এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এখানেও থাক

    kiki
    অন্যান্য | ১৫ জুন ২০১৪ | ৭৫২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 69.92.192.75 | ০৫ জুলাই ২০১৪ ১৩:২৪642446
  • কী সৌভাগ্য যে এই টই ঘুমিয়ে পড়েনি ! :P
    অপেক্ষা করে করে আমিই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম |
  • kiki | 127.194.75.179 | ০৫ জুলাই ২০১৪ ১৪:১৭642448
  • তৃষা,
    :P :D
  • kiki | 127.194.75.179 | ০৫ জুলাই ২০১৪ ১৪:১৭642447
  • ২১। খেতে গেলাম একেবারে যেখানে শুধু ভিয়েতনামিসরা যায় এরকম রেস্তোরাঁতে। ওরে পিসেমশাইরে(সৌজন্যে ডিডিদাদা) ! সেই স্টিকি রাইসের সাথে একগাদা ঘাসপাতা সিদ্ধ, যাদের উপর আমরা যেমন শIকের উপর বড়ির গুঁড়ো দিয়ে সাজাই , তেমনি আধসিদ্ধ পোর্কের কিমা। আর সবাই জলের গ্লাসের মত বিয়ার নিয়ে বসেছে, সে যে কি অসাধারন গন্ধের সমাহার, এক পেট খিদে নিয়ে ভ্যাঁক করে কেঁদে ফেলবো কিনা ভাবছি, কোনরকমে ভাতে ন্যুকতুঙ(এক ধরনের সোয়াস্যস) দিয়ে আর লঙ্কা চেয়ে( যে আমি নাকি ঝাল মোটেই খেতে পারতাম না) তাই দিয়ে খেলাম। ঋভু তো চকোলেট আর কোক দিয়ে চালিয়ে নিলো। আর মুস্কিল হলো, জ্যাঙেদের কেমন ধারনা হলো আমি লঙ্কা (টিয়াপাখির মত)আর ঋভু কোক আর চকোলেট খেয়ে বেঁচে থাকি। সে নিয়ে একবার এই ট্রিপেই কি বিপদে পরেছিলাম। আসছি সেসব গল্পে। কিন্তু ঝাল নিয়ে যখন শুরু হলো তখন আর কিছু গল্প বলি।

    তখন ইলেভেন না টুয়েলভে পড়ি। আমাদের সে যুগে ছেলেপিলে মাধ্যমিক দিয়েই হঠাৎ মাচো হবার ব্যপক চেষ্টায় লাগতো। তো তার মধ্যে আনকাট আমি পুরো বেমানান। তো পাব্লিক আমায় খুকি নাম দিয়ে দিলো, চাপের আরো কারন ছিলো , একদিন বন্ধুরা আমাদের বাড়ী এসে দেখলো টিভির মাথায় আমার পুতুল, তো তাদের ধারনা হলো আমি তখন ও পুতুল খেলি। কিন্তু মজা হলো, সেভাবে পুতুল আমি কখন ও খেলেছি বলে মনে পরে না। যদিও পুতুল জিনিসটা এখন ও আমার বড় প্রিয়। আমি খুব ছোট্ট থেকেই পুতুলের সংসার গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসতাম। মা আমাকে বেশ সুন্দর সব পুতুলের বাড়ী, ড্রেস, বিছানাপত্তর বানিয়ে দিতো নিজের হাতে, আমি সেসব সুন্দর করে গুছিয়ে সেটা খানিক চেয়ে দেখে বই নিয়ে বসে পরতাম। কখন ও রান্না করেছি বা পুতুলকে স্নান , খাওয়া করিয়েছি বলে মনে পরে না। পরে কখন ও কারোর সাথে খেলনা বাটি খেলতে গিয়ে তাদের সংসারের কাজে নিপুনতা দেখে খুব অবাক হতাম , কিন্তু আগ্রহ পেতাম না। এখন তাই মনে হয় যে সংসার করার ঝক্কি আমার নেওয়া উচিত হয়নি। খুব বেমানান এই পার্টে আমি।

    তো এইরকম অবস্থায় একদিন সব বন্ধুরা ফুচকাওয়ালা না আলুকাবলিওয়ালার চারদিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছি। আমি মনে হয় বললাম ঝাল দিও না, তো আওয়াজের ঠেলায় টেঁকা দায়। তখন বেজায় কষ্ট হলো, বললাম, দাও , বেশি করে দাও। বন্ধুরাও তাতাতে লাগলো, আমাকে আর আলুকাবলিওয়ালাকে, দুজনকেই। মনে হয় অত ভেবে করে নি। কারন তখন ওরাও ছোট। আলুকাবলিওয়ালা প্রায় লঙ্কা কুঁচি দিয়েই সেটা বানিয়ে দিলো। আর আমি হুশ হাশ করতে করতে খেয়ে তো নিলাম, তারপর বাড়ী গিয়ে প্রবল বমি আর জ্বর। তার আগে জ্ঞানে কখনো বমি করেছি বলে মনে পরে না, আর অসুখ ও আমার কম ই করতো। সেই থেকে বেজায় ভয় হয়ে গেলো ঝালে।

    তারপরের ঘটনা সেকেন্ড ইয়ারে। তবে সেটা ভয়ঙ্কর নয়। আমরা তখন কাকলিদের বাড়ী অঙ্ক করতে যেতাম। স্যারের নামটা এই মুহুর্তে কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তিনি কথা বললেই সিস বেরিয়ে যেত, কি একটা প্রবলেম ছিলো ওনার। আমাদের সঙ্গেই যে কেন এসব হত, তার আগে যার কাছে অঙ্ক করতাম সেখানে আমাদের ব্যাচ ভেঙে গেলো(যাবে নাই বা কেন! স্যর মাসে হয়তো দুদিন ঠিক করে পড়াতেন, আর আমাদের ও আগ্রহ ছিলো না) আর আমাদের তাড়িয়ে দিলেন। এর আগে ইলেভেন টুয়েলভে দীপুদার কাছে হলো। ওফ ! কত কত গল্প। দীপুদা আর এই স্যরকে নিয়েই তো পাতা ভরে যেতে পারে। আমরা পাঁচটা ছেলে আর আমি একা মেয়ে যেতাম দীপুদার কাছে পড়তে। গিয়েই সে ঘরে একমাত্র আসবাব , একটা সোফার নীচে কে যেন ঢুকে ঘুমিয়ে পরতো। বুলু, আমাদের চকোলেট বয়, সে রোজ ই কিছু না কিছু নিয়ে খেলতে শুরু করতো, বাকিরা, ইনক্লুডিং দীপুদা, তেড়ে গল্প করতো, আর আমি হাঁ করে শুনতাম। পুরো একটা বাঁদর ব্যাচ। শেষে আমাদের টেস্টের আগে তাড়িয়ে দিলেন, আমাদের দ্বারা কিছু হবে না বলে। দীপুদা আমাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, লোফার লুচ্চা কারা হয় জানো! যারা মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে যায় আর হায়ার সেকেন্ডারিতে পি ডিভিশন। আমাদের লক্ষ্য করেই , সন্দেহ নেই। ঐ দুবছর মোটামুটি ডিস্ট্রিক্ট কমপিটিশন, স্টেট কম্পিটিশন, ইউথ উইক ক্যাম্প, ন্যাশানাল কম্পিটিশন, এসব করে মনের সুখে কাটিয়ে দিয়ে টেস্টের আগে মনে পরলো , এবাবা! পরীক্ষা এসেই গেলো! এদিকে তখন নিজে পাশ করবো কিনা ঠিক নেই, আরেকজন আমায় প্রোপোজ করলো আর বন্ধুরা এসে বলতে লাগলো, ওরে! ও যে পড়াশুনা ছেড়েই দিয়েছে( এ এক অদ্ভুত ব্যাপার ছিলো , ছেলেরা প্রেমে পরলেই এই এক বাহানা দিতো তখন, কেন কে জানে!) তো তাকে বললাম, তুই ফার্স্ট ডিভিশনে গেলে আমি রাজি। কারন জানতাম তিনি ও যাবেন না। সাপ ও মরলো, লাঠি ও ভাঙলো না।(ফিক!)

    কাকলিদের বাড়ীতে আমাদের যে গ্রুপটা ছিলো সেটা পুরো ঝাঁসির রানীর বাহিনী বলা যায়। কাকলি, রুমি, কেয়া, মধুমিতা, সুমনা, সুতপা, সঙ্গীতা আর আমি। একদিন কারেন্ট অফ হয়ে গেলো আর স্যর আঁক করে চিৎকার। কিছু বোঝা গেলো না, পরে জানলাম সুতো স্যরের চুল টেনে দিয়েছে না কি যেন একটা ঘটিয়েছে। কাকলিদের বাড়ী আরো দুজন মেয়ে আসতো আমাদের ব্যাচের, কিন্তু পড়তে নয়, বন্ধু হিসেবে আড্ডা দিতে , ওরা অজন্তা কোয়ার্টারে থাকতো। অসাধারন সুন্দরী ছিলো। সেই প্রথম দেখলাম অত সুন্দর মুখে কি ফ্লুয়েন্ট গালি ছোটে। ঠিক যেন হাইড্রেন পুরো।

    যাহোক, কাকীমা আমাদের একদিন শুঁটকি মাছ খাওয়াবেন। আমরা কেউ খাইনি তার আগে, কেয়া আর মধুমিতা কে বাদ দিলে। দারুন নাকি খেতে হয়। তখন সবাই বললো, এই মানসী আর সুমনা তো ঝাল খেতে পারে না। আর শুঁটকি তো ঝাল ছাড়া ভালো লাগবে না। তাই কাকীমা আবার আমাদের নাম করে , সবার জন্যই বোঁদের ব্যবস্থা ও করলেন। কিন্তু সে ঝাল সহনীয় ছিলো টেস্টের জন্য। আমি আর সুমনা ও চোখের জল মুছতে মুছতে দিব্যি খেয়ে নিলাম আর বোঁদে ও একটু বেশী পেলাম। শুনলাম কেয়া আমাদের বন্ধুদের নিয়ে লিখছে। কেয়া দারুন লেখে।অপেক্ষায় আছি কবে পড়তে পাবো। আমাদের এই গ্রুপটা দারুন আনন্দ করেছি সেসময়।
  • kiki | 127.194.68.135 | ০৫ জুলাই ২০১৪ ১৮:২২642449
  • ২২। সেদিন একটা মেঘ মেঘ দিন ছিলো। আর বিকেলে মানিকরা তিনজন যাবে ওদের কাজে। আমি ঋভুকে নিয়ে বেরোলাম। যেখানে আমরা ছিলাম তার খুব কাছেই একটা লেক ছিলো, যাকে ঘিরে পার্ক রয়েছে। হ্যানয়ে প্রচুর লেক রয়েছে, আর লেক ঘিরে সবুজ পার্ক, যেখানে সকাল সন্ধেতে জনগন অক্লান্ত ভাবে হেঁটে চলেছে বা ব্যায়াম করে চলেছে, কিছুতেই মোটা হওয়া চলবে না। ওদের এই স্বাস্থ্য বাতিকটা আমার দারুন লাগে। বয়স্ক মানুষরাও এখানে বেজায় ফিট। আর সবথেকে ভালো লাগে মহিলাদের দেখে, তারা পুরোপুরি জীবনের আনন্দ গুলো নিতে জানে। সন্ধে হলে দিব্যি পার্কে পার্কে আড্ডা দেয়। এমনকি উইকেন্ডে দল বেঁধে ঘুরতে যায়, হৈ, হল্লা নিয়ে রয়েছে। যেখানে আমাদের দেশের ঐ বয়সী বেশিরভাগ মানুষ ই, ছেলে মেয়েতো মানুষ হয়ে গেছে এবার কি করবো ! এইরকম অবস্থায় পৌঁছায় বা কোন গুরুদেব বা ঠাকুরের সেবায় লেগে যায় আর সেই ভালো লাগে না অথচ নিজেকে ভালো দেখাতে হবে বলে এসব করতে গিয়ে প্রবল ফ্রাস্টু খেয়ে কেউ অসুখ বিসুখ নিয়েই হা হুতাশ করে, তো কেউ কেউ আবার কাঠি করাই জীবনের ব্রত নিয়ে ফেলে।সিস্টেমটাই এমন আমাদের সমাজের যে উপায় ও খুব একটা কিছু থাকেনা। অবশ্য সময় পাল্টাচ্ছে , এটাই আশার কথা।

    আমরা তাড়াতাড়ি ই ফিরে এলাম।ঋভু ভয় পাচ্ছে, অচেনা জায়গা।আমার পেটুক ছেলেকে ভয় ভাঙানোর জন্য একটা আইসক্রীম কিনে দিয়ে ফিরে চললাম। মানিক বলে দিয়েছিলো কখন ও হারিয়ে গেলে একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিবি, এখানে দুটো বাড়ীর পরের বাড়ীটাতেও ট্যাক্সি চড়ে যাওয়া যায়। তারা যাবো না বলতে জানেনা। আর ব্যাগে হোটেলের একটা কার্ড রাখবি, সেটা ট্যাক্সিওয়ালাকে দেখালেই চলবে। ও পৌঁছে দিয়ে যাবে। ফেরার পথে দেখলাম রাস্তার দুপাশে যেসব দোকান রয়েছে তার বেশিরভাগ ই হাতের কাজের দোকান। সেখানে কাঠের উপর মাদার অফ পার্লের কাজের দারুন সব জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে, যেমন গয়নার বাক্স , ট্রে, ফুলদানী এইসব, দারুন সব ওয়াল হ্যাঙ্গিঙ্গ ও রয়েছে। তাছাড়া সিল্কের কাপড়ের ও নানান জিনিস, হাত ব্যাগ, এইসব।আরো আছে রূপোর তৈরী নানান জিনিস, রকমারি বক্স, লাইটারের খাপ, গয়না। এই দোকানগুলো বেশিরভাগ ই মেয়েরা চালায়। তারাই মালিক , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এরা গল্প করতে খুব ভালোবাসে। দোকানে ঘুরে দেখতে কোন বাধা নেই। আর রয়েছে ছবির দোকান। এখানকার লোকেদের হাতের কাজ অসাধারন। খুব নিঁখুত কাজ হয়, কাজের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে এরা। একবার আমার ঘরে পর্দা টাঙাতে এসেছিলো, প্রায় একঘন্টা ধরে পর্দা ঠিক করেছিলো, কোথাও কম ভাঁজ, কোথাও বেশি যাতে না হয়, তাই। এইসব ছবির দোকানে বেশিরভাগ ই তেল রঙের ছবি, বিখ্যাত ছবিদের নকল বা ভিয়েতনামিস জীবন যাপনের নানান ছবি। এসব দেখতে দেখতে হোটেলে ফিরে এলাম। ভিয়েতনামে যত কম পয়সার হোটেলেই ওঠা যাক না কেন, পরিস্কার টাওয়েল, বিছানা, পরিচ্ছন্ন বাথরুম, একটা টিভি , একটা ছোট ফ্রিজ অবশ্যই থাকবে।

    রাতে আমরা আর বাইরে যেতে চাইলাম না, আমার আর ঋভুর খাবার ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাকিরা বাইরে খেতে চলে গেলো। আমাদের জন্য মিক্সড ফ্রায়েড রাইস বলা হয়েছিলো, আর আমি বলে দিয়েছিলাম নো ফিস, নো মিট। ওরা তাতে বেজায় ঘাবরে প্রচুর চিংড়ি আর মাসরুম আর ডিম ওয়ালা একটা ফ্রায়েড রাইস পাঠালো যেটা দিব্যি খাওয়া যায়। আমরাও পেট পুরে খেলাম আর ঠিক করলাম আমি আর ঋভু হোটেলেই খাবার এভাবে আনিয়ে নেবো আর এই ডিশটাই চাইবো।
  • kiki | 127.194.69.41 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১০:২৮642450
  • ২৩। পরদিন সকালে আবার আমি আর ঋভু ই হোটেলে রইলাম, বাকিরা বেরিয়েছে ব্যবসার কাজে। আমরাও ব্রেকফাস্টো সেরে বেরিয়ে পরলাম। সেই লেক পর্যন্ত ই আমাদের দৌড়। লেকের ঠিক সামনে রয়েছে একটা হাইল্যান্ড কাফে। দারুন কফির গন্ধ, কিন্তু হাতে ডঙের পরিমান যা, তাতে সেখানে যাওয়া যায় না। প্রসঙ্গতঃ ভিয়েতনামের কারেন্সি ডঙ , সেই সময় তার মুল্য এরকম ছিলো, যে আমাদের এক টাকা , তিনশ ডঙের সমান। ব্যাপারটা এইরকম লাখ লাখ ভিয়েতনামিস টাকা পকেটে করে ঘুরতে হয়। আর সেখানে জিনিসের দাম বড্ড বেশি। একবার কোন পরিসংখ্যান থেকে দেখছিলাম খরচ সাপেক্ষ শহর হিসেবে হো চি মিন হ্যানয়ের বেশ অনেক পরে লন্ডনের নাম, আর ভারতের একমাত্র বোম্বে সেই লিস্টে আছে , তাও বেশ পিছনে। ভাগ্গিস!

    লেকের মাঝে একটা ছোট্ট আইল্যান্ড আছে, একটা সরু কাঠের ব্রীজের রাস্তা গেছে সেখানে। আমরা সেই মন্দিরে চললাম। এখানকার মন্দিরগুলো অনেকটা কম্বোডিয়ার মন্দিরের মতন ই দেখতে। একতলা, ছাদ অনেকটা ত্রিকোন ধরনের। দেওয়াল কাঠের বা ইঁটের, কিন্তু রঙ (ভিতরের দেওয়ালের) বেশ ডার্ক , কেমন অস্পষ্ট আলো আঁধারি ধরনের, যেমন সাধারনতঃ আমাদের হিন্দু মন্দির গুলো হয়। কি যেন লুকিয়ে রাখতে চায়, রহস্য থাকে। এই অস্পষ্টতার মধ্যে কিভাবে মন পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে কে জানে! এখানে ঠাকুরের মুর্তি হিসেবে লাফিং বুদ্ধা ধরনের একগাদা মুর্তি থাকে, কন্ফুসিয়াস মতাবলম্বীদের ঠাকুর দেবতারা বোধ হয়। ভিতরে কেবল ঠাকুরের ভোগ দেওয়া হয়। কোন ফুলের মালা বা ফুল নয়। আর ভোগে কাঁচা গোটা ডিম, ছাল ছাড়ানো গোটা শুকর , ফল সব ই থাকে। এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লেগেছে, নিজেরা যা খায়, যা খেতে ভালোবাসে , সব ই দেবতাকে নিবেদন করে। খাবারের মধ্যে ও পবিত্র, অপবিত্র এসব ভাগ রাখেনি , হিন্দু ঠাকুর পুজার মতন বড় হিপোক্রিসি বোধহয় আর কোন ধর্মে নেই। মন্দিরের বাইরে একটা ঘরে রয়েছে এই লেক থেকে ধরা একটা বিরাট কচ্ছপ, যেটাকে স্টাফ করে রাখা আছে। আর মন্দিরের বাইরে বিশাল উঠোনে একটা বিরাট ধুপদান রাখা আছে, এটা বালিতে ভরা, বিরাট কাপের মতন দেখতে,পিতলের তৈরী, কাপের দুটো হ্যান্ডেল থাকলে যেরকম দেখতে হবে। তাতে বিরাট বিরাট ধুপ জ্বলছে। তাও রক্ষে, মন্দিরের ভিতরে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় দমবন্ধের ব্যবস্থা নেই। পুরী বা কালিঘাট বা যেকোন মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে হবে ভাবলে যে আতঙ্ক জাগে, এখানে সেটা অন্তত হয় না। আর চারিদিকে রয়েছে সেই আদ্দিকালের বড় বড় গাছেরা, যারা জায়গাটাকে প্রাচীন সময়ে থামিয়ে রেখেছে।

    মন্দিরে অনেকটা সময় কাটিয়ে বাইরে এসে দেখি সিক্লো ওয়ালারা সব লেকের বাইরে গোল রাস্তাটাতে ট্যুরিস্টদের নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। এই সিক্লো ভারী মজার জিনিস। এটা অ্যাকচুয়ালি সাইকেল রিক্সা, কিন্তু এর সাইকেল টা থাকে পিছনে , সিট থাকে সামনে।সিটটা নীচু হয়, সিক্লো ওয়ালার বসার জায়গা এরকম হয় যে সে উঁচুতে থাকে, ফলে রাস্তা দেখতে অসুবিধা হয় না। ঋভু বায়না শুরু করলো সিক্লো চড়বে বলে, আসলে ছেলেটা বরাবরের কুঁড়ে, একটু হাঁটতে চায় না। তবু খানিক এ দোকান , সে দোকান ঘুরে, কতগুলো ফোল্ডিং পাখা, এটা সেটা কিনে আমরা সিক্লোতে উঠলাম, ওদের অদ্ভুত ভাবে বোঝাতে হয়, বললাম রাউন্ড রাউন্ড বলে পার্ক টা দেখিয়ে হাত দিয়ে গোল সার্কেল করে দেখালাম, আর নিজের মনেই হেসে ফেলছি, তারপর হোটেলের কার্ড, সেও দেখি একগাল হেসে বুঝেছে জানিয়ে দিলো, তারপর হাউ মাচ ডঙ? এটা ওরা বেশ বোঝে, মোবাইলে সংখ্যাটা দেখিয়ে দিলো, তারপর হাল্কা দরাদরি, তারপর উঠে পরলাম ঋভুকে কোলে নিয়ে, ও হ্যাঁ, এখানকার সিক্লো একজন বসার মতন জায়গা রাখে, আমাদের রিক্সায় যেমন দুজনের সিট , তেমনটা নয়।

    তারপর ফিরে নিজেদের লাঞ্চ অর্ডার করে দিলাম সেম সেম বলে, একই রকম বলতে গেলে দুবার ইংরাজির সেম সেম বলে এরা। এই কদিনে বেশ কয়েকটা ভিয়েতনামিস শব্দ শিখেছিলাম, যেমন গুড মর্নিং বা হ্যালো হলো সিন চ্যাও, খম মানে না, ডুং হ্যাঁ, চায়ে ছায়ে হলো ডাঁয়ে বাঁয়ে বা উল্টো টা, ড্যাব মানে সুন্দর।কিন্তু এদের শব্দ বড় বেশী উচ্চারন নির্ভর ,ঠিক উচ্চারন করতে না পারলে তার অন্য মানে হয়ে যায়, একই শব্দ আলাদা উচ্চারনে আলাদা মানে বহন করে, টোটাল চাপের ভাষা, তাই পরে যখন গিয়ে থেকেছি তখন ও শেখার চেষ্টা করিনি কারন আমার খুব উচ্চারন জড়তা আছে আর সেই নিয়ে অস্বস্তি ও। তেও মনে হয় গোলমরিচ। ড্যা বরফ, কফি স্যুয়া ড্যা হলো কোল্ড কফি দুধ দিয়ে, আসলে ওরা একগাদা বরফ, মিল্ক মেড আর ফিল্টার কফি দিয়ে এটা বানায়, আমার দারুন প্রিয়, বলতে কি আমি তো ভীষন কফি প্রেমী। বিকেলে মিস্টার থুই , ইনি হ্যানয়ে মানিকদের ব্যবসাটা দেখতেন, তার বাড়ীতে ডিনারের নিমন্ত্রন।
  • sosen | 125.241.26.35 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১১:০১642451
  • খুব ভালো হচ্ছে কিকিদি। ছোট ছোট সাজেশন: পুরো লেখা শেষ হলে, অন্য কোনো একজনকে দিয়ে পুরোটা পড়িয়ে, সময়সীমা ভেঙ্গে সাবহেডিং দিয়ে এডিট করিয়ে নিও, এটা একটা বই হওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর সময় নিয়ে লেখো, তাড়াতাড়ি করনা, তাড়া নেই তো।
    ওয়ানস এগেইন, কুডোস!
  • | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১১:৫১642452
  • হুঁ এটা একটা বই হওয়ার ক্ষমতা রাখে। খুব টাটকা লিখনশৈলী।

    তবে আমার মতে এখন যেমন আসছে আসুক, এক্ষুণি এডিট ইত্যাদি নিয়ে ভাবার দরকার নেই, তাতে স্বাভাবিকতা ব্যহত হলেও হতে পারে।
  • sosen | 125.241.113.158 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১৩:১২642453
  • হ্যাঁ হ্যাঁ, লেখা শেষ হলে।
  • kumu | 52.104.27.217 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১৫:০২642454
  • আমি পুরুফ দেখে দোব।কী ভালো লেখা-একদম মনঝর্ণা।
    মানিকের কাজটা কেমন?অবশ্যই কোন অসিবিধে না থাকলে এক্স্টু লিখো।
  • kumu | 52.104.27.217 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১৫:০৩642456
  • অসুবিধে ,একটু।
  • সিকি | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১৫:৪০642457
  • ইয়েস। বই হবার মত লেখা। একদম ছবির মত। ঝরঝরে নির্ভুল লেখা, প্রুফ দেখবারও দরকার হবে না।
  • kiki | 127.194.64.89 | ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:০৪642458
  • সবাইকে থেঙ্কু। ঃ)

    কুমু,
    তা কেন হবে! মানিক প্রথম গিয়েছিলো একটা কোম্পানির চিফ রেপ হিসাবে, পরে আর একটা কোম্পানির হয়ে কাজ করছিলো, একই কাজ। এখন সেই একই কাজ করে নিজের মতন, কারোর আন্ডারে নয়।

    ভিয়েতনামে তখন ওষুধ তৈরীর কারখানা ছিলো না, এখন হয়েছে কিন জানিনা। পুরো ওষুধ আসে বিদেশ থেকে। মানিকের কাজ হলো ও ইন্ডিয়ার কিছু কোম্পানির সাথে কাজ করে, এখানকার ওষুধ কেনে, ওখানে বেচে। :P
  • kiki | 127.194.64.89 | ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:০৬642459
  • তা কেন হবে মানে অসুবিধা নেই। আজকাল গুছিয়ে বলতেও পারিনা। ঃ(
  • kk | 117.3.196.87 | ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৪:১৩642460
  • কিকি,

    তুমি সবসময় নিজেকে এত অকম্ম্মা ভাবো কেন? 'গুছিয়ে বলতে পারিনা','এই পারিনা, সেই পারিনা '!! এই তো এত সুন্দর লেখা হচ্ছে, সবার ভালো লাগছে। নিজেকে সবসময় আন্ডার এস্টিমেট কোরোনা তো।
    তুমি মনের খুশিতে হাত খুলে লিখে যাও। বিন্দাস। কী পারো আর কী পারোনা সেই নিয়ে অত ভাবতে হবেনা।
  • kiki | 127.194.76.237 | ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০৪642461
  • কলি,
    ঃ)
    থিঙ্কুস।
  • শিবাংশু | ১০ জুলাই ২০১৪ ২০:৫৪642462
  • স্বচ্ছ, সহজ, সুন্দর,

    ঠিক কিকি'র মতো-ই লেখাটি.... :-)
  • kiki | 127.194.64.152 | ১১ জুলাই ২০১৪ ১৪:৫৭642463
  • শিবাংশুদা,
    থেঙ্কু।ঃ)
  • nina | 78.37.233.36 | ১২ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৯642464
  • থিঙ্কুস রে কিকিয়া --এত সুন্দর একটা লেখা দিলি বলে---
  • kiki | 122.79.38.62 | ১২ জুলাই ২০১৪ ১৯:১৮642465
  • ২৪। থুই এর বাড়ী যাওয়ার জন্য আমরা বেরোলাম। রাস্তায় কোন এক জায়গা থেকে ড্যুকের বৌ আর বাচ্চাকে তুলে নেওয়া হবে। ওরা মনে হয় হ্যানয়ের কাছাকাছি কোন প্রভিন্সে থাকে। আমরা একটু শহরটাও ঘুরবো তাই বিকেলের খানিক আগেই বেরিয়ে পরেছি। রাস্তা থেকে ড্যুকের বৌ আর মিত্তার ওয়াং( ড্যুকের ছেলে, যে ঋভুর চাইতে অল্প ছোট হবে, চেহারা দেখে তাই মনে হলো, তবে এরা একটু ছোটখাটো ও হয়, ওর নাম হোয়াং, মানিক মজা করে হ্যাল্লো মিস্টার হোয়াং বল্লো আর তারপর থেকে সবাই ওকে মিত্তা ওয়াং, ওদের উচ্চারনে ,এই বলে ডাকতে লাগলো আর ও মিত্তার ওয়াং হয়ে গেলো) কে তুলে নেওয়া হলো। দীর্ঘকাল পরে বৌয়ের সাথে দেখা, কাজেই ড্যুক পিছনের সিটে বৌকে নিয়ে চলে গেলো। আর সে এক কেলো! নানারকম আওয়াজের মাঝেই কথাও চলছে, আমি ভয়ে ভয়ে নিজেকে আর ঋভুকে সামলে রাখছি, পিছনে না ফিরে ফেলি। হঠাৎ মানিক দাঁত বের করে খুব স্বাভাবিক ভাবে বাংলায় বললো, জানলার দিকে তাকা , যেন আমি তোকে কিছু দেখাচ্ছি, বলেই বললো, এদের প্রেম দেখেছিস! আমি দাঁত বার করে সহজ ভাবে বাংলায় বললাম, দেখবো কি , শুনেই কেমন কেমন লাগছে, তখন বলে কিনা, ওরে! না! তা নয়! এতদিন পর দেখা , তাতেও প্রথমেই ব্যবসা পত্তর আর টাকা পয়সার কথা সেরে নিচ্ছে। সাধারনতঃ এদের মেয়েরা আবেগ কে তত গুরুত্ব দেয় না। তার কারন ও আছে। এখানকার সমাজ মেয়ে প্রধান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মেয়েরা দারুন আরামে থাকে, বরং উল্টো টা।এখানে ছেলেরা বেশ কুঁড়ে হয়। মেয়েরাই রোজগার করে, এমনকি চাষাবাদ, মাংস কাটা এই ধরনের ভারী কাজ ও করে, বাচ্চা পালে, ঘরের কাজ করে। সব দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকে। এখন অবশ্য অবস্থা বেশ বদলাচ্ছে। কাজেই তারা আবেগকে প্রশ্রয় দেয় না। কাজ করিয়ে নিতে হবে, সংসারকে সচল রাখতে হবে এটুকু বোঝে।

    তখন ও আমরা এয়ারপোর্টের কাছেই থাকি। ব্যাপারটা কল্পনা করে বললাম , ভাব! আমি আর ঋভু তোকে নিতে গেছি, কাঞ্চার রিক্সায় উঠে বসেছি। কাঞ্চাও ভালো মন্দ জিগাচ্ছে, আর তার মধ্যে আমরা কিসব করে ফেলছি আর জিজ্ঞেস করছি, ওগো এবার ওষুধ বেচে কত টাকা হলো গো! তারপর যে কি কষ্টে হাসি চেপেছি বলার নয়। এটা খুব মজার ছিলো। সবাই ইন্টারন্যাশানাল এয়ারপোর্টের বাইরে এসে বেশ ভালো সব গাড়ীতে বা নিদেন ট্যাক্সিতে করে সাঁ করে বেরিয়ে যেত, আর আমরা কাঞ্চার রিক্সায় চড়ে ফিরতাম ক্যাঁচোর ম্যাচোর করতে করতে। এমনকি কাঞ্চাও নানান কথা জিজ্ঞেস করত, ওর তা হকের ও, কারন ছোট থেকে ও মানিককে আর আমার ননদ কে দেখছে, স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করেছে। এখন ঋভুকেও নিয়ে যায় আসে মাঝে মধ্যেই।

    তারপর আমরা গেলাম সোয়ান লেকে। এখানে লেকে লেকে একাক্কার। সোয়ান লেক এ গুচ্ছ রাজহাঁসের মতন বোট ঘুরে বেরাচ্ছে। বোটে চড়া, আইসক্রীম খাওয়া, পার্কে বসে থাকা সেরে আমরা চললাম মিস্টার থুইয়ের বাড়ীতে। কারন এদের ডিনার ছটা তে হয়।আর আমার ভীষন ভয় করতে শুরু করলো, রেস্তোরাঁতে না হয় যা খুশী বলা যায়। কিন্তু কারোর বাড়ী গিয়ে কিছু খাবো না বলাটা নেহাত ই অভদ্রতা।
  • kiki | 122.79.37.56 | ১৩ জুলাই ২০১৪ ০০:০৬642467
  • ২৫। মিস্টার থুই এর বাড়ীর বসার ঘরটা দেড়তলায়। অ্যাজ ইউজুয়াল, খুব সুন্দর সাজানো। কালো কাঠের আসবাব সব, যাতে সাদা মাদার অফ পার্লের কাজ। অসাধারন। টেবিলের উপরটা কাঁচের আর তাতে রয়েছে, সব ভিয়েতনামিস বাড়ীতে বসার ঘরে যা থাকে, খুব সুন্দর টি পট আর ছোট্ট কাপ ডিশের সেট। দেওয়ালে দুটো সুন্দর পেন্টিং। একপাশে একটা ছোট্ট টেবিলে সুন্দর ফ্লাওয়ার ভাসে ফুল সাজানো। আমরা নিয়ে গেছি ফলের বোকে। এখানে কারোর বাড়ী গেলে, আমরা যেমন মিষ্টি নিয়ে যাই দেশে, তেমন ফলের বোকে নিয়ে যাওয়া হয়, ভারী সুন্দর করে দোকানিরা তা সাজিয়ে দেয়। আমাদের বসিয়েই ওদের প্রথা অনুযায়ী লোটাস টি দিলো। যেকোন ভিয়েতনামিস বাড়ীতে গেলে ওরা প্রথমেই লোটাস টি দিয়ে অতিথীকে স্বাগতঃ জানাবে। এগুলো লোটাস বাডস দিয়ে বা পাপড়ি শুকিয়ে তৈরী হয়। এছাড়াও এখানে নানারকম ফুলের বাডস বা কুঁড়ি শুকনো করে চা বানানো হয়, যেমন জেসমিন টি, কিন্তু মজা হলো আমাদের চা পাতার চা ওখানে সহজলভ্য নয়। ভিয়েতনামিসরা সেই চা খায় না তেমন।

    সেখানে বসে আমরা যখন গল্প করছি, তখন মেয়েরা টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে। আমরাও সেখানে গেলাম। মিস্টার থুই এর পরিবার, তার বৌ, তিন ছেলে মেয়ে, ড্যুকের পরিবার (ড্যুক সম্পর্কে থুইয়ের ভাই), জ্যাঙ, আমরা তিনজন, বেশ বড় গোল একটা টেবিলে বসলাম। টেবিল ভর্তি খাবার। কিন্তু ফিস স্যসের গন্ধে আমার প্রান যায় যায়। সেখানে রয়েছে স্টিকি রাইস, কলমি শাক সিদ্ধ পোর্কের কিমা সিদ্ধ দিয়ে গার্নিশ করা, টোফু সিদ্ধ, স্কুইড, অক্টোপাস, মাছের মুইঠা দিয়ে ফিস ফিঙ্গার টাইপ কি একটা,মুগের ডালের মিষ্টি, ফিস স্যস , ন্যুক তুঙ, সে এক এলাহি ব্যাপার। আর প্রচুর স্যালাড। যাহোক! কিছু খেতে পারবো অন্তত এই ভেবে নিশ্চিন্তে বোলে ভাত তুলে নিলাম। এখানে একটা প্লেটের উপর একটা ছোট বোল দেয় প্রত্যেককে আর পাশে একটা ছোট চপ স্টিক স্ট্যান্ডে দুটো চপ স্টিক থাকে। আর খাওয়ার নিয়মটা হলো এমন, যে চপ স্টিকের সরু মুখের দিকটা দিয়ে খাবে আর উল্টো মোটা দিকটা দিয়ে খাবার তুলবে। নিজেকেই তুলে নিতে হয়, অবশ্য হোস্টরাও হেল্প করে, একই ভাবে। কোন আমাদের মত হাতা বা কিছু থাকেনা, স্যুপের পাত্র গুলোতে ছাড়া।

    খেতে খেতে বেশ গল্প হচ্ছে। মহিলারা জানতে চাইলো আমি কি জব করি। এইখানটায় আমি সিঁটিয়ে যাই। লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম, কিচ্ছু না। ওরা বেজায় আশ্চর্য, কিছু করো না? মানিকরা খুব বড়লোক বুঝি, আমাদের এখানে বিরাট বড়লোকেদের ওয়াইফরাই কেবল হাউজওয়াইফ হয়। আমার বড় দুর্বল জায়গায় আঘাত করেছে না বুঝেই। কান গরম করে খেতে থাকি। কিন্তু কপালে শান্তি থাকলে তো! সবে ন্যুক তুঙ দিয়ে ভাত আর সাথে মুইঠা খাচ্ছিলাম, সবাই ভালোবেসে স্কুইড তুলে দেয়, টোফু তুলে দেয়, এই কিছু করিনা বলাটাই কাল হলো নাকি কে জানে! আবার ফিস স্যসে চুবিয়ে, আমি প্রায় কেঁদে ফেলি, হতদ্যোম হয়ে বসে আছি, হাত থেকে চপস্টিপ ঝুলছে, এরমধ্যে ভীষন আদর করে কাবার্ড থেকে বহু মুল্যবান কি একটা আনার মতন করে বাড়ীর গৃহিনী কি একটা গুঁড়ো ভাতের উপর ছড়িয়ে দিলেন, কি উৎকট গন্ধ। মানিক ফিসফিসিয়ে বললো এটা হচ্ছে শুয়োরের কান শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখা, বেজায় ডেলিকেসি। এবার প্রবল বমি চাপার চোটে আমার কান লাল হয়ে গেলো, সেই দেখে জ্যাঙ, সে কেয়ারিং টাইপের, হঠাৎ মনে করে ফেললো যে আমি বেজায় লঙ্কা খেতে ভালোবাসি, অলমোস্ট লঙ্কা খেয়েও বেঁচে থাকি। আর যায় কোথায়! কাঁচা লঙ্কা, ফিস স্যসে চোবানো লঙ্কা, এরকম নানারকম লঙ্কা মিলিয়ে বিরাট এক প্লেট লঙ্কা চলে এলো আমার সামনে, আর সবাই গভীর আগ্রহে আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।আর সব থেকে বড় কেলো , খাবার জল খুব একটা থাকে না। মেয়েরা বিয়ার আর ছেলেরা স্নেক ওয়াইন নিয়ে বসে আছে। স্নেক ওয়াইন হলো লোকাল ওয়াইনের মধ্যে বিষাক্ত সাপ , বিছে এসব রেখে দেওয়া হয়, আর মনে হয় অ্যালকোহলের জন্য সাপ বা বিছের পচন ধরে না। ওদের ধারনা এই ওয়াইন খেলে পৌরুষত্ব বাড়ে, পুরো জাপানি তেল টাইপ কিছু একটা। আর ছোট ছোট গ্লাসে অনেকটা কনিয়াক না কি যেন খাওয়া হয় এক ঢোঁকে সেরকম গ্লাসে করে কি ইয়ো টিয়ো বলে এক ঢোঁকে খেয়ে নেয়।আমি কি করবো বুঝতে না পেরে আর ভয়ঙ্কর রেগে একটা লঙ্কা খেয়ে , আমার পেট ভরে গেছে বলে খাওয়ার ইতি ঘটালাম আর খাওয়া শেষ হলেই ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম। আমাকে আর ঋভুকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে ছেলের দল আবার বেরিয়ে গেলো।

    ঋভুকে ঘুম পাড়িয়ে আমি তখন রাগে ফুঁসছি। প্রায় রাত একটায় বাবু এলেন। পুরো টলোমলো হয়ে। জুতো টুতো পরে খাটের উপরে। জানিস কি খেয়ে এলাম? আবার কি খেলে? আমি খাবি খাই। আর বলিসনা, এদের অতিথীকে বড় সন্মান দেওয়া হয় কিভাবে জানিস?(পুরো মহাসিন্ধুর ওপার থেকে বানী ভেসে আসার মতন করে, আর মনে মনে আবার ঠিক করে নিচ্ছি, দাঁড়া, দিন আমারো আসবে, এইসান জ্বালাবো না, হায়! সেদিন আজো এলো না) কিভাবে প্রশ্ন করার অবকাশ পাইনা, তার আগেই উত্তর এসে যায়,আরে আবার গিয়ে পিওয়া হলো, একটা সাপ কেটে, তার হার্টটা আমার গ্লাসে টুপ করে ফেলে দিলো, সেটা তখন ও লাপ ডুপ করছে! সেকি, তুই খেলি? কি করে? আমি মুড়ো ঝাঁটার অভাব বোধ করি। আর বলিস না, ওদের অসন্মান করতে পারিনাতো, কপ করে গিলে ফেললাম। জানিস তো! কাছে আয় না, অমন করে চেয়ে আছিস কেন! জানিস এসব খেলে কি হয়! আমিঃ হুঁ জানি, বলেছো! টয়লেটে যাবে না? না সেরে এসেছি! কোথায় সেরে এলো আর জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। হুড়মুড় করে বালিশ নিয়ে সোজা বাথরুমে,দরজা এঁটে, টাবে বালিশ মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ওদিক থেকে দুবার, মাম শোন, শোন তো! ওরে বাবা! ঐ ভয়ঙ্কর গন্ধময় পৌরুষত্ব কে সহ্য করবে! পরদিন সকালে বেরিয়ে দেখি আমার বেজায় পুরুষ মানুষটি হাফ খাটে, হাফ ঝুলে ঘুমুচ্ছে, মুখ থেকে বাচ্চাদের মত লালা ঝরে শুকিয়ে রয়েছে! আহারে!
  • kiki | 122.79.37.56 | ১৩ জুলাই ২০১৪ ০০:০৭642468
  • দিদিয়া,
    ঃ)
  • kiki | 122.79.37.56 | ১৩ জুলাই ২০১৪ ০০:১৫642469
  • লাব ডুব ........... ওফ!
  • aranya | 154.160.226.53 | ১৩ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬642470
  • টু গুড। সামনের বইমেলায় এটা যেন চটি হিসাবে বেরোয়
  • nina | 78.37.233.36 | ১৪ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৫642471
  • কিকিয়া, সত্যি রে---কি দারুণ যে লিখছিস---এটা একসঙ্গে বই আকারে আমার চাইইইইইই--
  • সিকি | 135.19.34.86 | ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৯:২২642472
  • পাগলা, অসাম শালা!
  • kiki | 127.194.70.0 | ০৫ আগস্ট ২০১৪ ২৩:৪২642473
  • ২৬।পরদিন আমরা হ্যালঙ বে দেখতে যাবো। তার আগে হো চি মিনের সমাধি দেখতে গেলাম। সকাল ভারী মেঘলা ছিলো। এখানে যখন তখন বৃষ্টি নামে, তাই শহরে ইউজ অ্যান্ড থ্রো রেইন কোট বিক্রি হয়। আর একটা বেশ ভালো জিনিস এখানকার শহর গুলোতে দেখেছি, তা হলো মুভেবেল টয়লেট। এগুলো ফুটপাথের বা রাস্তার একধারে বসানো থাকে, এবং বেশ পরিস্কার, অবশ্যই পয়সা দিয়ে যেতে হয়। সে যাহোক! হো চি মিনের সমাধি এক বিশাল গ্রাউন্ডে রয়েছে। সেখানে বিরাট বাগান ঘেরা প্যারেড গ্রাউন্ড রয়েছে। শুনেছি ভিয়েতনামিসদের প্রিয় আঙ্কো(আঙ্কেল) হো-র মরদেহ সেখানে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু আমরা ঢুকতে পারিনি, কারন সেদিন বন্ধ ছিলো।

    তারপর তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে, বাঁধাছাদা করে আমরা মার্সিডিস বেঞ্জের একটা ছোট বাস টাইপ গাড়ী ভাড়া করে সদলে চললাম হ্যালং বে, ভাবো! শেষমেষ মার্সিডিস বেঞ্জেও চড়িয়ে দিলো, এমনকি দু তিনটে লিমু ও দেখে ফেলেছি, কে জানে একদিন লিমুতেও চড়বো নির্ঘাত।

    হ্যালঙ বে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এটা ভিয়েতনামের উত্তর পুর্বে অবস্থিত। আর এই বে-র উপকূল ভিয়েতনাম আর চিন দুদেশ ই ভাগ করছে। কুয়াম নিন প্রভিন্সে অবস্থিত এই বে দেখতে গেলে হ্যানয় থেকে হ্যালঙ্গ এ যেতে হয়। এই বে তে প্রায় দুহাজার ছোট ছোট আইল্যান্ড ও আইলেট আছে যাদের বেশিরভাগ ই লাইম স্টোনের তৈরী। আর অনেক অনেক বছর ধরে এই লাইমস্টোনের আইল্যান্ড গুলো ক্ষইতে ক্ষইতে নানা আকৃতির হয়ে গেছে, আর সেই অনুযায়ী তাদের নাম দেওয়া হয়েছে, যেমন একটা জোড়া আইল্যান্ডের নাম ডাবল কক। এরা দেখতে ঠিক মুখোমুখি দুটো মুরগীর মতন। প্রকৃতির অকৃপন হাতে সাজানো এই জায়গা, মন ভালো হতে বাধ্য করে। যেতে যেতে দেখা যাবে ভেলার মতন চৌকো ভেসে থাকা ব্যবস্থার উপর ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর, ভিয়েতনামিস জেলেদের অস্থায়ী বাসস্থান। পুরো পরিবার নিয়েই সেখানে থাকে তারা। আর অনেক জেলে নৌকো ও ট্যুরিস্ট দের ঘোরার বোট, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সব বোট বা জেলে নৌকার সামনের দিকে দুদিকে দুটো চোখ আঁকা থাকে, জিজ্ঞেস করে জানলাম, জলের দানব রা ভয় পাবে নাকি ঐ চোখ দেখে। এটা হো চি মিন শহরের নদীতেও দেখেছি।

    হ্যালঙ বের একটা প্রচলিত গল্প আছে। মনে হয় হ্যালঙ এর মানে ডিসেন্ডিং মাদার ড্রাগন। গল্পটা এইরকম; তখন সবে নতুন দেশ তৈরী হয়েছে, এদিকে ভিয়েতনামিসদের কেবল ই উত্তরের সাগরের দিক থেকে আসা বহিঃশত্রুর ভয়ে সজাগ থাকতে হচ্ছে এবং বারংবার তাদের সাথে লড়তে হচ্ছে দেখে জেড রাজা ভারী দু;খিত হয়ে স্বর্গ থেকে মাদার ড্রাগনকে তার ছানাপোনা সমেত সেই সাগরে পাঠিয়ে দেন। মা ড্রাগন তার ছানাদের নিয়ে চুপটি করে সাগরে ডুবে বসে থাকে। তারপর যখন আবার আক্রমনের সম্ভবনা দেখা দেয় তখন ভুস করে ভেসে উঠে আর মুখ দিয়ে আগুন আর বড় বড় পান্না ছুঁড়তে থাকে। সেই পান্না গুলো জলে পরে ন্যাচারাল বেরিয়ার তৈরী করে, আর শত্রুদের জাহাজগুলো ডুবে যায় ও তারা নির্মূল হয়। সেই থেকে আর ভিয়েতনামিসদের সাগর থেকে আসা শত্রুদের নিয়ে ভয় পেতে হয় নি। আর বহু বহু বছর পরে ঐ পান্না গুলো আইল্যান্ড আর আইলেট এ পরিনত হয়, যা আজকে আমরা বিভিন্ন শেপ ও সাইজে দেখতে পাই। আর তখন থেকে মা ড্রাগন যেখানে ডুবে ছিলো সে জায়গার নাম হয় হ্যালঙ আর ছানাদের ডুবে থাকা জায়গার নাম হয় বায় তুই লং।
  • kiki | 127.194.70.0 | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০০:৩৭642474
  • ২৭। এখানে ফর্টি সিটার একটা বোট ভাড়া করে নিলাম। আমরা মোটে সাতজন ছিলাম। বোটে উঠতেই চিনা অরিজিনের দারুন মিস্টি দেখতে বোটের মেয়েটি দিব্যি মানিকের কোমর জড়িয়ে তাকে নিয়ে চললো। দেখে আমি তাজ্জব! বোঝো! এই তো আমি রয়েচি, এদের সাহস তো দেখ। তিনি অবশ্য মাথা ফিরিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে চললেন, পিছনে আমরা। এখানকার মেয়েরা ভারি কেমন যেন! নিজেদের ছেলেদের ফেলে বিদেশী ছেলেদের একটু বেশি পছন্দ করে। কেন কে জানে! ভারি আদর যত্ন ও করতে জানে। কিন্তু মুস্কিলের ব্যাপার হলো সেটা কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। প্রচুর গল্প আছে এদের নিয়ে। ভিয়েতনামে এক অদ্ভুত নিয়ম আছে। এখানে বিদেশীদের কখনই সিটিজেনশিপ দেওয়া হয় না, কেবল রেসিডেন্সিয়াল পারমিট দেওয়া হয়। জেনারেলি মেয়েরাই বিদেশীদের বিয়ে করে, এমনটাই বেশি শোনা যায়, কাজেই সেব্যাপারেই নিয়মটা জানি, অপর ক্ষেত্রে কি হয় জানা নেই। ভিয়েতনামে নিজের নামে কোন সম্পত্তি করা যায় না, ব্যবসাও, সেক্ষেত্রে সহজ হলো ভিয়েতনামিস মেয়েকে বিয়ে করে ফেলা। কিন্তু মুস্কিল হলো, এখানের আইন অনুযায়ী বিয়ে যে করলো , স্ত্রীর অবর্তমানে সম্পত্তি তার হয় না। বাচ্চাদের হয়। আর এই বাচ্চারাই ভিয়েতনামের সিটিজেনশিপ পায়। আর এখানকার মেয়েরা বাচ্চাদের নিজেদের ভাষায় আর কালচারে বড় করে, সেক্ষেত্রে আর কাউকে তোয়াক্কা করে না। এমন অনেক ভারতীয় আছে, যারা এখানে এসে এই মেয়েদের খুব পছন্দ করে ফেলে, কারন আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে বড় হওয়া মেয়েদের থেকে এরা অনেক আকর্ষনীয়, তারপর ফাঁদে পরে যায়। আমরা কাম্বোডোয়ায় একটা গল্প শুনেছিলাম , যে এক ভারতীয় তার বৌকে ডিভোর্স দিয়ে এসে এখানে বিয়ে করে, ব্যবসায় পুঁজি লাগায়, বাচ্চা টাচ্চাও হয়, কিন্তু তারপর ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলেই মেয়েটি ভারতীয়টিকে গলাধাক্কা দেয়। ভারতীয় কালচারের বাবুটির মেয়েদের গলাধাক্কা দিতে অভ্যস্ত স্বভাবে সেটা আর সহ্য হয় নি, সে তখন পাগল হয়ে কোন অ্যাসাইলামে ছিলো।

    আরেকটা মজার গল্প মনে পরে যাচ্ছে। আমরা কারোর একটা বাড়ীতে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন এই গল্পটা শুনি। হো চি মিনে প্রচুর মাসাজ পার্লার আছে। সেখানে মেয়েরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলেদের, বিশেষ করে বিদেশীদের হাই ডার্লিং বলে ডাকাডাকি করে। তো বাঙালি কানে তা বড় মিঠে শোনায়। মানকেরা প্রায় ই নাকি বিকেলে ডার্লিং শোনার জন্য সে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করত। তবে কিনা সাহস করে উঠতে পারতো না যাবার( মানে আমায় এমন বলা হয়েছে, আর আমিও বিশ্বাস করেছি) একবার এক ব্যাচেলর আরেক ফোর্সড ব্যাচেলর সেখানে (দুটোই বাঙালী) সাহস করে গিয়ে ঢোকে। সেই ফোর্সড ব্যাচেলরের মুখ থেকেই আমরা গল্পটা শুনি, ভদ্রলোক ভারী বিচ্ছু, সে বললো , সে এমন একটা হাবভাব নিয়ে গেছে , যেন সে অন্যজনকে নিয়ে গেছে, আর খুব অভিজ্ঞ। মেয়েরা তাকে দালাল ঠাউরে নাকি ভারী খুশী হয়ে একপাত্তর বিয়ার ও দিয়ে ফেলেছে, আর সে নানান ফ্লোর ঘুরে মেয়েদের দেখে বেড়াচ্ছে। ওহ! এখানে মাসাজ পার্লার, কারাওকের ডেরা গুলো আসলে ব্রথেল হচ্ছে, আর এটা ওপেন সিক্রেট। তো সেই ছেলেটিকে একটা মেয়ে এসে টিস্যু দিয়ে প্রথমে মুখ মুছিয়ে দিয়েছে, আর সে ঘামতে শুরু করেছে। তখন মেয়েটা তার চেয়ারের হাতায় বসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, তখন ব্যাটা বঙ্গ পুঙ্গব বেজায় ঘাবরে বলে ফেলেছে, আরে তুমি আমার বোনের মতন ( হায় বাঙালী!!) মেয়েটা পুরো ঘাবরে ঘ হয়ে গেছে, আজ অবধি এমন কোন কাস্টোমার সে পায়নি যে তাকে বোন ভাবতে পারে। তারপর ছেলেটা আরো গদগদ হয়ে , তুমি এমন খারাপ কাজ কেন করো, নাকি জিগিয়েছিলো, তাতে মেয়েটা তার মা খুব অসুস্থ , বাড়ীতে ছোট ভাই বোন ইত্যাদি শুনিয়েছিলো, আর ছেলেটি তার সদ্য প্রাপ্ত বোনকে কিছু সাহায্য করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো। আশা করা যায় এরপর সে আর ডার্লিং শুনতে সেখানে যায়নি।
  • kiki | 127.194.70.109 | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০৯:১৭642475
  • ২৮। যাহোক আমরা বোটে প্রথমে নীচে বসেছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষন পরেই সবাই দল বেঁধে ছাদে চলে গেলাম। খোলা আকাশের নীচে শান্ত সমুদ্র বেয়ে চলার এক অন্যরকম আনন্দ আছে। কিছুক্ষন অন্তর অন্তর কোন না কোন আইল্যান্ড পেরিয়ে চলেছি। কয়েকটাতে জেলেরা বা অন্য মানুষেরা থাকে। কয়েকটা ট্যুরিস্টদের জন্য সাজানো আছে। সেরকম দু তিনটে আইল্যান্ডে নেমে ছিলাম ।

    একটাতে একটা বিরাট কেভ ছিলো, যেটা কিনা প্রকৃতির সাথে মানুষ ও বড় বেশি সাজিয়ে ফেলেছে। অবশ্য ভিয়েতনামিসদের এ এক ভারি বদভ্যাস, বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট স্পট ই বড় বেশি সাজানো। গাছ পালা গুলোকেও ছেঁটে কেটে একাকার বানিয়ে রাখে। যাহোক! এর ফলে সে কেভ বড় সুগম ছিলো কিন্তু আমার কেমন দেখেই পুজো প্যান্ডেলের কথা মনে পরে গেলো। সেই রকম অন্ধকারে নিভু নিভু আলো জ্বালানো। কোথাও ভয়ের কিছু নেই, রোমাঞ্চের ও কিছু নেই। বেশ বিরক্তিকর। বলতে কি ভিয়েতনামিসদের প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেবার এই বাতিক আমার একদম ভালো লাগেনি। কৃত্রিমতা আমার বেশ অপছন্দের। জনতা আর নামতে চাইলো না, ছাদে বসেই ল্যাদ খেতে পছন্দ করছিলো।আমিও আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।এর থেকে ভেসে থাকাই ভালো। আমরা প্রচুর কেক , এটা সেটা নিয়ে গেসলাম খাবার জন্য। কিন্তু দেখা গেলো সেসব কেউ ছুঁলো ও না। ভিয়েতনামিসরা এরকম টুকটাক খাবারে একটুও বিশ্বাসী নয়। ক্রমশ আমাকে বুঝে ওঠার পর মানে আমার ছোট খাটো চেহারাতে মেয়েটি মনে হয় ভুল বুঝেছিলো, সে ঋভুর সাথেই ভাব করে নিলো। ফল হলো এই, উপরে বোট চালানোর দায়িত্ব, যেটা কিনা মেয়েটা পালন করছিলো, সেটা ক্রমশ ঋভুর জিম্মায় চলে গেলো। সে এক ভারি মুস্কিলের ব্যাপার। ছ বছুরে ঋভু তার এই বিরাট দায়িত্ব কিছুতেই অন্য কাউকে আর দিতে রাজি নয়। এমনকি মেয়েটি একটা সুন্দর চিনা গান গাইছিলো, সেটা ঋভুকে শিখিয়েও দিলো।

    লোকজন বোটে কিছুই খেলো না, কাজেই বোট থেকে নেমেই পাঁই পাঁই করে খাবারের খোঁজে ছুটলো। ভিয়েতনামিসদের লাঞ্চের সময় নির্দিষ্ট। খুব তারা সময় মেনে চলে, আর ভাত ছাড়া তাদেরো দুপুরের খাবার হয় না। আমরা একটা দোকানে রাস্তার পাশেই পাতা টেবিলে বসে খেলাম। সেখানে খাওয়া হলো সমুদ্রের বিরাট কাঁকড়া । এখানে রেস্তোরাঁ গুলোতে অ্যাকোয়ারিয়াম থাকে, সেখান থেকে চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ পছন্দ করে দিলে, ওরা সেটা রান্না করে দেয়। কাঁকড়া দুরকম ভাবে সিদ্ধ করা হয়, হয় জলে , না হয় বিয়ারে। তারপর কাঁকড়া ভাঙার জাঁতির মত একটা জিনিস দিয়ে কাঁকড়া দিয়ে যায়। আর নুন, লেবু আর গোলমরিচ দিয়ে যায়। সেটা দিয়ে একটা স্যস বানানো হয়। কাঁকড়ার নরম মিষ্টি মাংস, সে স্যসে চুবিয়ে পুরো অমৃতর মত খেতে লাগে। চিংড়ি ও এভাবে সিদ্ধ করে, এই একই স্যস দিয়ে খাওয়া হয়। খেয়ে আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম। এবার আবার হো চি মিনে ফেরার পালা। আর তারপরে কলকাতা ফেরার।
  • dd | 132.183.246.82 | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৩৪642476
  • খাসা
  • lcm | 118.91.116.131 | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৫৩642478
  • মুচমুচে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন