট তো চলছে। চলবে আরো অনেকদিন। কতদিন চলবে, কবে নাগাদ শেষ হবে, সেসব আমরা জানিনা। অন্ততঃ আমি জানিনা। সিরিয়াস ইম্পরট্যান্ট ব্যাপারগুলো আমার সঙ্গে সচরাচর কেউ আলোচনা করে না। আনইমপরট্যান্ট ব্যাপারেও একটু দূরে দূরে রাখে। এটা কেন হয়, বুঝতে পারি না। নাকি এখানে ধরণটাই এরকম, সেও বোঝা মুশকিল, আগের কোনো অভিজ্ঞতা তো নেই যে তুলনা করে বলব, দ্যাখো তোমরা আমাকে দরকারি ব্যাপারগুলো বলছ না।
    ধরা যাক প্রথম যেদিন আমায় এই প্রোজেক্টের কাজে পাঠিয়ে দিল কোলকাতার অফিসটাতে, সেটা ছিল যেমন আকস্মিক তেমন অদ্ভুতমতো। সেক্টর ফাইভের অফিসে দুপুর এগারোটা ট্যাগারোটা নাদাদ হঠাৎ কে একজন আমার কাছে এসে বলল, এক কাজ কর, তুমি হলদিয়া পেট্রোকেমিকালের প্রোজেক্টে চলে যাও।
    প্রোজেক্টে যেতে হবে, এ খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু যে আমায় যেতে বলল, সে কিন্তু নিজের পরিচয় দেয় নি, তাকে আমি আগে দেখিওনি অফিসে।
    তখন, আমিই তাকে জিগ্যেস করলাম, তোমার নাম কী?
    সে নাম বলল। তারপর বলল, একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও, আর লাঞ্চের আগেই পৌঁছচ্ছ যখন আমার জন্যে একটা ফ্রুটলাঞ্চ রেখে দিতে বোলো।
    এতগুলো ইনফরমেশন আমি মাথার মধ্যে প্রোসেস করতে পারলাম না। কথাগুলো বলেই সে চলে যাচ্ছিলো। আমি তাকে ডাকলাম, শোনো, কোথায় যেতে হবে বললে? ঠিকানা তো আমি জানিনা।
    এর উত্তরে সে বলল, ঐতো, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিস। আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেকে আছে ওই প্রোজেক্টে। গেলেই দেখতে পাবে।
    এরকম সময়ে এইধরণের পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি নিজেই বোধহয় গাধা, কিংবা পাগোল, নয়ত সামহাউ অ্যাবনরমাল। লোকটাকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করছি, সে আমায় উত্তর দিচ্ছে, ঐতো ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিস। অ্যাজ ইফ ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিস, নতুন অফিস সমস্ত কিছুর ঠিকানা জেনে রাখা আমার আগেভাগেই উচিৎ ছিল। তারপরে আবার ফ্রুটলাঞ্চ অর্ডার করছে।
    তবু আবার শুধোই, ঐ ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিসটা কোথায়?
    এবার সে বলে, ঐ তারাতলার কাছে, ট্যাক্সিকে বললেই নিয়ে যাবে। ওরা চেনে।
    বেশ, ট্যাক্সি নাহয় নিয়ে যাবে, কিন্তু সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে "ঐ ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিস" যেতে কত ভাড়া লাগবে? আমার কাছে যথেষ্ট ক্যাশ না ও থাকতে পারে। আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কত টাকা ভাড়া হয়?
    - ঐ দেড়শো মত পড়বে।
    - আমার কাছে একশ টাকার কিছু কম আছে। তুমি কি আমাকে একশ টাকা ধার দেবে? কালই ফেরৎ দিয়ে দেবো।
    সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে আমার দিকে। যেন এমন আজব কথাবার্তা আগে কখনো শোনেনি। একশ টাকার কম সঙ্গে নিয়ে অফিস এসেছি বলে, নাকি সেই পুরোনো অফিস চিনিনা বলে, নাকি আরো অন্য কিছু, বুঝতে পারিনা। কিন্তু সে ওয়ালেট খুলে আমাকে একশটা টাকা দেয়। তারপরে আমি অফিসের নীচে দাঁড়ানো ট্যাক্সিওয়ালাকে বলি, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের পুরোনো অফিস যাবো।
    ট্যাক্সিওয়ালাও বোঝে না। তখন মনে পড়ে তারাতলার কাছে। সেটাও বলি। তখন ট্যাক্সিওয়ালা বলে, আচ্ছা উঠে আসুন তারাতলার মোড়ে জিগ্যেস করে নেবো।
    তারপরে তারাতলায় পৌঁছে একে ওকে তাকে জিজ্ঞাসা করতে করতে স্টেট গ্যারেজ পৌঁছই। তারপরে প্রোজেক্ট অফিস খুঁজে বের করা। কোত্থাও কিচ্ছুটি লেখা নেই। না আছে কারো নাম, না ফোন নম্বর, না আছে মোবাইল ফোন।
    এই সময়গুলো আমি দর্শক হয়ে বাঁচি। কীরকম অদ্ভুত মজার মজার লোকজন এরা। নাটকের মত। ধাঁধার মত। বা একটা গেম। সবকটা সলভ করতে পারলে তুমি টার্গেটে পৌঁছবে। প্রোজেক্ট অফিস খুঁজে বের করবার ধাঁধাটা সলভ করবার পরে একটা বোনাস কোয়েশ্চেন থাকে। যে একটু পরে আসবে, তার জন্য লাঞ্চ অর্ডার করতে হবে। কী একটা লাঞ্চের নাম বলেছিল, মনে পড়ছে না, কিন্তু কীভাবে অর্ডার করব সেটা বলে দেয় নি।
    লোকটার সব উত্তরগুলোই তো, "ঐ ঐখানে" দিয়ে। বোনাস কোয়েশ্চেনটা আমি ইচ্ছে করেই সলভ করি না। প্রোজেক্ট অফিসে এসে যে পৌঁছতে পারলাম সেটাই অনেক। এখন কে আমার বস, কী আমার কাজ, সেগুলো আগে জেনে নিই। এই প্রোজেক্টটা কীসের, তাও জানিনা। কী একটা কেমিক্যাল না পেট্রোল বলছিল, মনে নেই। এরা টু দ্য পয়েন্ট গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না কেন? নাকি আমিই ওরকম? সহজ জিনিস বুঝতে পারি না।
    এ সমস্তই ফ্ল্যাশ ব্যাক।
  • Bratin | 37.63.147.77 | ২৫ জুন ২০১৬ ০৩:১৩620775
  • তারপরে
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ০৩:৩১620776
  • ক্যাটামারানে চড়ে আমরা সপ্তাহের শুরুতে হলদিয়া যাই, চারটে রাত হোটেলে খাই দাই ঘুমোই, অফিসে কিছু কাজ করি, কিছু সময় কাজ থাকে না, বসে থাকি। তখন কাজের ভাণ করতে হয়, মাঝে মাঝে দু একটা শক্ত শক্ত শব্দ, জার্গন আওড়াতে হয়। সাদা আর কমলা রঙের ফুল ফোটে যে দুটো বোগেনভেলিয়া লতায়, যেদুটো আমাদের ক্লাসরুম সদৃশ প্রোজেক্টরুমের বাইরে শেডের ওপরে টেনে তুলে বেঁধে রাখা হয়েছে, সেই গুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে গেট অবধি গিয়ে আবার ফিরে আসা, আরতো কোথাও যাবার নেই। সমস্ত পথ এঁকে রেখেছে। ক্লাসরুমে পেছনের দিকে সীটগুলোয় গুপ্তচর আসে সকাল বেলায়। সে খুব মন দিয়ে কীসব করে। তারপর সে একদিন আরো দুজন তিনজনকে নিয়ে আসে সঙ্গে। তারাও ওর চেনা লোক। যথাক্রমে, গুপ্তচর ২, গুপ্তচর ৩, গুপ্তচর ৪। বা এমনও হতে পারে সবাই হয়ত গুপ্তচর নয়। কী এত নজর রাখছে ওরা আমাদের ওপর? কোনোকোনোদিন প্রথম গুপ্তচরকে দেখাই যায় না, অন্যরা ঘোরাফেরা করে। তারপর, একদিন জানতে পারি ওদের আসল পরিচয়। ওরা হচ্ছে "কী ইউজার"। ক্লায়েন্টের তরফ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন অফিসার শ্রেণীর লোক, যারা পরে এই সফ্টওয়্যারটা দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করবে। সবাই জানত, তবু কেউ আমাকে বলে দেয় নি। কমপ্যাকের সেই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি জানত না, কিন্তু সে ও তো দলছুট একজন। জানবেই বা কেমন করে। যেমন ভেবেছে, তেমনি বলেছে আমাকে।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ০৪:০০620777
  • সেদিন আমরা সত্যি সত্যিই পুরো প্ল্যান্টটা ঘুরে দেখতে পেলাম। আমার পেছনে বসে যে মেয়েটা সে, সুদীপ্ত (যার বাবার সই করা বেয়ারার চেক তখনো ঘুরছে), আরেকটা ছেলে ও আমি, এই চারজন ও একজন ড্রাইভার, যে গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যাবে পুরো পথটা। খুব অল্প স্পীডে গাড়ি চলবে। একজন লোক জোরে দৌড়লে যেমন, তেমন স্পীড। হেঁটে এই গোটা প্ল্যান্ট দেখতে হলে প্রাণ বেরিয়ে যাবে। সোজা দূরে দেখা যায় সেই জলের ট্যাংকের মত দেখতে জিনিসটা। খুব উঁচুতে রয়েছে। গাড়ি যত এগোয়, ঐ জিনিসটা তত কাছে আসতে থাকে আর ক্রমশ বোঝা যায় তার সাইজ। প্রকাণ্ড। কাছ থেকে দেখলে ভয় করে। ঐটার কাছাকাছি যতটুকু যাওয়া যেতে পারি, যাই। একটা লম্বা লোহার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে বেশ অনেকটা কাছে। ওটুকুই দেখার মত। বাকি সব তো কলকব্জা পাইপ মস্ত মস্ত কলের মত জিনিস। আর যেটা মনে রাখার মত, সেটা হচ্ছে কারখানার বিশাল পরিসীমা। আর মনে দাগ কাটবার মত কিচ্ছুটি নেই। আমাদের সাধ পূর্ণ হলো। ফিরে গিয়ে বলতে পারব যে কীরকম জায়গায় কাজ করে এসেছি। আমরা হাঁ করে করে সব দেখছিলাম, আর একজন ভদ্রলোক সব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। অফিসঘরের সামনে আমাদের ফিরিয়ে দিয়ে সেই গাড়িটা চলে গেল। এরপর আধঘন্টাও হয়নি সুদীপ্ত ব্যতিব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক কী যেন খুঁজতে লেগেছে। তোমরা কেউ আমার সোয়েটারটা দেখেছ?
    কেউ উত্তর দেয় না, কেউ বলে না দেখেনি, কেউ জানতে চায় সোয়েটারের বিবরণ। সুদীপ্ত বলে, ডার্ক ব্লু রঙের ফুল হাতা হাই নেক, আমি রোজ পরি যেটা, আমার দিদি নিজে হাতে বুনে দিয়েছে। ওটা হারিয়ে গেলে দিদি খুব দুঃখ পাবে, তোমরা একটু মনে করে দ্যখোনা, ইশ্ , কোথায় যে খুলে রাখলাম।
    আমার পেছনে বসে যে মেয়েটা, সে খুব নীচু স্বরে বলল, বাঁচা গেছে ওটা হারিয়েছে, কতদিন কাচে না কে জানে, কী বোঁটকা গন্ধ কল্পনা করতে পারবি না, রোজ গাড়িতে ও আমার পাশে বসে, ইঃ বাবাঃ।
    আরো কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর সুদীপ্ত শিওর অ্যান্ড স্যাঙ্গুইন হয় যে, প্ল্যান্ট সফরে যাবার সময় একটু গরম লাগছিল বলে ও সোয়েটারটা খুলে গাড়িতে রেখেছিল সীটের পেছনে। জিনিসটা গাড়িতেই থাকবে। কিন্তু সেই গাড়ি এখন কোথায় তা কেউ বলতে পারল না।
  • Ela | 104.15.47.191 | ২৫ জুন ২০১৬ ১২:০১620778
  • তাপ্পর?
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ১২:৩৮620779
  • সপ্তাহের মধ্যিখানে একটা দিন। চিরাচরিত নিয়মানুসারে টোস্ট ওমলেট সহযোগে ব্রেকফাস্ট করে ফার্স্ট ট্রিপে প্রোজেক্ট সাইটে গেছি। যথারীতি বাকিরা একটু দেরিতে ঘুমঘুম চোখে সদলবলে এসেছে, আর পাঁচটা দিনের মতই ম্যাদামারা দিন। দুপুরে সেই ক্যান্টিনে লাঞ্চ, লাঞ্চফেরতা পথে একটু হাঁটা, আড়াইটে তিনটে নাগাদ কাজের কোনো চাপ না থাকলে অল্প হাই ওঠে, চোখের পাতা খুলে রাখতে কষ্ট হয়। তারপরেই আবার ঘুমঘুম ব্যাপারটা কেটে যায়। তিনটে সাড়ে তিনটে নাগাদ আমার টিম লিডার আমার পাশে এসে দাঁড়াল। সে যে একজন টল ফেয়ার হ্যান্ডসাম যুবক তা সম্ভবত আগে উল্লেখ করিনি। বয়সে আমার থেকে সামান্য ছোট মনে হয়। এখন তার চোখেমুখে গতরাতের নেশার লেশমাত্র চিহ্ন নেই। একটু ঝুঁকে নীচুস্বরে জিজ্ঞাসা করল আমাকে, তোমার এখন কোনো আর্জেন্ট কোনো টাস্ক আছে কি?
    - না।
    - তাহলে এক কাজ কর, আস্তে আস্তে লগাউট করে, ব্যাগ নিয়ে, চুপচাপ এখান থেকে বেরিয়ে যাও। গেটের বাইরে গিয়ে দাঁড়াও।
    অজানা ভয়, দুম করে আমার যেন গলা টিপে ধরে। কিছু ভুল ত্রুটি দোষ করে ফেলেছি কি আমি? আমায় কি এখন প্রোজেক্ট থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? সে সমস্ত অনুভূতি যথাসাধ্য চেপে রেখে ফিসফিস করে বলি, কেন? কী হয়েছে বলতো প্রসন্ন?
    প্রসন্ন এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের ভাষায় অভয় দিয়ে বলে, বলছি, পরে বলছি, এখানে না।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৩:০৬620780
  • আমার পা দুটো ভারী হয়ে যায়। মাথাটা ঝিমঝিম করছে, তবু লগাউট করে ব্যাগ হাতে নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাই। পেছন ফিরে তাকাই না। ঘরে বাকিরা কি লক্ষ্য করেছে যে আমি এরকম হুট করে বেরিয়ে গেলাম? সোজা হেঁটে যাচ্ছি মেইন গেটের দিকে। প্রায় পৌঁছে গেছি, সিকিওরিটির ঘরের ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এসে বলল, দেখুন তো এটা আপনাদের কারো জিনিস কিনা।
    তার হাতে একটা পলিথিনের প্যাকেট, প্যাকেটের ভেতর থেকে উঁকি মারছে সুদীপ্তর হারিয়ে যাওয়া নেভি ব্লু রোল কলার পুলোভারটা। এটা নিয়ে কী করব আমি? প্যাকেটটা নিয়ে আবার সেই প্রোজেক্টরুমের দিকে ফিরে যাব এটা সুদীপ্তকে দিয়ে আসতে? উচিৎ হবে কি? পেছন ফিরে তাকাই দূরে অফিসঘরটার দিকে। ওমা! এ কী কাণ্ড? এক এক করে সব বেরিয়ে আসছে ওখান থেকে। সুদীপ্তও আছে। সেই মেয়েটা একদম শেষের দিকে, আর তারপরেই শো স্টপারের স্টাইলে বেরিয়ে এলো প্রসন্ন। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ... আমি গুনতে থাকি। সব মিলিয়ে আমরা এগারোজন। গেটের বাইরে সবাই এসে পৌঁছনর পরে মৃদু গুঞ্জন থেকে ভলিউম বাড়তে বাড়তে হল্লার আকার নেয়। কিছু লোক এখনো রয়ে গেল ভেতরে। কিন্তু যা বোঝা যাচ্ছে, প্রসন্ন আমাদের কজনকে নিয়ে জাস্ট বেরিয়ে গেল এই ক্লায়েন্ট সাইট থেকে। আর বিলম্ব নয় নয়, হাতে বেশি টাইম নেই দুরন্ত স্পীডে গিয়ে ধরতে হবে সিলভারজেট, কটায় যেন ছেড়ে যায় সে হলদিয়া থেকে? চারটে, নাকি চারটে কুড়ি। হৈ হৈ করে ঢুকে পড়ি সবাই দুটো তিনটে ট্যাক্সিতে। ব্যাগেজ তুলতে হবে হোটেল থেকে।
    সুদীপ্ত ওর ফিরে পাওয়া সোয়েটারটা আঁকড়ে চেপে রেখেছে বুকে।
  • Ela | 104.15.47.191 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৩:২৩620782
  • রুদ্ধশ্বাসে পড়ছি।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৩:৪৬620783
  • খুব জোরে ছুটছে আমাদের ট্যাক্সি। হোটেলে পৌঁছেই দুড়দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা। রোঁয়া ওঠা কম্বলের মতো কার্পেট কোথাও কোথাও ছেঁড়া, সেখানে পা পড়লে কিরকম জড়িয়ে পিছলে যায়। রুমে ঢুকে ঝপাঝপ সবকিছু ব্যাগে ভরা, বাথরুম থেকে টুথপেস্ট আর টুথব্রাশটা নিতে না ভোলা, তারপর আর কিছু ভুলে ফেলে গেলাম কিনা বুঝতে আরেকবার ঘরটায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া, ওঃ নাইটিটা গুটিয়ে পড়ে রয়েছে চেয়ারের পায়ার কাছে, ওটা তুলে নিয়ে ব্যাগে পুরে, সুটকেস গড়গড়িয়ে সিঁড়ি অবধি দৌড়, তারপর ব্যালেন্স করতে করতে একতলায় নেমে রিসেপশানে চেকাউট করা। প্রসন্ন বলে দেয়, সব হিসেব পরে দেখা হবে, এখন সই করে দাও, তারপরে বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ো।
    গাড়িতে উঠবার পরে দেখা যায়, সময়ে কুলোবে না। সিলভারজেট ছেড়ে দিতে আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। খুব স্পীডে গাড়ি চালিয়ে গেলে কি আমরা ধরে ফেলতে পারব না এই ক্যাটামারান? কিছুটা এগোনোর পরে দেখা যায় বড্ড দেরী হয়ে গেছে, সেদিনকার মতো শেষ সিলভারজেট ছেড়ে চলে গেছে হলদি নদীর বন্দর।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৩:৫৮620784
  • তাহলে এখন উপায়?
    হোটেলে ফিরে যাব সকলে? অপেক্ষা করব কাল সকাল অবধি? নাকি অন্য আর কোনো উপায় আছে, যথা কুকড়াহাটি। কমপ্যাকের ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটিতো কুকড়াহাটি অভিমুখে ট্যাক্সি ধরত বলেছিল। উঁহু। কুকড়াহাটি অনেক ঘুরপথ। অনেক ঝামেলা, নদী পার করতে হবে ওখানে গিয়ে, তারপরে নদীর ওপারে গিয়ে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, দুদুটো লেডিস নিয়ে কোনো প্রপার ট্রান্সপোর্ট না পেলে চুড়ান্ত কেলো হবে। তাহলে? তাহলে হাতে রইল প্ল্যান সি। সোনার কেল্লা সিনেমার থ্রি মাসকেটিয়ার্সের মত, গভীর রাত না হলেও সন্ধের মুখটায় আমরা তিনটে ট্যাক্সি রওয়ানা হই রেল স্টেশনের উদ্দেশে। রাজস্থানের মরুভূমির মধ্যে নয় যদিও, তবু অ্যাডভেঞ্চার এখানেও কম নয়। মেচেদা থেকে রেল ধরে পৌঁছতে হবে আজ রাতে, উঁহু জয়শলমীর নয়, হাওড়া কি শেয়ালদা স্টেশনও নয়। আমাদের গন্তব্য - শালিমার।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৪:৩৪620785
  • স্টেশনে পৌঁছনোর পরে প্রসন্ন টিকিট কাউন্টার থেকে এগারোটা ফার্স্টক্লাসের টিকিট কেটে আনল। স্টেশনে লোক খুব কম। খোলা আকাশ পরিষ্কার। অন্ধকার ক্রমশ বাড়ছে। কিছুটা অপেক্ষা, কিছুটা গুলতানি, কথা শেষ হয়ে গিয়ে চুপ হয়ে থাকা, তারপরে দেখা দেয় রেলদেবতা। ফার্স্টক্লাস কম্পার্টমেন্ট একদম আমাদের সামনেই। টিকিটে সীট নাম্বার লেখা আছে কিনা জানিনা, সব টিকিটই প্রসন্নর কাছে। ট্রেনে উঠি, ট্রেন ছেড়ে দেয়। গদিমোড়া সীট, কোনো লাইট নেই কম্পার্টমেন্টে। সুইচ আছে, বাল্ব নেই। অবশ্য লাইট না হলেও অসুবিধে হচ্ছে না কোনো। আমরা ছাড়া আর কোনো দ্বাদশ ব্যক্তি নেই গোটা ফার্স্ট ক্লাসে। মোটামুটি ভালো স্পীডেই পার হয়ে যেতে থাকি মেদিনিপুর জেলা। আড্ডা গল্প চলছে, নানান স্টেশনে ট্রেন থামছে। কিন্তু হঠাৎ আমরা আজ চলে এলাম কেন হুট করে সেটা স্পষ্ট নয়। খুলে কিছু বলছেও না এরা। হয়ত জানে, হয়ত জানে না, বা কেউ কেউ জানে, কিংবা এও হতে পারে প্রসন্ন ব্যতীত সেই গূঢ় ইনফরমেশন আর কেউ জানে না। তবে কাল থেকে আমাদের যেতে হবে তারাতলা রোডের অফিসে। কাজ চলবে। কাজ এখনো শেষ হয়নি তো।
    আরেকটা স্টেশনে ট্রেন থামল। হিসেবমত দশটা নাগাদ আমাদের শালিমার পৌঁছনোর কথা । ওটাই লাস্ট স্টপ। আবার ছেড়ে দিয়েছে ট্রেন। এবার কেউ একজন উঠেছে এই কম্পার্টমেন্টে। আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে সে। তার মুখ আমরা দেখতে পাচ্ছি না, কালো পোশাক পরা একটা মূর্তি। একদম কাছে এসে পৌঁছলে বোঝা যায়, টিকিট চেকার। ভদ্রলোক সম্ভবত এতজন যাত্রী আশা করেন নি। প্রসন্ন টিকিটগুলো চেকারের হাতে তুলে দেয়। ভদ্রলোকের কাছে সিনেমাহলের আশারের মত টর্চ থাকলে সুবিধে হতো। কিন্তু টিকিট চেকারদের কাছে সম্ভবত টর্চ থাকে না। বাইরে থেকে আসা অল্প আলোয় তিনি টিকিটগুলো পড়ে নেন। তিনি নাকি আজ অবধি এইরুটে ফার্স্টক্লাসের টিকিট কেটে কারোকে চড়তে দেখেন নি। খুব আশ্চর্য হয়েছেন বোঝা গেল। জানতে চাইলেন কোথা থেকে আসছি, কোন কোম্পানীতে কাজ করি। তারপরে ওখানেই বসেছিলেন আমাদের থেকে কিছু দূরে।
    শালিমার থেকে কোলকাতা যাব কেমন করে জানতে চাইলাম আমরা। হাওড়া স্টেশন যাওয়া যাবে কি ওখান থেকে?
    না। শালিমার অন্য লাইন। রেল স্টেশন থেকে পৌঁছতে হবে ফেরিঘাটে। ফেরিতে নদী পেরিয়ে আমরা পৌঁছতে পারি বাবুঘাট। তবে শেষ ফেরী দশটা নাগাদ ছাড়ে। ট্রেন যদি অনটাইম পৌঁছয়, তাহলে ফেরি ইজ দ্য বেস্ট অপশন।
  • Ela | 104.15.47.191 | ২৫ জুন ২০১৬ ১৮:২৩620786
  • আহা শালিমার থেকে মন্দিরতলা এসে সেকেন্ড ব্রিজ ধরলেই তো হত।

    যাই হোক, তারপর?
  • Rivu | 77.164.19.213 | ২৫ জুন ২০১৬ ২০:৩২620787
  • ফিরে আসার কারণ না জানা অব্দি চাপ থাকবে। রুদ্ধ শ্বাসে পড়ছি।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ২১:২১620788
  • খ্যাটাখ্যাট্ খ্যাটাখ্যাট্, খ্যাটাখ্যাট্ খ্যাটাখ্যাট্, শব্দের গতি মন্দীভূত হয়, অবশেষে, ঘ্যাঁঅ্যাঁশ্ শ্ শ্ শব্দ করে করে রেলগাড়ি থেমে যায় গন্তব্যে পৌঁছে। আমরা সুটকেশ ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে রেডিই ছিলাম, গাড়ি থামতেই তাড়াতাড়ি নেমে পড়ি সকলে। তারপরে এক মুহূর্তও নষ্ট করবার মানে হয় না। স্টেশনের একধার দিয়ে বেরিয়ে জিনিসপত্র সমেত হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় করে পূবদিক লক্ষ্য করে জোর কদমে হাঁটা। ঐ অভিমুখে হাঁটলেই নাকি পাওয়া যাবে ফেরিঘাট। কোনো রাস্তা নেই যদিও ওদিকে। এবড়ো খেবড়ো পথ। ভদ্র রাস্তা খুঁজে ফেরিঘাটে যাবার মত বিলাসিতা আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারব না। অতএব প্রথাবিরুদ্ধ পথ বেছে নেওয়া হয়েছে, শালিমার রেল ইয়ার্ড। মিনিট পাঁচ সাতের মধ্যেই এই দিকে হাঁটলে আমরা গঙ্গার ধারে পৌঁছে যাব। কোথায় হাওড়া স্টেশন আর কোথায় শালিমার। দুটো স্টেশনের মধ্যে কোনো তুলনা চলে না। স্টেশন থেকে নেমে এবড়োখেবড়ো জমিতে পড়ামাত্র কোনো লাইট নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাকে বলে তা প্রত্যক্ষ করা গেল। খোয়া ইট পাথর ভর্তি একটা বিরাট অঞ্চল। কন্টেইনার টাইপের কিছু কিছু জিনিস এদিক ওদিকে রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সবাই প্রায় দৌড়নোর গতিবেগ নিয়েছে, আমরা ছাড়া আর কোনো মনুষ্যপ্রাণী নেই। সুটকেসচা গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, একটা চাকা রাস্তার ঘর্ষণ সহ্য করতে না পেরে খুলে পড়ে গেছে। এভাবে আর টানা যাবে না। কেউ পেছন ফিরে চায় না, সবাই এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। তুমি যদি তাদের ধরে ফেলতে না পারো, তো তুমি পড়ে থাকবে। মহাভারতের স্বর্গারোহনের টাইমে এরকম রাস্তায় হাঁটতে দিয়েছিল কিনা জানিনা, তবে ব্যাপারটা ফিল করছি কিছুটা। কন্টেইনার গুলোর পাশে চাপ চাপ অন্ধকার, আজ আকাশের লাইটও বেশ কম, চাঁদ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা, থাকলেও হয়ত ছোটো সাইজ হবে। পিকিউলিয়ার সব চিন্তা মাথায় করে দৌড়চ্ছি, এতে পথশ্রম ভুলে থাকা যায়। এই রেল ইয়ার্ডটা হিন্দি সিনেমাওয়ালাদের চোখ এড়ালো কেমন করে। স্মাগলার, ওয়াগন ব্রেকারদের নিয়ে যেসব শিক্ষামূলক মেইনস্ট্রিম মুভি হয়, সেসবের জন্য এই জায়গাটাতো রেডিমেড সেট। দিওয়ার সিনেমায় এখানে শুটিং করলে অনেক বেশি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হতো। যাকগে, সামনে একটা বাঁক ঘুরতেই দেখা গেল আলো, তারপরে ঘাট। আমাদের বৈতরণীর খেয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে ঘাটে। মোটর লঞ্চ। টিমটিম করে আলো জ্বলছে। সাইজ মাঝারি। আমরা একে একে সবাই উঠে পড়তেই লঞ্চ ছেড়ে দেয়। কোণাকুনি ডিরেকশানে পূব বরাবর বাবুঘাট, লঞ্চের খোলা জায়গাটায় কাঠের বেঞ্চি। হুহু হাওয়া। লুঙ্গিপরা ময়লা শার্ট পরা লোকেরাই বাকি যাত্রী। লঞ্চ কত নটিক্যাল মাইল পার আওয়ারে যাচ্ছে সেসব ইনফরমেশন দেবার কেউ নেই। অভিযান সিনেমার সেই যাত্রীদের মত মনের অবস্থা আমার, সিংজী, গাড়ি ধরতে পারবো তো?
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জুন ২০১৬ ২২:১৪620789
  • জেয়ার কি ভাটা, তাতো বলা যাচ্ছে না, কিন্তু প্রচুর সময় লাগল উত্তর-পূর্বমুখো গঙ্গা পার হতে। বাবুঘাটেও বাস তখন একটাই , শাটল সার্ভিস, ধর্মতলা অবধি পৌঁছে দেবে। ধর্মতলা বোলে তো, গ্র্যান্ড হোটেলের অপোজিটে। তারপর নাকি গ্র্যান্ডের সামনে থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায়। হলদেকালো মিটারের ট্যাক্সি না পেলেও প্রাইভেট পাওয়া যাবে, সাদা অ্যাম্বাসাডার।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৬ জুন ২০১৬ ১৩:৫২620790
  • গ্র্যাণ্ডহোটেলের গাড়িবারান্দার তলায় দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির জন্য ওয়েট করছি আমরা তিনজন। মেইন গেটটা ছেড়ে একটু সাউথের দিকে এগিয়ে গিয়েছি আমরা। আমার সঙ্গে যে বাকী দুজন, তারা পুরুষ, তারাও আমারই মত সম্মানিত কোম্পানীর সম্মানিত কনসাল্টেন্ট। সারাদিনের কাজ ও দীর্ঘ পথশ্রমের চিহ্ন আমাদের চেহারায় পোশাকে সুস্পষ্ট। প্রত্যেকের সঙ্গেই লাগেজ রয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত বাড়লেও এই এলাকায় নাইট ইজ প্রিটি ইয়াং। আমরা গেটের দিকটায় নজর রেখে চলেছি ক্রমাগত, যদি কোন ফাঁকা ট্যাক্সি বেরিয়ে আসে। আর ঠিক এমনি সময় আমার মনে পড়ে যায় মাত্র কবছর আগের কথা। এক গ্রীষ্মের রবিবার। তখন দুপুর ফুরিয়ে বিকেল হচ্ছিলো। অদ্ভুত এক সমাপতনে, সেই সময় আমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, তার থেকে দু তিন মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলাম কারো অপেক্ষায়। সেদিন আমার সঙ্গে কোনো লাগেজ ছিল না বইবার, পরণে ছিল বেগুনী রঙের ফুলস্লীভ লম্বা ফ্রক্, ফরাসী ডিজাইনে তৈরী। আমার কোনো তাড়া ছিল না তখন। আমি কেবল সেজেগুজে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলাম কারো। কোনো ভয় ছিল না মনে। অল্প পরে সম্পূর্ণ অচেনা লোকের কালো কাঁচ তোলা প্রাইভেট গাড়িতে উঠে পড়েছিলাম অনায়াসে। জানতাম না পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আজ সেই জায়গাটা আপাতত ফাঁকা। তবে বলা যায় না, একটু পরেই হয়ত কোনো মেয়ে সেজেগুজে ওখানে এসে দাঁড়াবে, উদগ্রীব হয়ে তাকাবে এদিক ওদিক কোনো অচেনা মানুষের অপেক্ষায়, ভয়হীন মনে। সে হয়ত সব জেনেশুনেই এসে দাঁড়াবে ওখানে, বা হয়ত একটু আগেই ছিল দাঁড়িয়ে, এখন চলে গেছে। সবই চিন্তা। আপাতত একটা হলদে কালো ট্যাক্সি পাওয়া গেছে। আমার সহকর্মীরা আমায় তুলে দেয় গাড়িতে। ওরা পরের ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমায় আগে যেতে দেয়। আমি মেয়ে কিনা। আমার জন্য এরকম এলাকায় একা দাঁড়ানোটা রিস্কি। ওরা ট্যাক্সির নম্বর নোট করে নেয় বোধহয়। সেই বিকেলে আমি যে গাড়িটাতে উঠেছিলাম তার নম্বর কেউ নোট করেনি, আমি নিজেও না। এসমস্ত ভেবে আমার হাসি পেয়ে যায়। ট্যাক্সি ড্রাইভার মিটার ডাউন করে জেনে নেয় আমার গন্তব্যস্থল, তারপরে একটু অসন্তুষ্ট স্বরে বলে, ওখান থেকে ফেরার প্যাসেঞ্জার পাবো না তো। আমি বলি, ঠিকাছে এক্সট্রা নিয়ে নেবেন।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৭ জুন ২০১৬ ২০:৩৫620791
  • হলদিয়া থেকে ফিরে আসবার পরেও প্রোজেক্ট চলেছিল বেশ কিছুদিন, তবে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। আগের সেই টিম, সেই উত্তেজনা, সেই এনগেজমেন্ট আর ফিরে এলো না। প্রোজেক্ট গো লাইভ হলো বটে, তবে মিলেনিয়াম নাইটের মত সেই রোমাঞ্চ কোথায়!
    আমাদের অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলাম পরবর্তী প্রোজেক্টে, কেউ দিল্লি তো কেউ হরিয়ানা নয় গোয়ালিয়র, বা কে কোথায় গেল ট্র্যাক রাখা যাচ্ছিলো না। প্রোজেক্টের পরে সেলিব্রেশন হয়েছিল। তিনবার। প্রথমটা ঠিক প্রোজেক্ট বাজেট থেকে নয়। তুমুল খানাপিনার আয়োজন করেছিলেন আমাদের কোম্পানীর ডিরেক্টরদাদা। অনেকের মুখেই শুনেছি, দাদা খাওয়াতে খুব ভালবাসেন। দরাজ হাতে খরচ করেন খানাপিনায়। খাওয়ানোর পরিচয় আমরা আগেই পেয়েছি নিউ ইয়ার্স পার্টির সময়। সদ্য সদ্য প্রোজেক্টের শেষে, সেক্টর ফাইভের অফিসে রটে গেল, আজ সন্ধেবেলা দাদা খাওয়াবেন। হলদিয়াবিজয়ের পার্টি। অ্যাম্বারে। অ্যাম্বার কোথায়? আমি চিনতাম না। এখন সবাই মিলে যাচ্ছি, না চিনলেও ক্ষতি নেই। সকলে দুড়দাড় করে ছুটে গোটা কতক ট্যাক্সি দখল করে ছুটে চললাম অ্যাম্বার অভিমুখে। ডিনার পার্টি। পার্ক সার্কাস কানেক্টর পেরোনোর পরে জানা গেল জায়গাটা ধর্মতলা ও ডালহৌসী স্কোয়ারের মধ্যবর্তী কোনো একখানে। সন্ধে সাতটার পরে টেবিল বুক করা থাকবে হলদিয়াবাহিনীর জন্য। ট্যাক্সি ট্র্যাফিক জ্যামের চোটে ধীরে চলে, ওরিয়েন্ট সিনেমার কাছটায় এসে আমাকে চেপে ধরে নস্টালজিয়া। পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় একবার দেখে নিতে চেষ্টা করি সিনেমাহলের পাশে সেই কোলাপসিবল গেট, যেটার মুখে সবসময় দারোয়ান পাহারায় থাকত। যেই দরজা দিয়ে একবার সন্ধের মুখটায় কাজরীর সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেছলাম বিনিপয়সায় সিনেমার টিকিট সংগ্রহ করতে। শুধু সিনেমার টিকিটই নয়, ফ্রিতে ফান্টা খেয়েছিলাম আমরা দুজনে। জুদাই চলছিল তখন হলে। বাইরে হাউসফুলের বোর্ড ঝুলছিল। অনিল কাপুর আর শ্রীদেবী। ব্যালকনির সীট।
    আরেকটু এগিয়ে যায় ট্যাক্সি। বাঁদিকে টার্ণ নেয়। এখানেই অ্যাম্বার। আরিব্বাস! এই রাস্তাতো আমি খুব ভালো চিনি। কত স্মৃতি এখানে। কত কত স্মৃতি। অথচ কখনো লক্ষ্য করিনি এই রেস্টুরেন্টটাকে। যেন লুকিয়ে ছিল। কে যেন একজন জিগ্যেস করে, এর আগে এসেছিস কখনো অ্যাম্বারে? সংক্ষিপ্ত "না" বলি বটে, কিন্তু এ রাস্তা কি ভুলবার? সেই শীতের দুপুর, হাইকোর্টের পেছনে মেলার মতো খাবার দাবারের দোকান, তারপর সেই ফলের দোকানের সামনে ওপেন এয়ার মঞ্চে সেই নাটক, সবাই আমাদের দেখেছিল। সেই লোকটাকে, যে হাইকোর্টের মধ্যে ঢুকে গেছল, তাকে, আমাকে আর পুষ্পিতাকে। তারপরে আমি হেঁটে হেঁটে অফিসে ফিরেছিলাম একা। এই রাস্তা ধরেই, এই অ্যাম্বারের সামনে দিয়েই। চিনিনা আবার এই রাস্তা! তবে সেসব গল্প আমার কোলিগদের কাছে বলা যাবে না। ওরা বুঝতে পারবে না মনে হয়। কী দরকার ওদের জানিয়ে? তার চেয়ে এখন যেমন চলছে চলুক। অ্যাজ ইফ আমি নতুন এলাম এখানে।
    আমরা অ্যাম্বারে ঢুকে একতলাটার দিকে চোখ বুলোই। সব টেবিলেই লোকজন বসে খাচ্ছে। ফাঁকা টেবিল নেই। একজন ম্যানেজার গোছের লোক আমাদের দোতলার সিঁড়ি দেখিয়ে দেয়। দোতলায় পৌঁছে দেখা যায় আমাদের জন্য বুক করা হয়েছে একটা আলাদা ঘর। সেই ঘরে লম্বা টেবিলের চারদিক ঘিরে চেয়ার পাতা, মখমলের কুশন দেওয়া চেয়ার। টেবিল মোড়া আছে ধবধবে টেবিলক্লথে। তার ওপরে সারি সারি ছুরি কাঁটা ন্যাপকিন গেলাস সাজানো। একটু দূরে একটা ছোটো টেবিল, সেখানে একটু স্বতন্ত্র আয়োজন। একজন সেখানে আমাদের আগেই উপস্থিত, যিনি দেখভালের ভার নিয়েছেন এই পার্টির। তিনি কেটি। আমাদের ঢুকতে দেখে তিনি জেনে নিলেন সবাই এসে গেছি কিনা। তারপরে বেয়ারাকে ডাকলেন আমাদের অর্ডার নেবার জন্য। বেয়ারারা এসে গেল অর্ডার নিতে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম কেটি নিজের টেবিলে খাবার ও পানীয়ের সদ্ব্যবহার করছেন। আজও ওঁর সামনে রাখা আছে প্রণ ককটেল, কাচের বাটিতে। এবং আজও সেই স্বচ্ছ গোলাপী রঙের ড্রিংকস। এতক্ষণে ড্রিংক্সটার নাম আমার মনে পড়ল। সেক্স অন দ্য বীচ।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৮ জুন ২০১৬ ০০:৫৬620793
  • সে | 198.155.168.109 | ২৮ জুন ২০১৬ ০০:৫৮620794
  • rivu | 80.214.3.186 | ২৮ জুন ২০১৬ ২১:০৭620795
  • আমার পিসেমশাই এমবার এ চাকরি করতেন, তাই মাঝে মাঝে এইসব দেব ভোগ্য খাবার খাওয়ার সুযোগ হতো। নয়তো এফোর্ড করা সম্ভব ছিলোনা। সেইসব দিন মনে পড়ে গেলো। কিন্তু কেন চলে আসতে হলো সেইটা জানা হলোনা!
  • সে | 198.155.168.109 | ০১ জুলাই ২০১৬ ১৩:৪৩620796
  • আরো একটা ওপেন এয়ার পার্টি হয়ে গেল নলবনে। সঙ্গে পার্টনার নিয়ে আসা যাবে - এরকম বলা ছিল। ছেলেদের ক্ষেত্রে বৌ, হবু বৌ কি প্রেমিকা। মেয়েরা এমনিতেই সংখ্যায় কম, নেগলিজিবলি কম। পার্টনার নিয়ে গিয়ে কেস খেয়ে গেলাম। কেউ তেমন কথা বলতে চাইল না, কিন্তু আমরা পষ্ট অনুভব করতে পারছিলাম অনেক চোখ দেখে চলেছে আমাদেরকে। সেই দেখে চলায় অস্বস্তি হয়, অনেক কথা বলে যায় কোনো কথা না বলি। আমরা বেশিক্ষণ থাকিনা সেখানে। একটু থেকেই কেটে পড়ি সেখান থেকে।

    তারপরে ফাইনাল পার্টিটা হয়েছিল, বেশ অনেকটা সময় পার করে। মির্চ মসালা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটা তখনো খুব বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। কিন্তু ভেতরে ঢুকে রীতিমতো ইমপ্রেসড হয়ে গেলাম।
  • সে | 198.155.168.109 | ০১ জুলাই ২০১৬ ১৩:৪৬620797
  • হলদিয়া থেকে হুট করে ফিরে আসবার পর তিনমাস কেটে গেছে এর ভেতরে। বা হয়ত তিনমাসেরো বেশি।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৮:১৩620798
  • আবার আমাদের হলদিয়াবাহিনী আমন্ত্রিত। মির্চ মসালা রেস্টুরেন্টটা হচ্ছে বালিগঞ্জের একটা গলিতে। টু বি প্রিসাইজড, এটা গড়িয়াহাট রোডের প্যান্তালুনসের পাশের গলি। বাইরে থেকে আঁচ করা যাবে না যে ওখানে ভেতরে ভেতরে কী কাণ্ড। গলিতে ঢুকলেই বাঁহাতে দেখা যায় রেস্টুরেন্টের নাম এবং একটা মস্ত লাল লঙ্কার মত দেখতে লোগো। লোগোই হবে, ভেতরে আলো জ্বলছে। টকটকে লাল লঙ্কার নীচে দরজা, সেটা দিয়ে ঢুকেই সিঁড়ি চলে গেছে ওপরে। রেস্টুরেন্টটা ওপরে। এই পার্টির উদ্দেশ্য কেবল প্রোজেক্ট মহোৎসব নয়, আরেকটা কারণও আছে। অঙ্গনাদি পাকাপাকি ট্রান্সফার নিয়ে বোম্বে চলে যাচ্ছেন তো, তাই এটা এক ধরণের ফেয়ারওয়েল পার্টি। পার্টি শেষ হতে দেরি হতে পারে, বাড়ি ফিরতে অঙ্গনাদির রাত হয়ে যাবে, উনি থাকেন কাছেই ফার্ণ রোডে, তাই সম্ভবত বুদ্ধি করে এত কাছাকাছি রেস্টুরেন্ট বাছা হয়েছে। ওপরে উঠেই রেস্টুরেন্টের ভেতরে একটা ট্যাক্সি দেখতে পেলাম। একটা পুরো ট্যাক্সি নয়, অর্ধেক ট্যাক্সি। সামনের দিকটা আছে, পেছনটা নেই। কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। ট্যাক্সির হেডলাইট দুটো মাঝে মাঝে জ্বলে উঠছে, কিছুক্ষণ ফুল ব্রাইটনেসে থাকবার পরে গ্র্যাজুয়ালি ড্রপ করছে লাইটের ব্রাইটনেস। তারপরে নিবে যাচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পরে জ্বলে উঠছে। কোনো পুতুল ট্যাক্সি নয়। একেবারে সত্যিকারের একটা ট্যাক্সির খোলের হাফ কেটে ফেলে জিনিসটা রাখা আছে। অনেকটা স্পেস অকুপাই করে রেখেছে। ঐ জায়গায় গোটা দুই টেবিল ধরে যেতে পারত। গড়ে ছটা (যদি চার দুগুণে আটজন নাও আসে) কাস্টমার বসতে পারত। এসব এলাকায় তো প্রচুর ভাড়া পার স্কোয়ারফিট। কিন্তু এদের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি অন্যরকম। এরা ঐ হাফ ট্যাক্সিটা রেখেছে কাস্টমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, এবং ট্যাক্সির ভেতরেই বাসনকোসন রাখছে। আমরা যখন খাবার অর্ডার দিচ্ছিলাম, একজন ওয়েটার ঝপ করে ট্যাক্সির জানলার ভেতরে হাত বাড়িয়ে কয়েকটা পেতলের থালা বের করে কিচেনের দিকে চলে গেল। একটু পরে পেতলের থালায় সার্ভড হলো, তন্দুরী রুটি, পেতলের বাটিতে করে চিকেন। বরাবরের মত, আমাদের টিমের কজন হত্তাকর্তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তারা নিজেরা ও বাকিরা কীকী খাবে। এবং প্রতিবারই চিকেন পরিবেশিত হয়। এবারেও অন্যথা হল না। তবে বাসনকোসন, অ্যাটমসফেয়ার, লোকেশান, মশলাপাতি অন্যরকম।
    জায়গাটা দেখতে বানিয়েছে ধাবা টাইপ। তবে ফুললি এয়ার কন্ডিশান্ড। খশখশে কাঠের টেবিল, কোনো টেবিলক্লথ লেই, রাফ এন্ড টাফ লুক। বসবার জন্য বেঞ্চি সিস্টেম। ওয়েটরদের পোশাকও ধাবা স্টাইল। এবং তাদের কাঁধে একটা করে লাল ন্যাকড়া রয়েছে। কোলকাতার রাস্তায় এরকম লাল ন্যাকড়া দিয়ে গাড়ির বডি, কাচ মুছতে দেখা যায়। হুবহু সেই ন্যাকড়া। তবে পরিষ্কার। লস্যি নেওয়া হবে কি শরবৎ, এই নিয়ে স্লাইট আলোচনার পরে হাই লেভেলে ডিসিশান নেওয়া হল, শরবৎ। তারপরে সোনালী পানীয়তো ছেলেরা নেবে, যার যেমন মর্জি। অঙ্গনাদি খুব চিন্তিত আজ। ওঁর স্বামী ও পুত্রদ্বয় যে বেশ আগেই বোম্বে চলে গেছে, সে আমরা আগেই জানি। এখন ওঁর ওপর দায়িত্ব পড়েছে গেরস্থালীর সমস্ত জিনিসপত্র আসবাব ইত্যাদি বোম্বেতে পাঠানোর। ট্রান্সপোর্ট কোম্পানী আছে, তারাই করবে, কিন্তু গাড়িটা নিয়ে। প্রায় আনকোরা নতুন মারুতি জেন ( নাকি ওয়ান থাউজেন্ড) গাড়ীটা অক্ষত অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছবে কিনা এই নিয়ে নানাজনে নানান মত দিতে লাগল। যারা মতামত দিচ্ছিল তারা সকলেই গাড়িওলা লোকজন। এমনকি, আমাদের প্রোজেক্টের সেই মেয়েটিও প্রোজেক্ট থেকে ফিরেই একটা গাড়ি কিনে ফেলেছে। স্যান্ট্রও নয় মাতিসও নয়, মারুতিতো নয়ই, সে কিনেছে একটা ইন্ডিকা। গাড়ির রং পীকক্ গ্রীন। গাড়ি নিয়ে আলোচনা হতে লাগল। কোন গাড়ি কেমন, কতটা তেল খায়, কীরকম মাইলেজ দিচ্ছে, ডিজেল ইঞ্জিন হলে নাকি একটা শব্দ হয় গাড়ি চলবার সময়। এটা একজনকে কটাক্ষ করে বলা হল। তার গাড়িটা বড়োসড়ো কিন্তু ডিজেল ইঞ্জিন। সে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলল, আর গাড়ির ভেতর কী একটু শব্দ, কোলকাতায় কি রাস্তায় শব্দ কিছু কম নাকি? আলোচনাটা জমছে না। তারপর শুরু হল পেট্রলের দাম এবং ট্যাংকি ফুল করতে কত খরচ। একটু একটু করে হুইস্কির নেশা চড়ছে সকলের, সেটা লক্ষ্য করে অঙ্গনাদি কেটে পড়ার তাল করছেন, সেটাও চোখ এড়াচ্ছে না যারা তখন ফুল ফর্মে। আজকের পরে তো পুরো টিমটাকে আর একসঙ্গে পাওয়া যাবেনা এভাবে। অঙ্গনাদি আফশোস করতে লাগলেন, ওঁর ছেলেদের এই রেস্টুরেন্টে এনে খাওয়াতে পারলেন না বলে। কবে তারা কোলকাতায় আসবে কোনো ছুটিতে, ধুর, মন এখন নাকি বোম্বের বাড়িতে রান্নার তেমন পাটই নেই, সব ডোমিনোজ থেকে পিৎসা আনিয়ে আনিয়ে খায় রোজ বাপ বেটারা। কবে উনি বোম্বে যাবেন, দুটো ঝোলভাত রান্না হবে সেখানে। উদাস হয়ে যান অঙ্গনাদি। এই উদাসী পরিবেশ কাটিয়ে তুলতে টিম থেকে অর্ডার দেওয়া হয় ডেসার্টের। মদ, তন্দুরী রুটি, চিকেন, সব খাওয়া হয়ে গেছে চেঁছেপুঁছে, এখন আসবে গর্মাগর্ম জিলিপি। ওয়েটার আবার ট্যাক্সির ভেতর থেকে থালা বের করে কিচেনের দিকে চলে গেল। জীবনে এই প্রথম ব্রেক্ফাস্টের বাইরে জিলিপি খেলাম, তাও আবার এয়ারক্ন্ডিশান্ড রেস্টুরেন্টে বসে, সাইজে নরমাল জিলিপির চেয়ে ডবল কি তিনগুণও হতে পারে। দামের তুলনা করতে যাওয়া বৃথা। আর দাম নিয়ে ভেবে কী হবে? প্রোজেক্টের পয়সায় খাচ্ছি, নিজের পকেট থেকেতো কিছু যাচ্ছে না। গরম জিলিপিতে কামড় দিয়ে অনেকেই তারিফ করতে লাগল। বোঁদেও পাওয়া যাচ্ছে, এমনকি কুলপি উইথ বোঁদের কী একটা কম্বিনেশান নাকি তখন ইন থিং ব্যাপার। উঁহু, কুলপি ফালুদা নয়, কোল্ড কুলপি উইথ হট বোঁদে। আরে বাবা, ভ্যানিলা আইসক্রিম উইথ হট চকোলেট সসের ধাবা সংস্করণ। কেন? নিউ ইয়ার্স, থুড়ি মিলেনিয়াম নাইট পার্টিতে ভ্যানিলা উইথ হট চকোলেট সস ছিলোতো। আলবাৎ ছিলো। মদ সার্ভ হচ্ছিলো যেখান থেকে, সেই কাউন্টারেই শেষের দিকে এনে রাখা হয়েছিল। অনেকেই সায় দিলো, রাইট রাইট, খেয়েছে, ভালো খেতে। প্রসন্ন খুব উৎসাহ সহকারে গল্প করছিল। হলদিয়াকান্ডের সে ই তো ছিল প্রধাণ কাণ্ডারী। সেই এক বিকেলে পুরো টিম নিয়ে কোলকাতা ফিরে আসা। সব আমাদের মনে আছে তো। কিন্তু কেন নিয়ে এলো সেটা ক্লিয়ার নয়। পাবলিক আর চাইছিল না হলদিয়ায় যেতে, সেজন্য, নাকি ওরা বোর হয়ে গেছল, নাকি বাজেটে কুলোচ্ছিলো না, নাকি ওপরমহলের ঝামেলা, পরিষ্কার করে কেউ তো কিছু বলে না। কেবন প্রসন্ন বলে, তাকে অনেকদূর যেতে হবে, খড়দায় থাকে। অনেকটা পথ, তবে চিন্তা নেই, গাড়ি আছে, ড্রাইভার বিক্রম গাড়ি নিয়ে নীচে ওয়েট করছে, আজই ট্যাঙ্কি ফুল করে পেট্রোল ভরা হয়েছে বিকেলে, পঞ্চাশ লিটার। এখন ড্রাইভার বিক্রমাদিত্যের কাঁধে চেপে বেতাল অর্থাৎ প্রসন্ন নিশ্চিন্তে বাড়ি পৌঁছতে পারবে। তেলের জন্য থামতে হবে না।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৮:২৬620799

  • এই সেই ট্যাক্সি।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৮:২৮620800
  • সে | 198.155.168.109 | ০৫ জুলাই ২০১৬ ১৬:০৭620801
  • পার্টিতে একটা কথা জানা গেল। আমরা সকলে হলদিয়া থেকে ফিরে আসবার পরেও আমরা যে হোটেলটাতে ছিলাম, সেটার একটা ঘর ভাড়া করে রাখা হয়েছিল আরো তিনমাস। হ্যাঁ, টানা তিনমাস। কে থাকত সেই ঘরে? উত্তর হচ্ছে, কেউ না। ফাঁকা একটা ঘরের জন্য তিনমাসের ভাড়া গোনা হয়েছে একটা বিশেষ কারনে। অবশ্য, একেবারে ফাঁকা রাখা হয় নি ঘরটাকে। "বোর্ডার আছে" এই ধারণাটা বজায় রাখতে সেই ঘরে রাখা হয়েছিল, প্রসন্নর গোটা দুয়েক ব্যবহৃত নোংরা গেঞ্জি, শমিতের ব্যবহৃত একটা তোয়ালেও সম্ভবত। যেগুলো খোয়া গেলেও কোনো আফশোস থাকবে না। কিন্তু ঐ তোয়ালে ও গেঞ্জি হচ্ছে সিম্বলিক। ঘর কারো দখলে আছে সেজন্য ভাড়া গোনা হচ্ছে, এইটের প্রতীক। যদি কেউ ইন্সপেক্শানে আসে, একেবারে ফাঁকা ঘর রেখে দিলে যদি সন্দেহ করে, সেইজন্য।
    এসব শুনে অনেকেই হাসাহাসি করে, যেন গল্পটা তারা জানত, হয়ত মূল কারণটাও জানত অনেকে। আমি ক্যাবলার মতো প্রশ্ন করি, সেকি! কেন একটা ঘর টানা তিনমাস শুধুমুধু ভাড়া করে রাখলে?
    আমার এই ক্যাবলামি শমিত আর সহ্য করতে পারে না। শত হলেও জুনিয়ার, রক্ত গরম, স্পষ্টভাষী নওজোয়ান। শমিত পরিষ্কার আমার দিকেই আঙুল তোলে। বলে, তোমার জন্যই তো তিনমাস ঘরটা রেখে দিতে হলো, নয়ত আরো আগেই ছেড়ে দেওয়া যেত।
    ওর এইরকম অ্যালিগেশন শুনে আমি চমকে থতমত হয়ে যাই। ছোকরা বলে কী? আমার জন্য ঘর রেখে দিতে হয়েছিল তিনমাস? নইলে আগেই ছেড়ে দেওয়া যেত? কানে ঠিকঠাক শুনছি তো? অস্পষ্ট স্বরে বলি, কেন? আমার জন্যে ঘর কেন?
    বরাবরের মতো ওর এই স্পষ্টবাদিতার টাইমগুলোতে ওকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করে অন্য কয়েকজন। যদিও সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় না, তবু বাধা দেয়, এই এই বাদ দে না, চুপ কর।
    এর বেশি বাধা দেয় না শমিতকে। শত হলেও আমিতো পুলিশের মেজকর্তার ছেলে নই, ওপরমহলে আমার কোনো হোল্ড নেই। শুধু ওপর কেন? কোনো মহলেই কোনো হোল্ড নেই।
    শমিত এতে এতটুকুও দমে তো না ই, বরং আরো মোমেন্টাম পেয়ে যায় সত্যটুকু খুলে বলতে। প্রসন্নর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় পারমিশান চায়, প্রসন্নর চোখে কৌতুকের হাসি। সে সস্নেহ প্রশ্রয় দেয় চোখের ভাষায়।
    আমি নিজেও এই গূঢ় সত্যটুকু জানতে আগ্রহী। তারপরে যা জানা যায়, তা এইরকম।
    দিনের পর দিন, থুড়ি রাতের পর রাত বা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঐ হোটেলে যে আসর বসত পালা করে দুটি ঘরে, সেখানে মদ ও গাঁজার ব্যবস্থা থাকত পুরোদমে। এসব কারণেই অনেকে অন্য হোটেল থেকে মুভ করে আমাদের হোটেলে চলে আসে। রাত্রিব্যাপী উল্লাসের জন্য খরচ হতো। হোটেল থেকে সেসব সরবরাহ করা হতো, বিল উঠছিল চড়চড় করে। খাবারদাবারের জন্য বরাদ্দ যা ছিল মাথাপিছু, তার পুরোটা খরচ না হলে সেই অতিরিক্ত বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে খরচটা "অ্যাডজাস্ট" করবার বুদ্ধি খেলে যায় কয়েকজনের মাথায়। মেয়েরা কি আর পুরোটা খরচ করতে পারবে? মেয়েরাতো এমনিতেই কমকম খায়, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মদ ইত্যাদির পেছনে টাকা খরচ করতে থাকে তারা। এমনিতেই অন্য মেয়েটি খুব কম খায়। এতসব চিন্তাভাবনা করে, ওরা বেরিয়ে আসবার আগের রাতে হোটেলের ক্যাশ কাউন্টারে পুরো হিসেবটা খতিয়ে দেখতে চায়। এসব হোটেলে সেরকম কোনো ডেটা সিক্রেসির ব্যবস্থা নেই। ক্যাশিয়ার খাতা খুলে দেখিয়ে দেন, "মেয়েরা" তাদের বরাদ্দ খাবার টাকার কতটা খরচ করেছে। দেখে চক্ষু চড়কগাছ তাদের, যারা হিসেবটা মিলিয়ে দিতে চেয়েছিল। দেখা গেল অন্য মেয়েটি বেশ কমকম খরচ করেছে। কিন্তু আমার হিসেবটা তাদের ভালো লাগল না। বরাদ্দ অর্থের সবটুকুই আমি নিয়ম করে খরচ করেছি। একটাকা বেশিও না, একটাকে কমও না। নিয়মিত এত "হিসেব" করে খাওয়া ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখলনা এই স্বতঃপ্রণোদিত অডিটবাহিনী। সবটা না হলেও বেশ খানিকটা রাগ গিয়ে পড়ল আমার ওপরে। কেন নিজের হকের বরাদ্দ টাকা এত নিপুণভাবে খরচ করেছি। তখন হোটেল ছেড়ে দিতে হলে প্রত্যেককেই মদ গাঁজার খরচ বাবদ বকেয়া টাকার হিসেব পুরোপুরি চোকাতে হবে। অন দ্য স্পট। ওদের ভাষায় "টুম্পা"রা ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। নিজ নিজ পকেট থেকে গচ্চা যাবে বেহিসাবের বিলের টাকা। তখন টিমের মাথা থেকে বেরোয় কন্টিন্জেন্সি প্ল্যান। যদি একটা ঘর ভাড়া রেখে দেওয়া হয় এই দেখিয়ে, যে একজন রয়ে গেল, তাহলে তার দৈনিক খাবার খরচ বাবদ রোজ যে টাকা বাঁচবে, তিনমাস মত লাগবে পুরো বকেয়া ধার শোধ করতে। তিনমাস পরে প্রসন্ন এবং শমিত চলে যায় হলদিয়া, হিসাব বরাবর করতে। সেই ছিল তাদের শেষ এবং মোস্ট রিসেন্ট ট্রিপ। সিলভারজেটে।
    শমিত, আক্ষেপের সুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ওঃ, তুমি একটা জিনিস বটে, পাই পয়সার হিসেব মিলিয়ে মিলিয়ে খেয়েছো। ইচ্ অ্যান্ড এভরি মীলের বিল আমরা চেক করেছিলাম সারারাত জেগে। তুমি নমস্য।
    শুনে নিলাম। অপমান করছে, নাকি এটাই ওদের স্টাইল, জানিনা। এখন হলে হয়ত বলতাল, কালচারাল ডিফারেন্স।
    পার্টি ভেঙে গেল, পেতলের থালায় পড়ে আছে ছোটো ছোটো টুকরো জিলিপির, রস। বিল মেটানো হয়ে গেছে।
    সেই ডিজেলইঞ্জিন গাড়ীর মালিক হয়ত শোধ নেবার জন্যই প্রসন্নকে বলে, কত লিটার ধরে বলছিলি তোর ট্যাংকে? পঞ্চাশ? হতেই পারে না। ম্যাক্সিমাম থার্টি লিটার ধরবে। দ্যাটস দ্য লিমিট।
    প্রসন্ন ঘাবড়ে যায়। বলে, সেকি? বিক্রম যে রেগুলার আমার থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ লিটারের টাকা চেয়ে নেয়!
    তুই শিওর তো? ডিজেল গাড়ি সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায় প্রসন্নর মনে। সম্ভবত সে সফল হয়েছে এবার। কারণ, তড়িঘড়ি "বিক্রমকে ধরতে হবেতো, জিগ্যেস করতে হবেতো" বলে বিষন্নবদনে বেতাল তড়িঘড়ি এগোতে থাকে পার্কিং লটের দিকে।

    ----------------
    অথ হলদিয়া-ক্যাটামারান কাহিনি সমাপ্ত।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৫ জুলাই ২০১৬ ২২:৫২620802
  • একটা ছোট করে পুনশ্চ আছে এই গল্পটার। প্রোজেক্ট চলাকালীন অনেকেই কিছু না কিছু কিনেছি, কেউ সালোয়ার সুটের কাটপিস, কেউ ডিজেলইঞ্জিনওলা গাড়ি, কেউ বাটার হাশপাপী চটি, অন্য মেয়েটি পীকক্ গ্রীণ কালারের ইন্ডিকা, এবং লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলি, আমি কিনেছিলাম একটা বাসস্থান, যাকে বলে ফ্ল্যাট, কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট।
  • জল | 193.82.199.156 | ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৮:২৬620804
  • বাপরে জলের কতো রূপ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন