এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হেঁশেল থেকে কিচেন – বাঙ্গালির দিন বদলের পালা

    Somen Dey লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ | ২৭০৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:৫৬667253
  • দুখেদা কেন? ব্রতীন্দা বল। নাকি দুজনেই পুরুষসিঙ্গহ ছিল? ভুলে গেছি - তবে দুজনকেই বড় মিস করি
  • d | 144.159.168.72 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:০৬667254
  • এদিকে আমি আবার রিমিকে মিস করছি। ইশশ আজ যদি রিমি আসত একবারটি।

    ল্যাদোশ, সেই মধ্যম পান্ডব ভীমসেন থেকে শুরু মনে হয়। ভীম ব্যপক রাঁধতে পারত। তবে ভীম বাঙালি ছিল না।
  • Abhyu | 223.174.98.16 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:০৯667255
  • ভীমই একমাত্র পাণ্ডব যিনি বাংলা দেশে আসিয়াছিলেন। বাকি ভাইদের "হালারা চইল্যা আয়" বলিয়া আহ্বান করায় অবশিষ্ট চার পাণ্ডব আর অগ্রসর হইতে সাহস পান নাই।
  • একক | 24.99.101.9 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:১৯667256
  • এল্সিয়েম

    ছেলেদের রান্না সেখানেই একচেটিয়া যেখানে সেটা পেইড জব । আর এই লেখাটা সব মিলিয়ে উদ্ভট কিছু প্রজেকশন আছে সেটাও ব্যাপার । যেমন , একান্নবর্তী পরিবারে মেয়েরা রান্না করতেন । এটা পার্শিয়াল মিথ । আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোনোকালে মেয়েদের হাত পুড়িয়ে রাঁধতে দেখিনি । ওই ঠাকুর-চাকর ই করতেন । মেয়েরা ছিলেন ম্যানেজার । একচুয়ালি একান্নবর্তী ভেঙ্গে যখন ছোটো পরিবার হলো তখন অত চাকর রাখা ইকনমিকালি ফীসিবল ছিলো না । মেয়েদের ওপর রান্নার চাপ বাড়লো । পুরো গল্প টা লিনিয়ার না । বড় পরিবারের ভাঙ্গন ,অর্থনীতি অনেককিছু জড়িয়ে ।
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:২৫667257
  • কিন্তু দুখে কি করে পুরুষসিংহ হবে? বৌকে ভয় পায় - বিবেকানন্দ নিয়ে বেশি উত্তেজনা করছিল বলে বৌএর বকুনি খেয়ে তো গুরুতে আসাই বন্ধ হয়ে গেল -

    যাই হোক বিবেকানন্দও রান্না করতেন - মাংস রাঁধতেন
  • lcm | 118.91.116.131 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:২৭667258
  • না না, তা কেনো, আপিসে বা পাড়ার পিকনিকে, দুগ্গোপুজোয় আমি দেখেছি ছেলেরা হেব্বি রান্না করছে, কোনো পয়সা ছাড়াই।
  • একক | 24.99.101.9 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৩৬667259
  • রেগুলার রান্না নিয়ে কথা হচ্ছে । ওটা আলাদা জব ডেফিনিশন । যারা করে তারা জানে । একদিন গরগরে করে মাংসের ঝোল রাঁধা নয় । সেম কোয়ালিটি এন্ড টেস্ট মেইন্তেইন করে যাওয়া রিসোর্স অপটিমাম রেখে । এটা সিরিয়াসলি কঠিন কাজ । আমি এটলিস্ট পারি না । নিজের রান্না নিজেই খাই বলে চলে যায় এইপর্যন্ত । এটা ছেলেদের মধ্যে পেইড শেফ রা পারে ।কোনো কোনো ছেলেও পারে । মেয়েরা কিন্তু অনেকেই পারে । রেপ্প্লিকেবিলিটি । গ্রেট কোয়ালিটি ।
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৪১667261
  • তারপর ধর হাজারি ঠাকুর, কি লীলা মজুমদারের গুটে - এরা কেউ মেয়ে ছিল না। কাজেই ছেলেরা রাঁধ্ত ঠিক-ই - তবে কিছু ন্যাজমোটা মধ্যবিত্ত পরিবারে রান্না মেয়েদের কাজ, রান্নাঘর মেয়েদের area গোছের নাকতোলা একটা ভাব ছিল

    দেখেছি কিছু উত্তর কলকাতা-র so called বনেদি বাড়ির লোকেদের এরম হাব্ভাব - তাদের মনে হয় এই লেখাটা খুব ভাল লাগবে
  • Abhyu | 223.174.98.18 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৪১667260
  • এখানেই আমি পারি, আকা পারে, তীর্থদা পারে। আরো লোকে পারে নিশ্চয়। আটলান্টায় আমার বন্ধু প্রলয় পারত, সৌমেন্দু পারত।
  • Abhyu | 223.174.98.18 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৪৬667263
  • ইন ফ্যাক্ট আমার বাবা বেশ ভালো রাঁধত, রোজের রান্নাও। এখন শারীরিক কারণে পারে না।
  • Ruchria | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫১667264
  • উল্টোদিকে, আমি মোটেও ভালো রাঁধি না - ও ভুলে গেছিলাম - আমার কথা তো বলাই আছে ঐ লেখায় - বরের কাছে রান্না শিখেছে - প্রচুর চাহিদা ইত্যাদি
  • একক | 24.99.101.9 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৪667265
  • আমার বাবাও রাঁধেন । এবং ওই বারবার সেম রান্না -সেম টেস্ট ব্যাপারটা পারেন । আমরা উত্তর কলকাতার । বনেদী নই বলে বেঁচে গেছি :)
  • d | 144.159.168.72 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৭667266
  • অজ্জিত পারে। সবকটা লুচি একেবারে ক্ম্পাসে মাপা নিখুঁত গোল করে বেলেছিল। ইন ফ্যাক্ট অজ্জিত তো রেগুলার রান্নাবান্না আর বিশেষ মোগলাই বা ইংলিশ ক্যুইজিন দুটোই ব্যপক পারে।
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৮667267
  • এক্দম ঃ-)))
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:১৫667268
  • ওহ এইবার মনে পড়েছে কেন দুখেদা - দুখে বোধয় বলেছিল রান্না করতে হবে বলে বিয়ে করেছে - ঠিক মনে করলাম কি?
  • de | 69.185.236.54 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:৫৬667269
  • ছেলেরা রান্না পারলে সেটা একটা এক্স্ট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটির মতো করে বলা হয় - অ্যাডিশনাল কোয়ালিফিকেশন। মেয়েদের ব্যাপারে সেটাই হয়ে যায় - এ আর এমনকি! রান্নাটুকুও পারবে না! অথচ, অন্য কাজেও তো মেয়েরা কিছু কম যায় না!

    লেখাটা চলুক - সবরকমের ফ্লেভারই থাকুক! সেই যে ডাক্তারবাবু লিখতেন - তিনিও অনেকদিন লেখেন না!
  • Somen Dey | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৫:৫৬667270
  • পরের পর্বে যাওয়ার আগে দু এক কথা বলে নেওয়ার দরকার আছে । কারন আমার মনে হচ্ছে প্রথম পর্বের কিছু খন্ডিত পাঠ থেকে হয়তো এমন ধারনার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে যা আমার লেখার কাঙ্খিত অভিমুখ নয় । মোটামুটি চল্লিশের দশক থেকে আজ অবধি বাঙ্গালি সমাজের ধাঁচা ও চরিত্রে অনেক গুলো বদল ঘটে গেছে । এই বদলের মূল কারন গুলি – যুদ্ধোত্তর বাংলায় মূল্যবোধের অবনমন , দেশ ভাগ , যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া , মেয়েদের চাকরি করতে বেরোনো , এবং নানা রকমের প্রযুক্তির আবির্ভাব । বাঙ্গালির জীবনযাত্রায় এবং জীবনশৈলীতে যে সব বদল ঘটেছে , তার সঙ্গে তার ভাবনা চিন্তা , শিল্প সাহিত্য , সাজ পোষাকে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং সেই সঙ্গে বদল ঘটেছে বাড়ির রান্নাঘরের ভুমিকা , গুরুত্ব এবং চরিত্রের । সব বদলের কিছু সাইড এফেক্টস থাকে । সে গুলো ভালো হোক বা মন্দ হোক সে গুলি বাস্তব । ‘ঘরে বাইরে’ থেকে ‘মহানগর’ – মেয়েদের বাইরে বেরোনোর ফলে বাঙালি জীবনে ঘটে যাওয়া সাইড এফেক্টস গুলি দেখানো হয়েছে । তা বলে নিশ্চয় কেও রবীন্দ্রনাথ , নরেন মিত্র বা সত্যজিৎ রায় কে প্রগতী বিরোধী বলবে না । রান্নাঘর যৌথ পরিবারের একটি বাইন্ডিং ফ্যাকটার ছিল । পরিবার কে ধরে রাখাতে রান্নাঘরের একটা ভুমিকা ছিল । কিন্তু আসলে আসলে রান্নাঘর তো একটা নন-ইন্টেলুকচুয়াল সাবজেক্ট । ও সব ঘর গেরোস্থালি নিয়ে তো আর কফি হাউস , খালাসিটোলায় আলোচনা চলে না । আর লিটল ম্যাগাজিনে লেখাও যায় না ।
    প্রথম পর্বের শেষ লাইনে যে গৃহবধুটির চাহিদার পরিধি বৃদ্ধির কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে , তা মোটেই নিন্দার্থে নয় । এক দিকে তার কাছে নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে , অন্য দিকে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে পড়ছে , এটাই তো বাস্তব ।
  • phutki | 131.241.218.132 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:১৯667271
  • আমাদের আধুনিক হয়ে ওঠার মুল্য দিতে অবশ্য এই ছবি হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। এখন সেই বৌটির অনেক চাহিদা । একটি আলাদা ফ্ল্যাটে তার নিজের সংসার চাই । ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতা চাই ।

    বৌটির অনেক ক্ষমতা তো!! তার চাওয়াতে কত কিছু বদলে গেল। বাহ।
  • Somen Dey | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:২১667272
  • হেঁশেল থেকে কিচেন – বাঙ্গালির দিন বদলের পালা (২)
    ------------------------------------------------------------
    প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিতরা জীবনধারনে ছয়টি রস কে আলাদা ভাবে সনাক্ত করেছিলেন - তিক্ত , কটু , অম্ল , মধুর , লবন , কশায় । এর সব কটি রসই সাবেক বাঙ্গালি মেনুতে উপস্থিত ।

    ধ্রুপদী সঙ্গীতের বিস্তার যেমন আলাপ থেকে শুরু করে বিস্তার হয়ে দ্রুত লয়ে পৌঁছায় , আমাদের বাঙ্গলা ভোজের খাদ্য সূচী হল সুক্তো থেকে শুরু করে পায়েস অবধি বিস্তৃত ।

    সুক্তো অর্থাৎ তেঁতো দিয়ে খাওয়া শুরু করার রেওয়াজ যতদুর জানি ভুভারতে কেন তামাম দুনিয়াতেও কোথাও নেই । তেঁতো দিয়ে কেন শুরু করি ? এর পিছনে একটি প্রচ্ছন্ন দর্শন আছে । মনুষ্য জীবনের তিক্ত অংশটুকু সানন্দে গ্রহন করতে শিখলে তবেই তো শেষে গিয়ে - মধুর তোমার শেষ যে না পাই - অবধি যেতে পারবেন । এমন কথা আমাদের লোক গানেও আছে ।
    তেঁতোর আবার রকম ফের আছে ।রবীন্দ্রনাথ চার রকম তেঁতোর কথা বলেছেন - চতুর্থ তেঁতোটি অবশ্য খাদ্যবস্তু নয় মরমে চিমটি কাটার বস্তু ।
    'এতো বড় রঙ্গ জাদু এ তো বড় রঙ্গ
    চার তিতো দেখাতে পারো যাবো তোমার সঙ্গ
    উচ্ছে তিতো পলতা তিতো , তিতো নিমের শুক্তো
    তাহার অধিক তিতো যাহা বিনি কথায় উক্ত '

    তেঁতোকে যে কত সুস্বাদু করে তোলা যায় তার নিদর্শন হল শুক্তো । আর শুকতোর কম্বিনেশনের কথা ভাবুন - করন জোহরের মাল্টি-স্টারার ছবির মতন - কে নেই তাতে
    বেগুন , কুমড়ো , আলু , কাঁচকলা , সজনে ডাঁটা , ঝিঙ্গে , মুলো এবং প্রধান হিরো-ইন বড়ি ।তবে মশলাতে কিন্তু আর্ট ফিল্মের মত একটু হটকে । হলুদ পিয়াজ বর্জিত , আদা শর্ষে বাটা পাঁচ ফোড়নের সঙ্গে একটু দুধ ।

    এ ছাড়া ও আরেকটি উপাদেয় তেতো আছে , কচি নিমপাতার সঙ্গে বেগুনের ছোটো ছোটো টুকরো ভাজা । তবে এই কচি নিম পাতা বড়ই ক্ষনিকা ( যে কোন সুন্দর জিনিষের মতই) ।বসন্তের আগমনে পাওয়া যায় তবে দু তিন সপ্তাহের মধ্যেই বেলা না যেতে খেলা তার ঘুচে যায় ।

    তেতোর পরে ভাজা ।ছাঁকা তেলে ভাজা ঝুরঝুরে আলুভাজা সঙ্গে সোনা মুগের ডালের জুড়ি তো একেবারে 'রব নে বনায়া '।
    এখন আকাশ ছোঁয়া পস্তুর দামের জন্য পস্তুর বড়া তো গরিবের পাত থেকে উধাও হয়ে ডেলিকেসির স্টেস্টাস পেয়ে গেছে । বেশ করে পেয়াঁজ লঙ্কা সহযোগে পস্তুর বড়ার তো একেবারেই তূলনাহীনা ।ভাতের সঙ্গে খাওয়া না গেলেও মাঝে মাঝে ঘন ঘোর বরষায় যে সব দিনে ' তারে বলা যায় ' সে দিন খিচুড়ির সঙ্গে পস্তু বড়াও খাওয়া যায় ।
    ছোটো সাইজের লম্বাটে বেগুন আধফালি করে ভাজা দিয়ে বিয়েবাড়ির ভোজ শুরু করা টা আজকাল আর দেখা যায় না , বাঙ্গালির বিয়ে বাড়ির মেনুতে যথেচ্ছ ভাবে ফিউসন ঢুকে গেছে ।
    নানা রকমের শাক ভাজাও বাংলার গ্রামীন সংস্কৃতির সঙ্গে নিবীড় ভাবে জড়িত ।কলমী নটে শুসনি হিঞ্চে ব্রাহ্মী পুনকে এসবের এক একটির আলাদা আলাদা রকমের গুন আছে ।

    ভাজা ও ডাল দিয়ে শুরু করার পর শুরু হয় ব্যাঞ্জনের আসল ব্যাঞ্জনা ।প্রথমেই বলি বিভিন্ন পদের নামকরনের কথা । অনেক সময় একেবারে অভিধান বহির্ভুত শব্দ দিয়ে এক একটি স্বতন্ত্র রন্ধন শৈলী বোঝানো । যেমন দম বললেই সে খানে আলুর একছত্র অধিকার । অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ । আলুর সঙ্গে যেই কুমড়োর সন্ধি হল সেটা হয়ে গেল ছক্কা । এই নাম করন টি ক্রীকেট আবিস্কারের পরে না আগে সেটা আমার জানা নেই । ঠিক তেমনি দোলমা শব্দটির প্রতি পটলের জন্ম গত অধিকার ।
    ধোঁকা দেওয়া মানুষের একটি অতি নিন্দিত বদগুন । ধোঁকাবাজদের আমরা ঘৃনা করি । যাতে কোথাও ধোঁকা খেতে না হয় এ ব্যাপারে আমরা সদা সতর্ক থাকি ।
    কিন্তু ডাল বাটার সঙ্গে হিংয়ের সৌরভে সুরভিত বাঙ্গালির একটি পদের নাম ধোঁকা । এই ধোঁকা কিন্তু সবাই ভালোবাসে , এমন কি সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনের মেনুতে নাকি ধোঁকা থাকতই ।
    চচ্চড়ি আর ঘন্ট হল বাঙ্গালির রোজকার বৈচিত্রহীনতার প্রতীক । দুটোর মধ্যে তফাতের চেয়ে মিলই বেশি । দুটিই পাঁচমেশালি সব্জি দিয়ে তৈরী হয় । একটু আধটু মাছের কাঁটা বা কুচো মাছ মিশিয়ে এদের নিরামিশ বদনাম ঘুচিয়ে দেবার রীতি আছে। শুধু তফাৎ হোলো ঘন্টতে সর্শে মেশালে আর কোনো মতেই ঘন্ট পাকানো যাবেনা কিন্তু চচ্চড়িতে সর্ষে না দিলে তার জাত যাবে ।

    এদের কাছাকাছি থাকা আর একটি ব্যাঞ্জনের নাম লাবড়া । এতেও সে পাঁচ মেশালি সব্জি দেওয়া হয় ।তবে লাবড়া একটি বৈষ্ণবচিত নিরামিশ পদ , যা ঠাকুরের ভোগ হিসাবেও দেওয়া যায় ।
    ডাল এর সঙ্গে একটি না যোগ করে ডালনা শব্দটি হয় । তবে রান্না করার এর সঙ্গে ডালের কোনো সম্পর্ক নেই ।

    আর একটি নাম ছেঁচকি । কম তেলে একটু পোড়া পোড়া করে ভাজা । এই সব শব্দের কোনো বুৎপত্তি গত অর্থ নেই । তবু কি ভাবে কারা নাম দিয়েছেন কে জানে।
    বাঙ্গালির ডি এন এ তে কোথাও একটা অব্যক্ত মাছের খিদে লুকিয়ে আছে । মাছ দিয়ে ভাত না খেলে বাঙ্গালি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায় । নদী মাতৃক ভুমিতে বসবাস থেকেই হয়তো এটা হয়েছে ।কাঁচকী , চাপিলা , কাজরী ,বাঁশপাতা , কালবোস , আমোদী এ সব মাছতো ক্রমশ অদর্শন হয়ে আসছে । ঠিক কত রকমের মাছ বাঙ্গালি খায় তারা একটা প্রপার ডকুমেন্টশনের খুব প্রয়োজন । ঝোল ঝাল এবং কালিয়া এই তিনটি মূল মাছ রান্নার রন্ধন শৈলী ছাড়াও আছে এক একটি রান্না আছে যা শুধু একটি বিশেষ মাছ দিয়েই করা যায় । চিতল মাছের পেটি ছাড়া মুইঠ্যা হবেনা । পাতুরি হবে ভেটকি মাছ দিয়ে । মালাইকারির বাগদা চিংড়ি ছাড়া হবে না । আম দিয়ে আমশোল হতে পারে তা বলে অন্য মাছের সঙ্গে আম নৈব নৈব চ । রুই মাছের পেটি দিয়েই দই মাছ হতে পারে ।

    আর ইলিশ ? তিনি হলেন মাছের রাজত্বে মুকুট হীন সম্রাঞ্জী ।তার উজ্বল রজত বর্ন তার আভিজাত্য বুঝিয়ে যায় । আর ডাক সাইটে সুন্দরীরা যেমন যে কোনো সাজেই সুন্দর ইলিশ ও তেমনি যে কোনো ভাবে রাঁধলেই সুখাদ্য । তবে যে হেতু তিনি বিশেষ তাই অন্য সব মাছে পেয়াঁজ আদা এবং আলু চললেও ইলিশের ক্ষেত্রে তা বিষবৎ পরিত্যাজ্য । ইলিষের সবটাই উপাদেয় । শুধু যকৃত সহ তেল দিয়ে ভাত মেখে খাওয়া দিয়ে শুরু করুন । মুড়ো সহযোগে সুশীতল লাউ ( ওপার বাংলা হলে কচু শাক চলতে পারে) । কাঁটাগুলো অবধি ফেলা যাবেনা , তা দিয়ে দিয়ে উপাদেয় মুগ ডাল । আর সর্বোপরি ত্রিকোন কাটা ইলিশ পিসের ভাপা । স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তা হমিনস্তো হমিনস্তো হমোনস্তো ।
    এমন কি বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় ইলিশ আসে মহা গৌরবে –

    ‘রাত্রিশেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে
    জলের উজ্বল শষ্য , রাশি রাশি ইলিশের শব,
    নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।
    তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে
    ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার
    সরস সরষের ঝাঁজে । এলো বর্ষা, ইলিশ-উৎসব।‘

    তবে অন্য মাছেরাও নেহাত ফেলনা নয় । সেখানেও আছে প্রচুর উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ ।এক একটি মাছের একেক রকম কম্বিনেশন অবাক করে দেয় । লাউ চিংড়ি , মাগুরের হিঙ্গি , রুইএর পোটলি ,মৌরলার বাটিচচ্চড়ি , তপসের ঘী তপসী , তেল কই , আম সোল ইত্যাদি , জানি না এদের আবিস্কার কর্ত্তী কারা ছিলেন , ভাবে স্বরলিপি হীন লোক গান যেমন মত মুখে মুখে ফিরে রয়ে গেছে তেমনি শাশুড়ি-বৌমা পরম্পরা মেনে কয়েক শো বছর ধরে এই সব রান্না টিকে আছে ।
    শেষ পাতে চাটনি খেয়ে তার পর মিস্টিতে যাওয়া এও যেন একটা সুন্দর গল্পের শৈল্পিক পরিসমাপ্তি।
    আম , আমড়া , চালতা ,জলপাই , ডুমুর , কামরাঙ্গা , পেঁপে ,টমাটো , খেজুর চাটনির জগত টিও নেহাত ছোটো নয় ।
    যদিও বিপুলা এ পৃথিবীর প্রায় কিছুই জানিনা । তবু ডেজার্ট হিসাবে নলেন গুড়ের পায়েসকেই আমি বিশ্বসেরা বলে মানি ।
    ঐ ইলিশ আর নলেন গুড়ের লোভে আর একবার বাঙ্গালি হয়ে জন্মাতে আমার আপত্তি নেই।
    (দ্বিতীয় পর্ব )
  • san | 11.39.24.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৩৪667274
  • 'তেঁতো' বলে কোনো বাংলা শব্দ নেই।
  • Du | 230.225.0.38 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৪১667275
  • যা সব খাইয়েরা বসেছে, সোমেনবাবু এখন সেই বৌটির রান্না শেষে কেমন অভিজ্ঞতা হত তার একটু স্বাদ তো পেয়েই যাচ্ছেন ঃ)।
  • Arpan | 116.197.197.201 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:০২667276
  • শোল না? তাই তো জানি।

    (দুদির কথায় উৎসাহ পেলাম)
  • b | 135.20.82.164 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:৪০667277
  • ১।কাজরী আর বাঁশপাতা একই মাছ।
    ২। চিতল মাছের গাদা দিয়ে মুইঠ্যা হয়, পেটি দিয়ে নয়।
  • Ekak | 24.99.224.214 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:৪৬667278
  • এনাকে কেও রাধাপ্রসাদ বাবুর সুচিত্রিত ও লিখিত বইখান মেইল করে দিন । এই লাল মলাটের রচনা-বিচিন্তা শৈলী নেওয়া বেশ চাপের ।
  • a | 213.219.201.58 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৮:৩১667279
  • প্রথমত ভদ্রলোক ওপার বাংলায় যাননি, শুধু শুনেছেন।
    দ্বীতিয়ত বহু বাঙ্গালিকে আমি চিনি যারা মাছ ছাড়া দিনের পর দিন দিব্যি কাটাতে পারেন। খুব স্টিরিওটাইপড লেখা।

    ওভার অল, লেখার টপিকটা বেড়ে কিন্তু শৈলীতে বদল চাই। এই যদি ডিডিদা লিখতেন তো জমিয়ে দিতে পারতেন।
  • Ekak | 24.99.179.197 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৯:২২667280
  • ডিডিদা ডিডিদার মত লিখবেন । সোমেন বাবু নিজের মত লিখুন । এইটুকুই । toi পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে মানে জনতা পড়ছে ।
  • kk | 117.3.196.87 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:৩৭667281
  • পড়ছি। লেখার শৈলী বা সেক্সিজম নিয়ে কোনো মন্তব্য করবোনা।কারণ গাদাগুচ্ছের কথা খরচ করে কারুর নিজস্ব মত পাল্টানো তো যায়না,কাজেই লাভ কী? কিন্তু একটা কথা না বলে পারছিনা। একটাই প্রদেশের বা বেশি হলেও একটাই দেশের খাবারের স্বাদে নিজেদের আটকে রাখাটা আমার বোকামি বলে মনে হয়। শিল্পকে প্রদেশের,দেশের গন্ডীতে বেঁধে ফেললে নিজেই ঠকা হয়। যাঁরা সত্যি শিল্পরসিক তাঁরা এমনটা করবেন বলে মনে হয়না। সুযোগ পাওয়া না পাওয়ার কথা অবশ্য আলাদা। তবে বাঙালী খাবারের জায়গায় অন্য কিছু খেতে হলেই 'গেলো গেলো' ব্যপারটা আমার ঠিক পোষায়না। ব্যক্তিগত মত অবশ্য। সবাইকে মানতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
  • | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:৪২667282
  • এত বেশী তথ্যের ভুল ....

    কিন্তু ... কিন্তু ... ঘটিরা ভেটকি ছাড়া আর কোনওমাছের পাতুরি রাঁধতে জানে না? ইলিশ পাতুরিও না? :-O

    যাগ্গে রাধাপ্রসাদ গুপ্তের বইয়ের নরম কপি মনে হয় পাওয়া যায় না, তবে সামরানের লেখাগুলোর লিঙ্ক দেওয়াই যায়,
  • a x | 138.249.1.198 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:০৬667283
  • কলিকে গাদাখানেক ক।

    কিন্তু স্যান তেঁতোতে আপত্তি করল, ওদিকে পস্তু কেমন সোনা মুখ করে খেয়ে নিল ঃ-))
  • 4z | 208.231.20.20 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:০৮667285
  • 'পাতুরি হবে ভেটকি মাছ দিয়ে' - এটাকি ভেটকি মাছ কানে কানে বলেছে আপনাকে?

    আর আম/টক দিয়ে শুধু শোল মাছ ছাড়া অন্য কোন মাছ রান্না হয় না এটাই বা কে বলে?

    'কিন্তু চচ্চড়িতে সর্ষে না দিলে তার জাত যাবে" - নাঃ থাক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন