এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এখানেও থাক

    kiki
    অন্যান্য | ১৫ জুন ২০১৪ | ৭৫২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১২:৫৫642323
  • ভিয়েতনামঃ

    ডিঃ একেতো ভীষন ভুলে যাই, তারপর এ আমার চোখ দিয়ে দেখা, আমার মত ভাবে, কাজেই এখানে প্রচুর ভুল থাকতেই পারে, কাজেই নিজ দায়িত্বে পড়বেন।

    ১। আমাদের কলকাতা থেকে একটু তেরচা করে পুবদিকে যেতে শুরু করলে প্রথমে বাংলাদেশ পেরিয়ে, মিজোরামের লেজ কে টাটা করে বার্মা হয়ে থ্যাইল্যান্ডেকে পেরিয়ে কম্বোডিয়াকে কোনাকুনি পার করে ভিয়েতনামের হো চি মিন শহরে পৌঁছে যাওয়া যায়। সমুদ্রের গা ঘেঁষে লম্বাটে ছোট্ট এক দেশ।ভিয়েতনাম। তার দক্ষিনের শহর হো চি মিন। আমাদের বম্বের মত এর গুরুত্ব। যদিও ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহর উত্তর ভিয়েতনামে অবস্থিত।

    উইকি পিসির কথা অনুযায়ী ভিয়েতনামের দুটো প্রভিন্সে খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচলক্ষ বছর আগে প্যালিওলিথিক যুগের হোমো ইরেকটাসের ফসিল পাওয়া গেছে। খ্রীঃ পূঃ এক হাজার বছর আগে মা/ম এবং রেড নদীর ধারে গড়ে ওঠে ডম সান ( Đông Sơn )সভ্যতা। সেই সময়ের ব্রোঞ্জের ড্রাম পাওয়া গেছে।এই সময় এখানে Văn Lang ও Âu Lạc রাজত্ব গড়ে ওঠে যা ক্রমশঃ দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে।

    আনুমানিক খ্রীঃ পূঃ ২০৭ এ চীনারা ভিয়েতনাম দখল করে নেয় এবং তারপর প্রায় হাজার বছর ধরে তারা ভিয়েতনামকে দখল করে রাখে।

    ১৮৬২ থেকে ১৯৪৫ ফরাসীরা ভিয়েতনামে দখলদারী চালায়। তারপরে যোগ দেয় আমেরিকানরা। আর সত্তরের দশকে পুরোপুরি বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত হয় ভিয়েতনামিসরা। সালটা ১৯৭০ না ৭৫ ভুলে গেছি।

    ভিয়েতনামিসদের কাছে শোনা অনুযায়ী এই জেনেছিলাম যে ফরাসীরা এতটাই অত্যাচার চালায় যে ক্রমশ ভিয়েতনামিসদের সব স্কুল বা পড়াশুনার ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়। নিজেদের কাজ চালানোর লোক তৈরীর জন্য কিছু স্কুল বানায় অন্যসব কলোনিয়াল প্রভুদের মতন, পার্থক্য এটাই যে ভিয়েতনামিসদের নিজেদের অক্ষর সমস্ত ভুলিয়ে দিয়েছে তারা। এখন ভিয়েতনামিসরা রোমIন হরফ ব্যবহার করে আর ছটা চিহ্ন। ভাষা যদিও তাদের নিজস্ব। কিন্তু নিজস্ব হরফ বা সংখ্যা নেই। আর প্রতি গ্রামে মদ তৈরীর কারখানা থাকতো। সন্ধের পরে মদ বা আফিমের নেশায় যাতে ভিয়েতমামিসরা ডুবে থাকে তা কড়া ভাবে দেখা হত। মানে কিছুতেই ভাবতে দেওয়া হত না, যাতে করে কাজ করানোর মত কিছু মগজহীন মানুষ ই থাকে তার ব্যবস্থা করা হত।

    এরা মঙ্গোলয়েড শ্রেনীর। স্বভাবে ভারী মিশুকে আর চরম ল্যাদ ওয়ালা মানুষ। অন্যান্য মঙ্গলয়েড দের মতই এখানেও মহিলারা সমাজে প্রাধান্য পায়। এরা গাছ খুব ভালোবাসে। যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন , ভীষন স্বাধীনচেতা এবং নিজের দেশকে ভীষন ভালোবাসে যদিও আমেরিকাকে ও খুব পছন্দ করে। পারলেই আমেরিকা তে চলে যায়। এমনকি মেয়েরা যথেষ্ট পয়সা দিয়ে আমেরিকানদের বিয়ে করে সেখানে গিয়ে গ্রীন কার্ড পাবার জন্য এবং চুক্তি অনুযায়ী তারপর ই ডিভোর্স দিয়ে দেয়। এটা আমেরিকান সাদা চামড়াদের জন্য এক বিশেষ লাভ জনক ব্যবসা।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১২:৫৭642400
  • ২। এরপর খানিকটা নিজের গল্প। মানে ব্যাপারটা ছিলো এই যে বিয়ের আগের একুশটা বছর কেটে ছিলো সেই দিক শুন্য পুরে। চারদিক থেকে এত আড়াল যে সুখী রাজকুমারের মতন ছিলাম পাঁচিলের ভিতরে, বাইরের জগৎ সম্পর্কে কোন আইডিয়ায় তৈরী হয় নি। আর এত প্যাম্পারিং হত যে নিজেকে বিধাতার তৈরী শ্রেষ্ঠ জীবেদের কেউ ভাবতাম। তারপর ড্যাডের হঠাৎ মনে হল যে আমার কুড়ি বছর পেরিয়ে গেছে , তো বুড়ি তো হয়েই গেছি, এবার বে না দিলে সমাজে মুখ দেখানো দায় হবে। তো ঝপাং করে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। যারা নিজেরাই আমায় পছন্দ করে নিয়ে গেল তাদের হায় হায় এর চোটে আমি ঘাবরে চমকে একাকার হয়ে গেলাম।পড়াশুনা চুলোয় গেল। ক্রমশ আমি যে আসলে কিছুই পারিনা, অত্যন্ত অপদার্থ এটা আবিস্কার করলাম তাই নয়, আমার নামের পিছনে ত্যাঁদোড়, অসৎ, ছল্লি আরো নানান সুমধুর বিশেষন জুড়ে গেলো। তারপর সেই ঝমাঝম যুদ্ধের মাঝেই মানিক হঠাৎ একদিন জানালো সে নাকি বিদেশ চল্লো। এক বছর পর এসেই আমাকে আর ঋভুকে তুলে সব পেয়েছির দেশে নিয়ে যাবে। তারপর সে পারি জমালো। এদিকে আমি তখন সারাদিন কাজ না থাকলেই ঋভুর হাত ধরে টো টো করে ঘুরে বেড়াই আর বাড়ী আসলেই ফিসফাস শুনি যে আমি আসলে কতবড় কঠিন এবং যাতা প্রানী যে আমার চোখে কোন জল নেই খালি নিজেরটা নিয়েই মেতে আছি আর ক্রমশঃ সেসব ও অগ্রাহ্য করতে শিখে যাই এবং এই সত্যটাও অনুভব করি যে আমি যত সইতে শিখব তত বেশী অত্যাচারের পারা চড়বে। এভাবেই বছর ঘুরতে চললো আর আমি স্লিম থেকে স্লিক এবং ক্রমশ বিলীন হয়ে যেতে শুরু করলাম সাথে ছেলেটার ও পড়াশুনা বা সহবৎ শিক্ষা মাথায় উঠলো সে খালি জানলো মা খুশী থাকলে ঠিক সময়ে খেতে পাওয়া যাবে না হলে বেজায় মার জুটবে কপালে।

    এই সময় আমরা যখন এয়ারপোর্টে হেঁটে বেড়াতাম বা দিল্লী রোড যেটা তখন সবে তৈরী হচ্ছে তার উপরে উঠে ঋভুকে প্লেন ওড়া বা নামা দেখাতাম , তখন বলতাম জানিস ঋভু একদিন আমরাও প্লেনে চড়ে অন্য দেশে যাবো। যদিও মন থেকে সেটা মোটেই বিশ্বাস করতাম না।

    তারপর মানিকের আর এক বছর পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল না, কারন যে ওকে নিয়ে গিয়েছিলো সে আসলে নিজের কাজ গোছাতে নিয়ে গিয়েছিলো, এবং সেটা হয়ে গেলেই নিজের আসল রূপ দেখায়। তারপর তো কেবল লড়াই আর লড়াই। আমার মানিক অবশ্য ভাগ্যের কাছে মাথা নত করেনি, সে আমার মত আদরে আড়ালে বড় হয় নি, কাজেই ঘুরে দাঁড়াতে জানে। মানিককে নিয়েই মনে হয় গল্প লিখে ফেলা যায়।

    বেচারী পকেটে তিনশো ডলার আর রিটার্ন টিকিট নিয়ে লড়াই শুরু করে । পাঁচদিন নদীর ধারে কাটিয়ে দিয়েছিলো। এবং ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রমান করেছে। মজা এই অন্যদের কাছে নিজেকে প্রমান করতে গিয়ে ক্রমশ পরিবার ই গৌন হয়ে গেল। অবশ্য এও এক অন্যরকম জীবন। খারাপ নয় মোটেই।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১২:৫৮642411
  • ৩। দুহাজার পাঁচের এপ্রিলের পাঁচ তারিখে আমার আর ঋভুর ভিয়েতনাম যাওয়া ঠিক হল। আমাদের ফ্লাইট ছিলো রাত দুটোতে, থাই এয়ারে। একেতো প্রথমবার এত দুরে একা চললাম, তাও সঙ্গে ঋভু। ও তখন ছবছুরে। আর তখন ( এখন ও) ভিয়েতনামে মশলাপাতি কিছুই পাওয়া যেত না। এবং চা। ব্যাগ বোঝাই করে নানান জিনিস নিয়ে চলেছি। এদিকে চারদিকের লোক বেজায় চিন্তায়। আমার খুব হিংস্র একটা আনন্দ হচ্ছিলো, এবার! এবার কি করবে? আমায় যেতে দেবে না এটা কেউ বলতে পারবে না, সঙ্গেও কেউ লেজুর জুড়বে না। আর ভীষন স্বাধীন ফিলিংস হচ্ছিলো। এই অনুভুতিটা আমার হত যখন আমি আর আই পি টি তে যেতাম। মনে হত এখান থেকে ঠিক আমি কোথাও একটা পালাতে পারব যেখানে কেউ আমায় চোখে চোখে রাখতে পারবে না। ঋভুকে ও আমি সব সময় ওস্কাই এই বলে, ঋভু শিগ্গিরি বড় হয়ে পালিয়ে যা ( সেই কি সিনেমায় পুজা ভাটকে ওর বাবা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ভাগাচ্ছিলো না, ভাগ পুজা ভাগ বলে, সেই রকম) নিজের মত ভাবে বাঁচ। কেউ যেন তোর ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবার চেষ্টা টা না করতে পারে।

    আমার অভিজ্ঞতায় থাই এর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স অনেক ভালো। প্রথমবার আমরা সম্পুর্ন এয়ারপোর্ট অ্যাসিস্টেন্স চেয়েছিলাম। কিন্তু বলতে কি প্লেন থেকে নেমে দেখলাম একজন একটা বোর্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে যাতে আমার নাম লেখা আর সেটাও যে আমার ই নাম সেটা বহু কষ্টে বুঝতে হয়েছিলো। সে কেবল কোথায় গিয়ে বোর্ডিং পাস পাবো বলে দিয়েছিলো। তখন থাই কলকাতা থেকে কেবল ব্যাঙ্কক পর্যন্ত বোর্ডিং পাস দিত, ব্যাঙ্কক থেকে হো চি মিনের বোর্ডিং পাস ব্যাঙ্ককে গিয়ে নিতে হত। থাইল্যান্ড আর ভিয়েতনাম একই সময়ে অবস্থান করছে, আমাদের থেকে দেড় ঘন্টা এগিয়ে। মানিক বলে দিয়েছিলো ঘড়িতে টাইম যেন নেমেই সেট করে নিই। নইলে সময় সংক্রান্ত অসুবিধায় পরতে পারি। এদিকে ঋভুকে বলে দিয়েছিলাম খবরদার ঘুমিয়ে পরবি না, তোকে কোলে নিয়ে আমি ব্যাগ সামলাতে পারবো না। বেচারী সারারাত জেগে ছিলো। তখন ঘুমে ঢুলছে। একটা ট্রলি নিয়ে তাতে হ্যান্ড লাগেজ চাপিয়ে আর ঋভুকে বসিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলেছি আর ভীষন অবাক হয়ে দেখছি কি বিরাট এয়ারপোর্ট। কাঁচ দিয়ে বাইরেটা যতটা দেখা যায় হাঁ করে দেখছি। একটা নতুন দেশ বলে কথা, আর আমি একটু হাঁ করা ধরনের ও বটে ! এই নিয়ে ক্যাবলা হ্যাবলা এরকম কত কথা শুনি এবং তাও আমি শুধরোই না। এমনকি জানলার ধারে বসা নিয়ে আমি আর ঋভু সব সময় যুদ্ধ করি।

    জানলার ধারে বসা নিয়ে মনে পরলো, প্লেনেও জানলার ধারের সিটের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম আর সেটা পেয়েও ছিলাম, যখন মাঝরাতে আমরা কলকাতা ছেড়ে উড়ে যাচ্ছি, তখন রাতের কলকাতা দেখে এত অবাক লেগেছিলো বলার নয়। ক্রমশ আমার কলকাতা ছোট থেকে আরো ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেলো, সেই মুহুর্তে খুব কষ্ট হয়েছিলো আর আদতে আমি কলকাতাকে যে কতটা ভালোবাসি তাও বুঝতে পারছিলাম। তারপর যখন আকাশ সকালের আলোয় আস্তে আস্তে কালো থেকে নীল হয়ে উঠলো, আবিস্কার করলাম আমরা মেঘের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তখন ম্যানড্রেকের মেঘের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে মেঘ মানুষদের দেশে পৌঁছে যাবার গল্পটা মনে পরে গেছিলো আর বোকার মত কোন মেঘের প্রাসাদ দেখা যায় কিনা তাও খুঁজছিলাম। ব্যাঙ্ককে নামার আগে দেখি সমুদ্রে কত কত জাহাজ ভাসছে, তারপর ক্রমশ সাজানো একটা শহর যার প্রতিটা রাস্তা কিভাবে যাবে বোঝা যাচ্ছে, আমার কলকাতার মত এলোঝেলো টাইপের নয় মোটেই , কিন্তু বড় প্রেডিক্টেবল , সেটা দেখতে দেখতেই ঝুপ করে নেমে পরলাম নতুন দেশে।

    তিনঘন্টা পরেই ছিলো পরের ফ্লাইট। তারপর যখন হো চি মিনে গিয়ে পৌঁছালাম তখন ঠিক বিশ্বাস ই করছি না যে অবশেষে এলাম। বাইরে মানিক ভীষন চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করছিলো, সে নাকি পাসপোর্ট নিয়ে রেডি হয়েই এসেছিলো, না পেলেই সোজা ব্যঙ্ককে আমাদের খুঁজতে চলে যাবে। আমি যে সেখানে ঠ্যাং ছড়িয়ে কাঁদতে না বসে সটাং এসে পৌঁছে যাবো, এটা তার বিশ্বাস ই হয় নি। ঋভুকে কোলে তুলে নিয়ে মানিক বললো, সোনা তুমি এলে? এই কথাটার ও একটা ইতিহাস আছে। ঋভু তখন একটা প্লে স্কুলে যেত। একদিন আকস্মিক ভাবে ওকে বাবা নিতে যায়, যেটা ওর ভাবনার ও বাইরে ছিলো। ছুটে গেটের কাছে এসে, বাবা তুমি এলে! বলেই আবার এক্ছুটে বন্ধুদের কাছে চলে যায়, বাবা নিতে এসেছে এটা জাঁক করে বলবার জন্য। তারপর থেকে এটা চালু হয়েছিলো, ঋভুকে খ্যাপানো। তারপর ই আমার দিকে ফিরে টেনসন ঝেড়ে ফেলে, কিরে পাগলি! করে এক মোক্ষম হাঁক। ব্যাপারটা হল, এই পাগলি ডাকটা আমার কাছে কোনো শকিং নয়, ছোট থেকে এত শুনেছি, বাবা, ভালোকাকু আরো সবার কাছে, কিন্তু তাবলে এমন লোকের মাঝে চেঁচানোটা আমার মোটেই পছন্দ নয়। কিন্তু তখন আবার আমি চারিদিক দেখতে ব্যস্ত। কি কান্ড! ট্যাক্সি গুলো সব নানারকম মডেলের গাড়ী, আর সব ই নাকি এসি। আর বাইরেটাও কি ঝকঝকে পরিস্কার। খুব আলাদা নয়, তবে বিলকুল পরিচ্ছন্ন। ট্যাক্সি করে যেতে যেতে ও বাবা ছেলে বকবক করে যাচ্ছে আর আমি হাঁ করে দেখে চলেছি। কিন্তু একটু হতাশ ই হচ্ছি, সেই তো সবুজ গাছপালা , সেই তো ইঁটের বাড়ী আর সেই তো মানুষ। আর ও কি দেখবো ভেবেছিলাম কে জানে!
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০১642422
  • ৪। ঝকঝকে শপিং মল, নানা রকম ঝকমকে দোকানপাঠ আর রাস্তা বোঝাই মোটর বাইকের ভীড় যা কিনা বেশিরভাগ ই মেয়েরা চালাচ্ছে, এইসব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম ফাম ভিয়েত চাম এ। এই জায়গাটা সিটি সেন্টার থেকে বেশ কাছে। বাড়ী পৌঁছেই, প্রচন্ড ক্লান্তির জন্য তাড়াতাড়ি স্নান সেরে খেতে নেমে এলাম, সেখানে মেড আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, এমনিতে এই সময় ওর চলে যাওয়ার সময়। মানিক আমি ভালোবাসি বলে পাবদা মাছের কালোজিরা কাঁচালঙ্কার ঝোল বানিয়েছিলো। খেয়ে দেয়ে বেজায় ঘুম। বিকেলে উঠে আমরা বাইক চড়ে শহর দেখতে বেরালাম।

    এইখানে বাড়ীগুলো ভারী অদ্ভুত। একটা বাড়ী তার পাশের দুই বাড়ীকে দুই দেওয়াল শেয়ার করে। একমাত্র রাস্তার শেষের বাড়ীটা একটা দেওয়াল শেয়ার করে প্রতিবেশির বাড়ীর সাথে , বাকি তিনদিকের দেওয়াল শেয়ার করতে হয় না।। ফলে রাস্তার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত মনে হয় একটাই বাড়ী। এবং বাড়ীর পিছনের দিকে উল্টো দিকের বাড়ীর সাথে তিনফুটের মত একটা গ্যাপ থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই কেবল রাস্তার দিকেই অনেকটা খোলা জায়গা থাকে যেখান দিয়ে আলো বাতাস আসতে পারে। আর প্রতিটা বাড়ীর জমির মাপ নির্দিষ্ট। কারোর বেশী জমি , কারোর কম এরকম হবার উপায় নেই। কাজেই সামনে পিছনে দুই সারি বাড়ীর দুই দিকে রাস্তা রয়েছে আর একটা নির্দিষ্ট মাপ পর পর ক্রস করা রাস্তা। একদম নির্দিষ্ট ছকে। কাজেই কিছুতেই হারিয়ে যাওয়া যাবে না। এখানে বাড়ী পাশে বাড়তে পরে না বলে যে যতটা পারে ফ্লোর বাড়িয়ে যায়। আর খুব ছোট জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও বাড়ীগুলোর ঘর কিন্তু বিশাল হয়। সাধারনত প্রতি ফ্লোরে দুটো করে ঘর থাকে আর একটা টয়লেট। এবং ঢুকেই যে ঘর তা অবশ্যই বসার ঘর, যা খুব সুন্দর করে সাজানো থাকে। এখানকার মানুষরা হাতের কাজে খুব নিখুঁত হয়। প্রচুর কাঠের জিনিস যাতে মাদার অফ পার্লসের সুন্দর কাজ করা এমন আসবাব আর সো পিসে সাজানো থাকে। আরো থাকে হাতের আঁকা ছবি, জাহাজ এইসব।

    দিনে দুবার করে হাতে গ্লাভস আর ঠিক ঠাক পোষাক আর জুতো পরা সাফাই কর্মীরা এসে রাস্তা ঝাঁট দিয়ে যায় আর বাড়ীর আবর্জনা নিয়ে যায়। এখানকার মানুষেরা সিস্টেমে চলতে খুব পছন্দ করে। বাড়ীর আবর্জনা বিনের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ এমনভাবেই রাখে যা খালি খুলে নিয়ে বেঁধে বাড়ীর গেটের সামনে রেখে দিলেই হয়। প্রতিটা বাড়ীতে জলের মিটার লাগানো আর জল খুব দামী , ফলে জলের অপচয় হবার উপায় নেই। আর বাড়ীর ড্রেনের মুখ যা কিনা রাস্তার ঢাকা ড্রেনে গিয়ে যোগ হচ্ছে, সেখানে জালি লাগানো। কাজেই বাড়ী থেকে কিছু ড্রেনে বইয়ে দিতে গেলে নিজের ই বাঁশ হয়ে যাবে , তাই ড্রেনে সব ফেলে দেবার অভ্যেস বা সুবিধে এখানে মোটেই নেই। আর ঢাকা ড্রেন হবার জন্য বাইরে থেকে কিছু ফেলাও সম্ভব নয়।

    এখানে ইলেক্ট্রিক বিল, ফোন বিল নিয়ে টেনশন করতে হয় না, বাড়ীতে মিটার দেখতে এসে সেই দপ্তরের লোকেরা বিল দিয়ে পয়সা নিয়ে চলে যাবে। গ্যাস শেষ হলে পাড়ার দোকান কে বলে দিলে তক্ষুনি দিয়ে যাবে। মানে অনেক ফালতু টেনসনের ঝামেলা নেই সেখানে। মাসে একটা কি দুটো দিন সারাদিনের জন্য ইলেকট্রিক থাকে না , তাও সেটা আগের থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।বাজারে বেশিরভাগ সব্জি , মাছ এমনভাবে কেটে বিক্রি করা হয় যে বাড়ীতে এনে ধুয়ে রান্না চাপিয়ে দিলেই হয়।

    .
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০৩642433
  • ৫। অনেকদিন পর আমাদের দিনগুলো খুব হালকা পলকা ভাবে কেটে যাচ্ছিলো। বিকেল হলেই আমরা বেরিয়ে পরতাম। শহরে প্রচুর পার্ক আছে, আর ভীষন সবুজ সব পার্ক। লোকেরা গাছ ভীষন ভালোবাসে, বাড়ীতে মাটি নেই কিন্তু বড় বড় টবে প্রচুর গাছপালা থাকে। এমনকি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা বা ব্যালকনিতেও প্রচুর গাছ থাকে। সকাল আর সন্ধ্যেতে তখন অন্ততঃ বড় জলের গাড়ি এসে রাস্তার ধারের গাছ্গুলোতে জল দিয়ে যেত। এতে মনে পরে গেলো, আমাদের খুব ছোটবেলাতেও মনে হয় মানিকতলার দিকে দেখতাম, গঙ্গার জল আসতো যেসব কল ( মানে ঠিক কল নয়, কারন গবগবিয়ে প্রচুর জল পরতো একটা মুখের মত বিরাট গর্ত দিয়ে) দিয়ে, সেখান থেকে জল নিয়ে বড় রাস্তা ধোয়া হত। এখানে বনসাই খুব দেখা যায়।

    আমাদের মেড মিস হা -র সাথে আমার আর ঋভুর খুব ভাব হয়ে গেছিলো। আমার ওর সাথে আলাপ হত ভাঙা ভাঙা ঈংলিশে। দুজনের এ ব্যাপারে খুব মিল ছিলো। অর্দ্ধেক কথা আমরা ইশারাতে বুঝে নিতাম। মিস হা সকালে আমাদের বাড়ীতে আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত কাজ করে ফিলিপিন্স এয়ারলাইন্সে কাজ করতে যেত। তারপর সন্ধ্যেতে কলেজে যেত। ও উত্তরের কোন প্রভিন্সের মেয়ে। পড়াশুনা আর কাজের খোঁজে হো চি মিনে এসেছে। এখানে মেয়েরা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, এ নিয়ে সমাজে কোন কথা হয় না কারন এটাই স্বাভাবিক। আর মেয়েদের আমাদের দেশের মত মেয়েসুলভ বিপদ আপদের বালাই নেই। এমনকি অনেক অনেক দিন রাত্রে আমার ঘরের বারন্দা থেকে দেখেছি রাত একটা দুটোর সময় ও মেয়েরা একা বাড়ী ফিরছে। আর কাজ নিয়েও এদের ছোট বড় বিচার সেভাবে দেখিনি। যেখানে পোষাবে কাজ করবে, পোষাবে না , ছেড়ে দেবে। এরকম ও শুনেছি, ভালো কাজ অসুবিধার জন্য ছেড়ে দিব্যি পেট্রল পাম্পে গিয়ে কম পয়সার কাজ ও করছে। এরা মানসিক ভাবে চাপ নেওয়া পছন্দ করে না। কাজেই বসের বেশি খবরদারিকে এরা পাত্তা দেয় না। অবশ্য শেষে যখন গেলাম তখন দেখলাম শহর বা শহরের মানুষের ভাবনা চিন্তা অনেক পাল্টে গেছে। প্রথম যখন গেছিলাম, তখন দেখতাম আমাদের ডেলিভারি বয় রা দিব্যি দুপুরে লাঞ্চ সেরে সোফার উপর পা তুলে ঘুমুচ্ছে। ওদের নাকি ভাতঘুমের জন্য এক ঘন্টা ছুটি দিতেই হবে। আর বিকেল পাঁচটার পরে কেউ কাজ বড় একটা করতে চাইত না। এরা পরিবারের সাথে থাকতে খুব ভালোবাসে, আর ভীষন ভালোবাসে বাচ্চাদের। বিকেল হলেই সবাই মিলে পার্কে পার্কে ভিড় জমায়।

    মিস হা, ভারি মজার ছিলো। ঋভুর সাথে প্রচুর গল্প করতো যার মাথামুন্ডু নেই। দুজনেই খিলখিলিয়ে হাসতো। তো একদিন কিছু একটা ওর হাত দিয়ে মানিকের অফিসে পাঠাচ্ছিলাম। প্রসঙ্গতঃ আমাদের একতলার দুটো ঘরের একটা ছিলো(ভিতরেরটা) রান্না ও খাবার ঘর যেটা ১৮/১৮ আর বাইরেরটা ছিলো বসার ঘর যেটা ১৮/ ৩০ এইরকম মাপের হবে। দোতলায় অফিস, একইরকম দুটো ঘরে আর তিনতলায় ছিলো বেডরুমগুলো। আমি ওকে বলেছিলাম আমার হাসব্যান্ডকে দিয়ে এসো। ও ফিরে এসে বললো আমি আমার হাসব্যান্ডকে ( my husband) দিয়ে এলাম। আমি তো ঘাবরে একাকার! বলে কিরে! এই এক পিস সম্পর্ক ই তো বাপু আমার নিজস্ব , যা আমি মোটেই ভাগ করতে চাইনে। না হয় মানকেটা কুলীন বামুন, তা বলে এই যুগে............... অত্যন্ত রেগে অফিস ঘরে গিয়ে ঝড়ের মত একগাদা প্রশ্নমালা নিয়ে ধরিয়ে দিলাম। বেচারি অনেকক্ষন হাঁ হয়ে চেয়ে বললো, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, ঝামেলাটা কি? তারপর সব শুনে হো হো করে হাসি। বললো, ওদের তুমি যা বলবে ওরা তাই বলে দেবে, তুমি মাই হাসব্যান্ড বলেছো, তাই ও তোমায় সেটাই বোঝাতে চেয়েছে, ইওর বলতে হয়, সেটা জানে না।এমনকি রিটার্ন শব্দটাও ওরা পছন্দ করে না, সবেতেই কাম বলে। পরে অবশ্য যখন দেখলাম ঋভুকে মাই সান বলছে তখন খানিকটা বিশ্বাস করলাম। আর অমন না ভাবার কি আছে, জিন্স টিন্স পরে ঝাঁ চকচকে হয়ে কাজে আসে, এসেই ওনাকে একটা আলাদা বাথরুম দিতে হয়, সেখানে চেঞ্জ হয়ে এমনকি একেক দিন তো প্রায় হট প্যান্ট ট্যান্ট পরে কাজে নেমে যায়। আর এখানকার মেয়েদের স্কিন আর চুল খুব সুন্দর হয়। আমার দেখাশোনা আর ভাবনার সাথে কিছুই মেলেনা যে।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০৪642444
  • ৬। মিস হা একদিন খুব উৎসাহ ভরে ওর অ্যালবাম নিয়ে এলো দেখাতে। বোধহয় মেয়েটা একা একা থেকে ওর পরিবারকে খুব মিস করে।ওর মায়ের সাথে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে যাওয়ার ফটো। দিদির, তার ছোট্ট ছেলের প্রচুর ফটো। এইসব দেখাতে দেখাতে আর গল্প করতে করতে ও ফিরে যাচ্ছিলো সেই সব সময়ে, যখন এই ফটোগুলো তোলা হয়েছে। সাধারনতঃ ওরা খুব একটা আবেগকে পাত্তা দেয় না, আর ওদের মুখে ভাব খুব কম প্রকাশ হয়। কিন্তু তাও ওর মুখে খুশী আর তৃপ্তির একটা প্রকাশ বেশ স্পষ্ট ছিলো। তারপর ওর এক বান্ধবীর পরিবারের ফটো দেখালো, বান্ধবী, তার হাজব্যান্ড আর বাচ্চা, আর তাদের সাথে হা-র ও কিছু ফটো রয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো, জানো! এই ছেলেটাকে আমি ভালোবাসতাম। আমি খুব অবাক হই, তাহলে বিয়ে করোনি কেন? আর সে তোমার বান্ধবীকে বিয়ে করলো, তাও তুমি যোগাযোগ রেখেছো? হা খুব ধীরে ধীরে বললো, ওর কোন দোষ নেই।ওর পক্ষে হো চি মিনে আসা সম্ভব নয়, আমারো সেখানে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের সম্পর্ক এমনিতেও থাকতো না। আমার কোন আপত্তি ছিলো নাতো। আর ওরা খুব হ্যাপি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর তুমি? তুমি জেলাস হওনা? ওর মুখে ভারি বিষন্নতা ছিলো, কিন্তু হিংসে ছিলো না। বললো জেলাস কেন হবো! তবে এখন ও কষ্ট হয়।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০৫642455
  • ৭। এখানে আমরা সিনক্যাফে নামের এক ট্রাভেল এজেন্সির থেকে শহরের আসে পাশে একদিনের জন্য ঘুরতে গেলাম। এদের বেশ ভালো ব্যবস্থা থাকে। এসি বাসে করে নিয়ে যায়। এবার ঘোরার সাথে খাবারের ব্যবস্থাও নেওয়া যায় বা কেবল যাতয়াতের ব্যবস্থা। ওরা বাস ছাড়ার পর ই খাবার জলের বোতল আর ভিজে টিস্যু দিত তখন। একজন ভিয়েতনামিস গাইড ভারি মজার মজার গল্প বলতে বলতে আমাদের নানান জিনিস জানাচ্ছিলো। ক্রমে আমরা শহর ছাড়িয়ে শহরতলী পার হয়ে প্রভিন্সে ঢুকে পরলাম। এবার রাস্তার পাশে বাড়ী ঘর, দোকানপাঠের বদলে মাঠ, ক্ষেত এসব দেখা যেতে লাগলো। আর আমি এবার খানিক দুঃখিত হয়ে উঠলাম, আমার চোখ সেই ছোটবেলার হাওড়া লাইনে ট্রেনে করে যেতে যেতে যেমন আদিগন্ত সবুজ বা তার মাঝে নানা রঙ দেখতে অভ্যস্ত , সে বেজায় বিরক্ত করতে শুরু করলো, প্রভিন্স বেশ রুখু সুখু যে। তার মাঝে কিছু মহিষ চরছে , কিন্তু সেই চিকন কালো গা কোথায়! এ যে কেমন ধারা শুকনো সাদাটে দেখতে। প্রসঙ্গতঃ ভিয়েতনামের শহরের রাস্তায় কোনো কুকুর, গরু বা কোন প্রানী ই দেখা যায় না। গল্প শুনেছি যা কিছু চলে বেড়ায় ওরা নাকি সব ই খেয়ে ফেলে। খাওয়ার ব্যাপারে এরা কিরকম আদিম ধরনের যেন!

    একবার ভিয়েতনাম যাবার পর পর মানিক একটা মেল করেছিলো, সেটা বললে খানিক বোঝানো যাবে। তখন আমি একটা ক্যাফেতে যেতাম, বাড়িতে কম্পু ছিলো না, আর আমি কিছুই জানতাম না, হতচ্ছাড়া ক্যাফের লোকটা আমার অ্যাকাউন্ট খুলে আমাদের মেল জমিয়ে রাখতো। দেখে বেশ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমার মেল এখানে কেন! তাতে যেন কি ভুল বুঝিয়েছিলো, আর আমিও সেটা বুঝে দিব্যি বাড়ি চলে এলাম। তখন খুব একটা অবিশ্বাস করতাম না কাউকে। আর তখন ও আমার বরটা তত পুরানো হয় নি, অবশ্য আমরা এত কম একসঙ্গে থাকি যে সে সম্ভবনাও নেই। ( ) তো যাই হোক, সেই মেলঃ

    সেটা অনেকটা এরকম ছিলো, যে মানিক কোন নিমন্ত্রনে একটা রেস্তোরাঁতে গিয়েছিলো, গিয়ে বেচারা অবাক, সবার সামনে নাকি একটা করে ছোট স্টোভ ধরিয়ে দিয়েছে , তারপর তাতে একটা গামলা করে জল চাপিয়ে সামনে নানান পাতা, শাক, অক্টোপাস,চিংড়ি, ঝিনুক, যা যা পেরেছে দিয়ে গেছে। সবাই সেগুলো নাকি ঝপাঝপ গামলার গরম হতে থাকা জলে ফেলে দিচ্ছে। তারপর সেই উনুন থেকে চপস্টিক করে সবাই সিদ্ধ সব কিছু বোলে তুলছে আর হাতা করে সেই ঝোল ই বলো বা স্যুপ তুলছে, আর পরম আরামে খেয়ে চলেছে।

    এদের রান্নাবান্না ভারি সিম্পল। আমাদের যেমন তেল বিনে রান্না হয় না, ওদের উল্টো। ওরা সব সিদ্ধ করে না হয় পুড়িয়ে খায়। আর কিছু কিছু জিনিস ভেজে। এখানে ভাত খুব স্টিকি। আমার খুব জানার ছিলো যে চপস্টিক দিয়ে লোকে ভাত খায় ক্যামনে! তো ব্যাপার এই। অমন দলা পাকানো ভাত খেতে অসুবিধা হয় না। ন্যুক তুঙ নমে এক ধরনের সোয়া স্যস ভাতের উপর ড্রপ ড্রপ ফেলে ভাতটা শুধু খায়, সাথে সেই সিদ্ধ সারা পৃথিবীর সব প্রানীকুল এবং ঘাসপাতা। আর প্রচুর কাঁচা পাতা , সব্জি ও। রান্না করেই সাধারনত খায়, বাসি খাওয়ার চল দেখিনি, বা আগে থেকে করে রাখা খাবার। আমাদের মত মশলার উপদ্রপে সব জিনিসের গন্ধ বর্ন উধাও হয় না ওদের রান্নায়, কিন্তু কেলো টা হচ্ছে, আঁশটে গন্ধ ও ভালোবেসে খায় এরা। একটা স্যস হয়, ফিস স্যস নামে, তার গন্ধের ভয়ে প্রথমে আমি বাজারের ধার কাছ ঘেঁষতাম না। বিকট আঁশটে গন্ধ। আর বাজারে আরেকটা আতঙ্ক ছিলো যে , যে কাঁচি দিয়ে (ওরা বঁটির ব্যবহার জানেনা) কৈ মাছ কাটছে , সেটা দিয়েই ব্যাঙ কেটে সাজিয়ে রাখছে। ঐ দেখে ভয়ে আমি মাছ খেতে ঘাবরাতাম প্রথম প্রথম।

    আর প্রচুর ফল খায় । নানা ধরনের ফল পাওয়া যায় এখানে। সব্জি আর মাছ ও খুব তাজা। কেবল পটল , সিম, কাতলা আর ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। এখানের আর একটা বিখ্যাত এবং এদের খুব প্রিয় খাবার "ফ" । আসলে এটা ন্যুডলস স্যুপ। একটা বিরাট গামলাতে গরু বা শুয়োরের বেশ বড় পিস মাংস সিদ্ধ হতে দিয়ে দেয় সকাল সকাল, আর এদের সকাল খুব তাড়াতাড়ি হয়। তারপর সেই সিদ্ধ মাংসের স্যুপ এ রাইস ন্যুডলস সিদ্ধ দিয়ে এক গামলা দিয়ে দেবে। পাশে থাকে পার্সলে, ধনে,বেসিল এইসব পাতা , মোচার খোলাটা জিরি জিরি করে কাটা, লেবু, বিন স্প্রাউট । এইসব। খুব সুদিং আর খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় এক গামলা ফ। আর বিকেলের দিকে সিদ্ধ ভুটা , আর স্টাফ পাঁউরুটির ঠেলা নিয়ে ঘুরতে থাকে, যেমন আমাদের ফুচকা , বা ভেলপুরির দোকান গুলো হয়। স্টাফ পাঁউরুটি অনেকটা সাবওয়ের খাবারের মত। আর একটা জিনিস আমি খেতে খুব ভালোবাসতাম। স্প্রিং রোল। রাইস পেপারে মোরা লেমনগ্রাস আর অন্যান্য হার্বের সাথে চিংড়ি বা মাংসের পুর আর সাথে বাদাম , তেঁতুল দিয়ে দারুন একটা চাটনি।তবে এরা প্রচুর মাংস বা যেকোন প্রোটিন খায়, আর পারলে চারবেলাতেই মাংস আর ভাত। মাসরুম আর টোফু ও খুব খায় এরা।আর সকালের দিকে পাওয়া যায় সোয়া মিল্ক, তখন ই পিষে তৈরী করা। এরা সাধারনত মোটা হয় না। বোধহয় ওদের খাবারের ধরনের জন্য। তাছাড়া সকালে পেট ভরা ব্রেক ফাস্ট, দুপুরে বারোটার মধ্যে লাঞ্চ আর সন্ধ্যে ছটার মধ্যে এরা ডিনার সেরে নেয়।

    খাওয়ার ব্যাপারে বাঙালী রান্নাঘরের মত হ্যাপা এদের নেই। আমাদের মায়েদের জীবনটাতো রান্নাঘরেই কেটে গেলো। এরা সকালে বেশিরভাগ ই রাস্তায় ব্রেকফাস্ট সেরে নেয়। খাবার পরিস্কার ই থাকে। দুপুরে বাড়ি ফিরলে সবাই মিলে কেটে ধুয়ে সিদ্ধ চাপিয়ে দেয়, রাইস কুকারে ভাত, কেউ টেবিল সাজায়, কেউ ফল কেটে রাখে। ডিনারেও তাই। কাজেই একজনের উপর কাজের ভার বা বিরক্তি বর্তায় না।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০৭642466
  • ৮। আমরা যে জায়গা গুলো দেখেছিলাম সেই ট্রিপে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাও দাই টেম্পল আর কুচি টানেল।

    কাও দাই টেম্পল তাই নিনে অবস্থিত। হো চি মিনের কাছেই। এই প্রসঙ্গে বলে নেই, ভিয়েতনামে ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নেই, এবং বোধকরি হতেও দেওয়া হয় না। সেখানে মানুষ বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, চীনাদের মত কনফুসিয়াস মতাবলম্বী যেমন হয় তেমন প্রচুর মানুষ আছে যারা কোন ধর্মাবলম্বী নয়। সেখানে প্রতি ফর্মে ধর্ম কি জানতে চাওয়া হয় না বা হলেও নো রেলিজিয়্ন বলেও একটা অপশন আছে বলেই শুনেছি। তাদের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় তারা ভিয়েতনামিস। এই ব্যাপারটা ভারি কনফিউশন আনে। আসলে পরিচয় ব্যাপারটা মানুষের খুব জরুরী। একেক জায়গায় একেক গুনী লিডারদের মতানুসারেই তো ধর্মের সৃষ্টি, কেবল হিন্দু ধর্ম একজনের থেকে শুরু নয়, কিন্তু পারপাস তো একই । এবং একসময় তাই ধর্ম মানুষের পরিচয় বহন করত। তারপর জায়গা অবস্থা অনুসারে আচারের সৃষ্টি এবং তা থেকে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য তার বাড়াবাড়ি। এই তো গল্প। কিন্তু আজকের যুগে আমাদের রুট জানার জন্য ছাড়া আর ধর্মের কি গুরুত্ব আছে তা আমার মোটা মাথায় ঢোকে না। অবশ্য আমি খুব কম জানি বলেও এরকম উদ্ভট মনে হওয়া গুলো আমার আসে বোধহয়। তবে একথা সত্যি ঐ নো রেলিজিয়ন অপশন থাকলে আমি খুশী হয়ে তাতেই টিক দিতে পছন্দ করতাম।

    কাওদাইজমে ওয়ান গডে বিশ্বাস করা হয় আর সেই সুপ্রীম পাওয়ারের উপাসনা করা হয়। এই ধর্ম খুব নতুন, কিন্তু পুরানো কিছু ধর্মের ( বিশেষ করে চীনা কিছু ধর্মপথ ) অনুসরন করা হয় বা প্রভাব আছে। এই ধর্মে একটা প্রকান্ড গোলক কে ইউনিভার্স হিসাবে রাখা হয় যাতে এই ইউনিভার্স সৃষ্টিকর্তার বাঁ চোখ আঁকা আছে। ঐ চোখ যা পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ডকে চালনা করছে। এই ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায়, পুনর্জন্মে, অহিংসতায় বিশ্বাসী আর নিরামিষ খাবার খায়, যেখানে ভিয়েতনামিসরা সাধারনত ঘোর মাংসাশী। এরাও বিশ্বাস করে ভগবানের সুনজরে এলে জন্মমৃত্যুর চক্কর থেকে রেহাই পাবে। এরাও আত্মার স্তর নিয়ে দেবযানের মত নানারকম ভাগ টাগ রেখেছে, সেগুলো আমার কিচ্ছু মনে নাই। যেকোন স্টেটের মত এখানেও লেজিসলেটিভ, এক্জিকিউটিভ আর জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্ট আছে। আর আছে হায়েস্ট প্রিস্ট আর স্তরে স্তরে নানান প্রিস্টরা। সেই মুক্তির সাধনা করতে গিয়েও আরেক সমাজ বানায়ে ফেলেছে , যাগ্গে।

    এখানে যখন উপাসনা হয় তখন খুব সুন্দর ট্রাডিশনাল বাজনা বাজানো হয়, যেটা উপরে দোতলায়। আর বিরাট হলের উপরে দোতলার থেকে খুব সরু ব্যালকনির মতন টানা জায়গা করা আছে যেখান থেকে নিচের অনুষ্ঠান দেখা যায়। নীচে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে বসে প্রার্থনা করা হয়। আর এখানে ড্রেসের কালার কোড আছে। একইরকম জোব্বা ধরনের, কিন্তু লাল, নীল, হলুদ আর সাদা এই চার রঙের। মনে হয় সিনিয়রিটির ভিত্তিতে।

    মন্দিরটি বিরাট জায়গা নিয়ে রয়েছে। মুল মন্দিরের ঢোকার দুদিকে খুব উঁচু ওয়াচ টাওয়ারের মতন করা আছে। একটাই বিরাট হলঘর, কেবল দোতলা একপাশে, সেখানে বারান্দার মতন রয়েছে, অনেকটা অপেরা হাউসের মতন। খুব সুন্দর কাজ রয়েছে মন্দিরের ভিতরে, রঙ বেরঙের লতা পাতা ওলা কাজ। আর একদম সামনে সেই বিরাট গ্লোবের মতন যাতে একটা বাঁচোখ আঁকা। বেশ গা ছমছমে ব্যাপার আর কি। আর এই মন্দিরে ঢুকতে গেলে চামড়ার কিছু, জুতো বা টুপি পরা চলবে না। আর কোন বারন নেই। জামাকাপড় বোধহয় স্লিভলেস বা হাঁটুর উপরে ওঠা কিছু পরা যাবে না, নাকি কম্বোডিয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলছি, কে জানে!
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:০৯642477
  • ৯। এবার কু চি টানেলে যাওয়া। বাইরে প্রচন্ড গরম। হো চি মিনে দুটোই সিজন, সানি আর রেইনি।এখানে শীতকাল নেই। ঐ কম গরম আর বেশী গরম।

    কু চি টানেলে গেলেই, প্রথমে একটা জায়গায় গিয়ে থামতে হবে, যেখানে টিকেট, যা বাসের গাইড ই কেটে আনবে, সেখানে আমাদের ছোটবেলায় যেমন মাঠে মাঠে বিরাট সাদা কাপড় (স্ক্রিন) টাঙিয়ে সিনেমা দেখানো হতো, সেরকম ছোট স্ক্রিনে কু চি নিয়ে একটা ডকু দেখানো হয়, খানিকটা ইতিহাস , ভুগোল জানানো হয়। তারপর বাইরে আমেরিকান ট্যাঙ্ক আছে, তাতে চড়ে ফটো তোলা যায়, আর তখন অবধারিত ভাবে গাইড বলবে, আমেরিকান সোলজার হতে চাইলে উঠে পরো, আমি সেখানে খানিক ক্যাবলাচ্ছিলাম, আমেরিকান কেন, ভারতীয় সৈন্য হবো বলে, যাগ্গে। আর দুজন ভিয়েত কং গেরিলার (একজন পুরুষ,অন্যজন মহিলা) মুর্তি আছে, তাদের মাঝে দাঁড়িয়েও ফটো তোলা যায়। এ ছাড়া টানেল তো দেখার আছেই, সেখানে লোটাস টি আর গেরিলারা যে কন্দ টাইপের কি একটা গাছের মূল সিদ্ধ করে খেত, তাও টেস্ট করা যায়। টানেল দেখার পর চাইলে স্যুটিং গ্রাউন্ডে গিয়ে বন্ধুক চালানো যায় আর যথেচ্ছ দাম দিয়ে স্যুভিনিয়র কেনা যায়। আমরাও মেটালের যুদ্ধবিমান কিনেছিলুম, সেটা বানাতে বুলেট এর ব্যবহার করেছিলো, কিন্তু হতচ্ছাড়া এয়ারপোর্ট সেটা নিয়ে প্লেনে উঠতে দিলো না।

    কু চি ডিস্ট্রিক্ট এ ১৯৪০ এর শেষের দিকে ফ্রেঞ্চদের সাথে লড়াই করার জন্য এই টানেল খোঁড়া শুরু হয়েছিলো। এখানকার প্রচন্ড শক্ত মাটি ছিলো এই টানেল পথের জন্য আদর্শ। এমনকি অ্যামেরিকানদের ভারী বোমাও এখানকার মাটিতে বড় গর্ত বানাতে সক্ষম হত না, কাজেই উপর থেকে টানেলের ক্ষতি করা সম্ভব ছিলো না। অ্যাডভান্স সব যুদ্ধের ইকুইপমেন্টে সজ্জিত শত্রুর সাথে যুঝবার জন্য সাধারন গরীব এবং প্রাচীন সব যন্ত্রপাতি নিয়ে লড়াই এর চেষ্টার এক উদাহরন কু চি টানেল। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো, আমরা যতই তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম বলে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরিনা কেন, ভিয়েতনামিসরা কিন্তু তার খবর রাখে না, এমনকি আন্ডো (ইন্ডিয়ানরা ওদের কাছে আন্ডো) বলতে ওরা খালি বোম্বে বোঝে, আর সব ই মঙ্গল গ্রহের মতো ব্যাপার। এমনকি কয়েকজনকে এই আমার নাম ইত্যাদি বলতে গিয়ে দেখেছি ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে , সে নিয়ে কোন আশ্চর্য হওয়া বা আবেগে ডুবে যাওয়া এসব হয় না মোটেই। এমনকি আমার এক বান্ধবী ছিলো যে কিনা একবার টিভিতে কলকাতা দেখে এসে খুব অবাক হয়ে জিগিয়েছিলো , ওটা কি খুব পুওরদের জায়গা! অত নোংরা কেন! কি হেনস্থা!

    যাহোক আবার ১৯৬০ নাগাত পুরানো টানেল আবার খোঁড়া শুরু হয় এবং প্রায় কু চি ডিস্ট্রিক্ট জুড়ে এই টানেল ছিলো এবং আরো কিছু এরিয়া নিয়ে, পঁচিশ বছর লেগেছিলো এই সুরঙ্গ পথ ও ব্যবস্থা বানাতে। ভিয়েতকং গেরিলারা সকালে চাষ করত, তাদের দেখে সাধারন চাষী মনে হত, তাদের একটা গামছার মত স্কার্ফ থাকতো, যা তারা মুখ ঢেকে রাখতে ব্যবহার করতো আর মাথায় থাকতো ডোঙা -র মতন টুপী । কেউ তাদের সন্দেহ করতো না। গাঁইতি, শাবল এই ধরনের সাধারন জিনিস দিয়ে প্রায় তিন স্তরে সব মিলিয়ে দুশো কিমি পথ তৈরী করা হয়েছিলো। আরো ছিলো মিটিং রুম, ডাইনিং হল, ফার্স্ট এইড স্টেশন , যেখানে বাইসাইকেল দিয়ে পাওয়ার জেনারেট করা হত, আরো ছিলো বিশ্রামের ঘর ও কিচেন। এই কিচেনের ধোঁয়া বেরোনোর পথ ও বানানো হয়েছিলো এমন কৌশলে যে , ধোঁয়া বেড়ানোর রাস্তা থেকে কিছুতেই কোথা থেকে আসছে তা বোঝা যাবে না। এছাড়া ছিলো ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। সেটা কোনো গাছের গুঁড়ি বা এমন জায়গা থেকে করা থাকতো যে দেখে মনে হবে গাছের ই কোন অংশ বুঝি। এখানে আমেরিকান বোমা গুলোকে এনে তার থেকে ছোট ছোট মাইন বানানো হত। আর সুরঙ্গ পথের খুব নীচের দিকে খুঁড়ে জল তোলার ব্যবস্থা করা হত, যা নানান কাজে লাগতো। মোটকথা এটা একটা স্বয়ং সম্পুর্ন আস্তানা ছিলো ভিয়েতকং গেরিলাদের।

    এখানে ভিয়েত কং গেরিলারা দিনের বেলায় বিশ্রাম বা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিত, রাত্রে বেড়োতো আস্তানা থেকে। এই সুরঙ্গ থেকে নদী হয়ে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা ও ছিলো। এবং ক্রমশ তারা শত্রুপক্ষের ভয়ের কারন হয়ে উঠতে লাগলো। ১৯৬৮ তেতের সময়ের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাও কু চি তে শুরু হয়। ভিয়েতকং গেরিলাদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে ঠিক এই টানেলের উপরেই ইউ এস ট্রুপের এক বিরাট বেস ক্যাম্প বসানো হয়, এবং প্রায় মাস খানেক তারা সেটা এমনকি আন্দাজ ও করে উঠতে পারে নি,কেবল রাতের বেলায় ই তাদের সৈন্যদের ক্ষতি হতে দেখে তাদের সন্দেহ দেখা দেয়। কিন্তু কিছুতেই তারা এই সুরঙ্গের মুখ গুলো ধরে উঠতে পারতো না, কারন খুব ছোট এই সুরঙ্গ মুখ , যেখান দিয়ে কেবল ছোট খাট স্লিম বডি ভিয়েতনামিসরাই ঢুকতে পারবে তা খুব হালকা কাঠের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা থাকতো, যার মাথায় ঘাস বা বুশ এমন ভাবে থাকতো যা দেখে বোঝার উপায় থাকতো না। শেষে আমেরিকান সেনারা জার্মান শেপার্ড ডগ নিয়ে আসে খোঁজার জন্য, কিন্তু গেরিলারা তখন আমেরিকান সাবান, উর্দি এসব ব্যবহার শুরু করে, ফলে কুকুরেরা কনফিউজড হয়ে যেত। তাছাড়া প্রচুর বুবি ট্র্যাপ থাকতো, যেখানে খুব শার্প বাঁশের মুখ বা বিষাক্ত সাপ, বিছে এসবে ভরা থাকতো। প্রচুর কুকুর এভাবেও মারা যায়। তখন নাপাম বোমা , রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সুরঙ্গ গুলোতে প্রচুর বিষাক্ত পোকা, সাপ, বিছে থাকতো, আর ছিলো ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, যাতে বেশিরভাগ গেরিলারাই ভুগতো, প্রচুর মারা ও যেত।

    শেষে আমেরিকান বি ফিফটি টু দিয়ে কার্পেট বোম্বিং করে এই টানেলের বেশিটাই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। প্রচুর সাধারন মানুষ মারা যায় তার ফলে। ষোলো হাজার ক্যাডারের মধ্যে কেবল ছয়হাজার কমরেডস বেঁচে ছিলো। একস্ট্রিম কন্ডিশনে অসীম সহ্য আর সাহস নিয়ে লড়াইয়ের জন্য কু চি ভিলেজ কে প্রচুর সন্মান এ ভুষিত করা হয়। ঐ আর কি! হাজার হাজার প্রান, আশা আকঙ্খা , বেঁচে থাকার অধিকার না পাওয়ার দাম কিছু সন্মান , আমরা মানুষ এটা বোঝানোর জন্য।
  • sm | 122.79.37.24 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:১১642335
  • দুরন্ত হচ্ছে।একেবারে মসৃন ফ্লাইট এর মতই এগোচ্ছে। চালিয়ে যান। আর একটু ঘটনার ঘনঘটা ও টুইস্ট চাই।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:১১642324
  • ১০। এরপর আবার বেশ কিছুদিন শহরেই চক্কর কাটার পর ঠিক হলো, চলো নমপেন ঘুরে আসি। মানিকের কাজ ও ছিলো। আমাদের আরো একটা দেশ ও দেখা হবে। সেইমত একদিন সকাল সকাল আমরা তিনজন আর সুনীল দা , মানিকের এক বন্ধু, যিনি বাঙালী নন, কিন্তু আসানশোলে মানুষ হবার জন্য বাঙালী হয়ে গেছেন এই চারজনে ভাড়ার গাড়ী চেপে বেরিয়ে পরলাম। আমরা বাই রোড যাবো। ক্রমশঃ শহর ছেড়ে শহরতলী হয়ে প্রভিন্স দিয়ে চললাম বর্ডারে। বাড়ীঘর ক্রমে কমে আসছে, কিন্তু রাস্তা একইরকম মসৃন। ভিয়েতনামের সব জায়গায় কম্যুনিকেশন খুব ভালো।আর জীবনযাত্রার মান ও আমাদের দেশের সাধারন মানুষের তুলনায় ওদের সাধারন মানুষের ঢের ভালো। ওরা যে এত বছর ধরে পরের অধীনে ছিলো আর সবেই স্বাধীন হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই।

    ভিয়েতনামের মকবই আর কম্বোডিয়ার বাভেতের মাঝে বর্ডার।সেখানে ইমিগ্রেশনের হ্যাপা চুকিয়ে সুনীলদা আর মানিক গাড়ীর ব্যবস্থা দেখতে গেলো। একটা টয়োটা কামরি ঠিক করা হলো দরাদরি করে। এখানে আর ভিয়েতনামেও দেখেছি খুব দামী মডেলের গাড়ী প্রচুর দেখা যায় আর তাতে সাধারন মানুষ ও দিব্যি ঘোরে। আবার মাঠ ঘাট প্রান্তর পেরিয়ে আমরা চললাম। এখানকার প্রভিন্স একটু অন্যরকম। বেশ কিছু তাল গাছ ও দেখেছিলাম মনে হয়। বাড়ী গুলো খুঁটির উপরে। গাছপালাও বেশ আছে। কিন্তু এসি গাড়ীতে থাকার ফলে বাইরে যে কি প্রচন্ড গরম তা টের পাইনি, পরে যখন নামলাম টের পেলাম।

    এভাবে নমপেনে আসতে গেলে মেকং নদী পেরোতে হয়।সে এক মজার নদীর পেরোনো। একটা অদ্ভুত বোট অনেকটা চাতাল আছে যার, সেটা অনেক গুলো গাড়ী, বাস সব ঐ চাতালে তুলে নিয়ে নদী পার করে দেয়, পরে আমার কাছে গল্প শুনে আমার ননদের শ্বশুরমশাই, মানে মেসোমশাই বলেছিলেন ওগুলোকে নাকি বাংলাদেশে বজরা বলে। আমাদের কামরী ও ঐরকম একটা বজরাতে উঠে পরলো। পাশেই একটা সাইকেলে একটা গোটা ছাল ছাড়ানো শুয়োর। বেশ কিছু ঝুড়ি করে বাদামভাজা ছোলাভাজার মতন মাকড়সা ভাজা, উচ্চিংড়ে সেঁকা, এইসব বিক্রি হচ্ছিলো, সে এক টোটাল কেলো। আমি এতবড় হাঁ করে তাকিয়ে আছি বলে জনগন আদর করে এক ঠোঙা উচ্চিংরি কিনে দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করতে আমিও মেকং এ ঝাঁপ দেবার ইচ্ছে বেশ উচ্চস্বরে জানালাম আর আমার মাথার পোকাদের সম্পর্কে সন্দিহান ও আমার সাঁতার না জানা ব্যাপারটা তাদের মনে পরায় সে যাত্রা আর কোন বিঘ্ন ঘটে নি।

    সাঁতার কতবার যে শেখার চেষ্টা করলাম আর কত কি যে তাই নিয়ে ঘটলো, কিন্তু আমি আর সাঁতার শিখে উঠলাম না। তখন বর্ষা কালে আমাদের বাড়ীর পিছনের মাঠ সমুদ্র হয়ে যেত। সেখানে আমি আর ভাই গিয়ে লাফাতাম এবং অবধারিত ভাবে ফোঁড়া, সর্দি , কাশি, জ্বর হবেই। মেরেও আমাদের সোজা করা যেত না, চান্স পেলেই ছুট ছুট। তারপর পুকুরে। ভাই শিখে গেলো, আমি ফ্রক ফুলিয়ে তাতে ভেসে মাঝ পুকুর অবধি যাই আর ফিরে আসি। তখন এক ছোঁড়া যে রোজ এসে তা দেখে কে জানবে। তার আমার নাসাঁতার দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো। এদিকে তখন আমার প্রেমে জব্বর ভয়। একে তো বাড়ীর সে যুগের শিক্ষা, কিন্তু আমি কি ডরাই কভু ...................... কিন্তু ভয় টা অন্য জায়গায় ছিলো। তার বছর খানেক কি দুয়েক আগে , তখন কি ক্লাস ফাইভ না সিক্স! আমার এক বান্ধবী প্রেমে পরেছে, আর আমরা সেই এঁচড়ে পাকা মেয়ের কল্যানে নিষিদ্ধ সম্পর্ক নিয়ে একটু আধটু জানছি। এই সময়ে তার মনে হলো আমার হাতের লেখাটা বেশ, আমায় দিয়ে তার প্রেম পত্র গুলো লেখালে ফল ভালো হতে পারে( হায়! তার প্রেমিকটি, সেও আমার পাড়ার ই বন্ধু, কত একসাথে সিরোগোজি আর পিট্টু খেলেছি, জানতেও পারেনি আমার লেখা চিঠি পড়ছে আর আমি ওর চিঠি পড়ে সেই বান্ধবীকে মানে বোঝাচ্ছি :P) তো সেই চিঠি শুরু হত আমার প্রিয় স্বামী আর উত্তর আসতো আমার প্রিয় বৌ, এই সম্বোধনে। সেই দেখেই কেমন ধাক্কা খেলাম। তখন অবধি জানতাম মায়েরাই খালি বৌ হয় আর বাবারা স্বামী, ওদের রিলেশন নিয়ে আমি অগাধ জলে, তো সেই বান্ধবী বোঝালো, অমন নাকি লিখতে হয়, তা সে মনে হয় দ্রৌপদী কেও হারিয়ে দিয়েছিলো, কারন ঐ একই ডাকে কয়েকশোকে ডেকে ফেলেছিলো বোধায়, নার্সারি নাহলেও , ফাইভ থেকে তো বটেই। তারপর আমায় দিয়ে দিস্তে কাগজের পাঁচ কি ছয় পৃষ্ঠা প্রতিদিন লেখাত( মা কি আর জানত যে আমি রোজ হাতের লেখা প্র্যাকটিস করি, কি চাপের সময় গেছে) একই কথা নানান মোড়কে। এদিকে এমনকি মাধ্যমিকের ইতিহাসেও আমার এক্সট্রা পেজ লাগে নি। তারপর রোজ দেখা ও করত। আমার সেই বয়সেই চোখ খুলে গেলো যে প্রেম করতে হলে অসম্ভব তেলু হতে হবে, আর প্রচন্ড ভয় ঢুকে গেলো। অত লেখা আর একজনের সাথে একই সাবজেক্ট নিয়ে( ওগো আমি তোমায় কত ভালোবাসি) অত বকবক করা সম্ভব নয়।

    তা সে ছেলেও নাছোড়।প্রথমে আমাদের লেটার বক্সে চিঠি এলো। ভাই এমন পাজি , সেটা হাতে দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে এসে আমায় দিলো। পড়ে তো আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাই। একেতো বানানের মা বাপ নেই, তারপর ভাষা। সেই শান্তার প্রেমে পরে আমাদের ন্যাটা না জটা দা, গেরুয়া পরে যে ঠাকুর গড়ত, হঠাৎ দাড়ী কামিয়ে শার্ট প্যান্ট পরে দীঘির পাশ দিয়ে ঘুরতে শুরু করেছিলো, শান্তা একদিন স্কুলে এসে বললো, ওরে আমার ঘাসে গলায় দড়ি বা থুতু ফেলে ডুবে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমারো ক্রমে সেই ইচ্ছে পাকা হচ্ছে, আমার প্রথম প্রেমপত্র, হায়, তা এমন মানের। ছিঃ। তারপর সে চিঠি বাবার হাতে। আমার সাঁতার শিখতে যাওয়া বন্ধ। যাব্বাবা! আমি কি করলাম! কোন উত্তর নেই। তারপর সে আবার বাবার ই ক্লাবের। একদিন তাদের দল আমাদের ভারি কাকুকে এসে বললো, গিয়ে বলবে মেয়ে তুলে আনব। দিলীপকাকু ও এসে খুব চিন্তিত হয়ে বাবাকে জানালো, ব্যস আমার ভালো জামা পরা ও বন্ধ হয়ে গেলো। বাবা বললো, পড়াশুনার সময় পড়াশুনাতে মন দাও। আসলের থেকে উপলক্ষ বড় করো না। কাজেই আমার কায়দার ড্রেস কেনা বন্ধ । এমনিতেই তা খুব একটা হত না। কিন্তু সে নাছোড় ছেলে পিছু ছাড়ে না। পরে , তখন ইলেভেনে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি। একদিন রাস্তায় এসে ধমকে দিয়ে গেলো, কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করো দেখবো! আমি বেশ আহ্লাদিত হলাম এই ভেবে, যাগ্গে আমার বিয়েতে একটা ঝামেলা পাকবে , বিয়েটা হয়ত আর করতে হবে না। ও দাদা! কোথায় কি! দিব্যি নির্ঝঞ্ঝাট বিয়ে হয়ে গেলো। পরে মানকেকে গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলুম, বুঝলি আমার ধারনা ছিলো বিয়ের সময় ডাকাত পরবে, আমায় ঘোড়া করে তুলে নিয়ে যাবে! সব শুনে তিনি যথারীতি মাথা দেওয়ালে ঠুকে বললেন, " ওগো! তুমি কি আমার কপালেই ঝুলছিলে! এবং বলাই বাহুল্য সাঁতার সে যাত্রা শেখা হয় নি।

    নমপেন শহর ও হো চি মিনের মতন। বাড়ী, রাস্তা একই রকম। তবে এখানে গায়ে গায়ে লাগা বাড়ীর মাঝে মাঝে এনজিও দের প্রচুর দারুন দারুন বাংলো আছে। এই এনজিও ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ধাঁধার মতন ব্যাপার। জেনারেলি এতে কাজ করা মানুষজন তো লোকের দুর্দশা থেকে মুক্ত করার কাজ টাজ করে থাকে, কিন্তু আমার দেখা বেশ কিছু ( আমার দেখা, কাজেই সেটাই সত্যি বলছি না, কারন দেখার সেট টা খুব বড় নয়) তাতে কাজ করা মানুষ জন বেশ ফুলে ফেঁপে উঠলো। শুধুতাই নয়, তারা যে লাইফস্টাইল নিয়ে জীবন কাটায় তার সঙ্গে কাজটা কেমন যেন মেলেনা।

    হোটেল খুঁজতে খুঁজতে আমরা কুইন এ এলাম। তখন এখানকার রিসেপসনের মেয়েদের লাঞ্চ টাইম। দেখি এক সুন্দরী এক প্লাস্টিক ব্যাগ ভর্তি গুগলি নিয়ে খাচ্ছে। অনেকটা আমাদের পার্কে বসে খোসা ওলা বাদাম ছাড়িয়ে খাওয়ার মত। একটা টুথপিক দিয়ে গেঁথে কি কায়দায় যেন ভিতরের মাংসটা দুম করে বার করে এনেই খপাৎ করে খেয়ে ফেলছে অসম্ভব তাড়াতাড়ি। আমি এমনিতেই একটু হাঁ করা ধরনের কাজেই এবারো সেইরকম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলুম। আমার আবার লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করা হয়েই ওঠে না, এজন্য কত সুন্দর ছেলেদের ইচ্ছে হলেও দেখতে পাইনে, ফোঁস! কারন বেশ কয়েকবার ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে দেখে ব্যাপারটা খুব ভালো বোধ হয় নি। সে যাগ্গে। এখন তো হরি দিন তো গেলো গাইবার সময় ( হায়!)। মেয়েটা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বেশ বিরক্ত হয়ে আমায় দেখছিলো। তারপর সরাসরি তাকিয়ে জিগালো ইয়োর কান্ট্রি ডোন'ত হ্যাভ? বলেই ঠোঙা তুলে দেখালো। এদের ইংরাজি শুনলে আমার দিল তর হয়ে যায়। যাক আমার মতও কেউ আছে। আর মজা হলো ওরা আমার আর আমি ওদের ইংরাজি দিব্যি বুঝতে পারি, কিন্তু মানকেটা ওদের বা ওরা মানকেরটা সেভাবে বোঝে না।কাজেই রাগার বদলে খুশী হয়ে ফ্যাক করে হেসে ফেললুম আর সে সুন্দরী ও অত্যন্ত রেগে কি করবে ভেবে না পেয়ে ফিক করে হেসে ফেললো, আর আমাদের ঘর ও ঠিক হয়ে গেলো।
  • kiki | 127.194.71.157 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৩:১২642346
  • ১১। বিশ্রাম নিতে নিতেই বিকেল হয়ে গেল। আমরা একটু হেঁটে ঘুরতে বেরোলাম। নদীর দিকেই যাওয়া হলো। এটা স্যাপ না মেকং মনে করতে পারছি না। একটা মেলা বসেছিলো নদীর ধারে। নানা রকম রাইডস, খাওয়ার দোকান, বেলুন, বন্ধুক ফাটানো, যেমন হয় আর কি! ঋভুর তো মজাই মজা। আমরা এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। এখানে দেখলাম পদ্মফুলের পাপড়ি বাদ দিয়ে যে অংশটা থাকে সেটাকে কিভাবে খায় যেন। মা বোধহয় বললো, আমাদের গ্রামের দিকেও পদ্মের কোড় ( তাই বলে কি?) খাওয়ার চল আছে।আরেকটা অদ্ভুত খাবার দেখলাম, বেবি হয়ে যাওয়া ডিম খাওয়া। ডিমটা সিদ্ধ করে ফাটালে পচাৎ করে চাট্টি জল বেরিয়ে যায়। তারপর খুদে মাথা, পায়ের নখ সমেত সেই ছানা সিদ্ধ চামচে করে রেলিশ করে খাওয়া (ওয়াক!)।

    ভিয়েতনামিসদের সাথে এদের চেহারার বেশ মিল আছে। যদিও ভিয়েতনামিস মেয়েরা বেশ মিষ্টি চেহারার হয় আর এরা একটু রুক্ষ চেহারার। কিন্তু গায়ের রং আকৃতি এসব দিক দিয়ে মিল আছে। কিন্তু সাজ পোশাকের ব্যাপারে অন্তত শহুরে ভিয়েতনামিসদের যতটা দেখেছি তারা বেশ সচেতন, এরাও ওয়েস্টার্ন পোশাক ই পরে কিন্তু ওদের মতন নয়। তাছাড়া হো চি মিনে আমি কোন নোংরা বা ছেঁড়া পোশাকের মানুষ দেখিনি। এখানে তা প্রচুর দেখলাম। তা ছাড়া প্রকৃতি গত ভাবে মিল আছে। ওখানকার মানুষ ও আয়েশ করতে বেশ ভালোবাসে, এরাও তাই।

    আমরা নদীর ধারে গিয়ে রয়্যাল প্যালেশের উল্টো দিকে বসলাম। নদীর তীর বাঁধানো। একটা মন্দির ছিলো নদীর ধারে, সেখানে খাঁচায় পাখি পুরে রাখা ছিলো। সেই বন্দী কেষ্টোর জীবকে পয়সা দিয়ে কিনে উড়িয়ে দিয়ে পুন্যার্জনের জন্য। ভাষা জানিনা বলে জিগাতে পারলুম না, বাছা তুমি অন্যের পুন্যের জন্য এদের বন্দী করার পাপ করে মরছো কেন! আবার এও শুনলাম এই পাখিদের ট্রেনিং দেওয়া । এরা আবার নির্দিষ্ট জায়গায় উড়ে গিয়ে বসবে। সেখান থেকে আবার এই খাঁচায়। কি অদ্ভুত! এই ধর্মের খ্যাঁচাকল আমার নিরেট মাথায় কোনদিন ই ঢোকে না। এও ঢোকেনা যে বেশির ভাগ মানুষ ই এ নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত হয় না, যুগ যুগ ধরে তাদের পুর্বপুরুষ যা করে এসেছে, যা বিশ্বাস করে এসেছে তা নির্বিকারে করে যায়, কোন প্রশ্ন তোলে না, উল্টে কেউ প্রশ্ন করলে তাকে দাগিয়ে দেবার ব্যাপারে ব্যস্ত হয় দেখে। ঠিক যেন লাস্ট ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে , এভাবে দুড়ুম করে পাখি কিনে, উড়িয়ে শান্ত হয়ে বাড়ী চলে গেল। আমাদের ধর্মস্থান গুলোতেও এর ব্যতিক্রম নেই। মনে হয় পৃথিবীর কোথাও ই তা নেই। ঐতিহাসিক মুল্য দিয়ে কোন মন্দির ঘুরে দেখা সম্ভব নয় , লোকাচার না মেনে, বড়ই দুঃখের।

    বেশ মনে আছে, আমি তখন বুলবুল থেকে সবে গাইড হয়েছি। আর ছোট থেকেই আমি দিলীপদার চামচি। তো একদিন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দিলীপদা ক্লাস নিলে মজাই মজা। কোন বকা ঝকা নেই, উল্টে বেশ গল্প শোনা যায়। আমাদের গাইড এ কতগুলো নিয়ম ছিলো, তার একটা এরকম ছিলো বোধহয়, বড়দের মান্য করবে, তারা কিছু করতে বললে আগে সেটা শুনবে , পরে সেই নিয়ে প্রশ্ন করতে পারো। এরকম কিছু। দিলীপদা বলেই বললো, শোন, বড়রা মোটেই সব সময় ঠিক বলে না। যা জানার বা শোনার তা আগে নিজের বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে নিবি, যতক্ষন না বুঝতে পারবি ততক্ষন তর্ক করবি। আর সেটা শুনতে গিয়েই না আমি এমনি ত্যাঁদোড় হয়ে গেলুম। এখন যখন বলি তোমার শিক্ষে পেয়েই তো আমি এরকম, তখন দিব্যি বলে দেয়, মোটেই আমি তোকে এরকম হতে বলিনি। কি আশ্চর্য ! নেহাত ছোটবেলার গুরু তাই ছেড়ে দিই।তবে আমাদের স্কাউট অ্যান্ড গাইডের মুলমন্ত্র ছিলো সর্বদা প্রস্তুত থাকা, এটা আমায় বেশ শিখতে হলো।বড্ড আদরে প্রথম একুশটা বছর কাটিয়েছি বলে পরবর্তী আঠারো বছরে সাম্যের নিয়মের জন্যই।

    আমি সিঁদুর পরি না, পুজা করিনা, পাগল ছাগলের মতন থাকি, এটা নিয়ে ছিছিক্কারের শেষ নেই। স্কুলেও শেষের দিকে দেখি আমায় মানুষ করতে জনগন পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের মাথা যন্ত্রনার কারন হয়ে যাচ্ছি শুনতে পেতাম প্রায় ই । এদিকে আমার ক্লাস নিয়ে আর খাতা দেখে অন্যকে নিয়ে ভাবার সময় ই থাকতো না। এবার স্কুল ছেড়ে আমারো মুক্তি, তাদের ও আশা করি। কেবল আমার বাচ্চাগুলোকে কদিন মিসাবো। কি করে বোঝাই , এত কম ক্ষমতা নিয়ে আমি তো আর কিছু পারবো না, এগুলোই আমার প্রতিবাদ , আর এটাও ঠিক আমার জীবনযাত্রা এসব কু আচার বাদ দিয়ে বেশ সিম্পল আর নির্ভাবনার।এমনিতেই জীবনে এত জটিলতা , সেখানে আরো চাট্টি অদরকারি জাটিলতা নিয়ে ঘুরে বেরানোর কি আছে কে জানে!

    তা সে যাহোক। তারপর হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন সারাদিনের প্রোগ্রাম আছে। প্রথমেই যাবো তুওল স্লেম( TOUL SLENG) মিউজিয়াম দেখতে। তাছাড়াও সেখানকার সরকার বিদেশীদের সন্ধ্যে সাতটার পর বাইরে বেরোতে নিষেধ করে রেখেছে, ভালো মন্দ কিছু হলে দায়িত্ব নেবে না বলে।
  • সিকি | ১৫ জুন ২০১৪ ১৬:৩৩642357
  • কিকি, ফাটাফাটি হচ্ছে। আগে বাড়ো।
  • kumu | 52.104.27.25 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৯:১৯642368
  • কিকি খুব আনন্দ পেলাম পড়ে।সহজ সরল লেখা কিন্তু দেখার চোখ অসাধারণ।লিখে যাও।
  • Anonymous | 59.249.54.133 | ১৫ জুন ২০১৪ ১৯:৫৬642379
  • কিকি বোধহয় আপনি এই লেখাটাই আগে ধারাবাহিক ভাবে বালা তে লিখেছিলেন আর এটাই আমি বহুদিন ধরে খুঁজেছি। অবশেষে পেলাম !!!
  • kiki | 127.194.69.118 | ১৫ জুন ২০১৪ ২০:৪৩642390
  • এসেম, কুমু, সিকি,
    থেঙ্কু।

    অ্যানোনিমাস,

    ভিয়েতনাম নিয়েই একবার বালাতে লিখছিলাম বটে, কিন্তু এটা নয়, মানে আমার লেখা কিছু আমার কাছে থাকে না, সরাসরি টাইপ করি , তারপর আর রাখা হয় না, রাখার মতন লিখি ও না, সেটাও ঠিক। এটা আমার ফেবু তে লিখছিলাম, সেখান থেকে কপি করে দিলাম।

    ঃ)
  • dd | 132.171.72.69 | ১৫ জুন ২০১৪ ২২:২৭642397
  • খুব,যাকে বলে স্বতঃফুত্তি, সেরম হচ্ছে। ভেরী গুড। কোনো গয়না পরা নেই।ভেরী ডাইরেক্ট। পেটের থেকে তীরের মতম ।

    আরো ল্যাখো।
  • kiki | 127.194.72.105 | ১৫ জুন ২০১৪ ২৩:৫৩642398
  • ডিডিদাদা,
    :P :)
    থিঙ্কুস!
  • kiki | 127.194.72.105 | ১৫ জুন ২০১৪ ২৩:৫৪642399
  • ১২। পরদিন সকাল সকাল স্নান ব্রেকফাস্ট সেরে রেডি। গাড়ী ঠিক করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই যাবো মিউজিয়ামে, তারপর কিলিং ফিল্ড, রয়াল প্যালেশ, রাশিয়ান মার্কেট, এসব করে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবো। এরকম ই ছিলো চুক্তি।

    তুওল স্লেম মিউজিয়াম নিয়ে বলতে গেলে আগে একটু ইতিহাস বলতে হবে। এ অনেকটাই উইকি পিসিকে জিগিয়ে। আরো বেশী জানতে চাইলে অনায়াসে গুগল বা উইকিতে জেনে নিতে পারবেন, আরো চাই হলে এ নিয়ে যেসব বই বা নথি আছে, আমার কাছে অবশ্য সেসবের খবর নেই।

    প্রথমে ছোট্ট করে পল পটকে নিয়ে বলি, পল পট একজন সম্পন্ন চাষীর ঘরে জন্মেছিলেন। তার নটা ছেলেমেয়ের মধ্যে অষ্টম। ১৯২৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি ছিলেন পৃথিবীতে আর ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ছিলেন কাম্পুচিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং ঐ সময়ের মধ্যেই তিনি তখনকার দেশের আট মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এক থেকে তিন মিলিয়ন মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন অর্থাৎ কিনা পঁচিশ পার্শেন্ট মানুষকে।

    পল পট খমের রুজ বাহিনীর লিডার ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত,১৯৭৫ এর ১৭ ই এপ্রিল কম্যুনিষ্ট পার্টি অফ কাম্পুচিয়ার জেনারেল সেক্রেটারি হন।সেই সময় ই মনে হয় কাম্বোডিয়ার নাম কাম্পুচিয়া হয়, পরে যা আবার কাম্বোডিয়া হয়ে ফিরে আসে। ১৯৯৭ সালে কম্বোডিয়ান-ভিয়েতনামিস যুদ্ধের পর পল পট পালিয়ে যায় কাম্বোডিয়ার দক্ষিন পশ্চিমের জঙ্গলে। আর ১৯৯৮ এর ১৫ই এপ্রিল আত্মহত্যা করেন। অবশ্য এ নিয়ে নানা মত আছে।

    এবার খমের রুজ নিয়ে, ভিয়েতনামিস আর কম্বোডিয়ান কম্যুনিষ্টরা একসাথে ইউ এসের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলো , কিন্তু ১৯৬৮ সালে তারা মানে কম্বোডিয়ান রা উত্তর ভিয়েতনামের , ভিয়েতনামিস পিপলস আর্মি থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং খমের রুজ নাম নেয়। ১৯৬৮ সালে শুরু হয় খমের রুজের অভিযান। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত এরা দেশ চালায় আর বলা ভালো তান্ডব চালায়। এদের পাঁচজন নেতার নাম হল Pol Pot, Iang Sary, Nuon Chea, Son Sen আর Khiem Samphan .
  • kk | 117.3.196.87 | ১৬ জুন ২০১৪ ০৪:৫৯642401
  • কিকি,

    ভালো লাগছে। লিখতে থাকো।
  • kiki | 127.194.65.115 | ১৬ জুন ২০১৪ ২২:০৩642402
  • থেঙ্কু কলি।ঃ)
  • aranya | 154.160.226.53 | ১৭ জুন ২০১৪ ০৪:৫২642403
  • দারুণ হচ্ছে, স্বতঃস্ফুর্ত ঝর্ণার ধারার মত লেখা
  • kiki | 122.79.37.60 | ১৮ জুন ২০১৪ ০০:১৩642404
  • ১৩। আমরা চললাম পথ পেরিয়ে, রাস্তা খুব চওড়া নয়, কিন্তু ভাঙা, খোঁদলে ভরাও নয়। রাস্তার দুদিকে দোকান, মুর্তি তৈরী হচ্ছে অনেক জায়গায়। বেশিরভাগ বুদ্ধ। আর একটা খুব চেনা মুর্তি দেখা যায়, অদ্ভুত একটা ভোঁতা মুখ ওয়ালা সিংহের, যেটাকে যক্ষ বলে বোধহয়, আমাদের পুরীর কাছেও অনেক এমন মুর্তি দেখেছি, ধবলগিরিতেই মনে হয় আছে। এছাড়া গড়ুর ও আছে। আসলে এখানকার রাজাদের অরিজিন দক্ষিন ভারত কাজেই আমাদের দেশের সাথে এদের সংস্কৃতির মিল আছে কিছু।

    অবশেষে সেই কুখ্যাত তুওল স্লেম জেনোসাইড মিউজিয়াম।

    তুওল স্লেম মানে hill of the poisonous trees । চাও পনিহা ইয়াত হাই স্কুল কে খমের রুজেরা ক্ষমতায় আসার পর জেল এ রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় সিকিউরিটি প্রিজন -21 বা S-21 । সেই সময়, পল পট রাজা সিংহানুক( নরদম কি?) কে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে। তার চার সঙ্গীকে নিয়ে পল পটের রাজত্ব শুরু হয় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। তিনি ক্ষমতায় এসেই দেশকে প্রাচীনযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। তখন ঠিক হয় দেশে কেবল দুই শ্রেনীর মানুষ থাকবে, শাসক শ্রেনী এবং কৃষক ও শ্রমিক শ্রেনী। সমস্ত শহরের এবং শহরতলীর বুদ্ধিজীবি মানুষকে বাধ্য করা হয় চাষের কাজে ফিরে যেতে। এবং যে কোনরকম প্রতিবাদীকেই চরম শাস্তি দেওয়া হত। একটা ঘাতক দল বানানো হয়েছিলো, যাদের বয়স ছিলো এগারো থেকে উনিশ বছর, কারন এই বয়সকে ভয় দেখিয়ে বা মগজ ধোলাই করে কাজ করানো সম্ভব। এইসব বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হত।

    পাঁচটা বিল্ডিং ওয়ালা স্কুল ক্যাম্পাসকে ঘিরে দেওয়া হয়েছিলো অত্যন্ত ঘন হয়ে থাকা তড়িৎ বাহিত কাঁটাতার দিয়ে। যাতে করে কোনভাবেই কেউ পালাতে না পারে।ক্লাস রুম গুলোকে টরচার চেম্বার বা একটা রুমকে তিন ইঞ্চির গাঁথনি দিয়ে ছোট ছোট ঘরে ভাগ করা হয়েছিলো যাতে কোনক্রমে একটা মানুষ থাকতে পারে , মনে হয় দুই ফুট বাই পাঁচ ফুট এই মাপের হত। তাতেও বন্দীদের পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হত। এখানে কোন বন্দীকে আনা হলে, যাদের বেশীরভাগ ই , ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, মঙ্ক অর্থাৎ যারা বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে সক্ষম , যেকোন সময় বিদ্রোহ শুরু করতে পারে, তাদের ডিটেইলস ডকুমেন্টেড করে রাখা হত। তাদের দু রকম ভাবে ফটো তোলা হত, একটা ফ্রন্ট ফেসের আর একটা সাইড ফেসের , যা সেই ফাইলে রাখা হত।ছোট বাচ্চা থাকলে সেই মায়ের ফটো নেওয়া হত বাচ্চাকে কোলে বসিয়ে। এই হিসাবে মনে করা হয় ১৯৭৫ -৭৯ এর মধ্যে সাতেরো থেকে কুড়ি হাজার বন্দীকে রাখা হত, আর একই সময়ে হাজার থেকে দেড়হাজার বন্দী থাকতো সেখানে।

    বন্দীদের শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হত। যাদের ছোট ছোট ভাগ হওয়া ঘরে নিয়ে যাওয়া হত, তারা একা থাকত, দেওয়ালের সাথে শিকলে বাঁধা অবস্থায়, যারা দোতলার বড় ঘরে একসাথে থাকত তাদের লম্বা চেনে বেঁধে রাখা হত। কোন বিছানা, কম্বল বা কিছু থাকত না। তাদের শুতে হত পায়ের দিকে পা মিলিয়ে। কারোর সাথে কথা বলা চলত না, তাহলে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা থাকত। সকাল সারে চারটের সময় উলঙ্গ করিয়ে ইন্সপেকসন করা হত পুরুষ, মহিলাদের একসাথে। তখন এবং যখন খুশী মহিলাদের রেপ করা হত সবার সামনেই, এমনকি অসংখ্য বার। সারাদিনে দুবার কেবল ছোট চার চামচ ভাত আর সব্জির স্যুপ মিলত, আর গার্ডের পারমিশন ছাড়া জল খাওয়ার নিয়ম ছিলো না। চারদিনে একবার জানলা বা দেওয়ালে করা কোন গর্ত দিয়ে হোসপাইপে করে জল দিয়ে চান করানো হত।
  • kiki | 122.79.37.60 | ১৮ জুন ২০১৪ ০০:১৪642405
  • অরণ্যদা,
    থেঙ্কু। ঃ)
  • kiki | 122.79.37.60 | ১৮ জুন ২০১৪ ০১:০১642406
  • ১৪। অসম্ভব কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিলো জেলে এবং দরকারে যেকোন গার্ড ও ডিসিশান নিতে পারতো টর্চার করার ব্যাপারে। কোন এমনকি ছোট ব্যাপারেও মল মুত্র খেতে বাধ্য করা হত। অত্যন্ত আনহাইজেনিক ভাবে থাকার জন্য স্কিন ডিজিজ, উকুন, কৃমি,র‌্যাশ এসব তো লেগেই থাকতো। আর আনট্রেইনড লোকজন দিয়ে তাদের ই ট্রিটমেন্ট করা হত যাদের কাছ থেকে কথা বার করতে হবে। এখানকার বন্দীদের খুব বেশী হলে তিন কি চার মাস বাঁচিয়ে রাখা হত। এমনকি এখানে খমের রুজদের মধ্যে ও কেউ বিদ্রোহ করতে পারে এই সন্দেহ হলে তাকেও এনে বন্দী করে রাখা হত। দু তিনদিন পরেই তাদের স্বীকারোক্তির জন্য অত্যাচার শুরু হত। অত্যন্ত নৃশংস ভাবে তা হত। কখন হাত পা শিকলে বেঁধে এমন ভাবে রাখা হত মাথা নীচের ঢালে রাখা, সেখানে উঁচু থেকে ড্রপ ড্রপ করে কপালে জল ফেলা হত। আবার অনেক সময় পা বেঁধে উঁচু থেকে মাথা নীচের দিকে করে ঝুলিয়ে রাখা হত, মাথার নীচেই নোংরা জলের ড্রাম এমন ভাবে রাখা হত যে মাথা বেঁকিয়ে না রাখলে নাক ডুবে যাবে। আবার কখন ও নখ উপরে তাতে অ্যালকোহল ঢেলে দেওয়া হত। আবার প্ল্যাস্টিক ব্যাগে ভরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেওয়া হত। সব থেকে মারাত্মক ছিলো যে, কোন অ্যানাস্থেসিয়া না করে শরীর চিরে অর্গ্যানগুলোকে বার করে আনত, আর দেখত ঐ অবস্থায় কতক্ষন বাঁচতে পারে। মেয়েদের রেপ করে নানারকম অত্যাচার করা হত, সেই সময়েই অনেকে মারা যেত।

    এখানে বন্দীদের উদ্দেশ্যে দশদফার এক নিয়মাবলী লেখা থাকত, তা এরকম ছিলঃ

    1. You must answer accordingly to my question. Don’t turn them away.

    2. Don’t try to hide the facts by making pretexts this and that, you are strictly prohibited to contest me.

    3. Don’t be a fool for you are a chap who dare to thwart the revolution.

    4. You must immediately answer my questions without wasting time to reflect.

    5. Don’t tell me either about your immoralities or the essence of the revolution.

    6. While getting lashes or electrification you must not cry at all.

    7. Do nothing, sit still and wait for my orders. If there is no order, keep quiet. When I ask you to do something, you must do it right away without protesting.

    8. Don’t make pretext about Kampuchea Krom in order to hide your secret or traitor.

    9. If you don’t follow all the above rules, you shall get many lashes of electric wire.

    10. If you disobey any point of my regulations you shall get either ten lashes or five shocks of electric discharge.

    প্রথম প্রথম এখানেই মারা গেলে আশেপাশে কবর দিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু ক্রমশ বন্দী সংখ্যা এত বেড়ে যেতে লাগল যে, তখন নম পেন থেকে বেশ কিছু টা দুরে যে জায়গা এখন কিলিং ফিল্ড নামে খ্যাত সেখানে নিয়ে যাওয়া হত। প্রথমে বন্দীদের খুব শার্প কিছু দিয়ে চোখ অন্ধ করে দেওয়া হত, তারপর হাঁটু গেরে মাথা নীচু করে বসিয়ে লাঠির বাড়ি মেরে মাথা চৌচির করে দেওয়া হত, এটা করা হত সেই সব টিনেজার ক্যাডার দের দিয়ে। তারপর ডোবার মতন খোঁড়া থাকত, সেখানে ফেলে দেওয়া হত, সেটাকে মাস গ্রেভ বলা হত। আর ছোট বাচ্চাদের কোলে তুলে ছুঁড়ে দেওয়া হত, আর তলোয়ারের মুখে গেঁথে নেওয়া হত, বা বড় কোন গাছে আছড়ে মেরে ফেলা হত, তারপর ফেলে দেওয়া হত সেই ডোবাতে। কিলিং ফিল্ডের ঢোকার মুখেই একটা বিরাট কাঁচঘর আছে, যেখানে সেসব মাসগ্রেভ থেকে উদ্ধার করা মানুষের মাথার খুলিতে ভর্তি, যেখানে সাতদিনের শিশু থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধদের অর্থাৎ কিনা সব বয়সের মানুষের মাথার খুলি রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে অত্যাচারে আর নৃশংসতায় এর হিটলারকে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।
  • kiki | 122.79.37.60 | ১৮ জুন ২০১৪ ০১:২৯642407
  • ১৫। খুব ছোট্ট বেলায় গল্প শুনতে ভীষন ভালোবাসতাম। তখন ও পড়তে শিখিনি।বাবার কোল ঘেঁষে কত গল্প শুনতাম আর মনে মনে সেই গল্পদেশে ঘুরে বেরাতাম।ইউলিসিস, ব্যাঙ রাজকুমারী, যাদুকরী ভাসিলিসা, ক্ষুদে ইভানে আমার ছোটবেলা জড়িয়ে একাক্কার হয়ে আছে। সেই সময়ের কিছু পরেই শুনেছিলাম পম্পেই এর গল্প। হঠাৎ মাউন্ট ভিসুভিয়াস জেগে উঠে একটা জেগে থাকা শহরকে ঘুম পাড়িয়ে লাভার চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো। সেই আত্মারা আজ ও নাকি সেখানে তাদের নিত্যদিনের কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে গেলে নাকি তা অনুভব করা যায়। একটা অদ্ভুত শিরশিরানি হত এটা শুনলেই। বাবার গা ঘেঁষে বাপ সোহাগী মেয়ে বসে থাকত। যখন গিয়েছিলাম , প্রথমে একটা ডকু দেখানো হয়েছিলো, তারপর যখন গাইডের সাথে ঘুরে দেখছিলাম তখন কোন অপরাধ না করেই তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে মারা যাওয়া অসংখ্য মানুষের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলাম। আর সে যে কি ভীষন ভয়। ফিরে এসে ঋভুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম অনেকক্ষন।

    কি অদ্ভুত , একই কম্যুনিজমে দীক্ষিত ভিয়েতনামিসরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুললো আর তাদের ই পাশের দেশ সেই একই ইজম নিয়ে দেশটাকে ছারখার করে ফেললো, গোটা একটা শিক্ষিত প্রজন্মকে শেষ করে দিলো। আসলে কোন ইজম নয়, কত পার্শেন্ট মানুষ সচেতন এবং শক্ত মনের , তা সেখানকার সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থাকে ঠিক রাস্তায় চলতে সাহায্য করে মনে হয়।

    যাইহোক, সেদিন গাড়ী আমাদের রাশিয়ান মার্কেটে ছেড়েই বেগোরবাঁই শুরু করলো।কাজেই আমরা সেখান থেকেই গাড়ীকে বিদায় দিলাম। কিছু স্যুভিনিয়র কিনলাম। রাশিয়ান মার্কেট অনেকটা আমাদের নিউ মার্কেটের হগ মার্কেটের মতন। সেখান থেকে একটা পাকিস্থানী রেস্তোরাঁতে খেতে গেলাম। মালিক ভদ্রলোক ভারী আদর যত্ন করে খাওয়ালেন। আহা কতদিন পর ঠিক আমাদের দেশের চেনা খাবারের স্বাদ পেলাম। প্রথমে স্টার্টার হিসেবে সিঙারা আর শেষে পায়েস এমনি ই খাওয়ালেন। তার আর পয়সা নিলেন না। আমরা তারপরের ও খাবার ওনার দোকান থেকেই হোটেলে আনিয়ে নিতাম, সে এক বিরাট পরিমান খাবার পাঠাতেন সেই সিংহ হৃদয় পাঠান মানুষ টি।
  • | 60.82.180.165 | ১৮ জুন ২০১৪ ০১:৩৮642408
  • কিকি, পড়ছি।মিউজিয়ামটা সম্পর্কে আরো লেখো।
  • nina | 78.37.233.36 | ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:১৮642410
  • উফ!! অবশেষে--কিকিয়া লিখে যা থামিসনা--দুরন্ত লিখছিস--অনেকবার পড়া যায়--
  • nina | 78.37.233.36 | ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:১৮642409
  • উফ!! অবশেষে--কিকিয়া লিখে যা থামিসনা--দুরন্ত লিখছিস--অনেকবার পড়া যায়--
  • kiki | 122.79.39.77 | ১৮ জুন ২০১৪ ১২:২৩642412
  • এইরে মিঠু, যা জানি লিখে ফেলেছি তো। পড়ছ বলে থেঙ্কু।

    দিদিয়া,
    খাচুম খুচুম করে আদর। ঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন