এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এখানেও থাক

    kiki
    অন্যান্য | ১৫ জুন ২০১৪ | ৭৫২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৪৩642348
  • ৩৮। সেদিন আর কোথাও ঘোরার নেই। লেকের ধারে, মার্কেট এরিয়ায় ঘুরে, একটা বাড়ীর সংলগ্ন রেস্তোরাঁতে ঢুকে খেয়ে নিলাম। চিকেন রোস্ট আর রাইস। খুব পরিচ্ছন্ন আর দারুন টেস্টি ছিলো। আর বাড়ীর উষ্ণতা। সব মিলিয়ে আমরা ঠিক করে ফেললাম ডিনার আর লাঞ্চ এখানেই সেরে নেবো। এখানে প্রচুর আর্ট গ্যালারি রয়েছে। সেগুলো মুলত: সুতোর কাজের। অসাধারন সব কাজ। একটা স্বচ্ছ সিল্ক হয়, ভিয়েতনামিস সিল্ক, তার উপর মেয়েরা সুঁচ সুতো দিয়ে অসাধারন ছবি আঁকে, তারপর দুপাশে কাঁচ দিয়ে ফ্রেমিং হয়, একটা দারুন স্ট্যান্ডে সেটা দাঁড় করানো থাকে। দেখে মনে হবে কাঁচের ভিতরে আঁকা রয়েছে, এত সুক্ষ কাজ। আর দুদিকেই কাঁচ, কোন সামনের দিক বলে আলাদা কিছু হয় না। লাখ লাখ টাকা দাম হয় এই জিনিস গুলোর। তেমন বড় সুন্দর ঘরে ওরকম একটা রাখলেই ঘর ভরে থাকবে। কাপড়ের উপর কাজ করাও ছোট ছোট প্রচুর সেলাই রয়েছে। তবে বেশ দামী। আর আছে নানা ধরনের হাতের কাজ। ভিয়েতনামিসরা খুব খুঁতখুঁতে তাদের হাতের কাজের ব্যাপারে, আর তেমনি নিখুঁত তাদের কাজ। পিউরা জেনে গেছে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা, পিউ একটা খুব সুন্দর সো পিস আমায় দিলো, সেটা এখন আমার টিভির পাশেই টাঙানো থাকে, আর বেশিরভাগ ই তাকে আঁকা বলে ভুল করে।
    পরদিন ঘুরতে যাওয়ার। একটা প্যাকেজ টুরের ব্যবস্থা হয়েছে। গাড়ী এসে আমাদের হোটেল থেকে তুলবে আবার হোটেলেই নামিয়ে দেবে বিকেলে। গাড়ী এলো। আর আমাদের গাইড ছেলেটি যথারীতি অন্যান্য ভিয়েতনামিস গাইডদের মত খুব মজার। হৈ চৈ করে সবাইকে ব্যস্ত রাখলো সারাটা দিন।
    আমরা প্রথমেই গেলাম প্রেন ওয়াটার ফল। সে ওয়াটার ফল দেখে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে হলো। তাকে তো ঝোরা বললেও অনেক বেশি বলা হয়। দারুন সাজানো গোটা জায়গা। কিন্তু ঐ যে আমার অকৃপন প্রকৃতিকে দেখে অভ্যেস, সাজানো ভালো লাগবে কেন! পাঁচমারি ক্যাম্পে গিয়ে নর্মদা ফলস দেখতে গেছিলাম। ঐ গর্জন আর উদ্দামতা ছাড়া ফল হয় নাকি! তো যাহোক সেখানে হাতি চড়া, উটপাখি চড়ার সব মজার ব্যবস্থা ছিলো। আমি আর পিউ হাতিতেও চড়লাম।
    এরপর এক্স কিউ হিস্টরিকাল ভিলেজ। এখানে ওদের আদিবাসীদের জীবন যাত্রা -র একটা ছোট ঝলক ধরা আছে। ওদের ব্যবহার করা নানান সামগ্রী ও, যেমন শান্তিনিকেতন গেলে একটা বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসিদের বাস গৃহ নিয়ে ছোট ছোট মডেল বানানো আছে, তেমনি। এখানে ওরা কিভাবে থাকতো, ষাঁড়ের খেলা, তাকে নিষ্ঠুর ভাবে মেরে ফেলা এসব গল্প শোনাচ্ছিলো আর আমার এসব শুনতে একদম ভালো লাগে না। আমাদের গ্রুপে প্রচুর অন্য দেশের মানুষেরাও ছিলেন। গাইড সবাইকে একটা গল্প শোনালো, বাঁদরের মাথার ঘিলু খাওয়ার গল্প। এমনিতে ভিয়েতনামিসরা খাওয়ার ব্যাপারে কেমন যেন! বনের সব সাপ খেয়ে রেখে দেয়, ওদের জঙ্গলে গেলে এই একটা রেহাই।তা সেই বাঁদরের ঘিলু খাওয়ার গল্প। মাঙ্কি ব্রেন একটা বিশাল ডেলিকেসি, আর এটা জ্যান্ত অবস্থায় খেতে হয়। যে বাঁদরটাকে খাওয়া হবে তার মাথা চেঁছে পরিস্কার করে রাখা হয়। আর একটা স্পেশাল টেবিল থাকে, সেখানে মাথাটা ফিক্সড করে দেওয়া হয়, চাইলেও নাড়াতে পারবে না। আর তার হাতে একটা কলা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবার টুকুস করে মাথার খুলির জোরটাকে খুলে চামচে করে মগজটাকে খেয়ে নেওয়া হয়। আমি যাস্ট জানিনা, কতটা নিষ্ঠুর হলে এভাবে খাওয়া যেতে পারে। এই মঙ্গলয়েড মানুষ গুলো কেমন অন্যরকম নিষ্ঠুর হয়।
    এরপর আমরা গেলাম চুক ল্যাম জেন মনাস্ট্রিতে। এখানকার পরিবেশ ভারি সুন্দর। গাইড কেবল বললো যে এই সন্ন্যাসীরা খুব নাকি টোফু খায় আর তাই মেয়েদের মতন ছি ছি তৈরী হয়ে যায়। এ নব আবিস্কার বটে। তো ছেলেদের বেশি টোফু না খাওয়াই ভালো, যা বুঝলাম। এখানে একটা মাটি থেকে উঠে আসা জলের উপর একটা বেশ বড় পাথরের স্ফিয়ার ঘুরেই চলেছে।
    এরপর কোন একটা রেল স্টেশনে গেলাম। সেখানে আর ট্রেন চলে না মনে হয়। একটা সত্য যুগের স্টীম ইঞ্জিন দাঁড়িয়ে আছে, যেটার উপর উঠে আমি বেজায় লাফালাফি করলাম।তারপর ভ্যালী অফ লাভ, এটা প্রেমিক যুগলদের পার্ক, ভারি মনোরম করে সাজানো, সেখানে আমি আর পিউ দোলনা চড়লাম , আর একটা জিপে চড়ে খুব কেত মেরে প্রচুর ফটো তুললাম।তুয়েন ল্যাম লেকে বোটিং করেছিলাম মনে হয়। আর দেখলাম বাও দাই কিঙের সামার প্যালেশ। দুর! কি সাধারন বাড়ী, রাজা রাজরাদের নাম জড়িয়ে মেজাজটাই খারাপ করে দিলো, নইলে মন্দ লাগতো না। মাঝে কোথায় যেন জঘন্ন্য একটা লাঞ্চ ও করা হলো। তবে গাইড ল্যামবিয়াম মাউন্টেনের গল্প শোনালো। সেটা বলছি।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৪৪642349
  • দে, সে,
    থেঙ্কু।ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৫৫642350
  • ৩৯। ল্যামবিয়ামের গল্প সেই হির-রাঞ্ঝা , রোমিও- জুলিয়েটের গল্পের মতই। প্রতি দেশেই বোধহয় একটা এমন বিরহাত্মক মিথ (?) থাকে। আর বিরহ মনে হয় প্রেমের গল্পের সবচেয়ে মধুর দিক। গল্পটা এইরকমঃ
    দালাতের কাছে দু আদিবাসী দল ছিলো, যাদের মধ্যে প্রবল আকচা আকচি,ল্যাক আর চিল মাইনরিটি গ্রুপ। ল্যাকদের দামাল ছেলে কে ল্যাম আর চিলদের দস্যি মেয়ে হো বিয়াম। হো তো একেই ভিয়েতনামিস মেয়ে, ভয় তার কিছুতেই নেই, তার উপর পাহাড়ের কোলে বনের ধারে সে বড় হয়েছে, বনবালিকা বনকে চেনে নিজের হাতের তালুর মতই। কে ও কম দামাল নয়, সেও নিজের মনে বনবাদারে ঘুরে বেড়ায়। এমনি এক দিন হো একদল হিংস্র, ক্ষুদার্ত নেকড়ের সামনে পরেছে। আর বাঁচার উপায় নেই। এমন সময় কে এসে টার্জানের মতই গাছের ঝুড়ি ধরে ঝুলে পলকা হোকে নিয়ে নেকড়েদের হাত থেকে অনেক দুরে পালিয়ে যায়। তারপরেই মনে হয় একে অপরের চোখে নিজেদের সর্বনাশ দেখতে পায় । আর যা হয় , ক্রমশ আর কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারছে না, এদিকে দুই প্রবল বিরোধী দল তাদের বিয়েও মেনে নেবে না। তখন তারা পালিয়ে যায় পাহাড়ের উপরে, বনের মধ্যে। কিন্তু দলনেতার মেয়ে , তার এত কষ্ট সইবে কেন! কঠিন অসুখে পরে সে, আর উপায়ন্তর না দেখে কে তাকে নিয়ে ফিরে আসে গ্রামে। কিন্তু গ্রামে আসতেই যেহেতু চিলদের তারা সহ্য করতে পারতো না তাই হো-র গ্রামের মানুষ বিষাক্ত তীর দিয়ে তাকে মারতে যায়। তখন হো সামনে এসে কে - কে আড়াল করতে গিয়ে তীরের আঘাতে মারা যায়। সবার জ্ঞান ফেরে যে তারা আসলে কি করে ফেললো। কে পাগল হয়ে যায়। তার কান্না থেকে তৈরী হয় দানকিয়া নদী, বা সোনার নদী। এবং শোকে দুঃখে কে ও মারা যায়। তাদের সেই পাহাড়ের পাদদেশে কবর দেওয়া হয় আর তারপরেই সবাই অবাক হয়ে দেখে পাহাড়ের মাথায় দুটো চুড়া আর তারা একে অপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তারা এমনি করেই চেয়ে রয়েছে একে অপরের পানে। তাই এই যুগ্ম শৃঙ্গের নাম ল্যামবিয়াম।
    কেন জানিনা এই গল্পটা শুনে জসীমউদ্দীনের নক্সি কাঁথার মাঠ মনে পরছিলো। এই একটা বই, যেটা আমার দিদিমার একমাত্র স্মৃতি রয়ে গেছে আমার কাছে।প্রথম পড়ি তখন ক্লাস থ্রী বা ফোর। এবং যতবার ই পড়ি না কেন , কিছুতেই পুরানো হয় না। এই লাইনগুলোই মাথায় ঘুরছিলোঃ
    আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ঐ গাঁওটির পানে,
    নীরবে বসিয়া কোন কথা যেন কহিতেছে কানে কানে।
    মধ্যে অথই শুনো মাঠখানি ফাটলে ফাটলে ফাটি,
    ফাগুনের রোদে শুকাইছে যেন কি ব্যাথারে মূকমাটি!
    নিঠুর চাষীরা বুক হতে তার ধানের বসনখানি,
    কোন সে বিরল পল্লীর ঘরে নিয়ে গেছে হায় টানি।
    বাতাসের পায়ে বাজেনা আজিকে ঝল মল মল গান,
    মাঠের ধূলায় পাক খেয়ে পড়ে কত যেন লয়ে মান।
    ..........................................................
    ..........................................................
    তবু এই গাঁও রহিয়াছে চেয়ে , ওই গাঁওটির পানে,
    কতদিন তারা এমনি কাটাবে কেবা তাহা আজ জানে।
    মধ্যে লুটায় দিগন্ত জোড়া নক্সী-কাঁথার মাঠ;
    সারা বুক ভরি কি ব্যাথা সে লিখি নীরবে করিছে পাঠ!
  • kiki | 125.124.41.34 | ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ১০:১০642351
  • ৪০। এরপর আর ভিয়েতনামের তেমন গল্প নেই। ফেরার সময় এগিয়ে আসছে। মানকেটা সকালে না উঠতে পারলেও বিকেলে হাঁটতে যাচ্ছে। আর বোতল গ্লাস নিয়ে বসে পরলে আমিও হাসি মুখে গ্লাস নিয়ে পাশে বসে পরছি দেখে বেচারী সে সুখ থেকেও বঞ্চিত হতে শুরু করেছে। ওরে, কি করছিস! চিন্তায় আমার ঘুম উড়ে যায়। আমি মনে মনে বলি এবার বোঝ! আমার সোজা হিসেব জ্বালালে জ্বালাবো, চিন্তা করালে আরো চিন্তা করিয়ে ছেড়ে দেব।তারপর যা হয় হবে। ভালো মেয়ে হবার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
    তখন সবে শিলিগুড়ি গেছি। এটা ৯৬ সালের কথা। সবে বিয়ে হয়েছে। মানকেটা উত্তাল বাউন্ডুলে। ঘরে আমি রয়েছি রেয়াত ই করে না। দিব্যি রাত বারোটায় বাড়ী ফেরে। এদিকে কাকু ( আমাদের বাড়ীয়ালা) দরজায় তালা দিয়ে দেয়।তখন পাঁচিল টপকে এসে আমার জানলায় খট খট করে চাবি নেয় চোরের মত। কাকু আবার জানা গেছিলো বাবার অফিসতুতো আত্মীয়(ঐ হলো আর কি!) মানিক কে তো ভালো বাসতেন ই, পরে আমাকেই বেশী ভালোবাসছিলেন। তখন আমি রান্না বলতে চাউ বানাতে আর সিদ্ধ ভাত করতে সবে শিখেছি। রোজ ই ব্রেকফাস্ট চাউ, লাঞ্চ আর ডিনারে আলু সিদ্ধ , ডিম সিদ্ধ ভাত আর ডিম সিদ্ধ, আলু সিদ্ধ ভাতের পর্ব চলছে। আর মানিক পাহাড়ে গেলে আমার রান্নার গল্প নেই, কেক চকোলেট দিয়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছে। একদিন , এইরকম দিনে কাকু ডাকলেন, মাম , কি রান্না করলে আজ? ভাত রেঁধেছো? আমিও হ্যাঁ কাকু, বলে আরো কত কল্পনার বান বইয়ে দিলাম। কাকু বললো, চলো হাঁড়ি দেখবো। তারপর ই চিৎকার নিভু, ও নিভু(কাকীমাকে, প্রসঙ্গত কাকুর ছেলে আমার ব্যাচের, আর মেয়ে অল্প সিনিয়র, যদিও মেয়েই আমার ভালো বন্ধু ছিলো, ওর শ্বশুরবাড়ী কাছেই, ছেলে বরং বেশ ছোট দেবর টাইপস ছিলো, বলতো বৌদি, আর একমাত্র সেই , আত্মীয় দেওর ননদ বাদ্দিলে বৌদি বলত, আর কখন ও কেন কে জানে কেউ বৌদি বলেনি, দিদি ই বলেছে, মনে হয় বৌ সুলভ আমার মধ্যে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই)দেখ! এই মেয়েটা আমাদের বদনাম করে দেবে। কাকীমা সেদিন আমায় জোর করে দুপুরের খাওয়াটা খাইয়ে দিলেন, তাও মাছের কাঁটা বেচে, সেটাও তখন ও শিখিনি, ঐ বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত মা খাইয়ে দিলে যা হয় আর কি! বলেছিলাম না, জম্ম ন্যাকা ছিলাম।
    তো যাহোক, একদিন তো বাবু ব্রেকফাস্টের আগে এখুনি আসছি বলে হাওয়া হয়ে গেলেন, রাত দশটায় ও তার দেখা নেই। এদিকে আমি আর কাকু সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিলাম। কেউ কিছু বলতে পারে না। কাকু বললেন ফিরতে ফিরতে, মাম , তুমি কিন্তু সেভাবে ওকে বাঁধতে পারছো না। যাব্বাবা! আবার এত ধেরে কাউকে বাঁধতে যাবো কেন! কিছুই বুঝলাম না। আমাদের মতন মেয়েদের, যারা কেবল মা, বাবা , আর ভাই বোন নিয়ে ছোট ফ্যামিলিতে বড় হয়, আর কেবল সবাই সব সময়ে সব কিছু থেকে আড়াল করে রাখে তারা সংসারের দরকারি জিনিসগুলো কিছুই শেখেনা। আমিও শিখিনি, জানিওনি। পরে জেনেও অবশ্য খুব রাগ হয়েছে, বাঁধার দায় কি শুধু আমার একার নাকি! মামাবাড়ি! । তো সেদিন রাত্রে পাড়ার বাইক বাহিনী (না, কোন পার্টি ক্যাডার নয়) তৈরী হলো, নর্থ বেঙ্গল মেডিকাল কলেজে খোঁজ নিতে যাবে বলে। ওটাই বাদ ছিলো। আর মাটিগাড়া না কি নাম জায়গাটার, সে জায়গা দিয়ে একা চলতে সাহস পেত না মানুষ তখন, বিশেষত রাতের বেলায়। শেষে রাত সাড়ে এগারোটায় বাবু স্কুটার ঠেলতে ঠেলতে এলেন। গাড়ী খারাপ হয়ে গেছে।মেডিকেল কলেজেই তিনি ছিলেন। লোকজন উদ্দাম ঝার দিলো।
    আমারো রাগ চড়ছে ক্রমশ। কখন ও এরকম ব্যাপার দেখিনি। আমাদের পরিবারে ডিসিপ্লিনের উপর খুব জোর দেওয়া হত। আর সমস্ত পরিবার সবাই সবাইকে ঘিরে থাকতো প্রবল ভাবে। সেটা অবশ্য খুব হাঁফ লাগার মত ব্যাপার। কিন্তু এটা এক্কেবারে তার উল্টো। একদিন এরকম দেরী হচ্ছে। আমি দরজায় তালা লাগিয়ে ( আমাদের পার্ট আর কাকুদের পার্ট এর মাঝে সিঁড়ি আর বাইরে যাবার দরজা) সটাং ছাদে গিয়ে বসে থাকলাম। এই ছাদ(যে কোন ছাদ ই) আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিলো, রাত্রে পাহাড়ের আলো গুলো দেখা যেত ছড়িয়ে থাকা রঙ বেরঙের জ্বলজ্বলে পাথরের মতন। এবার পাঁচিল টপকে ঢুকে জানলায় টোকা ( আমি উপরে বসে চুপচাপ শুনছি) মেরেও সাড়া না পেয়ে ঘাবরে কাকুকে ডেকে দরজা খুলিয়েছে। তারপর সবাই মিলে খুঁজে চলেছে। আর প্রচন্ড টেনসন চলছে। কাকু বলছে, কি আশ্চর্য ! মেয়েটা কি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে নাকি! এই তো শুতে যাবার আগেও ঘরে দেখলাম। আর সঙ্গে প্রচন্ড বকা দিচ্ছে, তোমার আক্কেল কবে হবে,এইটুকুনি কচি মেয়েটাকে এত রাত অবধি একা থাকতে হয়। তারপর যখন দেখলাম মানকে টা প্রায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলবে আর সবাই পুলিশ স্টেশন যাবে বলে রেডি হচ্ছে , তখন নেমে এলাম। আর ভাগ্গিস এটা আমার বাড়ী বা শ্বশুর বাড়ী নয়। কাকু দেখেই নিশ্চিন্ত হলেন, কি তুমি ছাদে ঘুমিয়ে পরেছিলে! কি কান্ড বলোতো! আমিও নির্বিকার মুখে, না সব শুনছিলাম তো সিঁড়িতে বসে, বলে দিলাম। আর কাকীমা তখন হো হো করে হাসছেন আর বলছেন, ঠিক ই আছে, এমন হওয়াই উচিত। তারপর থেকে আর জ্বালায় নি। আর না জ্বালালে আমিও খুব ভালো মেয়ে। বলতে কি তার পর থেকেই মানিকের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।কিন্তু মানিকের সাথে সেভাবে কখন ও একসাথে কাটানো হয় নি। তখন আমার পড়াশুনা ছাড়ানোর জন্য শিলিগুড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো কিন্তু যেই কলেজ থেকে নাম কেটে গেলো তখন আমায় কলকাতায় ই বেশি থাকতে হত।তারপর মানিক কলকাতায় আসার পর আবার আমি এক বছরের জন্য বাড়ী চলে এলাম। তখন ঋভু হবে,আর আমার শরীর খুব ভেঙে গেলো। আর ঋভু যখন তিন বছরের তখন মানিক ই বাইরে চলে গেলো। আমরা প্রচন্ড ঝগড়া করি, মারপিট করি, অনেক সময় অনেক অন্যায় ও করি। কিন্তু ঐ সব কিছু নিয়ে গল্প না করেও পারি না। আর সেই গল্প থেকেই আবার ঝগড়া। অদ্ভুত লুপ।
    এইরকম এক বিকেলে আমার সেদিন ভালো লাগছে না, তাই বেঞ্চে বসে আছি আর মানকে টা পাক খাচ্ছে। হঠাৎ দেখি একগাদা নাইজেরিয়ান ছেলে ( দারুন সুঠাম, কালো পাথরের নিখুঁত মূর্তি একেকটি) আর বেশ কিছু ভিয়েতনামিস বয়স্ক মহিলা কি নিয়ে বেজায় বার্গেন করে চলেছে। এদিকে আরেক ভিয়েতনামিস লোক আমার পাশে এসে কিসব ভিয়েতনামিসে বলে চলেছে, কি আপদ! কোন দিকে ধ্যান দেই! শেষে লোকটাকে বললাম ভিয়েতনামিস খম, এটুকুই বলতে পারতাম। লোকটা তখন ভাঙা ইংলিশে গল্প করে চলেছে।কি বলতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছি না, তার উপর মানিক কেবল যখন ই বেঞ্চের কাছ দিয়ে যাচ্ছে তখন ই অদ্ভুত ভাবে দাঁত বের করছে। এদিকে লোকটা তখন কোথায় থাকি, কোথায় একটা যেতে বলছে। মোটামুটি সব মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তিনিও এসে সবে দাঁত বের করেছেন, আর আমিও ফেটে পরেছি, অত দাঁত ক্যালাচ্ছিস কেন! ঢের হয়েছে, বাড়ী যাবো। আর লোকটাকে বললাম এই আমার হাজব্যান্ড। লোকটাও বোকা বোকা হাসি দিয়ে কেটে পরলো। তখন শুনলাম বেচারী লোকটা নাকি খদ্দের খুঁজছিলো। কি অদ্ভুত! তখন ও জিগোলো নিয়ে জ্ঞান লাভ হয় নি। মেয়েরাই খদ্দের খোঁজে জানা ছিলো। আর পুরো ব্যোমকে যেতে আরো বাকি ছিলো। শুনলাম ঐ বয়স্ক ভিয়েতনামিস মহিলারাও ঐ বিষয়েই নাইজিরিয়ানদের সাথে দরদাম করছে! বলিস কি! এতো আমাদের মা জেঠিমাদের বয়সী। পুরো হুব্বা। তখন যে গল্প শুনলাম তারপর শোনার সব ক্ষমতা হারালাম। এটা মানিক কোন ভিয়েতনামিস বন্ধুর থেকে শুনেছে। ওখানে কোন কোন নাইট ক্লাব আছে যেটা কেবল মাত্র বয়স্ক মহিলাদের ই। আর ওয়েটাররা সব কম বয়সী ছেলে হয়। তো তাদের নাকি মাঝে মাঝে আন্ডার ওয়ারের ভিতর লেবু রেখে দিতে হয়। আর কিছু নেবার মত অবস্থা তখন আমার নেই,তাও জাড্যেই জিগিয়ে ফেললাম, লেবু! তাও জাঙ্গিয়ার ভিতর! কেন? আরে ঐ, মহিলাকে দেখেই ছেলে ................ বোঝানোর জন্য। এমনিতে সেটা তো হবার নয়। এদিকে কাস্টোমারকেও খুশী রাখতে হবে। সে কি করে বুঝবে! অ্যাঁ? নাইট ক্লাবে তো বড় জোর নাচা গানা হয়। ওফ! তোকে নিয়ে আর পারি না, নাচতে নাচতেও খুব কাছে আসা যায়। একিরে! এত বাসে ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে , আর পিছনে কোন পার্ভার্ট থাকলে যা হয়, সেরকম অনুভুতি, এতে কারোর ভালো ও লাগতে পারে! কি জানি বাবা! আজ একটু ভদকা বানিয়ে দিস, ট্রাইকা থাকলে চাইতাম না, একটা ঠিক ঠাক ঘুম চাই, বলে মানকে কে এত বড় হাঁ করিয়ে রেখে স্নানে চলে গেলাম । নেওয়ার ও তো একটা লিমিট আছে রে বাপু!
  • সিকি | ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:১৭642352
  • কিকিটা বডডো মিষ্টি ল্যাখে। :)
  • kiki | 125.124.41.34 | ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ২১:০৫642353
  • সিকি,
    ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ২১:০৫642354
  • ৪১। এরপর আবার ফিরে আসা। এবার এসে আর বাড়ীতে থাকতে চাইনি। কোথাও থেকে তাড়িয়ে দেয়, কোথাও সবাই লজ্জায় অস্থির হয়ে থাকে মেয়ে ফিরে এলো বলে। ধুত্তোর , অনেক হয়েছে। মানিক কে বলে এলাম , এবার একাই থাকবো, ঋভুকে নিয়ে। তো বাবা, মা, মানিক সবাই চিন্তায় পরে গেলো, আমি যখন বলেছি তখন আমাকে আর অন্য কিছু বোঝানো ও যাবে না, শেষে সবাই বললো, ভাড়া বাড়ীতে তোমায় থাকতে দেওয়া হবে না, নিজের কিছু খুঁজে নিতে হবে। এদিকে টাকা পয়সা খুব একটা হাতে নেই। সবাই ভাবলো এভাবেই আমাকে দমিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু আমিও আদা জল খেয়ে খুঁজতে লেগে গেলাম। তারপর সে এক বিরাট অভিজ্ঞতা। বাড়ীবাজার দেখে প্রতিদিন ই ফোন করছি আর বেরোচ্ছি বাড়ী খুঁজতে। ঋভুকেও নিয়ে এসেছি হস্টেল থেকে। এবার আর কারোর সাহায্য নেব না। একবার এমন ও হলো, একগাদা ব্রোকারদের মাঝে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছি, তারাও তেড়ে তাদের ভাষায় কথা বলে চলেছে। বাপরে! এত গালি দিয়ে কথা বললে আসল কথা খুঁজে পেতে চাপ হয় না অন্যদের, এই ভেবে চলেছি। তারপর ফ্ল্যাট কেনা হলো। একাই কাজ করালাম, জিনিস শিফ্ট করিয়ে, ঋভুকে নিয়ে সটাং চলে এলাম। মা তখন বলছে, তোর তো নিজের একটা থাকার জায়গা হয়ে গেলো, এখন আমাদের সঙ্গেই থাকতে পারতিস। এত মাথা গরম হয়ে গেলো বলার নয়। মা, তুমি যদি একটু শক্ত হতে, আমার পরিস্থিতি হয়ত অন্যরকম হত। আমি একদম তোমার মতন নই মা, আমার নিরাপত্তার থেকে স্বস্তি বেশী কাম্য।
    তারপর চললো, একদিকে নতুন করে আবার সংসার সাজানো, আর ছেলেটাকে ঘিরে থাকা। অনেক অন্যায় হয়েছে ওর উপর। কিন্তু স্কুল ছাড়াতে পারছি না। মানিক একটু ও রাজি নয়। অত দুর থেকে বুঝতেই পারছে না, এই স্কুল না ছাড়ালে ছেলেটার সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। তবে এবার আমার বেশ মজা লাগলো, আমার ভাবনাটাই বদলে গেলো, জীবন টা কেমন কেবল ক্যাম্পিং মনে হলো। আর আমার কোথাও বাড়ী থাকবে না এটাও বুঝলাম, হয় শ্বশুরের বাড়ী, নয় বাবার, নয় বরের। খুব দুঃখ হত প্রথমে। এখন ভাবি এ ভালোই । পিছুটান থাকেনা।
    আবার দু হাজার দশে ছেলেকে নিয়ে ভিয়েতনাম গেলাম।
    এবার দেখলাম হো চি মিন অনেক পাল্টে যাচ্ছে। আগে শহরে ভিখারিদের দেখা যেত না। বারন ছিলো, তাদের ফুল বা লটারির টিকেট বিক্রি করতে হত। কিন্তু তখন হাত পেতে ভিক্ষা চাইছে। শহরে অপরাধ ও অনেক বেড়ে চলেছে শুনলাম। আগে দেখতাম শান্ত শহর, বিকেলে সবাই পার্কে আনন্দ করছে। এবার ছবিটা অনেক পাল্টে গেছে।
    এবার ন্যাচাঙ ঘুরতে গেছিলাম। ব্লু ট্রেনে চড়ে। বেশ মজার ট্রেন। সারা রাত ধরে চললো। টিভি ও ছিলো সে ট্রেনে। ন্যাচাঙ সমুদ্রের ধারের সুন্দর শহর। একটা খুব পুরানো মন্দির দেখতে গেলাম। সেখানে আমাদের হিন্দুদের কিছু দেব দেবী ও দেখলাম। এ ছাড়া সমুদ্রের পারের একটা পার্কে গেছিলাম। সেখানে নানারকম রোলারকোস্টার রয়েছে। ওয়াটার পার্ক রয়েছে। আর রয়েছে একটা দারুন অ্যাকোয়েরিয়াম। সেটা আসলে সমুদ্রের নীচে একটা সুরঙ্গপথ। তাতে একটা চলন্ত রাস্তা আছে। মাথার উপর আর পাশে খানিকটা মোটা কাঁচ দিয়ে ঘেরা, সেখানে আলোর ব্যবস্থা এমন ভাবে আছে যে সমুদ্রের তলায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রকে দেখা যাবে। আমাদের মাথার উপর দিয়ে নানারকম মাছেরা ঘুরে বেরাচ্ছে। যেমন শঙ্কর মাছ, নানা ধরনের শার্ক, এসব। এ ছাড়াও সমুদ্রে ঘুরতেও গেছিলাম, সেখানে নানান মজার ব্যবস্থা ছিলো। যেমন স্কুবা ডাইভিং ইত্যাদি। লঞ্চেও দারুন পার্টি হচ্ছিলো, গান নাচ ইত্যাদি। সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে জলেই ওয়াইন বার এর ব্যবস্থা হলো। আমি অবশ্য সব ই দেখলাম। সমুদ্রে নামা হলো না। ঋভু নামলো বাবার সাথে। ফেরার সময় অনেক কিছুর সাথে বেশ কিছু কালেকশন, যেমন অস্কার, এছাড়াও এমনি কিছু সিডি আনা হলো। তো ভিয়েত নামের গল্প এখানেই শেষ।
    প্রসঙ্গতঃ এই লেখাটা লিখতে গিয়ে বহুবার গুগল সার্চ করে, উইকি বা নানান সাইটের সাহায্য নিতে হয়েছে। অনেক কিছুই ভুলে গেছিলাম।
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৫642355
  • 1.আবার শীত এসে যাচ্ছে। দারুন মজার সময়। আবার ধনেপাতারা কুচি কুচি ছোট্ট পাতা মেলে তাকাচ্ছে। গোলাপগাছগুলো সব মরে গেলো। ভারী নরম স্বভাবের। কি যে হয়, প্রতিবার বরষায় পর ঝপাঝপ মরে যাবে গোলাপ গাছেরা। এবার আর তাই, কোন সৌখিন গাছ নয়। তাবলে গাছোয়ালা চাইনিজ টগর বলে আমায় লজ্জাবতী গছিয়ে দেবে। কি অদ্ভুত। শীতের একটা অদ্ভুত ঝলমলে ঠান্ডা অন্যরকম গন্ধ ওয়ালা সকাল হয়। অনেকদিন শীতের ভোর ভুলেই গেছিলাম। এবার আবার সবুজ মাঠে শিশিরে পা ভেজাতে যেতে হবে। সেই কোন ছোট্ট বেলায় শীত পরলেই আমরা দত্তপুলিয়া, বনগাঁ চলে যেতাম। কলকাতায় থাকলেও ঘরে খুব কম থাকা হত। পরীক্ষা হয়ে গেলেই, মজা আর মজা। একদিন দক্ষিনেশ্বর, বেলুড় , আরেকদিন চিড়িয়াখানায় যাবোই যাবো। মা বানিয়ে নিয়ে যাবে রুটি, গোলমরিচ আর নুন দেওয়া নতুন আলুর তরকারি। সাথে জলভরা তালশাঁস সন্দেশ আর কমলা লেবু মাস্ট। শীতকালটা লেবু গন্ধ সময়। তারপরেই মা আমাদের নিয়ে হেঁদুয়াতে যাবে আর বাবা আসবে অফিস থেকে। তখন আমরা নানান ধরনের টফি, মিস্টি, কেক কিনে ফিরবো। তখন ই জানি পরদিন ভোরবেলা কুয়াশা কুয়াশা সকালে আমরা বেরিয়ে পরবো। যখন আমাদের ট্রেন চলতে শুরু করবে তখন সুজ্জিমামা সবে আড়ামোড়া ভাঙছে। সোনা সোনা আলোয় ভরে যাবে চারপাশের সবুজ রঙের দিগন্ত।
    আমি আর ভাই জানলায় মুখ ঠেসে বসে থাকবো, যেন একটু ও কিছু না মিস করে যাই। আর মেঠো পথ দিয়ে ছোটদাদুর বাড়ী যাবার পথে খড়ে ছাওয়া উঁচু মাটির দাওয়া সমেত মাটির ঘরের মাঝে উঠোনে, ধানের গোলার পাশে মুরগী, ছাগলের সাথে খেলছে ছোট বাচ্চারা, তাদের বুড়ো ঠাম্মা, দাদুরা চাটাইয়ের উপর বসে রোদ পোহাচ্ছে, আমাদের দেখলেই সবাই হাসি মুখে চলে আসবে, কোলে নিয়ে ঘরে যাবে। বাবা সবাইকে টফি, মিস্টি দিতে দিতে চলবে। আমরাও লাফাতে লাফাতে গিয়ে দেখবো ছোট ঠাম্মা একগাল হাসি নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর গ্রামে ঢোকার আগেই মাও এক গলা ঘোমটা টেনে নিয়েছে অবশ্য। ছোটদাদু কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে আসবে, আমাদের আসার খবর শুনেই। ভাই সোজা দৌড়ে বিরাট বাগানে চলে যাবে। আমি ঠাম্মার হাত ধরে রান্নাঘরে। এখানে বাড়ীগুলো কি অদ্ভুত। একেকটা ঘর একটা দাওয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পাশে আরেকটা, কিন্তু আলাদা। লোক হিসাবে ঘর। উঁচু দাওয়ায় মাটির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।কি সুন্দর একটা সোঁদা গন্ধ থাকে গ্রামে। আমাদের শহরে বরষার শুরুতে অমন একটা মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। ঠাম্মা আর দাদু দুজন বলে , ওদের একটাই ঘর। আর একটা রান্নাঘর, ওরকম ই দাওয়া সমেত। দুটো মিলিয়ে এল শেপের। রান্নাঘর বেড়ার। কম মাটির। কিন্তু থাকার ঘর মোটা মাটির দেওয়ালে। আমার ছোটবেলায় মামাবাড়ি ও এমন গ্রাম ই ছিলো। অবশ্য মামাবাড়ির গ্রামে কোঠা বাড়ি ও ছিলো। কিন্তু আসবাব এত সিম্পল ছিলো। এখানেও তাই। একটা চৌকি, বিছানা গোটানো। মাথার উপরে ও কোথাও বিছানা গুটিয়ে তুলে দেবার ব্যবস্থা থাকতো। একটা আলনা আর গুটিকতক ট্রাঙ্ক। কবে থেকে যে এত কিছু লাগতে শুরু করলো কে জানে!
    ভোরবেলায় দাদুর খেজুর গাছের রসের হাঁড়ি পাড়তে আসবে, সেই কুয়াশা কুয়াশা ভোরে, আমরা তখন দুটো লেপের তলায় শুয়ে আছি। ভাই একছুট্টে বেরিয়ে যাবে আর মা শোয়েটার, মোজা, গরম টুপি নিয়ে ওর পিছনে। মা আর ভাই খুব খেজুর রস ভালোবাসে। আমি ভালোবাসিনা, আমি অবশ্য খেতেই ভালোবাসিনা, কেবল চেয়ে চেয়ে দেখতে আমার কোন আলিস্যি নেই, আর ভাবতে। ঠাকুমা ঐজন্য আমার থেকে ভাইকে আর মাকে ভালোবাসে। ঠাকুমা বানাবে মাটির সরায় সাদা গোল আসকে পিঠে আর সাথে থাকবে গ্রামেই বানানো সরষের তেলের মতন দেখতে নতুন গুড়। আমি দেখবো আর একটু ভেঙে খেয়েই সোজা বাগানে।মা আর ঠাকুমার আক্ষেপ শোনা যাবে আমি কি করে বাঁচবো , সে নিয়ে। আমার মায়ের এখন ও ধারনা, আমি না খেয়েই বেঁচে থাকি আর মায়ের প্রবল কর্তব্যবোধ থেকে আমায় কাছে পেলেই ঘেঁটি ধরে খাওয়াতে শুরু করে। কত বড় বড় গাছ, আর তাই কি অন্ধকার বাগানটা আর কি বড়, একটা লাঠি নিয়ে তখন আমি পেরিয়ে বন-প্রান্তর চলেছি আজানা দেশের না জানি কি এর খোঁজে। কতরকমের পাখি আর কি উজ্জ্বল রঙের প্রজাপতিরা , তারাও চলেছে আমার সাথে। রাত্রে দাদুর কাছে গল্প শোনা। আমার ছোটদাদু কি অদ্ভুত মানুষ ছিলেন, সব সময়, কি শীত, কি গ্রীষ্ম দাওয়ায় শুতেন, ঘরে নয়। আগেকার দিনের মানুষেরাও কি ঘরে আটকে থাকতে ভালোবাসতেন না! ঠাকুমা তখন চারিদিকে গন্ধ ছড়িয়ে পায়েস রাঁধছে আর মা ঠাকুমার সাথে গল্প করছে।
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৬642356
  • 2.এরপর দত্তপুলিয়া, ঠাকুমার চোখ ছলছল করছে, দাদু আমাদের সাথে বড় রাস্তা পর্যন্ত আসবেই, ধুতি হাঁটু অবধি , গায়ে হালকা চাদর। দাদুর শীত করে না। আমাদের তিনজনের শোয়েটার অবশ্য মায়ের হাতের বানানো। দত্তপুলিয়ায় বাবার মেজোমামা আছেন, অবশ্য মেজোদাদু আসলে বাবার ই বয়সী, তাই দিদাকে আমরা দিদি বলি। সেখানে তিলু, গুপি আর পলা , আমাদের কাকা পিসি হলেও আসলে বন্ধু। এখানে অবশ্য পাকা বাড়ী। বাবার দাদু ছিলেন এখানকার জমিদার। জমিদারির কিছুই নেই, মেজাজ ছাড়া। তিলু পিসি আর আমি, পলা আর ভাই আলাদা দল ছিলাম, কেবল গুপি কাকা কিছুটা বড় বলে ও ওর খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। এখানে তেঁতুল গাছে ভারী মিষ্টি বালি তেঁতুল হত। আর অজস্র কুল গাছ, এমনকি নারকেলে কুল ও ছিলো। নদীর তীরে ছিলো শ্মশান। সেখানে আমাদের যেতেও হবে, ভয় ও পেতে হবে। একবার আমি আর তিলু পিসি পাকা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বি এসেফের ক্যাম্প পর্যন্ত চলে গেলাম। কেউ মনে হয় দেখতে পেয়ে আমাদের ধরে নিয়ে এলো, বা আমরা নিজেই ফিরে এলাম। এখানেও অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু তাও বাড়ী ফিরতেই হত।
    বেহালায় আসার পর ক্রমশ দিন পাল্টে যেতে থাকলো। আর সেভাবে বনগাঁ বা দত্তপুলিয়া যাওয়া হয় না। তবে আমাদের বেহালার শীতেও একশো মজা ছিলো। আমাদের বেহালায় ও তখন সবুজ , শুকনো আর লেবু গন্ধ শীত ছিলো। এইসময় বাগানে রঙের মেলা লেগে যেত। মা রোদ্রে লেপ , কম্বল দিতো আর আমরা তার উপর কমিক্স নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতাম। তখন বাঁটুল, নন্টে ফন্টে, হাঁদাভোঁদার থেকেও বেতাল, বাহাদুর , ম্যানড্রেক, কেরি ড্রেক, ফ্ল্যাশ গর্ডন বেশি করে টেনে রাখছে। আর এই কমিক্স নিয়ে কি শোরগোল, দেওয়া নেওয়া করে পড়তে হবেই, কিন্তু বই গেলে ফেরত আসবে কিনা, বা আসলেও কেমন ভাবে আসবে কেউ জানেনা। কেবল আমাদের শেখানো সহবত অনুযায়ী আমাদের বাড়ী আসা বইয়েরা ঠিক সময়ে আর ঠিক ভাবেই ফেরত যেত।তখন ফ্রান্সিসের খুব ফ্যান ছিলাম আর নিজেকে পান্ডব গোয়েন্দাদের একজন বানিয়ে নিয়ে মনে মনেই ওদের সাথে ঘুরে বেরাতাম। তখন ই ড্রাকুলা পড়েছিলাম। অদ্ভুত এক বইয়ের জগতে ঘুরে বেড়াতাম, র‌্যাদার কল্পনার জগতে। একবার বাড়িতে একটা ঘুড়ি পরলো, আদেও পরলো না ফেলা হলো কে জানে, তাতে লেখা ছিলো বই ই তোমার বন্ধু, আর কোন বন্ধু তোমার হবে না। আমিও তাই ই চেয়েছিলাম। অন্য বন্ধুর খুব একটা পরোয়া করতাম না তখন। সিরোগোজির কোর্ট তো বরষl শেষেই কাটা হয়ে গেছে। সিরোগোজি, পিট্টু , কাবাডি, খো খো খেলা হচ্ছে প্রতিদিন বিকেলে। আমি অবশ্য একদম ভালো খেলতে পারিনা। আর তাই যারা ভালো খেলে তাদের নিয়ে আমার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। এমনি করেই কবে যেন আর শীতকাল আলাদা ভাবে চিনতে ভুলে গেলাম। যন্ত্রের মত শীত আসলে গরম জামা, লেপ -কম্বল বের করা। আবার গেলেই সব তোলার বন্দোবস্ত। অনেকদিন পর আবার সেই শীত গন্ধটা পাচ্ছি। অথচ এবার ই সব ভোলার কথা ছিলো। আমার সব ই উল্টো কেন কে জানে!
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৭642358
  • ওফ! লোকে কোন আনন্দে যে সংসার, বাচ্চা কাচ্চার স্বপ্ন দেখে তা সেই কচি বয়সেও বুঝতাম না, আজ ও বুঝিনা। মা মাগো! আর এখন সবচেয়ে শাস্তি লাগছে বাজার করতে যাওয়ার কথা ভাবলেই। কেন কে জানে! অথচ বাজার আমার বেশ লাগতো, যেমন ক্যাঁও কিচিরে ভরা গ্রাম বা আমাদের ব্যায়লার চন্ডিমেলার মতন হাফ গ্রামের মেলা, এখন চন্ডিমেলার কথা ভাবলেও কেমন ভয় লাগে।
    সে যাগ্গে, আজ সকালে বাজারে গেলুম, এদিকে কাল মঙ্গোলিয়া, সিডনি আর ফিলিপিনসের পাইলট গাইড দেখে মনটা মঙ্গোলিয়া মঙ্গোলিয়া করছে আর আমি ঘুম ভরা চোখে(শালা! সকাল হয় কেন?) ব্যাগ দুলিয়ে বাজার চলেছি ( কোথায় ইয়ান রাইটের মতন ঘুরে বেড়াবো)। তাও যেতাম কিনা সন্দেহ, হতচ্ছাড়া ছেলে দিদান বাড়ী থেকে ফোন করে ঘুম থেকে তুলে দিলো, জানে নইলে আমি ঘুমুতেই থাকবো, নিজে ঘুমুতে পারলো না বলে আমাকেও জাগানোর পুণ্য কর্মটি করে তিনি পড়তে গেলেন। কে জানে আমার মামনির সায় নিয়েই কিনা, মার তো একটাই চিন্তা ঘুমিয়ে থাকলে আমি আর খাবো না। ওফ!
    তো আজকাল বাজারের কি অবস্থা! বেশিরভাগ ই মহিলা ব্যাটেলিয়ান বাজার করতে আসে, কি অবস্থা। দেশের কি সব পুং রাই বাইরে থাকে নাকি! পুরুষ মানুষগুলো দিনকেদিন কেমন কুঁড়ের হদ্দ হয়ে যাচ্ছে(আগেও ছিলো, এখন আর চোখের পর্দাও রাখছে না) কতিপয় বয়স্ক (হায়! আজকাল বয়স্ক বললেই কেমন একটা ধাক্কা খাই) মানুষ ট্রাডিশনের খাতিরে বাজারে আসছেন। এদিকে আজকাল বাজার গেলে বা রান্না করতে গেলেও মন খারাপ লাগে। আমার বুড়োটা সমানে ঘ্যানাচ্ছে, চলে আয়, রান্না করতে আর ভাল্লাগেনা , এদিকে রান্না না করলেও বাইরে গিয়ে খেতে গেলেই পকেটের চিন্তা, শেষে চাট্টি ন্যুডলস স্যুপ, দিনরাত আমার ন্যুডলস স্যুপ খেয়েই কেটে যাচ্ছে। আহারে! আমার মাঝেও যে একটা হদ্দ ন্যাকা বৌ লুকিয়ে ছিলো কে জানতো!
    বাজারোয়ালারা আমাকে দেখলেই যে কি খুশী হয়ে যায়, বাবাকে দেখলেও বাবাদের বাজারের লোকেরা অমন খুশী হত, ব্যাগ নামিয়ে দিলেই হল, নিজেদের খুশী তে ভরে দেবে। আমারো দিনকে দিন সেই অবস্থা হচ্ছে। সেদিন অনেকদিন পর কদমতলা বাজারে গেলাম, পেঁপে বা এমন কিছু নিতে দাঁড়িয়েছি, তো ছেলেটি ব্যাগ ভরে দিলো, আমি হাঁ করে চেয়ে আছি দেখে বললো, দিদি , অনেক্দিন পর এসেছো, তাও তো একশ টাকা পুরো করে দেইনি(আশি টাকা পুরো করে দিয়েছিলো)। আমি যাস্ট একটা জিনিস দেখে অবাক হই, এদের কি মনে রাখার ক্ষমতা, ব্যাগে যা জিনিস দিয়েছিলো, সেগুলোই আমি কিনি সাধারনতঃ। আজ মুরগীর দোকানে ব্যপক ভীড়। এই অস্বাভাবিক অখাদ্যটিকে কেউ এড়াতেও পারে না। বিরাট লাইন দেখে মুখটা দেখিয়ে মাছ কিনতে চলে গেলাম। চিংড়ি, বেলে, ভাঙর কিনে, কাটিয়ে সব্জিওয়ালির কাছে ব্যাগ ফেলে চাট্টি গল্প করে আবার চিকেনের লাইনে।ওবাবা! লাইন যেখানে ছিলো, সেখানেই রয়েছে।
    তো মহিলারা স্বাভাবিক ভাবেই ব্যস্ত, কয়েকবার এসে তাড়া দিয়ে আবার কোথায় হাওয়া হয়ে যাচ্ছেন, আমার কেবল আর কোথাও যাওয়ার নেই, তো হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছি। তার মধ্যেই আমার পরের দুজন কেও দেওয়া হয়ে গেলো, দিদি আপনার তো আবার বোনলেস হবে, এই বলে। তার মধ্যে আমরা নেহাত ই যারা ছুটোছুটির মধ্যে নেই, সেসব মহিলারা গল্প জুড়েছি। আমার পাশেরজন বলেই চলেছেন, এরপর আর খেতে ভাল্লাগে বলো! ছাই বলতেও পারছি না, আর খাওয়া, যা বাজার করা হলো সব বেছে ধুয়ে গুছিয়ে তুলতেই এ বেলা কেটে যাবে, আর যদি বিক্রম চালিয়ে কাজ করি তো কবে শেষ হবে ত ভগাদাও বলতে পারবে না, বললেই আজকালকার মেয়েদের সম্বন্ধে লম্বা লেকচার শুনতে হবে, ইদিকে আমি যে আর আজকালকার ক্যাটিগোরিতে নেই এটা বললেও বিপদ, হাজার কৈফিয়ত দিতে দিতে জান বেরিয়ে যাবে। তার মধ্যেই একজন পাশের ফ্লাট থেকে দুবার বেরিয়ে এসে আবার ঢুকে গেলেন, মনে হয় রান্না করতে করতে আসছেন। তার মাঝে পাশের মাসি চেঁচিয়ে উঠলো, তার কাঁঠালি চাঁপা কলার গায়ে মুরগীর রক্ত ছিটকেছে, সে নিয়ে মহাভারত রচনা হয়ে গেলো। সবাই বলছে, ধুয়ে ফেলো না বাপু, সে বলেই চলেছে এ আর কেউ কিনবে! লোকে পুজোর জন্য কেনে। কি চাপ রে ভাই। তার মধ্যে দুই ছোকরা এসেছে , তাদের কারি পাত্তা লাগবে, আরেকদিকের মাসি পিছনের বাড়ীর গাছ দেখিয়ে দিলো। এবার সে নিয়ে হা হা হি হি চললো, শেষে দেখা গেলো সে বাড়ীর মহিলাও আমার পাশেই গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছেন চিকেনের জন্য। তিনি এতক্ষন কাজের মাসি না কার যেন বাপান্ত করছিলেন। তা অবশ্য তিনি হাসি মুখেই পাতা নিতে দিলেন, ছেলেরা ও ডাল ভাঙতে বাড়ীর ভিতর চলে গেলো।
    যাই আর চারটে পাইলট গাইড দেখে নেই গিয়ে। এই তো জীবন.............. কালীদা....
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৮642359
  • 1.
    কাল চলেছিলাম দক্ষিনেশ্বর, আদ্যাপীঠে। এদিকে আমার কে জানে কেন কিছুতেই রাস্তা ঘাট মনে থাকে না। বাসের নাম্বার তো মোট্টে না। সকালেই মুস্কিল আসানের জন্য ড্যাডকে ফোন। বাবা, ও হ্যাঁ, মানে এসব শুরু করতেই বুঝলাম ভুলে গেছে। বাবার এই হয়েছে, ঠিক সময়ে ঠিক জিনিসটা কিছুতেই মনে করতে পারে না, শেষে ওগো, দেখো তো বলে মাকে ধরিয়ে দিয়েছে। মা ও এদিক সেদিক হাতড়ে মরছে। এদিকে বাবাকে নিয়ে একটা সুবিধা আছে, সিচুয়েশন ম্যানেজেবল নয় দেখলেই স্ট্রেট কাটিয়ে দেবে, কিন্তু আমার মা জননী কিছুতেই ছাড়বে না, যেন আমায় না বলতে পারলে আমি নির্ঘাত হারিয়ে যাবো। শেষমেষ বলেই বসলাম এই তো মঙ্গলবার গেলে, কিসে গেসলে? মনে মনে ভাবছি ট্রামডিপো থেকেই তো বলবে, ঠাকুরপুকুর থেকে ট্রামডিপো টা না হয় ম্যানেজ করে দেব। ওমা, বলে কিনা, ট্যাক্সিতে গেসলুম তো! বোঝো! ইদিকে হেড অফিস বলে পাঠিয়েছে সামনে কঠিন সময়, খরচপাতির রাস টান। তো আমি ও ডমিনোজ, সিন্মা, ট্যাক্সি ইত্যাদি বাদ্দিয়ে দিয়েছি। ( হে ভগবান! নেহাত মাসে দুটো সিন্মা দেখি, একটু কুঁড়েমো করে বাইরে বেশি খাই, তাও তোমার সয় নাগো, আমি না হয় তোমার বেয়াড়া, ত্যাঁদোর মেয়ে। মা বাপেরা তো উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেপিলের প্রতি ই একটু বেশি দয়া দেখায়) সে যাগ্গে, শেষে বাবার মনে পরলো বাবুঘাট থেকে মিনি ছাড়ে। তাও ভালো।
    এদিকে সবসময় শুনি আমি অস্থির বলেই ঋভু নাকি অস্থির আর আমি বারমুখো বলে আমার অস্থিরতা বেশি আর ঋভু অস্থির বলেই পড়াশুনা করে না(ঐ বলে না যত দোষ............... ইত্যাদি) তো নিজেকে সুস্থির করার জন্য জীবন থেকে বন্ধু , ফেবু সব ছেঁটে দিইচি(মানে চেষ্টা চালাচ্ছি। যদিও তাতে কোন ঘোড়ার মাথার অস্থিরতা কমেছে কে জানে!) ঋভুও তেড়ে গান শুনছে। বেশি চেপে ধরলেই অ্যা পেয়েছে বলে টয়েলেটে ভেগে যাচ্ছে। আর আমি বাইরে থেকে দাঁত কিড়মিড় করে যাবতীয় উদ্দাম উত্তাল গান শুনছি, বড় হয়ে যাওয়া ছেলেকে কিছু বলতেও পারি না।
    বেশ কিছু বছর আগে, তখন ও আমার ছানাটার গা দিয়ে কচি একটা অসহায় গন্ধ বেরোতো। তখন দিনরাত আমাদের বাড়ীতে মাইকেল চলছে, এমিনেম টেমিনেম , হানি সিং এসব উৎপাত তখন ও শুরু হয়নি। একদিন চরম মাথা যন্ত্রনা, তার মধ্যে নাকি ঋভুর সাথে বসে মাইকেল দেখতে হবে। তা সে শোনার থেকে দেখা আরো দুঃসহ। মাঝে সাঝেই আঁও , কাঁও টা তবু তদ্দিনে সইয়ে নিয়েছি।শেষে আর না পেরে বলেই ফেললাম, ঋভু তুই যেন বড় হয়ে খবরদার প্যান্টুর উপর অ্যালপ্যান্টু পরবি না। আর গান গাইতে গাইতে টুনি তে অত হাত দেয় কেন রে মাইকেল? সেই মুহুর্তে গৃহযুদ্ধু শুরু হয়ে গেলো আর তা প্রায় বিশ্বযুদ্ধতে পরিনত হতে চললো, অন্য দেশের পাব্লিক ও কি খচে গেলো শুনে, হ্যাঁরে তুই কি মা? অ্যাঁ? আমার অবশ্য এসব গায়ে লাগে না। সে তখন ঋভু খুব ছোট, কোন একটা খিঁচে ডাক্তারের কাছে গেসলুম, ডাক্তার বলে কিনা আপনাদের মত মাদের নিয়ে যত জ্বালা, মাদারলি পার্সোনালিটি তৈরী হয়নি মা হয়ে গেছেন।বলতে ইচ্ছে করছিলো ইচ্ছে করে হইনি মশাই, হতে বাধ্য হয়েছিলুম।বংশের বাতি না থাকলে পাব্লিক আমায় ছাড়তো যেন! কিন্তু চেপে গেসলুম সে যাত্রা। তারপর থেকে এত শুনেছি যে জানি আমি মোটেই মা হবার যোগ্য নই। আর তাতে আমার থোড়ায় কিছু এসে যায়।
    হুঁ, যেটা বলছিলাম, রাস্তায় বেরিয়ে মনে হলো যেন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি..............
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:১১642360
  • 2.
    তো সবে মাত্র রাস্তাটা পার হচ্ছি, দেখি দুটো পঁচাত্তর মারপিঠ করতে করতে ধাঁ করে বেরিয়ে গেলো। অত যে মেট্রোর ব্রিজের নীচে দাঁড়িয়ে হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি করলুম দেখতেই পেলো না। কেবল চাট্টে অটো দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করতে লাগলো। কি অদ্ভুত! পঁচাত্তরের রুটে যাবে নাকি রে বাবা! তারপর হা পিত্তেশ করে দাঁড়িয়ে রয়েছি, বাবুঘাটের কোন বাসের দেখা নেই। এদিকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রায় সব নখ খেয়ে ফেলেছি, আঁচলটাও প্রায় খেয়ে ফেলবো, এমন সময় একটা 3A এলো। বসার জায়গা নেই।শনিবার ঠিক দুপুরবেলায় ও বাসে বসার জায়গা পাওয়া যায় না, ওরে এটা কলকেতা তো? এই যেদিন যেদিন শাড়ী পরে বেরোবো সেদিন সেদিন যাবতীয় ঝামেলা দল বেঁধে আসবে, কি অদ্ভুত! এদিকে ঋভুটা ছ্যাড়ছেড়িয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, আজকাল আমি আর ঋভু একসাথে বাসে উঠলে ঋভুকে টিকিট টা দিন, আর আমাকে টিকিট কেটেছো বলে, কি খারাপ ব্যাপার।
    কিসব বাস হয়েছে, এসি নয়, তাও গেট খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। লোকজন মোটেই যেখানে সেখানে দৌড়ে উঠে পরতে পারছে না, নেমে পরতেও। সেই বাস দরজা খুললে তবেই। এক মা উঠলো তার এক কচি মেয়ে আর একটু বড় হয়ে যাওয়া ছেলে নিয়ে, বড় বলতে খুব বেশি হলে ন দশ বছরের, নিজের পিঠে একটা রুকস্যাক নিয়ে ছোট্ট চঞ্চল মা। আমি ঘাবরে দেখছি কি হয়, তা সে মা উঠেই ছেলেকে যেখানে নতুন বাসগুলোর হুইলচেয়ার রাখার জায়গাটা হয়েছে সেখানে পাঠিয়ে দিলো আরেক হাতে মেয়েকে নিয়ে, আর মেয়েকেও আরেক বাচ্চা মেয়ে টেনে কোলে তুলে নিলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। ঋভু যখন এরকম ছোট, তখন যেহেতু শ্বশুরবাড়ী থাকতাম, বেশিটাই শাড়ী পরতে হত। যদিও সেভাবে বারন কিছু ছিলো না, কিন্তু ঐ আর ভালোরা কেমন শাড়ী টাড়ী পরে ইত্যাদি শুনতে যখন খুব বিরক্ত লাগত............... সে যাহোক, সেসব সময় প্রায় ই হতভাগা ঋভু আমায় আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো আর হয় কুঁচি , নাহয় আঁচল খুলে দিত। সে থেকে শাড়ীতে আমার বেজায় ভয় আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বাসে ওঠায়। যাহোক গঙ্গার ধার দিয়ে দিয়ে শেষে কিনা আমরা বাবুঘাটেও পোঁছে গেলুম।
    এ একটা অদ্ভুত জায়গা, আজ অবধি এখানে কিভাবে নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া যায় তা খুঁজে পেলুম না। তো প্রথমেই গঙ্গা দিয়ে যাওয়া যায় কিনা সেই তাল করতে লাগলুম। তা যেটাকে লঞ্চঘাটা বলে ঠাওরেছি সেটা দেখি আদতে থানা, তাতে গেটের মুখে একজন পুলিশ ফেসবুক করছে আরেকজনে ফোনে গপ্প করছে। তাও ভাগ্য বলতে হবে, তারা লঞ্চঘাট ও দেখিয়ে দিলো আর সেখান থেকে দক্ষিনেশ্বর যাবার কোন উপায় নেই সেটাও বলে দিলো। অগত্যা রাস্তা পার হয়ে মিনিবাস(যেটা কিনা এপার থেকেই দেখতে পাচ্ছি) ধরবার জন্য চলেছি, কিন্তু পার হবো কিভাবে, চারদিকের রাস্তা থেকে কখন কোন দিক দিয়ে গাড়ী এসেই চলেছে তার কোন ঠিক ঠিকানা পাচ্ছিনা, শেষে সেই অব্যর্থ ওষুধ প্রয়োগ করলাম, গুন গুন করে বেসুরে সুর ভাঁজতে ভাঁজতে রাস্তা পার হয়ে গেলাম, গাড়ীরাও আমাকে পাশ কাটিয়ে এদিক সেদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আমি জানি তো এভাবেই চলতে হয়। তাও মানকে আর ঋভু কেবল খ্যাঁচাবে। আমার নাকি স্বভাব রাস্তায় না দেখে চলা। সবার যেন দায়িত্ব আমাকে দেখে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া। যে অভাগা রিক্সায়ালা বা অটোয়ালা নেহাত ই আমার সাথে গাড়ী ঠেকিয়ে ফেলে আসলে সেদিনটা তাদের ই খারাপ। কেননা আমি নাকি তখন ইচ্ছে করেই তাদের তুলোধনা করবো, যদিও সেসব বেচারাদের(?) কোন দোষ মোটেই ছিলো না। ইত্যাদি। কে বলবে যেখানে যা নিয়ম..................
    তারপর আরেক কেস। সেখানে মোট তিনটে দক্ষিনেশ্বরের মিনি দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা জনা দশ মানুষ যাদের মধ্যে আমি ছাড়া অন্যরা একটা দল, ক্রমাগত নানাধরনের কনডাক্টর ব্যাগ ওয়ালা লোকেদের কথা শুনে একবার এই গাড়ীতে আরেকবার সেই গাড়ীতে চড়ে বসছি আবার নেমে পরছি। শেষে খোদ ড্রাইভার এসে খুব রাগ করে , কি যে করেন আপনারা, আমি এখন ই গাড়ী ছেড়ে দেব কিন্তু, বলে আমাদের মার্চ করিয়ে প্রথমে যে গাড়ীতে গিয়ে বসেছিলুম তাতে নিয়ে গেলো, আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। বাপরে!
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:১৩642361
  • 3.
    আর এই বাবুঘাট দক্ষিনেশ্বর মিনি, মোটামুটি অনন্ত যাত্রার আর এক নাম। শেষ হবার কোন লক্ষন ই নেই। একবার মনে হলো ঐ সময়ে আমরা মাচুপিচু পৌঁছে যেতে পারতুম। সে যাহোক বাস চলতে শুরু করেছে। প্রথমেই বৃটিশ কলকাতা দিয়ে চলেছে। বড় বড় ম্যানসন, অদ্ভুত পুরানো গন্ধয়ালা মায়াবিনী আমার শহর। হঠাৎ মনে হলো, কেলো করেছে, কিভাবে ফিরব তো জানিনি, আর দক্ষিনেশ্বর থেকে আদ্যাপীঠেই বা কেং করে যাবো। তো কাকে কাকে জ্বালানো যায় এই ভর দুপুর বেলাতে মনে মনে প্রথমে তার একটা লিস্টি তৈরী করে নিলুম। প্রথম জনেই কাজ হয়ে গেলো, যদিও সে পাব্লিক, পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করে না আর আমি প্রথমেই বলে দিয়েছি , খবরদার ট্যাক্সি বলবি না। তো সে তার চেনাজানাদের কাজে লাগিয়ে বলে দিলো, কিন্তু সে অনুযায়ী আমায় আবার আদ্যাপীঠ থেকে দক্ষিনেশ্বর ফিরতে হয়। তা যাহোক জানা তো হলো। কেবল সে একটু আশ্চর্য হয়ে জিগালো, তুই কি পুজো দিতে চললি? আমি আর পুজো দুটো মেলে নাকি, অন্য কাজ আছে, বলাতে সে আবার আশ্বস্ত হয়ে ঘুমুতে চলে গেলো।এদিকে গাড়ী লালবাজার ফেলে টেরিটিবাজার হয়ে চলেছে। ঋভুটাকে একবার সকাল সকাল টেরিটিবাজারের চিনা ব্রেকফাস্টের সাথে দেখা করিয়ে দিয়ে আমার কি ঝামেলা, মাঝে মাঝেই সেখানে যাবার বায়না করে, ব্যাটা একবার শুনলেও তুলকালাম করে দেবে।
    ক্রমশ কলেজস্ট্রিট, আর খালি পড়ার বই এর দোকান , শুধু পড়ার বই, তোমার গল্পের বই নাই কলেজস্ট্রিট? তা সে আবার তুতুলের শোক উথলে উঠলো। কোন হতচ্ছাড়া যে আমার তুতুলটা ঝেরে দিলো। কত ঘুরে ঘুরে সেটা পেয়েছিলাম। সেবার একটা লঙ স্কার্ট পরে তা দিয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে মোটামুটি কলেজস্ট্রিট ঝাঁট দিয়ে বই কিনেছিলুম। শেষে দু হাত ভর্তি বই আর গুঁই এর মিষ্টি নিয়ে নতুন বাসগুলোর একটাতে উঠেছিলুম। এই নতুন বাস তখন সবে কলকাতায় ছেড়েছে। এই বাস গুলোতে একেবারে সামনের দিকে দুটো একলা সিট থাকে, তার প্রথমটা আমার ভারী প্রিয়। সে যাত্রা অমন একটা সিট পেয়ে গেসলুম। এবার সে সিটটা আবার একটা ছোট মত টেবিল টাইপ উঁচু জায়গায় বসানো থাকে। সে সময় ঝাঁ চকচকে নতুন বাসে লোকজন ঐ উঁচু জায়গাটাকেও সিট বানিয়ে ফেলতো। আমি তখন চতুর্দিকে আমার স্কার্টের ঘের ছড়িয়ে দুহাতে জিনিস সামলাতে সামলাতে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি আর কি যেন একটা অস্বস্তি পাচ্ছি, ঠিক বুঝতে পারছি না। আসলে যেখানে নরমাল মানুষের ব্রেন ক্যাপাসিটির টেন পারসেন্ট ব্যবহৃত হয় আমার সেখানে ফাইভ মনে হয়( এই সেদিন ঋভুর চাপে লুসি দেখে আমার এ হেন জ্ঞান লাভ, বললে হবে!) সেই জন্য আমার বুঝতে পারা বা সাড়া দেওয়া একটুস দেরীতে হয়। তো হঠাৎ আবিস্কার করলাম একজন লোক দিব্যি আমার স্কার্টের ঝুলে যাওয়া অংশ পেতে তার উপর বসে আছে। দেখেই গা পিত্তি জ্বলে গেলো। আঙুল দিয়ে তাকে টুক টুক করে টোকা দিয়ে দেখালাম, রাগে আর কথাও বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। তারপর পুরো টম অ্যান্ড জেরি শো শুরু হলো। লোকটা প্রথমে খানিক ইগ্নোরাবার চেষ্টা করলো, তারপর স্কার্ট দিয়ে জয়গাটা ভালো করে মুছে , স্কার্টের অংশটা ঝেরে ফেরত দিয়ে আবার বসে পরলো।
    এরপর মহম্মদ আলি পার্ক টার্ক হয়ে হাতীবাগান দিয়ে চললো গাড়ী ঢিকঢিকিয়ে। আহা আমার ছোটবেলাটা উঁকি ঝুঁকি মারে উত্তরের এসব রাস্তায় রাস্তায়। এখানে এলেই অদ্ভুত একটা মনকেমনিয়া ছোট বেলার গন্ধ ভেসে আসে আর দেখতে পাই একটা প্যান্টু দেখা যাচ্ছে এমন ছোট্ট ফ্রক আর পায়ে সাদামোজা ও বাটার কালো জুতো পরা এক জাপানী ডলকে যে কিনা একমুহুর্ত ও প্রশ্ন ছাড়া থাকতে পারে না, কখন ও মা, কখন ও বাবার হাত ধরে অজস্র বকবক করতে করতে চলেছে ।ক্রমশ টালার ট্যাঙ্কি। হা ভগমান! ট্যাঙ্কি টা কি বুড়ো হয়ে গেলো! কেমন বিবর্ণ দেখায় যেন। ক্রমশ গাড়ী চওড়া রাস্তা ছেড়ে গলি ঘুঁজিতে ঢুকতে চলেছে। আজব এই কলকাতা শহর। এমন কুলকাল শহর মনে হয় আর একটাও দেখা যায় না। একপাশে লোকে স্নান করছে , তার ই পাশে জনগন শতরঞ্চি বিছিয়ে তাস পিটোচ্ছে। উপচে পরা ভ্যাটের পাশেই লোকজন লুডো খেলছে। এসব দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলাম এবং আবার একই ভাবে রাস্তা পার হয়ে দক্ষিনেশ্বরের যাবার রাস্তায় ।
    দক্ষিনেশ্বর আমার খুব প্রিয় জায়গা গুলোর একটা। খুব নিশ্চিন্ত শান্তির জায়গা আর খুব সম্ভবত ভারতের বিরলতম ধর্মস্থান যা বেশ পরিচ্ছন্ন এবং যেখানে পান্ডাদের উৎপাত এড়িয়ে এবং পুজোর বালাই এ না থেকেও দিব্যি মনের খুশীতে ঘোরা যায়। এখানে নাট মন্দিরে বা শিবের মন্দির গুলোর পিছনে গিয়ে , যেখান থেকে গঙ্গা দেখা যায়, আমি মনে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে পারবো। সেদিন আবার বৃষ্টি হচ্ছিলো, আর জানুয়ারীর প্রথমেই শীত উধাও।আমার কাজ সেরে গঙ্গার দিকে গেলাম। আজ আমার প্রিয় নদীকেও যেন একটু রোগা লাগলো। তারপর আদ্যাপীঠের দিকে। যে রিক্সাওয়ালা আমায় নিয়ে যাচ্ছিলো তাকে জিগালাম, ভাই আদ্যাপীঠ থেকে কোন বাস টাস পাওয়া যায় না? তো সে আমাকে নামিয়ে বাস স্ট্যান্ডের সুলুক সন্ধান দিয়ে চলে গেলো আর অত ভক্তদের মাঝে আমি মুর্তিমান বিসদৃশ আদ্যাপীঠে অফিস ঘর খুঁজে চললাম। তা সেখানে একজন স্বামিজী আমায় বসিয়ে প্রথমেই কালো টিকা লাগিয়ে কি একটা পুঁটলি চোখে মুখে বুলিয়ে দিলেন যেন। আমি তাকে বললাম আমি এক বিশেষ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তিনি স্নেহ ভরে বললেন তাতে কি হয়েছে, সব পরিচ্ছন্নতা মনে, আচারে নয়। এদ্দিন ধর্ম নিয়ে মেতে থাকা পাব্লিকদের আমি বেশ খারাপ চোখেই দেখতুম, মানে এমন ই ধারনা ছিলো যে তারা সবাই ঠগবাজ টাইপের। যদিও এ বয়সে এসে আর সোজাসুজি যোগবিয়োগে যে জীবন চলে না সেটা বুঝি। কিন্তু ভদ্রলোকের ছোঁয়ায় আর কথায় আর একবার ভুল ভেঙে গেলো।কোন কৃত্রিমতা ছিলো না তার স্নেহতে , আর সম্পুর্ন অপরিচিত মানুষকে মুহুর্তে আপনানোর ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ গুলির জন্যই বসুধৈব কুটুম্বকম কথাটা রয়েছে বলে মনে হয়। যাহোক আমার কাজের কথা হয়ে গেলো। তিনি তখন একজন লোককে ডেকে বললেন একে একটু প্রসাদ দাও। আমায় অন্য একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো, সেখানে তখন সুভাষ চক্রবর্তির ছেলেরা খাওয়া দাওয়া করছেন( ওখানকার লোকেদের কথায় ই জানলুম) । খুব খিদে আর ক্লান্তি ছিলো, কাজেই লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে খেয়ে নিলাম। ফিরছি যখন তখন আবার একটা ডাক শুনে ফিরে দেখি সেই রিক্সায়ালা, বললো দিদি এদিক দিয়ে চলে যান , স্ট্যান্ডে বাস দাঁড়িয়ে আছে। এবং , এবং আমি আর আমার শাড়ী দুজনেই একসঙ্গে বাড়ী ফিরে এলুম জল থৈ থৈ রাস্তা পেরিয়ে।
  • de | 69.185.236.52 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৫২642362
  • বাঃ! দিব্বি!
  • kiki | 53.230.133.166 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:০৮642363
  • দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়াঃ

    ইশ! আজকের দিনটা কেমন মার্বেল প্যালেশ যাবো যাবো টাইপ দিন।

    আহা! মার্বেল প্যালেশ, গ্র্যান্ডের আশপাশ, গঙ্গার ধার, উত্তর কলকাতার অলিগলি, কলেজস্ট্রীট, অফিস পাড়া ...... These are a few of my favorite things!

    মার্বেল প্যালেশ প্রথম গিয়েছিলাম স্কুল থেকে ক্লাস নাইনে। ১৮৩৫ সালের নিওক্লাসিকাল স্টাইলের এই বাড়ীটি তে ঢুকতে হলে ওয়েষ্ট বেঙ্গল ট্যুরিজমের অফিস থেকে পার্মিট জোগাড় করে রাখতে হয় আগে থেকে। তবে সিকিউরিটির লোকেরা যারা সারাদিন হতদ্যোম হয়ে ঢোকার পথের পাশের বারান্দায় বসে আড্ডা দেয় তাদের দু দশ টাকা দিলে এমনিতেও সেখানে ঢুকে পরা যায়, এমনকি একবার আমি কেবল আঁটভাট বকে এমনি এমনি ই ঢুকে পরেছিলাম, পয়সা দিই নি। তো যাওয়াটাই যা ব্যাপার, ভিতরে ঢুকতে তেমন ঝামেলা নেই।
    মেট্রো স্টেশন মনে হয় গিরিশ পার্ক, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর পাড়ায় মার্বেল প্যালেশের ঠিকানা ৪৬, মুক্তারাম বাবু স্ট্রীট, কলি-৭। একসঙ্গে নাখোদা মসজিদ,জোড়া সাঁকো আর মার্বেল প্যালেশ ঘুরে আসা যায় একদিনে। তো যাহোক নিওক্লাসিকাল জানতে গিয়ে পুরো ন্যাজে গোবরে অবস্থা। এটুকুই বুঝলাম এটা হচ্ছে পুরোনো যুগের গ্রীস, রোম, ইটালি ইত্যাদিকার ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর আর্কিটেকচারকে মিলিয়ে ঝুলিয়ে একটা কিছু। দোতলা বিরাট ম্যানসন হতে হবে, যার সামনের দিকে বিরাট বিরাট থাম্বা থাকবে, মাথার উপর ত্রিকোন টাইপ একটা ব্যাপার, যেটা দেখে বিরাট উঁচু একতলা বাড়ী মনে হতে পারে। অন্যদিকে সার সার জানলা , একতলার জানলাদের মাথার উপরে একটুও এদিক সেদিক না করে দোতলার জানালা ইত্যাদি, মোট কথা সে ভারী নয়নসুখ ব্যাপার স্যাপার।
    তখন ঋভু ক্যাম্পে গিয়েছিলো, ঋভুর বাপ সবে ল্যান্ডিয়েছে। তা আমরা প্রাতঃকালীন ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে বেরিয়ে পরলুম, এদিকে যা হয়, ঝগড়া করতে গিয়ে সেটা যে গরম কাল , আর চলেছি কার সাথে সেসব ভুলে গেছি ড্রেস পছন্দ করার সময়(অবিশ্যি সে আমি কোনসময় ই ঠিক করে পারি না, আর তাই ড্রেসরাও আমাকে পছন্দ করে না, সব সময় বেখাপ্পা রকম ভাবে আমার উপর চেপে থাকে)ও ভুল করে একটা ঝুলয়ালা লঙ স্কার্ট পরে বেরিয়ে পরেছি, আর লঙ স্কার্ট দের আমি অত্যন্ত পছন্দ করলেও কে যেন কেন তারা আমার সাথে সর্বদাই শত্রুর মত ব্যবহার করতে থাকে, ভারী অন্যায়।

    সেই বিরাট পুরানো লোহার গেট পেরিয়ে যেই না ভিতরে ঢুকে পরা অমনি ঝপ করে দুশো বছর পিছিয়ে গেছি, এবং অবাক করা ব্যাপার হলো সেই দুশো বছর আগেও আমি একই রকম হাঁ করা রইলাম , আর আমার স্কার্টের সহ্য হলো না, অমনি জড়িয়ে মড়িয়ে পদ্ম চৌবাচ্চার কাছে দুড়ুম করে পড়তে পরতে সামলে নিলাম। কিন্তু আমার এই পড়তে পড়তে সামলে নেবার স্কিলের প্রশংসা লোকে করবে কেন! তারা উল্টে পরে যাচ্ছিলাম এইটাই বড় করে দেখলো। কাজেই আরেকবার ক্যাঁচোর ম্যাচোর, অবশ্য পাত্তা দিলাম না। এদিকে কোথাও গেলেই আমি সেখানকার টয়লেট সম্পর্কে একটু আগ্রহী হয়ে পরি, মতান্তরে সব জায়গায় গিয়েই আগে ছোট বাইরে দৌড়াতে হয়।বুটু, আমার ননদ তো আমাকে নিয়ে পুরো হতাশ, যখন তাকে নিয়ে ইমামবাড়াতে পৌছালাম, তো বলেই বসলো, মাম যেতে হলে ঘুরে আয়, এবং আমি ওকে আশ্বস্ত করে সেখানেও ঘুরে এসেছিলুম, এসে দেখি বেচারি হাল ছেড়ে ধপাস করে বসে আছে। তা আরেকজনের মাথা ঠোকা কেয়ার না করে মন্দিরের গা ঘেঁষে( সেখানে এখন ও পুজো হয়) পুকুরের পার দিয়ে গিয়ে যা দেখিলাম জন্ম জন্মান্তরে ভুলিবো না। সেই আংরেজ আমল থেকে আজ অবধি বোধায় সেখানে কেউ জল ঢালার প্রয়োজন বোধ করে নি। এটা আপনাদের স্বার্থে জানিয়ে গেলুম।
    এই মার্বেল প্যালেশ নিয়ে একটা গল্প আছে। গল্পটা সেদিন আমার এক ছেলের বন্ধুর মা বলছিলো। আমি আর সেই মহিলা, ঋভুরা যখন পরীক্ষা দেয়, তখন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই আর গল্প করি, কারন আমাদের দুজনের ই বাড়ী গিয়ে ফিরে আসতে হলে ঐ বাড়ী পৌছানোটাই সার হবে। ভাগ্যিস স্বপ্না ছিলো, নাহলে একদিন তো আলিপুর মোরের বাস স্টপে বসে গল্পের বই পড়তে হলো। অত কাঁই কিচিরে পড়া যায়!! যাহোক, স্বপ্না বিহারী হলেও বাংলায় বড় হয়েছে, কাজেই দারুন বাংলা বলে আর বোঝে। যেদিন বাস স্টপে বসে ছিলাম, এসেই কি মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি কল্লে? গল্পটা এরকম, ঐ বাড়ীর কোন বৃদ্ধা (সম্ভবত, বাড়ীর মালিকের মা) পুজো করবেন, সেসময় লক্ষ্মী দেবী এসে পড়েন একটি মেয়ে সেজে।মহিলা ওঁকে বসতে বলেন, আর বলেন যে আমি না ফেরা পর্যন্ত তুমি কোথাও যেও না। তারপর তিনি গঙ্গায় ডুব দেন, আর ওঠেন না। কাজেই লক্ষ্মী অচলা হয়ে সে বাড়ীতে থেকে যান।

    মার্বেল প্যালেশে ঢুকতে হয় ঘুরে গিয়ে , সামনের দিক দিয়ে নয়। সেখানে টানা লম্বা বারান্দা , উঠোন থেকে অনেক উঁচুতে। সিঁড়ি দিয়ে সেই বারান্দার গা ঘেঁষে । জুতো বাইরে খুলে রেখে, খালি পায়ে যেতে হয়, অবশ্য মোজা নিয়ে ঝামেলা করবে না, কিন্তু সেই দুশো বছরের সময়কে ছুঁতে হলে সমস্ত দিয়ে ছোঁয়াই ভালো, খালি পায়ে ঠান্ডা মেঝের ইটালিয়ান মার্বেলে হাঁটতে শুরু করলেই আপনা আপনি সময় এর চলন্ত রাস্তা পিছনপানে টেনে নিয়ে যাবে। আর যখন সেই অসহ্য ভালো লাগা পুরানো গন্ধ নাকে এসে পৌঁছাবে , তখন আপনি নেশা হয়ে যাবে। এখানে আছে প্রচুর পুরানো মুর্তি, অসাধারন সব পেন্টিং, দারুন সব ভিক্টোরিয়ান যুগের আসবাব, ডেকোরেটিভ জিনিস, নানান গিফট দেশ বিদেশের, দারুন কিছু ঝারবাতি, বিরাট সব বেলজিয়াম গ্লাস।

    প্রথম ঘরে বিরাট একটা বিলিয়ার্ডস বোর্ড ও আছে। সেখান থেকে ঢুকতে হয় দ্বিতীয় ঘরটাতে। এই ঘরটা কেমন বন্ধ বন্ধ ধরনের। কিন্তু দারুন একটা ছমছমে ঘর। সেখানে বিরাট একটা এক কাঠের মুর্তি আছে, আর আছে ব্রোঞ্জের আবক্ষ মুর্তি। আরো প্রচুর মুর্তি । প্রথম ঘরেও অবশ্য রয়েছে শ্বেত পাথরের বেশ কিছু অসাধারন স্কাল্পচার। এই গোটা বাড়ীটা অনেকটা স্কয়ারের মতন , মাঝখানে উঠোন , যেখান থেকে আকাশ দেখা যায়। চারপাশে বিল্ডিং। এবং ঐ উঠোন ঘিরে দোতলা আর একতলায় টানা চারদিকে বারান্দা। বারান্দায় বেশ কিছু দামী পাখি আছে, তার মধ্যে লাল রঙের একটা বিরাট বিষন্ন ম্যাকাও ও আছে, বেচারীর অত সুন্দর হওয়াটাই খুব দোষের নিঃসন্দেহে। একতলার বেশিরভাগ ঘর ই বন্ধ। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে পেন্টিং গুলোর দশা দেখলে একটু কান্না পেতেই পারে, আর অন্যান্য ঘরেও তাদের যেভাবে আলোকে তুচ্ছ করে রাখা আছে, সেটুকু গিলে নেবেন, সব কিছু একসাথে পাওয়া যায় না মশাই।
    কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো এই যে, কিছুতেই খুব বেশিক্ষন প্যালেশের মধ্যে থাকতে দেয় না, কিরকম হ্যাট হ্যাট করে তাড়িয়ে নিয়ে দেখায়। অত্যন্ত মেজাজ গরম করে বেরিয়ে আসতে হলো। এদিকে এমনিতেই বাড়ী ফেরার কথা মনে হলেই আমার সব সময় মেজাজ গরম হয়ে যায়। কাজেই বেরিয়ে এসে ধপাস করে গেটের সোজাসুজি বিরাট বারান্দায় ছায়ায় বসে পরেছি, যত দেরী করিয়ে দেওয়া যায় আর কি! আর আরেকজন আমাকে এত পড়তে পারে যে আমার বাবা মাকে ফেল করিয়ে দিতে পারে। তিনি আমার পাশে বসে পরে( কেন কে জানে আমি যখন রেগে যাই, তখন বাপ ব্যাটার আরো রাগিয়ে দেবার ইচ্ছে চাপে, নেহাত ই আমি বেশিক্ষন রেগে থাকতে পারি না, তাই তাদের আর শিক্ষে দেওয়া হয় না) হঠাৎ খুব কন্স্পিরেসি করার স্টাইলে গল্প শুরু করলেন, জানিস তো! ঐ যে দেখলি ডান্স ফ্লোরটা চটা ওঠা , কেন জানিস? আমিও না ভেবে বললাম, মার্বেল উঠে গেছে। বললো, আরে না না, শোন না! ওখানে আসলে আয়না ছিলো! আমি খানিক থমকে গেছি, এমা! আয়না কেন গো? সেই বাসন্তির মত কাঁচ ভেঙে নাচ টাচ করতে হত? যাচ্ছেতাই। আরো সিক্রেট কিছু ফাঁস করার মত ভাবে বললো, আরে ধুর! আয়নার উপরে নাচবে তো। আমি আরো ঘাবরে, সেকি, দুটো নাচ, মানে উল্টো আর সোজা নাচ দেখার কি হলো!বক্তা দাঁত কিড়মিড় করে, উফ! ঘাগরার নীচে তো আর প্যান্টু পরতো না, বলে খোলসা করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এদিকে আমি ব্যাপারটা কল্পনা করার চেষ্টা করলাম, মানে এভাবে, ছেলেরা লুঙ্গী পরে, ভিতরে অ্যালপ্যান্টু না পরে আয়নার উপরে নাচছে। এবং কি ভয়ঙ্কর ইয়াকি ব্যাপার হবে ভেবে প্রথমে হেবি ঘাবরে এবং পরে কেবল মেয়েদের সাথেই এই বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার গুলো কেন ঘটবে ভেবে ভীষন রেগে গেলাম এবং বক্তার কার্যসিদ্ধি হইলো।

    ব্যাপারটা হলো আমি জানি যে আমি অ্যাব, কারন আমার এই অদ্ভুত ভাবনাগুলো আসে, অদ্ভুত প্রশ্ন পায় এবং সেসব প্রশ্নকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারি না, দমাস করে , করে ফেলি। কিন্তু আমারো অন্যদের ভারী অ্যাব মনে হয়, যখন দেখি এসব সময়ে খিঁক করে হাসে বা একটু লজ্জা পেয়ে টেয়ে চেপে যায়, বা তাদের ভাবনা চিন্তা, কি বলবে, কিভাবে ভাববে সেগুলো এত ছক এ বাঁধা তাই দেখে, সেটা কিভাবে সম্ভব কে জানে! বলতে কি স্বাভাবিক মানুষদের আমি প্রচুর বাজিয়ে দেখেছি, তাদেরো অদ্ভুত ভাবনা আসে, প্রশ্ন পায়, কিন্তু কেমনে সেসব সামলে রাখে কে জানে! এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পরে গেলো, আমার একবার প্রায় বিয়ে হয়ে যাচ্ছিলো এক দূর সম্পর্কের মামার হনেবালা শালার সাথে, মানে তখন ও মামার বিয়ে হয় নি। তখন আমার আঠারো সবে হয়েছে এবং অবশ্যই আমি তখন মনে মনে দশ বছর ও পেরোই নি। আর সেই ছেলেটি তখন বছর চব্বিশের। এমনিতে সেই মামাবাড়ী আমার দারুন লেগেছিলো, মানুষগুলো মফস্বলের ( হালিশহরকে মফস্বল বললে নিশ্চয় লোকে আমায় তাড়া করবে না) হলেও ভীষন অন্যরকম ভাবনার, আর জায়গাটাও দারুন, গঙ্গার ধারে , মোটা মোটা দেওয়ালের পুরানো পুরানো বাড়ী। তা সেই সময় একবার সেই ছেলেটির সাথে তাদের বাড়ী যাচ্ছি, আমাদের দুজনকেই একসাথে পাঠানো হয়েছিলো, খুব সম্ভবত নিজেদের কোন কথা থাকলে সেরে নেওয়ার জন্য। তো, তখন তাকে হঠাৎ জিগিয়েছিলাম এখানে শ্মশান নেই,সত্যি বলতে কি কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো না, শ্মশানে ঘুরতে আমার বেশ লাগে, কিন্তু বেচারির অবাক, হতবাক কচি মুখখানা মনে পরলে এখন ও হাসি পেয়ে যায়। তবে ছেলে বেজায় স্মার্ট ছিলো, একটু ভেবেই বললো, এখানে জন্মানো থেকে মরে যাওয়া, সব ব্যবস্থাই আছে। এবং আমি আবার ছড়িয়েছি বুঝেই পুরো চুপ হয়ে গেসলুম।

    তো ব্যাপারটা হলো, আগে রেগে গেলেই বলতাম, আমি কিন্তু গান শোনাবো। তাতেই কাজ হতো, তখন আর তাতে কাজ হচ্ছে না। লোকজন কান বন্ধ করতে শিখে গেছে। অনেকক্ষন চোখ লাল করে তাকিয়ে বললাম আমার না ভীষন তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। এদিকে আমার ছেলে আর তার বাপ কেন কে জানে, কিছুতেই আমার উপর ভরসা রাখতে পারে না। বেচারি এই আকস্মিক আক্রমনে অনেকক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে একটা ঢোঁক গিলে বললো, ওরকম লালীর মতন করছিস কেন? বলেই স্যাট করে উঠে হন হন করে নেমে সোজা গেটের দিকে। আমিও চাট্টি গড়াগড়ি খেয়ে হেসে মন ভালো করে ফেললাম।
  • kiki | 53.230.133.166 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:১২642364
  • 1.

    দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়াঃ (অযোধ্যা পাহাড় ও বিষ্ণুপুর)::

    তা আগে ভাগেই বলে দিই , আমার আবার রচনা লিখতে গেলে সূচনাতেই বর্ননার মতন হয়ে যায়, বর্ননা পার্টটা ছোট হয়ে যায়। এসব ভুলত্রুটি দেখিয়ে আমাকে দাবায়ে রাখতে পারবেন না।

    তো যাহোক, আমাদের সেভাবে ঘুরতে যাওয়া হয় না, হবে কেমন করে! আগে থেকে কিছু ঠিক করে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব নয়,(বলে কিনা জীবনটাই এখন ও গুছিয়ে ঠিক করে চালাতে পারলুম না, চাদ্দিকে লোকের ঠিক ঠাক প্ল্যান মাফিক চলা দেখে মাঝে মাঝে সন্দ হয় আমি আর মানকে নির্ঘাত অন্য গ্যালাক্সি থেকে ছিটকে এসেছি, অথচ আমার এই এত বড় আবিস্কার আমার মাঝেই রাখতে হয়, যাই বলি হতচ্ছাড়া চটে ঝগড়া শুরু করে। কে বলে মেয়েরা ঝগরুটে হয়!!) কাজেই আগে থেকে টিকেট কেটে রাখাও হয় না, আর পেলেনে যাবার পয়সা নাই। ( ভগবান বুদ্ধিসুদ্ধি দিলো না যখন, একটু পয়সার দিকটাতো দেখতে পারতো!!) কিন্তু এই একদুমাস পড়াশুনা করে ঋভু আর ঋভুর মা, দুজনের ই পালাই পালাই অবস্থা। কাজেই পরীক্ষা শেষ হতেই কোথায় যাবো, কোথায় যাবো হাহাকার শুরু হলো। এদিকে আমার মা জননী ও বেজায় ঘুরতে ভালোবাসে, কিন্তু বাবা ভালোবাসেনা, আর মা খুব ভালোমানুষ, আমাদের মতন উচ্ছন্নে যাওয়া প্রকৃতির নয়, কাজেই মাকে উচ্ছন্নে পাঠানোর গুরু দায়িত্ব আমাকেই নিতে হয় মাঝে মধ্যে।

    তো ঠিক হলো , মা আমি ঋভু আর পটকা কোথাও একটা বেরিয়ে পরবো, যেখানে ট্রেনের রিজার্ভেশনের বালাই নাই। এবার কোথায় যাবো নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখি অপশন খুব কম হয়ে যাচ্ছে, দক্ষিন বঙ্গের দিকে থাকে জঙ্গল আর জলের জায়গা, দুটোতেই মায়ের আপত্তি। আর উত্তর, পুব , পশ্চিম পানে যেদিকেই চাও, গরম দাপাচ্ছে। মানে যতটা যাওয়া যেতে পারে। আর আমার আবার কিছু চুপচাপ হয় না, সবেতেই হৈচৈ, লোকজনকে অস্থির করা। ফেসবুকে, গুরুতে, যেখানে যেখানে পারা যায় খানিক কোশ্নের ঝড় বইয়ে দিলাম। অত্যন্ত স্নেহপ্রবন বন্ধুরা এগিয়ে এলো, কিছু পাব্লিক খিল্লি করলো(গর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র), ভালো মানুষেরা না ঘাঁটিয়ে এড়িয়ে গেলো। এসব করে গড় পঞ্চকোট স্থির করে ফেললাম একরকম।(কবে থেকে ছকে চলেছি, আজ পর্যন্ত হলো না।) তারপর নেটে খোঁজাখুঁজি শুরু। এ ব্যাপারে, সামরান,সুমেরু, বিশ্বজিৎ বাবু, ঝুমঝুমি আর দুঃখে স্যর ( কতবার বেচারীকে বিছুটি ঘষে দেবার দাবী জানিয়েছি, সো স্যরি) এবং সৌম্যকে অশেষ ধন্যবাদ। সৌম্য বেচারী আমার জন্য (স্কুল থেকেই জানে আমি কেমন তালকানা) ঠিকানা জোগাড় করে, কেমন করে যাবো এমন ভাবে বোঝালো যে চোখ বন্ধ করেও পৌঁছে যাওয়া যায়। আর নেটে দেখলাম ঘরের ডিটেইলস কিচ্ছু বোঝা যায় না, ফোনে ওয়েষ্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট কোন কথা বলতে চায় না, কাজেই পরদিন সরাসরি তাদের অফিসে পৌঁছে গেলাম। ঠিকানাটা আপনাদের জানিয়ে যাইঃ

    6A, RAJA SUBODH MULLICK SQUARE , KOL--১৩

    ধর্মতলায় কেসিদাশের উল্টো দিকের গলি দিয়ে সোজা নাক বরাবর চলে গেলে সুবোধ মল্লিক স্কয়ার পেয়ে যাবেন, স্কয়ারের আগে বাঁ দিকে টার্ন নিন, এবার স্কয়ারের গা ঘেঁষে চলুন, আবার ডানদিকে বেঁকে যান, শেষে (স্কয়ারের) দেখবেন একটা ভ্যাট আছে, তার উল্টো দিকের আখাম্বা বিল্ডিংটা, গভর্নমেন্টের কোন ভদ্রসভ্য দপ্তর হয়না কেন কেজানে! সব আপিস, হাসপাতাল , ইয়া ইয়া জায়গা নিয়ে বসে আছে , কিন্তু সাজানো গোছানো, সিস্টেমেটিক আর হয় না। আর এত এঁকে বেঁকে না চলতে চাইলে চাঁদনিচক মেট্রো স্টেশনে নামুন, সেখান থেকে পুব দিকে (তাইতো?) নাক বরাবর চলুন, স্কয়ার আর ভ্যাট পেয়ে যাবেন, তারপরে চিনে নিন।

    এদিকে সাতাশে বেরিয়ে পরবো, পঁচিশে জায়গা স্থির করে ছাব্বিশে চলেছি হোটেল বুকিং এর জন্য, তার মাঝে গুচ্ছ জমা হওয়া কাজ। মোটমুটি ঘেমে নেয়ে বাসে করে এসপ্ল্যানেড গেলুম, সেখান থেকে এতবার এদিক আর ওদিক করলাম লোককে জিজ্ঞেস করে যে বিরক্ত হয়ে ঐটুকু নাকি ট্যাক্সিতে গেলাম। তারমধ্যে কেয়ার ফোন, সে বেচারী সব শুনে কেমন ঘাবরে গেলো, আমার কাছের সব লোকজন আমাকে কেমন তুশ্চু করে ভাবলে দুঃখু হয়। তারপরেই ঘাবরে সৌম্যকে ফোন( আমার বন্ধু ভাগ্য বেশ ভালো সন্দ নেই, কিন্তু বন্ধুদের আমি ভাগ্য মোটেই ভালো নয়, একেতো কিছুতেই এমনি সময়ে কাউকে ফোন করি না, দরকারেই করি,এত্ত অসামাজিক। আর করেই হুট করে প্রশ্ন করে বসি, তাতে যাকে করা হচ্ছে সে থৈ খুঁজে পায় না, কিছুতেই।)আবার সৌম্য সব রিপিট করতে থাকলো, কিভাবে যাবো। শেষে বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করাতে কি রেগেই না গেলো, এই তো সামনে এতবড় বাড়ীটা দেখতে পাচ্ছেন না, কি করে বোঝাই, আমার অসীম ক্ষমতা! ইচ্ছে মতন বড়সড় জিনিস ও নেই হয়ে যায়।
  • kiki | 53.230.133.166 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:১৫642365
  • 2.

    এবার লিফটে ওঠা মাত্রই লিফ্টম্যান গপ্প জুড়ে দিলেন, দুটো লিফট এখানে আছে, আর দুজন লিফটম্যান ই বেজায় ভালো। নিজেই বল্লেন বুকিং এর জন্য। আজ হচ্ছে, এর আগে লিঙ্ক ছিলো না, আজ আপনার হয়ে যাবে। নাও ঠ্যালা, তাহলে এসেও কাজ হয় না! আর আমার থোবরা এমন অদ্ভুত আর করুন আর কিচ্ছু পারে না টাইপের যে লোকজন যেচে পরে সাহায্য করে দেয়। সেভেন্থ ফ্লোরে পশ্চিমবাংলার বন দপ্তরের অফিস। লিফট থেকে নেমে ডান দিকের গেট। ঢুকেই দেখতে পাবেন সেই চিরাচরিত ছড়ানো ছেটানো অযত্নের বিরাট অফিস ঘর, এদিকে সেদিকে ম্যাপ, ছবি, চেয়ার ডেস্ক কেউ যেন কারোর নিজের জায়গায় নেই। আর এক বাচ্চা মেয়ে একাই অফিস সামলাচ্ছে এবং যারপরনাস্তি কুঁড়ে এবং অকম্মা। আমার কেমন ব্যাঙ্কের বাচ্চা মেয়েদের দেখে ধারনা জন্মেছিলো এরা ওয়ার্ক কালচারটাকে পাল্টে দেবে। কিন্তু এ মেয়েকে দেখে যতদুর হতাশ হতে হয়, তাই হলাম। কয়েকজন বয়স্ক মানুষ (সেকেলে এবং ভালো মানুষ, হালুচালু নয়, কিন্তু স্থির ধীর) আর একজন আমার কাছেপিঠের বয়সী মহিলা ম্যাপ হাতে এদিক সেদিকে বসে আছেন অসীম ধৈর্য্য নিয়ে। আর ভীষন রসিক একজন মানুষ কাউন্টারের সামনের চেয়ারে। সেখানে তার নাকের ডগায় লিঙ্ক ফেইলিওর লেখা একটা বোর্ড ঝুলছে। সেখানে ফেইলিওর এর আই টা জায়গা পছন্দ না করে এদিক সেদিক হয়ে বসে আছে। তিনি সেদিকে মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষন করে বললেন, লিঙ্ক তো এসে গেছে , ভুল বানানের বোর্ড আর না ঝুলিয়ে রেখে তুলে নিন। কে কখন ফটো তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দেবে! বলেই আমার দিকে চাইলেন। কি আশ্চর্য!! আমার মুখেই কি লেখা আছে নাকি যে ফেসবুক আমার ঘরদোর? আর আমার মোটেই স্মার্ট ফোন নেই, প্রায় বলে ফেলতে গিয়েও সামলে নিলাম। এ যে কি দুঃখু, কটা ফোন ভেঙ্গে , হারিয়ে, ছুঁড়ে নষ্ট করে ফেলেছি বলে লোকে কি হ্যাটাই না দিয়েছে, এমনকি মাসকাবারি রেটে কিনতে হলে বাজেট দুহাজারের বেশি উঠবে না বলে প্রানে এত কষ্ট দিয়েছে যে প্রতিজ্ঞা করেছি আর লোকের পয়সায় ফোন কিনবো না। হুঁঃ !

    তা আমার টার্ন (টার্ন আর কি, যে যখন পারছে সামনে চলে আসছে) মেয়েটি একটা ফর্ম এগিয়ে ফিলাপ করতে বললো। তা সেই ফর্ম দেখে আমার জিজ্ঞাসা আরো বেড়ে গেলো, এদিকে সে মেয়ে উত্তর দিতে চায় না, বলে কিনা নেটে দেখে আসেননি? যেন দুনিয়াশুদ্ধু সব লোকের নেট দেখার অবাধ সুবিধা আছে। তারপর নানান হ্যাঁচোরপ্যাঁচোর করে যা বুঝলাম, সেটা এই রকম, আমায় একদিনের জন্য একটা আড়াইহাজারি দুই বেড রুমের ঘর দিতে পারে, তাতেই চারজনকে সেঁটে যেতে হবে, এবং পরের দিনের ব্যবস্থা সম্পর্কে কবি নীরব, আর বাকি দুইজনের এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে। বলেই তিনি আমায় ধন্য করলেন। মজা নয়, অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করেছি এদের অভদ্র আচরনের। তার মধ্যে একজন শলা দিলেন, আরে যা পাচ্ছেন নিয়ে নিন, সেখানে অনেক হোটেল আছে, গিয়ে খুঁজে নেবেন পরের দিনের জন্য। আরো মেজাজ গরম হয়ে গেলো। দুচ্ছাই বলে আবার লিফটে, আর আবার লিফটম্যান মুস্কিল আসান হয়ে দেখা দিলো। নেহি হুয়া? সব নেটসেই বুকিং কর লেতে, আপ চলিয়ে না, নাইন্থ ফ্লোরমে দুসরা অফিস হ্যায় না, গরমেন্ট কিই তো, ও ভি। বোঝো! প্রায় হাত ধরে পারলে নিয়ে যায়, গিয়ে আরেক ফাইল আর ধুলো বোঝাই অফিসে আর এক সাজুগুজু দিদিমনির সামনে, ইনি আমাদের বয়সী বা সামান্য সিনিয়র হতে পারেন, মোবাইলে গল্প করে চলেছেন, বেজায় মেজাজ খিঁচড়ে গেছে তখন।তিনি অবশ্য আমায় বসতে বললেন, আর তারপর ফোন কেটে কথা শুরু করলেন, এবং বলতে বাধ্য হচ্ছি যে ইনি আবার আশার আলো দেখালেন।

    এখানে কেবল অযোধ্যা পাহাড়ের বুকিং ই হয়। আমার তখন যা পারছি আঁকড়ে ধরি টাইপ অবস্থা, ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, দুটো বাচ্চা (ঋভু শুনলেই খচে উঠবে) আর একজন বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে যাবো, সেফ তো? গরম কেমন? উনি জানালেন, একদম সেফ আর আগের সপ্তাহেই উনি ঘুরে এসেছেন, গরম তেমন নেই। আরো বললেন, আমাদের স্টাফেরা খুব ভালো, আপনার কোন অসুবিধাই হবে না। ( প্রসঙ্গতঃ বলে যাই, যেদিন অযোধ্যা থেকে ফিরছিলাম, অর্থাৎ কিনা ঊনত্রিশে এপ্রিল, সেদিন এইসময়ে একটা খবর দেখলাম, অযোধ্যা পাহাড়ে বিয়াল্লিশ হাজার বছর আগে মানুষের বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। কাজেই শিগ্গিরি ঘুরে আসুন সবাই , এরপরে হয়তো সেভাবে অত সহজে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।) ভদ্রমহিলার নাম খুব সম্ভবত তন্দ্রা চক্রবর্তী, আপনারা ঐ অফিসে গেলে ওনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন, অসম্ভব ভদ্র এবং সাহায্য করতে আগ্রহী মানুষ। কিন্তু ওখানে কার্ডে পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই। ওহো! এখানে রুমের চার্জ ও অস্বাভাবিক কম। প্রথম দিনের জন্য নীহারিকাতে( এখানে একমাত্র সরকারী এই রিসোর্ট টিই আছে আর তাদের দুটো বিল্ডিং, নীহারিকা ও মালবিকা) দুটো রুম পেলাম, একটা এসি টু বেড রুম (চার্জ আটশো টাকা) আর একটা থ্রী বেড রুম ( অ্যাটাচ বাথ নেই, ঘরের বাইরে ব্যবস্থা, তবে সেফ এবং সার্বজনীন নয়, মানে সবাই ব্যবহার করতেই পারে, কিন্তু সব ঘরেই অ্যাটাচ বাথ বলে কেউ করে না, চার্জ পাঁচশো টাকা) , পরের দিন কেবল থ্রী বেড রুম টা থাকবে। কি আর করা, অ্যাটলিস্ট তিনজনের শোবার ব্যবস্থা তো থাকবে, আর পটকা এখন ও কুঁচি গ্রুপে আছে। এই গরমে লোকে ওদিকে যেতে বারন করছিলো, ওদিকে সেখানে দলে দলে লোক চলেছে। যাহোক আবার এটিএমের খোঁজে , আবার লিফটম্যানের সাহায্য ( অন্য লোক) আর নেমেই আবার সৌম্যকে জ্বালানো, মাকে জিজ্ঞাসা, ইত্যাদি করে গিয়ে রুম বুকিং এর কাজ সারা করে দেখলাম হাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা আছে। এরমধ্যে কেনাকাটা, জিনিস গোছানো, রাতের ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রভুত কাজ জমে আছে। তখন সেই ছোটবেলার কথা মনে পরলো, স্টেট কম্পিটিশন, উদমা খাটাচ্ছে গ্রুপে, ক্লাস, নানান মডেল তৈরী, লাষ্ট মিনিটে গ্যাজেটের প্ল্যান বাতিল, নতুন গ্যাজেট বানানো শিখে নেওয়া, বাড়ী গিয়ে স্কুলের পরীক্ষার পড়া , সব গোছানো, তখন জিভ বের করে হাঁফাতে ইচ্ছে করছে, হঠাৎ জয়ন্ত বললো, ওফ! বাড়ী গিয়ে সব ভুলে ঘুমিয়ে পরতে হবে। আমিও সেটাই মনে করে বাড়ী এসে চারিদিক লন্ডভন্ড রেখে ঘুমিয়ে পরলাম, বিকেলে দেখা যাবে, এই ভেবে।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ১৮:৩৩642366
  • বাঃ
  • kiki | 53.230.133.156 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২১:৪৭642367
  • 3.

    বুকিং হয়ে গেলেই আপনাকে একটা সুন্দর দুপাতার লিফলেট দেওয়া হবে, যাতে একটা সুন্দর ছড়া লেখা আছেঃ

    পলাশ, শিমুল, ধামসা,মাদল
    কন্ঠে টুসুর গান
    লালমাটি ওই হাতছানি দেয়
    সবারে আহ্বান।।

    আর ভিতরে প্রথম পাতায় রয়েছে পুরুলিয়ার ম্যাপ, অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে পিঠে আপনি কি কি দেখতে যেতে পারেন আর ধর্মতলা থেকে অযোধ্যা যাবার বাসের টাইমিং ও ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের ফোন নাম্বার।

    দ্বিতীয় পাতায় ট্রেনের ডিটেইলস, পুরুলিয়া থেকে অযোধ্যা যাবার বাসেদের ছাড়ার সময়, পৌঁছানোর সময়, আর কার রেন্ট করলে তাদের ফেয়ার কি হতে পারে। মোটকথা সে ভারী গোছানো ব্যাপারস্যাপার। আর শেষ পাতায় নানা কিছুর সাথে রিফান্ডের নিয়মগুলো দেওয়া আছে, সেটা এরকমঃ

    পনেরো দিনের বেশি দিনের আগে জানালে -- ৭০%
    সাত থেকে পনেরো দিনের ক্ষেত্রে -- ৫০%
    চার থেকে সাত দিনের ক্ষেত্রে -- ২০%
    তিনদিনের ভিতরে কোন রিফান্ড নেই।

    মাঝরাতে উঠে পরতে হলো, তখন রাত সাড়ে তিনটে। মা মনে হয় সারারাত ই ঘুমোয় নি , দুই নাতিকে আগলাতে গিয়ে। আমার মায়ের কি যে অগাধ মায়া আর ধারনা নিজে কষ্ট করলেই বাকিদের ঠিক রাখা যাবে, ফল এই আমরা মাকে সামলাতেই বেশি হিমসিম হই। কোনোক্রমে আমি নিজের গলা চড়িয়ে মাকে থামিয়ে চটপট স্যান্ডুইচ বানিয়ে সেগুলো ফয়েলে প্যাক করতে করতে ডিম সিদ্ধ করে নিয়ে, জল ভরে , লাগেজদের এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে কি ভুলছি ভাবতে ভাবতেই দেখি সাড়ে চারটে বেজে গেলো। এবার দুটোকে, ওরে ওঠরে, টয়লেটে যারে, মুখ ধোও রে,দাঁত মাজো রে(সব কিছু বলতে হবে, নইলে যেটা বলা হবে না, সেটা না করে দিব্যি তুমি তো বলো নি , বলে আমার ঘারে ঠেলে দেবে) করে তাদের রেডি করা হলো। আর মুস্কিল হলো পটকাটা একেই ছোট্ট , তার উপর মা বাবাকে ছেড়ে চলেছে, কাজেই তার প্রতি পক্ষপাতিত্ব বেশি আসবেই, আর তাতে আমার ধেড়ের আবার ঠোঁট ফুলবে তুমি তো ভাইকেই বেশি ভালোবাসো বলে, সেসব ও মাথায় রাখতে হবে। শেষে আমি যখন স্নানে ঢুকলাম তখন দেখি পাঁচটা বাজবো করছে আর ট্রেনের টাইম দেখেছি ছটা পাঁচ(রূপসী বাংলা, সাঁতরাগাছি থেকে পুরুলিয়া)।

    এবার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, ট্যাক্সি পাওয়া। এই সকালে কেউ যেতে চাইবে না, চাইলে ডাবল টাকা চাইবে। এবং দুঃসময়ে বোঝা গেলো মেরু ক্যাব বা ওলে , কেউ ই ঠাকুরপুকুরের জন্য বাজারে আসেনি। বাসেরাও টুকটুক করে চলে যাচ্ছে এবং বাস দেখা গেলেই ঋভু অন্যকাজে ব্যস্ত হয়ে পরছে, স্বাভাবিক। এইসময় বিবেক , মেয়ে আর তার মাদার ইন ল কে নিয়ে দেখি রাস্তা পার হচ্ছে, আর আমি এই বিবেক বলে হৈচৈ জুড়ে দিয়েছি, এই বুড়ো বয়সেও বন্ধুদের দেখলে আমাদের লাফালাফি থামে না, আর ঋভুদের দেখি কি কুল থাকে। তার মধ্যে একটা ট্যাক্সি এলো আর সে রাজি হয়ে গেলো, সামনে কে একটা বসে আছে, আর সেসব পাত্তা না দিয়ে হুড়মুড় করে চারজনে মিলে পিছনে ঠেসে বসে গেলাম , ভগবানের দেখা পেলে অমন একটু হয়, তার মধ্যে বিবেকদের টাটা করে চলেছি, হঠাৎ দেখি ট্যাক্সি চেতলা টেতলা পেরিয়ে চলেছে, মা প্রথম ব্যাপরটা খেয়াল করেছে, কি হলো! কোথা দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে দেখি সামনের লোকটা( এতক্ষন ভেবেছিলাম হেল্পার হবে, পরে বুঝলাম মালিক টালিক হবে) বেজায় মজা পেলো, অত্যন্ত ব্যঙ্গ করে আমাদের রাস্তা চেনাচ্ছেন, ততক্ষনে এক্সাইডের দিকে এগোচ্ছি, মেজাজ গরম হয়ে গেছে, মা অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বললো, না রাস্তা চিনি, কিন্তু আমরা তো এদিকে যাবো না, তখন জানা গেলো লোকটাকে শিয়ালদা নামিয়ে আমাদের সাঁতরাগাছি পৌঁছানো হবে, এদিকে মিটার কিন্তু চড়ছে, সে থেমে নেই। রাস্তায় ট্যাক্সি ও দেখছি না, আর নেমে যাওয়ার ও সাহস পাচ্ছি না।

    তারপর অদ্ভুত খেলা শুরু হলো, শিয়ালদা ব্রীজের আগেই লোকটাকে ট্যাক্সিওলা নেমে যেতে বললো, কিন্তু সে নামবে না, তার নাকি অনেকটা হাঁটতে হবে । তারপর নেমে ভাড়া টাড়া না দিয়ে চলে গেলো। বাধ্য হয়েই জিজ্ঞেস করলাম( তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা) ভাড়াটা কি পুরোটাই আমাকেই দিতে হবে? এতটা তো আমার ঘোরার ছিলো না। তাতে শুনলাম নাকি হাফ ভাড়া দিতে হবে। সে যাহোক , ভালো কথা। এবার মানে মানে সময়ে পৌঁছে দিলে হয়। হাওড়া ব্রীজের কাছে গিয়ে দেখি গাড়ী ধাঁ করে স্ট্রান্ড রোডে ঘুরে গেলো, তখন রাগে কথা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর ছটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি।এবং রাস্তা জ্যাম ,গাড়ী দাঁড়িয়ে গেলো, তখন জিগিয়ে জানলাম আমরা আবার সেকেন্ড ব্রীজের দিকে নাকি চলেছি, বললাম হাওড়া দিয়ে নিলে না কেন? সঙ্গে সঙ্গে মাঝরাস্তা থেকে আবার হাওড়া ব্রীজে ফিরে চললাম আর যথারীতি স্টেশন চত্ত্বরে ফেঁসে গেলাম, তখন দশ মিনিট বাকি ছটা বাজতে। এবার সেকেন্ড ব্রীজ পেরিয়ে দেখি সোজা হাইওয়ে দিয়ে চলেছি, কোথায় যাচ্ছি বলোতো জিগিয়েই ফেললাম , আর এদিকের রাস্তা আমি মোটে চিনিনা। তখন দেখি সেও চেনেনা। এদিকে মাঝরাস্তা দিয়ে গাড়ী ঘুরিয়ে আবার ফিরতে চাইছে, সেখানে গুচ্ছের বড় বড় কন্টেনার বডি ফেলে বসে আছে, তখন এক সার্জেন্ট ছুটে এসেছেন। শেষে সেই সার্জেন্ট ই সাহায্য করলেন। অবশেষে যখন স্টেশন পৌঁছালাম তখন ছটা পাঁচ। তার উপর স্টেশন চত্ত্বরের দাদারা ট্যাক্সি ঢুকতে দেবে না, তাদের দাবী ঢুকলে এক্স্ট্রা ত্রিশ টাকা নাকি পার্কিং চার্জ দিতে হবে, ট্যাক্সি নিয়ে ঢুকলে কেন পার্কিং চার্জ দেবো তা অবশ্য বুঝিনি। কাজেই আমার মত আকাট জনতা সাবধান। সকালে ট্যাক্সি চড়তে হলে ভেবে বুঝে চড়বেন। তখন এত রেগে গেছি যে নেমে ট্যাক্সিওলাকে জিজ্ঞেস করলাম কত দেব বলো? সে মাত্র পঞ্চাশ টাকা কমিয়ে বাকির দাবী জানালো, এদিকে শিয়ালদা পর্যন্ত অলরেডি দুশো পাঁচটাকা উঠে গেছে। এত রাগ হয়ে গেলো যে হাফ টাকা দিয়ে গট গট করে চলে গেলাম। পরে ট্রেনে বসে অবশ্য খুব মন খারাপ হলো।

    আর ট্রেনের কাউন্টার থেকেই টিকেট কাটবেন। তাড়ার জন্য কম্পিউটার থেকে (তাইতো? নাকি!) যে টিকেট কাটা হয় , সেখান থেকে কেটে ছুটে গিয়ে ট্রেনে উঠে (তখন জানলাম ছটা পঁচিশে ট্রেন) দেখলাম আমার সত্তর টাকা ফেরানোর, ফিরিয়েছে ত্রিশ। পরে ফেরার পথে কমপ্লেন করে জানা গেলো, যে কি এক ট্যাক্স নাকি কেটে নিয়েছে, যেটা কাউন্টারে কাটলে কাটা হয় না।
  • kiki | 53.230.133.156 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২১:৫২642369
  • ধন্যযোগ অভ্যু।
  • sumeet | 102.99.139.40 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:৩৬642370
  • এতো খুব ভালো ট্যাক্সি ওয়ালা, খামোকাই লোকে কলকাতার ট্যাক্সিকে গাল দেয়।
    লেখাটাও ভালো হচ্ছে।
  • নির | 230.226.2.57 | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৩642371
  • কিকি না হয়ে কাকা হলে ট্যাক্সিওয়ালার ব্যবহার একইরকম থাকত কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে (ডি: সেক্সিস্ট কমেন্ট নহে; সবাইকে ঘাঁটায় না তাই বলা হচ্ছে)। বেশ কিছু ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স আছে তো। তবে সামান্য কিছু ভালো মানুষ এখনো রয়েছে, সে তো ঠিকই।
    কিকি কে বলি কলকাতায় উবের-এর ক্যাব ব্যবহার করতে পারেন। বেশ ভালো সার্ভিস। ভাড়াও কমিয়ে দিয়েছে।

    এর পর কি হলো?
  • byaang | 132.178.253.26 | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৪642372
  • লেখাটা এগোও না বাপু? বড্ড বাজে স্বভাব, মাঝরাস্তায় পাঠককে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কেটে পড়া। লেখাটা ভালো হচ্ছে খুব।
  • Nina | 83.193.157.237 | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৭:১৯642373
  • কই লেখাটা এগোবে তো নাকি ঃ-০
  • kiki | 53.230.133.6 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৭642374
  • 4.

    কু ঝিকঝিক ট্রেন চলেছে। পরের পর জেলা পার হচ্ছি, হাওড়া, মেদিনিপুর, বাঁকুড়া আর ক্রমশ মাটির রঙ গাছের ধরন পাল্টাচ্ছে। মাটির রঙ ফিকে নরম থেকে গাঢ় লাল আর গাছ ও চিকন সবুজ থেকে কিছু রুক্ষ ধরনের হয়ে দেখা দিচ্ছে। সবুজ ঘন আরো। লোকজন প্রচুর গরমের ভয় দেখালো। অথচ যত যাচ্ছি, মেঘ তত ঘন হয়ে আসছে। এমনকি চাট্টি বৃষ্টি ও হয়ে গেলো। বিষ্ণুপুর এসেই মনে হলো, এখানে তো যাওয়ার ছিলো। যাগ্গে পরে হবে কখন ও।

    দু ভাই সমানে অধৈর্য্য হয়ে পরছে। একজনের পি এস পি -র চার্জ শেষ হয়ে গেলো। বড়জন যে কি ভাগ্যে এ যাত্রা পি এস পি কে রেহাই দিয়ে একটা বই নিয়ে চলেছে, অ্যানার ডায়েরি। সেটা সেই এইট থেকে পড়ার চেষ্টা চলেছে, এর মধ্যে গুচ্ছ উইম্পি কিড , আর রাশি রাশি অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু অ্যানার ডায়েরি, মেন ক্যাম্ফ, এরা যেমন কে তেমন পরে রয়েছে। আর এই বইগুলো নিজেই কিনেছে। কিন্তু তিনি কানে হেড ফোন গুঁজে থাকলেন। যতবার এদের বাইরে তাকাতে বলি, আমাকে এলিয়েন হেন জ্ঞান করে আমার দিকে তাকায়। এমনি করে আদ্রা পেরিয়ে গেলাম, তখন বুঝলাম আর দেরী নেই। পুরুলিয়াতে নেমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আর তখন ই মা ঘোষনা করলো (আগেও বলেছিলো, আমার আবার মনে থাকে না) মায়ের অশোক ষষ্ঠি না কি যেন আছে, কাজেই আজ নো ভাত। যাব্বাবা!! লোকজন এত বারব্রত মনে রাখে কি করে! যত বলি পুজো আচ্চা বাদ্দাও, জীবন দেখবে অনেক সিম্পল হয়ে গেছে। শুনলে তো।

    স্টেশনে দুটোই খাবার দোকান আছে। গা ঘেঁষে। ট্রেনেই লোকের সাথে গল্প করে জেনে নিয়েছি এখানে সরকারি বাস ছাড়াও প্রাইভেট বাস ও প্রচুর আছে। আর সৌম্য বলে দিয়েছিলো, লাঞ্চের কথা আগেই জানিয়ে দিতে হয়, নইলে ব্যবস্থা থাকে না। তালেগোলে তাও জানানো হয়নি, কাজেই স্টেশনেই লাঞ্চানো গেলো। অসম্ভব কম দামে পুরুলিয়ায় খাবার পাওয়া যায়। একটা নিরামিশ সেট মিল থাকে, যেটা স্টেশনে মনে হয় চল্লিশ, নিহারিকাতে ত্রিশ আর অযোধ্যা পাহাড়ে বাইরে সাতাশ। এরকম কিছু। তাতে ডাল , ভাত, সব্জি এসব থাকে। এবার মাছ, ডিম নিলে আলাদা দাম। চাল মোটা , কিন্তু সহজে হজম হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, এখানে এখন ও ফাস্টফুডের খুব প্রচলন দেখলাম না আর মানুষের ভুঁড়ি ও। মোটা মানুষ সেভাবে চোখে পরেনি(লোকাল) , সবাই শক্তপোক্ত শরীরের। আর পুরুলিয়া ভীষন ভালো লাগলো, তাদের আপ্যায়ন দেখে। এখানে যারা খাবার সার্ভ করছিলো, পয়সা দিতে গিয়ে দেখলাম ওরা টিপস নেয় না, পটকাকে আদর করে, ওকে মিষ্টি কিনে খেতে বলে তা ফিরিয়ে দিলো।

    স্টেশন থেকে গাড়ী পেয়ে যাবেন। সুমো ই বেশি। তারা অনেক চাইবে কিন্তু হাজারে রাজি হয়ে যাবে। আর আমাদের মতন সাধারন মানুষ হলে বাসে যেতে পারেন।সেক্ষেত্রে রিক্সা চড়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে যান। রিক্সায় ত্রিশ টাকা ভাড়া, কিন্তু সেটা ঐ লাগেজ দেখলেই চল্লিশ হয়ে যাবে। বাসের ভাড়া ত্রিশ টাকা পার হেড। আমরা সব সময় আমাদের লাগেজ গুলো বাসের পেটে চালান করে দিতাম। এ ব্যাপারে কনডাক্টর বা খালাসী (তাইতো বলে?) রা খুব হেল্প করতো, কোন বেশি পয়সা তার জন্য দিতে হয়নি। বাসে দেখবেন হাঁড়ি, কড়া, মুরগী সব ই যাচ্ছে। ঘাবরাবেন না। তাদের মালিকরাই সামলে রাখবে। তাও তো , একবার ছোটবেলায় মামাবাড়ি যাবার সময় বাছুরকেও বাসে চড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি, ছাগল ও। এখানে তেমন কিছু দেখলাম না। বাস কিছুদুর যাবার পর ই দেখতে পাবেন পাহাড় । পাহাড় দেখেই পটকা ভয়ঙ্কর উত্তেজিত। মামনি ওখানে কি বরফ পরবে? ঠাম, আমরা কি ওখানে উঠবো? এই ঋভুদাদা দেখো , দেখো পাহাড়। আর ঋভু গম্ভীর হয়ে তাকে ধমকে চলেছে, বসে পর। দাঁড়িয়ে আছিস কেন? অথচ পটকা ছোটবেলায় কাশ্মীরে কাটিয়ে এসেছে, বেচারীর তা মনেও নেই। পটকার মামনি ও বেজায় উত্তেজিত। ঋভু দেখ বাড়ীগুলো কি দারুন দেখতে। দেখ দেখ কেমন ঘন, ঠাঁস মাটি দিয়ে দেওয়াল বানানো, দেখেছিস হাঁড়ি দিয়ে পায়রার বাসা। ঋভু গম্ভীর আর ঋভুর দিদান টেন্সড। কোথায় চল্লাম, ইত্যাদি।তার মধ্যে জানলার কাঁচ সরানো নিয়ে ঝগড়া তো চলছেই দুই ভাইয়ের।

    এবং অবশেষে আমরা গন্তব্যে পৌঁছালাম আর মন ভালো হয়ে গেলো। কি বিরাট জায়গা নিয়ে তৈরী এই ব্যবস্থা। দুটো বিল্ডিং বাদ দিলে সবুজ আর সবুজ। বিরাট সব গাছের নীচে দারুন সব বসার জায়গা, বাগান। যদিও নীল সাদায় ছোপানোই বেশি। আর রয়েছে রাজহাঁস, খরগোশ। দুইভাই খুশ হয়ে গেলো। আমরা ফরমালিটিস সেরে ঘরে চলে গেলাম। দারুন ঘর। বিরাট উঁচু সিলিং, খোলামেলা, পরিস্কার। টু বেড রুমের এসি ঘরে বেশ বড় অ্যাটাচড বাথ আর লাগোয়া একটা ছোট ড্রেসিং রুম, আর দারুন একটা ব্যালকনি। সেখানে বসে দেখতে পাবেন পিছনের বিরাট চাষের জায়গা। মনে হয় এখানে রান্নার অনেক কিছুই এই জমি থেকেই আসে। আর যতদুর চাইবেন কেবল প্রকৃতি। আর থ্রী বেডরুমের ঘরটাও বেশ বড়, কিন্তু অ্যাটাচড বাথ নেই, সেটা বাইরে। তবে সেক্ষেত্রেও সেটা অন্য কেউ ব্যবহার করবে না, আর পরিস্কার ও। সব থেকে বড় কথা জায়গাটা সেফ, ভয়ের কিছু নেই। বেশ চওড়া করিডোর, সিঁড়ি।সব ই বেশ পরিচ্ছন্ন। আর দুটো করে দরজা , জানলা আছে। একটা সেটে নেট লাগানো। ফলে হাওয়া আসবে, মশা বা পোকা আসবে না। আমরা বিকেলের জন্য পকোরার অর্ডার দিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম। এখানে সার্ভিস একটু ঢিলে, তবে বার বার বললে এরা কিছু মনে করে না।
  • kiki | 53.230.133.6 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৮642375
  • পড়ার জন্য সবাইকে থেঙ্কু।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৭642376
  • বেশ লাগছে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৫642377
  • খাসা হচ্ছে কিকিয়া --- আমাকে তোর সঙ্গে একবার কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবি পিলিজ
  • kiki | 53.230.133.194 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৪৬642378
  • 5.

    ব্যাপারটা হলো, আপনারা খুব হাসবেন জানি, কিন্তু সত্যের খাতিরে বলতেই হবে, আমি কোথাও যাই যখন, তখন ডিটারজেন্ট পাওডার, জামাকাপড় টাঙানোর দড়ি, ক্লিপ সব সাথে করেই নিয়ে যাই, কেবল মাত্র ফিরে আসার দিন ছাড়া বাকি দিনের অপরিস্কার সারাদিনের ঘেমো জামা পাট করে বা প্লাস্টিকে মুড়ে ব্যাগে পুরতে আমার ঘোর আপত্তি থাকে। এ ব্যাপারে মানকের বক্তব্য হলো, আমি নাকি পারলে লোকজনের গা থেকে জামাকাপড় টেনে নিয়ে কেচে ফেলি , মানে বাতিক এই পর্যায়ে। তো কথাটা হলো, সবে কেচে সব মেলে আবার ঘুরতে বেরিয়ে পরবো, এইসময় ফুল পল্টন নীচে রাজহাঁস আর খরগোশের দিকে ধেয়েছে আর মা তাদের সামলানোর বৃথা চেষ্টায়, কোত্থেকে কাল বৈশাখী ধেয়ে এলো। আবার সবাই ঘরে। আর ঝড় হলেই আমার মোটেই ঘরে ভালো লাগে না। পটকা বেচারী ভয়ের চোটে চোখ ঢেকে শুয়ে পরেছে, তখন ই ঝপ করে পাওয়ার চলে গেলো। সেই সুত্রেই জানলাম যে ঝড় বৃষ্টির সম্ভবনা দেখলেই পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ করে দেওয়া হয় পাহাড়ে, পরদিন সকালে আবার সেটা চালু হয়। এখানে জেনারেটর চালানোর সময় হলো সন্ধ্যে ছটা থেকে রাত এগারোটা। আর এমনিতে বললেই হারিকেন দিয়ে যাবে, তাও নিজেরা টর্চ, দেশলাই বা লাইটার আর মোমবাতি নিয়ে যাবেন অবশ্যই। আমাদের দুদিন ই ঝড় বৃষ্টির পাল্লায় পরতে হয়েছিলো। এখানে টাওয়ার কেবল এয়ারটেল আর ভোদাফোনের মনে হয় থাকে, তাও থ্রী জি নেটওয়ার্ক যাদের আছে। এটাও মাথায় রাখা ভালো। কারন আমাদের সব মোবাইল ই মৃত হয়ে গেছিলো, বাড়ীর লোক বেশ চিন্তায় পরে গিয়েছিলো, পরে ওখানকার স্টাফদের অনুরোধ করে বাড়ীতে খবর পাঠাই।

    কিছু স্থানীয় লোক বসে থাকে রিসেপশনের ঘরে, তারাই আশে পাশের ঘোরার ব্যবস্থা করে দেবে। সুমো পাওয়া যায়। প্যাকেজ নেয় হাজার টাকা। খুব বেশী কিলোমিটার নয়, কিন্তু অন্য কিছু ঘোরার জন্য পাওয়া যায় না ,রিক্সা বা অটো ধরনের। আমরা রাত্রের খাবার অর্ডার দিয়ে পরের দিনের ঘোরার ব্যবস্থা করে নিলাম। ততক্ষনে ঝড় বৃষ্টি খানিক থেমেছে। কিছুটা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম। দারুন ওয়েদার হয়ে গেছে। পুরো সময়টা গরমে একফোঁটা কষ্ট পাইনি, ভাগ্য পুরো সাথে ছিলো বলতেই হবে। এখানে রান্না হয় কাঠের আঁচে, সেও এক দারুন ব্যাপার। আর যদি আপনি আশপাশ থেকে দিশি মুরগী বা কিছু কিনে আনেন, সেটাও রেঁধে দেবার ব্যবস্থা আছে। প্রসঙ্গতঃ এখানে পোল্ট্রির মুরগী ব্যবহার হয়, দাম ও খানিক বেশি লেগেছে আর স্বাদ ও কলকাতার মুরগীদের মতই জঘন্ন্য। অথচ শান্তিনিকেতনে, ক্লাব মোরে কিছু আদিবাসী চালিত খাবারের দোকান আছে, একটা কি হিন্দু হোটেল বা শুধুই হিন্দু হোটেলে প্রতিবার ই গিয়ে খেয়েছি,সেখানেও খাবারের দাম খুব ই কম, রান্নাও কাঠের আঁচে, লোহার কড়াইয়ে আর মনে হয় দেশি মুরগী রান্না করে, দারুন স্বাদ হয় তার।( কি মুস্কিল! মনটা আবার শান্তিনিকেতন শান্তিনিকেতন করে ডাক ছাড়ছে)

    পরদিন একটা হেবি ব্রেকফাস্ট নিয়ে আমরা বেরিয়ে পরলাম। সুমো চালাচ্ছিলো একটা বাচ্চা ছেলে, আর ভীষন কেয়ারিং ধরনের। সবসময় আমাদের গার্ড করছিলো, মা আর পটকার তো পুরো দায়িত্ব নিয়ে নিলো সে।
    আমরা প্রথমে গেলাম মার্বেল লেক এ। চারিদিকে পাথরের উঁচু দেওয়ালের মাঝে ছোট একটা টলটলে জলের লেক। একদম একলা। সেখানে আবার ইকো হচ্ছিলো। কাজেই কুঁচোরা বেজায় খুশী। তারা আবার কিছু কালো পাথর কুড়োলো, সেগুলোতে মাইকা বা এমন কিছু ছিলো যা চকচক করছিলো। মা ও কি যেন পাথর কুড়িয়ে ব্যাগে পুরলো দেখলাম। আমার মায়ের ভিতরেও যে একটা পুঁচকে মেয়ে ছিলো, যে সবসময় সংসারের চাপে চুপটি করে লুকিয়ে থাকে , সুযোগ বুঝে সেও বেরিয়ে পরেছে।

    তারপর গেলাম বামনি ফলস এ। এখানে উপর থেকে যদি দেখেন তো খুব ঠকবেন। ঝির ঝির করে এদিক ওদিক যাওয়া খানিক জল দেখা যাবে। কিন্তু প্রাকৃতিক সিঁড়ি বেয়ে নামলে বেশ ছিমছাম মিষ্টি একটা ঝড়না দেখা যাবে।

    এরপর আরেকটা ছোট ফলস, নাম ভুলে গেছি সেখানে যাওয়া হলো। আর তখন গরম লাগতে শুরু করেছে।সুমো চালক ছেলেটি জানালো পুজোর সময় এখানে আসলে দারুন ভালো লাগবে আর আমরা যেমন বাড়ীতে আত্মীয়রা এলে আবার আসতে বলি, সেভাবে সবাইকে বারে বারে আসতে অনুরোধ করতে লাগলো। এটা ফেরার সময় ও দেখলাম। ঠিক মনে হলো কোনো আত্মীয় বাড়ী বেড়াতে গেছিলাম। এই অনুভূতি ভুলতে বসেছিলাম প্রায়।
  • kiki | 53.230.133.194 | ১২ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৫৬642380
  • অভ্যু, দিদিয়া,
    ধন্যযোগ। ঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন