এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এখানেও থাক

    kiki
    অন্যান্য | ১৫ জুন ২০১৪ | ৭৫২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PM | 233.223.159.253 | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ১১:০০642479
  • ভালো লাগছে। ব্যন্ককেও এক বিখ্যত এমরেল্ড বুদ্ধ র মন্দির আছে। এক-ই কাদা মাখানোর গল্প-ও আছে।
  • kiki | 127.194.64.28 | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৫৬642480
  • থেঙ্কু সবাইকে। ঃ)
  • সে | 203.108.233.65 | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ১৩:১৬642481
  • এই পড়ে উঠলাম। অসাধারন। পুরো ছবির মতো।
  • kiki | 122.79.39.95 | ০৮ আগস্ট ২০১৪ ০৮:০৯642482
  • সে,
    থেঙ্কু। ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ২২:৪০642483
  • ২৯। হো চি মিনে ফিরে বলার মতন দুটো ইভেন্ট আর রইলো, এক ড্যুকের বাড়ী নিমন্ত্রন আর দুই জ্যাঙের বাড়ীর।

    ড্যুক আসলে উত্তরের মানুষ, ব্যবসার জন্য হো চি মিনে রয়েছে, তবে এবার ওর বউ তার ব্যবসা গুটিয়ে ছেলেকে নিয়ে হো চি মিন চলে আসছে, তাই ও একটা ফ্ল্যাট কিনেছে, সেটা অবশ্য অনেক দুরে শহরের প্রান্তে। আমরা একদিন গেলাম সেখানে। তখন ও ফ্ল্যাট গোছানো হয়নি। বৌ ও আসে নি। কাজেই সে বেজায় অন্যরকম ব্যবস্থা হলো। মাটিতে কাগজ পেতে তার উপরে সব খাবার রেখে। আর এখানে টিস্যু আর দাঁত খোঁচানোর খরকে কাঠি না পেলে ভিয়েতনামিসরা মনে হয় পেগলে যায়, তাই যা ব্যবস্থা হোক না কেন ঐ দুটো ব্যাপার তো থাকবেই। তো সাধারন দোকানে টয়লেটের রোল টিস্যু গুলোকেই দেওয়া হয়, নতুন ই , কিন্তু আমার দেখলেই কেন জানিনা গা ঘিনঘিনাতো। এখানেও সেই ব্যবস্থা। তার উপর একটা ছোট্ট শুকরছানার রোস্ট আনা হয়েছে, ঐ মুখে টম্যাটো আর লেজে গিঁট্টি বাঁধা। এমননিতে আমার তো পোর্কের রোস্ট দারুন লাগে কিন্তু এ জিনিস টা আমি সহ্য করতে পারিনা , কেন কে জানে! পুরো গোটাগুটি যেমন বেঁচে থাকলে থাকবে ঠিক তেমনি করে পরিবেশন করার আর্টটা আমার বেজায় অপছন্দের।বলতে কি তখন ই পালাই পালাই মনে হচ্ছিলো। তার উপর ফ্ল্যাটটা, তার কেবল একদিকে একটা ব্যালকনি আর একটা জানলা তাও খুললে খুব কাছেই উলটো দিকের ব্যালকনি, বাকি সব দিক বন্ধ, দেওয়াল। এমনিতে খারাপ নয়, বেশ ঝাঁ চকচকে , কিন্তু আমার জঘন্য সব ব্লকেজেস আছে। জানলা খুলে আকাশ দেখতে না পেলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না। একবার এবার নাকি অ্যাপার্টমেন্ট গুলো মাটির তলায় ফ্লোর বাড়াবে, এই শুনে এত চেঁচামেচি জুড়েছিলাম যে লোকজনের গল্প করা মাথায় উঠলো আর সবাই ভারী বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, মানে আমার গাঁওয়ারপনায় আর কি। যাহোক, প্রথম থেকেই একটা ভালো না লাগায় ভুগছিলাম। কাজেই কিচ্ছু মনে নেই, কেবল একটা ছোট্ট ছোট্ট মিষ্টি বান আর মাথার চুলের মতন পাতলা রাইস ন্যুডলস ছাড়া। সেগুলো বেশ ভালো ছিলো।আর একটা জিনিস মনে আছে, বরফের উপর রাখা চিংড়ি এসেছিলো, একটা সবুজ মাস্টার্ড স্যসে সেটা খানিক ভিজিয়ে কাঁচাই খেতে হচ্ছিলো। স্যসটা মারাত্মক, একফোঁটা জিবের ডগায় রাখলেই ব্রহ্মতালু জ্বলে যাচ্ছিলো। তবে জ্যাঙ ছেলেটা ভারী মিষ্টি ছেলে আর খুব কেয়ারিং। খানিক পরে ও বল্লো ,চলো আমরা ছাদে যাই। ছাদটা দারুন ছিলো, পনেরোতলার উপরে পুরো সবুজ ছাদ। ইয়া বড় বড় টবে বিরাট বিরাট সব গাছ।

    জ্যাঙেদের বাড়ী যেতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম, আবার কি অসুবিধায় পরতে হবে কে জানে! আর আমি তো খুব সভ্য ভদ্র নই, বেচারী মানিকটা সারাজীবন আমাকে নিয়ে ভুগে গেলো, অপছন্দ আমার মুখে খুব ফুটে ওঠে। এটা ভারী মুস্কিলের , মুখ দেখেই মা বাবা সব বুঝতে পেরে যেত, এখন এরা বাপ ব্যাটায়, আমার আর লুকোনোর কিছু থাকে না। কিন্তু বাস্তবে কিছু অন্যরকম হলো। জ্যাঙ যে আমাদের খুব খেয়াল করছিলো তা বুঝলাম। যে ব্যবস্থা ছিলো তার সব কিছুই আমি সেদিন চেটেপুটে খেয়েছিলাম এবং প্রত্যেক সমাজেই যে নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ই মানুষ থাকে , তাও বুঝেছিলাম । যতই আচার বিচার ,জীবন যাপন আলাদা হোক না কেন, ভাষার ব্যবধান থাক না কেন। জ্যাঙ ছাড়া ওদের বাড়ীতে আর কেউ ইংলিশ বোঝেনা, আর মানিক ছাড়া আমরা দুজন ভিয়েতনামিস কিচ্ছু বুঝিনা, তবু একমুহুর্তের জন্য ও কোন অস্বস্তি পেতে হয় নি।

    এখানে ছিলো বিয়ারে সিদ্ধ করা চিংড়ি, জলে সিদ্ধ করা কাঁকড়া সাথে নুন, মরিচ আর লেবু দিয়ে বানানো স্যস। মুইঠ্যা দিয়ে বানানো ফিস ফিঙ্গার। পাতলা রাইস পেপারে মোরা হার্বস আর সিফুডের রোল ডিপ ফ্রাই করা, স্যালাড, নানারকমের ফল আর রাইস স্যুপ। কোন মাংস ছিলো না( মনে হয় সব জায়গায় আমার নো মিট , নো মিট করে চেঁচানোর ফল, ভাগ্গিস) আর টেবিলের ধারে কাছেও ছিলো না ফিস স্যস। অত আনন্দ করে আমি ভিয়েতনাম কেন, খুব কম জায়গায় ই খেয়েছি। একেবারেই আমার মন মতন খাবার। কেন জানিনা খুব মশলা আর তেলে চুবোনো খাবার বেশিক্ষন মোটেই ভালো লাগে না, খুব অল্প পরিমানে হলে তবেই খাই। এই রাইস স্যুপ টা দারুন ছিলো। ওদের স্টিকি রাইস দিয়েই বানানো, কিন্তু রাইসটা অন্যরকম, একটু ঘোলাটে আর দারুন সোঁদা গন্ধের ( অনেকটা সামরানের পিয়ারসুলার চালের বর্ননার মতন) চাল অনেকটা জল দিয়ে ফুটিয়ে আধসিদ্ধ হলে তাতে সিবাসের টুকরো(ছাল বাদ্দিয়ে) দিয়ে সিদ্ধ করা। তাতে ছিলো আধ ইঞ্চি খানিকের মতন লম্বা আদার টুকরো, আর স্টার অ্যানিস আর কিছু হার্বস যাদের আমি চিনিনা, কিন্তু দারুন স্যুদিং।গরম দেওয়া হয়েছিলো, যেহেতু মানিকের আর ঋভুর ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে , তাই আলাদা করে বাটার রাখা ছিলো। আর সব কিছুই ছিলো পুরো পুরি জ্যাঙের মায়ের হাতের রান্না। ফেরার সময় উনি আমায় একটা দারুন সোনার ব্রেসলেট দিলেন যেটা আমার ছোট চেহারার সাথে এক্কেবারে মানানসই। এরপরেও যে কবার ভিয়েতনাম গেছি জ্যাঙ একবার অন্তত সিফুড রেস্তোঁরাতে নিয়ে গেছেই আর আমার পছন্দের খাবার খাইয়েছেই।
  • kiki | 122.79.38.84 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ২৩:৫৫642484
  • ৩০। এরপরে ফিরে আসার ঘন্টা বেজে গেলো। আবার ফিরে চলো কলকাতা। আমার দুদিনের খেলাঘর নিয়ে খেলা শেষ এবার খেলা ভাঙার খেলা। ফেরার পথে প্রথমেই সায়গন এয়ারপোর্ট আমার কুচি টানেলের প্লেনটা নিয়ে নেয় আর কি, সেটা বুলেট দিয়ে তৈরী বলে, কি ঝাম!! আবার সেটা নিয়ে ছুটে গিয়ে মানিক কে দিয়ে আসলাম। রেখে দিবি, আমাদের নিয়ে যেতে দিলো না, তোর কাছে থাকে যেন। তখন ও ছোটখাটো জিনিসেও দারুন মায়া পরে যেত। আর আরেক ঝামেলা, বিরাট একটা খেলনার বোঁচকা। ঋভুকে জ্যাঙ আর ড্যুক মিলে বিরাট রেল লাইন ওয়ালা একটা ট্রেন দিয়েছে , যেটা চললেই দারুন সুন্দর গন্ধোয়ালা ধোঁয়া বেরোয়। সেটা প্যাকেট থেকে খুলে এমনি প্ল্যাস্টিক প্যাকেট দিয়ে আর মোটা সেলোটেপ দিয়ে র‌্যাপ করে দিলো , কিন্তু সেই রেল লাইনে যে কি প্রবলেম ছিলো কে জানে, প্রতিটি এয়ারপোর্ট চোদ্দবার করে সেটা খোলালো, এমনকি প্লেনে উঠতে না দিয়ে আলাদা করে বসিয়ে রেখেও রাজ্যের প্রশ্ন করে চললো, এমন হয়রানি হবে জানলে ওটাকেও রেখে আসতাম, নেহাত ছেলের মুখ চেয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারছিলাম না।

    সাধারনত আমাদের সেভাবে অনেকদিন একসাথে থাকা আজ অবধি হয়নি, কাজেই সে নিয়ে আমরা বিরাট ঘাবরাই তাও নয়, আর একসাথে থাকলে কবে যে কে কাকে খুন করে ফেলবো সেও এক ভাববার বিষয়, তবু খারাপ লাগাও তো থাকেই রে বাবা। ব্যঙ্কক থেকে প্লেনে উঠতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, ছেলেও ছলছলে চোখ আর ফোলানো ঠোঁট নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। আমাদের মতন কঠিন প্রান বাপ মায়ের এমন নরম ছেলে কি করে হয় কে জানে! আর তখন ই রাজ্যের কষ্ট চেপে বসলো। খালি মনে পরতে লাগলো, মানিক বলত, জানিস ! যখন খুব একলা লাগে, অফিস ও ছুটি হয়ে যায়। পুরো তিনতলা বাড়িটাতে আমি একলা থাকি, তখন জোরে জোরে আমার পাগলী, ছোঙ্কা বাবা, সুন্টুনু এসব বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকি। আর তোদের সাথে কথা বলতে থাকি। গলার কাছে কি একটা আটকাতে থাকে। কিন্তু অত সহজে চোখ দিয়ে জল বার করা তো চলবে না। সেই ভাইয়ের এয়ারফোর্স এ চলে যাবার দিনটা মনে পরে যায় এইরকম সময়ে। ভাই অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছিলো, কিন্তু খুব বখা ছেলে। ইলেভেন টুয়েলভ পড়াশুনা না করেই কাটিয়ে দিলো( আমারই ভাই) এবং ফার্স্ট ডিভিশন ও পেলো না। সেই একদিন ই ভাইয়ের চোখে জল দেখেছিলাম। তারপর এয়ারফোর্সে পেয়েই (সেটা হায়ার সেকেন্ডারি দেবার আগেই দিয়েছিলো) চলে গেলো। কারন বাবা সব সময় বলতো, তোমার বাপের জমিদারি নেই কিন্তু। অথচ সেই বাবাই বললো তুই পড়াশুনাটাই কর, গিয়ে কাজ নেই। এদিকে ভাই ও বাবার ই ছেলে। অসম্ভব জেদী। বাবাকে বললো, তুমি কি আমার চাকরি হবেই এমন বলতে পারো? বাবাও আর আটকানোর পথ পেলো না। আমরা বাড়ীতে চারজনে তার আগে খুব একটা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকিনি। অথচ ভাই যেদিন যাবে সেদিন কান্না চলবে না। ভাইকে নিয়ে বাবা বেরিয়ে গেলো, আমি বাথরুমে ঢুকে পরলাম আর মা রান্নাঘরে।তার একবছরের মধ্যে আমিও শ্বশুরবাড়ি। আর শ্বশুরবাড়ি গেলে সবাই কাঁদে, অথচ আমার কোন কান্নাই এলো না। কেবল মার ঋন শোধ করার কি একটা নিয়ম আছে সেটা কিছুতেই না করে গট গট করে গিয়ে গাড়ীতে উঠেছিলাম মনে আছে, আর এখন ও একটা ফটো আছে আমি গাড়ীতে গোঁজ হয়ে বসে আর জানলা দিয়ে সব প্রতিবেশিরা হতবাক হয়ে চেয়ে দেখছে, যেহেতু আমি কাঁদলামনা , তাই কেউ কান্নার বা আমাকে সামলাবার কোন সুযোগ ই পেলো না, সেটা আমাদের যুগে ভারী গর্হিত কাজ ও ছিলো।

    যাহোক, আবার কলকাতার আকাশে আমরা পাক খাচ্ছি। আহ! আমার কলকাতা, আমি আক্ন্ঠ প্রেমে পরে থাকি কলকাতার। যতই খারাপ হোক না কেন, কলকাতা ছেড়ে বেড়াতে যেতে পারি, কিন্তু কলকাতায় বেড়াতে আসব আর অন্য কোথাও থাকব ভাবলেই আমার কান্না পেয়ে যায়।

    তখন ও জানিনা আর কবছর বাদেই আমার ছোট্ট ছেলেকে হস্টেলে দিয়ে আবার ফিরে যাবো ভিয়েতনামে।

    ২০০৬, আমাকে শ্বশুরবাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো অদ্ভুত কৌশলে।সারা দুনিয়া জানলো আমি ছেলে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।তখন আমাদের চুড়ান্ত দুর্দিন। ছেলে নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম।

    ২০০৮ , ছেলে হস্টেলে, আবার চললাম ভিয়েতনাম।একা।
  • kiki | 125.124.41.34 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬642485
  • ২০০৭। উপস!
  • kiki | 125.124.41.34 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪642486
  • আবার ফিরে যাওয়া। ধুর্বাবা!!
  • de | 190.149.51.67 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৪:৫৩642487
  • কিকি, পড়ছি - আরো লেখো! খুব ভালো হচ্ছে -
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৬642326
  • দে,
    থেঙ্কু।ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৬642325
  • ৩১। আগেরবার থাই। এবার সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর থাই এর চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু একটাই বেজায় মুস্কিল হলো, আমাকে লোকের কথা শুনে এয়ারপোর্ট অ্যাসিস্টেন্স নিতে হলো, আর থাই এর ক্ষেত্রে খালি প্লেন থেকে নেমে দেখলাম একজন আমার নামের ভুল বানান লিখে একটা বোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার ইংলিশ আমি বা আমার ইংলিশ সে বিন্দু বিসর্গ ও বুঝলো না। কাজেই হাত দিয়ে কোনদিক দেখালো সেই জানে, আমিও মোটামুটি ভাগ্যের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে দিব্যি হো চি মিন পৌঁছালাম। কিন্তু এবার আর তা হবার নয়, আমায় নামতেই দিলো না প্লেন থেকে, শেষে বিমান বালিকারা আরেক বালিকার হাতে আমায় সঁপে নিশ্চিন্ত হয়ে ব্যাগ নিয়ে বাড়ী চললো। সেই বালিকা আমায় নিয়ে একজায়গায় বসিয়ে একটা ব্যাচ পরিয়ে দিয়ে আমার পাসপোর্ট টি নিয়ে কেটে পরলো। কি চাপ! চারিদিকে দারুন সব দোকান, আর আমি নাকি চেয়ারে চুপটি করে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।
    তা সে যাহোক, আবার হো চি মিন। এবার আর অচেনা লাগার নেই। কেবল বাড়ী ঢুকে বেজায় কেমন লাগলো। তা সে যেবার মানিক চলে এলো ভিয়েতনাম, তখন ও অমন লেগেছিলো, আমি আর তিন বছুরে ঋভু তখন হামেশাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাতাম। এটাও সয়ে যাবে জানি। এরপর অদ্ভুত জীবন শুরু হলো, রান্নাঘর আর টিভি। স্থানীয়দের ভাষা বুঝি না, আর তারা খুব ব্যস্ত ও থাকে। মানিক ব্যস্ত নিজের কাজে। সপ্তাহে একদিন বাড়ীতে কথা বলা,একদিন ঋভুর হস্টেলে। আমার আট বছুরে ছেলে কেমন ফিসফিসিয়ে কথা বলে। আমি ভাবি, ছোট তো, আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবে।
    ক্রমশ রাস্তায় বেড়িয়ে পরি। একা একাই ঘুরে বেড়াই এদিক সেদিক। বিকেলে অবশ্য মানিক ও বেরোয় কখন সখন। আরো ভালো করে হো চি মিন শহর আমার মধ্যে মিশে যায়। আমাদের ফাম ভিয়েত চান এর দুদিক দিয়েই রাস্তা গিয়ে স্থানীয় চিড়িয়াখানায় পৌঁছাচ্ছে। একটা খালের উপর দিয়ে ব্রিজ পেরিয়ে , বিরাট সব গাছ ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাই চিড়িয়াখানায়। সকালে খোলা থাকে সবার জন্য। স্থানীয় মানুষ সেখানে হাঁটে, ছোটে, ব্যায়াম করে। কানে হেড ফোন গুঁজে বা সিডি চালিয়ে, ছন্দে। আবার একটা অদ্ভুত খেলা অনেকে মিলে খেলে। ফেদার ককের মতন দেখতে, একটু বড় হয়, সেটাকে পা দিয়ে তুলে খেলে, ফুটবল টাইপের, কিন্তু ওটা মাটিতে ফেলা চলবে না, একজনের পা থেকে আরেক পা ক্যচ নিয়ে নেয়। আর আশেপাশের ঘেরা জায়গা থেকে জিরাফেরা গলা বাড়িয়ে দেখে চোখ বুঁজে পাতা চিবোয়, হাতি স্নান করে মাথা দোলায়, একটা ছোট্ট বাঁদর তার দল নিয়ে উঁচু গাছ গুলোতে বেজায় চেঁচামেচি করতে করতে খেলে বেড়ায়। ম্যাকাও রা ভারী গম্ভীর, কিন্তু কেমন দুঃখী বড্ড। আমি তখন ফিরি, মেড এসে যাবে। যদিও তার কাছেও চাবি থাকে। রাস্তার ধারে দোকানে দোকানে তখন ফ, স্টিকি ভাত, মাংস রোস্ট করা, রেডি, টাটকা সোয়া মিল্ক তৈরী ঠেলা গাড়ীতে, স্টাফ পাঁউরুটি ও রেডি। সবাই খেয়ে কাজে বেড়িয়ে পরবে তো। ব্রীজের উপর থেকে ঝুঁকে দেখি বাজারে দারুন বেচা কেনা চলছে, ঠিক যেন আমাদের কলকাতার বাজার। মাছ কাঁচি দিয়ে কেটে ছাড়িয়ে রেডি করে দিচ্ছে। কখন কখন আমি বায়না করে মানিকের সাথে লেজুর হয়ে বাজার যাই। দারুন লাগে আমার বাজারে ঘুরে বেড়াতে। কতরকম মানুষ দেখা যায়। আর মানিকের হয় জ্বালার চুড়ান্ত,দেখে হাঁট, ওফ দাঁড়িয়ে পরলি কেন! হাত ধরে হ্যাঁচকা টান। আর বাড়ীর কাছে এসে দেখবো উল্টো দিকের বাড়ীর নীচের অস্থায়ী দোকানে ওদের কি এক স্থানীয় মিস্টি ভাজে, তা কমপ্লিট। কি এক উগ্র গন্ধ তাতে।
    আবার কখন ও মানিক কে টেনে নিয়ে চলি, আমি ছুটি, আমার হর্স টেল টিং টাং করে দোলে আর আমার পিছনে ঘুমে কাতর আমার বর বেচারি সেই হর্স টেল দেখে কোনক্রমে হাঁটে। অবশ্য পরে পুরো উল্টো হয়ে যাবে, আমি সকালে আর মোটেই উঠতেও চাইবো না, ছুটতেও নয়, আরেকজন নিজের নব্বই কেজি চ্যালেঞ্জ করে কমিয়ে দেবে, ভুঁড়িও উধাও করে দেবে।
    মেড তার কাজ করে যাবে রোবটের মতন, আমি তার মাঝে রান্না করে গিয়েই টিভিতে এইচ বি ও, স্টার মুভিস বা ট্রাভেল অ্যাড লিভিং চালিয়ে বসে থাকবো। ঠিক বারোটায় অফিসের লাঞ্চ ব্রেক। সবাই খেতে চলে যাবে, তারপর একঘন্টা ঘুমুবে, তারপর আবার কাজ শুরু হবে। তারপর ক্রমশ বাংলা লাইভ আর ফেরার কিছু আগে গুরুচন্ডালির খোঁজ পাবো, তখন সময় হু হা কেটে যাবে , নেটে বন্ধুদের সাথে হুলিয়ে বাংলায় আড্ডা দিয়ে, ঝগড়া করে।
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৭642327
  • ৩২। একদিন দেখি আমাদের সামনেই একটা বস্তি মতন ছিলো, সেখান থেকে বস্তি উচ্ছেদ চলছে। কি কেলো! আমি ভাবলাম বোধহয় একটা অশান্তি শুরু হয় হয়, গরীব মানুষ গুলো যাবেই কোথায়। কিন্তু শুনলাম সেরকম কিছুই এখানে হবে না। এখানে সরকারের উপর কথা বলার সাধ্য কারোর নেই। অবশ্য যা শুনলাম তাতে দরকার ও নেই। তখন বস্তিগুলো তুলে সেখানে সব হাই রাইজ তোলার পালা চলেছে সেখানে। কিন্তু সেখানে যেসব মানুষ ছিলো তাদের জন্য ও সেখানে ফ্ল্যাট থাকবে। তবে তা তারা এমনি পাবে না, খুব কম সুদে অনেকদিন ধরে শোধ করতে পারে , এভাবে তাদের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। আর এখানে প্রত্যেক সিটিজেনের সিটিজেন কার্ড এ তার ডিটেইলস থাকে। যে একবার সরকারি হেল্প পেলো , সে আর দ্বিতীয়বার তা পাবে না। কাজেই মানুষের ভাবনা সেখানে সেভাবেই সেট হয়ে যায়। নিজের জিনিসের যত্ন নেয়। বা বিক্রি করে গ্রামে চলে যায়, সেখানে ব্যবসা করে। ফলে উন্নয়ন নিয়ে টানাপোড়েনের বালাই সেভাবে নেই।

    এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পরে গেলো। মাঝে আমাদের রাস্তা থেকে হকার হঠাও অভিযান শুরু হয়েছিলো। গড়িয়াহাট বেশ পরিচ্ছন্ন হয়ে গেছিলো, তারপর আমরা সেটা ভুলেও গেছি। একদিন গড়িয়াহাটে এক পরিচিতের বাড়ী যাচ্ছিলাম। রাসবিহারি থেকে গড়িয়াহাটের মোড় পেরিয়ে বালিগঞ্জ স্টেশনের দিক বরাবর হাঁটছিলাম, সেখানে দেখি এক বিরাট শপিং মল, একটা স্পাইডার ম্যান সেটা বেয়ে উঠছে। সেই পরিচিতের বাড়ী গিয়ে বললাম এখানে নতুন মল হচ্ছে? ওরা বললেন, তা নয়। এটা তৈরী করা হয়েছিলো , উচ্ছেদ হওয়া হকারদের জন্য। তারা সেসব বেচে আবার ফুটে চলে গেছে। মজা হচ্ছে, এসবের কোন নথি আমাদের দেশে থাকে না, আর গরীব মানুষকে নিয়ে রাজনীতি ও যায় না এবং তাদের রাজনীতি ও। এই লুপ থেকে আমাদের বের হওয়া সম্ভব ই নয়। অথচ একটা ছোট্ট দেশ দেখিয়ে দিতে পেরেছে, কান্নাকাটি করে নয়, দয়া করে নয়, হাত ধরে দুর্বল মানুষকে টেনে তুলে নেওয়া যায়।

    এখানে কম্যুনিজম এবং এখানে ইলেকশন হয় না, সিলেকশন হয়। তবে সব ই যে ভালো তাও নয়। সরকারি কর্মচারীরা সব জায়গায় ই একই হয় মনে হয়, মানে বেশিরভাগ ই। অত্যন্ত করাপ্টেড। তবে ধরা পরলে চুড়ান্ত শাস্তি।কাগজের বা বলা ভালো মিডিয়ার স্বাধীনতা খুব বেশী নেই, দেশ সম্পর্কে ভালো ভালো কথাই বলতে হয়। বেশিরভাগ সমালোচনা হতে পারে এমন খবর চেপে দেওয়া হয়। যেহেতু নিজের নামে নির্দিষ্ট পরিমানে সম্পত্তি করা যায়, তাই নানান উপায়ে এরা সম্পত্তি বাড়ায়।

    এরমধ্যে একদিন আমরা এক বন্ধুর বাড়ী আড্ডা দিতে গেছিলাম। ফিরছিলাম অনেক রাত করে। প্রায় রাত একটা। তখন আমার সবে মোবাইল কানেকশন নেওয়া হয়েছে। আমার খুব প্রিয় মোবাইল সেট ছিলো সেটা। নোকিয়ার প্রথম স্লাইডিং মোবাইল।তাতেই মনে হয় প্রথম ফ্রন্ট ক্যামেরা ছিলো।আমার হাতে একটা বটুয়া ব্যাগে কিছু হাবিজাবি জিনিসের সাথে সেই মোবাইল ছিলো। আর মোবাইলে ছিলো ঋভুর কিছু ফটো, কিছু ভিডিও ক্লিপিংস।

    আমরা বাইকে করে ফিরছিলাম। তার বছরখানেক কি কিছু মাস আগে মানিকের বাইক অ্যাক্সিডেন্টে বাঁ দিকের কলার বোন ভেঙে ছিলো, কাজেই হাতে জোর খুব ফিরে আসে নি। আর যেখানে গেছিলাম সেটা ডাউনটাউন, অনেকটা আমাদের রাজারহাট, নিউটাউন ধরনের জায়গা, বিরাট বিরাট সব অ্যাপার্টমেন্ট, বিশাল চওড়া রাস্তা কিন্তু প্রায় জনমানব হীন। সেখানে থেকেই কিছু বাইক আমাদের ফলো করছিলো। এদিকে মানিকের একা থাকার ফল হলো , সে ভুলেই গেছে পিছনে আমি বসে আছি(এটা পরে ফিরে বলল , কি অদ্ভুত!) আর একটা রাস্তায় এসে হঠাৎ একটা বাইক থেকে একটা ছেলে ঝুঁকে পরে আমার বটুয়া ধরে টান দিলো, এদিকে সেটা আমার হাতে পেঁচিয়ে ধরা, কাজেই সহজে সে ছাড়িয়ে নিতে পারছে না, আর আমিও দেব না, এদিকে এত ঘাবরেছি যে মুখেও কোন কথা বলতে পারছিনা। মোটামুটি একটা মোর থেকে আরেকটা মোর টানাটানি করে কাটিয়ে দিলাম। এদিকে সেখানে নাকি বেজায় বাইক ছিনতাই হয় রাতের বেলায়, মানিক মনে করেছে পিছন থেকে বাইক নিয়ে নিতে চাইছে, দিয়ে দেবে কিনা মনস্থির করতে পারছে না। শেষে রাস্তার মোড়ে এসে, প্রচুর আলো আর একগাদা লোক সেখানে আড্ডাচ্ছে(উইকেন্ড ছিলো) সেখানে একটা বাইক আমাদের বাইকের হ্যান্ডেলটা যাস্ট ঘুরিয়ে দিলো আর আমরা দুড়ুম করে পরলাম, ব্যাগ ও ছিঁড়ে নিয়ে চলে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি উঠেই পিছনে ছুটেছি, এই আমার মোবাইল, ওতে আমার ছেলের ফটো, এই বলে। আর রাস্তার লোক গুলো হাঁ করে দেখছে। আমাদের কলকাতায় কখন ও এটা সম্ভব ই হত না। তারপর তো ফিরে এসে আমি চেঁচাচ্ছি, চলো পুলিশে যাই। তখন শুনি, এখানেই নিয়ম রাত্রিতে বিদেশীরা বেরোলে তাদের নিজের দায়িত্বে বেরোতে হবে। পরে শুনলাম এখানে হামেশাই ছিন্তাই হয়। তবে দামী কিছু নিয়ে না বেরোলে প্রবলেম নেই। কেউ তাকিয়েও দেখবে না। এখানে মেয়েরা তাই পকেটেই সব রাখে , ব্যাগে দামী কিছু রাখে না, পকেট থেকে কিছু কেউ নেবে না। ব্যাগটাই টানবে। পরে শুনলাম সব ভারতীয়দের ই এ অভিজ্ঞতা আছে।
  • nina | 78.37.233.36 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:০৩642328
  • অতি উত্তম--কিকিয়া--চলুক চলুক
  • i | 147.157.8.253 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:০৭642329
  • কিকির লেখায় অসম্ভব টাটকা সতেজ একটা ব্যাপার থাকে। কোনো ভাণ ভণিতা নেই, অন্য কারোর লেখার ধরণের ছায়াটুকুও নেই, একদম নিজের লেখা, নিজের মত লেখা, একদম নিজের মত একসপ্রেশন। এরকম খুব কমই পড়তে পাই। লেখা ছেড়ো না কোনদিন।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৩০642330
  • দিদিয়া,
    ঃ)

    ইন্দ্রানী,
    এ মনিহার ........... ইত্যাদি। তবু থেঙ্কু।ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ২০:৫৪642331
  • ৩৩। এরমধ্যে ব্যবসা একটু লাভের মুখ দেখছে। জ্যাঙ একটা হন্ডা সিভিক কিনেছে। আমাদের অবশ্য ফুটো কলসী। যাই আসে গলে চলে যায়। তাতেও আমাদের কোন তাপ উত্তাপ নেই। তো যাহোক, ঠিক হলো জ্যাঙ আমাদের লঙ ড্রাইভে নিয়ে যাবে।মুই নাই যাওয়া হবে। নির্দিষ্ট দিনে সকাল বেলা জ্যাঙ আর হিয়েন চলে এলো, আমরা চলা শুরু করলাম। হোচিমিনের ব্যস্ত রাস্তা ছেড়ে আমরা প্রভিন্সে ঢুকলাম। সেখানেই রাস্তার ধারে এক খাবার দোকান থেকে ব্রেক ফাস্টে ফ খাওয়া হলো এক গামলা করে। তাতে এই বড় বড় গরুর টুকরো। আর নানান পাতা টাতার মধ্যে দেখলাম মোচার খোলা ফাইন করে কুচিয়ে দিয়েছে। আবার চলতে শুরু করলাম। বাইরে প্রচন্ড রোদ্দুর। যথারীতি প্রভিন্সেও রাস্তা একইরকম সুন্দর আর মসৃন। বেলাবেলি পৌছে গেলাম মুই নে। ঘন্টা তিনেকের রাস্তা মনে হয়। এখানে সি বিচের ধার দিয়ে চলার সময় দেখলাম রিও ডি জেনেরোর মত একটা ছোট টিলার উপরে একটা স্ট্যাচু রয়েছে।
    গিয়েই এদিক সেদিক একটু পাক খেয়েই খাওয়ার জায়গা খুঁজতে শুরু করলো জনগন। ঠিক বারোটায় লাঞ্চাতে হবে। সমুদ্রের গা ঘেঁষে একটা চারদিক খোলা রেস্তোরাঁ তে আমরা ঢুকলাম। তখন ও তারাওয়ালা জায়গায় ঢুকতে আমরা কিঞ্চিত ঘাবরাই। যাইহোক, এটা সি ফুড রেস্তোরাঁ, আর আমি তো সি ফুড বেশ ভালোবেসে খাই। এখানেও বেশ কিছু অ্যাকোরিয়ামে সব নমুনা রাখা রয়েছে। পছন্দ করো, চোখের সামনেই ঝলসে বা সিদ্ধ করে দেবে। ভিয়েতনামিসদের আতিথেয়তা দেখার মতন।আমাদের ভিজে টিস্যু দিয়ে গেলো সুন্দরী মেয়েরা আর ছেলেরা। মোটামুটি তারা মুখ মুছিয়েও দেয় আর কি, কি ভয়ানক কেয়ারিং টাইপস। আমার আবার খুব হাঁফ লাগে, কাজেই নো, থ্যাঙ্কিউ , ইত্যাদি বলে কাটিয়ে দিলাম। নিজেই মুখ হাত পরিস্কার করে নিলাম। মানিকরা অবশ্য সেসব বেশ এনজয় করছে। এরপর খাবার আর বিয়ারের আসা শুরু হলো, আমার জন্য কোক অবশ্য। বিয়ারের গন্ধ আমার পোষায় না। অবশ্য যেকোন সোনালি তরলের গন্ধ ও তাই। একদম সহ্য হয় না। মাথা যন্ত্রনা শুরু হয়।
    প্রথমে এলো এতো বড় বড় ঝিনুকেরা বরফের ট্রেতে চড়ে, তাদের কাঁচাই লেবুর রস চিপে হুস করে খেয়ে ফেলতে হয়। কাজেই আমি আর ওদিকে তাকালাম না। আমার সিকনি জাতীয় কিছু খেতে হবে ভাবলেই ওয়াক আসে। এরপর সিদ্ধ করা কলমি শাক আর নানান স্যালাদ। তার পিছু পিছু স্কুইড ভাজা, চিংড়ি বিয়ারে সিদ্ধ, ফিস স্যস, ন্যুকতুং আর লেবু নুন আর গোলমরিচ। এই লেবু নুন আর গোলমরিচ দিয়ে বানানো স্যসের সাথে ক্র্যাব বা চিংড়ি সিদ্ধ পুরো স্বর্গীয় লাগে। এবং সব শেষে এলো ইয়া বড় বড় টাইগার প্রন। তার একেকটা দাঁড়াতেও ভর্তি মাংস। সেটা ওরা ঝলসে দিয়েছিলো। আহা ! সে কি আরামের খাওয়া হলো। কিন্তু বড় বেশী যত্ন নিচ্ছিলো লোকজন, আমার কেমন একটা লাগছিলো, কিন্তু ঐ, আমি গেঁয়ো মানুষ, তাই কিছুই বললাম না। তারপর বিল যখন এলো তখন মাথায় হাত। মনে হয় পাঁচশো ডলার বিল করে দিয়েছিলো।এটা দু হাজার সাতের কথা। আসলে পাব্লিক আর দাম দেখে অর্ডার করে নি। ওরাও এমন মুরগী হাতছাড়া করে নি। তখন পারলে খাবার দাবার পেটু থেকে বার করে দেয় আর কি। এদিকে সবার পকেট কুড়িয়েও সে পয়সা হচ্ছে না। শেষে আবার হিয়েন নিজের কার্ড নিয়ে এটি এম খুঁজতে চলে গেলো। হিয়েন বড় ব্যবসায়ী, সে আবার লুই ভুঁতোর ব্যাগ ছাড়া নেয় না। যেখানে আমি প্রতিবার বাইরে থেকেই গুচ্চি বা লুই ভুতো দেখি, দোকানের ভিতরে ঢুকতেও সাহস করি না। সেখান থেকে বেরিয়েই প্রতিজ্ঞা করা হলো, ডিনার কোন সস্তা হোটেলে খাওয়া হবে।
    এরপর আমরা সি বিচের ধারে একটা হোটেলে একটা রুম হাফ বেলার জন্য নিলাম।ঐ টয়লেটে যাবার বা স্নানে যেতে হলে চেঞ্জ হবার ইত্যাদি কারনে। আমার অবশ্য স্নানে যাবার নেই। সাথে করে কিছুই আনিনি।তারপর গিয়ে বিচের ধারে খরের ছাউনির নিচে চেয়ারে বসলাম। সমুদ্রের ধার সব জায়গায় একই রকম। বাচ্চারা বালি নিয়ে খেলছে। ছোকরারা হুল্লোর করছে। কেবল মেয়েরা আমাদের বিচের মতন নয়, পুরো পারলে কিছু না পরেই স্নান করছে। তবে তা চোখেও লাগছে না। জায়গার গুনে মনে হয়। আর মেয়েরাও খুব সুন্দর মোমের পুতুলের মতন হয়। দারুন ফিগার, স্কিন আর চুল।
    সন্ধেতে গেলাম গ্রে হাউন্ডের রেস দেখতে। বাজিও ধরা হচ্ছিলো। আমাকেও কিছু পয়সা দেওয়া হলো। এই সময় গুলো দারুন দুঃখ হয়। কেন কে জানে আমি কিছুতেই কিছু চাইতে পারি না, কোনদিন ই না। আর আমাদের পিতৃতন্ত্রের ছেলেরা জেনারেলি ভারি উদাস হয় এই ব্যাপারে। এই জন্যই ছোট থেকে একটাই ইচ্ছে ছিলো যে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হব। মাথা কারোর কাছে নোয়াতে না হয়। কিন্তু, সে যাগ্গে। আমিও যে কবার পয়সা লাগালাম প্রতিবার ই হারলাম। কিন্তু হিয়েন জিততে লাগলো। মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতি। আমি জিজ্ঞেস করলাম সিক্রেট টা কি বলোতো? ও বললো, লক্ষ্য করো, প্রতিবার ই একটা কি দুটো নতুন কুকুর দিচ্ছে। যে কুকুরগুলো হাঁফাচ্ছে না, সেগুলো নতুন। কাজেই ওরা ভালো দৌড়াবে।
    তারপর ফেরার পথে একটা সস্তার রেস্তোরাঁতে খেয়ে আবার বেশ রাত্রিতে বাড়ী ফিরে আসা। হো চি মিনে এই রাত্তিরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোটা খুব এনজয় করতাম। সবাই ঘুমিয়ে পরলে তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। অনেকদিন পরে চন্দননগরে শুভোদাদের বাড়ী গিয়ে রাত একটায় আমরা স্ট্র্যান্ডে ঘুরছিলাম। কিছু মানুষ থাকে মনে হয় যারা কিছুতেই বড় হয় না। শুভদা আর ববিতা সেইরকম মানুষ। যাইহোক, বাড়ি ফিরে আমার যথারীতি ঘরে ঢুকতে বেজায় আপত্তি হয়, বাইরেই বসে থাকি পারলে, কাজেই ঘেঁটি ধরে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।
  • de | 190.149.51.67 | ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:২৬642332
  • দারুণ, কিকি!! আরো হোক।
  • সিকি | 135.19.34.86 | ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:৪০642333
  • মাঝে অনেকদিন পড়া হয় নি, আজ এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। কিকি, বড় ভালো লাগছে। তোমায় তো চিনতামই, আবার অন্যভাবে চিনলাম।

    সবচে ভালো লাগছে এই টুকটাক গড়িয়াহাট কি স্ট্র্যান্ড রোডের সঙ্গে তুলনা টানাটা। লেখো। লিখে যাও। সহজ কথা, যা কিনা সবসময়ে তেমন সহজভাবে বলা বা লেখা যায় না, তা তুমি কেমন অসীম নির্লিপ্ততায়, অবলীলায় লিখে যাচ্ছো, দেখে খুব খুব ভালো লাগছে। এই গুণটা সবার লেখনীতে থাকে না।

    লেখো।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১০:০৯642334
  • ৩৪। পূজো আসবো আসবো এরকম একটা সময় এসে গেছে। বলাই বাহুল্য আপনি বাংলায় থেকে বাংলার উৎসব( ঐ হলো, বাংলা একটা অবস্থান) নিয়ে যত উদাসিন থাকবেন, বাইরে গিয়ে ততই তা নিয়ে বাড়াবাড়ি ভাববেন। আসলে আমরা যতই উদাসিন দেখাতে চাই না কেন, আদতে তা সম্ভবপর নয়, কারন ঐ বেঁচে থাকার তাগিদ আর তারজন্য নিজের আইডেন্টিটি খোঁজার নিরন্তর ভাবনা । কেউ হয়ত দেশের সীমানা মানেননা , কিন্তু দেখা যাবে তিনি নিজেকে পৃথিবীর বাসিন্দা ভাবেন। ঐ চাঁটগাইয়ারা যেমন নিজেদের প্রবলভাবে চাঁটগাইয়া ভাবে বা আমি নিজেকে ভারতীয়, তার থেকে আর একটু প্রশস্ত ভাবনা মাত্র, কোনভাবেই আলাদা ভাবনা নয়। তা সে যাই হোক। আমাদের হো চি মিনের ছোট্ট ভারতীয় কম্যুনিটি তে হৈ চৈ শুরু হলো। তার উপর এবার কলকাতা থেকে ঠাকুর আসবে প্লেনে চড়ে, এমনকি ঠাকুরমশাই ও। অশোকদার(তিনি আদতে মারোয়ারী হলেও, আমাদের চেয়ে বেশী বাঙালী, কলকাতার ই মানুষ) তিনটে রেস্তোরাঁ আছে হো চি মিনে, তার ই একটাতে হবে পূজো। এর আগে দুর্গোৎসব হত হো চি মিনে। একদিন বিজয়ার মিট, কালচারাল প্রোগ্রাম, এইসব। আর মজার ব্যাপার এই অনুষ্ঠানে শুধু ভারতীয় নয়, বাংলাদেশীরাও ভীষন ভাবে জড়িয়ে থাকতেন এবং এখন ও হয়তো থাকেন। কোন বিদ্বেষ দেখিনি। বিদেশে গেলে মনে হয় সাবকন্টিনেন্টের মানুষেরা জড়িয়ে মড়িয়েই থাকে।এটা খুব ভালো দিক। মনে হয় ইটিদের প্ল্যানেটে গেলে পৃথিবীর মানুষ, ইউনিভার্সের বাইরে অন্য ইউনিভার্সে গেলে এক ইউনিভার্সের পাব্লিকরা এই ভাবে একজোট হয়ে যাবে।ইত্যাদি।

    তো, তখন আমাদের কেবল এই রেস্তোরাঁ, ঐ রেস্তোরাঁ (সে গুলো সব ভারতীয় রেস্তোরাঁ, কাজেই মালিকেরা এই সময় বেশ বেশি খুশ হয়ে যায়) তে গিয়ে আলোচনা সভা বসছে আর যথারীতি আলুচানা বলতে হ্যা হ্যা হি হি বেশি,কাজের কথা কম। এইরকম একদিনে শোনা গেলো আরো এক নতুন বাঙালী এসেছে, নরফোকে থাকে। চলো, আলাপ করতে যাওয়া যাক। তো বেশিরভাগ ই কেটে গেলো। কেবল কজন হুজুগে ফ্যামিলি যাওয়া হলো, তারমধ্যে আমরাও আছি, কারন আমাদের বাড়ী এখান থেকে হেঁটে চলে যাওয়া যাবে। বাড়ির রাস্তায় ই বলা যায়। কাজেই যাওয়া হোলো। গিয়েই যেটা অনুভব হলো, ঠিক যেন অনেকদিন পরে বদ্ধ ঘরে ঢুকে জানলা খুলে দিলে , বাইরের তাজা হাওয়ার অনুভব। ওয়ার্ম ওয়েলকাম জানালেন ও এন জি সি-র কান্ট্রি ম্যানেজার উত্তমদা আর উত্তমদার সুন্দরী এবং শিক্ষিতা স্ত্রী স্বপ্না দি। এতদিনে আমার হো চি মিনের এনারাই দের সাথে বেশ কিছুটা ভাবসাব হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মত জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাত্তাইয়া গেঁয়ো( উফ! গেঁয়ো টাও একটা অবস্থান মাত্র, মানে ঐ আর কি, এটিকেট টেটিকেট জানে না, ওয়েট রাখতে জানেনা, এইসব, গ্রামে থাকে টাকে নয়, খামোকা দুঃখু পাবেন্না) মানুষের জন্য তারা বেশ চাপের। তখন অবশ্য আমি চেষ্টা করি হুটহাট কথা না বলতে, পারফিউম বা দামী ব্র্যান্ড নিয়ে কথা হলে মাথা নাড়াই, পেজ থ্রী নিয়ে যখন উ! মাগো! এরকম হয়! এ ধরনের আলোচনা হয়, মানে আমরাও কত ভাবি গোছের তখন প্রবল কনফিউশন নিয়ে যে , এরা সো অফের বাইরে সত্যি কিছু কি ভাবতে পারে! সে নিয়েও চুপটি করে দাঁত বার করে বোকা বোকা মুখে বসে রই। সেই সময় ঐ রকম আসুন বসুন মতন কলকাত্তাইয়া আপ্যায়নে পুরো হতভম্ব অবস্থা। তারপর অনেক গল্প হলো। ফেরার সময় স্বপ্নাদি আবার সবাই আসবে বলে মোটামুটি সেদিন ই খুব আপন হয়ে গেলো। এর আগে হো চি মিনে এরকম ব্যাপার ছিলো না, পার্টি হলেই যাওয়ার নিয়ম। খুব ক্লোজ হলে কি হয় অবশ্য আমার জানা নেই, আমার কোনকালেই খুব ক্লোজ কোন বন্ধু থাকেনা, এমনকি বাই নেচার আমি এতটাই বদখত যে আমার পরিবারের লোকজন ও আমার খুব কাছের হতে পারে না, আর খুব চটা ও তারা এ নিয়ে। কিন্তু কি করা যাবে! কিন্তু ঐ প্রথম চেনাতে এত আপনাতে ও কাউকে দেখিনি। পরে অবশ্য স্বপ্নাদির সাথে দারুন ভাব হয়ে গেলো। তারপর আমাদের একটা গ্রুপ ও তৈরী হয়ে গেছিলো ঠিক আমি ফিরে আসবো, তার আগে। আমি, স্বপ্নাদি, পিউ, মিলি।

    তারপর হৈ হৈ করে ঠাকুর এসে গেলো, ঠাকুরমশাই ও এসে গেলেন। যে আমি পূজো থেকে শতহস্ত দুরে থাকি, সেই আমিও দারুন মজা করলাম। পুজোর কদিন সারাদিন অশোকা টু তে খাওয়া দাওয়া সব। বাড়িতে রান্নার বালাই নেই। মানিক নাকি আবার ঠাকুরমশাইয়ের হেল্পার হলো। এদিকে বাবু ধুতি পরতে পারেন্না। তাও বেশ নিয়ম মেনে, উপোস টুপোস করে হেল্পাতে লাগলো। দেখে আমার বেশ মজা লাগছিলো। দারুন হৈ চৈ করে কটা দিন কেটে গেলো।

    আর ভিয়েতনামিসরাও ভারতীয়দের মতন উৎসব ভালোবাসে। এই পূজোর পর থেকে হো চি মিনে নানান উৎসব শুরু হয়ে যায়। কারন তখন তাপ কমতে থাকে ক্রমশ, বৃষ্টি ও আর তেমন হয় না।প্রায় মাসখানেক ধরে যীশুকে নিয়ে নাচানাচি, তারপরে ইংলিশ নিউ ইয়ার আর সেটার রেশ কাটে না কাটতেই শুরু হয় তেতের প্রস্তুতি। ওদের বাৎসরিক মিলনোৎসব, আমাদের শারদোৎসবের মতন।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১০:১০642336
  • দে, সিকি,
    ধন্যযোগ।ঃ)
  • - | 109.133.152.163 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১১:৫৮642337
  • পুজো বা পূজা।
    বানানটা ঐ টইএর শিরেও চোখেই লাগছিল।
    কিকি কিনা ভালো মানুষ তাই এখানে বলে গেলাম ঃ-)
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১২:২৭642338
  • ৩৫। তেত আসলে হলো চাইনিজদের লুনার নিউ ইয়ারের দিন, ভিয়েতনামিসরা চিনাদের ক্যালেন্ডার মেনে চলে। উৎসব মোটামুটি সপ্তাহ ধরে চলে আর মাস ধরে তার রেশ থেকে যায়। লুনার নিউ ইয়ার শুরু হয় জানুয়ারির শেষ থেকে ফেবের মধ্যে। আর বছর গুলো পশুর নামে হয়। সে ভারি অদ্ভুত ব্যাপার। আদিবাসিরা যেমন পশুদের আচরন অনুযায়ী মানুষকে দেখতো(টোটেম), তেমন প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেও পশুর আচরন খুব মন দিয়ে দেখা হত মনে হয়। আমাদের মতনই ভিয়েতনামিসরাও এই উৎসবের জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তুত হয়। ঘর পরিস্কার, নতুন জামা কেনা, ঘরদোর নতুন রং করা, সাজানো, গিফট কিনে রাখা, খাবার যা বানাবে তার রসদ সংগ্রহ, ঠিক যেমন আমরা পুজোতে বা মুসলিমরা ঈদে, খ্রীস্টানরা বড়দিনের প্রস্তুতি নেয় তেমন ভাবেই। আসলে মানুষের বেসিক নেচার একই হয় মনে হয়, কেবল জায়গার পার্থক্যে নানান ধর্ম আর জাতি। কেন যে আমরা এই ছোট্ট সত্যি টা ভুলে যাই কে জানে! আসলে অত্যন্ত ইন্সিকিউরিটি থেকে এমন হয় কি! নইলে যে যার মত থাকুকনা কেন, অন্য কাউকে ছোট না করলে, ঘৃনা না করলেই তো বেশ পাশাপাশি থাকা যায়।
    উৎসবের সাতদিন সব দপ্তর ছুটি থাকে, এমনকি ভিয়েতনামিস মালিকানার ছোট দোকান ও সব বন্ধ থাকে। কাজেই ঐ সাতদিনের বাজার আগেই করে রাখতে হয়। পুরো শহর আর পার্কগুলো সেজে ওঠে আলোয় , রঙীন কাগজের নানান শিল্পে। প্রচুর গাছ বিক্রি হয়। বনসাই থেকে শুরু করে রীতিমত মহারুহ পর্যন্ত , আর সে সব টবেই। আর তার থেকেও আশ্চর্য্য সেই সব আট দশ ফুটিয়া বিশাল গাছেদের , ঐ বিরাট টব সমেত ওরা বাইকে করে ডেলিভারি দিয়ে আসে। এখানকার মানুষ দিব্যি ল্যাদখোর। সমস্ত কাজ আগে থেকে সেরে রেখে সেই কদিন কেবল দোলনায় শুয়ে, মাছ ধরে কাটিয়ে দেয়। আর বিকেলে ঘুরে বেড়ায় শহর জুড়ে। সেই "সাত আটটা হাটের যেন গন্ডগোলকে এক করিয়া।/রেখেছে এই মাঠের মাঝে নরমুন্ডের জাল ঘিরিয়া।।" মেজাজ তখন শহর জুড়ে, রাত্রিরেই শহর যেন জেগে ওঠে। সিটি সেন্টারের ঠিক রেক্স হোটেলের অপর পারে ট্যাক্স মার্কেটের (ট্যাক্স মার্কেট শুনলাম ভেঙ্গে দিচ্ছে, অন্য কিছু হবে, আমার বড় প্রিয় জায়গা ছিলো) সামনের রাস্তা জুড়ে, নদীর তীর পর্যন্ত গোটা রাস্তাটা দারুন সাজায়, ঠিক মাঝখানে ফুলে ফুলে ভর্তি। একবার তো রীতিমত একটা গ্রাম তৈরী করে দিয়েছিলো রাতারাতি। সেই ধান গাছ মাথা দোলাচ্ছে, পুকুর সব কিছু। মজা হচ্ছে এই একটা রাস্তা যেহেতু আটকানো তাই প্যারালাল রাস্তাগুলো সব কড়া নজর রাখা হয় যাতে পরিবহন ব্যবস্থা অচল না হয়ে যায়। আমাদের দুর্গাপুজোর কর্মকর্তারা একটু দেখে আসতে পারে কিভাবে অসুবিধা না সৃস্টি করেও আনন্দ করা যায়। আর যেদিন তেত শেষ সেদিন রাতারাতি রাস্তা পরিস্কার হয়ে যায়। পরদিন সকালে মনেই হবে না এত কিছু ছিলো সেখানে রাত অবধি। আসলে সব ছোট ছোট টব লাগিয়ে তৈরী হয়, কাজেই গাড়ী বোঝাই করে টব গুলো, বা যে বাড়ী বা অন্য কিছু বানানো হয় তার পার্ট গুলো ও সহজে খুলে, তুলে নিয়ে চলে যায়। সময় লাগে না। আর এখানকার মানুষ জানে, এটা নিয়ম , মানতে হবে। আমাদের মতন নিয়ম মানেই ভাঙতে হবে আর তা নিয়ে বিপ্লব করতে হবে এই ভাবনাটা ভাগ্গিস নেই।আর খাবারের স্টল গুলোতে নানান ধরনের মাংস পাওয়া যায় এই সময়। এখান থেকে কুমীর আর উটপাখির মাংস ও খেলাম, সেঁকে দেওয়া। খুব আলাদা কিছু লাগে নি অবশ্য।
    তেতের শুরুতে আর ইংলিশ নিউ ইয়ারের শুরুতে বাজি ফাটানো হয়। তবে এখানে কনসেপ্ট টা অন্য। এখানে বাজিটা সরকার থেকে জ্বালানো হয়, নদীর পারে, সারা শহরের মানুষ এসে ভীড় করে তা দেখে। ব্যক্তিগত ভাবে নয়। সব ই আতস বাজি। আকাশে নানা রঙের ম্যাজিক চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষন। একবার আমিও গেলাম দেখতে। সবাই বাইক , সাইকেল নিয়ে ভীড় করে। লোকে লোকে ঠাসাঠাসি অবস্থা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এত ভীড়েও কোন অসভ্যতা সহ্য করতে হয় না। আমাদের ভারতীয় মেয়েদের মেয়ে হয়ে ওঠা ইস্তক নিজের শরীর নিয়ে যে চুড়ান্ত অস্বস্তি আর লজ্জা নিয়ে মরতে হয়, এখানে তা নয়। আমাদের কেমন একটা অভ্যেস ই হয়ে যায় ভীড় দেখলেই ব্যাগটা বুকের কাছে তুলে বা হাত কে রেডি রেখে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা অকারন অস্বস্তি বা ব্যাথা পাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে, এখানে তা হয় না। কিন্তু এখানে সেক্স নিয়ে অত ট্যাবু নেই। বাচ্চাকাচ্চা বড় হয়ে গেলেই তারা পার্টনার খুঁজে নেয় আর সেখানে প্লেটোনিক লাভ বলে কিছু নাই। যদিও বিয়ের আগে বাচ্চা সমাজে অ্যাক্সেপ্টেড নয়। এবার ব্রেক আপ ও যথেষ্ট হয়, যখন ফাইনালি বিয়ে করতে যাচ্ছে তখন দুজনেই জানে যে অপর পক্ষ কৌমার্য্য রক্ষা করে রেখেছে এমন নাও হতে পারে। এমনকি মিল না হলে ডিভোর্স ও যথেচ্ছ হয়। তবে ঐ আর কি, পরকীয়াটা ও সমাজে মোটেই মেনে নেওয়ার নয়। মানে যখন যে রিলেশনেই থাক না কেন তার প্রতি দায়বদ্ধ থাকলেই হলো। আমার মাঝে মাঝে খটকা লাগে, আসলে আমাদের বিবাহ বহির্ভুত যে কোন সেক্স ই পাপ এই ভাবনাটা আর তার চেপে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা টা ই এই অসভ্যতার মূল কারন, নাকি আমাদের সমাজে মেয়েদের শারিরীক ভাবে হ্যারাস করে দমিয়ে দেওয়ার সহজ পদ্ধতি কাজে লাগিয়েই বেশিরভাগ ব্যর্থ সাইকো মানুষেরা সুযোগ নেয়।কে জানে! তবে যুগ পাল্টাচ্ছে এটাই আশার কথা।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১২:২৯642339
  • '-',
    আমার বড্ড বানাম্ভুল হয়।ঃ(

    এনিওয়ে থেঙ্কু।ভালোমানুষ বলার জন্য আরেক্টা।ঃ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:৫১642340
  • ৩৬। দিন চলে যাচ্ছে নিজের মত আর আমি ক্রমশ নিজেকে নিজের মতন গুছিয়ে নিয়েছি, রান্না, এইচবিও, স্টার মুভিস,ট্র্যাভেল অ্যান্ড লিভিং, বাংলা লাইভ, অর্কুট আর নিজের মনে ঘুরে বেড়ানো। দিব্যি আছি। কেবল ছেলের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ও কিছুতেই হস্টেল লাইফ মেনে নিতে পারছে না। তার উপর ঋভুর স্কুলের সিস্টেম অদ্ভুত। ওরা বাচ্চাদের কিছু বলবে না, ইন্টারন্যাশানাল স্কুল। কিন্তু কনসেপ্ট টা কলকাতায় নতুন আর টিচার থেকে অ্যাডমিন সব ই দেশের মানুষ। কাজেই সে এক প্রবল জগাখিচুড়ি অবস্থা। আর সেখানে বিরাট ক্ষমতাওয়ালা বাপ মায়ের ছেলেমেয়েরা পড়ে। আমরা আমাদের সর্বস্ব পন করে ছেলেকে ওখানে ভর্তি করেছি কারন আমাদের স্কুলিং সাধারন ছিলো, ভালো স্কুলের গ্রুমিং কতটা ভবিষ্যৎ গড়তে হেল্প করে তা আমরা জানি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। ছেলে ক্লাস টু থেকে সিক্স পর্যন্ত ঐ স্কুলে পড়েছিলো, যার ফল হয়েছিলো তার বেসটা পুরো ফাঁপা হয়ে গেলো, আর আমিও কাছে ছিলাম না। অবশ্য কাছে থেকেও কি করতাম কে জানে! যতদিন কাছে ছিলাম , নিজের সব কষ্ট ওর উপর উজার করেছি। ছেলেটা এমনিতেই সব সময় সিঁটিয়ে থাকত, তার উপর ওর একমাত্র অবলম্বন মাও দুরে চলে গেলো। কাজেই এক্কেবারেই ভেঙে পরেছিলো। আর তার উপর ছিলো সহপাঠিদের অমানুষিক অত্যাচার। সময়ে সময়ে বাচ্চারা যে কি হিংস্র হয়ে উঠতে পারে! আর অ্যাডমিন চলতো সেইসব বাঁদর বাচ্চাদের অসভ্য আর ক্ষমতাসম্পন্ন বাপ মায়েদের কথায়।কাজেই সেই সব বাচ্চাদের কোন শাসন করাই হত না। কোন ডিসিপ্লিন ছিলো না স্কুলে। ভালো বাড়ী থেকে আসা বাচ্চাদের ক্রমশ সরিয়ে নেওয়া হল। পরে থাকলো কেবল আমাদের বাচ্চাদের মতন বাচ্চারা আর পয়্সা আছে কিন্তু শিক্ষা নেই এমন কিছু বাড়ী থেকে আসা বাচ্চারা। আমায় টিচার রা কেবল ডে স্কলারদের কিছু মায়েরা আমার বন্ধু, তাদের মারফত কেবল ই জানাচ্ছিলো, ছেলেকে যেন হস্টেল থেকে তুলে নেই। নইলে মরে যাবে ছেলেটা। এদিকে সে কথা আমি বোঝাতে অক্ষম হচ্ছি বারে বারেই।
    বাড়ী এলাম। তখন আমি মোটামুটি চরম উদাসিন। কোন সম্পর্কই আর আমায় টেনে রাখে না। ছেলেকে গরমের ছুটি বাড়ি নিয়ে এলাম। আমার ছোট্ট ছেলেটা তার আগে আমায় ছেড়ে থাকার পর কাছে আসলেই আমায় জড়িয়ে ঘুমাতো। ঘুমের সময় আমি পালিয়ে না যাই। এবার দেখি অনেক দুরে গুটিশুটি করে শুয়ে আছে। ও ও , ওর ছোট্ট জীবনে মনে হয় সম্পর্কগুলো সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে গেছে।
    একদিন তখন বৃষ্টি এলো মনে হয়, ব্যাঙেরা ডাকছে। ঋভু ভয় পেয়ে কাছে এলো। আমি বললাম ভয় কি রে, ওরা আনন্দ করছে তো। ছেলে বললো, তাই বুঝি! আমাদের বেহালার বাড়ীটার চারপাশ (বাবার বাড়ী) এখন ও বেশ অন্যরকম । তখন ছেলে জিজ্ঞেস করলো ওরা ওরকম ডাকাডাকি করছে কেন! আমি ঢোঁক গিললাম। এদিকে একবার জার্নি টু মার্স এ নিয়ে গিয়ে বলেছিলাম, আমরা মার্সে যাচ্ছি, সেটা ও সত্যি বলে ধরে নিয়েছিলো, পরে সত্যিটা জানতে পেরে বড় কষ্ট পেয়েছিলো। তারপর থেকে আর মিথ্যে বলিনা ওকে। বললাম আসলে এবার ওদের বেবি হবার সময় আসছে কিনা। তখন ক্রমশ আমাকে ও প্রশ্ন করে চলেছে, তখন ও বুঝতে পারছি না এত প্রশ্ন কেন! আমায় জিজ্ঞেস করলো , তোমার বেবি আমি যখন হলাম তখন কি করে হলো, বাবা আর তোমার দুজনের ই তো আমি বেবি, তখন ঋভু ন বছরের। আমি বললাম, হ্যাঁ তো, বাবার একটা সেল আর আমার একটা সেল থেকে তুমি এলে, এখন মনে হয় এত না বললেও হত, তবে না বললে অনেক কিছুই অজানাও থেকে যেত। তখন ছেলে ক্রমশ আমায় চেপে ধরছে, বাবার সেল তোমার পেটুতে কি করে গেলো! আমি তো তোমার পেটু থেকে হয়েছি, বাধ্য হয়ে বললাম। সোনা সব কিছু জানার একটা সময় থাকে, তোমার এখন না জানলেও চলবে। না, বলো , আমার জিদ্দি ছেলে বললো, প্রসেসটাকে কি ফাক বলে। আমি হতভম্ব। বুঝলাম সব শিক্ষাই হচ্ছে হস্টেলে , পড়া বাদ দিয়ে। এবং যেহেতু সে বোঝার ক্ষমতায় আসে নি , কেবল জেনেছে আর তাও খুব ঘৃনা নিয়ে জেনেছে , কাজেই ছিটকে সরে গেলো। আমি যতই কাছে টেনে বলতে যাচ্ছি, শোন রে, সব কিছুই নানান ভাবে জানা যায়, কিন্তু জানা আর বোঝা এক নয় , কিন্তু সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঘুমিয়ে পরলো। এবার মনে হলো আমাকে আর দুরে থাকলে চলবে না। এদিকে মানিকের ও আমাকে দরকার, ঋভুর ও। কঠিন সমস্যা। আর মানিকের ফিরে আসার পথ ও বন্ধ হয়ে গেছে, ও ভেবেছিলো কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ী ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করবে। আমাদের একটা ঘরের সেই মত রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছিলো, কিন্তু ঐ যে সম্পত্তির মত বিষ আর হয় না, আমাকে তাড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি ভয়ের চোটে বাড়ী প্রোমোটারকে দিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে ততদিনে। ফেরার ও সব রাস্তা বন্ধ। আর সব সম্পত্তি নিয়েও লোকে তাকে সুখে রাখবে না এটাও মানুষ সময় থাকতে বোঝে না , এটাই মুস্কিল, যখন সময় হয়, তখন বেশিরভাগ মানুষ ই বোঝাবুঝির উর্দ্ধে চলে যায়।
    ঋভু হস্টেলে ফিরে গেলো। মানিক এসে ফিরে গেলো। আমার ও যাবার সময় এলো, কিন্তু আমরা দুদিন আগে পরে যাচ্ছি, একসাথে টিকেট কাটা হয়নি, কাজেই একই ফ্লাইটের টিকেট পাওয়া যায় নি। আর আমি যেদিন যাবো তারপর দিন মা আর বাবা(ঋভুর লোকাল গার্জেন)কাশ্মিরে ভাইয়ের কাছে চলে যাবে বেশ কিছুদিনের জন্য। আর মুস্কিল হলো ভাইদের এয়ারফোর্স বেসে জ্যামার লাগানো থাকে , কাজেই মাদের মোবাইল কাজ করবে না। ভাইকেও বিদেশ থেকে ফোন করা যাবে না, করন ওকে তাহলে বারে বারেই জেরা করা হবে তা নিয়ে। এবং স্বাভাবিক ভাবেই তখন ই সব ঝামেলা বাধবে। সুস্থ ছেলেকে দিয়ে এলাম হস্টেলে। পরের উইকে যখন ফোন করছি ছেলে ফিস ফিস করে বলছে, মা আমার খুব শরীর খারাপ করছে। আমি তখন আর কি করি, বললাম তুমি নার্স ম্যামকে গিয়ে বলো, সেও ফোন রেখে দিলো। দুদিন পর খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি অ্যাডমিন আর ঋভুর খোঁজ দিতে পারে না, এমনকি ওকেও ফোন দেয় না। ক্রমশ আমরা অধৈর্য্য হয়ে উঠছি। মাও কলকাতায় নেই, কেউ ই নেই যে ছেলেটার খোঁজ দিতে পারে। শেষে ঋভুর ক্লাসটিচারকে বাধ্য হয়ে আমরা ফোন করি, তিনি বলেন , আপনারা জানেন না, ওর তো পক্স হয়েছে। সারা স্কুলে ছড়িয়ে গেছে। হস্টেলের বেশিরভাগ বাচ্চাই তো বাড়ী চলে গেছে। তখন আরেক বন্ধু কে ফোন করে জানি, তাই , প্রায় পুরো স্কুলে হু হু করে ছড়িয়েছে রোগ। তার ছেলের ও। তখন ই আমরা প্রিন্সিপালকে ফোন করি, আমরা সব সিচুয়েশন জানাই আর ছেলের সাথে কথা বলতে চাই। আর কেবল ই আমাদের কনফিউসড করতে থাকে স্কুল কতৃপক্ষ। শেষে মানিক( তখন ছেলের টেনসনে সেও অসুস্থ হয়ে গেছে) প্রিন্সিপালকে খুব কড়া ভাষায় বলে এক্ষুনি আমার ছেলের খোঁজ না পেলে আমি ব্যবস্থা, নেবো। প্রিন্সিপাল ও বলেন আপনি জানেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, একটা স্কুলের প্রিন্সিপাল আমি(তাঁর দোষ ছিলো না, আসলে ঐ স্কুলের প্রিন্সিপালরা অ্যাডমিনের হাতের পুতুল হত) এদিকে ছেলের বাবাও বলে, আপনি জানেন তো আমি একটা ছোট্ট বাচ্চার বাবা, যে তার বাচ্চাকে আপনাদের দায়িত্বে দিয়ে হাজার হাজার মাইল দুরে রয়েছে।তখন উনি অবশ্য কোয়াপরেট করলেন। হস্টেল সুপারকে ধরে এনে জানতে চাইলেন ছেলে কোথায়, আর জানা গেলো ছেলে স্কুলে নেই, স্বদেশ বসুতে ভর্তি করে দিয়েছে, যেখানে স্কুলের কেউ নেই, আমার ন বছরের ছেলেটা একা একটা ঘরে পরে রয়েছে অসুস্থ অবস্থায়। মানিক তো তখন ই চেঁচাতে শুরু করলো, আপনি মানুষ, ছেলেটাকে ওখানে রেখে এখানে বসে আছেন, শিগ্গিরি সেখানে যান, আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলবো, আমি কিছুতেই আপনাকে রাত্রে শান্তির ঘুম ঘুমাতে দেব না(প্রসঙ্গত সেখানে স্কুলের কেউ ই ছিলো না) , এইসব। কোনমতে তাকে থামানো হলো। তখন আমার আর এক সদ্য বন্ধুকে ফোন করলাম। ওর ছেলেও আমার ছেলের সাথে একই ক্লাসে, আর হস্টেলে থাকে। শিরাকোলে ওদের বাড়ি।(বলেছিলাম না, আমার বন্ধু ভাগ্য বেশ ভালো) শুনলাম ওদের ছেলের ও পক্স হয়েছে, ওরা বাড়ী নিয়ে গেছে। ওরা শিরাকোলে প্রায় জমিদার দের মতন অবস্থার মানুষ। আর মনটাও ততটাই দরাজ। আমরা বললাম সমস্ত ব্যাপার। বললাম প্লিজ একটু খোঁজ নেবেন ছেলেটার। তখন ছেলেটির বাবা বললেন, একদম চিন্তা করবেন না, শুধু খোঁজ নয়, আমরা নিয়ে আসছি ওকে আমাদের বাড়ীতে। আপনি স্কুলের সাথে কথা বলে নিন। আমরাও কথা বলে অ্যাপ্লিকেশন ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দিলাম। উনি পরদিন সকালেই নিয়ে গেলেন আর খুব যত্নে রেখেছিলেন। এ ঋন কখন ও শোধ করা যাবে না। পরে যখন মায়েরা এলো, তখন ছেলে পুরো সুস্থ।আর তখন ই আমি বোঝাপড়া করে নিয়েছি যে এবার একেবারেই ফিরছি।সেও আরেক লড়াই। আর নয়, ছেলেটার আমাকে বেশি দরকার।কাজেই বাকি যে কদিন থাকলাম হো চি মিনে পুরো সময়টার এক কনাও নষ্ট হতে দেই নি । খুব কম সময় আমি মনে হয় নিজের মতন ভালো থেকেছি, আর তখন ই ভালো থাকি যখন আর কিছুর পরোয়া করি না এরকম মনের অবস্থা হয়ে যায়। যাদবপুর পলিটেকনিকের মাস কয়েক যে পড়েছিলাম সেই সময়টার মতন নির্ভার আনন্দে কেটে গেলো বাকি মাসকয়েক।প্রিন্টিং এও খুব লড়ে ভর্তি হয়েছিলাম, বাবার সাথে জেদ করে। বাবা চায়নি আমি ভবিষ্যতে কাজ করি, কাজেই পলিটেকনিকে কিছুতেই ভর্তি হতে দিতে চাইছিলো না, জয়েন্ট তো আমি দিই ও নি। প্রিপারেশনের কোন সুযোগ ই ছিলো না। তবে বাবার ই জিত হয়েছিলো। আমি পড়া ছাড়তে বাধ্য হলাম শেষ পর্যন্ত। যদিও বাবা আর প্রত্যক্ষ দায়ী ছিলো না। তবে এখন নিজেকেও দায়ী বলে মনে হয়, বড্ড নরম আর ন্যাকা ছিলাম। এখনকার আমি হলে অন্যরকম সব কিছু হত হয়তো। এখন ঐ গানটা বড় আপনার লাগে, গিভ মি সাম সানসাইন/গিভ মি সাম রেইন/গিভ মি এনাদার চান্স , ও আই ওয়ান্না গ্রো আপ ওয়ান্স এগেন।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০642341
  • বানান আর ভাষাতে ভুল তো ছিলোই, এবার যতিচিন্হের ও চরম অবস্থা।ঃ(
  • সিকি | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৯642342
  • পড়ে গেলাম।

    তোমার তখনকার স্ট্রাগলের কিছুকিছু পড়েছি বাংলালাইভে, আজ আবার ফিরে পড়লাম।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৩৪642343
  • ৩৭। আবার পুজো এলো, তারপর বড়দিন, পয়লা জানুয়ারী, তেত । এরমধ্যে অনেকে হো চি মিন ছেড়ে চলে গেলো, অনেক নতুন মুখ এসেছে। এইসব আসিয়ান দেশে লোকে তিন চার বছরের জন্য আসে বড়জোর, তারপর আবার চলে যায়। কেবল যাদের ব্যবসা তারাই থেকে যায় আর তাদের মধ্যে বাঙালী একজন কি দুজন হয়তো। মানিকের মন খারাপ হয়ে যায়, আর নতুন বন্ধু বানাতে চায় না, সেই তো বাড়ে বাড়ে মন খারাপ করে ফেলা। মাঝে মাঝে আমার বড় কনফিউশন হয়, ম্যাচিওর্ড কাকে বলে, যে হাবভাবে পরিনত না যে ভাবনায়! আমার স্বভাব দেখে আমাকে অপরিনত মনে হয়, কিন্তু সো কলড পরিনত দেখতে মানুষদের থেকে মনে হয় আমি অনেক পরিনত ভাবে ভাবতে পারি। মানিককে কেমন একগুঁয়ে আর রাগী একটা বাচ্চা মনে হয়, যে কিনা কখন ও সেভাবে ভালোবাসা পায়নি বলে ভারি কাঙাল ভালোবাসার, অথচ সেটা প্রকাশ করতেও ভারি ইগোতে বাধে তার। আর নিজের সব স্বাভাবিক প্রকাশ লুকিয়ে রাখতে গিয়ে আরো আরো নিজের মধ্যে ঢুকে থাকে। বা অদ্ভুত সব প্রকাশ।
    যাহোক এবার ফেব্রুয়ারী তে ঠিক হলো আমরা দালাত যাবো। ভাষা দিবসের দিন আমাদের দুজনের মতে নিজের নিজের বলতি বন্ধ হয়ে ছিলো। আর বেশিরভাগ বিবাহবার্ষিকিতেই আমরা আলাদা থাকি, কাজেই এবার চলো ঘুরে আসি। সঙ্গে পিউ আর মানসদাও ছিলো। দারুন মজার ট্রিপ ছিলো সেটা।
    আমরা বাসে করে দালাত যাবো। এখানে সব বাস ই এসি বাস। আমরা খেয়ে তেয়েই বাসে উঠলাম। জার্নি শুরুর আগেই ওরা কম্বল, টিস্যু আর জলের বোতল দিয়ে গেলো সবাইকে। সারারাত বাস চলবে, সেই ভোরবেলায় যাত্রা শেষ হবে। হোটেল আগে থেকেই বুক করে রাখা হয়েছিলো, বাসকে বলা হলো, সে আমাদের হোটেলের গেটে নামিয়ে দিয়েই আরো এগিয়ে যাবে।সেই নর্থ বেঙ্গল রকেটের কথা মনে পরে যাচ্ছিলো। বিয়ের পর পর শিলিগুড়ি যে কবার গেছি, মোটামুটি রকেটেই যাওয়া আসা ছিলো। তবে সে পুরো রোলার কোস্টারে চড়ার অভিজ্ঞতা হত, আর প্রত্যেকবার ই যাবার সময় কোথাও না কোথাও বাস খারাপ হত আর নেমে অন্য বাসে চড়তে হত।এই বাস অবশ্য ভীষন আরামদায়ক।অনেকক্ষন মানিকের মাথা চিবিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, ঘুম ভাঙতেই দেখি পাহাড়ে উঠছি। আহা! পাহাড়, আমার মন ভালো হয়ে গেলো। যদিও আমাদের উত্তরভারতের বা পুর্ব ভারতের পাহাড়ে চড়ার মজা আলাদা। চোখ, মন জুড়িয়ে যায়। এখানে তেমন নয়। পরে শুনলাম এখানে রাসায়নিক বোমা ফেলা হয়েছিলো যুদ্ধের সময়, বনাঞ্চল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিলো, তাই এত রুক্ষ, অবশ্য এখন আবার ওরা নতুন করে দেশ সাজাচ্ছে।
    আমরা ঠিক ভোর পাঁচটায় দালাতে পৌছে গেলাম। এই শহরটা একটা প্লেটিউ এর উপর গড়ে উঠেছে। ভারী সুন্দর শহর।ভীষন সবুজ আর পরিচ্ছন্ন । পিউ বললো পুরো নাকি শিলং এর মত, আমি কখন ও শিলং যাই নি, কাজেই জানিওনা। এবার বাস নামালে কি হবে, হোটেলের লোকেদের ঘুম ঠিক করে ভাঙে নি। আমরা সেখানে ব্যাগ জমা করে বেরিয়ে পরলাম, কারন মনে হচ্ছে এ হোটেলে বারোটার আগে আমাদের ঘর দেবে না। দেখতে দেখতে ঠিক শহরের কেন্দ্রে সায়গন দালাত হোটেল আমাদের ভারি পছন্দ হলো। এটা একটা ফোর স্টার হোটেল । তাও আমরা সাহস করে ঢুকেও পরলাম। ঘর ও নিলাম। সে এক দারুন ব্যাপার। আগাগোড়া রেড কার্পেট মোরা সিঁড়ি, করিডর। অনেক পরে ঋভু গল্প শুনে বেজায় রেগে গেছিলো, তোমরা আমায় ছেড়েই ফোর স্টার হোটেলে থাকলে। এবং স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ব্রেকফাস্ট ঘর ভাড়ার সাথেই আর সেটা বাফে। এলাহি ব্যাপার থাকতো। আর আমি তদ্দিনে শঙ্করলালের (তাইতো?) লেখা ভ্রমনে পরে জেনে গেছি একটা হেবি ব্রেকফাস্ট করে, দুটো ফল হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়, তারপর সস্তার লাঞ্চে, এবং আমার জন্য তো নালাঞ্চেও কোন প্রবলেম নাই।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৩৫642344
  • সিকি,
    ঃ)
  • de | 190.149.51.68 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১২:৩৭642345
  • ঋভুর কষ্টের কথা আগেও পড়েছি - এখনো পড়লাম - কিকি একদম ঠিক ডিসিশন নিয়েছিলে - আরো লেখো - খুব ভালো হচ্ছে-

    কেন জানিনা বাচ্চাদের বোর্ডিং স্কুলে দেওয়ার আমি ঘোরতর বিরোধী!
  • সে | 203.108.233.65 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:০৬642347
  • খুব ছোটো বাচ্চাদের হোস্টেলে রাখা প্রচন্ড রিস্ক। আমার আরো ভয়ানক অভিজ্ঞতা আছে এব্যাপারে। লেখাটা খুব ভালো হচ্ছে। খুব অনেস্ট লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন